জুলাই ২২, ২০২২
পরান সিনেমাটা তো ভালো হওয়ার কথা। (আনফরচুনেটলি, না দেইখাই বলা লাগতেছে।) কিন্তু প্রেমিক মানেই যে প্যার্টিয়ার্ক্যাল একটা পজিশন – এই বেদনাটাই এই সিনেমার মেইন সেলিং পয়েন্ট হওয়ার কথা। যেহেতু কেউ কইতেছে না, এই কারণে বলা লাগলো একটু।
তো, এইটাও সমস্যা না। এই জায়গা থিকা না যে, পপুলার আর্টে পপুলার ন্যারেটিভগুলা থাকবেই, বরং “সিনেমা হবে সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার” – এইরকম সিউডো জায়গা থিকাও এইরকমের ঝামেলাগুলা হইতে পারে। কিন্তু কোন আর্টই সমাজের বাইরের ঘটনা না, কোন না কোন ইন্টেলেকচুয়াল আন্ডারস্ট্যান্ডিং’রে ক্যারি করার কথা।…
এই জায়গা থিকা যদি দেখেন, বাংলাদেশি সিনেমাতে তো এইগুলাই হয়, বা প্যাটিয়ার্ক্যাল প্রেমিক যেন “হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতি”র মতন একটা ব্যাপার! – এইটা ঠিক না আর কি!
এটলিস্ট একটা সিনেমার কথা আমি বলতে পারি, যেইখান প্রেমিক মানে স্যাক্রিফাস করার একটা পজিশন। ১৯৭৯ সালে মতিউর রহমান পানু’র “হারানো মানিক” এইরকম একটা সিনেমা, যেইখানে আলমগীর হইতেছে ববিতার প্রেমে পড়ে, কিন্তু পরে বুলবুল আহমেদের প্রতি তাঁর প্রেম দেইখা “ভাই” হয়া যায়। এবং শেষে তাদের “মিলন” ঘটায়া দেয়।
মানে, এইসব জিনিসও আছে, বাংলাদেশি সিনেমায়। অনেক বেশি না হইলেও, খেয়াল করার মতো পরিমাণেই থাকার কথা।…
***
এইরকম কিছু লোক আছেন, যারা মনে করেন, বলদ হইতে রাজি হইলেই, ‘কিছু বুঝি না আমরা’ বা ‘কিছু বলি না আমরা’ টাইপের একটা পজিশন নিতে পারলেই তাদের উপরে জুলুম একটু কম হবে। (মানে, সবকিছু আপনারে বুইঝা ফেলতে হবে না, কিন্তু বুঝতে না চাইলেই জুলুমগুলা বন্ধ হয়া যাবে না আর কি!)
জুলুম সিলেক্টিভ কোন ঘটনা না। বাজারে চাইলের দাম, পেঁয়াজের দাম, তেলের দাম যখন বাড়ে তখন সবাইরে অই বাড়তি দাম দিয়াই কিনতে হয়। লোডশেডিং যখন হয় তখন ঢাকাতে কম হয় একটু, কিন্তু সবাইরেই বিদ্যুত-খাতে লুটপাটের এই মাশুল দিতে হয় – জেনারেটরের তেল কিইনা অথবা গরমে ঘাইমা। মানে, জুলুমের প্রেশার নিতে হবে আমাদের সবাইরেই।
আমি তো জানতাম না, আমি তো বুঝি নাই – এই পজিশন নিলেই বাকশালি জুলুমের কাছ থিকা রেহাই পাইবেন না।
জুলাই ২৪, ২০২২
স্পেশালি এই কুরবানির ঈদের তিনটা সিনেমা (পরান, দিন – দ্য ডে, সাইকো) নিয়া এই হাইপ’টা শুরু হইছে যে, বাংলাদেশি সিনেমাও দেখার মতো! নাটক-সিরিজ নিয়াও হাইপ তোলার একটা চেষ্টা আছে, বছর খানেক ধইরা।… তো, এইগুলার সবগুলাই মোটামুটি ওভার-সেস্টম্যান্ট, ‘গরিবের সততার’ প্রশংসার করার মতো ঘটনা, বা “বাংলাদেশি স্ট্যার্ন্ডাড” বইলা একটা “কম-ভাল” কিছুরে প্রজেক্ট করার ঘটনাই শেষমেশ। কম-বেশি বাজে ঘটনাই, এইগুলা।
কিন্তু এইখানে খেয়াল মতো তিনটা ঘটনা আছে এটলিস্ট।
এক নাম্বার ঘটনা হইতেছে, এই হাইপ ক্যাটাগরিক্যালি “আর্ট-ফিল্ম” থিকা আলাদা। ফারুকী, সাদ’রা যেইরকম “শিল্প-সম্মত” সিনেমা বানাইতে চান, অই ক্যাটাগরিতে পড়ে না। কর্মাশিয়াল মুভি তো অবশ্যই, কিন্তু সামাজিক সিনেমা। ওয়েল-মেইড। পাবলিক দেখবে। শিল্প-বোদ্ধারা না। মানে, উনারা দেইখা এটলিস্ট হাসবেন না। 🙂
সেকেন্ড হইতেছে, এর ভিতর দিয়া বাংলাদেশি অডিয়েন্সরে স্বীকার কইরা নেয়ার বা পাত্তা দেয়ার ঘটনা আছে। যে, বাংলাদেশের অডিয়েন্স দেখবো – এইরকম সিনেমা বানাইতে হবে। এখন অই “পাবলিকের রুচি তো খারাপ” – এই এলিটপণার জায়গা থিকা উনারা বাইর হইতে পারতেছেন না। রূপবান-ছুটির ঘন্টা-বেদের মেয়ে জোসনার মতো সিনেমা বানানো আমাদের টার্গেট হইতে পারে নাই এখনো…
