এপ্রিল ২১, ২০২২
– আফটার চসেস্কু –
কয়দিন ধইরা নিকোলাই চসেস্কু’র কথা মনে হইতেছে। ১৯৮৯-এ রোমানিয়ার এই কমিউনিস্ট-রাজার বিরুদ্ধে খেইপা গিয়া তারে ক্ষমতা থিকা নামাইছিল পিপল। কোন বিরোধী-দল নাই, কোন আইডিওলজি, কোন ধর্ম নাই, পিপল জাস্ট খেপা ছিল, তার বাড়াবাড়ি রকমের ক্ষমতার বাহাদুরি নিয়া। একটা জনসভায় সে লেকচার দিতেছিল, ন্যাশনাল টেলিভিশনে লাইভ দেখাইতেছিল, হঠাৎ কইরা পিপল তার এগেনেস্টে আওয়াজ তুলতে শুরু করলো। লাইভ টেলিকাস্ট বন্ধ হয়া গেলো। (রেভিউলেশন উইল নট বি টেলিভিশনাইজড।) পিপল তার রাজপ্রাসাদে হামলা চালাইলো। সে আর তার বউ হেলিকপ্টার নিয়া পালাইলো। পরে পিপলের হাতে ধরা খাইলো।
এই দিকে ক্ষমতায় কে বসবো, দেশের হালত কি হইবো, এইগুলা যেহেতু ঠিক নাই, পরে লাগলো এক বেড়াছেড়া, কিছুদিন মারামারি হইলো, ইলেকশন হইলো, এক্স-কমিউনিস্টরাই দেশ চালাইলো কিছুদিন, এই-সেই।
মানে, আমি বলতে চাইতেছি, আফটার-এফেক্ট’টা ইম্পর্টেন্ট। বাংলাদেশের সবকিছুই (রাজনীতি, অর্থনীতি, আর্ট-কালচার) বাকশালের দখলে। আমাদের মনে হইতে পারে, এই শাসন ‘হাজার বছর’ ধইরা চলবে। কিন্তু অই তো চসেস্কু’র মতন টোকা দিলেও ভাইঙ্গা পড়তে পারে আসলে। তখন কি করবো আমরা? অই প্রিপারেশন আমাদের নাই। মানে, ভিজিবল না এখনো।
এপ্রিল ২২, ২০২২
স্যার শেখ হাসিনা নাকি জানতে চাইছেন, বাকশাল-বিরোধীরা (বিরোধী দল এখন খুঁইজা পাওয়া যাইতেছে তাইলে! ওয়াও!) ক্ষমতায় আসলে কি কি করবে আসলে? মানে, সব তো উনিই কইরা রাখছেন, না!
এই বাকশালি শাসনের পরে যেই দল/গোষ্ঠী-ই বাংলাদেশের রাষ্ট্র-ক্ষমতায় আসুক, আমার আর্জি থাকবে এই ৫টা কাজ আপনারা কইরেন না –
১. দিনের ভোট রাতের বেলা দিয়া রাইখেন না পুলিশ, মিলিটারি, সরকারি আমলা, দলের লোকজন দিয়া। পিপলের আছেই এই একটা ভোট। যে কোন ইলেকশনই হোক, পিপলরে ভোট দিতে দিবেন।
২. আপনার যত বড় দুশমনই হোক, পুলিশ-রেব-ডিজিএফআই দিয়া গুম-খুন-মিথ্যামামলা দিয়েন না। এই প্রাকটিস যেহেতু একবার চালু হইছে, করাটা সহজ হবে। বন্ধ করাটাই বরং টাফ হওয়ার কথা। পলিটিক্সরে পলিটিক্যালি মোকাবেলা কইরেন। মানুশের কথা-বলার, মিছিল-মিটিং করার, পলিটিক্যাল এক্ট করার স্কোপটারে ডর দেখায়া বাতিল করার ব্যবস্থা কইরেন না।
