“Everyone who goes to 2046 has the same intention, they want to recapture lost memories. Because in 2046 nothing ever changes. But, nobody knows if that is true or not because no-one has ever come back.”
- 2046, Wonk kar wai.
—————————————-
১.
বেশিরভাগ গল্প ২০৪৬’র টাইমটারে প্রজেক্ট কইরা লেখা। দুয়েকটা গল্প বাদ দিয়া। তো, ২০৪৬-তে বাঁইচা থাকবো না আমরা, যাদের বয়স ৪০ ক্রস করছে; আর বাঁইচা থাকলেও ওইরকম বোধ-বুদ্ধি থাকার কথা না। বা এখনকার ২০৪৬’র যেই কল্পনা ওইটা ততদিনে আর ভ্যালিডও থাকার কথা না। মানে, ফিউচার বলতেছি না আমি কোন। নিয়ার ফিউচার নিয়া গল্পই লিখছি। আর সেইটা সবসময় অন্য একটা ঘটনাই। যখন ২০৪৬ অ্যাপিয়ার করবে, ২০৪৬-এর গল্প ইনভ্যালিড হইতে পারার কথা।
২.
একটা তো হইলো যে, এইভাবে টাইম’রে জানা যায় না। টাইম ব্যাপারটা এগজিস্ট করে মনেহয় এইরকম পিছলায়া যাওয়ার ভিতরেই। আমি ভাবতেছি আর আমার ভাবনাটা জেন্ডার বায়াসডই। এখন যেমন একটা ব্যাপার হইতেছে যে, ছলা-কলা (সিডাকশন) না জানলে ফিমেইল হওয়া যায় না বা দেখো, ছলা-কলা থাকার পরেও আমি ফিমেইল হইতে পারি! আছে কিনা জানি না, আমি ভাবতে পারি আর কি! মানে, এইটার থাকার দরকার নাই। প্রজেক্ট কইরা কইরাই তো রিয়ালিটি বানায়া ফেলতে পারি আমরা। তো, তখন হ্যাভিং ছলা-কলা বিকামস একটা ইন্ট্রিগ্রাল পার্ট অফ বিয়ং অ্যা ফিমেইল। এইরকম ছলা-কলা’র জায়গায় একটা বেদনা না থাকলে বেটা হওয়াটাও টাফ হওয়ার কথা এখন বা ইন ২০৪৬-এ এইটা আরো ভিজিবল হয়া উঠার কথা। বা না হইলো, আমি যেহেতু স্যাড হইতে চাই, স্যাডিস্ট হওয়াটা পসিবল না আর। ভাবলাম একটু এইরকম।
৩.
এলিট কমলকুমার কইছিলেন, ‘ঘটনা ইজ নট গল্প।’ উনার মাড়-ভাতে আঙুলও ডুবতো না। এই গল্পগুলির ঘটনাগুলি এতোটা যুইতের হইলো না – এই আক্ষেপ মনেহয় আমার থাইকাই যাবে।
—————————————–
১. জয়-বাংলা
২. দুইটা মিথ্যা গল্প
৩. আমি আর আমার ছোট বইন
৪. ২০৪৬
৫. স্বপ্নের গরুগুলি
৬. ডার্বিলানস
৭. আন-নোন
৮. মেমোরি
৯. বিবাহিত
—————————————-
জয় বাংলা!
বিয়া নিয়া আমার তেমন কোন টেনশন ছিলো না। একটা হইলেই হয়। এমনকি যার সাথে বিয়া হইলো ফোনে ফোনে, তারেও কেমন জানি বউ বউ লাগে না। জন্ম দিলেই যেমন বাপ হওয়া যায় না, বিয়া হইলেই তো আর কাউরে বউ লাগতে পারে না। মেয়েটা চাকমা। আম্রিকায় থাকে। মেয়েটা দেশে চইলা আসতে পারে বা আমিও যাইতে পারি। ভাবি নাই তেমনকিছু। আব্বা-আম্মা হয়তো ভাবছে।
একদিন হুট কইরাই বিয়াটা হইলো। মাস্টার্স পাস কইরা বইসা আছি। চাকরি করতে ইচ্ছা করে না। আর বাপের টিনের ব্যবসায় বসতে মন চায় না; বাপও চায় না। কয়, মাস্টার্স পাশ করাইছি কি ব্যবসা করার লাইগা নাকি! বলার টোনটা এইরকম, আমি ম্যাজিস্ট্রেট টিএনও হবো। আমিও বিসিএসএস দেয়ার ভান করতে করতে পেরেশান। ভাল্লাগে না আর বাল। কিন্তু আমি জানি, ঘটনা আসলে অন্য। ছোট আরো দুইভাই আছে আমার। মাইঝাটা তো ছোট থিকাই ব্যবসায়। ছোটটাও পড়ালেখা করে না। আলাদা ব্যবসা করতে চায়। এরমধ্যে আমি ঢুকলে সমস্যা। আগে থিকাই আমি ফ্যামিলির বাইর, এখনো একই। খারাপ লাগে না আমার। একই তো ব্যাপার।
যখন চাকরি-বাকরি হইতেছে না, আম্মা তো কান্দে মামারা’র কাছে। বড়মামা কইলো, বিযা করাইয়া দেন! বড়মামা আম্রিকায় থাকে অনেকদিন। উনিই ব্যবস্থা করলেন। উনাদের কমিউনিটিতে মেয়ের বাপের প্রেস্টিজ আছে। এরশাদ ফল করার পরে বড়মামা পলিটিক্যাল অ্যাসাইলাম নিছিলেন, কিন্তু মেয়ে’র বাপ স্কলার মানুষ, আদিবাসী ক্যাটাগরিতে গেছেন মনেহয়। মেয়েটার চেহারা ভালোই। আমার ডিসিশানের কিছু নাই। ফোনে ফোনেই বিয়া হইয়া গেল। বিয়ার পরে ভিডিওতেও চোখ চাওয়া-চাওয়ি হইলো কিছুক্ষণ। সবাই খুব হাসাহাসি করতেছিল। আমরাও (মানে, আমি আর আমার বউ) হাসি-হাসি মুখ নিয়া বইসা ছিলাম, ভিডিওক্যামের সামনে। বড়মামার পোলার বিয়াও এমনেই করাইছিলেন। বড়মামার কোন তাড়াহুড়া আছিলো মনেহয়। আম্মা্ও কুইক রেন্টালের মতো সলিউশনে গেছিলেন। আব্বা তো মহাখুশি। উনার বিয়াই আম্রিকান। চাকমা যে এইটা আর কাউরে বলেন নাই।
তো আমি যাবো নাকি বউ আসবে – তাড়াহুড়ার কারণে এইটা আর ঠিক করা হয় নাই। বিয়া হইয়া গেলে এইটা তো ঠিক করাই যাবে। এইটা তো কোন ঘটনা না।
আমার বউয়ের ফোন নাম্বার আমার কাছে ছিল। আমারটাও ওর কাছে। কিন্তু আমরা কেউ কাউরে ডিস্টার্ব করতাম না। কি দরকার খামাখা!
বছরখানেক পরে আম্মার হঠাৎ মনে হইলো, কি রে ঘটনা দেখি আগায় না! একদিন বেশ ডরাইন্না মুখ নিয়া আমারে জিগাইলো, কি রে বউয়ের লগে তোর কথা হয় নি? আমি কইলাম, হ, হয় তো। আম্মা কইলো, বউ কি কয়? দেশে আইতো না? আমি কই, না লেহাপড়া তো শেষ হয় নাই, অহনো তো বয়স কম। সামনের বছর পরীক্ষা শেষ হইলে আইতো পারে। আম্মা একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। কিছু আর কয় না। পরে বড়মামা’র লগে প্যান প্যান করে। বড়মামা কয়, এইগুলা নিয়া আপনে এতো টেনশন কইরেন না। এখনকার পোলাপান নিজেরাই এইসব ঠিক কইরা নিতো পারবো। বড়মামা ওভার কনফিডেন্ট। কিন্তু আম্মা ভরসা পায় না খুবএকটা; কয়, আমারে পোলারে আমি চিনি না! পাতে যদ্দূর ভাত দেই, ততদ্দূরই; কোনদিন নিজের পাতে ভাতটা পর্যন্ত তুইলা খায় না… এইসব কয়। কান্দে।
আমিও ভাবি, আম্রিকা না যাই, কিছু একটা করা দরকার তো। ইউনির্ভাসিটির ফ্রেন্ডরা সবাই চাকরি-বাকরি নিয়া বিজি। বিদেশও গেছে কয়েকজন। মেইনলি কানাডা আর অস্ট্রেলিয়া। আমার বিয়ার খবর শুইনা অনেকেরই মেজাজ খারাপ হইছে আমি বুঝতে পারি। ফ্রেন্ডরা ভাবে, আমার একটা গতি হইয়া গেছে আর সেইটা ওদের চাইতেও বেটার। সবচে বাজে ব্যাপার হইলো, এইটা তো আমি ডিজার্ভ করি না, এই কারণে মেবি অদের আরো বেশি খারাপ লাগে। বিয়ার আগে গেলে যেমন পাত্তা দিতো, এখন আর তেমন একটা দেয় না। বা হয়তো আগে এই চাকরির লাইফে ঢুকতে অদের ইচ্ছা করতো না। এখন আর না-ইচ্ছাটা নাই অদের। চাকরিটা লাইফ হইতে পারছে। আর নিজের লাইফের অস্বস্তি, ঝামেলার কথা বউরেই কইতে পারে। তা না হইলে অফিসের ফিমেইল কলিগরে বা সিনিয়র আপারে। বা ইউনির্ভাসিটি পাশ করা মেয়ে ইর্ন্টানদের দেখলে তো ভালোই লাগার কথা। আমরা ইউনির্ভাসিটি লাইফে এইটা করতাম, ওইটা করতাম… বলতে বলতে ইউনির্ভাসিটি লাইফে চইলা যাওয়া যায়, ইউনির্ভাসিটির ফ্রেন্ডরে চোদা লাগে না আর।
অদেরকে হিপোক্র্যাট ভাবার মতো শান্তি আমার হয় না। আমি ভাবি, এইটাই তো আসলে ওয়ে অফ লাইফ।
আমি বরং স্কুল-ফ্রেন্ড আজিজুলের লগে টাইম পাস করি। রিহ্যাব থিকা ফিরছে সে কয়েকদিন আগে। তারও বউ আছে, লগে একটা বাচ্চাও। বাচ্চাটা অর না। পাড়ার এক ভাবীরে ভাগাইয়া নিয়া বিয়া করছিলো। বউটা খুবই সুন্দরী। আজিজুলও সুন্দর ছিল অনেক। এখন শরীর ভাইঙ্গা গেছে। শরীরের রূপ আর কয়দিন থাকে! কিন্তু আজিজুলের বউয়ের এখনো আছে। আজিজুল আগে টুকটাক নেশা করতো, কিন্তু বিয়ার পরে বাইড়া গেছিলো। আজিজুল বাপ-মা’র একমাত্র পোলা। টাকা-পয়সারও কোন সমস্যা নাই। বাপের বিজনেসে আগে যাইতো মাঝে-মধ্যে, এখন বাপেই আর যাইতে দেয় না, গেলে টাকা কামাই করার চাইতে পাওনা টাকা নিয়া আইসা খরচই করে বেশি। তো, আমাদের দুইজনের স্ট্যাটাস মোটামুটি একই। ফেসবুক অ্যাকাউন্ট আছে, কিন্তু খুবএকটা ইউজ করি না, এইরকম।
সিনেমা নিয়া কমই কথা কই আমরা। পয়লা দিকে কইতাম। তখন দেখলাম ওরও নটিংহিল পছন্দ, আমারও। ওরও দিল চাহতা হে ভাল্লাগে, আমারও। বাট কেয়ামত থেকে কেয়ামতের কথা আমরা কেউই ভুলতে পারি না। একদিন এইরকম ভাবছিলাম যে, মৌসুমীর কোন শ্যুটিং দেইখা আসবো। কারে নিয়া যে কতকিছু ভাবতাম, তারে তো একবার সামনাসামনি দেইখা আসা দরকার… হা হা হা। হাসতে হাসতে আজিজুল জিগায় আমারে, ক্লাশ নাইনের ফাইনাল পরীক্ষা যখন শেষ হইলো, সিনেমা দেইখা ফিরার সময়, রেললাইনের সাইডে দাঁড়ায়া পেশাব করার ঘটনা’টা মনে আছে কিনা? আমিও হো হো কইরা হাসলাম। অন্ধকারে সবাই যখন চুপচাপ হাত মারতেছিলাম, বাসেত হঠাৎ চিল্লান দিয়া গান গাইতে শুরু করছিলো, ‘মৌসুমী, কারে ভালো বাসো তুমি?’ ভালোবাসা তখন কি যে দরকারি জিনিস ছিলো! ইভেন হাত মারতে হইলেও লাগতো।
সারাদিন এমনে এমনেই টাইম পার হয়। বিকালে বাইর হই। আজিজুলও আসে চা-এর দোকানে। চিপায় বইসা চা খাই আমরা। পোলাপান জানে এইখানে আমরা বসি, অরা একটু দূরেই বসে। রিহ্যাবের গল্প করে আজিজুল। প্রাইভেট জেলখানা অইগুলা। বউয়ের কথা কোনদিনই বলে না। আমিও জিগাই না।
একদিন কিছু ফর্ম নিয়া আসলো ও, ইংলিশে। কইলো, ফিল-আপ কইরা দিতে। খুইলা দেখি, ডিবি ভিসা’র ফর্ম। কি ঘটনা? আমি জিগাইলাম, ও আম্রিকা ক্যান যাবে? কেমন জানি অস্বস্তি’তে পইড়া গেলো; কাঁচুমাচু কইরা কয়, অর বউয়ের এক খালাতো ভাই থাকে, পুরা সেটেলেড অইখানে… অর বউ যাইতে চায়; সেও ভাইবো দেখলো যে, খারাপ না তো ঘটনাটা, যাওয়াই তো যায়। তখন, আমার বউয়ের কথাও অর মনে হইলো; কইলো, তুইও অ্যাপ্লাই কর। তো, করতে তো আর ঝামেলা নাই। দুইজনেই কইরা ফেললাম। পরে চা খাইতে খাইতে ভুইলাও গেলাম।
এরমধ্যে বাড়িতে গ্যাঞ্জাম বাড়তেই থাকলো। ছোট দুইভাইও বিয়া করছে। ছোটটা আবার বাচ্চাও পয়দা দিছে। বিয়ার আগেই মনেহয় ঝামেলা বাঁধাইয়া ফেলছিলো। আব্বা-আম্মা দুইজনেই মহাখুশি। ঝামেলা হইলো, ভাইয়ের বউগুলি খালি টিটকারি মারে। আম্মারে কয়, আপনার বড় বউরে তো আর আমরা দেখলাম না! উনি কি আসবো না? না আইসা আমরারে নিয়া গেলেও তো হয়! আমরা গিয়াই না হয় উনারে দেইখা আসলাম… হি হিহি! এইগুলা শুনলেই আম্মা চেতে। কয়, দেখো, এতো জেলাসি ভালো না! আমার বড় পোলা সবসময়ই অন্যরকম… তোমারার জামাইয়ের লগে আমার পোলারে মিলাইও না। বউগুলা এই ইমোশনাল জায়গাতে আইসা চুপ কইরা যায়। কয়দিন পরে আবার শুরু করে। মাইঝাটার ঝামেলার বেশি। বাচ্চা-কাচ্চা হয় না দেইখা ছেলেমানুষি এখনো যায় নাই। আমার খারাপ লাগে না। অদের বাচ্চামি এইগুলা। অরা যে এতো বড় হয়া যাইতেছে এইটা অরা মানতে পারে না। অরা মনেহয় কিছু একটা টের পায়। আমি আমার ভাসুরগিরি নিয়া বাংলা-ভাষার মতো গম্ভীর থাকার ট্রাই করি। অরা এই দেয়ালটাও পছন্দ করে মনেহয়। মাঝে-মধ্যে বাড়ি দিয়া দেখে, ভিতরটা ফাঁপা হইছে নাকি, ঝনঝন করে কিনা। ফাটল’টা খুঁইজা বাইর করার ট্রাই করে। পরে না পাইয়া হতাশও হয় মনেহয়। অন্য কোন দেয়ালের কাছে যায়।
এর মধ্যে ডিবি ভিসা’র রেজাল্ট আসে। আজিজুল শালা লাকি! ওরটাই লাগে। যাইতে যাইতে অবশ্য আরো দুইবছর লাইগা যায়।
দুইবছর যে কি জিনিস! চইলা যাওয়ার পরে টেরই পাওয়া যায় না।
আমার বউয়ের কথা আমি অলমোস্ট ভুইলাই যাই। আম্মা ভুলে না। তিনটা নাতি-নাতনি তাঁর। এর মধ্যেও মনে কইরা মাসে কয়েকবার আমার বউয়ের খবর নেয়। এখন জোর কইরা আমারেও ধরাইয়া দেয়, কয়, নে, আমার সামনে কথা ক! না-পাইরা কথা কইছি কয়েকবার। আম্মার সামনে নরমাল থাকি সবসময়। আম্মা ফোনটা আমারে দিলে শে জিগায়, ‘ভালো আছেন আপনি?’ আমি সরাসরি তুমি’তে চইলা যাই, ‘তুমি কি করো এখন?’ যেন কয়েকদিন আগেই কথা হইছে, আম্মা যাতে এইরকম বুঝতে পারে। হাসে শে, ভাঙা ভাঙা বাংলায় কয়, ‘আপনার সাথে কথা বলি।’ তারপর শে-ই বলে এইটা ওইটা, আমি হুঁ হ্যাঁ করি। আমার সামনে হাসি-হাসি মুখ নিয়া আম্মা বইসা থাকে। আমিও খুশি, যাক বাবা, একমাসের লাইগা শান্তি!
