শান্তনু’র লাস্ট লাইনটা আছিলো এইরকম – আমি তো ভালো কাস্টমার সার্ভিস দিতে জানি, সো এতো প্যারা নেয়ার তো দরকার নাই; গর্ভমেন্ট জব’টা আমি ছাইড়াই দিতে পারি। শেষে, সে দিছিলো কিনা আমি শিওর না। শান্তনুরে আমি আর জিগাই নাই। ইন ফ্যাক্ট, দেখাও হয় নাই, এরপরে। এর আগেই কেওটিক জিনিসগুলি শুরু হইয়া গেলো। সিনেমার মতো সিনগুলি ঢুইকা গেলো ঘটনার ভিতরে। তখন ঘটনাগুলিরে মনে হইতেছিল কোন আর্ট-ফিল্ম বা টিভি-নাটক। মানে, একসাইটমেন্ট কম আর ঘটনাগুলিও বেশ স্লো।
মেইন শহরের বাইরে একটা জেলা শহরে থাকি আমি তখন। একটা অষুধ আনতে যাইতে হয় শহরের বাইরের রিসার্চ সেন্টারে। রিসার্চ সেন্টার ইউনির্ভাসিটির মতোন। পাবলিকদের কাছেও অষুধ বেচে, প্রপার রিকমেন্ডশন থাকলে। আমি কিনতে যাই, কয়দিন পরে পরে। একদিন গিয়া শুনি নতুন অ্যাডমিনস্ট্রেশন ম্যানেজার আসছেন। ওইটাই শান্তনু। দেইখা চিনলো সে আমারে। ফ্যাসিলিটি দিতে চাইলো। আমি কইলাম থাক, থাক। তেমন কোন কিছু তো দরকার নাই। মাঝে-মধ্যে অষুধই তো নিতে আসি। কিন্তু শান্তনু কোনকিছু কইরা দেখাইতে চাইতেছিল। ঠিকাছে সেইটা। সে কদ্দূর পর্যন্ত কি করতে পারে সেইটা না কইরা দেখাইলে আমিও তো বিশ্বাস করবো না আসলে। তো, কইলাম, কোন হেল্প লাগলে জানা্বো নে। কিন্তু এইরকম অজ পাড়া-গাঁ টাইপ রিসার্চ সেন্টারে সে কেমনে থাকে? আমার জেলা শহরের প্রাইড দিয়া আমি জিগাইলাম। সে কইলো, স্পেশাল সার্ভিস আছে, ওইটা দিয়া সরাসরি মেইন শহরে চইলা যায় সে উইকএন্ডে। তারপরও তো, ঝামেলাই। জেলা শহরের প্রাইড ধইরা রাখতে চাইলাম আমি। পুরান পরিচিত মানুষদের সাথে দেখা হইলে এইরকমই তো হয়।
এরপরে দূর থিকা কয়েকবার দেখা হইছে। শান্তনু’র সিরিয়াস প্রফেশনাল চেহারা নিয়া কারে কারে কি কি যেন ইন্সট্রাকশন দিতেছে। অষুধ নিয়া চইলা আসছি আমি। একবার সন্ধ্যাবেলা গেছি। ওদের ডরমেটরি’তে সন্ধ্যাবেলার স্ন্যাকস খাইয়া ফেরত আসতেছি। একলা একটা বোরাক নিয়া আসা তো কস্টলি, এইজন্য শেয়ারে আসতেছি। এইরকম রিমোট জায়গাগুলিতে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট বইলাও কিছু নাই। নরমালি লগের প্যাসেঞ্জারদের সাথে কথা কই না। অন্যরাও কয় না। কিন্তু অন্যরা একই গ্রুপের; শান্তনু স্যার’রে নিয়া কথা কইতেছিল। মেইন শহরে যাওয়া নিয়া কি নাকি ঝামেলা হইছে। ভিসি বা সিইও যাইতে দিতে চায় না, কইছে,মাসে একবার যান উইকলি না গিয়া। শান্তনু আরো ইরেগুলার হইয়া গেছে এরপরে, ফ্রাইডে দুপুরেই চইলা যায় মানডে’তে বারোটার আগে আসে না। এইসবকিছু। আমি ভাবলাম পরেরবার আসলে শান্তনুর লগে দেখা করবো নে। বেচারা ঝামেলায় আছে। আমি কোন উপকার তো করতে পারবো না, কিন্তু শুইনা দেখি কি অবস্থা; ও তো চাইলে জেলা শহরেও আইসা থাকতে পারে! নাকি আমি থাকি বইলা, আমারে হেল্প করবো বলছিলো বইলা জেলা শহরে আইসা থাকাটা ওর জন্য ঝামেলার হইতেছে?
