থার্ডটাইম এবরশন করাইতে আসছে শারমিন। ফার্স্ট টাইম আসছিল অনার্সে পড়ার সময়। আদনান সাথে ছিল। আদনানও তখন মাস্টার্সে পড়ে, চাকরি-বাকরি নাই। কি করবে অরা! অনেক কষ্টে, বন্ধু-বান্ধবদের কাছ থিকা টাকা-পয়সা ধার কইরা আসতে হইছিলো। এতো টায়ার্ড লাগতেছিল তখন। বয়স কম ছিল, এই কারণে খারাপও লাগছিল অনেক। বাচ্চা-ই তো ছিল আসলে অরা তখন! হসপিটাল থিকা হলে ফেরত যায় নাই আর।
সোরওয়ার্দি’তে বইসা অনেকক্ষণ কান্দা-কাটি করছিল দুইজনেই। তারপরে আদনানের এক বড়-আপার বাসায় গিয়া রাতে ছিল। অই এবরশন অদের বন্ডেজ অনেক স্ট্রং করছিল। শারমিন আর আদনানের দুইজনই অনেক সরি ফিল করছিল। আদনানের চাকরি পাওয়ার পরই আর দেরি করে নাই অরা, বিয়া কইরা ফেলছিল। শারমিনেরও চাকরি পাইতে সমস্যা হয় নাই। আর বিয়ার এক বছরের মাথাতেই সুন্দর ফুটফুটা একটা বাচ্চা নিছিল অরা। শ্রাবস্তী’র মতো এতো লক্ষী বাচ্চা আর হয় না!
মুশকিল হইলো, শ্রাবস্তী হওয়ার পর থিকাই শারমিন আর আদনানের মাঝখানে ফিজিক্যাল ডিসটেন্স শুরু হয়। আদনানের অফিসের কাজের ব্যস্ততা বাড়তে থাকে, সন্ধ্যা সাতটা-আটটার জায়গায়, রাতে দশটা-এগারোটা নাগাদ বাসায় ফিরতে থাকে। প্রেগনেন্সি লিভের পরে অফিস, বাচ্চা সামলাইতে গিয়া শারমিনও হিমশিম খাইতে থাকে। কই দিয়া যে দুই-তিন বছর পার হয়া যায় টেরই পায় না শে।
একদিন টের পায় যখন আদনান ডিভোর্সের কথা বলে। অর আরেকটা রিলেশন হইছে, ভার্সিটিতে পরিচয় ছিল অই মেয়ের সাথে, একটা কনফারেন্সে গিয়া দেখা হইছে। তারপর থিকা যোগাযোগ। কঠিন প্রেমে পড়ছে সে মেয়েটার। বইলা আদনান কানতে থাকে। শারমিনের শুনতে খারাপ লাগে। চুপ কইরা থাকে। আবার ভাবে, ভুল মানুশরে শে ভালোবাসে নাই, এটলিস্ট সত্যি কথা বলার সৎ-সাহস তার আছে। দুই-তিন দিন চুপচাপ থাকার পরে ব্যাপারগুলার ফয়সালা হয়। আদনানের আব্বা-আম্মা তো ছেলের ত্যাজ্য কইরা দিবেন বইলা ঘোষণা দেন। শারমিনের আম্মা বাঁইচা থাকলে অনেক কষ্ট পাইতেন। অদের বিয়ার পরপরই মারা গেছিলেন। শারমিনের আব্বা সবসময়ই দায়িত্ব এড়ায়া চলা লোক, জিগান, কি করতে চাও তুমি এখন? চলে আসবা আমাদের বাসায়? ছোটভাইয়ের সংসারে গিয়া উঠতে চায় না শারমিন। বড়’পা আর দুলাভাই ডেইলি যোগাযোগ করতো কিছুদিন, বলতো কানাডা চইলা আয়! বয়স ৩০ হইলো না এখনো তোর, লাইফ কি এইখানেই শেষ নাকি! অই ছাগল’টারে দেখায়া দে, হোয়াট ইউ আর ক্যাপাবল অফ… এইরকম। কিন্তু শারমিন বুঝে, সবারই আলাদা আলাদা লাইফ আছে। কেউ কারো লাইফে জোর কইরা থাকতে পারে না। পারাটা উচিতও না।