আম্রিকা যাওয়ার আগে থিকাই আজিজুলের ভাব বদলাইয়া গেছিল। লোকাল ফ্রেন্ডদের সাথে সে যোগাযোগ রাখবে কম, এইরকম ভাব। শালা ডিবি পাইয়াই গ্লোবাল হয়া গেছে! তখন রুম্মান, রাসেল, ফজলুল হক আর বাসেতের লগে আমি খাতির করলাম। সবাই ব্যবসা করে, ফজলুল হক বাদে; ও একটা ব্যাংকে চাকরি করে। বৃহস্পতিবার রাতে আসে আবার রবিবারে সকালে চইলা যায়। অরা মাঝে-মধ্যে মদ-টদের আসরও বসায়। আমার ওইসব খুবএকটা ভাল্লাগে না। আজিজুল যাওয়ার আগে কইলো, বিদেশি মদ পাঠাবে সে সবার লাইগা। যেইদিন বিদায় নিবে, আমারে জড়ায়া ধইরা রাখলো অনেকক্ষণ। ফালতু ইমোশন!
যাওয়ার এক বছরের মাথায়ই সে ফিরা আসলো। বউ-বাচ্চা ছাড়াই। কারো লগেই অর কোন কথা নাই। চা-এর দোকানে নাকি আমারে খুঁজতে আইছিল। অর বাড়িতে গিয়া দেখা করলাম। তারপর থিকা মাঝে-মধ্যে বিকালে হাঁটতে বাইর হইতাম আমরা। অর নেশা নিয়া যেমন কোনদিন কথা বলে নাই আমার লগে, অর আম্রিকার লাইফ নিয়াও কিছু বলে নাই কোনদিন আমারে। আমিও জিগাই নাই। যেই কথা মানুষ বলতে চায় না, সেইটা না জিগানোই ভালো।
আজিজুলের ফিরা আসার পরে মনে হইলো; না, আম্রিকাতেই চইলা যাই। লাইফ তো বাল এইরকমই। ঢাকায় গিয়া এক এজেন্সিরে ধরলাম। অ্যাপ্লাই করলাম। এইগুলা প্রসেস-টসেস হইতে বহুত টাইম লাগে। এই সার্টিফিকেট দাও, সেইটা দাও… আর টাকা-পয়সা তো আছেই। ফ্যামিলিতে কাউরে আর জানাইলাম না। খামাখা টেনশন করবো। একবার ভাবলাম, বউরে জানাবো কিনা। এরমধ্যেই একদিন আম্মা খুব টেনশন-ভরা মুখ নিয়া আইসা কইলো, কি রে তর বউয়ের বলে একটা ঠ্যাং ছোড? আমি কই, কেডা কইছে আপনেরে? আম্মাও কোন উত্তর না দিয়া আবার জিগায়, তুই জিগাইচছ কোনদিন তর বউ’রে? আমি আরো চেইতা গিয়া কই, এইডা কেমুন কথা? ঠ্যাং ছোড হইলে তো নিজে থিকাই কইবো। আর এইডা লইয়া কথা কওয়ার কি আছে! আম্মা বুঝে যে, আমার লগে কথা কইয়া কোন লাভ নাই। নিজের মনে মনেই কয়, এহতেশামরে লইয়া সবসময় আমার মনে কু-কথা ডাক দেয়; ছোড থিকাই ও নিজেরটা বেশি বুঝে… এহতেশাম হইলো আমার বড়মামা। চুপ কইরা বইসা থাকে আম্মা। আমিও একটু পরে বাইর হয়া যাই ঘর থিকা।
আজাইরা যতো সব। আরে ভাই, মাইনষের ঠ্যাং ছোড হইলে মাইনষের কি! ফেসবুকে আমার বউয়ের অ্যাকাউন্টের লগে আমি ফ্রেন্ড হইছি কয়েকদিন আগে। নরমাল পোস্টই দেয় শে, কোন ঝুট ঝামেলায় নাই। ফুল ভালোবাসে আর অরনামেন্ট স্টোরগুলার ডিজাইন শেয়ার দেয়। আজিব আজিব টাইপ অরনামেন্ট আছে দুনিয়ায়। ফ্রেন্ডদের লগে ভালো ফান করে ও। কয়েকটা পোলাও আছে এর মধ্যে। আমার এইসব দেখতে ভাল্লাগে, আবার কেমন একটা বাজে ফিলিংসও হয়। বউ হইছে বইলা কি তার সবকিছু আমার দেখা লাগবো নাকি! এইজন্য খুববেশি যাই না অর ওয়ালে। মোস্টলি অন্য মানুষের জিনিস দেখতেই ভাল্লাগে। ভালগার না হইলেই হইছে জিনিসটা। আড্ডায় গেলেও কে কি কইছে ফেসবুকে, এইগুলা নিয়াই আলাপ। আমার অ্যাপ্লাই করার কথাটা কাউরে বলি নাই। একবার ভাবছিলাম আজিজুলরে বলবো নাকি; পরে আর বলি নাই।
মাইগ্রেশনের আসলে নানান রকম তরিকা আছে। আমি যার মাধ্যমে ট্রাই করতেছি সে আমারে কইলো, বউয়ের মাধ্যমেই ট্রাই করতে। ও অইখান থিকা কাগজ-পত্র পাঠাইলে কোন সমস্যাই নাই। বড়মামা যে পাঠাইবো না এইটা আমি শিওর। কিন্তু বউ’রে কেমনে বলি! বা বলবো কিনা সেইটাই বুঝতেছি না। এর মধ্যে এজেন্সির লোকটাও ফোন কইরা ফলো-আপ করতেছে। আমি কইছি, ভাই টাইম লাগে তো! ওয়েট করেন না একটু! এজেন্সির লোকটা পুরা বোকাচোদা হয়া যায়। কয়, ভাই, মাইনষে আমরারে কয় তাড়াতাড়ি করার লাইগা আর আপনি কন আস্তে ধীরে করতে! আমি বুঝতে পারি, কেন সে আমার লগে ফলো-আপ করে কারণ সে জানে, আমারটা হইয়া যাইবো। তাইলে সে বাকি টাকাটা তাড়াতাড়ি পাইবো। অন্যরার পাওয়ার ব্যাপারটা তো এতোটা শিওর না। বাট আমি ডিসিশানই নিতে পারি না – বউরে বলবো কিনা। মানে, বলা তো যায়-ই। বলাটা আবার কেমন না! সুবিধা নেয়ার লাইগা তো আমি বিয়া করি নাই! আবার সুবিধাটা যেহেতু নেয়া যায় নিবো না কেন! রিলেশনের এই লাইনটা খুবই পাতলা। কখন যে কে কোন সময় লাইনটা ক্রস কইরা ফেলে, টেরও পাওয়া যায় না। বলা যায় দেইখা বলাই লাগবো – এইটা তো কোন কারণ হইতে পারে না।
ভাবি যে, বউয়ের লগে নরমাল কথা-বার্তা শুরু করবো। জিগাবো, শে কি করে যখন ফোনে আমার সাথে কথা বলে না? ওই একবারই তো কইছিল। মানে, ওর সেন্স অফ হিউমার ভালোই হওয়ার কথা। জীবনে কোনদিন বউয়ের কথা ভাবতে হয় নাই আমার। আর এখন একটা দরকারে পইড়া যে ভাবা লাগতেছে এইজন্য একটু অস্বস্তিই লাগে। মনেহয় আমার উদ্দেশ্যটা না বললেও শে বুইঝা ফেলবে যে, আমি আম্রিকাতেই আসতে চাইতেছি। এমনিতে আমি তো ওর সাথে দেখাও করতে চাই না। ও থাকুক ওর মতো, আমার জাস্ট মনে হইতেছে আজিজুলের যাওয়াটা একদিন গিয়া দেইখা আসি। আজিজুল এখন আর ঘর থিকা বাইর হয় না। আমিও যাই না আর। টায়ার্ড লাগে।
একদিন সন্ধ্যাবেলা বইসা ভাবি। বউরে লিইখাই ফেলি। ফোন না করি, ফেসবুকে মেসেজ পাঠাইলাম। শে ভালো আছে। উত্তর শে দিবে তো। এমনো হইতে পারে যে শে-ই কথা বলতে চায়। আমি বলি নাই বইলা হয়তো শে বলে না। তারও তো নিজের অস্বস্তি থাকতে পারে। একটা মেয়ে কি নিজে নিজে আইসা নক করবো নাকি। হাজব্যান্ডের কাছেও তার লজ্জা তো থাকতেই পারে। অথবা লজ্জা করতে পারে বইলাই হয়তো আমারে হাজব্যান্ড ভাবতে পারে। যা-ই হোক, জিনিসটা ভালো হইতেছে না। এতদিন বউয়ের কথা আমি কিছু ভাবি নাই। এখন খামাখা ভাবা লাগতেছে। এমনকি গতকালকে রাতে স্বপ্নেও দেখলাম, বউ’রে মেসেজ পাঠাইছি আমি ফেসবুকে। ‘সিন’ দেখাইতেছে, অথচ বউ কোন রেসপন্স করে না। এমনকি স্ট্যাটাসও দিতেছে। এর ওর পোস্টে লাইকও দিতেছে। মানে, হাজব্যান্ড মনে না করুক, ফ্রেন্ড হিসাবেই শে আমারে ইগনোর করতেছে!
এইটা তো ভয়ংকর একটা ব্যাপার। স্বপ্নের ভিতরই আমার এমন অস্বস্তি লাগতে থাকে! মনেহয় মাইলের পরে মাইল লম্বা ট্রাফিক জ্যামে বইসা আছি। লং রোডে। একবার মনেহয় গাড়ি থিকা নাইমা যাই। পরে দেখি আজিজুল বইসা রইছে স্টিয়ারিং ধইরা। হুড-খোলা একটা গাড়ি। আজিজুলের চোখে সানগ্লাস। ওরে ছাইড়া যাইতে পারতেছি না। আজিজুলও গাড়ি রাইখা কেমনে হাঁইটা যাবে? এইরকম একটা ইনডিসিশানের জায়গাতে আইসা ঘুমটা ভাইঙা যায়।
উইঠা শুনি দুই ভাইয়ের বউ চেঁচাইতেছে। পোলাপানগুলারে নিয়া ঝগড়া-ঝাঁটি লাইগাই আছে। তখনই ডিসিশান নিয়া নেই – এই নরকে আর থাকবো না বাল। ম্যাক্সিমাম আর তিনমাস। এজেন্সি’র সেকেন্ড অপশনটাই নিবো। বউরে আর মেসেজ পাঠাবো না। ট্রেন্ডের সাথে চলতে হবে। বউয়ের খাটো ঠ্যাং ধইরা আম্রিকা যাবো না আমি। লেখালেখিই করবো এখন। সারাদিন তো বইসাই থাকি। অনেক টাইম লস হইছে লাইফে। আর না! বিছানায় শুইয়া শুইয়া ইন্সট্যান্ট শুরু করি। অনেকদিন পরে ফেসবুকে কাঁপা কাঁপা হাতে স্ট্যাটাস লিখি, জয় বাংলা!