পরেরবার দুপুরের দিকে আসছি রিসার্চ সেন্টারে। একটু দূরে শুনি যে শান্তনু এক কলিগের লগে কইতেছে, সে তো চাকরিটা ছাইড়াই দিতে পারে।…
২.
তখন একটা এয়ারশিপে কইরা এক মোর্যাল সায়েন্টিস্ট তার সুন্দরী এসিসটেন্ট নিয়া এক্সপেরিমেন্ট চালাইতেছে। এয়ারশিপের লগে অনেকগুলি পিচ্চি পিচ্চি ড্রোন। এসিসটেন্ট একটা বোতাম টিপলো আর একটা ড্রোন গিয়া রিসার্চ সেন্টারের একটা বিল্ডিংয়ে মিসাইলের মতো গিয়া লাগলো। বুম! ‘দেখছেন স্যার, টার্গেট একদম ঠিকাছে!’মোর্যাল সায়েন্টিস মনেহয় জানতোই। মাথা নাড়লো সে, যে শুনছে। কিন্তু আরো কি কি জানি হিসাব করতেছে। এসিসটেন্টও একটু উদাস। দূরের আগুনটা দেখতেছে। আরো দুয়েকটা এক্সপেরিমেন্ট মনেহয় ট্রাই করবে।
৩.
আমি রিসার্চ সেন্টারে যাই না আর। অরা ফর্মূলা বেইচা দিছে কয়েকটা অষুধ কোম্পানির কাছে। এখন দোকানেই পাওয়া যায়। কিন্তু যতবারই আমি অষুধটা কিনতে যাই শান্তনু’র কথা মনেহয় আমার। এমনো হইতে পারে যে, এইটার কোন সাইড এফেক্ট আছে, ইল্যুশন কাইটা যায়, থাকে না ঠিকমতোন; বা ইমব্যালেন্স কইরা দেয়, ডাইনদিকে যাইতে থাকলে খালি ডাইনদিকেই যাইতে থাকে, এইরকম; বা হয়তো তেমনকিছুই নাই, একটা অভ্যাস বেশিদিন চলতে থাকলে এমনিতেই ক্লান্ত লাগে, ইরিলিভেন্ট লাগে, এইরকমও হইতে পারে। শান্তনু’রে জিগানো যাইতো। এখন হয়তো সেও ভুইলা গেছে, কয়দিন চাকরি করার স্মৃতি। আমারে মনেহয় ভুলে নাই। আমি তো হইতেছি লো পয়েন্টটা, যেইখানে সে নামছিল একবার লাইফে; যে, থাইকাই যাইতে পারতো জেলা শহরের মনোটোনাস লাইফে, এইরকম প্রভাবিলিটর ভিতর। সেই ডর আমি দেখছিলাম ওর চোখেমুখে। ভুলে নাই মনেহয়।
মেইন শহরে গেলে আমার যেইরকম আলগা আলগা লাগে। মনেহয় ফিরা আসি ডিস্ট্রিক্ট টাউনেই। এখনো মেডিভেল আমলের রেললাইন আছে। বড় বড় গুদামঘর। দুইটা বিয়ার খাইয়াই একটা সন্ধ্যা পার কইরা দেয়া যায়। যেইটারে মনোটোনাস ভাবে লোকে সেইটাই তো লাইফ। জাস্ট পার্টিকুলারগুলি ব্লার হইতে থাকে বইলা শীতের সকালের মতোন মনেহয় প্যাটার্নটা। ছোট ছোট জিনিসগুলিরে ছোট ছোট ভাবতে পারাটাই মনেহয় সমস্যা। বিশু পাগলা আর বিশু পাগলা না, কোন ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ বা ম্যাডনেস অ্যান্ড সিভিলাইজেশনের একটা ক্রিটিক – এইরকম ভাবতে গেলে রেফারেন্স শিফট করা লাগে। জেলা শহর ভাল্লাগে না আর।
শান্তনু থাকতে পারতো আসলে। এখন দেখেন, সে গল্পের ভিতরেই আর নাই।
৪.
শান্তনু কি কোনদিন শান্তনু হইতে পারবে যদি কোন গল্পের ভিতরে সে না থাকে আর?
৫.
ট্রেনে যাইতে যাইতে দেখার ট্রাই করতেছিলাম। এতো জোরে যাইতেছিল যে কিছুই দেখা যাইতেছিলো না। আমি অন্য আরেকটা জেলা শহরে চইলা গেছি। ওই জেলা শহরের উপর দিয়া যাইতেছিলাম। নামটা মনেই হইতেছিল না। মনে হইতেছিল অন্য অনেককিছু, মনে হইতেছিল – জেমস জয়েস, ডাবলিনার্স।
Leave a Reply