এইটা মেইনলি আমার, মনোয়ার আর মৌটুসির একটা সন্ধ্যা-রাইতের একলগে থাকার ছোট্ট একটা কাহিনি। আমাদের এইরকম অনেক ফ্রেন্ডস আছে। আমরা ফ্রেন্ড-বেইজড সমাজ, ফ্যামিলিরে চুদি না। ফ্যামিলি একটা মুখোশ, একটা ভান, একটা প্রতারণা। আমরা এইগুলার মধ্যে নাই। কেউ থাকতে চাইলে আমাদের কোন প্রব্লেম নাই। ফ্রেন্ড তো ফ্রেন্ডই!
আম্মা দেশের বাইরে গেছেন, মেডিকেল ইস্যুতে, সিঙ্গাপুরে। বড় বইন আর তার হ্যাজব্যান্ড গেছে লগে। এইটা মৌটুসি জানতো। শে কইলো, বরিশাল থিকা অর স্পন্সরে একটা ফ্যামিলি আসছে; একটা বাসায় ছিলো, বাসাটা ছোট আর হসপিটালটাও দূরে, আসতে-যাইতে টাকা খরচ হয়, শে চিকিৎসার খরচ দিতেছে, কিন্তু হাত-খরচের টাকা দেয়াটাও বাজে দেখায়, এইজন্য কইলো, দুইটা দিন আমার বাসায় রাখতে পারবো কিনা। অরা একে তো গরিব, ম্যানার অইরকম জানে না, তার উপরে আবার হিন্দুও কিন্তু; মানে, বইলা আমার ঈমানি শক্তি যাচাই করতে চাইলো! 🙂 যেন এমনে হইলে থাকতে দিলাম, গরিব আর হিন্দু বইলা দিবো না। তো, এই চ্যালেঞ্জে তো হার মানা যায় না!
অরা থাকলো, চইলাও গেলো। দুইদিন একরাইত ছিলো। আমি মাসুমের বাসায় গিয়া ছিলাম। অরা দারোয়ানের কাছে চাবি বুঝায়া চইলা গেলো। চার-পাঁচটা আন্ডা-বাচ্চা ছিলো আর দুইজন মহিলা।
মোটুসি তো খুবই খুশি, আমার এই হেল্প পাইয়া। একদিন কইলো, ল চিল করি! তোর লগে তো অনেকদিন দেখা নাই! ঢাকায় নাকি এখন পাব হইছে, মেয়েরাও যাইতে পারে!
মৌটুসির এইটা বেশ মজা লাগে। দুই বছর বিদেশ থাইকা আইসা বেশ বিদেশি-বিদেশি একটা ভাব নিতে পারে। বয়ফ্রেন্ডের লগে ব্রেকাপ হওয়ার পরে অর খুবই বাজে অবস্থা হয়া গেছিল। আয়ারল্যান্ডে চইলা গেছিলো এনথ্রোপলজি পড়তে। ঠিকই আবার পড়াশোনা না কইরা ফিরা আসছে। চিজ একটা। আমি কই, ‘হ, উন্নয়ন হইতেছে তো!’ হাসি আমরা।
২.
বাইর হইতে হইতে রাইত হয়া গেলো। আম্মারা পরেরদিনের জায়গায় আগেরদিন সকালেই চইলা আসলো। বাসা-টাসা বুয়ারে দিয়া গোছগাছ করাইতে লাগলো। ছিঁড়া কাগজ-টাগজ দেইখা কয়, এইটা কি, অইটা কি?… সন্দেহ যায় না আর কি! আমি কই, নিজের শরীর নিয়া ভাবো! জার্নি কইরা আসছো, রেস্ট নেও! কার কথা কে শোনে! ঘরের ইঞ্চি ইঞ্চি তল্লাশি করা লাগলো তাঁর! কয়, ডাইনিং টেবিলে মুতের গন্ধ করে ক্যান! আজিব এক ঝামেলা। আবার কয়, শুকাইছোস ক্যান! আরে, সাতদিনে মাইনষে কট্টুক শুকাইতে পারে আর! মেজাজ খিঁচড়ায়া যায়, কই, তুমি মরবা না এতো তাড়াতাড়ি, বুঝছো! এতো আহ্লাদ দেখাইও না! শুইনা কান্তে থাকে। আরেক মুসিবত!