দুইটা মিথ্যা গল্প
দুইটা মিথ্যা গল্প শুনছিলাম কয়েকমাস আগে। সাহস থাকলে থ্রিলার লেখা যাইতো। বলা যায় না, লিখতেও পারি, পরে আবার। এখন স্টোরি লাইনটা বইলা রাখা আর কি।
প্রথম গল্পটা সাতক্ষরীরার; নতুন এসপি আসছেন, আসার সময় তিন ট্রাক গুলি নিয়া আসছেন শহরে। তো, মার্ডার তো বহুতই করা লাগতেছে। তবে মানবিক কারণে অনেক সময় মার্ডার না কইরা ঠ্যাং-এও গুলি করতেছেন কিছু। এইরকম কেউ একজন এমপি’র আত্মীয়, এমপি’র কাছে গিয়া কমপ্লেইন করলো, কইলো, একটু দেখেন! খামাখাই ঠ্যাং-এ গুলি করলো… এমপি’র তো একটু হইলেও প্রেস্টিজ আছে, এসপি’র অফিসে গিয়া জনতার পক্ষ নিয়া তারে জিজ্ঞাসা করলেন। এসপি তারে পাত্তা দিলেন না, নানান বাজে কথা কইলেন; কইলেন যে, দেখেন, জনতা তো আপনারে পাস করায় নাই, আমরা (পুলিশরা) পাস করাইছি, সো আমাদের কথা শুনেন। এমপি সাহেব এসপি’র কথা শুনলেন না; তিনি তবু জনতার কথা শোনার ট্রাই করলেন। এসপি সাহেব তখন আর না পাইরা প্রাইম মিনিস্টারেরই কল করলেন উনার মোবাইল দিয়া; কইলেন যে, কি এমপি বানাইছেন আপা, আমারে তো ‘কাজ’ করতে দেয় না! আপনি আমারে ট্রান্সফার দেন, এইভাবে ‘কাজ’ আমি করতে পারবো না… প্রাইম মিনিস্টারের তো মন এমনিতেই নরোম, এই কথা শুইনা উনার প্রায় কান্দা চইলা আসলো, পরে এসপিরে কইলেন এমপি’র কাছে মোবাইলটা দিতে, তারে কইলেন, উনার এমপি-গিরি ঢাকায় আইসা দেখাইতে। এমপি খুবই লজ্জা পাইলেন এই কথায়, নিজের ভুলও বুঝতে পারলেন। এসপি সাহেবও পরে উনারে সাত্বনা দিলেন যে, তিন ট্রাক গুলি শেষ হইয়া গেলে উনি এমপি’র সাথে বইসাই কাজ করবেন।
সেকেন্ড ঘটনাটা আরেকটু মাইল্ড, খুলনার। নতুন ব্যবসা দিছেন এক্স-ছাত্রলীগের কয়েকজন। ব্যবসা ভালো। কিন্তু ভাবেন খরচ-টরচ কমাইতে পারলে তো লাভ আরো বেশি করা যাইবো। এর মধ্যে পুলিশের এক নতুন এসআই আসলো এলাকায়, অফিসে আইসা বলে, ব্যবসা তো ভালোই করতেছেন প্রতিমাসে দশ হাজার টাকা পাঠায়া দিয়েন। এক্স-ছাত্রলীগ নেতা একটু বিরক্তই হইলেন, এইগুলি নিয়া তো আর কবিতা লেখা যায় না, ভাবলেন এমপি’রে রিকোয়েস্ট কইরা টাকাটা বাদ দেয়ানো যায় কিনা, উনার সাথে দেখা এই কথা কইলেন। কথা কওয়ার পরের দিনই আবার এস আই আইসা হাজির অফিসে, কইলেন, আরে আমি তো আপনারে ছোট ব্যবসায়ী ভাবছিলাম, আপনি তো আরো বড় আসলে, এমপি পর্যন্ত খাতির আছে, আপনি দশ হাজার না ত্রিশ হাজার টাকা কইরা দিবেন আর এইটা এই মাস থিকাই যাতে শুরু হয়। এইটাই শেষ আসা উনার, টাকা নিজের হাতে নিবেন না, থানাতে গিয়া যাতে দিয়া আসেন উনারা। এক্স-ছাত্রলীগ নেতারা যত না দুঃখী হইলেন তার চাইতে অবাক হইলেন বেশি। এমপি’রে এই কথা ফোন কইরা বলাতে উনিও মাফ চাইলেন, কইলেন, এইসব নিয়া আর আমার কাছে আইসো না।
পুলিশ যে দেশ চালায়, পলিটিশিয়ানরা না, এইটা রিয়ালিটিটাতে আমাদের রিডারদরেক আসলে গল্প-লেখার ভিতর দিয়া ইউজ-টু করা দরকার।
আমি আর আমার ছোট বইন
পার্টি শেষ হইয়া যাওয়ার পরে পিতলা রংয়ের বিলাইটা আমার ছোট বইনরে কইলো, ‘আমারে জোরে একটা লাত্থি দিয়া গেইটটা পার কইরা দেন। এই বাড়ির মালিকে আমারে লাত্থি দিলে বাঘের গুহায় গিয়া আমি পড়ি। আর বাঘ-বাঘিনীর প্যাঁচের মধ্যে পইড়া যাই…’ বাড়ির মালিকও আমারার লগে দাঁড়ায়া ছিল। উনিই পার্টিটা দিছিলেন। উনি আমাদের ফ্রেন্ডদের ফ্রেন্ড। উনি হাসলেন। আমার ছোট বইন কোন হেসিটেশন ছাড়াই লাত্থি দিলো বিলাইটারে। জাপানি ডিজাইনের একটা গেইট। ওই গেইটটা পার হইয়া বিলাইটা সাপের গুহায় গিয়া পড়লো। যদিও এতদূরে দেখতে পাওয়ার কথা না, তারপরও আমরা তিনজনেই দেখতে পারতেছিলাম বিশাল একটা অজগর ওই গুহার ভিতরে। চোখ বন্ধ কইরা শুইয়া ছিল। বিলাইটা একদম তার মুখের কাছে গিয়া পড়লো। যেন এইটা আসবেই, সাপটা জানতো আগে থিকা। চোখ বন্ধ কইরা, ঘুমঘোরে এলে মোর স্বপ্ন মনোহর টাইপ, ইজি এবং নরমালভাবে সাপটা তার জিভ দিয়া টান মাইরা বিলাইটারে মুখের ভিতর নিয়া গেলো। তারপর আবার ঘুমাইতে লাগলো। চাবাইলো না, মানে, মুখের কোন নড়াচড়া নাই। হয়তো ঘুম থিকা উইঠা খাবে, এখন আপাতত মুখের ভিতর নিয়া রাখলো।
একটু পরেই দেখি বিলাইটা লাফ মাইরা সাপের মুখের ভিতর থিকা বাইর হইয়া আসলো। গুহার ভিতরেই বালুতে ছিটকাইয়া পড়লো। বিলাইটা নরমাল, চোখে একটু ভয় থাকলেও তেমন কোন টেনশন নাই। সাপটার দিকে তাকায়া রইলো। সাপটারও কোন বিরক্তি নাই। ঠাস কইরা জিভ বাইর কইরা আবার বিলাইটারে মুখের ভিতর নিয়া নিলো। আমরা বুঝতে পারলাম এইটা একটা গেইম। আমরা হাসলাম একটু। জাপানি গেইটের ভিতর দিয়া বাইরে রাস্তায় চইলা আসলাম।
২.
তখনো রাত শেষ হয় নাই। কই ঘুমাবো আমরা বুঝতেছিলাম না। বাজারের মতো একটা এলাকায় চইলা আসছি আমরা। রাস্তার একপাশে মার্কেট, দোকানগুলির শাটার নামানো। স্ট্রীট লাইট জ্বলতেছে। আরেকপাশে পুলিশ ফাঁড়ির দেয়াল, উপরে কাঁটাতার। সাইডে ড্রেন, বালি জইমা আছে ওইখানে, গাছের পাতা… ইউজ হয় না এখন আর। তার পাশে একটা চৌকি। ভাবলাম ওইখানেই শুইয়া পড়ি। ওইখানে কাঁথা দিয়া ছোট বইন শুইয়া রইলো। আমি বইসা সিগ্রেট ধরাবো কিনা ভাবতেছিলাম। ভাবতে ভাবতে দেখি সকাল হইয়া আসতেছে। বা সকাল না হইলেও কেমন জানি সকালের আলো আছে। একটা মাইয়া আইসা আমার বইনের লগে কথা কওয়া শুরু করলো। মে বি আমারে শুনাইয়া শুনাইয়া কইতেছিল, ফোম কাইটা সোফা বানামু আজকে! আমি কইলাম, একলা একলা কেমনে এই কাম করবেন আপনি? শে কইলো, এইজন্যেই তো তোমরা’র কাছে আসছি। আমারে হেল্প করো তোমরা! আমি ভাবলাম, এইটাই চান্স, ফ্লার্ট করি একটু। কইলাম, হেল্প তো করতেই পারি, ফ্রি আছি যেহেতু; কিন্তু আমাদেরকে কি দিবেন আপনি হেল্প করলে? আমার ছোট বইনের খুবএকটা ইন্টারেস্ট নাই, শে উইঠা বইসা কাঁথার একটা কোণা হাত দিয়া ধইরা দাঁত দিয়া কামড়াইতেছিল। আর নাটকটা দেখতেছিল। মাইয়াটা তো খুবই চিন্তায় পইড়া গেলো, কি করবো শে। কইলো, না, না… হেল্প করলে একটাকিছু তো দিবোই। আমি কইলাম, ঠিকাছে এইখানে নিয়া আসেন তাইলে। খুব চিন্তিতভাবে মাইয়াটা চইলা গেলো। এমনে রাজি হইয়া যাবো এইটা শে ভাবতে পারে নাই। বা বুঝতেছে না আমার লগে ফ্লার্ট করাটা ঠিক হইবো কিনা।
একটু পরে সত্যি সত্যি সকাল হইতেছিল। পাশে চায়ের দোকানটাতে গরম পানির কেটলি বসলো। পাশের নাস্তার দোকানের পরোটা ভাজার গন্ধ আসতেছিল। কাস্টমাররা নাই তখনো। মাইয়াটাও আসলো ততক্ষণে। ওর কাজটা কইরা দিছি আমি। বড় কাঁচি দিয়া মাপমতো ফোমগুলি কাইটা দিছি। একহাত দিয়া ও ধরছে আর আরেকহাত দিয়া আমি ধরছিলাম আর কাটছিলাম। ওর কনফিউশনের কারণেই মনে হইছিল, ফ্লার্ট আর না করি; প্রফেশনালি কামটা কইরা দেই। ও যখন আসছে তখন ওর হাতে একটা মানিব্যাগ। কতগুলি পাঁচশ টাকা আর একহাজার টাকার নোট। ডিসাইড করতে পারতেছে না কোনটা দিবো। একবার একহাজার টাকার নোট হাতে নিয়া রাইখা দিলো, তারপরে আবার পাঁচশ টাকার নোট’টা নিলো। চা’য়ের দোকানটা ওর চাচার। মানিব্যাগটা ওর চাচার দোকানে রাইখা নোটটা নিয়া আমার দিকে আসতে লাগলো। এমন সময় মাইয়াটার বাপও আমার চৌকিতে আইসা বসলো। মাইয়াটা আইসা আমারে টাকাটা দেয়ার আগেই খুব ক্লোজ ফ্রেন্ডের মতো আমার খুব কাছাকাছি আইসা কইতে লাগলো, এট্টুক কাজের লাইগা কেউ কাউরে পাঁচশ টাকা দেয়, বলেন? মানে, সে তার মাইয়ারে তো আটকাইতে পারে নাই, এইজন্য এখন আমারে আইসা ইনসিস্ট করতেছে আমি যাতে টাকাটা না নেই। মাইয়াটা মনেহয় আমারে টাকাটা দিবোই। শে কোনো না কোনোভাবে আমারে অবলিগেটেড ফিল করাইতে চায়। এরা বাপ বেটি দুইজনেই পাগল। পুরা গুষ্টিই মনেহয় পাগল। চাচা’টা কোনদিকে না তাকায়া নিজের মনে গান গাইতেছে। এইখানে থাকা যাইবো না আর। যাই গা বাল।
সকাল হইলে আমার বইন আর আমার লগে থাকে না। দেখলাম ওর কাঁথাটা পইড়া আছে। ও গেছে গা অন্য কোথাও।
৩.
অফিসে যাওয়ার লাইগা বাইর হইছি এক কলিগের লগে। রাস্তায় বাজে রকমের ট্রাফিক জ্যাম। গলি থিকা আমাদের রিকশাটা মেইন রোডে উঠতেই পারতেছে না। মেইন রোডে উইঠা রোডক্রসিংটা দিয়া ডাইনে যাইতে হবে। ওইটা আরো টাফ। বামে গেলে ফ্লো’টার ভিতর ঢুইকা যাইতে পারলেই হইতো, কিন্তু ফ্লো’টার মধ্যে ঢুইকা ওইটার এগেনেস্টে গিয়া ওইপারের ফ্লো’টার সাথে কনসিসটেন্ট হইয়া তারপরে যাইতে হবে। কোন নিয়ম নাই এইখানে, ট্রাফিক পুলিশও নাই। জাস্ট চান্সটা নিতে হবে।
রিকশাওলা তো চান্স নিতে চাইলো একবার। তখন একটা ময়লার ট্রাক ওইপাশ থিকা এইপাশে আইসা রিকশাটারে চাপা দিতে নিছিলো। ভাগ্য ভালো সা্ইডে একটু জায়গা আছিলো, এই চান্সে অন্য সাইডটা ব্লক হওয়াতে বাম পাশের প্রাইভেট কার, রিকশাগুলিও সরতে পারলো। আমরা’র রিকশাওলা আর অন্যান্যরাও ময়লার ট্রাকের এই স্ট্রাটেজিক বেনিফিটের সুবিধা নিলেও ইচ্ছামতো গাল্লাইতে লাগলো। এতে কইরা সবাই যে সুবিধাটা নিলো সেইটাতে আর নজর দেয়া লাগলো না। সবাই গন্ধে নাক চাইপা ধরলো। এতগুলি মানুষ, কারোরই নাক দেখা যাইতেছে না। এক ময়লার ট্রাকের ড্রাইভারের ছাড়া। সে মোটামুটি জীবনানন্দের কবিতার মতোই উদাস। মানে, এতোসব চিল্লা-পাল্লা, আমিও হইতে চাইলাম কিছুটা তার মতো, তাহার মতো। কিন্তু আমরা চেহারা বরং ভচকাইন্না টাইপ হইয়া রইলো। আমাদের রিকশাওলাও ময়লার ট্রাকটারে গাল্লাইতে গাল্লাইতে রাস্তাটা ক্রস কইরা ফেলতেছিলো।
ওইপারে আইসা যখন ডাইনে চইলা যাইতেছি তখন দেখি ফুটপাতে পরিচিত একজন লোক’রে তার সেকেন্ড ওয়াইফ চেঁচাইয়া চেঁচাইয়া কি জানি কইতেছে। ‘তুমি পারো না এইটা তোমার সমস্যা, আমারে নিয়া কেন টানা-হ্যাঁচড়া করো…’ এইরকম টাইপ কিছু। রাস্তায় অন্যান্য ক্যাঁচালের কারণে এনাফ অডিয়েন্স পাইতেছিলেন না সেকেন্ড ওয়াইফ, কিন্তু পরিচিত লোকটারে হিউমিলেট করার জন্য এনাফ ছিলো। আসলে লোকটাও হয়তো চাইতেছিল পাবলিক প্লেইসে ঝামেলাটা সাইরা ফেলতে; যে, পাবলিক প্লেইসে কথা কইলে তো পাবলিক কি ভাববো এই ডরে তেমনকিছু কইতে পারবো না সকালবেলা আর বিকালবেলা অফিস থিকা ফিরা আসার পরে কিছুটা ভুইলাই যাবে। কিন্তু শে মে বি এনাফ ফেড-আপ, পাবলিকরে আর কোন কেয়ার করে না। যেইটা বলার রাস্তা-ঘাটে, মানে ফুটপাতেই বইলা ফেলতে পারে। এই ঘটনাটা কিছু মানুষ দেখতেছিল, কিছু মানুষ দেখতেছিল না। কিন্তু আমার পরিচিত লোকটার টেকনিকটা যে কাজে লাগে নাই সেইটা বোঝা যাইতেছিল।
আমার কলিগ এইটা দেখলে বেশি খুশি হইতো। সে একবার খুব বাজে সমালোচনা করতেছিল ওই পরিচিত লোকটারে নিয়া। তারে এই মজা দেয়াটা ঠিক হইবো কিনা বুঝতেছিলাম না। তো, পরে কইলাম, আপনি তো মিয়া মজাটাই মিস করলেন, ঘটনাটাই তো দেখলেন না! তারপরে কইলাম ব্যাপারটা। সে মুচকি মুচকি হাসতে লাগলো। আমি বুঝলাম না, এইটাতে তার কোন কন্ট্রিবিউশন আছে কিনা।
অফিসে পৌঁছাইয়া সে ওই পরিচিত লোকটারে ফোন কইরা এমনেই গ্যাঁজাইলো কিছুক্ষণ। আমি দূর থিকা খালি কিছু কথা শুনলাম। ব্যাপারটা ধরতেই পারলাম না।
৪.