তারপরও বাংলাদেশি অডিয়েন্সের কথা মাথায় রাইখা যেহেতু বানানো হইতেছে, একটা কিছু “আবিষ্কার” করতে চাওয়ার ইচ্ছাটা আছে। যেইটা এখনো সিনেমার লোকজন পারতেছেন বইলা আমার মনেহয় না। তো, ট্রাই করলে পারবেন, যদি ইচ্ছাটা থাকে, বাংলাদেশি অডিয়েন্সরে কানেক্ট করার।…
এইটা সবচে পজিটিভ ঘটনা, এই কানেক্ট করতে চাওয়ার ইচ্ছাটা।
আর লাস্টলি খেয়াল করার জন্য বলবো, ব্যাপারটা “বাংলাদেশি”, “বাংলা” না। কলকাতার সাহিত্য-রুচি দিয়া বাংলাদেশি সিনেমা বানানো যাবে না। মানে, অইটা চালানো যাবে না। এইটা মেবি সাব-কনশাসে আছে এখনো। কনশাসলি নিতে পারলে কাজটা আরো ইজি এবং স্মুথ হইতে পারার কথা।…
জুলাই ২৫, ২০২২
১৯৯১ সালের পরে বাংলাদেশে ডেমোক্রেটিক জায়গাগুলা [স্বাধীন বিচার-বিভাগ, ইলেকশন কমিশন, প্রশাসন, ইভেন পলিটিক্যাল দল এবং সামাজিক-সংগঠন…] তৈরি হয় নাই কেন? – এইটা নিয়া তেমন কোন আলাপ দেখবেন নাই। (মানে, আমার চোখে পড়ে নাই।)
এর একটা কারণ হইতেছে, যারা এই ডেমোক্রেটিক সিস্টেম এবং প্রতিষ্ঠানগুলা তৈরি করার কথা, অই সিভিল-সোসাইটি, ‘শিক্ষিত’, এলিট লোকজনই এইটা তৈরি করতে দেয় নাই। এবং ১৯৯৬ সালে এর কল্পাসটা ভিজিবল হয়া উঠছিল সচিবালয়ের লোকজনের “জনতার মঞ্চ” তৈরি করার ভিতর দিয়া।
আমি বলতে চাইতেছি, বাংলাদেশ রাষ্ট্র হওয়ার পর থিকাই একটা ডেমোক্রেটিক শাসনের যেই বেইজ, সেই ইন্সিটিটিউশনগুলা তৈরি করার জায়গাতে সাফার করছে।
শুরুতে (১৯৭২ – ১৯৭৫), ‘সমাজতান্ত্রিক ড্রিমের’ নামে একটা একনায়কতন্ত্র এস্টাবিশ করার ভিতর দিয়া জায়গাটারে বাতিলই করা হইছিল। পরে একটা ব্রিফ পিরিয়ড ইকনোমিক এবং পলিটিক্যাল লিবারাইলেশন চালু হইছিল জিয়াউর রহমানের সময়ে, যেইটা ডেমোক্রেটিক সিস্টেমে গিয়া ল্যান্ড করতে না পারলেও, প্রক্রিয়াটা শুরু হইছিল। মানে, এইটা তৈরি হওয়াটা অবশ্যই একটা সময়ের ব্যাপার। ব্যক্তির পর্যায়ে যেইরকম, সমাজ এবং রাষ্ট্রেও ভালো-অভ্যাসগুলা, সিস্টেমগুলাা তৈরি হইতে, এস্টাবলিশড হইতে সময় লাগে।
এরশাদের সময়টাতে অই জায়গাগুলা ম্যানিপুলেটেড হইছে, নষ্ট হইছে, কিন্তু পুরাপুরি ধ্বংস হইতে পারে নাই।
এইটা রিভাইব করছে, ১৯৯১-এ কেয়ারটেকার গর্ভমেন্টের ভিতর দিয়া। সরকারি-আমলা, মিলিটারি, মিডিয়া, সিভিল-সোসাইটির নামে এলিট সমাজ ডেমোক্রেটিক সিস্টেমের জায়গাগুলারে কন্ট্রোলের উইপেন হিসাবে তৈরি কইরা জায়গাগুলারে ধ্বংস করছে।
যেহেতু কাক কাকের মাংস খায় না, সমাজের আজকের ইন্টেলেকচুয়ালরাও এই জায়গাটা নিয়া কথা কন না। (আই ডোন্ট বিলিভ যে, উনারা কইতে পারেন না।) এই ধ্বংসটা কমপ্লিট হইছে ২০০৭ সালে মিলিটারি ও মিডিয়ার গর্ভমেন্টের ভিতর দিয়া।
২০১৩ সালের পরে নয়া বাকশালের আমল শুরু হইছে পুরাপুরি। যেইখানে সরকারি আমলা-কর্মচারি এবং সরকারি দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে কোন ডিফরেন্স নাই। আর এইটা এখন একটা পলিটিক্যাল সমস্যা হিসাবেই নাই, বরং একটা সামাজিক এবং মোরাল ক্রাইসিসেও নিজেরে আপগ্রেড করছে।…
মানে, আমি বলতে চাইতেছি, এইটারে সমস্যা হিসাবে রিড করার জায়গাটাই মিসিং, বরং এইটা থাকবেই, বা এইটারে এবসুলেট এবং গিভেন-কন্ডিশন ধইরা নিয়া আলাপগুলা করা হয়। এখন, সমাধানের কি উপায় বা ‘কি করিতে হইবে?’ – এইটা তো তার পরের আলাপই আসলে।…
জুলাই ২৬, ২০২২
– লিবারালদের চালাকি, নিও-ফ্যাসিস্টদের স্ট্রাটেজি –
ইন্ডিয়ার নতুন প্রেসিডেন্টের ঘটনায় ব্যাপারটা মনে হইলো আবার, লিবারাল চালাকি’টার কথা। নিও-ফ্যাসিস্টরা এই কাজটা অনেক বেশি করে এখন – মূর্তি বা ইমেজ বানানোর কাজটা। যে, লোয়ার-কাস্টের, নারী এবং আদিবাসী একজনরে রাষ্ট্রের টপ পজিশনে বসায়া দিলো। (হোক না অরনামেন্টারি পজিশন, একটা ভ্যালু আছে তো, অন্য অনেক দিক দিয়াই।)