এই ড্রামা কইরা গেলো সারাদিন।
সন্ধ্যাবেলা নামতেছি, তখন নাইমাই দেখি, ইন্টারকমে দারোয়ানরে ফোন দিছে, কে নাকি কি ফল-বেচার টাকা দিয়া গেছে, বাড়ি থিকা, ভুইলা গেছিলো। আমি কইলাম, নিচে পাঠায়া দাও! উপ্রে গেলে আবার কি না কি আলাপ শুরু হয়। গার্ডের রুমে বইসা খামগুলা খুলতেছি। চার-পাঁচটা খামের ভিত্রে ১০০০/৫০০/১০০/৫০ টাকার নোট। এক ব্যারাছ্যাড়া অবস্থা। এইসময় মৌটুসির ফোন! ‘কি রে বাড়া, কই তুই!’ আমি কইলাম, ‘বাইর হইতেছি।’ অ কয়, আমি তো কলাবাগান পার হয়া গেছি! জ্যামে তো খাড়াইতে পারবো না! আমি কই, তোর’টা কেমনে খাড়াইবো! তুই আসার আগেই আমি খাড়ায়া থাকবো নে! মৌটুসি হাসে। কয়, ল্যাওড়া আয় আগে!
এইসব স্ল্যাং শে শিখছিলো অর বয়ফ্রেন্ডের কাছ থিকা। এখনো তার স্মৃতিচিহ্ন হিসাবে ইউজ করে। আমরা, ফ্রেন্ডরা বুঝতে পারি। টাকাগুলা না গুছাইয়াই পকেটে নিয়া বাইর হয়া গেলাম আমি।
৩.
বেশিক্ষণ ওয়েট করতে হইলো না। আমি পৌঁছানোর দুই-চাইর মিনিটের মধ্যেই দেখলাম উবারের গাড়িতে ও বইসা আছে। একটা সিগ্রেট খাওয়ারও টাইম পাইলাম না। জ্যামের সুযোগ নিয়া আমি উইঠা পড়লাম। সাইড করা লাগলো না। অরে জিগাইলাম, কই বসবি? শে তো ফরেনার, জানে না কিছু। কয়, কই কই আছে? আমি কইলাম, আমি যেইখানে খাঁড়ায়া ছিলাম অইখানেই একটা আছে, একটু সামনেও আছে একটা, আর ডাইনপাশে একটা ছোট কোজি প্লেইস আছে, বড়ও আছে একটা। মৌটুসি কইলো, ল, ছোটডাতে যাই! মনোয়ারও থাকার কথা অইখানে। আগে মোড়ে গিয়া নামি। আমি উবারের ড্রাইভাররে কইলাম, ভাই, একটু সামনে ডাইনদিকে ইউটার্ন নিয়া আমরারে মোড়ে নামায়া দেন। ড্রাইভার মনেহয় একটু নাখোশই হইলো। মৌটুসি তার লুকিংগ্লাসের দিকে তাকায়া একটা হাসি দিয়া ম্যানেজ করার ট্রাই করলো। তারপরে আমারে জিগাইলো, ‘কি অবস্থা তোর? বউটারেও রাখতে পারলি না! গার্লফ্রেন্ডগুলারে তো আগেই ভাগাইছোস। আমি ভাবছিলাম, রাকা’র সাথে তোর বনিবনা হবে।…’ রাকা’র কথা কাউরে কইতে আমার ভাল্লাগে না। আমি চুপ কইরা থাকি। অরে একটা খোঁচা দিয়া ব্যাপারটারে হালকা করার ট্রাই করি, ‘বউ, বয়ফ্রেন্ড কোনটাই সুবিধার না, বুঝছোস!’ মৌটুসি তখন উদাস হয়া যায় একটু। আগেই ছিলো মনেহয় একটু। একলা গাড়িতে বইসা থাকতে থাকতে হয় এইরকম।
মাঝে-মধ্যে মেবি খারাপ লাগে অর, মনে হইতে পারে তখন, ফ্রেন্ডের বাইরে বয়ফ্রেন্ডও তো লাগে একটা।…
আমরা যেইখানে নামলাম, সেইখানেই মনোয়াররে পাইলাম। মনোয়ার কিউট একটা পোলা। বয়সে একটু ছোট। কিন্তু ম্যাচিউরড আছে।
আমরা পয়লা কোজি বারটাতে গেলাম। বাইরের দিকটাতে অন্ধকার। গেইটটা বন্ধ দেখলাম। কি ঘটনা, বুঝলাম না! পাশেই বড় বারটা। অইটার সামনে ছোট্ট একটা উঠানের মতোন আছে। অনেক ভীড়। লম্বা লাইন। সবার হাতে ছোট ছোট টিকিট। বাউন্সাররা চেক কইরা কইরা ঢুকাইতেছে। ভিতরের কড়া সাউন্ড টের পাওয়া যাইতেছে। জালালি সেটের গান বাজতেছে। লাইনে দাঁড়ায়া থাকাটা এতোটা সমস্যা হইতেছে না। কিন্তু মানুষজন তো ভিতরেই ঢুকতে চাইতেছে। পুরাটা এনজয় করা লাগবো তো! মৌটুসি হেব্বি মজা পাইতেছিলো। দাঁড়ায়াই নাচতে শুরু করলো। পরে অইখানেই খবর পাইলাম, পাশের বারের স্টক শেষ, এইজন্য বন্ধ কইরা রাখছে।
