কবিতা: জুলাই, ২০১৮

ডোপামিন

ডোপামিন, তুমি একস্ট্রিম
তোমারে নিতে পারতেছি না আর

ছোট ছোট কিক মারতেছো তুমি
যেন মায়ের পেটের ভিতর বাচ্চা
বাইর হয়া আসতে চায়…

ডোপামিন, লাশ হয়া পইড়া থাকবো একদিন
তুমি তো থাকবা না তখন

‘ডোপামিন, ডোপামিন…’
কাউরেই আমি আর ডাকবো না কোনদিন

শরীরের যন্ত্রণা নিয়া শরীর মইরা যাবে

জীবানু’র মতোন কিলবিল
মেটামরফসিস

প্রজাপতিগুলি শুয়াপোকা হয়া গুটলি পাকাবে

আমার লাশের শরীরে
ডোপামিন, তুমি কি থাইকা যাবা
আরো কয়েকটা দিন?

 

আঙুর

তোমার কথা ভাবতে ভাবতে
আঙুরফলগুলি হাসতে হাসতে পইচা গেলো,
মদ হইলো; সেই মদে মাতাল হইলো বাতাস
আর সে উড়ায়া নিয়া গেলো আরো আরো

আঙুর; মাটিতে জন্মাইলো আরো আরো
আঙুরগাছ, তারাও ছড়াইলো, পচলো…

তোমার ভাবনার ভিতর আমি এক লোভী শেয়াল
থাইকা গেলাম, তবু…

আঙুর ফল, তুমি হাসতেছো এখন, আবারও…

 

কাঁঠাল

গাছে গাছে কতো কাঁঠাল!

অথচ গোঁফ নাই কোন,
তেল দেয়ার…

 

 

সকাল

তোমার পায়ের উপড়ানো নখও নতুন হইয়া উঠবে
আমার শরীরের ফ্যাকাশে চামড়ার সাথে মিইশা যাবে তোমার দাঁতের দাগ

একই রাস্তায় বারবার হাঁটতে হাঁটতে ভুইলা যাবো
কখোন ঘটছিলো যে কি, কোনদিন, রাত তিনটায়…

ইন্ডিভিজ্যুয়াল টেররের ভিতর হারায়া যাবে
সোশ্যাল স্টিগমা

ঘুমের ভিতর দুঃস্বপ্নে চিল্লায়া উঠতে উঠতে
মনে হবে, এইসব কোনকিছুই তো আর ঘটতেছে না!

একটা আয়না,
আয়নার ভিতরে আটকা পড়ে আছি আমরা

বাইর হয়া আইসা হাসতেছি, বলতেছি
“কি যে সব মেটাফোরিক্যাল ব্যাপার-স্যাপার এইগুলি,
সত্যি তো আর না!”

একটা সকাল ডুবে যাইতেছে চা’য়ের কাপে
রইদ জাইগা উঠতেছে রাস্তায়…

যা কিছু আছে, যা কিছু নাই

কই যে ছিলো তারা, আর কই যে যাইতেছে

আমি ভাবতে চাই না আর তুমিও বললা,
“চলো, ভুইলাই যাই!”

অন্য আরো কতো কতো রিয়ালিটি আছে তো দুনিয়ায়

আর আমি ভাবতেছি,
এই একটু রইদের কণা, তোমার চুলের ডগায়
কেনো থাইকা গেলো না, আরেকটু সময়…

 

কারণ

আমি ভাবছিলাম, যে আসে, সে এমনেই আসে;
আমি ভাবছিলাম, যে যায়, সে এমনেই চইলা যায়

এখন দেখি, না; কিছু কিছু কারণও তো লাগে…

 

দেখা

তাও তো ফেললা, তোমার মুখের ছায়া
আমার মুখের উপর

দেখলা, আমি একটা কালা অন্ধকার,
খুববেশি হইলে গ্রে কালার…

 

তোমার ইমেজ

আমি নিজের থিকা বাইর হয়া
তোমারে দেখতে চাই

দেখি, ঝাপসা একটা ইমেজ
হেঁটে হেঁটে ফিরা যাইতেছে

সামনে একটা মোড়, তারপরে দেখা
যায় না আর…

 

গরমের দিন

ইটস অ্যা ব্রাইটার সামার ডে। বাজার থিকা সব্জি কিইনা নিজের কোয়ার্টারে ফিরা যাইতেছে চাইনিজ ইঞ্জিনিয়ার। বড় পুকুরিয়া’য় কয়লার খনির পাশে, সবকিছুই ময়লা, কালা কালা আস্তর। দুইটা মোটরসাইকেল আসতেছে মোড় ঘুইরা। গরমের দিন শুরু হইলো আবার।

 

ফ্রেমিং অ্যা ডিসট্যান্স

আমি একটা সকালবেলার কড়কড়া রইদ হইয়া
তোমার জানালার কাছে আইসা
পর্দার কাছে আটকায়া রই

আমি একটা থমকায়া থাকা বাতাস
তোমার বন্ধ দরজার বাইরে বইসা থাকি, ঘুরি
দরজা খুলে তুমি বাইর হও, আমি তোমার ঘরে উড়াউড়ি করি, একলাই

আমি একটা না-দেখা তোমার,
‘তুমি কেমনে দেখো আমারে?’ আমি জিগাই;
তুমি বলতে থাকো কথা (লাউডও মনেহয়), তারপরও নিরবতার ভিতর দৃশ্য মইরা যায়…

(সিরিয়ালি আমি ভাবি এইসবই
আর তোমার রিয়ালিটি’র তাচ্ছিল্যের হাসি শুনতে পাই)