একইরকম কথা দেখলাম বাংলাদেশের অবৈধ সরকারের এডুকেশন-মিনিস্টার দীপু মনিও কইতেছেন যে, যেই ভার্সিটিতেই যাই, দেখি ৭০% গোল্ড-মেডেলিস্ট হইতেছে মেয়ে! যেন, বাংলাদেশের মেয়েরা অনেক আগায়া গেল! 🙂 এইরকম কথাও দেখবেন চালু আছে, দেশের প্রাইম মিনিস্টার, বিরোধীদলের নেতা (এখন আর বলে না), পার্লামেন্টের স্পিকার, ভার্সিটির ভিসি আরো ৮-১০টা টপ পজিশনের কথা বইলা “নারী-অধিকার” এস্টাবলিশড কইরা ফেলে! একজন হিজড়া’রে চাকরি দিয়া জেন্ডার-ডাইবারসিটি এচিভ কইরা ফেলে। ট্রাম্পের আমলে হোয়াইট হাউজের প্রেস ব্রিফিং করতো একজন ব্ল্যাক উইমেন! এইরকম।
মানে, এইটা একটা ট্রাপ। লিবারাল চালাকি। ইন্ডিয়াতে খালি মুসলমান না, লোয়ার-কাস্ট হিন্দুদের অবস্থাও বাজে হওয়ার কথা, জাত-পাতের ঘটনাগুলা নতুন কইরা বাড়ার কথা। ট্রাম্প আমলে হোয়াইট সুপ্রিমেসি মোটামুটি একস্ট্রিম অবস্থায় ছিল। বাংলাদেশেও পাবলিক-স্পেইসে এবং সোশ্যালিও হেইট-স্পিচ বাড়ছে নারীদের প্রতি, উপদেশ-আদেশ নানান ফরম্যাটেই।…
কিন্তু একটা “ইমেজ প্রতিষ্ঠার” ভিতর দিয়া এবং ভুল-পারসপেক্টিভ দিয়া জিনিসগুলারে লুকায়া রাখা হয়। যেমন দেখবেন, প্রাইমারি স্কুলে মেয়ে-শিশুর সংখ্যা বেশি, এমনকি এসএসসি/এইচসিতেও দেখবেন, মেয়েদের পাশের হার বেশি – এইগুলা নিউজ হিসাবে হাইলাইট করা হয়। কিন্তু এর পরে কি হয়?
হোয়ার হ্যাভ অল দ্য ফ্লাওয়ারস গন?
ইভেন, অফিস-আদালতে, নানান ধরণের চাকরিতে (বিজনেসে কম) অনেক মেয়ে কাজকাম করা শুরু করেন। দুই-একজন টপ লেভেলের জায়গাগুলাতেও পৌঁছাইতে পারেন। কিন্তু সবচে ক্রুশিয়াল জায়গাটা হইতেছে মিড-লেভেল। এইখানে আসতে আসতেই দেখবেন অনেকে “ঝরে পড়তেছেন”… এখন, কেন এইটা ঘটে? – এই প্রশ্নগুলা সহজ আর উত্তরগুলাও আমাদের কম-বেশি জানা।
মানে, আমি বলতে চাইতেছি, সমাজের এভারেজ যেই জায়গাগুলা, “নরমাল” বইলা যেই নর্ম, রীতি-নীতিগুলা অইগুলা হইতেছে ঘটনা। একটা-দুইটা একসপেশন অবশ্যই খারাপ না, কিন্তু লিবারাল চালাকির ঘটনাই, যেইটা আই-ওয়াশের কাজে তো দেয়ই, জুলুমের জায়গাগুলারেও আরো একস্ট্রিম হওয়ার জন্যও প্রভোক করে, একভাবে।
***
স্ট্রিট-ফটোগ্রাফি: কাহিনির গরিবি
নাসির আলী মামুন আর সাখাওয়াত টিপু এই জিনিস করছিলেন, অন্যরাও কেউ কেউ করছিলেন মনেহয়, উনাদের নামটা মনে হইলো কারণ উনারা এইগুলা নিয়া বইও ছাপাইছিলেন একটা, ২০১১ সালে। এক ধরণের থিওরাইজ করারও ট্রাই করছিলেন।… ঘটনাটা হইতেছে, রাস্তা-ঘাটে ‘অশিক্ষিত’ ‘ছোটলোক’ লোকজনের ইন্টারভিউ নিতেন নাসির আলী মামুন, পরে অইগুলা পত্রিকায় ছাপাইতেন, “ঘর নাই” নাম দিয়া।
মোটামুটি প্রটোটাইপ ছিল কোশ্চেনগুলা, কম-বেশি একই ধরণের আলাপ।… তো, এইটা দিয়া এক ধরণের “সমাজ-বাস্তবতার” ট্রু-কপি যেন তুইলা ধরতেছেন উনারা, এইরকমের একটা ব্যাপার ছিল।
এই টেনডেন্সিটার কথা মনে হইলো এই কারণে যে, এর একটা সেকেন্ড-ফেইজ শুরু হইছে স্ট্রিট-ফটোগ্রাফির বর্ণনার ভিতর দিয়া। খালি ছবি না, ছবির পিছনে একটা কাহিনি আছে। যেইটা ‘অব্যক্ত’, ফটোগ্রাফার নিজে বইলা দিতেছেন। মানে, ক্যাপশনের কাহিনিটাও ঘটনা। কিন্তু মুশকিল হইলো, কাহিনিগুলা আর ন্যারেটিভটা মোটামুটি পরিচিতই! গরিব-দুখীদের কাহিনি! আমরা (শিক্খিত, মিডল ক্লাস লোকজন) যেমন “সংজ্ঞায়িত” করে রাখছি, এর বাইরে এরা আর বাইর হইতেই পারে না! 🙂 কিছু ফকিরি-টকিরি করে, ভাবের কথা কয়, অইটুকই। আগের ফেইজটাতে ছবি’টা মেইন ছিল না, কথাগুলা ছিল “আসল”। এখন স্ট্রিট-ফটোগ্রাফির ছবিগুলাতে উনারা বোবা হয়া গেছেন। উনারা যেহেতু কথা কইতে পারেন না ছবির ভিতর 🙁 উনাদের কথাগুলা ফটোগ্রাফারই কইয়া দিতেছেন! মানে, আরেক দফা গরিবই হইছেন উনারা এখন!