টিকেট নিয়া আমরা লাইনের শেষে গিয়া দাঁড়াইলাম। বেতের সোফা রাখা আছে অইখানে কয়েকটা। পোলাপাইনই বেশি। মাইয়া কমই। আর অরাও বয়ফ্রেন্ডদের কনুই ধইরা রাখছে। যাতে কেউ ফ্লার্ট করতেও আগায়া না আসে। মৌটুসি গিয়া বেতের চেয়ারের হাতলটাতে বইসা পড়লো। পোলাপাইনের তো চোখ চকচক করা শুরু করলো। ও ঝুঁইকা পইড়া কি জানি বলতেছিলো অদেরকে, হাসতেছিলো। আমি আর মনোয়ার একটু দূরে, পিছনে দাঁড়ায়া রইছি। বিয়ার খাইতেছি। বুঝা যাইতেছে না আমরা যে, মৌটুসির লগে আছি। শে বেশ এগ্রেসিভভাবেই মিশতেছে। যে কেউ ভাববে, শে অই ফ্রেন্ডসার্কেলেরই লোক। আমার অস্বস্তি হইতে শুরু করলো, ও কন্ট্রোল করতে পারবো তো!
কিসের কি! শে আরো উইয়ার্ড হইতে শুরু করলো। নাচতে নাচতে একটু সামনে চইলা গেলো আর ছোট একটা বসার মতো বল ছিলো, অইটা নিয়া আসলো। সবাই মোটামুটি এখন অরেই দেখতেছে। আর এনজয়ও করতেছে। যেন শে একটা ক্যামেরার সামনে দাঁড়ায়া আছে, পারফর্মেন্স শ্যুট করতেছে। শে বলটা নিয়া আইসা, বলটা ধইরা ঘাসের উপরে শুইয়া পড়লো, উপুড় হয়া। অর ছোট পাছাটা পোলাপাইনের, আমাদের চোখের সামনে ছড়াইয়া পড়লো। আমি ভয় পাইতে শুরু করলাম। কি না কি হয় আবার। আমি তখন আগায়া গেলাম, ততক্ষণ ও উইঠা পড়ছে আবার, একটা পোলা আগায়া গিয়া ড্যান্স করতে চাইতেছে। আমি অই পোলারে সরায়া দিয়া মৌটুসিরে কইলাম, কি করতেছোস! পোলাপাইনরে এমনে এনকারেজ করলে তো ঝামেলা হইতে পারে! এইটা ঢাকা শহর! পোলাপাইন এখনো গ্রাম্য এইখানে! সেক্স করলেই মনে করে প্রেম হয়া গেলো! মোটুসি তখন মিটিমিটি হাসতেছে, এরে-অরে আই কন্টাক কইরা সামাল দিতে পারতেছে না। আমার দিকে না তাকায়াই কইলো, তুই এইসব বুঝবি না! ফ্রেন্ড হয়া গেলেই সুবিধা, কেউ টিজ করতে আসবো না; আর কেউ ঝামেলা করতে আসলে অন্য অনেকে ঠেকাইবো আইসা। আর তুই এতো চিন্তা করতেছোস ক্যান! চিল কর বাল! এতো পসেসিভনেস দেখাইস না! বাপ-ভাই সাজা বন্ধ কর!
আমি বুঝলাম, বিপদে পড়ার আগে সইরা যাওয়াটাই বেটার। আমি কইলাম, থাক তুই তাইলে! আমি গেলাম! আমি চইলা আসার সময় শুনলাম, লোকজন হাততালি দিতেছে, শিস দিতেছে। নারী অধিকার প্রতিষ্ঠা পাইলো! পুরুষ-আধিপত্য নিপাত যাক টাইপের শ্লোগানও হইতে পারতো হয়তো। মানে, আমি নিজেই ডরাইতেছিলাম আসলে। এই এন্টারটেইনমেন্টে বাগড়া দেয়ার লাইগা পোলাপাইন আইসা না আবার আমারে মাইর দেয়।
মনোয়ারের কোন চেত-বেত নাই। দেয়ালের লগে ঠেস দিয়া দাঁড়ায়া কাচের বোতলের বিয়ার টানতেছে। অর লগে আমার কোন শত্রুতা নাই। আমার এই ইন্টরফেয়ারেন্স নিয়াও অর কোন সে নাই। চিল করতে আসছি চিল করবো, আর কি! মৌটুসি দূর থিকা অর লগেও আই কন্টাক করলো। মনোয়ারের কোন চেত-বেত নাই। চুপচাপ বিয়ারই খাইতে থাকলো।
৪.
