ইংরেজি শব্দ, বাংলা ওয়ার্ড…

তখন মনেহয় ক্লাস সিক্স বা সেভেনে পড়ি, একটা গল্প বা রম্য-রচনা পইড়া পুরা বোকচোদ হয়া গেছিলাম, কারণ কিছুই বুঝতে পারতেছিলাম না; পারতেছিলাম না একটা শব্দের কারণে। লিখছিলেন মনেহয় আলী ইমাম, শাহরিয়ার কবির বা এইরকমের কেউ, যারা অই আমলে কিশোর, মানে টিনএইজদের জন্য লিখতেন। শব্দটা ছিল, ডিক্টেটর। একজন ডিক্টেটর কি করেন, কেমনে ঘুমান, কেমনে খাওয়া-দাওয়া করেন, এইসব নিয়া ফান করা। তো, ডিক্টেটর কি জিনিস সেইটাই তো জানি না আমি! আর ইংলিশে স্পেলিংটা লেখাও নাই যে ডিকশনারিতে খুঁজতে পারবো। তখন যেহেতু গোয়েন্দাদের বই পড়ি কিছু, ডিটেকটিভ শব্দটা জানি। কিন্তু ডিটেকটিভরে নিয়া এতো ফান করার কি আছে! পরে যখন জানতে পারলাম ডিক্টেটর মানে স্বৈরাচার তখন বুঝতে পারলাম যে, ও, আচ্ছা, এরশাদরে নিয়া লিখছে! তো, লেখাটা যতোটা না ফান, তার চাইতে জেলাসিই বেশি ছিল মনেহয়, এই কারণে ফানটা জমে নাই তেমন। আর আমার ধারণা, রাইটার ইচ্ছা কইরা স্বৈরাচার না লেইখা ডিক্টেটর লিখছিলেন, কারণ নিউজপেপারে সবসময় স্বৈরাচার লেখা হইতো (চিন্তা করেন, কি রকম ফ্রি একটা টাইম ছিল তখন!), শব্দটা পরিচিত ছিল, তো অইটা লিখলে সাথে সাথে কানেক্ট করা যাইতো যে, এরশাদরে নিয়া লেখছে, এই কারণে মেবি এই শব্দটা লিখছিলেন।…

এখন ব্যাপারটা যে খালি ইংরেজি শব্দ – তা তো না, যেই জিনিসটারে বুঝাইতে চাইতেছে, সেই ব্যাপারটাই তো ‘ইংলিশ’! মানে, ডিক্টেটর বা স্বৈরাচার টার্মটা বাংলা-ভাষার হিস্ট্রিক্যাল রেফারেন্সে তো নাই, কি থাকতে পারে… জালিম?… বা অন্য আরো কিছু… কিন্তু সেইটা কোনভাবেই স্বৈরাচার না। মানে, কাছাকাছি রকমের জিনিসই, কিন্তু একই জিনিস না। ব্যাপারটা এইরকম না যে, স্বৈরাচারের ইংলিশ হইতেছে ডিক্টেটর, বরং স্বৈরাচার হইতেছে ডিক্টেটরের বাংলা। দুইটা একই ঘটনা না। তো, আমার ধারণা হাজার হাজার না হইলেও শ’য়ে শ’য়ে এইরকম ইংরেজি শব্দ থাকার কথা, বাংলা ভাষায়; যেইটার রেফারেন্স (বা সূত্র) হইতেছে ইংরেজি ভাষায়। এক সময় হয়তো ফার্সি ভাষাতে ছিল এই রেফারেন্সগুলা।

মানে, আমি যেই পয়েন্টটা মেইক করতে চাইতেছি, সেইটা হইতেছে, যে কোন শব্দই একটা কালচারাল রেফারেন্সের ঘটনা। উইথইন দ্য কালচারও। যেমন ধরেন, খোয়াব কইলে দাদি-নানীদের কথা মনে হইতে পারে, বা ‘গ্রাম-বাংলা’র কথা 🙂 (যদিও গান আছে, “আমি স্বপ্ন দেখি, মধুমালার মুখ রে…”), স্বপ্ন রিলেটিভলি ‘আধুনিক বাংলা’, ‘বাংলা মিডিয়াম’-ও কিছুটা; এর পাশাপাশি ড্রিমও কিন্তু বাংলায় এখন অনেকটা, কারণ আমরা যারা ‘শিক্ষিত’ তারা সবাই ড্রিম বুঝি তো! কিন্তু তাই বইলা ইংরেজি ভাষায় ড্রিম যেইরকম অ্যাসপায়ার, উইশ, হোপ নানান রকমের আছে, বাংলার ড্রিম অইরকম জায়গাতে খুব কমই যাইতে পারে মনেহয়।