এখন এইসব ছবি তোলা যাবে না, কাহিনি বলা যাবে না – এইটা আমার কথা না। এইগুলা যে মোস্টলি গরিবি-বেচারই ঘটনা – এইটা নিজেদেরকে মানাইতে পারলে ভালো। যদিও এই প্লেজারের জায়গাটা নাই হয়া গেলে এইখানে আর্ট বইলা আর তেমন কিছু থাকতে পারার কথা না!
***
নায়িকা পূর্ণিমার বিয়ার খবরের নিউজটাতে এই জিনিসটা সবচে ভালোভাবে খেয়াল করা গেছে, এমনভাবে ইউটিউবের নিউজ-ভিডিওগুলার হেডলাইন করা হইছে, যেন আপনি গালি-গালাজ করেন! কিছু জিনিসরে এমনভাবে প্রেজেন্ট করা হয়, যেন আপনি “হাইস্যকর” ভাবেন! এই জিনিসটা যতোটা না এগজিস্ট করে, তার চাইতে বেশি প্রভোক করা হয় আসলে।
যে, অনন্ত জলিল’রে নিয়া আপনি হাসতেছেন না! তার মানে আপনি “ফান”টা বুঝতেছেন না! আইডিওলজিক্যালি, গ্যাং-রেইপের মতন ঘটনা এইগুলা। একটা গ্যাং’য়ের মেম্বার হইতে হইলে যেইরকম গ্যাং-এর অন্য মেম্বারদের রেইপ করতে যাওয়ার এগেনেস্টে কথা তো বলা-ই যাবে না, কইলে যেইরকম দল থিকা বাদ পইড়া যাইবেন আপনি; এইরকম মিডল-ক্লাস আর্ট-মারানিরা যেইগুলা নিয়া তামাশা করে অইগুলার পার্ট না হইতে পারলে আপনি আর “কালচার” করা দলের লোক হইতে পারবেন না! (আর নিজেদেরকে “শিক্ষিত” “আর্ট-বোঝা” লোক হিসাবে দেখানোর লাইগা কিছু বলদ এই ডরে তাল মিলাইতে থাকে।…)
বাংলাদেশে এই “কালচার”-করা দলের বাইরের লোক হইলেই আপনি ক্রিয়েটিভ-মানুশ হয়া যাবেন না, কিন্তু এই “সাহিত্য-করা” “সাহিত্য-বোঝা” গ্যাং-এর লোক হয়া যারা যতদিন গোলামি করতেছেন, আর যা-ই হোক, কোন ক্রিয়েটিভ আর্ট বা চিন্তা তাদের কাছ থিকা এক্সপেক্ট করাটা ঠিক হবে না।
***
– আর্ট-কালচার কেমনে মিডল-ক্লাসের মালিকানার ঘটনা হয়া উঠে? –
মানে, একটা বা কয়েকটা প্রসেসর ভিতর দিয়া এই ঘটনাটা ঘটে। আমি যেই জায়গাটার কথা বলতে চাইতেছি, সেইটা এই গানের উদাহারণটা দিয়া ভালোভাবে বলা যাইতে পারে। (তবে এইরকমের উদাহারণ আরো অনেক আছে, অনেক ক্যাটাগরিতেই। এবং অনেক সময় ধইরাই…)
গানের নাম: সুন্দরী তুই জলদি আয়, পাক কইরা দে
সিঙ্গার: আবদুল লতিফ, শাহনাজ রহমতউল্লাহ
লিরিকস: আবদুল লতিফ
মিউজিক: আলতাফ মাহমুদ
সিনেমার নাম: সুয়োরানী দুয়োরাণী
ডিরেক্টর: রহিম নেওয়াজ
রিলিজ: ১৯৬৮
১৯৬৫ সালের রূপবান সিনেমার সাকসেসের পরে ঢাকায় “লোক-কাহিনি”র সিনেমা বানানোর ধুম পড়ে। আগে লোকজন উর্দু সিনেমা বানাইতে চাইতো, কারণ পশ্চিম পাকিস্তানের হলগুলাতে সেইটা চালানো যায়। কিন্তু রূপবানের ডিমান্ডের কারণে অই সিনেমা উর্দু’তেও রিলিজ দেয়া লাগছিল। জহির রায়হান “বেহুলা” বানাইছিলেন। কিন্তু আরো যেইটা করছিলেন ৪টা “লোক-কাহিনির” সিনেমাতে ইনভেস্ট করছিলেন। এর মধ্যে একটা হইতেছে “সুয়োরাণী দুয়োরাণী”। জহির রায়হানের তখনকার এসিসটেন্ট রহিম নেওয়াজ ডিরেকশন দিছিলেন। কিন্তু জহির রায়হানের কোন কন্ট্রিবিউশন ছিল না – এইটাও মনেহয় ঠিক না। নিজের নাম জড়াইতে না-চাওয়ার একটা ঘটনাও থাকার কথা। পরে “সংসার” (১৯৬৮) সিনেমার কাহিনিতেও এই যাত্রা’র একটা ঘটনা আছে। (রাজ্জাক থাকে যাত্রাপালার অভিনেতা।) অই সিনেমার স্ক্রিপ্ট-রাইটার ছিলেন উনি।
