অগাস্ট ১, ২০২২
এই জিনিসটা মনে হইতেছিল কুরবানি ঈদের আগে, বাড়িতে থাকতে হইছিল, আশে-পাশের এলাকায় যাইতে হইছিল। তখন দেখলাম, বাসস্ট্যন্ডে অনেক সিএনজি অটো-রিকশা, ব্যাটারি রিকশা। কি ঘটনা? আশে-পাশের থানা ইউনিয়ন থিকা সবাই তো এইগুলা দিয়াই যাওয়া-আসা করে। হাইওয়েতে এইগুলাই চলে।
কারণ লোকাল বাস বইলা কিছু নাই! সব ইন্টার-ডিস্ট্রিক্ট বাস। এইসব ছোট ছোট স্টপেজে থামে না। যেহেতু কোন লোকাল-বাস নাই, আর লোকাল-বাস চালায়া প্রফিট করাও মুশকিল, সিএনজি, অটো-রিকশা, ব্যাটারি রিকশা ছাড়া চলার কোন উপায় নাই!
কিন্তু রোড একসিডেন্টের সলিউশনের ব্যাপারে দেখবেন এক নাম্বার সমাধান হিসাবে হাইওয়েতে এই যান-বাহনগুলা বন্ধ করার সাজেশন আসে! মানে, যেই শুয়োরের বাচ্চাগুলা এই “সমাধান” দেয়, অদের মাথায় এই ক্লোজ-ডিসটেন্সের মানুশগুলা কেমনে চলা-ফেরা করবো – এইটা নিয়া কোন চিন্তাই নাই!
ব্যাপারটা ঠিক চিন্তার করারও না, থানা-ইউনিয়নে যেইসব মানুশরা থাকেন, তাদেরকে মানুশ মনে না করার ঘটনা আসলে।
যেই কারণে ঢাকা’তে যেই লোডশেডিং এর লগে যদি কোন থানা বা ইউনিয়নের কম্পেয়ার করেন, অইখানে হিউজ ফারাক থাকার কথা। কারণ অই একটাই, অইখানে যারা থাকে, তারা লেস-হিউম্যান! এতো “সভ্যতা” তো অদের দরকার নাই! মানে, বেসিক রাইটসগুলাই যেন থাকতে নাই, অইখানে!
একইভাবে দেখবেন, অনেক বাইনচোতদের চেত হইতেছে ব্যাটারি রিকশা নিয়া। যেন এর লাইগা দেশে লোডশেডিং! চুরি-চামারির ঘটনা এইখানে নাই! এইটা খালি “বিদ্যুত সাশ্রয়” করার ঘটনা না, গরিব বেটামানুশ কেন ঠ্যাং তুইলা বইসা থাকবে – সেই “খারাপ-লাগার” ঘটনাও।…
আমি বলতে চাইতেছি, আমাদের চিন্তা-ভাবনার সেন্টারে আগে মানুশ’রে রাখতে হবে, কাউরে লেস-হিউম্যান বানায়া দিলেই সেই সমস্যাটা নাই হয়া যাবে না; বরং এইগুলা বেশিরভাগ সময়ই ইমেজ ঠিক করার ঘটনা, রিয়েল জায়গাটারে এড্রেস না করতে চাওয়াই…
***
এইরকমের কথা তো সবসময়ই আছে যে, লেখালেখি কইরা কি হবে! বা একজন মানুশ রাইটার বা কবি হইলে কি লাভ! টাকা-পয়সা কামাই করা বাদ দিয়া কেউ লেখালেখি কেনো করতেছে!