আমি অইপারের বার’টাতে গেলাম। গিয়া দেখি শাটার নামায়া ফেলছে। আমি শাটারের নিচ দিয়া উঁকি দিলাম, দেখি পরিচিত এক বারটেন্ডার আছে। আমি জিগাইলাম, নাই কিছু? কয়, স্যার, বসা যাইবো না, নিয়া যাইতে হইবো। আমি কইলাম, দেন! সে কইলো একটু বাইরে দাঁড়াইতে। আমি কইলাম, ছোট একটা বোতল দিতে।
বাইরে কুয়াশার মতোন একটু একটু বৃষ্টি পড়তেছে। ভালো কোন জিনিস নাই। কি একটা ফ্রুটের জিনিস। আর বোতল নেয়াও তো ঠিক না, আরেকটা ফ্রুটজুস আইনা অই বোতলে দিতে কইলাম। এর মধ্যে আবার আম্মার ফোন। ফোন কইরা কয়, গুডনাইট কইতে ফোন করলাম। আমি কইলাম, ‘তোমারে ফোন করতাম আম্মা, আজকে বাসায় আসমু না, মাসুমের বাসায় থাকমু।’ আম্মা জিগাইলো, টাকা-পয়সার হিসাবে ঠিক আছিলো কিনা। আমি কইলাম, ‘ঠিকই ছিলো। তুমি ঘুমায়া পড়ো!’ বয়-বেয়ারাগুলা আমার মুখে আম্মা-আম্মা শুইনা হাসতেছিলো।
সবকিছু রেডি কইরা দিলো অরা। মুখে একটু ঢালার পরে চাঙা লাগলো। ঠিকই তো আছে সবকিছু!
৫.
অই পাবে গিয়া দেখলাম মৌটুসি পুরা আসর জমায়া বসছে। আমারে দেইখা আগায়া আইসা হাগ করলো। কইলো, ‘তুই বাল খামাখা ডরাস! এইরকম কতো ক্রাউড ম্যানেজ কইরা আসছি!’ পোলাপাইন অর রীতিমতো ভক্ত হয়া উঠছে। তুই-তোকারিও চালু হয়া গেছে।
আমি পুরা ইমপ্রেসড। আমারও ভাল্লাগতেছে। এই ক্রাউড। যেন কোন রেভিউলেশন সেলিব্রেট করতে আসছি আমরা সবাই। কেউ কাউরে চিনি না, কিন্তু আমরা সবাই কমরেড, ফ্রেন্ড।
ফ্রেন্ডস ফরএভার!
৬.
আমি তো সারাদিন বাসাতেই থাকি। বাইর হইতে খুবএকটা ইচ্ছা করে না।
কয়েকদিন পরে মৌটুসি নক করলো। মাসুমরে নিয়া এইটা-অইটা জিগাইলো। আমি কই, ঘটনা কি মামু? ধরা খাইছোস নাকি? মৌটুসি হাসে।
আমি কইলাম, যেইদিন আমরা পাবে গেলাম, মাসুম দুপুরে খাইতে আসছিলো তো আমার বাসায়। পরে রাইতে অর বাসায় আছিলাম। তোদের যে তখন চলতেছিলো, টের পাই নাই তো! শালা, দুইটাই ছুপা রুস্তম! মৌটুসি হাসে।
৭.
মাঝে-মধ্যে মৌটুসির লগে কথা হয়, অইরকম দেখা হয় না। একদিন রাতের বেলা একটা লিংক পাঠাইলো, দেখ তো জিনিসটা কি রকম! এইরকম একটা লেখা –
……………
Let everyone get a chance to win her. Let her get the chance to meet everyone, speak-out in laughter, hear the voices of affections, see the colors of admiration. Let me be there, beside her, looking into the eyes that gleam like stars above in the sky. Let things fall apart for me. Let me see things as they are, rather than they are meant to be. May a rolling stone not be halted. Let she not be me. Let me be an existence too, that can move, laugh, speak and love, as love can be.
/ LET IT BE (এই দোয়া আমি করি)
……..
আমি কইলাম, ভালোই তো! মামা তো মনেহয় পিনিকে ছিলো, লেখার সময়।
মৌটুসি কয়, আমার এক্স-বয়ফ্রেন্ড লেখছে আবার, আমারে নিয়া। শুওরের বাচ্চা!
Leave a Reply