তো, সিনেমার একটা পপুলার গান হইতেছে “সুন্দরী তুই জলদি আয়, পাক কইরা দে, খিদায় পরাণ যায়”। ফোক-সং হিসাবে অনেকে শুইনা থাকবেন। কিন্তু সিনেমার সিনের সাথে মিল রাইখা আবদুল লতিফ গান’টা একটু নতুন কইরাই লেখছেন। যার ফলে এইটারে উনার গান-ও বলা যায়।
এইখানেই আসলে তিনটা পয়েন্ট আছে খেয়াল করার মতো।
এক হইতেছে, গানের মালিকানাটা কেমনে তৈরি হয়, আমরা যে বলি, এর-গান, অর-গান? শচীন দেব বর্মণ (১৯০৬ – ১৯৭৫) দেখবেন, অনেক গান নিজের মতো কইরা ইম্প্রুভাইজ কইরা গাইছেন; অইগুলা শচীন দেবের গান হয়া গেছে। যেমন, “নিশীথে যাইও ফুলবনে…”। এইটা তো শেখ ভানু’র (১৮৯৪ – ১৯১৯) গান! অনেকে এই কথা জানার পরেও বলতে পারি যে, এইটা শচীন দেব বর্মণের গান। মানে, একটা না-জানা এমবেডেড হয়া থাকে। এইরকমের লজিকও দেয়া হয় যে, উনি তো এই গানরে পপুলার কইরা তুলছেন! কার কাছে পপুলার করছেন আসলে? উনি পপুলার করছেন নাকি পপুলার গানরে উনি নিছেন? একটা ক্লাসের গানরে আরেকটা ক্লাসের কাছে পেশ করছেন আসলে। মানে, উনি যে গানটারে মিডল-ক্লাসের কনজামশনের মধ্যে নিয়া আসছেন, এইটাতেই যেন ব্যাপারটা “আর্ট” হয়া উঠলো, এর আগে সেইটা ছিল না যেন!
এবং দেখেন, এতে কইরা উনি যে মিডিয়াম হইছেন – তা না, উনি “ আবিষ্কর্তা” হয়া উঠছেন! শেখ ভানুরে আমরা কেমনে নিবো, উনি “অশিক্ষিত” না? এখন শাস্ত্র-টাস্ত্র জানা, ত্রিপুরার রাজার পোলা, শচীন যখন এইটারে নতুন কইরা গাইতেছেন, তখন সেইটা তো নিউ ক্রিয়েশন! উনারই গান! (এই ‘নতুন ক্রিয়েশন’-এর জায়গাটাতে আমি একটু পরে আসতেছি।)
তো, এইটা একটা তরিকা, মিডল-ক্লাসের লোকজনের ছোটলোকের আর্টের দখলের। আগের ক্রিয়েটররে এনোনিমাস রাখা। জাইনাও না-জানা না, বরং জানাটারে “স্থগিত” রাখা। (পত্রিকায় তো নিউজ ছাপা হয় নাই! টিভিতেও দেখায় নাই! সুতরাং ঘটনা তো সত্যি না! এইরকম।)
সেকেন্ড, আরেকটা ঘটনা ঘটে এইখানে, অরিজিনালিটির নামে। আবদুল লতিফের ভার্সনটাতে যেইটা দেখবেন, যেন, গানের কথা “বিকৃত” কইরা ফেলছে। মানে, শচীন দেবে যেইটা “নিউ ক্রিয়েশন” হয়, আবদুল লতিফে, বাংলাদেশি সিনেমাতে করলে এইটা খুব একটা হয় না। বরং আবদুল আলীমের গাওয়া আরেকটা ভার্সন আছে, মোস্ট প্রভাবলি কলকাতাতেই রেকর্ড হইছিল সেইটা। যেহেতু আগে রেকর্ড হইছে সেইটা, সেইটা যেন “অরিজিনাল”। বরং বেশিরভাগ কেইসে সেইটা হইতেছে “কলোনিয়াল” ভার্সন। যেমন ধরেন, খনা’র বচন। এইটা তো ৮শতক – ১২শতকের মাঝখানের কোন ঘটনা, কিন্তু রিটেন ফরম্যাটে আসে ১৯১০-এর দিকে। এখন ১৯১০-এর অই রিটেনটা যেন “অরিজিনাল”! তো, এইটা অরিজিনালিটি না, বরং মালিকানা-দখলের ঘটনা আসলে।
তো, আবদুল লতিফের মধ্যে এইটারে এড়ানোর একটা জায়গা আছে। (“অরা আমার মুখের ভাষা কাইড়া নিতে চায়”-তে যেমন বাংলাদেশি টোন’টা খুব স্ট্রংগলি আছে। যেই কারণে উনি সেলিব্রেটি হইতে পারেন নাই এখনো বাংলাদেশে। “ফোক-সং” বানায়া রাখা হইছে উনারে।…) আবদুল লতিফ সুরটরে নিছেন, থিমটারে নিছেন, কথাগুলারে আপডেট করছেন।… জসীমউদ্দিনে এই জিনিস পাইবেন, ভাটিয়ালি গান কালেক্ট করতে গিয়া নিজেই ভাটিয়ালি গান লেখছেন। মানে, অনেক গান যেমন উনাদের নামে চালু হয়া গেছে, অনেক গান উনারা লেখছেনও, পরিচিত সুরগুলাতে। “অরিজিনালিটি”রে খুঁইজা পাইতে চাইছেন, কিন্তু একটা কমন স্পেইসরে নিতে পারাটারে “নকল করা” মনে করেন নাই। যদিও উনাদের রিডিং আমরা একইভাবে করি নাই। “আবিষ্কারকের” মর্যাদাই দিতে চাই!…