একটা ডিসট্যান্স থিকা আরেকটা ডিসট্যান্সে যাই

রিকশার চাকা ঘুরতে থাকে, জ্যাম লাগে, হর্ন বাজে

রাস্তার পাশে একটা চায়ের দোকানের সামনে একটা কুত্তা, লেজ গুটায়া শুইয়া থাকে

একটা ক্যামেরা যেইরকম ফ্রেমের ভিতর দিয়া দেখে,
তার একটু বাইরেই আমি থাইকা যাবো, মনেহয়

স ব স ম য়

 

তালশহর

জীবনের ছোট ছোট ডিসট্যান্সগুলিই কখনো পার হওয়া হয় না

ধরো, ভৈরববাজার থিকা মেঘনা নদী পার হয়া
আশুগঞ্জে গেলাম আমি
তালশহর আর কোনদিনই যাওয়া হইলো না…

 

শুয়াচান পাখি

রিজনের পাখি,
করতেছে ডাকাডাকি, জিগায়

“ও ম্যাডনেস, তুমি ঘুমাইছো নাকি?”

 

আয়না

ভাষা’র ভিতরে সাবজেক্ট হয়া যেই তুমি আটকায়া থাকো,
সেই তুমি কে?

আমি না? আমি না।

 

শব্দ

আমার হাত সরে না, আঙুল কাঁপে
কি শব্দ লিখতে গিয়া যে আমি কি শব্দ লিখি
শব্দগুলিও কি জানে না?

মনেহয় জানে,
অরা দল পাকায়, কয়,
‘চলো যাই মিনিংয়ের দোকানে!’

আমার হাত, একটা শব্দ হয়া উঠে
আমার আঙুল ধীরে ধীরে শব্দই হইতে থাকে
‘আমি’, একটা শব্দ হয়া শব্দের ভিতরের কবরে শুইয়া থাকে, যেন…

 

ঘুম

যদি শে ফিরা না আসে
যদি সেই চাঁদ থাকে মেঘের ভিতরে,
বর্ষাকালে যদি না উঠে রইদ

তার ঘুম যেন ঘুমাইতে পারে শে, বিকাল, দুপুর বা রাইতে…

যেন কোন হাত না ছুঁইয়া ফেলে তার হাত
যেন কোন ঠোঁট না ছুঁইতে পারে তার কপাল
যেন দশতলার কাঁচ দিয়া দেখতে থাকা নিচের রাস্তা, এইরকম ডিসট্যান্সে, থাইকা যাইতে পারে কেউ

যদি শে ঘুমায়,
তার ঘুমের পাশে থাকে আমার আরেকটা ঘুম যেন

 

একটা ইউরোপিয়ান সিনেমা

একটা ইউরোপিয়ান সিনেমাতে আমরা অ্যাক্টিং করতেছি
ইউরোপিয়ানগুলি এতো বেশি ইন্ডিভিজ্যুয়াল, বুঝছো?
আমার তো ভাল্লাগতেছে না!
আমি তোমারে বলতেছি, চলো আমরা সিনেমাটা থিকা বাইর হয়া যাই, অনেক গ্লুমি লাগবো পরে…

তখন দেখি তুমি আরেকটা সিনে চইলা গেছো,
কার কার সাথে জানি, অন্য আরেকটা কাহিনি’তে,
আমার কথা শোন-ই নাই,
অন্য কাহিনি’তেও তুমি একই আছো;
মুভিটা নন-লিনিয়ার
আমি যতোই ট্রাই করি ফিরা আসতে
পারতেছি না আর;
সাইডে দিয়া চইলা যাই, চিল্লাই
কিন্তু ক্যামেরা আর আমারে দেখে না

যেহেতু আমি আর নাই
আমি তো কিছু কইতেও পারতেছি না তোমারে,
ক্যামেরা’র পিছনে, সাইড-টাইড দিয়া ঘুরতেছি,
যদি কখনো চান্স পায়া যাই, তোমারে জিগাবো আবার,
‘একটা ইউরোপিয়ান সিনেমার দুনিয়া থিকা আমরা কি গো আর বাইর হইতেই পারবো না?’

 

তিরিশ বছর বয়সের একটা লোক শুইয়া আছে কোন এক মফস্বলে, সন্ধ্যাবেলা। মনেহয় আমিও হইতে পারি। শিওর না…

কোন এক মফস্বলের সন্ধ্যাবেলা। শুইয়া আছি বিছানায়। জানালা দিয়া দেখতেছি, সামনের বাসায় টেবিলে পড়তে বসছে দুইটা ছেলে আর মেয়ে। তুমি রান্নাঘরে কি জানি টুং টাং করতেছো। জিগাইতেছো, চা খাবো কিনা। আমি ভাবতেছি, এই তিরিশ বছর বয়সের স্বপ্ন কেন আমি দেখতেছি? যদি তুমি রান্নাঘর থিকা বাইর হয়া আসো আর দেখি অন্য কেউ আর তখন তো বুইঝা ফেলবো এই শুইয়া থাকা লোকটাও আমি না; কোন একটা কারেক্টার, অ্যাভারেজ কোন একটা গল্পের। আমি কোন কথা বলি না। আমি ভাবতে থাকি, কোন এক মফস্বলের সন্ধ্যাবেলা। অফিস থিকা ফিরা’র পরে শুইয়া আছি আমি। জানালা দিয়া দেখতেছি, অনেকগুলি টিভি চ্যানেলের মতোন অনেকগুলি জানালা, দেখাইতেছে দৃশ্যগুলা। তুমি আছো রান্নাঘরে। তুমি যে আছো, এই শান্তি নিয়া আমি শুইয়া আছি। আরেকটা ঘরে। কোন এক তিরিশ বছর বয়সের কথা।

 

 

Leave a Reply