নিচে চা খাইতে নাইমা ইউনির্ভাসিটির বড়ভাইয়ের লগে দেখা। উনি এখন বড় সাংবাদিক। উনার বড়নেস দেখানোর লাইগা কিনা জানি না কানে ব্লু-টুথ লাগাইয়া আমাদের (আমার লগে আমার কলিগও আছিলো) দিকে তাকায়া আরেকজনের লগে কথা কইতে লাগলেন। উনার অবস্থা দেইখা মনে হইলো, ব্লু-টুথে কথা কইতে উনি খুব একটা ইউজড-টু না। সিগ্রেটও খাইতেছিলেন। খুব মনোযোগ দিয়া কঠিন একটা সমস্যার কথা শুনতেছিলেন মনেহয়। এই মনোযোগের কারণে নাকি জোরে জোরে হুঁ-হ্যাঁ বলার কারণে ব্লু-টুথটা উনার কান থিকা পইড়া গেলো। উনি একটু ব্লাশ করলেন, আন-ইজি ফিল করলেও মানাই্য়া নিলেন সিচুয়েশনটার সাথে। ব্লু-টুথ তুইলা পকেটে রাইখা দিলেন। তারপরে মোবাইলটা কানে লাগায়া কথাটা শেষ করলেন। তেমন কিছুই না আসলে। এইরকম ঘটনা ঘটতেই পারে। এইটা নিয়া কোন কথাই আমরা কইলাম না। উনি চা খাওয়াইলেন আমাদেরকে, সিগ্রেট অফার করলেন। বগুড়ার হাইওয়েতে কি রকম রোড অ্যাকসিডেন্ট হয় এখন, এইটা নিয়া কথা কইলাম কিছুক্ষণ।
আমার নিজেরেই খুব আন-ফিট টাইপের মনে হইতে লাগলো। এইরকম চান্স পাইয়াও কোন টিটকারি করতে পারলাম না কোন। বড়ভাই বুঝতে পারবেন নিশ্চয় কত ছোট চাকরি করতে হয় আমারে।
৫.
মনে হইলো হাত ভাইঙ্গা পইড়া রইছি হসপিটালের বেডে। ঘন কালো পিচের একটা রাস্তা। রাতের বেলা। তা নাইলে এতো কালো তো হওয়ার কথা না, রাস্তা।
উল্টা-পাল্টা কত কিছু যে আসলো। তারপর চইলা গেলো। যাওয়ার সময় কইলো, ‘যা তরে মাফ কইরা দিলাম…’
রাতের বেলা বইলা স্বপ্ন বইলা ভাবতে পারলাম।
৬.
আবার একটা ভোর হইলো। আবার একটা সকাল। চারপাশে এতো এতো ধোঁয়া…। কনজিউজমড হয়ে গেছি আমি। কোন আগুন নাই।
রেভিউলেশনে পুড়বে বইলা দৌড়াইতেছে সবাই। আমি বইসা বইসা দেখলাম। হিরোইনের লাস্ট শট’টা মাইরা দৌড় লাগাইতেছে দুইজন। ওরা সোলজার, মার্চ করতে করতে যাইতেছে। ল’ফ্যাকাল্টি থিকা ইউনির্ভাসিটির এক টিচার বাইর হইয়া কইতেছে, এইটা ত বুঝলাম না, এইটা ত বুঝলাম না… কি হইতেছে…
যে বুঝলো, সে মে বি চুপ কইরা বইসা ছিল এনেক্স বিল্ডিংয়ের মাঠে। বা কিছু বলে নাই বইলা মনে হইতেছিল, ও বুঝছে, বুঝছে…
৭.
এতোদিন পরে টের পাইতেছি আমি, আমার ছোট বইন একটা শ্যাডোই আমার। ছিলো না কখনোই।
একটা ইমাজিনেশনই।
তাও ঠিকঠাকমতো করতে পারতেছিলাম না আমি।
২০৪৬
:আমার এখনো তোমার লাইগা মায়া লাগে তো।
আমি হাসি। হাসিতে মনেহয় একটু দুঃখ দেখতে পায় নীলু। কয়,
: তোমার বিশ্বাস হইতেছে না!
আমি আর হাসি না। কই, যাই গা তাইলে…
একটা বিকাল শেষ হয়। আরো কতোভাবেই তো হইতে পারতো। ভাইবা খারাপ-ই লাগে। এই কারণে মনেহয় আকাশে যে সন্ধ্যার মেঘ, সেও মনেহয় দুখী। বৃষ্টি হইলে মনে হবে, কেউ কানতেছে। অথচ যদি মন ভালো থাকতো, মনে হইতো কেউ নাচতেছে। কত যে মিনিং লাইফের। যতো কিছুই হোক, এই লাইফ নিয়া আরো কিছুদিন তো বাঁইচা থাকবো।
২.
নীলু ডাক্তার। অর কাছে গেছিলাম আমার ব্রেস্ট দেখাইতে। অন্য পোলাদের মতোন আমার বুক বা স্তন বড় হইতেছে না। ত্রিশ হইলেই এইটা হওয়ার কথা। আমারটার গ্রোথ হইতেছে না। পেনকেকের মতো একটু ফুইলা রইছে খালি। কিউপিড’স সিক্রেটস-এ গেলে শরমই লাগে। অথচ নীলুর কি সুন্দর চাপ দাড়ি উঠছে। বোঝা যায় সপ্তাহে দুইবার ট্রিম করে ও। কলেজে থাকতে কইতো ও, ডাক্তার হবে। পরে যখন দাড়ি উঠবে তখন নিজের দাড়ি নিজে ট্রিম করবে। ঠাট্টা কইরা কইছিল, তোর বুক বড় না হইলে আমার কাছে আসিস… আমি ঠিক কইরা দিবো নে! হাসতেছিল। তখন তো কথার কথা। একশজনে দশজনের এই সমস্যা হয়। আমি যে অ্যাভারেজের বাইরে এইটা মানতে অনেক কষ্ট হইছিল। আমার এক্স-ওয়াইফ কইতো, আমার দাড়ি উইঠা গেলো, তোমার বুক বড় হয় না ক্যান?
ডাক্তারদের ডিরেক্টরি খুঁইজা দেখি, আরে নীলু-ই ডাক্তার! নাম দেইখাও শিওর ছিলাম না। অস্বস্তিও আছিলো, চিনবো না মনেহয়। অথচ পয়লবার তাকাইয়াই চিইনা ফেললো। তাকানোতে কোন কনফিউশনই নাই। ওর দেখাটা দেইখাই আমি শিওর হইলাম, নীলু-ই এইটা। একই নামের ক্লোন না কোন।
নাম ধইরা রাখা তো অনেক এক্সপেন্সিভ। এর লাইগা বিয়া করা লাগছিলো, স্পার্ম ডোনেট করতে হইছে। নীলু বিয়া করে নাই। এমনেই শে তার নাম ধইরা রাখছে। অনেক পরিশ্রম করছে লাইফে। নিজের ড্রিম ফুলফিল করছে। আমি তেমন কোন ড্রিমের কথাই ভাবতে পারি নাই।
এমনকি হইতে পারে যে, নীলু আগে থিকাই জানতো এইরকম ঘটবো… আমার বুক দেখানোর লাইগা ওর কাছেই আসা লাগবো? একবার একদিন ক্যাজুয়াল সেক্সের ঘটনাই। আমিও মনে রাখি নাই। নীলুর তো মনে রাখার কোন কারণই নাই। পুরান একটা সিনেমা মান্ধাতার আমলের, তখন আম্রিকা সিনেমাও বানাইতো; নো স্ট্রিং অ্যাটাচড নামে; দেইখা কইলো, ফার্স্ট পার্ট ভালো আছে, আমি ওইরকম হবো! শে পারতো। এখনো পারে। আমরা তখন নদীর পাড়ে বইসা সন্ধ্যা বানায়া সিনেমা দেখতাম। আরেকটা সিনেমা দেখছিলাম ৫০/৫০। বেকুব পোলাটার ক্যান্সার হয়, কিন্তু কিউর হয়া যায়। শালা! মরা’র এতো কাছে গিয়াও মরতে পারে না।
আমার বুকও বড় হইতে পারবে এখন। মাইনর একটা হরমোনের সমস্যা আছিলো। নীলু ভালো ডাক্তার। আমার আর যাওয়া লাগবে না ওর কাছে।
৩.
রাতে বাসায় ফিরা ড্রিমটা ইন্সটল করি আমি। আমি নীলু হই আর নীলুরে আমি বানাই।
: আমার এখনো তোমার লাইগা মায়া লাগে তো।
নীলু হাসে। হাসিতে মনেহয় একটু দুঃখ দেখতে পাই আমি। কই,
: তোমার বিশ্বাস হইতেছে না?
নীলু আর হাসে না। কয়, যাই গা তাইলে…
৪.
মাঝে মধ্যেই রিনিউ কইরা এই ড্রিমটা দেখি আমি। পুরান ড্রিম রিনিউ করতে বেশি টাকা লাগে। নতুন ড্রিম অফার করে অরা। তারপরও টাকা জমায়া এইটাই কিনি আমি। ড্রিম অফিসার কয়, আপনে ভাই পাবলিক একটা! তারপর আমরা দুইজনেই হাসি। রিয়েল টাচ এই এক ড্রিম অফিসে আসলেই পাওয়া যায়। অফিসে কেউ আসে না এমনিতে। আমার অফিসের কাছে বইলা কফি’র মগটা হাতে নিয়া হাঁটতে হাঁটতে চইলা আসি। গত তিনমাসে তিনবার আসাতে সে চিইনা ফেলছে আমারে। ড্রিম অফিসের দেয়ালে সালভাদার দালি’র আঁকা ছবি, আরো অনেকের আছে, নাম জানি না সবার। মিউজিকও বাজায়, কার কার জানি। আমি ড্রিমটা রিনিউ করার স্লিপটা দেই। সে টাইম এক্সটেন্ড কইরা দেয়। ‘টাকা হইলে পেটেন্ট করাইয়া নিয়েন।‘ সে কয়। আমিও হুঁ-হ্যাঁ করি।
রাস্তায় একবার দেখার ইচ্ছা হয়, কিন্তু দেখি না। বাসায় আইসা গোসল-টোসল কইরা ফ্রেশ হয়া বসি। ড্রিম যে দেখবো এইটা ভাইবাই কেমন ড্রিমি ড্রিমি লাগে। অনেককিছু ভাবি তখন। কোন এক টাইমে সিনেমার নায়িকাদের নাম-ই আছিলো নাকি ড্রিম-গার্ল। আমি ভাবি, আলাদা আলাদা নামের কি দরকার, সবার নাম তো নীলু-ই হইতে পারতো। নীলু শুনলে হাসতো।
৫.
বুক বড় হইলে নীলু’র ড্রিম আর দেখি না আমি।
স্বপ্নের গরুগুলি
স্বপ্নের গরুগুলি ঘাস খাইতেছিল মুনের মাঠে। আর আমি রেড মার্সের আম বাগানে বইসা আছি। অথচ পাশাপাশি। সামারের হালকা বাতাস। কোন গান নাই। কানেক্টিভিটি নাই যেহেতু। আওয়াজ ছাড়াই কেমনে যে বাঁইচা রইছি আমরা! গরুদের ঘাস চিবানির আওয়াজ আছে। আছে বাতাসের শিষ। অখচ কোন গান নাই। যেন গেরিলা আক্রমণ করবে কনশাস ড্রোনগুলা। এইরকম একটা পিকচার। দূরে, ভ্যালির দিকে তাকায়া রইছি আমি। কখোন আসবে কনশাস ড্রোন? জাগায়া তুলবে আমারে ড্রিমের ভিতর থিকা…
যেহেতু রুরাল এরিয়া ড্রিম পুলিশও নাই কোন। এই জায়গাটা যে শহর না, এইটার লাইগা কোন মন-খারাপও নাই আমার। লেজার-লাইটের লাইগা বা স্কাই-ওয়াইড জোনের ‘টার্জান অফ দ্য জাঙ্গল’-এর লাইগা। এই এপিসোডে লেডি-টার্জান কি আবার রি-বিল্ড করতে পারবে হিউম্যান স্পেসিস’রে?- এইরকম বুক ধড়ফড় করা টেনশনও নাই। কয়েকটা গরু ঘাস খাইতেছে। আর আমি। একটা কন্সটেন্ট সন্ধ্যাবেলা। তাকায়া থাকতে থাকতে চোখ ব্যথা করে। মনেহয় ইল্যুশন কোন, ড্রিম তো না… কয়েকটা ক্র্যাপের মায়া-পাখি বইসা রইছে। ওরাও তাকায়া থাকে। গাছের পাতার মতোন রঙ। বাতাসে একটু একটু ভাসে। গিয়া বসে গরুদের পিঠে। গরুগুলি পাত্তা দেয় না। মনেহয় ওরা জানি নাই। না-থাকাগুলি ভালো ছিল।
আমি থাকতে পারি না বেশিক্ষণ। আমার ঘুম ভাঙে। স্বপ্নের গরুগুলি স্বপ্নেই থাইকা যায়।
২.
