বুকোউস্কি’র কবিতা পড়তে গিয়া তিনটা জিনিস মনে হইছে।
পয়লা ব্যাপারটা হইতেছে, উনার বলা’টা; যেইসব জিনিস নিয়া উনি কবিতা লিখছেন। আমাদের মনে যেই একরকম ইনায়া-বিনায়া, পাতলা পর্দা দিয়া, ফুলে ফুলে টক্কর খাওয়াইয়া চুমা বুঝানো বা মিলিটারি বুট দিয়া পুতুল পাড়া দিয়া (ফানি) ‘নৃশংসতা’ মিন করার মতো ‘কবিতা’র বা ‘কাব্যিকতা’র ধারণা আছে, সেইগুলা কম বা নাই-ই এক রকম উনার কবিতায়। উনার কবিতা অনেকবেশি ডাইরেক্ট, হার্শ আর ‘রিয়েল-লাইফ’ ফিলিংসের ঘটনা।
এইটা ভালো বা খারাপ – এইরকম না, এইটা ‘কবিতা’র ধারণা বা এক্সপেরিয়েন্সটারে এক্সটেন্ড করে একভাবে। এইরকমভাবেই কবিতা লিখতে হবে – তা না; এইরকমভাবেও কবিতা লেখা যাইতে পারে তো! এইরকম।
দুসরা ঘটনা’টা হইলো, যেইভাবে উনি বলছেন, গল্প-কাহিনি’র মতো কইরা। উনার বেশিরভাগ কবিতাতেই কাহিনি আছে কোন, ঘটনা ঘটতেছে সবসময়, লাইভ একটা জিনিস। যার ফলে এক রকমের ‘লাইভ’ ব্যাপার আছে বইলা মনে হয়, মনেহয় কারেক্টারগুলা জ্যান্ত, বাঁইচা আছে, চলাফেরা করতেছে। উনার বলার বিষয়গুলারে এইরকম বলার ফর্মটা আরো ভিজিবল কইরা তুলছে।
তেসরা বা সবচে প্রমিনেন্ট মেবি যে, একজন স্ট্রং ইন্ডিভিজ্যুয়ালের প্রেজেন্স। একজন মানুষ আছেন, যিনি এই কবিতার কাহিনি’র ভিতরে আছেন, থাকতেছেন। উনার কবিতাগুলাতে এই ইন্ডিভিজ্যুয়াল হইতেছেন একজন গরিব বুড়া বেটা মানুষ। (কবিতা ইয়াং বয়সের জিনিস – এই ব্যাপারটাতেও একটু ধাক্কা লাগার কথা।) সোশ্যাল আইডেন্টিটি হিসাবে খুব রেসপেক্টবল কিছু না; বাদাইম্মা টাইপের একটা জিনিস। এইরকম একটা আইডেন্টিটি’র কারণেও মনে হইতে পারে যে, সোসাইটি জিনিসটারে উনি দেইখা ফেলতে পারতেছেন একভাবে, যেইটা সোসাইটির ভিতরের একটা আইডেন্টিটি থিকা দেখতে পাওয়াটা মুশকিলের হওয়ার কথা।
কিন্তু আমি ঠিক বুকোউস্কি’র কবিতার আইডিওলজি’র ভক্ত বা সাবস্ক্রাইবার না। একটু দূর থিকা রিড করতে পারছি, উনার কবিতাগুলা।
তো, উনার কবিতার ‘কাব্য-সমালোচনা’ হিসাবে দুইটা জিনিস মনে হইছে।
এক হইলো, বুকোউস্কি’র কবিতা’তে একটা প্লেজার আছে এই স্টেটম্যান্ট দিতে পারার ভিতর যে, আমি তো খারাপ! মানে, উনার এই গিল্টি ফিলিংসটা যে নাই, সেইটা না; খুব ভালোভাবেই আছে, কিন্তু উনি যে ‘খারাপ’ এইটা বলার ভিতর দিয়া উনার খারাপ-হওয়াটা মাইনা নেয়ার স্পেইসটা ক্রিয়েট করতে পারতেছেন উনি; যে, আমি খারাপ! এই খারাপ হওয়াটা এতোটা খারাপও না আসলে, কারণ একটা ‘ভালো’ হওয়ারে অ্যাজিউম করে এই খারাপ-হওয়াটা