৩. মেগা-প্রজেক্টের নামে পাবলিকের টাকা মাইরা খাওয়ার ব্যবস্থা আর কইরেন না। রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ-ফ্লাইওভার, ইলেকট্রিসি-গ্যাসের দরকার নাই – তা না, কিন্তু এর নামে যত টাকা মাইরা খাওয়া হইছে, হইতেছে, এতোদিনে সোনা হইলেও বাংলাদেশের ৫৬ হাজার বর্গমাইল ইট-সুরকি দিয়া বান্ধানো হয়া যাওয়ার কথা। জাইনা-শুইনা লুটপাটের ব্যবস্থা কইরা দিয়েন না।
৪. সমাজে-দেশে যদি বিচার না থাকে, তাইলে কিছুই থাকে না। সরকারি লোকজনরে পার্টি-মেম্বার বানায়া নিয়েন না। এই জঞ্জাল দূর করতে টাইম লাগবে। কিন্তু মিনিমাম একটা বিচারের আশা যেন থাকে মানুশের। তা নাইলে মানুশ হয়া আমরা এই সমাজে-দেশ বাঁচতে পারবো না।
৫. সবশেষে, সরকারের কাছে পিপল ‘ভিক্ষা চায় না, কুত্তাডা সামলাইলেই হয়’। পিপলের ভালো করার দরকার নাই বেশি, খারাপটা কম কইরেন, তাইলেই হবে।
করার মতো তো ১০১টা কাজ আছে। কিন্তু এইরকম ৫/৭টা কাজ না-করলেও অনেক উপকার হয়। দেশের ‘উন্নয়ন’ দেশের মানুশ-জন নিজেরাই করছে সবসময়, করবেও। মিনিমাম ডেমোক্রেটিক রাইটস এস্টাবলিশ করাটাই সরকারের কাজ। অই জায়গাগুলারে মেনিপুলেট করার যেই ট্রাডিশনটা চালু হইছে গত ১৫ বছরের শাসনে, এইটা থিকা সরতে পারাটাই ঘটনা।
ক্ষমতা থাকলে অনেককিছুই করতে পারেন আপনি। কিন্তু ক্ষমতা থাকলেও কোন কাজটা আপনি করতে পারেন-না বা করাটা ঠিক না, অই লাইন টানতে পারাটাই হইতেছে আসল কাজ।
এপ্রিল ২৪, ২০২২
উইল স্মিথের তুলনায় জনি ডেপ’রে যে বেশি সার্পোট করা যাইতেছে, এর একটা মেইন কারণ তো অবশ্যই যে, জনি ডেপ লিগাল ওয়ে’তে গেছেন। আইন মাইনা চলতেছেন। এর অবশ্যই একটা ভ্যালু আছে। আইন মাইনা অনেক কাজ করতে পারেন না আপনি*, কিন্তু যদি আইনি ফয়সালার ভিতর দিয়া যাইতে পারেন, সেইটা বেটার, মোর একসেপ্টেবল।
সেকেন্ড হইতেছে, জাডা’রে নিয়া হাসি-ঠাট্টা করা যায়, আম্বার’রে নিয়া সেইটা করাটা তো টাফ। আবার, আম্বারের কথা বিশ্বাস করার গ্রাউন্ডও আছে, মি-টু’র পরে, ‘ভালো-মেয়ে’ হিসাবে। এবং মোস্ট ইম্পর্টেন্টলি যেইখানে “নারীর প্রতি সংহিসতা”র যেই অবস্থাটা লিটারারিলি হাজার বছর ধইরা চালু আছে।
এই জায়গাটা আরো ভালোভাবে ফিল করতে পারবেন, আমার ধারণা People vs. O.J.Simpson’টা যারা দেখছেন। আম্রিকায় ব্ল্যাকদের প্রতি যেই জুলুম চালু আছে, সেইটার কারণেই ও.জে. সিম্পসন বউরে খুন কইরাও মাফ পাইয়া যান। মানে, যেই দেশে, যেই কালচারে বউ-পিটানি ‘নরমাল’ ঘটনা, সেইখানে কেউ যদি কয় জামাই আমারে পিটাইছে, না পিটাইলেও ৯৯% লোক সেইটা বিলিভ করবে। কারণ এইটা তো হয়ই!
