আকবর আলি খানের কোন বই পড়ি নাই আগে। কিনছিলাম অনেকদিন আগে “পরার্থপরকার অর্থনীতি’ বইটা। এখন একটু পড়তেছি।
বইটা কোন প্যার্টানে লিখছেন, সেইটা নিয়া ভূমিকাতে উনি বলছেন যে একটু ফানি কইরা লেখার ট্রাই করছেন, এইভাবে বলছেন, “গণিতের বিভীষিকা ও লেখাচিত্রের কন্টক এড়িয়ে রম্যরচনার অবয়বে অর্থনীতির অপ্রিয় বক্তব্য গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠে।” এই নিয়া Paul Krugman’র সার্পোটের কথাও বলছেন, “You cannot do serious economics unless you are willing to be playful.”
এই ‘রম্য’ শব্দটা পইড়া অল্প একটু হাসি আসছে আমার মনে। কারণ ব্যাপারটা এইরকম না যে, একটু হাসি-ঠাট্টা কইরা কথা বলা লাগে। বা বললে ব্যাপারটা মোর কমিউনিকেটিভ হয়। বরং ভাষা বা বলা জিনিসটাই আলাদা একটা ঘটনা, ঘটনার চাইতে; তো যখন আপনি বলতেছেন, জিনিসটা এমনিতেই পিছলায়া যাইতেছে, আলাদা কইরা পিছলানোর আর দরকার নাই তেমন। মানে, ভাষা জিনিসটা কিছুটা ‘প্লেফুল’ ঘটনা, এমনিতেই।
এই জায়গাটাতেই আসলে উনার বলা আর আমার পড়া আলাদা হয়া গেছে। আরেকটা উদাহারণ দিলে ব্যাপারটা আরো ক্লিয়ার হইতে পারে।
যেমন, পয়লা লেখাটাতেই উনি রাজা হর্ষবর্ধনের মিথের কথাটা বলতেছিলেন নিজের একটা এক্সপেরিয়েন্সের সাথে মিল দিয়া। মিথ’টা এইরকম যে, রাজা হর্ষবর্ধন প্রতি বছর পূজার সময় তার জামা-কাপড় পর্যন্ত দান কইরা দিতেন। তো, আলি আকবর খান একবার শবে বরাতের রাতে মসজিদের সামনে দান করতে গিয়া এইরকম বিপদে পড়ছিলেন; যখন খুচরা টাকা দিতে শুরু করলেন তখন আশেপাশের সব ভিখারিরা তারে ঘিইরা ধরলো এমনভাবে যে, কাড়াকাড়িতে উনার পাঞ্জাবি ছিঁড়া গেল। তখন উনি ফিল করলেন, রাজা হর্ষবর্ধনের ঘটনাটাও এইরকমের হইতে পারে। কিন্তু এই ‘মিল’টারে উনি একটা ‘রম্য’ জায়গা থিকাই দেখছেন। বা ভাবছেন ‘সাব-কনশাস’ একটা জিনিস। সিরিয়াসলি ইনকোয়ারি করতে চান নাই আর ইতিহাসের ভাষাটারে বা আর ভাবেন নাই। তো, আমার কাছে মনে হইছে, ইতিহাস’রে সাব-কনশান ওয়েতে আমরা রিভিল কইরা ফেলি না, বরং ইতিহাসের যেই ট্রুথ সেইটা ‘সাব-কনশাস’ একটা জিনিস; কজ অ্যান্ড এফেক্টের লজিক্যাল কন্সিকোয়েন্স না, রিলেশনের জায়গাগুলা অনেকবেশি জ্যিকজ্যাক। অনেক আগের কোন চিন্তা বা ঘটনা অনেক পরের কোন ঘটনারে রিলিভেন্ট কইরা তোলে। বা যে ঘটনা কখনো ঘটেই নাই, ঘটবে বইলা আমরা ধরে নিছিলাম সেই কনটেক্সটে ঘটতে থাকে। কিন্তু এই স্পেইসটাতে আলি আকবর খান যাইতে চান নাই। ‘রম্য’ ব্যাপারটাতেই থামছেন।
তো, বলার জায়গাটা নিয়া উনি যে কনসার্নড হইছেন, সেইটা ভালো জিনিস হইছে। উনি উনার অডিয়েন্স হিসাবে এক রকমের কমন পাবলিক’রে ভাবছেন, যার ফলে কিছু শব্দ ইউজ করার ব্যাপারে এলার্জি বাদ দিতে পারছেন। আবার আটকাইছেনও কিছুটা। যেমন, বইয়েরও নাম দিছেন, ‘পরার্থপরতার অর্থনীতি’; এখন এই পরার্থপরতা ব্যাপারটা বুঝতে একটু টাইম লাগছে আমার; উনি নিজেই লেখাটাতে খোলাসা করছেন যে, এইটা হইতেছে দান-খয়রাতের অর্থনীতি, কিন্তু লেখার নাম হিসাবে ইউজ করতে পারেন নাই। আটকানোর জায়গাটা, এইরকম।