যেই ‘ভালো’ এতোটা ভালো কিনা শিওর না, হয়তো যে ভালো সে খারাপ-ই, কিন্তু নিজেরে সে বলতে পারে না; অথচ যে খারাপ, খারাপ হইলেও বুক ফুলায়া বলতে পারে খারাপ, তখন মনে হইতে পারে এতোটা খারাপ না মেবি! (মানে, উনি বলেন না, কিন্তু এইটা ইমপ্লাই করেন তো, বলার ভিতর দিয়া। বলাটা ‘খারাপ’ না অবশ্যই, কিন্তু একটা খারাপ-ভালো’র ভিতর এই যে আটকাইতে পারা – এইটাতে সাবস্ত্রাইব করাটাও টাফ তো আসলে। ‘আধুনিক’ একটা ব্যাপার। তো, বুকোউস্কি শেষমেশ, ‘আধুনিকতা’র ডিলেমার মধ্যেই আটকায়া থাকেন।) আর উনার ম্যাসকুলিনিটারে উনি এইভাবে এনজয়ও করতে পারেন।
এনজয় করাটা বাজে জিনিস না অবশ্যই, কিন্তু মুশকিল হইলো এই খারাপ-ভালোর ঘটনাটা, খারাপ হওয়াটা খারাপ না এতোটা, যতোটা ভালো হওয়াটারে একটা ভালো হওয়া হিসাবে আইডেন্টিফিকেশনের ভিতরে আটকায়া রাখাটা।… তো, এইভাবে বলার জায়গাটাতে উনার কবিতা কবিতা হয় নাই – এইরকম না, কিন্তু কম-কবিতা হয়া থাকে তো, একরকম! 😞
দুসরা ব্যাপারটা হইতেছে যে, কোন না কোন কবি’র ওয়ার্ল্ড থিকাই আমরা বাইর হয়া আসি না, বরং নিজেদেরকে আমরা যেইখানে প্লেইস করতে পারি, দেখি যে, আরে, কোন না কোন কবি এইভাবে বইলা রাখছেন তো আগে! বলতে-পারাগুলি’র সাথে আমরা মিলাই আমরা আমাদেরকে। একটু এইদিক-সেইদিক হয় মনেহয়, কিন্তু বেশিরভাগ সময়ই কবিতার রিয়ালিটির জুতায় সবচে ক্লোজলি আটাইতে পারি আমরা আমাদের ফ্যাণ্টাসিগুলা।
তো, বুকোউস্কির রিয়ালিটির টাইমটা পার হইছে মনেহয়। কবি হিসাবে নিজেরে সেন্টার পয়েন্টে তো রাখতেই হয়, কিন্তু যেই পাগলা, আন-সোশ্যাল, ক্র্যাক লোকটারে উনি রাখেন সেন্টারে, সে তার পাগলামি, রেভিউলেশন, ক্রাংকিনেসের ভিতরে যে নিজেরে সুপিরিয়র ভাবতে পারার এজেন্ডারে আপহোল্ড করতে পারে, সেইটা মেবি টাফ এখন। পসিবল না যে তা না। কারণ রেভিউলেশনের ফ্যান্টাসি দিয়া কনজিউমড হয়া যাওয়া একটা জেনারেশন তো পাইছি আমরা। এইটা এখনো শেষ হয়া যায় নাই, কিন্তু এই ফ্যাণ্টাসিগুলা তো ফেড-ই হইছে; যেমন সিক্সটিইজের হিপ্পিদের ফটো দেখলে এখন যতোটা না ড্রিমি-বিপ্লবী তার চাইতে বিষন্নতার রোগী-ই লাগে কিছুটা। অইরকম।
তাই বইলা বুকোউস্কি’রে ‘বাতিল’ কবি বইলা মনেহয় না, উনার আউটস্পোকেননেস এখনো রিলিভেন্ট একটা প্যাটার্ন।
আর কবিতা বা আর্ট হইতেছে আসলে উদাহারণ তৈরি করার ঘটনা, যতোটা না ব্যাখ্যা করার। এই জায়গা থিকা, বুকোউস্কি’র কবিতা এক রকমের কবিতারই উদাহারণ। এইটা নিয়া কোন ডাউট রাখা ঠিক না।
Leave a Reply