১. এলান বাদিউ কইছিলেন এই কথা যে, কোথাও কোন জাস্টিস হইলে সেইটার বুঝার উপায় না থাকলেও, কোথাও কোন ইনজাস্টিস বা অন্যায়-অবিচার হইলে সেইটা টের পাওয়া যায়; লোকজনের একটা অসম্মতি, একটা রেজিসট্যান্স থাকে। তো, ও.জে. সিম্পসন’রে যখন গ্রেফতার করতেছিল পুলিশ, তখন ব্ল্যাক লোকজন এর প্রতিবাদ করতেছিল। আবার সে যখন খালাস পাইলো মামলায় হোয়াইট লোকজন তার বাড়ির পাশে রাস্তায় দাঁড়ায়া এই রায়ের প্রতিবাদ করতেছিল।
২. ব্যাপারটা এইরকম লিনিয়ার না যে, আমাদের সামাজিক বাস্তবতা আমাদের পারসোনাল লাইফ’রে এফেক্ট করে, বা এর উল্টা’টা যে আমাদের পারসোনাল লাইফ-ই সামাজিক বাস্তবতাগুলা তৈরি করতেছে; মানে, এইগুলা সত্যি কথা-ই; কিন্তু সত্যি জিনিসটারে এর মধ্যে আটকায়া ফেললে মুশকিল হবে। বরং আমার প্রস্তাব’টা হইতেছে এইরকম: সমাজে যখন এক ধরণের অন্যায়-অবিচার লিমিট ছাড়া, ভয়াবহরকম ভাবে হইতে থাকে, তখন কোন না কোন পারসন ভিক্টিম সাইজা এর বেনিফিট নিতে পারে; একটা পর্যায়ে গিয়া সমাজের অন্যায়-অবিচার ব্যক্তির পর্যায়ে গিয়া জায়েজ হয়া যায়।
ও. জে.’র ব্যাপারটাতে ধরেন, বুঝা যায় যে, খুন দুইটা সে-ই করছে; কিন্তু আম্রিকান সমাজে ব্ল্যাক পিপলদের প্রতি হেইট্রেট এই জায়গাতে আছে, এই পরিমাণ হইছে যে, সোসাইটি অন্ধ হয়া গেছে এই জায়গাটাতে; ব্ল্যাক পিপল’রা খুন করতে পারে না – তা না, বরং একজন ব্ল্যাক লোকরে কন্সপিরেসি কইরা ফাঁসানো’টা খুবই কমন ব্যাপার। আমাদের, বাংলাদেশের সমাজেও দেখবেন, কোন ওয়াইফ, প্রেমিকা যদি বলেন উনার জামাই, প্রেমিক উনারে মাইর-ধর করছে, টর্চার করছে – সেইটারে কোন প্রমাণ ছাড়াই বিশ্বাস না করার কোন কারণ নাই, কারণ এইটা ঘটে; তো, কোন পার্টিকুলার কেইসে কোন মেয়ের পক্ষে ‘ভিক্টিম রোল’ প্লে করাটা খুব সহজেই বিশ্বাস করার মতো একটা ঘটনা। সমাজে যদি ‘নারী-নির্যাতনের’ ঘটনা না থাকতো বা কম থাকতো, পাবলিক বিশ্বাসও কম করতো। এইরকম একটা কানেকশন আছে।
মানে, আমি বলতে চাইতেছি, আমাদের বিচার সমাজ-বাস্তবতার উপ্রে নির্ভর করে। আইন-কানুন তো আছেই, কিন্তু বিচার বেশিরভাগ সময়ই সোশ্যাল পারসেপশনের, রিয়ালিটির ঘটনা।
৩. এই কারণে জুরি সিস্টেম’টা ভালো। আমি ভাবতেছিলাম, বাংলাদেশে যদি এই জুরি সিস্টেম থাকতো আদালতের বিচারে, তাইলে কি হইতো? জুরি’রা ঘুষ-টুষ খায়া বারোটা বাজায়া দিতো হয়তো, পারসোনাল রেষারেষিরেও কাজে লাগাইতো হয়তো; কিন্তু তাইলেও ভালো হইতো আসলে। পাবলিক’রে যতো বেশি সম্ভব আদালতের বিচারের লগে রিলেট করা দরকার। তাইলে সমাজের যেই বিচার সেইটার নমুনা আমরা পাইতে পারতাম, খারাপ হোক আর ভালো হোক। আমরা মেবি বুঝতে পারতাম, এই সমাজ কতোটা ভালো বিচার করতে পারে। এই অভ্যাস’টা দরকার আসলে।
