এই ঘটনার কথা বলাটা ঠিক হবে কিনা… এইজন্য কোনদিনই ঠিক বলা হয় নাই। কিন্তু মনে যেহেতু আছে, বইলা রাখা যাইতে পারে। এই ঘটনারে কোন খারাপ-ভালোর জায়গা থিকা না দেখাটাই মনেহয় ভালো। আমার যেইভাবে মনে আছে, সেইভাবেই আমি বলতেছি।
১৯৯৮/৯৯ সালের কথা। ঢাকা ভার্সিটিতে পড়ি। বঙ্গবন্ধু হলে থাকি। ময়লা শার্ট-প্যান্ট, স্যান্ডেল পিন্দা ঢাকা শহরের রাস্তায় রাস্তায় হাঁটি। নতুন কবিতার বই ছাপানোর পরে রিফাত চৌধুরী’রে দেয়ার সাথে সাথে একটা কবিতা পইড়াই উনি ঘোষণা দিয়া দিলেন, ইমরুল তো কবি! উনার লগে আড্ডা দেয়ার ফুল একসেস দিয়া দিলেন। অইদিনই শাহবাগ থিকা নীলক্ষেতের বাবুপুড়া বস্তির ঘরটাতে নিয়া গেলেন উনার। কয়েকদিন যাওয়া-আসার পরেই আকরাম খানের (কবি, ফিল্ম-ডিরেক্টর) লগে পরিচয় করায়া দিলেন। বললেন, আপনারা নতুন কবি’রা আসছেন, “ছাঁট কাগজের মলাট”টা তো নতুন কইরা করা দরকার! আমরা একসাথে ২/৩টা সংখ্যা ছাপাইছিলাম। শশী হক ছিলেন। টাকা-পয়সার জোগাড় মনেহয় আকরামই করছিলেন অনেকটা। লেখাপত্র রিফাত ভাই-ই নিছিলেন রাইটারদের কাছ থিকা। মুস্তফা আনোয়ার তো আড্ডাতেই আসতেন। কাজল শাহনেওয়াজও মাঝে-মধ্যে আসছেন। উনাদের লেখা এইভাবে পাওয়া গেছিল। আবিদ আজাদের পুরান লেখা ছাপাবো আমরা। কিন্তু মান্নান ভাইয়ের (আবদুল মান্নান সৈয়দের) তো বাসায় যাইতে হবে। উনার বাসা গ্রীণরোডে। একদিন বিকালে রিফাত ভাই বললেন, চলেন যাই!
যাওয়ার পথে রিফাত ভাই একটু সাবধান-টাবধান করলেন, মুরুব্বি মানুশ, কোন বেয়াদবি যেন না করি। উনি খুব শুদ্ধ ভাষায় কথা বলেন, খুবই খানদানি লোক উনারা। এইরকম ব্রিফ করলেন। আমি এমনিতেই ঢাকা শহরের বাসাবাড়ির ড্রইংরুমগুলাতে গেলে হাঁসফাঁস করি। তারপরে রিফাত ভাইয়ের এইরকম ইন্ট্রোর পরে আরো জুবুথুবু হয়া ছিলাম। উনারাই কথা বলতেছিলেন। কথা তেমন জমতেছিল না আসলে। রিফাত ভাই আমারে পরিচয় করায়া দিলেন। আমিও ইজি হইতে পারি নাই আসলে। এইরকম একটা “নিরবতা ও গভীরতার” মধ্যে মান্নান সৈয়দের বউ ভিতরের ঘর থিকা বললেন, উনার সন্ধ্যার নাস্তাটা কি এই ঘরেই পাঠাইবেন কিনা! উনি মনেহয় হ্যাঁ, হ্যাঁ টাইপ কিছুই কইলেন। তো, বুয়া আইসা উনারে কিছু নাস্তা দিলো। আমাদেরকেও চা-বিস্কুট দিলো। আমরা খাইলাম। আবদুল মান্নান সৈয়দ বেশ অস্বস্তি নিয়াই উনার রুটি-মাংস টাইপ নাস্তা খাইলেন। ডায়াবেটিস বা উনার নিয়মের কথা বললেন যে, এই সময়ের খাওয়াটা উনারে খাইতে হয়, এভয়েড করতে পারেন না, এইরকম।
খাওয়ার পরে হইতেছে ঝামেলাটা হইলো। রিফাত ভাই উনার পকেট থিকা সিগ্রেট বাইর কইরা ধরাইলেন। আমারেও জোরাজুরি করতে লাগলেন। খান, খান, মান্নান ভাই তো আমাদের লোক, মাইন্ড করবেন না! আমরা তো সবাই কবি এইখানে। উনার যেইরকম পারসুয়েশনগুলা ছিল আর কি! তো, আমিও সিগ্রেট ধরাইলাম। এবং ধরানোর পরে বুঝতে পারলাম যে, ব্যাপারটা ঠিক হয় নাই। কবি হন আর যা-ই হন, বয়সে আবদুল মান্নান সৈয়দ তো আমার অনেক সিনিয়র; আর সোশ্যাল-কোড অনুযায়ী এইটা তো “বেয়াদবি” করার ঘটনাই একটা। যা-ই হোক, সিগ্রেট-টিগ্রেট খাইয়া আমরা চইলা আসলাম।
অইদিন আর লেখা দেন নাই মনেহয় উনি। পরে আরেকদিন গিয়া লেখা নিয়া আসছিলেন রিফাত ভাই। আকরাম গেছিলেন কিনা শিওর না। উনার লেখা ছাপানো হইছিল “ছাঁট কাগজের মলাটে”।
Leave a Reply