অফিসে আসার পরেও এই হ্যাং-ওভার থাকে অনেকক্ষণ। দুই ডোজ অ্যান্টি-ইলিউশন খাওয়ার পরে কাজে বসলাম। একটু পরেই পামেলা আসলো। পামেলাই যে খালেদ এইটা বুঝতে আমার বেশ টাইম লাগছে। পরে অরে জিগাইলাম, বাই-সেক্সুয়াল’রা এইটা শুরু করছে শুনছি। কোন সমস্যা হয় না তোমার? পামেলা কইলো, মাঝে-মধ্যে একটু গড়বড় তো হয়-ই; আগেও হইতো না মাইনষের? একজনের মেসেজ আরেকজনরে পাঠাইয়া দিলো? হইতো তো; তো, এইরকম-ই, এতো সিরিয়াস কিছু না। পামেলা আমার অফিস কলিগ। একটা মেমোরি বিল্ডিং ফার্মে কাম করি আমরা। ও ডিরেক্টর লেভেলে চইলা গেছে। অর কালার সেন্স থুবই ভালো। মেমোরিগুলা পুরা রিয়াল লাগে। আর ও ডিফরেন্সিয়েটও করতে পারে কালার কনট্রাস্টগুলি লিগ্যাল ইস্যুগুলাতে। একবার তো এমন এক কেইস আসলো এম.এম.এম.ও ফেইল, হিউম্যান ইন্টারভেনশন মাস্ট, তখন পামেলা ইর্যাশনালিটি ইমপ্যাক্ট দিয়া জিনিসটারে বাইর কইরা দিলো। এরপর থিকা-ই ও পুরা সেলিব্রেটি ইন্ডাষ্ট্রিতে।
আমি আর্কাইভে কাম করি। মাঝে-মধ্যে অর পুরান জিনিস দরকার পড়ে, তখন আমারে রিলাই করে খুব। কয়, আমার লগে কথা কইলে নাকি খুবই সুথিং লাগে, গল্প-গুজব করতে করতে অন্য অনেক কিছু ভাবতে পারে শে। ট্রান্সফর্ম করতে পারে অনেক চিন্তা। এইরকমই আসছে আজকে। তখন আমি খালেদের কথা জিগাইলাম। পামেলা হাইসা দিয়া কইলো যে শে-ই খালেদ। দুইটা নাম যেহেতু এফোর্ড করতে পারতেছি, দুইটা এগজিসটেন্স-ই নিলাম! আপনার মতো ডরাইলে কি আর লাইফ এনজয় করা যাবে? এইভাবে তো হবে না! হাহা হা কইরা হাসে…। চইলা যায়।
ফাইল নিয়া চইলা যাওয়ার পরেও আমি পামেলার কথা-ই ভাবলাম। খালেদ কেন হইতে গেলো শে? এত বড় অফিসিয়াল পজিশন, নাম-ডাক, এতকিছুর পরেও…। আর এমনিতেও তো অনেক রিস্কি একটা ব্য্যাপার। রাস্তা-ঘাটে ড্রিম-পুলিশের সাথে কোলাবরেশনে ফ্লার্ট-গ্যাংও নামছে। ওইদিনই ট্রেনের বাথরুমে ধরা খাইলো ইয়াং একটা মেইল। ইভেন লিফটে চুমা খাইতে গিয়াও একজনের লিপ কলাপস কইরা দিলো। মানে, ফ্লার্ট তো ফ্লার্ট, ওইটা দিয়া রেইপ করতে গেলে তো ধরা; আর মেইল-ইগো এতোটাই ইরেসেসটিবল যে, আটকাইতে পারে না। জেনটিক সায়েন্সেও প্রুফ করা যায় নাই যে, এইটা ন্যাচারাল ফেনেমেনা; কিন্তু ভ্যাকসিন নিতে গেলে আবার সাইড এফেক্ট বহুত। কিন্তু সবাই তো ভাই সেইফ সিকিওরড লাইফ চায়। এইজন্য তিনটা প্রডাক্টিভ স্পার্ম ডোনেট কইরা ভ্যাকসিন নিয়া নেয়।…
আমি ভাবতেছিলাম, একটা কমন মেইলের ইগো পামেলার কি কামে দেয়?
৩.
কেইসটা আসলেই অনেক জটিল। ফর্টি-ফাইভ ইয়ারস ওল্ড এক পুরুষ। ডিভোসর্ড। পোলা আছে একটা। এক্স-ওয়াইফের লগে থাকে। এক্স-ওয়াইফ হ্যাপিলি ম্যারেড। সে কোন স্পাউস ম্যানেজ করতে পারে নাই। প্রডাক্টিভিটি অ্যাবনরমালি কমতেছে। রিটায়ারমেন্ট এইজ পর্যন্ত যাইতে পারবো না। এখন সে তার নানীর নামে চাইল্ড অ্যাবিউজের মামলা করছে। আসল কথা হইতেছে, নানীর বিশাল প্রপার্টি। পুরাটা সোসাইটি-অউনড। এইটার ভাগ যদি তারে দেয়া লাগে তাইলে বেশ বেকায়দাতেই পড়তে হবে। সবগুলি মেমোরি ফার্মের ইনফরমেশন আছে; পুরা লাইফে সে কখনো মেমোরি ইন্সটল করে নাই। এমনকি কোনদিন সেক্সুয়াল ড্রিমও কিনে নাই। যেইটা বেশ আন-ইউজ্যুয়াল। পোলারে কয়েকটা মেমোরি গিফট করছে অবশ্য। কিন্তু সেইগুলি তো আর কাউন্টেবল না।
কিন্তু ছবিটা দেখার পরে অবাক হইলাম। আরে এইটা তো জয়নাল! জয়নাল আবার বিয়া করলো কখোন! কখোনই বা ডির্ভোস হইলো! বাচ্চাও পয়দা দিলো!
৪.
জয়নালরে আমি চিনতাম ছোটবেলায়। তখন সে লোকাল স্পেইসশীপ চালায়। মাত্র লাইসেন্স পাইছে। মার্স, আর্থ আর মুন – এই তিন ডেস্টিনেশনের ভিতরই থাকে। কোনসময়ই শিডিউল ঠিক রাখতে পারে না। খালি তাড়াহুড়া করে, তা নাইলে ইচ্ছা কইরা প্যাঁচ লাগায়, প্যাসেঞ্জারের কথা পছন্দ না হইলে। এইজন্য মার্চেন্টরা সবসময় অরে এভেয়ড করে। লাইসেন্স বাতিল হওয়ার টাইমে আবার কয়দিন ঠিকঠাকমতো চালায়া হাতে-পায়ে ধইরা চালু রাখে। আসলে ও বইসা থাকে খালি স্টাডি ট্যুর-এর ট্রিপগুলির লাইগা। রেইট-টেইট কমায়া এক শেষ অবস্থা। অন্য স্পেইসশীপের কেউ আর এই কারণে এই ট্যুরগুলাতে কমপিট করতেও আসে না। মালিকের লগেও অর আলগা খাতির। অর পাগলামি দেইখা হাসে। কিছু কয় না। এখন আর স্পেইসশীপ ট্যুর লিগ্যাল না বইলা কর্মাশিয়ালি চালু করতে পারে না। কোন স্কুল চাইলেই খালি স্টুডেন্ট নিয়া যাওয়া যায়। কিন্তু মালিকের মনে আশা, কোন না কোনদিন আবার হয়তো চালু হবে… তখন জয়নালই হবে তার অ্যান্ড্রোমিডা!
কিন্তু জয়নাল ধরাটা খায় আসলে আমাদের ট্যুর’টা দিয়াই। বেশি কেরামতি দেখাইতে গিয়া মার্সের রাডারের বাইরে চইলা যায় আর প্রচন্ড আওয়াজে বাচ্চা-কাচ্চারাও ডরে চিল্লাইতে থাকে। তখন রেসকিউ মেশিনরা আইসা আমাদেরকে নিয়া যায়। একমাস জয়নালরে স্পেইসে ফালায়া রাখে, শাস্তি হিসাবে। ও আসলে ফান করতে চাইতেছিল, চাইতেছিল আমরা যাতে আরো মজা পাই। পাইতেছিলামও আমরা। নিজের উপর অনেক বেশি কনফিডেন্স আছিলো ওর। ভাবছিল মনেহয় যে, ও একইসাথে ফান করতে পারবে আর চালাইতেও পারবে। দুইটা জিনিস কেন, অনেকে দশটা জিনিসের ব্যালেন্সও রাখা যায়… কিন্তু জয়নাল ওয়াজ টু মাচ ইন টু দ্য ফান!
একমাসের শাস্তি কাটায়া আসার পরে মালিকের কাছে স্পেইসশীপ বুঝাইয়া দিয়া ও চইলা যায়। কোথায় যে যায়, কেউ কোন খবরও জানে না। কই থিকা যে আসছিলো, সেইটাও আমাদের জানা ছিল না। ও যাওয়ার পরে সেই কথা মনেহয় আমরার। আরে! একবার অবশ্য কইছিলো যে, অর ছোটভাইয়ের বয়স আমাদের মতোন ছিল; রেডিয়েশন সেন্টারে মারা গেছে। ওইটা সে মাইনা নিতে পারে নাই। এক ডাক্তাররে জখম কইরা মুনের পাহাড় থিকা সে পালায়া আসছে আর্থে। এইরকম কোন একটা কাহিনি। কিন্তু ওর কথা তখন আমরা বিশ্বাস করি নাই। এখন তো জিগানোরও কেউ নাই।
এতদিন পরে ওর চেহারা দেইখা আবার চমকাইলাম।
৫.
খালেদ’রে এমনিতে আমি একটু এভেয়ডই করি। সে খুবই কর্ডিয়াল। এখন তো দেখা হইলেই হাসে। আমিও হাসি। জিগাই-ও, কেমন আছেন? মাঝে-মধ্যে সোশ্যাল গেদারিংগুলিতে দেখা হয়। অফিসের পামেলা-ই বেটার আসলে। মোর প্রফেশনাল। ইন্ডিভিজ্যুয়াল হিসাবে অ্যাক্ট করাটা খুবই মুশকিল। এতোটা ফেইক কে আর করতে পারে! অনেকে তো ডুপ্লিকেট-ই হায়ার করে এইসব পার্টির লাইগা। পামেলা সেইটা না কইরা নিজের ইনফিরিয়রটারে হাজির রাখে। খারাপ না ব্যাপারটা।
ওইদিন পার্টিতে আরো বেশি কর্ডিয়াল খালেদ। কইলেন, জয়নাল’রে চিনতেন আপনি? আমি তখন পুরা হিস্ট্রিটা কইলাম। কইলাম, আপনি তো জানেনই এইসব… আমারে আর কেন জিগাইতেছেন! সে কইলো, না, না অনেকসময় টোনটাতে হিডেন থাকে তো স্টোরিটা। যেমন, আপনার ফান ইলিমেন্ট’টা মাইনর হিসাবেই শুনছি আমি, অথচ মেজর একটা ব্যাপার হইতে পারে তো… এইরকম।
পরের দিন পামেলা’রে যখন অফিস দেখলাম আমি, মনে হইলো চিনে-ই না!
৬.
জোকারের রোলে আমি। আর জয়নাল চোর।
আমি পাহারা দিতেছি। জয়নাল ফ্রেন্ড হইয়া আসছে যেন।
বিড়ি-সিগ্রেট খাবো আমরা।
আমার খুবই কান্দা কান্দা লাগতেছিল।
এতো পুরান মেমোরি এইগুলি। এইগুলি তো ট্রু-ও, তাই না?
তখন দূরে স্ট্যাচু অফ লির্বাটি’র মতো পামেলা দাঁড়ায়া আছে। হাসতেছে।
আমি তো জোকস কই নাই কোন!
তোমারে দেখলেই আমার হাসি আসে!
তুমি আমারে দেখতেছো, আর দেখো জয়নাল সব চুরি কইরা নিয়া যাইতেছে…
আমি দেখতেছি তো!
তাইলে তুমি কিছু কও না কেনো?
তুমিই তারে চুরি করতে দিতেছো!
না, না… আমি কেন… আমি না তো…
আমি প্রুফ করতে পারি না। আমি বুঝতে পারি পামেলা আসলে ইনসার্ট করে ফেলছে নিজেরে আমার ভিতরে। শে দেখতেছে কি করছি আমি এতদিন, গোপনে, জয়নালের সাথে!
জয়নাল এই সোলার সিস্টেমের বাইরে যাইতে পারে নাই কোনদিন। অনেকভাবে সে চাইছে। তার না-যাইতে পারাটা সে আমারে ট্রান্সফার করে দিছে। আমার বেদনা দিয়া আমি সাজাইতেছিলাম সবকিছু আর্কাইভে। এইটুক আমার পাওনা হইছে – আমার বেদনা আমারে কনভিন্স করছে এইভাবে। আমি ট্রাপড হইয়া রইছি। ভাবছি, যদি একবার চইলা যাইতে পারি, কে আর দেখবে তখন আমার বেদনারে! এইরকম ছোট্ট একটা মেইল-ইগো’রে!
পামেলা আমার দিকে তাকায়া হাসতেছিল। অর হাসি ঠিক জিইতা যাওয়ার হাসি না। এমনিতেই। যেন আমি কোন জোকস বলছি। ঠিকমতো বলতেও পারি নাই। তারপরও আমার টমেটোর মতো মোটা নাকের দিকে তাকাইয়াই অর হাসি আসতেছিল। আর আমি কাঁচুমাচু করতেছি। বুঝতেছি না, আমিও হাসবো কিনা!
৭.