ইমেজের ভিতর দিয়া, ন্যারেটিভের উপর ভর কইরাই রিয়ালিটিরে কনজিউম করি আমরা। সেইখানে “জনি ডেপ তো খারাপ হইতে পারে না!”র সেলিব্রেটি-ইমেজ যেমন কাজ করে। আম্বারের হাজার বছরের “নারী-নির্যাতনের” সত্যও ইন্টারাপ্ট করে।
তবে যেইটা সবচে বেশি জরুরি সেইটা হইতেছে, বেটা-মানুশ খারাপ বা বেটি-মানুশ খারাপ – এই জায়গা থিকা সইরা আইসা বরং এইটা ভাবতে পারাটা বেটার যে, কিছু মানুশ ভালো আর কিছু মানুশ খারাপ। আর যখন আপনার পাওয়ার থাকে, সার্পোটিং ইমেজ ও ন্যারেটিভ থাকে, তখন ‘খারাপ’ হওয়াটা সহজ-ই না খালি, খারাপিগুলারে ধামাচাপা দেয়াটাও সহজ হয়।
…
*উইল স্মিথ যদি ঘটনাটাতে আইনি স্টেপ নিতে যাইতেন, তাইলে ব্যাপারটা আরো হাস্যকর হইতো যে, বেটা হিউমার বুঝে না! অথচ ব্যাপারটা হিউমারেরই না খালি! জাডা’র একস্ট্রা-মেরিটাল এফেয়ার নিয়া পাবলিক-আলাপ করাটা এবং উইল স্মিথের সেইটারে মাইনা নেয়া তারে ইনফিরিয়র না হইলেও নৈতিকভাবে সাব-হিউম্যান একটা এগজিসটেন্সে নিয়া যায় তো!… কোহেনের “ফেমাস ব্লু রেইনকোটের” লিরিকসটা মনে কইরেন, শে আর কারো উইমেন না এখন! মানে, যা-ই হোক, এইটা তো আরেকটা আলাপেরই ঘটনা…
এপ্রিল ২৫, ২০২২
– যত বেশি মেগা-প্রজেক্ট তত বেশি লুটপাট, তত বেশি পিপলের সাফাংরিস –
সবকিছুরই কিছু না কিছু প্যারামিটার আছে, যা দিয়া জিনিসগুলারে কিছুটা ধরতে পারবেন, টের পাইতে পারবেন। মানে, প্যারামিটারগুলাই ঘটনাটা না, কিন্তু টের পাওয়ার উপায় অনেকটা।
তো, একটা দেশের সরকার কতো বেশি লুটপাট করতেছে, এই অনেকটা বুঝার একটা প্যারামিটার হইতে পারে মেগা-প্রজেক্ট, উন্নয়ন-প্রকল্পগুলা।
যত বেশি মেগা-প্রজেক্ট, যত বড় মেগা-প্রজেক্ট তত বেশি লুটপাট।
নয়া বাকশালের তুলনায় এরশাদ-আমলের লুটপাট যে কিছুই না, এইটা বুঝবেন মেগা-প্রজেক্টের সাইজ দেইখা। এরশাদ এবং জাতীয়-পার্টি তেমন লুটপাট করতেই পারে নাই আসলে।
আর মানুশ-জন যে আওয়ামীলীগ, ছাত্রলীগ করে, বিসিএস, সরকারি-চাকরি যে প্রেস্টিজিয়াস-জব, এর পিছনে এই লুটপাটের কন্ট্রিবিউশনই মেইন।
ব্যাপারটা এইরকম না যে, মেগা-প্রজেক্ট, ‘উন্নয়ন’-এর দরকার নাই, কিন্তু পিপলের ভালো-করাটা এর উদ্দেশ্য না আসলে। অইটা লোক-দেখানি ঘটনা। লুটপাট’টাই মেইন।
মেগা-প্রজেক্টগুলার একটারও দেখবেন ইকনোমিক রিটার্ন নিয়া কোন আলাপ নাই, বরং কোয়ালিটেটিভ অনেক ইস্যু আছে, যেইখানে নেগেটিভ-ফেনোমেনাগুলারে এভয়েড করা হয়। মানে, এইগুলা ইকনোমিকসের আলাপ না আসলে এতোটা। এর পলিটিক্যাল-ইকনোমিটাই ডিফরেন্ট।
আমি বলতে চাইতেছি, বাকশালের শাসন থিকা মুক্তি পাইতে হইলে মেগা-প্রজেক্টগুলা, উন্নয়ন-প্রকল্পগুলা বন্ধ করার আওয়াজ তুলেন।