অফিসের চাকরি’টা ভালো। কলিগরাই অনেক হেল্প করে শারমিনরে। অফিসের কাছেই একটা ছোট বাসা নেয়। একটা ফুল-টাইম বুয়াও পায়া যায় বাসার কাজের জন্য। অফিসের ডে-কেয়ারও আছে। আর স্টুডেন্ট লাইফেও পড়াশোনা নিয়া সবসময় সিরিয়াস ছিল শারমিন, চাকরিতে, প্রফেশনেও শে সিরিয়াস। যার ফলে সবাই অরে লাইক করে। শুরুতে কিছুদিন অনেক খারাপ লাগতো, হুদাই কান্দা আসতো, প্যানিক এটাকের মতো। অফিসের টয়লেটে গিয়া অনেকক্ষণ বইসা থাকতো। বাইর হয়া আইসা দেখতো সবাই অর ডেস্কের সামনে হৈ-হুল্লোড় করতেছে, আপনার জন্য পিৎজা অর্ডার করছি শারমিন, টাকা দেন! এই-সেই। এইভাবে ঘটনাগুলা ইজি হয়া যাইতেছিল। আদনানের জন্য কখনোই শারমিনের খারাপ লাগে নাই। লুজার ফিলিংসও হয় নাই কখনোই। শে জাস্ট একটা লাইফের ড্রিম নিয়া ছিল, যেইটা শে এখন বুঝতে পারে, একইরকম হইতে পারবে না আর। লাইফ গোছানোর চাইতেও লাইফের ড্রিমটারে নতুন কইরা সাজানো অনেক কঠিন। অনেক সময় সম্ভবই হয় না। শারমিন ফিল করে, অর ড্রিমটা ভচকায়া গেছে। লাইফের কথা শে আর সিরিয়াসলি ভাবতে চায় না।
শ্রাবস্তীর সাথে সময়টা ভালোই কাটে। স্কুলে যাওয়া শুরু করছে এখন। আদনান মাসে একবার কইরা আসে, দুই-তিন ঘন্টা থাকে। শ্রাবস্তীর সাত-আট বছর হওয়ার পরে একদিন কইরা নিয়া রাখতে পারবে। এইরকম একটা এগ্রিমেন্ট অরা নিজেরা নিজেরাই করে নিছে, এইসব নিয়া কোন ঝামেলা হয় নাই। আদনান সবকিছুই মাইনা নিছে। শ্রাবস্তীর দাদ-দাদী কয়েকবার আইসা থাইকা গেছে। যাওয়ার সময় শ্রাবস্তী দাদী জড়ায়া ধইরা ছেলের জন্য মাফ চাইছেন। বলছেন, মা রে, তুমি আরেকটা বিয়া করো এইবার! প্রায়ই শ্রাবস্তীর নাম কইরা টাকা-পয়সা পাঠান। এক ধরণের অপরাধবোধে ভুগেন মেবি উনারা।
কিন্তু শারমিনের আসলে খারাপ লাগে না। বরং এক ধরণের ভালোও লাগে। ইমোশনাল ঝুট-ঝামেলা নাই কোন। কিন্তু তখনই বাজে ঘটনা’টা ঘটলো। প্রান্তের সাথে পরিচয় হইলো। খুবই ক্রিয়েটিভ পারসন সে। গান গায়, ছবি আঁকে, কবিতা লেখে। কেমনে কেমনে যে পরিচয় হইলো! আর হওয়ার পরেই হাওয়ায় ভাসতে লাগলো অরা। মনে হইলো কিশোরী বয়সে ফিরা গেছে শে। দুনিয়ার কোনকিছু আর ম্যাটার করে না। যেন শারমিন একটা বাচ্চা একটা পুতুল নিয়া শে