স্বপ্নের গরুগুলি ঘাস খাইতেছিল মুনের মাঠে। আর আমি রেড মার্সের আম বাগানে বইসা আছি। অথচ পাশাপাশি। সামারের হালকা বাতাস। কোন গান নাই। কানেক্টিভিটি নাই যেহেতু। আওয়াজ ছাড়াই কেমনে যে বাঁইচা রইছি আমরা! গরুদের ঘাস চিবানির আওয়াজ আছে। আছে বাতাসের শিষ। অখচ কোন গান নাই। যেন গেরিলা আক্রমণ করবে কনশাস ড্রোনগুলা। এইরকম একটা পিকচার। দূরে, ভ্যালির দিকে তাকায়া রইছি আমি। কখোন আসবে কনশাস ড্রোন? জাগায়া তুলবে আমারে ড্রিমের ভিতর থিকা…
বিলবোর্ডের একটা ছবি এইটা। ময়লা হইতেছে…
আমি জানি পামেলাও একদিন থাকবে একটা বিলবোর্ডে।
মেবি একটা শাদা বোরাক-ই শে। উড়ে যাইতেছে…
ডাবলিনার্স
শান্তনু’র লাস্ট লাইনটা আছিলো এইরকম – আমি তো ভালো কাস্টমার সার্ভিস দিতে জানি, সো এতো প্যারা নেয়ার তো দরকার নাই; গর্ভমেন্ট জব’টা আমি ছাইড়াই দিতে পারি। শেষে, সে দিছিলো কিনা আমি শিওর না। শান্তনুরে আমি আর জিগাই নাই। ইন ফ্যাক্ট, দেখাও হয় নাই, এরপরে। এর আগেই কেওটিক জিনিসগুলি শুরু হইয়া গেলো। সিনেমার মতো সিনগুলি ঢুইকা গেলো ঘটনার ভিতরে। তখন ঘটনাগুলিরে মনে হইতেছিল কোন আর্ট-ফিল্ম বা টিভি-নাটক। মানে, একসাইটমেন্ট কম আর ঘটনাগুলিও বেশ স্লো।
মেইন শহরের বাইরে একটা জেলা শহরে থাকি আমি তখন। একটা অষুধ আনতে যাইতে হয় শহরের বাইরের রিসার্চ সেন্টারে। রিসার্চ সেন্টার ইউনির্ভাসিটির মতোন। পাবলিকদের কাছেও অষুধ বেচে, প্রপার রিকমেন্ডশন থাকলে। আমি কিনতে যাই, কয়দিন পরে পরে। একদিন গিয়া শুনি নতুন অ্যাডমিনস্ট্রেশন ম্যানেজার আসছেন। ওইটাই শান্তনু। দেইখা চিনলো সে আমারে। ফ্যাসিলিটি দিতে চাইলো। আমি কইলাম থাক, থাক। তেমন কোন কিছু তো দরকার নাই। মাঝে-মধ্যে অষুধই তো নিতে আসি। কিন্তু শান্তনু কোনকিছু কইরা দেখাইতে চাইতেছিল। ঠিকাছে সেইটা। সে কদ্দূর পর্যন্ত কি করতে পারে সেইটা না কইরা দেখাইলে আমিও তো বিশ্বাস করবো না আসলে। তো, কইলাম, কোন হেল্প লাগলে জানা্বো নে। কিন্তু এইরকম অজ পাড়া-গাঁ টাইপ রিসার্চ সেন্টারে সে কেমনে থাকে? আমার জেলা শহরের প্রাইড দিয়া আমি জিগাইলাম। সে কইলো, স্পেশাল সার্ভিস আছে, ওইটা দিয়া সরাসরি মেইন শহরে চইলা যায় সে উইকএন্ডে। তারপরও তো, ঝামেলাই। জেলা শহরের প্রাইড ধইরা রাখতে চাইলাম আমি। পুরান পরিচিত মানুষদের সাথে দেখা হইলে এইরকমই তো হয়।
এরপরে দূর থিকা কয়েকবার দেখা হইছে। শান্তনু’র সিরিয়াস প্রফেশনাল চেহারা নিয়া কারে কারে কি কি যেন ইন্সট্রাকশন দিতেছে। অষুধ নিয়া চইলা আসছি আমি। একবার সন্ধ্যাবেলা গেছি। ওদের ডরমেটরি’তে সন্ধ্যাবেলার স্ন্যাকস খাইয়া ফেরত আসতেছি। একলা একটা বোরাক নিয়া আসা তো কস্টলি, এইজন্য শেয়ারে আসতেছি। এইরকম রিমোট জায়গাগুলিতে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট বইলাও কিছু নাই। নরমালি লগের প্যাসেঞ্জারদের সাথে কথা কই না। অন্যরাও কয় না। কিন্তু অন্যরা একই গ্রুপের; শান্তনু স্যার’রে নিয়া কথা কইতেছিল। মেইন শহরে যাওয়া নিয়া কি নাকি ঝামেলা হইছে। ভিসি বা সিইও যাইতে দিতে চায় না, কইছে,মাসে একবার যান উইকলি না গিয়া। শান্তনু আরো ইরেগুলার হইয়া গেছে এরপরে, ফ্রাইডে দুপুরেই চইলা যায় মানডে’তে বারোটার আগে আসে না। এইসবকিছু। আমি ভাবলাম পরেরবার আসলে শান্তনুর লগে দেখা করবো নে। বেচারা ঝামেলায় আছে। আমি কোন উপকার তো করতে পারবো না, কিন্তু শুইনা দেখি কি অবস্থা; ও তো চাইলে জেলা শহরেও আইসা থাকতে পারে! নাকি আমি থাকি বইলা, আমারে হেল্প করবো বলছিলো বইলা জেলা শহরে আইসা থাকাটা ওর জন্য ঝামেলার হইতেছে?
পরেরবার দুপুরের দিকে আসছি রিসার্চ সেন্টারে। একটু দূরে শুনি যে শান্তনু এক কলিগের লগে কইতেছে, সে তো চাকরিটা ছাইড়াই দিতে পারে।…
২.
তখন একটা এয়ারশিপে কইরা এক মোর্যাল সায়েন্টিস্ট তার সুন্দরী এসিসটেন্ট নিয়া এক্সপেরিমেন্ট চালাইতেছে। এয়ারশিপের লগে অনেকগুলি পিচ্চি পিচ্চি ড্রোন। এসিসটেন্ট একটা বোতাম টিপলো আর একটা ড্রোন গিয়া রিসার্চ সেন্টারের একটা বিল্ডিংয়ে মিসাইলের মতো গিয়া লাগলো। বুম! ‘দেখছেন স্যার, টার্গেট একদম ঠিকাছে!’মোর্যাল সায়েন্টিস মনেহয় জানতোই। মাথা নাড়লো সে, যে শুনছে। কিন্তু আরো কি কি জানি হিসাব করতেছে। এসিসটেন্টও একটু উদাস। দূরের আগুনটা দেখতেছে। আরো দুয়েকটা এক্সপেরিমেন্ট মনেহয় ট্রাই করবে।
৩.
আমি রিসার্চ সেন্টারে যাই না আর। অরা ফর্মূলা বেইচা দিছে কয়েকটা অষুধ কোম্পানির কাছে। এখন দোকানেই পাওয়া যায়। কিন্তু যতবারই আমি অষুধটা কিনতে যাই শান্তনু’র কথা মনেহয় আমার। এমনো হইতে পারে যে, এইটার কোন সাইড এফেক্ট আছে, ইল্যুশন কাইটা যায়, থাকে না ঠিকমতোন; বা ইমব্যালেন্স কইরা দেয়, ডাইনদিকে যাইতে থাকলে খালি ডাইনদিকেই যাইতে থাকে, এইরকম; বা হয়তো তেমনকিছুই নাই, একটা অভ্যাস বেশিদিন চলতে থাকলে এমনিতেই ক্লান্ত লাগে, ইরিলিভেন্ট লাগে, এইরকমও হইতে পারে। শান্তনু’রে জিগানো যাইতো। এখন হয়তো সেও ভুইলা গেছে, কয়দিন চাকরি করার স্মৃতি। আমারে মনেহয় ভুলে নাই। আমি তো হইতেছি লো পয়েন্টটা, যেইখানে সে নামছিল একবার লাইফে; যে, থাইকাই যাইতে পারতো জেলা শহরের মনোটোনাস লাইফে, এইরকম প্রভাবিলিটর ভিতর। সেই ডর আমি দেখছিলাম ওর চোখেমুখে। ভুলে নাই মনেহয়।
মেইন শহরে গেলে আমার যেইরকম আলগা আলগা লাগে। মনেহয় ফিরা আসি ডিস্ট্রিক্ট টাউনেই। এখনো মেডিভেল আমলের রেললাইন আছে। বড় বড় গুদামঘর। দুইটা বিয়ার খাইয়াই একটা সন্ধ্যা পার কইরা দেয়া যায়। যেইটারে মনোটোনাস ভাবে লোকে সেইটাই তো লাইফ। জাস্ট পার্টিকুলারগুলি ব্লার হইতে থাকে বইলা শীতের সকালের মতোন মনেহয় প্যাটার্নটা। ছোট ছোট জিনিসগুলিরে ছোট ছোট ভাবতে পারাটাই মনেহয় সমস্যা। বিশু পাগলা আর বিশু পাগলা না, কোন ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ বা ম্যাডনেস অ্যান্ড সিভিলাইজেশনের একটা ক্রিটিক – এইরকম ভাবতে গেলে রেফারেন্স শিফট করা লাগে। জেলা শহর ভাল্লাগে না আর।
শান্তনু থাকতে পারতো আসলে। এখন দেখেন, সে গল্পের ভিতরেই আর নাই।
৪.
শান্তনু কি কোনদিন শান্তনু হইতে পারবে যদি কোন গল্পের ভিতরে সে না থাকে আর?
৫.
ট্রেনে যাইতে যাইতে দেখার ট্রাই করতেছিলাম। এতো জোরে যাইতেছিল যে কিছুই দেখা যাইতেছিলো না। আমি অন্য আরেকটা জেলা শহরে চইলা গেছি। ওই জেলা শহরের উপর দিয়া যাইতেছিলাম। নামটা মনেই হইতেছিল না। মনে হইতেছিল অন্য অনেককিছু, মনে হইতেছিল – জেমস জয়েস, ডাবলিনার্স।
আন-নোন
দেয়ার ওয়্যার টাইমস যখন আন-নোন হওয়াটাই ছিল অ্যাট্রাকশনের মূল উপায়া। আমি তো তোমারে জানি না – এইটা হৃদয়ে বিরাট সক্রেটিস হাহাকার ক্রিয়েট করতো, সেইরকম টাইমের গল্প এইটা।
আমরা ফিরতেছিলাম। রিকশায়। মনিকা, মানিক আর আমি। রিকশাটা রাখা হইছে আসলে একটা এনশিয়েন্ট ফিলিংস দেয়ার লাইগা। রিকশাওলারাও মানুষ, থ্রি-ডাইমেনশনাল দুনিয়ায়। তবে নিয়েনডার্থাল টাইপ, ফিলিংসের কমপ্লিকেসি নাই, টাইমের নন-লিনিয়ারিটি নাই; লোকাল ইমপ্যাক্টগুলি আছে, ইমোশনালি সাপ্রেসড থাকতে পারে… কমপ্লিকেটেট রোবটগুলির চাইতে অনেক বেটার। আর ড্রাইভার ছাড়া গাড়ির মান-ইজ্জত থাকলেও রিকশাওলা ছাড়া তো রিকশার কোন বেইলই নাই, ইন ফ্যাক্ট রিকশাওলাই মেইন এইখানে, রিকশার চাইতে। আর মানিকের অনেক টাইম-মানি আছে, চাইলেই এনক্যাশ করতে পারে। সো, এইটুক লাক্সারি আমরা এর্ফোড করতেই পারি। রিকশায় ঘুরতে ঘুরতে একটু বাতাস খাইলাম।…
মানিক আমার চাইতে একটু মোটা, এর লাইগা আমি উপ্রের সিটে বসছিলাম রিকশার। মনিকা আর মানিক কাপল। অরা সারাদিন একলগেই আছিল। ফিরার সময় কাভার লাগে তো একটা, আমি এইজন্যে লগে আছিলাম। বা আন-নোন হওয়ার প্লেজারে আমিও পার্টিসিপেট করতে চা্ইতেছিলাম মনেহয়। মনেহয় এই কারণেই ঝামেলাটা বাঁধলো।
বাসার কাছাকাছি আইসাই দেখি, বাসাটা নাই আর। দোতলা ছিল দালানটা, একটা রেললাইনের পাশে। হলুদ কালারের। এখন অন্য কোন ড্রিমের ভিতর অকুপাই হয়া আছে। এমনো হইতে পারে, পথ ভুল করতে চাইতেছিলাম আমরা। অন্য কোন গলিতে ঢুইকা পড়লাম তখন। একটা শেল্টার সেন্টারের সামনে আইসা দাঁড়াইলাম। বুঝতেছিলাম বাঁইচা থাকতে হইলে, কন্টিনিউ করতে হইলে যেকোন একটা বিল্ডিংয়ে ঢুইকা পড়তে হবে আমাদেরকে।
শাদা একটা তিনতলা বিল্ডিং। শিখাদের বাড়ির আশেপাশের কোন দালান। শিখা হঠাৎ কইরা একবার ফার্স্ট হয়া গেলো স্কুলে, তখন ওরে চিনছিলাম। এমনিতে অ্যাভারেজ গার্ল, ঢং ঢাং করতে রাজি আছিলো না কোনসময়ই, শে যে মেয়ে – এই ধারণাটার ভিতরেই মলিন হইয়া গেছিলো। অদের দোতলা দালান, সামনে একটু উঠান। শিখাদের বাড়িতে যাই নাই, কিন্তু বাইরে থিকাই চিনতাম। ধুমকেতু রেইন আসার টাইম হয়া গেছিলো, এর লাইগা আমরা তাড়াতাড়ি কইরা বিল্ডিংয়ের ভিতরে ঢুইকা পড়তেছিলাম। সাইডের গ্যারাজে দেখলাম হেব্বি একটা মোটর সাইকেল, সাইডে দুইটা উইংস আছে, বডির সাথে মিশানো, ইচ্ছা হইলে একটু দূর উইড়াও যাইতে পারে, এইরকম। দেখলেই লোভ লাগে।
শেল্টার সেন্টার নরমাল বিল্ডিংয়ের মতোনই। শাদা কালার। আলাদা আলাদা রুম। লিনিয়ার টাইমের সিম্বল। নরমাল লোকজন ভাববো, নরমালই এইটা। দোতালায় উইঠা দেখলাম বাইকার লোকটা আছে একটা রুমে। সে জাস্ট রুম থিকা উঁকি দিয়া আমরারে দেখলো। তারপর আবার নাই। আমরা তিনতলার একটা রুমে গিয়া উঠলাম। থাকার লাই্গা তিনতলাটাই বেস্ট।
২.
আসলে টেনথ ডাইমেনশনে আমরা আর বাঁইচা থাকতে পারতেছিলাম না। এতো টার্ন আর এতো টিউন। সারাক্ষণই গান বাজতেছে। কাহিল লাগে এতো এট্রাকশন। একরকম পালায়াই আসছি। এতো এতো অপশন। হাঁফ ধইরা যায়। তার চাইতে বড় কথা, প্রেম তো থ্রি ডাইমেনশনাল একটা ব্যাপার। মনিকা আর মানিক এক্সপেরিমেন্ট করতে চাইতেছিলো এইটা নিয়া। আর আমারেও ইন্সফ্লুয়েন্স কইরা ফালাইছিলো। কোন অবজারভার না থাকলে ঘটনা ঘটতে পারে না। সো, আমারে লাগতোই ওদের। আমিও ভাবছিলাম, খারাপ কি! পুরানা দিনের দুনিয়া দেখা হইলো। অরাও এইরকমই কইছিলো আমারে।
কিন্তু ঝামেলাটা বাঁধলো, খালি আমরাই তো না; থ্রি ডাইমেনশনাল দুনিয়ায় আরো অনেকেই তো আছে। ওভার পপুলেটেট হয়া যাইতেছে একদম। চাইরদিকে মানুষ গিজ গিজ করে। মেশিনগুলি তো আরো বেশি। আর ঝামেলা হইলো আলাদাও করা যায় না। আর একবার আইলো তো ব্যাস! থাকবোই। যেমন, এই বাইকার লোকটা উঁকি দিলো, দোতালা থিকা। সে পার্ট অফ দ্য মেমোরি হয়া গেলো। বাতিল হইলো না। টাইমের স্ট্রেইট মিনিংয়ের মজাটা এইরকম। ইরেজ কইরা কইরা আগায়া যাইতে হয়, মেমোরির খোপ বানায়া।
আমরা আমাদের ফ্ল্যাট’টাতে গিয়া দরজা লাগায়া দিলাম।
৩.