৪. এখন যে ‘ভিক্টিম’ হওয়ার বেনিফিট’টা পাইলো, লোকটা জাস্ট লাকি। তার জন্যও এই সমাজ-বাস্তবতা একটা ট্রাপ। এইখান থিকা সে আর বাইর হইতে পারার কথা না।
সে ব্ল্যাক, অপ্রেসড; কিন্তু সাকসেসফুল। এই কারনে সে আর নিজেরে ‘ব্ল্যাক’ মনে করে না, সে হোয়াইট কালচারের লগেই থাকতে চায় এবং জানে যে, তার সাকসেস একটা অস্বস্তি ক্রিয়েট করতেছে। তো, এইটারে একটা সেলিব্রেটি ক্রাইসিসের জায়গা থিকা দেখলে ভুল-ই হবে; যেমন ধরেন, মেরাডোনা বা বুকোউস্কি’র এগেনেস্টে এইরকমের টর্চারের ফুটেজ আছে; একটা রাগ বা এংগুইশ এইখানে আছে, যে উনারা সেলিব্রেটি, কিন্তু সেলিব্রেটি হয়া যেই আপার, এলিট ক্লাসটাতে উনারা বিলং করতে চান, সেইখানে তো উনারা ওয়েল-একসেপ্টেড না। এই ক্রাইসিসটা আছে।
কিন্তু তাই বইলা এইটা ওথেলো সিনড্রোমের ঘটনাও না। ওথেলো তো ছিল নিগ্রো, মূর। কিন্তু সে চইলা আসছিল খুব পাওয়ারফল পজিশনে; সে পাওয়ারফুল, কিন্তু পাবলিক তলে তলে তার বদনাম করে। আমাদের সমাজেও দেখবেন, যাদের ‘নুতন টাকা হইছে’ 🙂 তারা খালি আন-কালচারডই না, ক্রুয়েলও। কারণ কালচারালি আপার-ক্লাস, এলিট ক্লাসে উনারা থাকেন, কিন্তু অই জায়গার লোক যে উনারা না, সেইটাও বুঝতে পারার কথা।
তো, ঘটনাগুলা বরং এইসবকিছুর বাইরে, পাওয়ারের জায়গা থিকাই ঘটে বেশিরভাগ সময়। ইন্ডিয়াতে এক ধর্মগুরু রামরহিমের এগেনেস্টে রেইপের মামলা করছিলেন যিনি, তিনি মামলার এজহারে লিখছিলেন, রামরহিম তারে রেইপ করার আগে বলতেছিলেন, কৃষ্ণের তো অনেক লীলাসঙ্গী ছিল, উনিও তো কৃষ্ণের মতই, তারে তো সবার অ্যাডমায়ার করা উচিত! মানে, উনি ‘স্পেশাল’ একজন, ‘সাধারণ নিয়ম’ উনার ব্যাপারে খাটে না। ক্রাইসিস মেবি এইটাই। ক্রাইমটা এই জায়গাতেই ঘটে, যে, আমি ‘স্পেশাল’, ‘সাধারণ’ না। যে কোন ক্রাইমেই একটা এথিক্যাল মিস্টিফিকেশনের দরকার পড়ে।
৫. ও.জে.’র পুরা উল্টা কাহিনি হইতেছে, টু কিল অ্যা মকিংবার্ড নভেল’টা। যখন দেখা যায়, ব্ল্যাক লোকটা রেইপ করে নাই, আদালতে সে ছাড়া পাইয়া যাবে, তখন জেলখানার গার্ড’রা গুলি কইরা তারে মাইরা ফেলে। পুরা ‘ক্রসফায়ারের’ একটা কাহিনি। পুলিশ কয়, ও তো পালায়া যাইতে নিছিলো, এই কারণে তারে গুলি কইরা মাইরা ফেলছে।