খেলতেছে। প্রান্ত কে, কি… এইসবকিছু জানার ইচ্ছাও তাঁর হয় নাই। হইলো তিন মাস পরে। যখন প্রান্ত টাকা চাইতে শুরু করলো। শারমিন প্রথমে ভাবছে, ক্রিয়েটিভ মানুশ একটু গাঁজা-টাজা তো খাইতেই পারে। আর গাঁজা তো কোন ড্রাগস না। আম্রিকা-কানাডে তো লিগ্যাল জিনিসই! প্রান্ত’র এইসব কথা শুনতে ফানিই লাগতো শারমিনের কাছে। এনজয় করতো।
আরেকটা মুশকিল হইলো প্রান্ত কখনোই কনডম ইউজ করতে চাইতো না। জিনিসটা অস্বস্তি লাগতো শারমিনের। কারণ, অরা তো আর কাপল না। প্রেম করতেছে ঠিকাছে, কিন্তু বিয়া করবে কিনা, বাচ্চা নিবে কিনা – এইসব তো অন্য আরেকটা আলাপ। আর এই আলাপ প্রান্ত’র সাথে করাও যায় না, কারণ সে অইসব জিনিসরে মনে করে লাইফের বাইরের ঘটনা। শারমিনও শ্রাবস্তীর কোন ভাই-বইন চায় না। কিন্তু এইগুলা জিনিস প্রান্ত’র লগে শেয়ার করা যায় না। তারপরে এই টাকার ঝামেলা শুরু হইলো। শারিমন ওয়েল-অফ, টাকার সমস্যা নাই অর, চাকরি নিয়াও সিরিয়াস, কিন্তু বাড়তি টাকা তো নাই অর। আর থাকলেও টাকা দিয়া একটা ফাক-বয় তো শে পুষতে চায় না। একবার-দুইবার টাকা দেয়ার পরে শারমিন স্ট্রিক্ট হইতে শুরু করে। প্রান্তও তখন বাজে বিহেভ করতে শুরু করে।
কিন্তু শারমিন এই বাজে বিহেভ নিতে রাজি না। আদনানের সাথে তার যা-ই হোক, শুরু থিকা শেষ পর্যন্ত ভালো একটা আন্ডারস্ট্যান্ডিং ছিল, মন কালাকালি হইছে, কিন্তু গালি-গালাজ তো দূরের কথা, কখনো রুড কোন কথা-বার্তাও হয় নাই। সেইখানে এই প্রেশার নেয়ার তো কোন মানে নাই। আদনানও একদিন মাথা-নিচু কইরা বলে, বলাটা ঠিক না তোমারে, তুমি আবার মাইন্ড কইরো না, যেই ছেলেটার সাথে ঘুরা-ফিরা করতেছো, অর ট্র্যাক-রেকর্ড কিন্তু ভালো না, কয়েকটা মেয়ের সাথে বাজে কাজ করছে সে। ঢাকা শহর তো ছোট, সবাই সবাইরে চিনে। একটু সাবধানে ডিল কইরো আর কি! এই জেনারেশনের পোলাপাইন তো আমাদের মতো না এতোটা। শারমিন হাসে তখন, বলে, কেন, তোমার বউ ভালো না?
প্রান্ত তখন ইমোশনাল ব্লাকমেইলিং করতে শুরু করে। আর শারমিনের ধারণা এইভাবে সে তার প্রতিশোধ’টা নেয় শারমিনরে প্রেগনেন্ট করার ভিতর দিয়া। আর এরপরেই সে লাপাত্তা হয়া যায়।
প্রান্ত’র জন্য খারাপ লাগে না শারমিনের। কিন্তু নিজের কাছে নিজেরে অনেক ছোট লাগে। কিভাবে শে এইরকম একটা খারাপ মানুশের সাথে জড়ায়া পড়তে পারলো যে রিলেশনের বেসিক নর্মগুলারেই রেসপেক্ট করতে জানে না!