এতে কইরা অবৈধ সরকারের পতন হবে না, কিন্তু বাকশালি-চক্রের যেই ইকনোমিক বেইজটা আছে সেইটা উইক হবে, ফ্যাসিস্ট যেই গ্ল্যামারটা আছে অইটা থিকা মেকাপগুলা খইসা পড়বে। আর যত মেগা-প্রজেক্ট আর ‘উন্নয়ন’ হইতে থাকবে, পিপলের সাফারিংস তত বাড়তে থাকবে।
এপ্রিল ২৭, ২০২২
১৯৯৬ সালের পার্লামেন্ট ইলেকশনের একটা ঘটনার কথা আমার মনে হইতেছিল কয়দিন ধইরা। মনে হইছে যেহেতু বইলা রাখি। এর আগে ১৯৯১ সালের ইলেকশন নিয়া দুই-তিনটা কথা আমি কইছিলাম। [খুঁইজা পাইলে কমেন্টে লিংক দিতেছি।]
১৯৯১ সালে ইলেকশনের ক্যাম্পেইন করলেও তখন ভোটার ছিলাম না। আমি ফার্স্ট ভোট দেই ১৯৯৬ সালের ইলেকশনেই, তখন ভারসিটিতে পড়ি, সেকেন্ড/থার্ড ইয়ারে। মাসের অর্ধেক সময় বাড়িতেই থাকি। পলিটিক্স নিয়া কোন ইন্টারেস্ট নাই আর, পলিটিক্স মোটামুটি বুঝা হয়া গেছে ততদিনে। এই কারণে শিল্প-সাহিত্য করি! 🙂
আর পলিটিক্স করতে গেলেও, সার্পোট দিবো কারে? বাম-গণতান্ত্রিক জোট কোন ক্যান্ডিডেট দেয় নাই, আওয়ামীলীগের ক্যান্ডিডেটরে পাশ করানোই তাদের টার্গেট। যেই আওয়ামী লীগের এগেনেস্টে ফাইট করলাম, যেই মুক্তিযুদ্ধের ন্যারেটিভের এগেনেস্টে গলা ফাটাইলাম, এখন তার সাফাই গাইতে হবে? মাফ চাই, দোয়াও চাই! পলিটিক্যালি এতিম-ই আর কি তখন।…
তো, আমাদের এলাকার আওয়ামী লীগের ক্যান্ডিডেট হইতেছেন জিল্লুর রহমান। [আওয়ামী লীগের এক সময়ের সেক্রেটারি, পরে রাষ্ট্রপতি।] একদিন দুপুর ২-৩টার দিকে বাজার* থিকা বাসার দিকে ফিরতেছি। দেখি, ব্রিজের উপর থিকা একটা রিকশায় জিল্লুর রহমান সাহেব, ক্যাম্পেইন কইরা ফিরতেছেন মনেহয়; আমার দিকে তাকায়া সালাম দিলেন [২০-২১ বছরের পোলা আমি তখন], জিগাইলেন, “ভালো আছো, বাবা?” আমি তো মোটামুটি শরমের চোটে, ‘পথ হারিয়ে কোন বনে যাই…’-অবস্থা! একজন ন্যাশনাল লেভেলের পলিটিশিয়ানের কথা বাদ দেন, বয়সে তো একজন সিনিয়র সিটিজেন! উনি আমারে সালাম দিতেছেন!
কিন্তু পরে টের পাইলাম, ঘটনার সিগনিফিকেন্সটা। উনি তো ক্যান্ডিডেট, আর আমি তো ভোটার। উনি তো আমার কাছে ভোট চাইতেছেন। মানে, আমার হয়া কথা-বলার, কাজ-করার, ডিসিশান-নেয়ার রাইটস উনি আমার কাছে চাইতেছেন; তো, একটা জিনিস চাইতে হইলে তো যার কাছে চাইতেছেন, তারে রিকোয়েস্ট করতে হবে না! জিল্লুর রহমান সাহেব অইটাই করছিলেন। পলিটিশিয়ান হিসাবে এইটা উনার কাজ, পিপলের কাছে যাওয়ার, রিকোয়েস্ট করার যে আপনার যে ভোট দেয়ার পাওয়ারটা আছে, সেইটা আপনি আমারে দেন। আমি আপনার কাজটা কইরা দিবো, আপনার কথাগুলা বইলা দিবো!
কিন্তু এখন, এই অবস্থা আর নাই!
ভোট দেয় মিলিটারি, ভোট দেয় পুলিশে, ভোট দেয় সরকারি-কর্মচারীরা, ভোট দেয় ছাত্রলীগের পোলাপাইনে, আর অই নিশি-রাতের ভোটের কথারে ‘সত্যি’ বানায় মিডিয়ার সাংবাদিকরা, ফ্যাক্ট-চেকও কইরা দিবে, কয়দিন পরে যে, নাহ! কোন এভিডেন্স তো পাওয়া যায় নাই!