৬. প্রসিকিউশন হাইরা যায় আসলে দুইটা অনুমানের জায়গাতে। এক হইলো, উনারা ধইরা নেন যে, ক্রাইম হইতেছে পারসোনাল একটা ঘটনা। এইটা তো অবশ্যই, কিন্তু সমাজের লগে ডিসকানেক্টেড কোন ঘটনা না। (অ্যা ব্রাইটার সামার ডে সিনেমা’তে আছে, পারসোনাল ক্রাইমটা কেমনে ঘটে, একটা সমাজ-বাস্তবতায়।) অই কানেকশনটারে উনারা আমলে নিতে চান নাই। সেকেন্ড জিনিস হইলো, উনারা ধরে নিছেন, মানুশ রেশনাল ওয়ে’তে ডিসিশান নেয়। কিন্তু এইটাও পুরাপুরি সত্যি না, রেশনাল হওয়াটা বরং একস্ট্রিম একটা সিচুয়েশন, টোটালি পাগল হওয়ার মতন। মানুশ খালি রেশনাল-ই না, ইমোশনাল ডিসিশানও নেয়, জাইনা-শুইনা ভুল করতেও রাজি থাকে; অনেক সময় যে, ড্রাগসের কাছে হ্যান্ডিকেপড হয়া যায়, কেন হয়? এইরকম জায়গাগুলা তো আছে…
৭. তো, চিন্তার গ্রাউন্ডটা হইতেছে ঘটনা; পক্ষ বা বিপক্ষ না। প্রসিকিউশন দেখাইতে চাইছেন যে দেখেন, এইটা প্লেইন অ্যান্ড সিম্পল একটা মার্ডারের ঘটনা। অন্য কোন সাসপেক্টই নাই ইভেন। আসামী পক্ষ অইদিকে গেলেনই না; কইলেন, সোশ্যাল হেইট্রেটের ঘটনা। এখন আপনি বিচারের কোন গ্রাউন্ডটারে শক্তিশালী কইরা তুলতে পারতেছেন, বিচার’টা সেইটার বেসিসেই হইতেছে আসলে।
৮. ও, আর মিডিয়া ট্রায়াল। এইটা তো এখন প্রাইম একটা জিনিস। মানে, মামলা করারও দরকার নাই, মিডিয়াতে নিউজ কইরা দিতে পারলেই হবে। বা বিচারে শাস্তি হওয়ারও দরকার নাই। মামলা কইরা কয়দিন জেলের ভাত খাওয়াইতে পারলেই হবে। কিন্তু একটা জিনিস খেয়াল কইরা দেখবেন, মিডিয়া ট্রায়াল কখনোই কমন যে ন্যারেটিভ, চিন্তার যেই কমন গ্রাউন্ড’টা, এর বাইরে যাইতে পারে না। এইটা মোটামুটি ইম্পসিবল। যেই কারণে ইনিশিয়াল হাইপ’টা কাইটা গেলেই একটা ভ্যাকুয়াম তৈরি হয়, যেইখানে থিকা আমরা বুঝতে পারি না যে, এইটা ভুল ছিল, বরং এক ধরণের টের পাওয়া যায় যে, অইটা একটা রিয়ালিটি-বাবল ছিল, এইরকম আরো বাবল আমাদের দরকার, নিজেদের রিয়ালিটির ধারণা’রে স্যাটিসফাই করার জন্য। মানে, ধরেন, ‘শিক্ষিত মেয়েরা পরকীয়া বেশি করে’, ‘মাদ্রাসার টিচার’রা রেইপ বেশি করে’… এইরকমের ঘটনাগুলা যে ঘটে না – তা না; কিন্তু আমাদের ‘রিয়ালিটির নিড’টারেও ফুলফিল করতে থাকে, কন্টিনিউয়াসলি। (নাইটক্রাউলার সিনেমাটা একটা ভালো রেফারেন্স এইখানে।)
৯. তো, ব্যাপারটা এইরকম না যে, সমাজ বা জীবন কিছু নিয়ম দিয়া চলে (এইগুলা তো আছেই,) বরং অনেকবেশি কেওসের জায়গা। কিন্তু কেওটিক বইলাই পুরাপুরি নিয়ম ছাড়া না, বা কোন কন্সপিরেসির ঘটনাও না। আমরা একটা কেওসের ভিতরে আছি, আর এইটারে বানাইতেছি। এইরকম একটা পয়েন্ট থিকা দেখতে পারলে ঘটনাগুলারে ‘বিচ্যুতি’ বা ‘একসেপশন’ মনে হইতে পারবে না হয়তো এতোটা।
Leave a Reply