কিন্তু সাফারিং আরো বেশি হয় শারমিনের, এবরশন করাইতে গিয়া। অফিসে মিথ্যা কথা বইলা ছুটি নিতে হয়, শ্রাবস্তীর প্রতি মনোযোগ এমনিতেই দেয়া হয় নাই। কিন্তু সবচে সমস্যা হয় অর হেলথের। এবরশনের পরে সিরিয়াস ক্রাম্পিং শুরু হয়। পিরিয়ডে ব্যথা আর নেয়া যায় না। আর যা-ই হোক, শরীর নিয়া কোন সমস্যা ছিল না শারমিনের। কিন্তু এরপর থিকা ঝামেলাগুলা শুরু হয়। পুরুষ-জাতির উপর থিকা ইন্টারেস্টই উইঠা যায়। কিন্তু মুশকিল হইলো, হেইট্রেট, জেলাসি এই ধরণের জিনিসগুলা শারমিনের মধ্যে খুব একটা কাজ করে না। যার যার লাইফ আসলে তার তার – এই জিনিস’টা খুব অল্প বয়সেই শে বুইঝা ফেলতে পারছিল। প্রফেশনালিও যত উপরের দিকে যাইতে থাকতেছিল বুঝতে পারতেছিল লাইফে জেনারালাইজেশন যত কম করা যায়, তত ভালো, তত স্পষ্টভাবে জিনিসগুলারে, মানুশগুলারে, ঘটনাগুলারে স্পষ্টভাবে দেখা যায়। শরীরে কোথাও ব্যথা পাইলে, পুইড়া গেলে, সেইখানে দাগ থাইকা যাবে; কিন্তু কোন ব্যথাই সারাজীবন থাকে না। জীবনের বাঁইচা থাকার অভিজ্ঞতা দিয়া শারমিন কখনো জীবনের জানা-বোঝারে লিমিট করে নাই।
শ্রাবস্তী বড় হইতেছে। ভাগ্য ভালো ও ছোট থাকতেই বাপ-মা’রে একসাথে না দেইখা অভ্যস্থ হইছে। যার ফলে জিনিসগুলা এবনরমাল লাগে না অর কাছে। আদনানের বাসায় গিয়াও থাকে মাঝে-মধ্যে। আদনান’রা বাচ্চা নেয় নাই কোন। এইগুলা নিয়া শারমিনও কখনো কিছু জিগায় নাই। ইনভলবমেন্ট যত কম থাকে ততই ভালো। কিন্তু শ্রাবস্তী এই জিনিসগুলা বুঝে এখন। অফিসে গেলে কয়দিন পরে পরে জিগায় অই আঙ্কেল কি কাজ করে, অই আঙ্কেল কেমন…শারমীন হাসে, কয়, কি সমস্যা তোর, বুড়া বেটাদের এতো পছন্দ ক্যান তোর! আঠারো বছর তো তোর হয় নাই এখনো! শ্রাবস্তী কয়, কিন্তু তোমার তো চল্লিশ বছর হয়া যাইতেছে! দুইজনেই হাসে।
শারমিনের মনেহয়, জীবনের সবচে বড় ট্রাজেডি হইলো, কোন কিছুই ঠিক টাইমে ঘটে না। হয় আগে ঘটে, তা নাইলে পরে। আর এইটাও হয়তো ঠিকই আছে। আসিফের সাথে কথা বলার পরে এইটা মনে হইলো শারমিনের। এতোটাই সফট আর কাইন্ড। চুপচাপ। শ্রাবস্তীদের স্কুলে প্যারেন্টস মিটিংয়ে গিয়া দেখা হইলো। ভাতিজির সাথে আসছে। অনেকদিন বাইরে ছিল। ওয়াইফ ছিল ইন্ডিয়ান, ডির্ভোসের পরে প্যারা লাগতেছিল, এই কারণে দেশে ফিরা আসছে। ভার্সিটিতে চিনতো অরা একজন আরেকজনরে। টিএসসি’তে আড্ডা-টাড্ডাও হইছে। দেশে