এই কারণে দেখবেন মিলিটারির বিজনেস বাড়ে, পুলিশের পাওয়ার বাড়ে, সরকারি-কর্মচারিদের বেতন বাড়ে, পিপলের কাছে যাওয়ারই দরকার পড়ে না! দিল্লীতে দৌড়াইতে পারলেই হয়, দূতাবাসগুলাতে দৌড়াইলেই হয়, মিলিটারি-পুলিশ-সরকারিআমলা-মিডিয়া’রে ম্যানেজ করতে পারলেই ক্ষমতায় থাকা যায়।
পিপলের যেহেতু ভোট নাই, তারে সালাম দেয়ারও দরকার পড়ে না আর।
…
*অইটা হাট-টাট না, পুরান ঢাকার মতো একটা এলাকা আসলে
২.
৯৬-এর ইলেকশনের কথা যেহেতু উঠলোই, আরো দুইটা কথা কই। এর মধ্যে একটা হইতেছে, বিএনপি যে ফেইল করলো, আমাদের এলাকায়। ন্যাশনাল-লেভেলের পলিটিক্স তো আছেই, আরো দুয়েক্টা ছোট-খাট ঘটনা আছে এইখানে। যেইগুলা ধরেন, মানুশ-জন ভালো কইরাই জানতো, বা জানে।
এক হইলো, বিএনপি’র শাসন তো ভালো ছিল না আসলে, কোন ডিরেকশন সেট করতে পারে নাই অইভাবে, নানান কারণে এফেক্টিভ হইতে পারে নাই।… ঘটনা যেইটা হইতেছে, ১৯৯১-এ বিএনপি’র ক্যান্ডিডেট ছিল একজন আলা-ভোলা ভালো-মানুশ, একাডেমিশিয়ান। মানুশ হিসাবে সে এটলিস্ট খারাপ-মানুশ না। কিন্তু ১৯৯৬ সালে যারে ক্যান্ডিডেট করা হইছিল, উনার নামে অনেক বদনাম ছিল। লোকাল লিডার ছিলেন, কিন্তু বিএনপি’র লোক ছাড়া উনার সোশ্যাল ক্যাপিটেল তেমনকিছু ছিল না। আর দলের ভিতরে কিছু দলাদলি তো থাকেই।
মানে, ১৯৯১-এ বিএনপি’র নিজের দলে তেমন কোন ক্যান্ডিডেটই ছিল না, দলের বাইরের ভালো-মানুশ থিকা ১৯৯৬-এ দলের ভিতরের ‘বিতর্কিত’ ক্যান্ডিডেটরে নমিনেশন দেয়া লাগছিল। এইটা পলিটিক্যাল দল হিসাবে বিএনপি’র সাকসেস না, বরং দল হিসাবে এন্টি-পিপল হয়া উঠার নমুনা হিসাবেই দেখতে হবে।
আমার ধারণা, এমন অনেক ক্যান্ডিডেট ছিল ১৯৯১-এ বিএনপি’র, যারা বিএনপি’র লোক না হইলেও সোশ্যালি একসেপ্টেড ছিলেন। ১৯৯৬-এ এইরকম নাম্বারটা খালি কইমাই আসে নাই, ‘আমরা দলের লোক’- এইরকমের ক্যান্ডিডেট বাইড়া গেছিল। দলের লোকের কাছে জিম্মি হওয়ার ঘটনা না এইটা, বরং দলের বাইরে গিয়া পিপল-একসেপ্টেন্সের জায়গাটারে প্রায়োরিটি না দিতে চাওয়ার একটা ঘটনা।
যেইটা আওয়ামী-লীগ [দলবাজি করা] সেইটাই যদি বিএনপি হয়, তাইলে বিএনপি’রে ভোট দিয়া কি লাভ!