তো, এইখানেই আসে লাস্ট পয়েন্ট’টা। যেইটা হইতেছে, ফ্লো’টারে বেইজ ধরা, একটা কমন গ্রাউন্ড হিসাবে নেয়া। এক রূপবানরে নিয়া দেখবেন অনেক কাহিনি হইতেছে, একটার চাইতে আরেকটা একটু আলাদা। কোনটা সীতার বনবাস, কোনটা নারীর সতীত্ব, কোনটা খোদার কুদরত, কোনটা যৌবন-জ্বালার।… আর এতে কইরা কেউ এর “মালিক” হয়া উঠে না, “নকল”ও হয় না। সুরের ভিতর ইম্প্রুভাইজেশন যেমন হয়, দুই-চাইর লাইন ঢুকে আবার বাদ পড়ে; এইভাবে একটা “নিউ ক্রিয়েশনের” দিকেও যাইতে পারে। মিডল-ক্লাসের কনজামশনের ঘটনা হইতে হবে – এইটা খালি অ-দরকারি না, বরং বেরিয়ারও বেশিরভাগ সময়ে।…
এখন আমি যেইভাবে বলতেছি, ঘটনাগুলা তো হুবহু একইরকম না, কিন্তু এইরকম লাইন অফ থটের কথা ভাবতে পারা যাইতে পারে, অনেকভাবেই…
জুলাই ২৭, ২০২২
উমবের্তো একো কইতেছিলেন এই কথা, ইন্টেলেকচুয়ালদের কাজ কি – সেইটা এক্সপ্লেইন করতে গিয়া। যে, মনে করেন আপনি একটা থিয়েটারে বইসা নাটক দেখতেছেন; থিয়েটারের ছাদটা ভাইঙ্গা পড়ে পড়ে অবস্থা, কিন্তু সবাই নাটক দেখতেছে, অইটা খেয়াল করতেছে না যে ছাদটা ভাইঙ্গা পড়লে অনেকে মারা যাবে, ইনজুরড হবে; ইন্টেলেকচুয়ালের কাজ হইতেছে অইটা চিল্লায়া চিল্লায়া বলা, সবাইরে অইটা দেখানো; যাতে সবাই থিয়েটার-বিল্ডিং থিকা, অই সিচুয়েশনটা থিকা বাইর হয়া আসতে পারে; কিন্তু যখন ছাদটা ভাইঙ্গা পড়ে একজন ইন্টেলেকচুয়ালের করার কিছু নাই, অন্য সবার মতো তারও বাঁচার জন্য রাস্তাই খুঁজতে হবে…
বাংলাদেশে মোটামুটি এই অবস্থায় পৌঁছাইছি আমরা। কথা বইলা তেমন কোন লাভ নাই আর। এখনো অবৈধ বাকশালি-শাসনরে দেখতে রাজি না অনেকে, মিডিয়ার নাটক-সিনেমা দেখতেছেন।…
লোন নিয়া কোন সমাধান হবে না, বরং আরো লুটপাট হবে। আরো বড় বিপদের দিকে দেশের মানুশরে ঠেইলা দেয়া হবে। আগের লুটপাটেরই কোন হদিস নাই। এমনকি, আগে কি কি লোন নেয়া হইছে, সেইটা নিয়াই কথা-বার্তা নাই কোন! “নিজের টাকা”-হাইপ তুললেই লোনের টাকা নিজের টাকা হয়া যায় না…
তো, একো’র উদাহারণে যেইরকম দৌড় মারার কথা বলা হইছে, এইরকম পালায়া যাইতে পারলে সব সমস্যার সমাধান হয়া যাবে না আর কি… আমি মনে করি, যে কোন অবস্থাতে, ট্রান্সপারেন্ট থাকতে পারাটা হইতেছে ক্রুশিয়াল ঘটনা। যেই কারণে “বাক-স্বাধীনতার” নামে সিউডো-লিবারাল জিনিস আমাদের দরকার নাই। বরং খোলাখুলি কথা বলতে পারার জায়গাটা যত বেশি সম্ভব এক্সপান্ড করা দরকার, প্রপাগান্ডার এগেনেস্টে।
আর এইটাও বুঝতে পারা দরকার যে, যতদিন বাকশালি-সরকার আছে, এই মেকি রিয়ালিটির হাত থিকা আমাদের বাইর হওয়া সম্ভব না, কোনদিনই।
***
হেলদ-কেয়ার ইন্ড্রাষ্ট্রির ইল্যুশনটা হইতেছে যে, আপনি বেশি টাকা দিতেছেন মানে যেন আপনি ভালো-চিকিৎসা পাইতেছেন! আসল ঘটনা হইতেছে, হয়তো টাকার বিনিময়ে একটু বেটার সার্ভিস এক্সপেক্ট করতে পারেন। কিন্তু বেশি-টাকা দিতেছেন মানে ভালো-চিকিৎসা হইতেছে – ব্যাপারটা এইরকম না, সবসময়।
মানে, কোন জিনিসের জন্য বেশি-দাম দিতেছেন মানেই সেইটা ‘ভালো’ না!