একটা আইটি ফার্ম চালায়। বয়সে শারমিনের দুয়েক বছরের ছোটই হবে হয়তো। শারমিনের অফিসের কাছেই অফিস। একদিন কফি খাইতে বইসা এমন কথা শুরু হইলো যে, দুইজনেই বুঝতে পারলো যে, দুইজনরেই অনেক কথা বলতে হবে আরো। এমনকি সারাজীবনই হয়তো দুইজন কথা বইলা যাইতে পারবে। কোন তাড়াহুড়া নাই। একটা নদীর পানির মতন, একটা সময়ের ভিতর সবসময় থাকতেছে, দুলতেছে।
কিছুদিন যাওয়ার পরে ব্যাপারটা এতোটাই নরমাল হয়া গেলো যে, শারমিনের মনেই হয় না যে, আসিফ কখনো ছিল না তাঁর লাইফে। শ্রাবস্তীও একদিন বইলা বসলো, আসিফ আঙ্কেল তো আমাদের সাথেই থাকতে পারে! বা কয়দিন পরে পরেই বলে, যাই, আমি আমার বাপের লগে গিয়া থাইকা আসি কয়দিন! আসলে শারমিনরে সময় দিতে চায় শ্রাবস্তী। শারমিন বুঝে। বাপের লগে অইরকম কোন খাতির নাই শ্রাবস্তীর। আদনানও বুঝতে পারে না, মেয়ে’র লগে কেমনে কথা বলবে, ডিল করবে! কোনদিন শারমিনের লগেও পারে নাই। আদনান একদিন বলে, আরে, আসিফরে কেমনে চিনো তুমি! ও তো, আমাদের কোম্পানিতে খুবই ভালো একটা কাজ করে দিছে। কথায় কথায় ভার্সিটির কথা উঠাতে তোমার কথা কইলো। শারমিন তখন ফান করে, কি, এই ছেলে ভালো? বিয়া কইরা ফেলবো? আদনানও হাসে। হাসতে পারে না আসলে। হাসা’র চেষ্টা করে আর কি।
আসিফও একদিন বইলা বসে, কি করবো আমরা, বলো তো? কয় দিন আর বাঁইচা থাকবো বলো, একসাথেই থাকি! শারমিনও ভাবে এই কথা যদি বলতে পারতো শে। শারমিন যে থাকতে চায় না – তা না, কিন্তু একলা থাকার এমন একটা অভ্যাস হইছে যে, ভয় হয়; যদি আবার আদনানের মতো আইসা আসিফ একদিন বলে, যাই গা, বুঝছো! তখন শারমিন তো সেইটা নিতে পারবে না। পারবে-না না, এইরকম জিনিস শে তো আর নিতে চায় না! কিন্তু আসিফের প্রতি তাঁর প্রেম বাড়তেই থাকে। লাইফ যে এইরকম ফুলফিলিং একটা জিনিস – এর আগে এতো ডিপলি শে ফিল করে নাই কখনোই।
এর মধ্যেই একসিডেন্ট’টা ঘটে। এতো আউলায়া ছিল দুইজন যে, খেয়ালই করে নাই। আসিফও কন্ট্রোল করতে পারে নাই। শারমিনও তারে সাবধান করতে পারে নাই। একটা ফিটাস হিসাবে আমি জন্মায়া গেলাম শারমিনের ওম্বে।