এত ধকল গেছে যে ভাবলাম, ঘুমাই। মানিক আর মনিকা প্রেম করুক।
ঘুম ভাঙ্গার পরে ভাবলাম পানি খাই। তখনই কেমন একটু আন-ইউজ্যুয়াল মনে হইলো – অদের লাভ মেকিং কোন সাউন্ড নাই ক্যান! বা হয়তো ঘুমাইতেছে এখন। আমি গিয়া আরেকবার ঘুমানির ট্রাই করলাম। ঘুম ছুইটা গেছিলো। আসতেছিলো না আর। আবার বাইর হইয়া দেখি অদের রুমের দরজাটা খোলা। বিছানাটাতে সুন্দর কইরা বালিশ বিছানো, কেউ শুয়-ই নাই। মনের মধ্যে কেমন খটকা লাগলো।
সিঁড়িতে গিয়া দেখি, দোতলার লাইট জ্বলতেছে। দরোজাটাও একটু ফাঁক করা।
‘আমার সব, কই ছিলেন আপনি এদ্দিন!’ আমি দেখি আকুল হয়া মনিকা বলতেছে মানিক’রে। মানিকও শক্ত কইরা জড়ায়া ধরছে মনিকারে। মনিকারে খুব খুশি খুশি লাগে।
কিন্তু অরা দোতালা’তে ক্যান?
মানিকরে কেমন জানি মেকানিক্যাল লাগলো আমার কাছে। মানিক তখন পিছন থিকা আমার কান্ধে হাত রাখে। আমি না তাকায়াই বুঝতে পারি, এইটা মানিকের হাত। লিনিয়ারিটির ভিতর মাল্টিপ্লিসিটি’টারে নিয়া আসছে অরা, মোর একসাইটমেন্ট ক্রিয়েট করার লাইগা। পিছনে তাকামু কিনা বুঝতে পারি না। এই ইল্যুশনারি জিনিস দেখা তো ঠিক হইবো না। তারপরও পিছন ফিরি, তাকাই মানিকের দিকে। ও ও তাকায়া রইছে অদের দিকে। আমার দিকে না তাকায়াই কয়, এমনে তাকাইস না! আমি জাইনাই পারমিশন দিছি, ও তো কোনদিন আন-নোন ফিল করে নাই! এদ্দিনের রিলেশন, এইটুক তো করতে পারা দরকার!
পারমিশনের কি হইলো আমি বুঝতে পারি না, দুইটা সেপারেট আইডেন্টিটি না অরা! আর দুইটা টাইমেরই তো ব্যাপার, তা নাইলে রিলেশন কেমনে আছিলো! পরে টের পাই থ্রি-ডাইমেনশন তো একটা পারসপেক্টেভরই ব্যাপার, ওনারশিপ লাগে যে কোনকিছুরই, টাইমেরও। অথরিটি ছাড়া কিছু এগজিস্ট করে না এইখানে। পারমিশন রিকোয়ার্ড। অপজিট এমার্জ না করলে কোনকিছু মিনিংয়ে আইতে পারে না।
আমি কই, চল আমরা তিনতলার যাই তাইলে! মানিক মনেহয় আমার কথা শুনেই না; হাবিজাবি কইতে থাকে। কয়, বাসনার তো শেষ নাই, টাইমের লিমিটেশন তারে আরো বাড়ায়া দেয়… মনিকা নামতে চাইলো এই এনিমেল ইন্সটিংক্টে, যেইখানে ফিলিংস আছে, ব্যাখ্যা নাই। ব্যাখ্যা তো খুব টাইম-বাউন্ড ব্যাপার, এইখানে টাইম নাই। একটু সইরা গিয়া টাইম থিকা বাইর হইয়া যাইতে হয়… আমি কোন ঘটনা না, কোন একটা অবজেক্টই… একটা ফিলিংস আইসা দখল কইরা ফেলতে পারে… মনিকা সইরা সইরা যাইতে চাইছিলো আসলে, এইজন্য শে আইছে, আমি জানতাম আগেই।… ধরা খাইলে এইরকম বলাটাই নিয়ম। আমিও জানতাম এইটা।
কিন্তু আমাদের জাইনা যাওয়াটা আমাদেরকে আরো আটকাইয়া ফেলতেছে, আমি বুঝতেছিলাম। এনিমেল ইন্সটিংক্টটারে আরো মানবিক হওয়ার ভিতর দিয়া ও মোকাবিলা করতে চাইতেছে। কিন্তু এইটা তো পসিবল না। মানিক’রে আমি ধইরা বাইন্ধা তিনতলায় আইনা ঘুম পাড়ায়া দিলাম। তারপর আমার রুমে গিয়া ঘুমায়া গেলাম। বহুত দেখছি বালের এই প্রেম! আমার আর পোষায় না। ঘুম-ই বেটার।
৪.
সকালবেলা দেখি মানিক আর মনিকা জড়াজড়ি কইরা ঘুমাইতেছে। দরজা হা কইরা খোলা। পবিত্র প্রেমের ব্যাপার মনে হইতেছিলো। মেবি আমরা ২০৪৬-এ আছি। এর আগে বা পরে কোথাও যাই নাই। কোন ‘আননোন’ও নাই আমাদের। আমরা জাস্ট ফ্রেন্ড।
আমরা থাকি নাই আর ওইখানে। ঘুইরা ফিরা চইলা আসছি আমাদের দুনিয়াতে আবার।
৫.
পরে আমার মনে হইছে, ব্যাপারটা এইরকমও হইতে পারে যে, আমারই খারাপ লাগতেছিল আসলে। অরা যদি থ্রি-সামই করতে চাইতেছিল তাইলে আমারে কইলেই পারতো! আমার লগেই করতে পারতো! খামাখা একটা জেলাসির ড্রিম পুশ করার কোন মানে ছিলো না তো!
৬.
কে জানে! মানে, যে যা জানে তার জানা নিয়াই সে/শে আছে, থাকতে পারতেছে তো…
মেমোরি
‘তুই জানোস, ওরাকল যে পাস্ট দেখতে পায়, আমরা’র?’ কৌতুকের মা জিগায় আমারে।
আমি কই, ‘তো কি হইছে?’ এইরকম আন-ইন্টারেস্টেট থাকার লাইগা অনেক কষ্ট করা লাগে আমারে। কিন্তু আমি কি করবো! এই ২০৪৬-এ আইসা এইরকম ওল্ড-ফ্যাশান কিউরিসিটি দেখলে বিলা লাগে। আমরা’র ফিউচার আমি জানি, কৌতুক জানে, কৌতুকের বাপ জানে, কৌতুকের মাও জানে। তারপরও শে পাস্ট নিয়া কেমনে একসাইটেট থাকে! একটা মোমেন্ট চইলা যাওয়ার পরে সেই মোমেন্টটা তো আর থাকে না। মেমোরি সেন্টারে চইলা যায়। নানান গেইমিং মেশিন তৈরি হয় মেমোরি দিয়া আমরা’র। মোমেন্টের মাল আমরা। এই ক্যাটাগরি মাইনা নিয়াই তো আছি।
তারপরও শে কইতেই থাকে। ‘চল, আমরা ওরাকলের কাছে যাই!’ কৌতুকের মা একসাইটেট খুব। আমার ডর লাগে। যদি শে জাইনা যায়, আমি কে ছিলাম, কি ছিলাম! কোন পুরুষ কবি’র কবিতার ধোনের ভিতরে বন্দী আছিলাম কিনা, কে জানে! কিন্তু আমি দেখাই যে, ব্যাপারটা আন-ইর্ম্পটেন্ট অনেক। আমি বলি, ‘কালকে যে চান্দের সফরের টিকিট কাটাইলা আমারে দিয়া, তুমি তো মার্সের চক্করেও যাইবা না। যাইবা ওরাকলের কাছেই। খালি প্যাঁচ-পুঁচ লাগাও বাল!’
‘চান্দে যাই আর মার্সেই যাই। তুই তো যাইতেছোস। কয়টা ইউনি কয়েনের লাইগা তোর এতো পুড়ে ক্যান!’
এইসব হাবিজাবি কথা কই আমরা! টাইম তো পার করা লাগবে। যত টাইম একলগে পার করতে পারবো তত ইউনি কয়েন এন্ট্রি হইবো আমরা’র নামে। আরো কয়েকজন মিইলা থাকতে পারলে আরো ভালো হইতো। একলা টাইম পাস করলেই কয়েন কমতে থাকে উল্টা। লোনলি ফুল মনেহয়। মনেহয়, আমি আবার গরিব হয়া গেলাম!
৩৬ বছর বয়সে ধুমকেতুর ক্র্যাশে মারা-যাওয়ার আগে আর যে কতোকিছু করবো শে, আমি ভাবি। আমার ২৫, ২৭-এ মরবো আমি। কিন্তু দুই বছরের ফিউচার নিয়া আমরা একসাইটেট অনেক। রিসেন্ট ফিউচারগুলি ভালো অনেক। দুইদিন পরে পরে দেখা যায়। এই দুইদিন আমরা অনেক ফান করবো, অনেক ক্রাউড থাকবে আমাদের লগে, অনেক কয়েন পামু আর দেদারছে খরচ করমু!
মাঝখান থিকা এই ওরাকলটাই একটু ঝামেলা। কই থিকা যে বাল কি হয়! এইসব ভাবতে ভাবতেই জড়ায়া আসলো আমার কনশাস। ভালোই হইলো তাতে। মর্নিং রিচুয়ালটা ফানি হইলো অনেক। কৌতুকের মা কয়, তুই ঘুমাস কেন! আমি কই, আমারে জাগায় দে! আর শে কি যে খুশি হয়। আমারও ঘুম ভাঙ্গে। মনেহয় ইউনিভার্স ছড়ায়া পড়তেছে আবার। থাইমা নাই আর সার্টেন ফিউচারের ভিতরে।
জাইগা থাকতে থাকতে আমরা আবার ঘুমায়া যাই। আবার বিকাল আসে। আবার আমরা জাইগা উঠি একসাথে। আমাদের বোকাচোদা ইউনিভার্সে। যেই ইউনির্ভাসে ওরাকলও আছেন একজন। যিনি মেমোরি’র কথা শুনাইবেন কৌতুকের মা’রে।
ওরাকলের কার্লি চুল। মোটা। কালো কুতকুত চেহারা। মুখে ফোটা ফোটা কালা দাগ। তারপরও দেখলে সুন্দর লাগে তারে। কোন একটা দ্যুতি বাইর হইতেছে জানি। থাকেন একটা দেড়তলা বিল্ডিংয়ে, গ্যারাজের উপরে। সন্ধ্যাবেলায়। বাইরে কৃষ্ণচূড়া গাছের আলো নিইভা আসতেছে। ভিতরে আলো জ্বলতেছে, এনলাইটমেন্টের। আমি দেইখাই বাইর হইয়া যাই। কৌতুকের মা’রে কই, আপনে যান! আমি বাইরে খাড়াই।
আপনে শুইনা মজা পায় শে। কয়, হ, তুই সবসময় খাড়ায়াই থাকবি! কিন্তু একসাইটেটমেন্টে জ্বলজ্বল করতেছে তাঁর চোখ জোড়া। আমারেও থাকতে কইলো শে, এই বইলা। আমিও তো আছিই। এই দুইদিন। থাকলাম!
ভিতরে অরা এমনভাবে কথা কয়। আমি আধা শুনি, আধা ইমাজিন করি। কিন্তু শুনতে চাই না আসলে। কিন্তু আমরা তো ইনফিরিয়র মেশিন, আন-ইউজড সফটওয়্যারগুলি থাইকাই যায় কিছু, চিপা-চাপায়। চাইলেও রেস্ট্রিক্ট করা যায় না।
অনেকক্ষণ কোন আওয়াজ নাই। আমি সিগ্রেট ধরাই। দেখি, দুইটা কাক সামনের বারান্দায়। চুপচাপ বইসা রইছে। অদের মুখেও কোন কথা নাই। সন্ধ্যাবেলা বইলাই হয়তো।
ওরাকল কয়, ‘মেমোরি তো স্থির থাকে না বইন! তুমি যতো সইরা যাও ফিউচারে মেমোরিও মুইছা যায়। চিন্তা কইরো না এতো!’
‘চিন্তা না সিস্টার। মনেহয় ‘মনেহয়’ শব্দটারে কই জানি শুনছি আমি। মেমোরি’র মতো মনেহয়। আমাদের সিস্টারহুডের ভিতরেও শান্তি পাই না কোন। মনেহয় মইরা তো যাবোই! এইটুক একটা শব্দের মনে-না-হওয়া মেমোরিটা তবু জানতে ইচ্ছা হয়।…’ অর কথা শুইনা অনেক অন্যরকম লাগে আমার। ডাউটই হয়, ঠিক শুনতেছি তো! কি যে হাস্কি ওর কথা। কথা শুনলেই মনেহয় গান। এখনো তা-ই। কিন্তু কি দুখী দুখী ভাব! মনেহয়, মনেহয়… শুনিই নাই কোনদিন।
ওরাকল একটু জোরেই হাসেন তখন। কন, ‘হোয়াই সো সিরিয়াস!
এই ঘর থিকা যখন বাইর হবা তখন তোমার ভুইলা যাওয়া মেমোরি থিকা যে একটা হরর ফিল্ম বানানো হইছে ওইটা তোমার আর মনে পড়বো না। ফানিও লাগবো ভাইবা যে একটা সময় এইটা নিয়া তুমি ভাবতে চাইতেছিলা।… বাইর হয়া দেখবা, বরফ পড়তেছে, আলাস্কার মতোন একটা দুনিয়া। স্নো-ঝড়। একটা জোকারের মনুমেন্টের কাছে আইসা ঘটনা ঘটবো। খুবই ছোট। কিন্তু তোমার মনটা ভালো হইয়া যাইবো। আগেও ঘটছিলো এই ঘটনা। এইবার রিপিট হওয়ার পরে তুমি একবারে ভুইলা যাইতে পারবা। এখন এই সিগ্রেট’টা ধরাও। কিছুক্ষণ মন-খারাপ থাকবো তোমার। কিন্তু এইটা নিয়া ভাইবো না।
‘কিন্তু কি আছিলো এই ‘মনেহয়’ ‘মনেহয়’ ব্যাপারটা?’
‘কিছুই না। থাকে না টিউমার-টুইমার। কিছু সেল শরীরের আন-কিউরেবল। ক্যান্সার। ফালায়া দিতে হয়।… যাও, ভাইবো না আর!’
আরো কিছুক্ষণ অরা বইসা থাকে মনেহয়। কাকগুলি উইড়া যায়। চড়ুই আসে একটা ফুর ফুর কইরা। বাসার ভিতরে কোথাও গিয়া লুকায়। কৃষ্ণচূড়া গাছটা অন্ধকারে যে কোন গাছের মতোই। লাল রংগুলি মুছে যায় কালা’তে।
কৌতুকে’র মা আসে। হাসে না তখন। কয়, চল যাই! আমিও জিগাই না কিছু। একটা সিগ্রেট ধরায়া নিজে নিজেই টানতে থাকে শে। বাইরে স্নো-ঝড়। প্যাঁক-কাদায় ভর্তি রাস্তা। রাস্তার মোড়ে জোকারের শাদা একটা মনুমেন্ট। দেখছি আগে। কিন্তু খেয়াল করি নাই। হঠাৎ কইরা জোরে একটা বাতাস আসে। অর কপালের কৃষ্ণচূড়া রংয়ের টিপ’টা গিয়া জোকারের রং উইঠা যাওয়া লাল নাকে গিয়া পড়ে। দেইখা দুইজনেই হাইসা উঠি আমরা।
আমি কই, পারফেক্ট হইছে একদম!