হাউএভার, এই জিনিসটাই আমাদেরকে দেখানো হইতেছে, বুঝানো হইতেছে, সবসময়। এর বাইরে অন্য কোন সাইন্টিফিক বা “বিজ্ঞান-মনস্ক” টুলও নাই আমাদের।…
জুলাই ২৯, ২০২২
বাংলাদেশি সিনেমার বাজার ধ্বংস হওয়ার একটা বড় কারণ হইতেছে ফিল্ম-ডিস্ট্রিবিউটর এবং সিনেমা-হল মালিকদের দুই নাম্বারি।
অনেক সিনেমার প্রডিউসার এবং ডিরেক্টর, তাদের সিনেমা ভালো চললেও এই বদমাইশদের কাছ থিকা টাকা আদায় করতে পারেন নাই। খালি তা-ই না, এদের লগে ভালো-রিলেশন না রাখলে এরা সিনেমা ডিস্ট্রিবিউটও করতে দিতো না। ১৯৭৬ সালের “মেঘের অনেক রং” এক সপ্তাহও চালাইতে দেয় নাই। আরো অনেক কাহিনি আছে। কিন্তু এইসব কাহিনি ফিল্ম-কমিউনিটির মধ্যে ‘ওপেন-সিক্রেট’ হইলেও বলাবলির মধ্যে কখনোই নাই। (আলমগীর কবির বলছেন কিছু।)
বাংলাদেশের সিনেমায় “কাটপিস” ঢুকাইছিল মেইনলি ফিল্ম-ডিস্ট্রিবিউটর’রাই। শুরুতে, হংকং, হলিউডের মুভিতে ব্লু-ফিল্মের সিন ঢুকায়া চালাইতো, পরে দেশি কাটপিস বানানো শুরু করছে। নিজেরাই সিনেমার প্রডিউসার, ডিরেক্টর এবং অভিনেতা হয়া “অশ্লীল সিনেমা” বানাইছে। “অশ্লীল সিনেমার” নায়িকাদের নাম যতো শুনবেন, এই ক্রিমিনালদের নাম জানতেও পারবেন না।…
মানে, অন্য যে কোন বিজনেসের মতোই সিনেমার বিজনেস একটা একো-সিস্টেমের ঘটনা, এইটা যখন থাকে না – তখন “ভালো-সিনেমা” বানানোর ঘটনাগুলা সবসময়ই কইমা আসার কথা। (এবং যখন এই এনভায়রনমেন্ট’টা থাকে তখন অনেকেই কন্ট্রিবিউট করতে আগায়া আসার কথা।)
এখন ধরেন, একজন আর্টিস্ট যদি আর্ট-ডিলারের রুচি এবং প্রেস্ক্রিপশন অনুযায়ী আর্ট-ওয়ার্ক বানাইতে থাকেন, কেমন হবে জিনিসটা? এইরকমের ভয়াবহ জিনিসই হয়া আছে বাংলাদেশি-সিনেমার জায়গাটা!
অনেকদিন ধইরাই এই জায়গাটা ট্রান্সপারেন্ট না। যার ফলে, এর আগেও ফিল্ম-প্রডিউসার এবং ডিরেক্টররা সাফার করছেন, মাঝখানে জিম্মি হয়া ছিলেন এবং এখনো তাদের কব্জাতেই আছেন।
বাংলাদেশে “ভালো-সিনেমা” বানানো হয় নাই না, “ভালো সিনেমা” বানায়া বিজনেস করতে দেয়া হয় নাই। আর এইটা করতে গিয়া বাংলাদেশি সিনেমার জায়গাগুলারেই ধ্বংস করা হইছে। সিনেমাহলগুলা বন্ধ করা লাগছে।
এই ট্রেন্ডটার বড়রকমের কোন চেইঞ্জ হইছে – এইটা ভাবার কোন কারণ আছে বইলা মনেহয় না। সিনেপ্লেক্সগুলা কি সরাসরি প্রডিউসারের কাছ থিকা সিনেমা কিনতে পারে, ফিল্ম-ডিস্ট্রিটিবিউটর ছাড়া? যদি পারে, বা নেগোশিয়েট করার কোন জায়গা থাকে, তাইলে সেইটা কিছুটা বেটার হইতে পারার কথা।
আমি বলতে চাইতেছি, সিনেমার বিজনেস যতদিন পর্যন্ত ফিল্ম-ডিস্ট্রিবিউটর এবং হলমালিকদের হাতে জিম্মি হয়া থাকবে, ততদিন পর্যন্ত “ভালো-সিনেমার” প্রডিউসার এবং ডিরেক্টর কমই পাওয়ার কথা আমাদের। মানে, এইগুলাও সিনেমারই আলাপ – এইটা এটলিস্ট মানতে পারাটা দরকার আমাদের। 🙂
জুলাই ৩০, ২০২২
৭-৮ বছর আগে কইছিলাম যে, অর্ণবের ফোক-ফিউশনগুলাই বেটার। তখন অনেকে বেজার হইছিলেন। এখন আমি বলতে চাই যে, জহির রায়হানের ফোক-এডাপশনগুলাই বেটার। অই সিনেমাগুলা উনি নিজে ডিরেকশন দেন নাই, কিন্তু টাকা ইনভেস্ট করছেন (দুই ভাই, কুচবরণ কন্যা, জুলেখা, সুয়োরাণী-দুয়োরাণী), কাহিনি লেইখা দিছেন, এইরকম। এইরকম একটা সিনেমা হইতেছে – বেদের মেয়ে (১৯৬৯)। কবি জসীমউদ্দিনের কাব্য-নাটকের ফিল্ম-এডাপশন। সিনেমার গানগুলাও কবি জসীমউদ্দিনের, এবং “প্রচলিত সুর”-এর, যদিও মিউজিক আলতাফ মাহমুদের।
এইখানে আরেকটা ইন্টারেস্টিং ঘটনা হইতেছে মিউজিশিয়ান হিসাবে আলতাফ মাহমুদের নাম যে অনেক নেয়া হয়, উনার সুর করা ৫টা গানের নাম দেখেন তো মনে করতে পারেন কিনা? 🙂 নাই যে তা না, কিন্তু উনারও সিনেমার গানে মেজর সিগনিফিকেন্স ছিল “ফোক সং”রে কিছুটা “আধুনিক” কইরা তোলা। যদিও এই জায়গাটাতে আবদুল লতিফই ছিলেন মাস্টার। কিন্তু উনি তো কিছুটা “গাঁইয়া”, তার উপরে অইরকম “কমিউনিস্ট”ও ছিলেন না মনেহয়!