এই যে ভাষা নিয়া আটকায়া থাকাটা উনার থটের জায়গাটাতেও এফেক্ট করছে আসলে। এক রকমের ‘প্রাকটিক্যাল’ সলিউশনের কথা উনি বলছেন, যেইগুলা ট্রু-ও; কিন্তু ‘ধারণা’গুলারে কোনরকম চ্যালেঞ্জের ভিতরে ফেলেন নাই। যেমন, দান-খয়রাত জিনিসটারে উনি ধরেই নিছেন, গরিবের উপকার করার লাইগা করা হয়, অন্য কোন জিনিস নাই আর এইখানে। মানে, দান-খয়রাতের ধারণাটারে কোনভাবে রি-লোকেট করার ট্রাই করেন নাই যে, মানুষ কেন দান-খয়রাত করে? যে কোন এক্সচেইঞ্জ – দান, গিফট, ধার, বেচাকেনা সবগুলা ফর্মেরই পলিটিক্যাল ইকোনমি আছে তো! কিন্তু সেইটা উনার বলার জায়গা না। উনি রিয়ালিটির জায়গাটা নিয়া কনসার্নড; যে, দান-খয়রাত কেন এফেক্টিভ হয় না বা কি কি ভাবে এফেক্টিভ করা যাইতে পারে। যেইখানে আমি ‘পড়তে’ চাইতেছি দান-খয়রাত জিনিসটা কেমনে সোসাইটিতে অপারেট করে? এই ডিফরেন্সের কারণে খুববেশি দূর পর্যন্ত আমি যাইতে পারি নাই আসলে, উনার সাথে।
কিন্তু উনার বলার জায়গাটা ইন্টারেস্টিং। এই কারণে আরো কিছুদূর পড়ছি। ‘শুয়রের (উনি ভদ্রভাবে বা জোর দিয়া শুয়োর বলেন নাই) বাচ্চাদের অর্থনীতি’ লেখাটা ভালো। খুব সুন্দর একটা এক্সম্পাল উনি দিছেন অইখানে।
পাকিস্তানে তখন মিলিটারি গর্ভমেন্ট আসছে পাওয়ারে। যেহেতু পাবলিকের ভোটে জিতে নাই, শহরের পাবলিকরে তো খুশি করা লাগবো একটা কিছু কইরা। কি করবো? তখন গরুর দুধে পানি মিশানো হইতো, গর্ভমেন্ট কঠিন শাস্তির আইন করলো, দুধে পানি মিশায়া ধরা পড়লে ১০০০ টাকা জরিমানা দিতে হবে, সেই আমলে তো অনেক টাকা! কিন্তু দুধে পানি দেয়া তো কমলোই না, বরং আরো বাইড়া গেল। কেন? কারণ, গরুর দুধের যে প্রডাকশন কস্ট, সেই দামে কিনার লাইগা কনজ্যুমার’রা রেডি না, এই কারণে একটু পানি মিশায়া দাম কমানো যাইতো, যেই দামে পাবলিক কিনবে। কিন্তু যখন নতুন আইন করা হইলো তখন পুলিশরেও টাকা দেয়া লাগতো, খরচ আরো বাইড়া গেল, পানিও আরো বেশি মেশানো লাগলো! 🙂
এইখানে দুইটা ঘটনা। ব্যাপারটা এইরকম না যে, গর্ভমেন্ট পাবলিকের লাইগা ভালো কিছু করতে চায় না। কিন্তু গর্ভমেন্টের লগে পাবলিকের যোগাযোগের জায়গাটাই নাই! পাবলিক যে গর্ভমেন্টরে ডরায় – তা না; গর্ভমেন্টই তো পাবলিকরে ডরায়! আপনার কি মনেহয় ঢাকা শহরে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ‘ডেঙ্গু অ্যাওয়ারনেস কমিটি’ করতে দিবে আওয়ামী লীগ? বিএনপি-জামাত দখল নিয়া নিবে না? বা আওয়ামী লীগ-ই যদি করে, পাবলিক আরো ডরাবে না? ঢুকতে দিবে বাসা-বাড়িতে? বেডরুমের সিকিওরিটি তো স্টেট মিনিস্টার দিবেন না, তাই না? দুসরা ব্যাপারটা এর সাথেই রিলিভেন্ট, যেহেতু পাবলিকের লগে গর্ভমেন্টের কোন যোগাযোগ নাই, এর সাথে রিলিটেড ইস্যুগুলা তো জানা নাই; যার ফলে যেই আইন করা হইতেছে, সেইটারও কোন রিলিভেন্স ক্রিয়েট হইতেছে না। মানে, ঘটনা’টা ঠিকঠাক আইন করার, আইন মানার ব্যবস্থা করার – এইরকম না। প্রসেসটা গোড়াতেই ঠিক না। যেইখানে এমন একটা গর্ভমেন্ট আছে, যেইটা পাবলিকরে রিপ্রেজেন্ট করে না, সেইখানে পাবলিকের ফেভারে কাজকাম হবে – সেইটা এক্সপেক্ট কেমনে করি আমরা?
মানে, ২০০০ সালে পাবলিশড হওয়া বইটার ইস্যুগুলা, উনার পারসোনাল এক্সপেরিয়েন্সগুলা খুবই রিলিভেন্ট কইরা তুলছেন বাংলাদেশের কনটেক্সটে। কিন্তু ইস্যুগুলারে যেই জায়গা থিকা দেখা হয়, স্ট্যার্ন্ডাড দিয়া মাপা হয় সেই মানদন্ডগুলারে নিয়া উনি ক্রিটিক্যাল হইতে চান নাই। এইটা উনার তরিকা, দোষের কিছু না অবশ্যই। কিন্তু আমার মনেহয় এই জায়গাগুলাতে ক্রিটিক্যাল না হয়া আলাপগুলারে আগানোটা তেমন কোন এফেক্টিভ কাজ হওয়ার কথা না। আমার রিডিং’টা এইরকম।
Leave a Reply