ঢাকা শহরে ট্রাডিশন্যাল নাস্তা বা ব্রাঞ্চ-এর বেস্ট জায়গা মে বি গুলশান ২ এর প্রিমিয়াম সুইটসের আউটলেট’টা। কড়া-ভাজা পরোটা, গরুর কালো ভূনা, ডিম মামলেটটাও জোশ… এইরকম। পরে কফিও খাইতে পারেন। দামটা একটু বেশি, নাম-ই তো প্রিমিয়াম। 🙂
আর সবচে ভালো ব্যাপার হইলো, নাস্তা খাওয়ার টাইমে অরা Lucky Ali’র পুরান গানগুলি বাজায়। [সবসময় তো বাজায় না আর, আজকে বাজাইলো আর কি…।] আর ওদের প্রডাক্ট ডিসপ্লে বোর্ডগুলাতে খাওন-দাওনের ছবিগুলির লগে মানুষের ছবিও আছে; যে কারা এইটা খায় বা খাইতে পারে – এইরকম একটা সাজেশন আছে। ছবি’তে মানুষগুলা বিদেশি, মানে, শাদা চামড়ার, যাদেরকে বিদেশি লাগে, আমরার। তো, খাওয়ার সময় এই ছবি দেইখা নিজেরে বিদেশি মনে হইতে পারে। আমি যেইটা খাইতেছি, সেইটা তো বিদেশিদের খাওয়ার কথা। এইটা হিউমার না, ট্রু একটা ব্যাপার। এই ফিলিংসটা ফানি লাগতে পারে, মনে হইতে পারে ভ্যালুলেস, কিন্তু এইটা দামি। [ছোট ছোট ব্যাপারগুলাই বড় না, কিন্তু ছোট ছোট ব্যাপারগুলি ছোট বইলা যে নাই, সেইটা না।] একটা ডিসপ্লে বোর্ডে বাংলা লেখা আছে, ওইখানে কোন মানুষের ছবি নাই। জিনিসগুলির দাম কম বইলা এইগুলি যারা খায়, তারা মানুষ না – এইরকম হয়তো না। কারণ এইটা ছাড়া অন্য কিছু প্রডাক্টেও মানুষের ছবি নাই। যা কিছু বলা হইতেছে এবং বলা হইতেছে না, দুইটাই কিন্তু ভাষা।
ভাষা ব্যাপারটা এইরকমই। একটা ট্রান্সলেশন ওর্য়াক। একটা কিছুর ইলাসট্রেশন। একটা জিনিস বলেন, দৃশ্য বলেন, ফিলিংস বলেন… এইরকমকিছুর। ভাষার আগে একটাকিছু থাকতে হয় বা থাকে, ভাষাতে। গতকালকে টিভি’তে খেলা দেখতে গিয়া কমেন্ট্রি শুনতে গিয়া ভাবতেছিলাম, খালি খেলা দেখতে গেলে কেমন জানি খেলা মনে হয় না আর; যদি কমেন্ট্রি’টা না থাকে। কিছুদিন তো মনেহয় রেডিও ছিল খালি, টিভি ছিল না, তখন বইলা দেয়া লাগতো, যেহেতু দেখাইতে পারতেছি না… এখন, দেখানোটাতেও কানা’দের লাইগা বইলা দেয়ার ব্যাপারটা থাকতে পারে। Slavoj Zizek-এর কথা একটা আছিলো, এই যে আম্রিকান কিছু কমেডি শো’র মধ্যে ফানি জিনিস থাকলে অটো হাসির আওয়াজটা ইনসার্ট কইরা দিতেছে, Mr Bean-এ আছে… আপনারে বইলাও দিতেছে যে কোন জায়গাটা হাসা লাগবো।… কই কই চেতবেন আপনি, কই কই মাইনা নিবেন, চুপ থাকবেন… এইরকম নিয়ম-মানা বিপ্লবীদের দেখতে দেখতে তো আসলে ক্লান্তই লাগে! কিন্তু ব্যাপারটা খুব ইন্টারেস্টিং ওয়ে’তে কাজ করে।
এই ক্ষেত্রে প্রেম একটা ভালো এক্মাম্পল। একটু যদি ফ্লার্ট না করেন, ইমোশনাল মিথ্যা কথা না কইতে পারেন, তাইলে সেইটারে প্রেম বলাটাই কঠিন। আপনারে কিছু মিথ্যা কথা বলতে পারতে হবে, যেইগুলা মিথ্যাই, কিন্তু আপনার একটা ইমোশনাল জায়গাতে মিথ্যা না; সত্যি’র চাইতে বড় সত্যি হইতেছে – সেই মিথ্যা; এইরকম কিছু জায়গা ক্রিয়েট করা লাগে। এইটা অনুমানের একটা ব্যাপার; কিন্তু অনুমানটারে আপনি বায়াসড করতে পারেন। কোন একটা সত্যি [ধরেন, প্রেম] থাকুক বা না থাকুক, এইটা আছে ধইরা নিয়া আপনি অ্যাক্ট করতে পারেন। ভাষাতে বা চিন্তাতেই কোন একটা জিনিসরে বানাইলেন আপনি তারপরে সেইটারে ক্রিয়েট করলেন। ভিঞ্চি করছেন না এরোপ্ল্যানের নকশা? আসিমভ ভাবছেন না আরেকটা দুনিয়ার কথা? এই যে ভাবছেন, বলছেন… তার মানে এইটা ক্রিয়েট হইতে পারতেছে। যখনই বলতে পারতেছি যে, আছে; সেইটা খালি থাকা না একটা, একটা না-থাকা থিকা ইমার্জ করতেছে, ভাষাতে। আপনার বলার ভিতর দিয়া, ভাষার ভিতর দিয়া না-থাকার হোল’গুলিরে এক্সপোজ কইরা ফেলতে পারতেছেন। একটা ভার্সন ক্রিয়েট করতেছেন, যেইটা অলরেডি আছে বইলা নাই হইতে পারতেছে।…
টেবিলে একটা মাটির হ্যারিকেনও ছিল, দিনেরবেলা বইলা মনেহয়, জ্বলতেছিল না।
Leave a Reply