শারমিন অনেক কাইন্দা-কাইটা আসিফরে বলে। শোন, আমি আর একলা থাকতে পারবো না, আমি তোমার লগেই থাকতে চাই! কিন্তু বাচ্চা’টা আমরা রাখবো না। আমি রাখতে পারবো না। আসিফের খুব মন-খারাপ হয়। সে যে বাপ হইতে চায় – তা না। বাচ্চা-কাচ্চা থাকতে হবে – এইরকম ড্রিম অর কখনোই ছিল না। কিন্তু যা হইছে, তারে আন-ডু করাটা কি ঠিক? – এইরকম একটা ডিলেমার মধ্যে থাকতে চায় সে। কিন্তু শারমিন জানে, ডিসিশান সবসময় আমাদের নিজেদেরই নিতে হয়। চুপ কইরা থাকাটাও একটা ডিসিশান। কোনকিছু না করাটাও একটা ডিসিশান। অনেক সময় অনেক ক্রুশিয়াল ডিসিশান এইটা। শারমিন নতুন কইরা শুরু করতে চায়।
আমি শারমিনের ওম্বে গুটলি পাকায়া শুইয়া আছি। আমি জানি শারমিনের খারাপ লাগতেছে। কিন্তু এই খারাপ-লাগারে আমলে নিলে হবে না। আমি জানি, কিছুক্ষণ পরে আমি আর থাকবো না। একটা না-থাকা মেমোরি’র মতো তারপরও থাইকা যাবো হয়তো। থাকা আর না-থাকা কি রকম ইম্পর্টেন্ট আর! আমি ভাবতে চাই। আমার ভাবনাগুলাও আমার মতো জন্মাইতে পারে না। আমরা চুপ কইরা বইসা থাকি। শারমিন তাঁর পেটে হাত বুলায়। আমারে ফিল করতে চায়। কিন্তু আমি তো জন্মাই নাই। আমি ফিটাস।
একটা ঘরোয়া প্রোগ্রামের ভিতর দিয়াই শারমিন আর আসিফ বিয়া করে। হ্যাপি কাপল অরা। শ্রাবস্তীও নিজের লাইফে ঢুকতে যাইতেছে। শারমিন মাঝে-মধ্যে ভাবে, শ্রাবস্তীরে কি কোনদিন বলবে কিনা এই এবরশনের কথাগুলা। যে, দেখো মা, দুনিয়াতে পাপ-পূণ্য যে নাই – তা না, কিন্তু তুমি কোনদিনই ফেরেশতা হয়া বাঁইচা থাকতে পারবা না। আর এই কারণেই তুমি শয়তানও হয়া যাও না! যতোটা পারো নিজের লাইফের ডিসিশানগুলা নিজে নিবা। ভালো-খারাপ যতোটা না সমাজের জিনিস, তার চাইতে অনেকবেশি নিজের বিবেচনা। আর যখন নিজের জন্য ভালো ডিসিশান তুমি নিতে পারবা, সেইটা সবার জন্যও ভালো হওয়ার কথা। নিজের কথাই যে সবসময় ভাববা – তা না, কিন্তু যখন তুমি নিজের ভালোর কথা ভাইবা কাজ করবা, সেইটা আরো অনেকের লাইগাই ভালো হওয়ার কথা।…
এইরকম ভাবতে ভাবতে কথাগুলার ভিতরেই হারায়া যায় শারমিন। আর বুঝতে পারে, এই বলাগুলা আসলে মিনিংলেস। হয় শ্রাবস্তী এইগুলা অলরেডি জানে, বা জানার দরকার নাই তাঁর। তখন শারমিন মনেহয় আমার কথাও ভাবে, আমি ভাবি। কিন্তু আমার ভাবনাগুলা শারমিনের কাছ পর্যন্ত যাইতে পারে না। একটা না-জন্মানোর অন্ধকারে আমি পইড়া থাকি। আমি ভাবি, কোন একটা গিল্টি-ফিলিংস থিকা না, বা অনেকদিনের চইলা আসতে থাকা কোন মাতৃত্ব-বোধ টাইপের জায়গা থিকা না, এমনিতেই কতোকিছুই তো ভাবে মানুশ, এইরকম কোন একটা সময় শারমিন হয়তো আমার কথাও ভাবে। ভাবে না?
Leave a Reply