মানে, আমি বলতে চাইতেছি না যে, জহির রায়হানের নিজের কাজগুলা খারাপ! উনি ভার্সেটাইল লোক ছিলেন, এইটা উনার স্ট্রং পয়েন্ট ছিল। কিন্তু উনি এবং মিডল-ক্লাস আর্টিস্ট’রা “ছোটলোকি” আর্টের কাছ থিকা যে নিতেন, সেই জায়গাটারে লুকাইতেন। যেইটা “অস্বীকারের” জায়গাতে চলে আসছে এখন।
এইটা বলা’টা হয়তো বেশিই হইতে পারে যে, “ছোটলোকের” আর্ট চুরি না কইরা মিডল-ক্লাস কলোনিয়াল আর্টের জায়গাগুলা তৈরি হইতে পারে না। কিন্তু এইটা না-বলাটা মনেহয় “পাপ”-ই হবে যে, ছোটলোকের আর্টরে মডিফাই কইরা মিডল-ক্লাস কনজামশনের জন্য রেডি করাটা মিডল-ক্লাস আর্টের জন্য একটা বড় সাকসেসের ঘটনা।
গানের নাম: গুণের ননদ লো পাখি ডাকে
সিঙ্গার: আবদুল আলীম, শাহনাজ রহমতউল্লাহ
লিরিকস: জসীম উদ্দিন
মিউজিক: আলতাফ মাহমুদ
সিনেমার নাম: বেদের মেয়ে
ডিরেক্টর: নুরুল হক
***
গতকালকে কথায় কথায় একজন জিগাইতেছিলেন, পলিটিক্যালি কি ঘটতে পারে আসলে বাংলাদেশে?
তখন বলতেছিলাম, ২০২৩-এর ইলেকশনের আগেই শাহবাগের মতো একটা ডামি “গণ-আন্দোলন” করায়া মিলিটারি-আমলাদের কাছেই ক্ষমতা ছাইড়া দিয়া সেইফ-এগজিট নিয়া পালাবে বাকশালের লোকজন। ভিজিবল রিয়ালিটির বেসিসে এইটাই মনেহয়। পজিটিভ কিছু ইমাজিন করতে পারাটাও মুশকিলের। 🙁
এই কারণে “ফিল-গুড এক্টিভিজম”-এর লোকজনই একটা ভালো রিজার্ভ ফোর্স, এই অবৈধ শাসনের।
এর আগে, লোন-টোন নিয়া এই এক-দুইবছর চালানোর ট্রাই করবে। কিন্তু লোন না পাইলে সেইটা কন্টিনিউ করাটাও টাফই হবে।…
মানে, এইটা একটা প্রেডিকশনই। একটা ফিউচার যে কেমনে এপিয়ারড হবে – এইটা তো কেউই আমরা জানি না আসলে।
***
Hero Alom’রে হিরো বলার জন্য আমার কাছে একটা ঘটনাই এনাফ। (সেইটা হইতেছে) হিরো আলম হইতেছেন বাংলাদেশের একমাত্র (সেকেন্ড কেউ থাকলে বইলেন, আমি অ্যাড কইরা নিবো) সেলিব্রেটি যিনি পাবলিকলি বলছেন, ২০১৮ সালের ইলেকশনে দুই নাম্বারি হইছে।
এইটা নিয়া উনারে আবার “বিপ্লবী” বানায়া আরো বিপদে ফালায়া দিয়েন না কেউ। কিন্তু মিনিমাম এই সত্যি কথাটা বলার মতো অবস্থা বাংলাদেশের কোন “রবীন্দ্র-সঙ্গীত শিল্পী”, কোন আর্ট-কালচার করা সেলিব্রেটির নাই। তখনো ছিল না, এখনো নাই।
আর এই ডিবি-পুলিশের হয়রানির পরে উনি যেই গানটা গাইছেন (“জেলখানা”) সেইখানেও দেইখেন, উনি এই অবৈধ সরকারের অত্যাচারের কথাই বলতেছেন। উনার কালচারাল সাজেশনও এইটা যে, এই বাংলাদেশে আমাদেরকে বাঁইচা থাকতে হইলে জেলখানার কয়েদির ড্রেস (এইটা বাংলা-শব্দ, হে পরমিত-মারানিরা) পইরাই বাঁইচা থাকতে হবে!
Leave a Reply