কৌতুকের মা’র হাসিটা মলিন হয় একটু; কয়, ‘বেচারা, পুরান প্রেমিক!’
আমি কই, কি কইলা!
ও কয়, ‘কিছু না, আজাইরাই, বাদ দে!’
তারপর হাইসা উঠে। কইতে থাকে অর কথা। গানের মতোন। কল কল…। আমরা তখন মার্সের গাড়িতে ঢুইকা যাই। আমরা’র লাইফে, আমরা’র নিজেদের টাইমে! আমরা’র রিসেন্ট ফিউচারে।
বিবাহিত
‘জাস্ট ম্যারেড’ না লিইখা ‘বিবাহিত’ লিখলা কেন? মোয়ানা হাসি হাসি চোখে কৌতুহলী হয়া জিগায় আমারে। আমি বুঝতে পারি, এইটাই হইতেছে ফার্স্ট ফাইট’টা, বিয়ার আগেই, ম্যারিড লাইফের। আমি এড়াইলাম। কইলাম, ‘এমনেই, পুরান জিনিসের একটা মজা আছে না!’ শি ইজ নট কনভিন্সড। বুঝতে পারে আমি কব্জির মোচড় দিয়া বাইর হইয়া যাইতে চাইতেছি। ‘বলো না প্লিজ!’ মোয়ানা ডিটারমাইন্ড। ও যে জানতেই চায় – এইরকম না ব্যাপারটা। ও একটা ব্যাখ্যা শুনতে চায় যেইটা শোনার পরে মনে মনে একটা গাইল দিতে পারবো আমারে মাদারচোত বইলা! কিন্তু যেহেতু আমি বিয়া করতে রাজি আছি, এইটা মানতে পারতে হইবো আমার। তো, আমার বেস্ট ট্রাইটাই আমি করলাম।
কইলাম, ‘ধরো দ্বীনের নবী মোস্তফায় রাস্তা দিয়া হাঁইটা যায়’ – এর মধ্যে বিন্দাস একটা ব্যাপার আছে তো, যে যাঁরা এইরকম গান গায়, ওরা ফকির, ভিক্ষা করতে আইছে। তো, ওইরকম আমরা যদি ‘জাস্ট ম্যারেড’ লিইখা উল্টা-পাল্টা গাড়ি চালাই রাস্তায় পুলিশ তো ধরবো না আমরারে, ভাববো নতুন নতুন বিয়া করছে পাগলামি তো করবোই, এই পাগলামি এখন তো করে না আর কেউ। মজাই পাইবো অরা। কিন্তু যদি ‘বিবাহিত’ লেখা দেখে বুঝবো না তো কিছু, ধইরা বসবো, তখন আমরা এক্সপ্লেইন করতে পারবো। থানায় যাওয়া লাগলো। এই অবস্টেকলটা ভাল্লাগবো না আমরা’র, বলো! যে, যা জানি আমরাই জানি খালি… বা ধরো কইলাম, হানিমুন করতে বাইর হইয়া আমরা ‘বাংলা-ভাষা শিক্ষা প্রকল্প’ হাতে নিছি ইউএন’র ফান্ডিং ছাড়াই। বা…’
আর ব্যা ব্যা করা লাগে না আমার। মোয়ানা মুখ ফিরায়া সামনের ক্রিস্টাল ওয়ালে আর্কাইভ প্রজেক্ট কইরা দেখতে থাকে। রিসেন্ট পাস্টের দাম বেশি। চাইল্ডহুড তো অনেক কোম্পানি মাগনাই দেয়, সিডিউস করার লাইগা। লাস্ট দুই বছর কিনা তো লিগ্যালি পসিবল না। পাঁচ বছর আগেরটাও সিলেক্টিভ থাকে। মোয়ানা লাস্ট সাত থিকা পাঁচ বছর পর্যন্ত কিনছে। যেন শে কিছু জিগায়ই নাই আমারে, এমনভাবে কয়, “ছয় বছর আগে রাস্তায় একবার দেখা হইছিলো তোমার লগে আমার, চিনতাম না তখন আমরা নিজেরা’রে…।” আমার হাই উঠে ওর এই কথা শুইনা। ও যেমন আমারে বুইঝা গেছে আমিও বুইঝা গেছি ওরে। এইজন্যই মনেহয় বিয়া করার ডিসিশান নিতে পারছি আমরা। জানা-শোনার তো শেষ নাই, কিন্তু বুইঝা ফেলতে পারাটাই হইতেছে আসল ঘটনা। আমরা বুঝি যে আমরা বুঝি নিজেদেরকে আর তারপরে না বইলাও পারি। এইটা ক্রুশিয়াল, না-বলাটা। বইলা ফেললে বিয়া ব্যাপারটা বিয়া থাকে না আর।
না-বলা’র বিয়া করতে চলতেছি আমরা। অর ফ্রেন্ডরাও হাসছে এইটা শুইনা। কি আজিব! এখনো কেউ বিয়া করে! করতে চায়! দুই-চাইর বছর তো থাকলাই একসাথে। বিয়া কইরা খামাখা রিস্ক নেয়ার কি দরকার! বাচ্চা হেলদি হইলে তো স্টেইট-ই নিয়া নিবে। খরচাও নাই কোন। বিয়া করার কি দরকার! আর আমার ফ্রেন্ড-টেন্ড নাই কোন। বিট কয়েনে মার্কসও কম। এইটার কথা অবশ্য কয় না কেউ অর ফ্রেন্ডরা। আমি ‘গোবেচারা’ ভাব নিয়া আরামেই থাকি। এতো একটা খারাপ লাগে না। কিন্তু মোয়ানা! মোয়ানা কনফিউশনে পইড়া যায়।
আমারে মেমোরি দেখায়। মেমোরি’র ভিতর আমি যে ইনসিগনিফেকন্ট কেউ এইটা শে বুইঝা যায়।
কয়েকদিন আর কোন যোগায়োগ করে না ও। মেসেজ পাঠায়, বিগ-ডাটা’তে; কয়, আমারে কয়টা দিন একলা থাকতে দাও।
২.
তিনমাস পরে দেখা হয় আমরা’র। অর চোখমুখ আগের মতো হাসি-খুশি। কনফিউশন নাই কোন। তারপরও অর চেহারায় কোন একটা মন-খারাপনেস ‘আবিষ্কার’ করতে চাই আমি, পুরান বাংলা শব্দের মতোন। মোয়ানা’রে কই আমি, মন খারাপ কইরো না। সবকিছু তো আর প্রথম থিকা বুঝা যায় না। বুঝতে টাইম লাগে তো!
মোয়ানা মাইনা নিতে পারে মনেহয় এইটা, আমার এই চাপানো স্যাডনেসটা। খুশিও করে মনেহয় ওরে। আরে, চান্স তো এখনো আছে তাইলে! কাহিনি বানায়া বেচা যাবে। কয়, হ, একদিক দিয়া ভালোই হইছে। বিয়া হইয়া গেলে কি ঝামেলাই না পড়তাম আমরা! এতো এতো বিট কয়েন কই থিকা ম্যানেজ করতাম, ডির্ভোসের লাইগা? লোকাল ফিলিংসগুলি বেইচাও কাভার করা যাইতো না।
আমি মনে মনে ভাবি। কি আর এমন হইতো, ইল্যুশনগুলিরেই একটু প্রো-লং করতে পারতাম আমি। এইটাই ভালো। ধীরে ধীরে শে যে বুঝতে পারতেছে। এই বুঝতে পারাটা দরকারি জিনিস। লাইফের ইস্যুগুলি তো আর সফটওয়্যার রিলিটেট মেল-ফাংশনিং না যে চাইলেই রিপ্লেস কইরা ফেলা যাবে। এখনো তো ফিজিক্যাল। হার্ডওয়্যার চেইঞ্জ করা অনেক কঠিন ব্যাপার।
এর মধ্যে একটা সেলেনা গোমেজের সাথে আমার দেখা হইছে। মকারি করতে পারতেছি আমরা একজন আরেকজনরে নিয়া। শে কয়, তুমি তো জোকার! থম মাইরা থাকো দেইখা বুঝা যায় না! দেখলে তো মনেহয় ব্যাটম্যান। আমি হাসি; কই, দুইজন হইতে পারলে ভালো না! তুমি তো খালি এক সেলেনা গোমেজ, কেট পেরি হওয়ার ভান তো এটলিস্ট করতে পারো! মানে, খারাপ না একবারে এই ঘটনাটা। ডিজনি ওয়ার্ল্ড না হইলেও আমরা’র নিজেদের ‘কাচের পৃথিবী’ আছে, একরকমের। তো, এইরকম টাইমে মোয়ানা’র লগে দেখা। মোয়ানা’র পার্টনার অর লগেই আছিলো, ‘প্রেমিক’ ওয়ার্ডটা পছন্দ করে না ও; কয়, পার্টনার। পুরা ফারহান আখতারের মতোন – গান গায়, গিটার বাজায়, কবিতা লেখে, সিনেমা বানায়, অ্যাক্টিং করে; কিন্তু মোস্টলি চুপচাপ থাকে। মোয়ানা তো বকবক করে। করতেই থাকে। সেলিব্রেটিদের ক্লোনগুলি অর সবসময় পছন্দ। আমারও ভাল্লাগে।
‘বিবাহিত’-এর কাহিনিটা শোনায় মোয়ানা অর ফা.আ.’রে। শুইনা বেটায় মুচকি হাসে। আমার অস্বস্তি লাগে।
৩.
বছর খানেক পরে আবার দেখা হয় মোয়ানা’র লগে। একটা রিসোর্টে, প্লেজার ট্রিপে, লং ড্রাইভে যায় মানুষজন। আমার লগে একটা কালকি কোচিন। মোয়ানা’র লগে একটা রোয়ান গসলিং। একদম হানিমুন কাপলের মতোন কথায় কথায় নিজেদের গায়ে হাত দেয় অরা। চুমা খায়। বিগ ডাটা’তেও মনেহয় একটাই কন্টাক ইউজ করে। কালকি একটু তার ছিঁড়া টাইপের। দুইজনে আমরা দুইটা দুনিয়াতে ঘুইরা বেড়াই। এইরকম অবস্থা। দুইজনে দুইটা সাইকেল চালায়া রিসোর্টে পৌঁছাইছিলাম। আমি আগে পৌঁছাইছিলাম। আমারে একলা দেইখা মোয়ানা অবাক হইছিলো মনেহয় একটু। পরে কালকি আইসা যখন আমারে চুমা খাইলো, মোয়ানা নরমাল হইতে পারলো।
এই রোয়ান গসলিং’টাও কিউট। কিন্তু একটু ছাগলামির ব্যাপারও আছে। আমারে দেইখা কয়, ও আপনে ওই ‘বিবাহিত’ মাল! মানে, বিয়া করতে চাইছিলেন যে আপনেরা (লোকাল টোন দিয়া আপনি না কইয়া আপনে কয় সে)! শুইনা কালকিও হো হো কইরা হাইসা উঠে। কয়, তুমি মোয়ানা’রে বিয়া করতে চাইছিলা, আমারে চাও না ক্যান? জিগায়া দেখতে পারতা! অর হাসি ও থামাইতেই পারে না।
আমি মোয়ানা’র দিকে তাকাই। ‘এইটা কিছু হইলো!’ এইরকম একটা চাউনি দিয়া। মানে, ঠিকাছে; ঘটনা তো ঘটছে, এর লাইগা জনে জনে অর বইলা বেড়ানো লাগবো! মানে, ও যে কাউরে বিয়া করতে চাইছে, এইরকম সিরিয়াস যে ও হইতে পারে, সেইটা বেচার লাইগা আমারেই কেন লাগবে! একটা পারমানেন্ট স্যাড ইমো’র মতো হইয়া থাকে তখন আমার চেহারাটা।
৪.
যেহেতু আমরা’র মুখ কালাকালি হইছে, এর লাইগা আর মোয়ানা’র লগে দেখা হয় না আমার। মানে, ‘আমিও খুঁজি না’ টাইপ হইয়া থাকি। এইজন্য দেখা হইলেও আর চিনার কথা না। দেখা না-হওয়াটা ভালো। মনে না-হওয়াটা তো আরো ভালো। আমার আর মনেই হয় না।
আরো এন্টিক হইতে থাকে আমার মন। অড্রে হেপবার্ন পার হইয়া আমি গ্রেটা গার্বো’র কাছে চইলা যাই। কি যে মেকানিক্যাল উনারা। আমার মন মেশিন হইতে থাকে যেন। পারফেক্ট তো হইতে পারে না, কিন্তু পারফেকশনের একটা আইডিয়া নিয়া ইনফিরিয়র মেশিন হইয়া থাকে।
৫.
কিন্তু এন্টিক এফোর্ড করার অবস্থা আমার আছিলো না। ক্রাইসিসে পইড়া যাই। তখন মনেহয় একটা বাড়ি কিনতে গেছিলাম তো, বিয়া করার আগে। অ্যাডভান্সও কইরা রাখছিলাম। ওই কয়েনগুলি এনক্যাশ করা দরকার। এজেন্ট’রে নক করলাম। সে কয়, আগে একবার ভিজিট কইরা তারপরে ক্যানসেল করা লাগবো। সাব-আর্বে যাইতে ইচ্ছা করে না। মনেহয় দুনিয়া থিকা ছিটকাইয়া বাইর হইয়া গেলাম। তাও যাইতে হবে রাইতের বেলা।
কাঠের দরোজার সামনে দাঁড়ায়া পুরান পিন পাঞ্চ করলাম। মনে হইলো পুরান কোন দুনিয়ায় ঢুইকা পড়ছি আবার। পুরানা দিনের একটা আয়না ঘরে আর কাঠের একটা টেবিল। আয়নাতে নিজের চেহারা দেখায়া চইলা আসতে নিছিলাম, তখন দেখি টেবিলের উপরে একটা খাকি খাম। আমি আর মোয়ানা ছাড়া আর তো কেউ আসার কথা না এই ঘরে। তো, খামটা খুইলা দেখি, মোয়ানা’র হাতের লেখা। লেখা: ‘যে কাহারও লাগি ওয়েট করে নাই, তার লাগি কেউ ওয়েট করে নাই।’
বাড়ি’র অ্যাডভান্সটা পাওয়ার পরে আমার সমস্যার সমাধান হয়। বেটার ফিল করতে পারি আমি আবার।
৬.
মোয়ানা সেমি সেলিব্রেটি এখন। অর নামের কোন ক্লোন বাইর হয় নাই এখনো; কিন্তু রেপ্লিকা পাওয়া যায় অর নখের, চুলের স্টাইলের, এইরকম। অর নিজের একটা ওয়েবসাইট আছে। আমার বিগডাটার পেইজে অ্যাড আসে অর একটা ইন্টারভিউ’র। ওইখানে ইন্টারভিউয়ার অরে জিগাইতেছে, ‘আপনার প্রিয় উপন্যাস কি?’ মোয়ানা’র উত্তর: ‘মাল্যবান।’
Leave a Reply