আর সবচে বড় কথা, তেমন কোন পলিটিক্যাল ও কালচারাল ন্যারেটিভ ছিল না বিএনপি’র। বিএনপি অ্যাজ অ্যা হোল এমন কিছু লোকের কাছে জিম্মি হয়া ছিল, যাদের পিপল একসেপ্টেন্স যেমন ছিল না, কোন পলিটিক্যাল ন্যারেটিভও ছিল না। এরা জানতো যে, ক্ষমতা না থাকলে সোশ্যালি পাওয়ারফুল হয়া থাকা পসিবল না তাদের পক্ষে। তো, এইরকম একটা গ্রুপই বিএনপি হয়া উঠছিল আওয়ামীলীগের এগেনেস্টে। এখনো কম-বেশি সেইটাই আছে।
মানে, আমি বলতে চাইতেছি, ১৯৯১-এ বিএনপি দল হিসাবে প্রো-পিপল একটা ঘটনা ছিল, ১৯৯৬-এ অই জায়গাটাতে বেসিক একটা চেইঞ্জ আসছিল। দলের লোক তো থাকবেই, কিন্তু দলের লোকের বাইরেও বিএনপি’রে সার্পোট করার মতো জায়গাগুলা ছিল, যেইটা স্কুইজ হইছে ওভার দ্যা পিরিয়ড অফ টাইম, ১৯৯১-১৯৯৬ এর সময়ে। যেইটা পরে আর রিগেইনড হয় নাই।
আওয়ামীলীগ পাকিস্তান আমল থিকাই এন্টি-পিপল, মিডল-ক্লাস এসথেটিক্সের একটা পলিটিক্যাল দল। জিয়াউর রহমানের সময়ে পলিটিক্যাল দল হিসাবে বিএনপি’র সবসময় একটা চেষ্টা ছিল প্রো-পিপল হওয়ার। [‘স্বৈরাচার’ হওয়ার পরেও, এরশাদও দেখবেন ট্রাই করছে পিপলরে খুশি করার, গান লেখছে, কবিতা লেখছে, মানে হোক না অন্য কাউরে দিয়া…] কিন্তু নয়া বাকশালের আমলে [২০০৭/৮-এর পরে] এর দরকার নাই কোন, যে কোন ইস্যুতে পিপলরে দুই-চাইরবার গাইল্লাইলেই ‘বিপ্লব’ করা হয়া যায়!
(১৯৯১-এর পরে) বিএনপি যতবারই জিতছে ইলেকশনে নিজের দলের ভোটে জিতে নাই, পিপলের ভোটেই জিতছে। এই কথা বিএনপির লোকজন মনেহয় বেশিদিন মনে রাখতে পারে নাই। তো, ১৯৯৬-এর ইলেকশনে এই জিনিসটা ভালোভাবে টের পাওয়া যায়।
[আরেকটা পার্ট লেখবো এইটার…]
এপ্রিল ৩০, ২০২২
অবিচুয়ারি: আবুল মাল আবদুল মুহিত
– আবুল মাল আবদুল মুহিত বাংলাদেশের মানুশের অর্থমন্ত্রী ছিলেন না, বাকশালি লুটতরাজের সেনাপতি ছিলেন –
একটা ফেসবুক পোস্টে আবুল মাল আবদুল মুহিতের লগে সাইফুর রহমানের একটা কমপারিজনের জায়গা দেইখা জিনিসটা আবার মনে হইলো। বলা হইতেছিল যে, সাইফুর রহমানের গাটস ছিল, বিরোধীদলে থাকার সময়ে উনি বিএনপির হরতালের সমালোচনা করতে পারছিলেন!
কিন্তু দেখেন, এই সমালোচনা হওয়ার পরে সাইফুর রহমানের কি কোন ক্ষতি হইছিল, দলের ভিতরে? খালেদা জিয়া কি উনার গাইল-মন্দ করছিলেন, পাবলিকলি? দল থিকা বাইর কইরা দিছিলেন?
মানে, বিএনপি’র লোক হইয়াও বিএনপি’র একজন নেতা দলের সমালোচনা করতে পারেন – এই জায়গা থিকা দেখার ঘটনা’টাই নাই।
এইটা সাইফুর রহমানের সৎ-সাহস তো অবশ্যই, খালেদা জিয়া ও বিএনপি’র মধ্যে ডেমোক্রেসি থাকার ঘটনাও, যেইটা সবসময় মিস কইরা যাওয়া হয়।
যেমন, আহমদ ছফা’র একটা ‘সাহস’-এর ঘটনা আছে যে, উনি খালেদা জিয়ারে মুখের উপরে কইছিলেন, কি সব লোক রাখছেন আমারে চিনে না! মানে, এইটা যে খালেদা জিয়া শুনছেন প্রাইম মিনিস্টার হয়া, উনার আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়ের ঘটনা না যেন!