[ বিশাল একটা কোশ্চেন যেন! 🙂 ]
তো, এইটা এমন কোন “গূঢ়, গভীর জিজ্ঞাসা” না আসলে, বেশ সিউডো জিনিসই। সবকিছুরে টাকা-পয়সা দিয়া বা ইকনোমিক টার্মে হিসাব করতে গেলে এমন “দ্বিধা, দ্বন্দ্ব ও ধন্দ” আবিষ্কার করার ঘটনা ঘটে আসলে। বরং খেয়াল করলে দেখবেন, মোটামুটি আমরা সবাই লাইফের বড় একটা সময় পার করি, টাকা-পয়সা কামাই করা যায় না – এইরকম কাজকাম কইরাই। মানে, এই যে একটা অনুমান আছে যে, টাকা-পয়সা ইনকাম করাই যেন একমাত্র কাজ – এইটা মোস্টলি মিছা-কথাই। যেই কারণে, এই জিনিসটারে কোশ্চেনের মর্যাদা দিতেই আমি রাজি না।
সেকেন্ড হইতেছে, রবীন্দ্রনাথের “পুরষ্কার” কবিতাটাতে পাইবেন, যে রাজা কবি’রে ফুলের মালা দিতেছে, মণি-মুক্তা, স্বর্ণমুদ্রা না দিয়া! মানে, মান-সম্মান হইতেছে বড় পাওয়া। আর্টের তো কোন দাম হয় না! এইটা নিয়াও আমি কনভিন্সড না। সমাজে মান-সম্মান পাইবেন বইলা কেউ লেখালেখি করেন – এইরকম কাউরে আমি দেখি নাই। মানে, লেখক-কবি হয়া অনেকে মানুশের কাছে মহব্বতের লোক হয়া উঠতে পারেন, কিন্তু এইটা কারো উদ্দেশ্যের মধ্যে থাকার কথা না।…
এখন থার্ড বা আসল ঘটনাটা বলি। 🙂 রাইটার হওয়ার ইকনোমিক বেনিফিটও আছে কিছু। টাকা-পয়সা ইনকাম করার জন্য কেউ লেখেন না – তা না, কিন্তু লেখালেখি কইরা টাকা-পয়সা ইনকাম তো করাই যায়। অনেক জায়গায় বেনিফিটও পাওয়া যায়।
কয়দিন আগে অনলাইনে একটা পুরান বই অর্ডার করছি। পেইজ-ওনারের লগে দাম নিয়া মুলামুলি করতেছি যে, ১০টাকা কম দেই! রাজি হন নাই উনি। কি আর করা! আমার কুরিয়ার এড্রেস জানাইলাম। নাম দেইখা উনি রিপ্লাই দিলেন, ভাই, আপনার লেখা তো আমি পছন্দ করি! আপনারে কুরিয়ার চার্জ দেয়া লাগবে না! ১০ টাকার জায়গায় ৫০ টাকা কম রাখলেন!
মানে, সম্মান তো দিলেনই, ইকনোমিক বেনিফিটও দিলেন! এইরকম বেনিফিট আমার ধারণা, অনেক রাইটার-ই পান, অনেক জায়গায়। কিন্তু অই তো, একটু কম কমই বলেন মনেহয় সেই কথা।…
অগাস্ট ৫, ২০২২
– গেরামে চায়ের দোকানে বাংলাদেশি সিনেমা কেন বেশি চলে? –
গেরামের অনেক চায়ের দোকানগুলাতে দেখবেন এখন টিভি আছে। (এটলিস্ট ১০-১২ বছর ধইরাই।) যেহেতু ইউটিউব চলে না অই টিভিগুলাতে, টিভি চ্যানেলই চালাইতে হয়। টিভি চ্যানেলের কোন জিনিসগুলা চালানো হয়?
আমি দেখছি, বেশিরভাগ সময়ই (নট বাংলা) বাংলাদেশি সিনেমাই চলে। আগে নিউজ-টিউজও চলতো, এখন নিউজে তো দেখার মতো কিছু নাই! একটু জেনারালাইজ কইরাই বলতেছি কথাটা, কিন্তু কম-বেশি সত্যি মনেহয় কথাটা যে, চায়ের দোকানের টিভিগুলাতে বাংলাদেশি সিনেমাই বেশি চলে। এমনকি “আঞ্চলিক ভাষার” টিভি নাটকও খুব একটা চলে না!
