আমি যেই ছবিটা দেখছিলাম সেইটা ছিল অনেকটা পেন্সিলস্কেচ; পোলাটা আরো ইয়াং, কলেজছাত্র টাইপ, জিন্স, টি-শার্ট, কেডস পরা আর মাইয়াটাও টিনএজার, সালোয়ার-কামিজ পরা। কোনো চুলকাটার দোকানে, বাঁধাই-করা গণেশ, শ্রী শ্রী লোকনাথ ব্রহ্মাচারী আর অনেকের ছবির সাথে। ছবিটা মনে আছে মেইনলি ডায়ালগটার কারণেই, কিন্তু ইমোশনটার কারণেও মনেহয়। পোলাটা ফিরাও তাকাইতেছে না, কত দুঃখ না-জানি পাইছে! দেবদাসের চাইতেও বেশি। পারু তো ফিরা আসে নাই। আর এইখানে পায়ে ধইরা কানতেছে!
আমার ধারণা, যারা এই ছবিটা পছন্দ করেন, তাদের অরিজিনাল কাহিনিটা মেবি অন্যরকম। দেখা যাবে, মাইয়াটা পোলাটারে পাত্তাই দিত না, বা মজা করত … সে যে এইরকম প্রেমে পড়ছে তার কোনো রিকগ্নিশনই নাই। এই কারণে এই ছবির ভিতর দিয়া সে নিজেরে ইমাজিন করতেছে যে সে মদ খাইতেছে আর ভাবতেছে যে, মাইয়াটা এখন তার লাইগা আফসোস করব; বা করলেও সে আর ফিরা আসবে না। মাইয়াটা কি ভাবে সেইটা কোনো ঘটনাই না; ঘটনাটা হইল মাইয়াটা কি ভাবতে পারে সেইটারে ভাবতে পারাটা। সে যে এত মদ খাইতেছে কেউ কি আইসা তার পায়ে ধরব না? এইটুক আফসোস কি তার পাওনা হয় নাই? বেশ আনবিয়ারেবল একটা ইমোশন। মদ তো মদ, মানুষ মরতেও পারে এই ইমোশনের লাইগা। মরেও তো মনেহয়।
প্রেমে পইড়া মানুষ যে সুইসাইড করে, এইরকম একটা ‘অমর প্রেম’-এর ধারণা থিকাই তো!
২.
বিশু ধরের আঁকা এই ছবিটা রাজীব দত্তের কাছ থিকা পাইছিলাম। এইটা নিয়া একবার কিছু কথা বলছিলাম আমরা — রাজীব দত্ত আর আমি।
খুবই ‘ইগো-স্যাটিসফায়িং’ একটা ছবি, পোলাটার দিক থিকা। যে, সে মদ খাইতে খাইতে মইরা যাবে তারপরও মেয়েটার কথা সে শুনব না! এখন আর চোদার টাইম নাই তার। রাগ না, সে এতই দুঃখ পাইছে যে, দুনিয়ার কোনোকিছুই আর কিছু মিন করে না। খুবই আবেগী একটা জিনিস। মুশকিল হইল, আবেগ জিনিসটারে আপনি ‘সত্য-মিথ্যা’ দিয়া যাচাই করতে পারবেন না, এইটা ইনটেনসিটির একটা ঘটনা। আর এইখানে ইনটেনসিটিটা এক্সট্রিম লেভেলের। প্রেমে ছ্যাঁকা খাওয়ার কারণে প্রেম থিকাই বাইর হয়া গেছে সে, আর ফেরত আসতেছে না। আসবেও না।
রেশনালিটির জায়গা থিকা ইল্যুশনই মনে হবে, মনে হবে ‘হাইস্যকর’, কিন্তু ইমোশনের জায়গা থিকা দেখলে এতটা মেবি না-ও মনে হইতে পারে। 🙁 আমার তো ‘দুঃখ দুঃখ’-ই লাগে, এই কারণে।
৩.
কিন্তু রিয়ালিটি খুব উইয়ার্ড। আমরা যা ভাবি বা যেইভাবে ভাবি তার চাইতে অন্যরকম একটা কন্ট্রাস্টে ঘটে। একটা ঘটনার কথা বলতে পারি এইখানে। 🙂
হাইস্কুলে পড়ার সময় আমাদের এক ফ্রেন্ড, জুনিয়র ক্লাসের এক মেয়েরে ‘প্রেম-নিবেদন’ করল। মেয়ে তো রাজি হয় না। আমাদের ফ্রেন্ডও কিছুদিন পিছন পিছন ঘুরল, পরে ঘুরাঘুরি ছাইড়া দিবে এমন একটা টাইমে মেয়ে আইসা কইল, ঠিকাছে, শে প্রেম করতে রাজি। তখন আমাদের ফ্রেন্ড ডায়ালগ দিলো, “সেই তো এলি/ তবে কেন ভাব দেখালি”। এই ডায়ালগ শুইনা মেয়ে এমন খেপা খেপল, প্রেম তো অর গেলই, মাইরটাইরও খাইতে নিছিল!
মানে, কেউ ‘প্রেম-নিবেদন’ করছিল বইলা সারাজীবন ধইরা আপনার প্রেমে আছে বা কেউ প্রেম করতে ‘রাজি’ আছে বইলা যে কোনোকিছু মাইনা নিতে রাজি আছে, এইরকম তো না! কিন্তু এই ছবিটা প্রেমের ওই এক্সট্রিম গ্লোরিফাইড জায়গাটা নিয়া আছে। ব্যাপারটা কমিক্যাল কিছুটা 🙂 কিন্তু তারপরও আছেই তো!
‘দিল চাহতা হ্যায়’ সিনেমাটার কথাও ভাবা যাইতে পারে, অক্ষয় খান্না তো সিরিয়াসলি ডিম্পলের প্রেমে পড়ে, কিন্তু আমির খানের কাছে এইটা স্রেফ একটা লাগানোর ঘটনা; যার ফলে সে খুব হাসিঠাট্টা করে এইটা নিয়া। একদম অপোজিট ঘটনা ঘটে ‘গডফাদার টু’-তে। মাইকেল কর্লিয়নি যখন সিসিলে গিয়া প্রেমে পড়ে তখন অর বডিগার্ড কাম ফ্রেন্ডরা হাসিঠাট্টা করতে গিয়া থাইমা যায়, বুঝতে পারে সিরিয়াস প্রেমের ঘটনা এইটা।
হিস্ট্রি জিনিসটা একবার ট্রাজেডি হিসাবে ঘটে আর তার পরেরবার কমেডি — এইরকম না; বরং একটা ঘটনার সিরিয়াস আর হিউমারাস ভার্শন অ্যাপিয়ার্ড হয়।
এই ছবিতে পোলাটা যে একটা ‘অমর প্রেমের’ ভিতরে চইলা গেছে — এইটা তার কাছে বা যারা এই ছবি টানাইত বাসায় বা দোকানে (আজিজ প্রোডাক্টস, শোভন প্রোডাক্টস আর আপন প্রোডাক্টসের জন্য আঁইকা দিছিলেন বিশু ধর; তার মানে হাজার হাজার না হইলেও শয়ে শয়ে তো ছাপানো হইছিলই), তাদের কাছে সিরিয়াস একটা ঘটনাই! কিন্তু যারা আমরা ডাউট করতে পারি যে, আরে, এইরকম কোনোকিছু কোনদিন ঘটে নাকি! আর এইরকম বইলা বা ভাইবা একটু একটু হাসতে পারি, তাদের কাছে তো কমেডিই! এই অমর প্রেমের কাহিনি।
Leave a Reply