বা হুমায়ূন আহমেদ বিএনপি আমলে সরকারের টাকা দিয়া সিনেমা বানায়া সেইখানে শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ রাখছেন, আর সেইটা খালেদা জিয়ারে দাওয়াত দিয়া দেখাইছেন! এগেইন, কি সাহস উনার! খালেদা জিয়ার ডেমোক্রেটিক হওয়ার ঘটনা না যেন!
এখন খালি নিজে না, চৌদ্দ গুষ্টির কেউ যদি বাকশাল না করে, তাইলে সরকারি-চাকরি পাইবেন না। এর লগে বিএনপি’র আমলের তুলনা কইরা দেখেন! বিএনপি না করলেও চাকরি পাইতে পারতো তো লোকজন! বিজনেস করতে পারতো তো!
এখন যে পারা যায় না, এইটা আবুল মাল আবদুল মুহিতের না-পারা না খালি, বাকশালি শাসনরে এইরকম একস্ট্রিম জায়গায় নিয়া যাওয়ারই ঘটনা। নিজের বিবেক, নিজের চিন্তা, নিজের কথা-বলার অধিকার বন্ধক রাইখাই মন্ত্রি-মিনিস্টার হইছিলেন উনারা। উনাদের আন্ডা-বাচ্চারাও অন্যদেরকেও গোলামি না করতে দেখলে ভয় পায়। এইভাবে একটা গোলামির শাসন উনারা কায়েম কইরা গেছেন!
গোলামের একমাত্র বিবেচনা হইতেছে, সে তার মালিকরে সার্ভ করতে পারলো কিনা। তার আর অন্য কোন বিবেচনা নাই, থাকতে পারে না। আবুল মাল আবদুল মুহিতেরও ছিল না।
আজকে বাংলাদেশে মেগা-প্রজেক্টের নামে, সরকারি-আমলা, মিলিটারি-পুলিশ, মিডিয়ার মিল-মহব্বতে যেই লুটপাটের, টাকা-পাচারের বাকশালি-অর্থনীতি চালু আছে, এর শুরুটা হইছে উনার টাইমে।
উনি এই পদ্ধতি আবিষ্কার করেন নাই, কিন্তু উনার পজিশন থিকা সেইটা ঠেকানোর কথা ছিল, উনি সেইটা না কইরা আগুনে বাতাস দিছেন।
আবুল মাল আবদুল মুহিত বাংলাদেশের মানুশের অর্থমন্ত্রী ছিলেন না, বাকশালি লুটতরাজের সেনাপতি ছিলেন।
পারসোনাল লাইফে আমরা ভালো-মানুশ কি খারাপ-মানুশ, সেইটা আমাদের কাছের মানুশেরা বিবেচনা করবেন। কিন্তু আপনার-আমার সোশ্যাল এক্টিভিটিজ-ই সমাজের মানুশের বিবেচনায় নিবে।
কি কি ভালো-কাজ একজন মানুশ করছেন, তার চাইতে ইম্পর্টেন্ট হইতেছে, কি কি খারাপ-কাজ উনি চাইলে করতে পারতেন, কিন্তু করেন নাই! এই জায়গা থিকাও আমাদেরকে দেখতে পারতে হবে।
মানে, নেতা হিসাবে, ডিসিশান-মেকার হিসাবে অইরকম ভালো-মানুশের দরকার নাই আমাদের; যারা দেশের, সমাজের কম-ক্ষতি করবেন, এইরকম মানুশ হইলেও হয়।
আবুল মাল আবদুল মুহিত বাকশালরে সার্ভ করছেন, দেশের মানুশের ভালো করতে চাইছেন – এইটা কখনো মনেহয় নাই। মেবি শাহ এ এম এস কিবরিয়া’র লগে কম্পেয়ার করলেও কিছুটা টের পাওয়া যাবে।…
এইরকম গোলাম-স্বভাবের লোকজন সমাজের উপরের পজিশনে যত কম থাকবেন, ততই সমাজের জন্য ভালো হওয়ার কথা।
আল্লাহ উনারে মাফ করুক! কিন্তু বাংলাদেশের মানুশের উনারে মাফ করতে আরো কয়েকটা জেনারেশন লাগার কথাই…
Leave a Reply