মানে, কথাটা খালি এইটা না যে, ইংরেজি শব্দগুলাও বাংলা-ই অনেক সময় – এইটা তো আছেই (বা বাংলা অনেক শব্দও ইংলিশে বাংলাতেই কইতে হবে আসলে, যেমন ধরেন, খিচুরিরে মাসালা রাইস কইলে খিচুরি বুঝানো যাবে না আসলে, বা ম্যাশ পটেটো দিয়া আলু-ভর্তা… মানে, একই জিনিস হবে না); বরং শব্দ জিনিসটারে ইংরেজি, ফার্সি, পর্তুগিজ, সংস্কৃত, হিন্দি, উর্দু… এইভাবে দেখার যে তরিকা সেইটাই ঝামেলার জিনিস মনেহয়। এমন না যে, এইভাবে আইডেন্টিফাই করা যায় না, কিন্তু এইরকম দাগানোটা বরং স্বৈরাচার ও ডিক্টেটর টাইপের ঝামেলা তৈরি করে, যেইরকম করে লেবার ও শ্রমিক; মানে, লেবার তো আসলে ‘বেশি বাংলা’; যেইরকম ‘সাইডে, সাইডে…’ বেশি বাংলা ‘সরে যান’ থিকা। তো, এইরকম ইংরেজি শব্দগুলা ‘বাংলা’ বইলা ‘ডিক্টেটর’ বাংলা না, বা এর এগেনেস্টে ‘স্বৈরাচার’-ও। এখন তাই বইলা ইংরেজি শব্দের বাংলা কি করা যাবে না? এইখানে আমার কথা হইতেছে, কি বাংলা বানাইতেছেন, সেইটা খেয়াল করাটা দরকার। এইখানে ডিক্টেটরের বাংলা স্বৈরাচারই করতেছেন না খালি, জালিম’রেও যে রিপ্লেইস করতেছেন, এই বুঝ থাকাটা দরকার মনেহয়।…

মানে, চিন্তার রেফারেন্সটা কই থিকা আসতেছে, সেইটা শব্দ দিয়া বুঝতে পারার কথা। কোরান-হাদিস নিয়া কেউ কথা কইলেও দেখবেন অনেক আরবী-ফার্সি শব্দ আসে, কারণ যেই চিন্তাগুলা আছে কোরান-হাদিস নিয়া সেইটা অই ভাষাগুলার রেফারেন্স থিকাই আসছে; কিন্তু আমার ধারণা, এইরকমের শব্দগুলা একাডেমিক আলাপের বাইরে গিয়া কোন মিনিং তৈরি করতে পারে না।… বা ভূমি অফিসে গেলে দেখবেন অনেক শব্দই বুঝা যায় না, কারণ এইগুলা ডেইলি ইউজের ভিতরে নাই আর আমাদের। একসময় যে ছিল – তাও না; বরং আদালতের ভাষা ছিল ফার্সি, যেইটা ইংরেজি দিয়া রিপ্লেস হইছে; যেইটা এখনো কিছুটা রয়া গেছে। তো, এইভাবে, যেই ভাষার চিন্তাটা পলিটিক্যালি, ইকনোমিক্যালি ডমিনেন্ট সেই ভাষার শব্দগুলা একভাবে দখল নিতে থাকে, ঢুকতে থাকে আরেকটা ভাষার ভিতরে। ব্যাপারটা খুব জোর কইরা ঢুকানো হয় বা ‘স্বৈরাচারী’ 🙂 একটা ঘটনা – তা না, বরং যোগাযোগের একটা ঘটনা। তবে এই যোগাযোগটা ফ্রি মার্কেট ইকোনমি’র মতই খুব ‘ফ্রি’ আর ‘নিরেপেক্ষ’ কোন ঘটনা না আর কি!…

 

Leave a Reply