তো, এই বাংলাদশি-সিনেমা দেখার কারণটা কি? এর কোন যুতসই উত্তর আমার জানা নাই। এমনিতে নাটকের চাইতে সিনেমার ফ্রেমটা, কাহিনিটা বড় – এইটা তো আছেই। তবে (উনাদের রুচি খারাপ 🙂 – এইরকম মিডল-ক্লাস সেন্টিমেন্টের বাইরে) আমার একটা ধারণা হইতেছে, ভাষার একটা ইমপ্যাক্ট থাকার কথা।
বাংলাদেশি সিনেমায় কারেক্টার’রা যে পরমিত ভাষায় কথা কন না – তা না, কিন্তু উনারা মোটামুটি “ভুল” (মানে, একটা চলতি) উচ্চারণেই কথা কন। সঠিক-উচ্চারণ বা খাটঁ বাংলা-ভাষার জায়গা থিকা মনে হইতে পারে যে, এইটা একটা সমস্যা!
কিন্তু আমার কাছে মনেহয় এইটা কোর কানেক্টিভিটির একটা জায়গা। নিজেদের লোক মনে হইতে পারে তখন। আরে, এরা তো আমরা’র মতো কইরাই কথা কয়।
টিভি নাটকে যেইটা করে “গেরামের ভাষার” নামে ভেঙ্গাইয়া কথা কয় আসলে। ইউরোপিয়ানরা সাউথ-এশিয়ানদের লগে যেইরকম করে আর কি! তো, অইটা টের পাওয়া যায় একভাবে।
বাংলাদেশি সিনেমাতে জিনিসটা অনেক বেশি ন্যাচারাল। পরমিত কইলেও সেই টান’টা থাইকা যায়, যার ফলে মিডল-ক্লাস শিক্খিত অডিয়েন্স সেইটা নিতে পারে না। নিলে, সেইটা ডি-ক্লাসড একটা ঘটনা হিসাবেই পারসিভ করতে হয়।…
অগাস্ট ৬, ২০২২
অনেকদিন ধইরাই এই কথাগুলা আমি না খালি, আরো অনেকেই কইতেছেন, কিন্তু একটা সোশ্যাল কনশাসনেস হিসাবে, একটা কমন-সেন্স আইডিয়া হিসাবে এখনো ইন প্রাকটিসে নিয়া আসতে পারি নাই আমরা।
ঘটনা’টা হইতেছে, দেশে যখন ডেমোক্রেসি থাকবে, জাস্টিস থাকবে, নিয়ম-নীতি মাইনা চলার সিস্টেম থাকবে, এর বেনিফিট সবাই পাবে। এইটা আলো, বাতাস, মেঘ-বিস্টির মতো, যখন থাকে, তখন সবাই-ই এইটা পায়। আলাদা কইরা কাউরে দেয়া লাগে না। ডেমোক্রেটিক রাইটস সিলেক্টিভ কোন ঘটনা না যে, কারো কারো থাকবে, কারো থাকবে না!
একইভাবে দেশে যখন জুলুমের শাসন থাকে, আপনি সেই জুলুমের সার্পোটার হইলেও তার হাত থিকা রেহাই পাইবেন না। মিছিলে গুলি চালায়া পুলিশ যদি বিএনপির লোকজনরে খুন করতে পারে, খালি “মুক্তিযুদ্ধ-বিরোধী” “ইসলামিস্টদের”-ই খুন করতে পারে না, আপনারে-আমারেও খুন করতে পারে। চাইল-ডাইল-তেল-মরিচের দাম বাড়লে সবার জন্যই বাড়ে, বাজারে।…
ভোট না দিতে দিয়া ইলেকশন করা যখন নিয়ম হয়া উঠে, সরকারিভাবে মিছাকথাগুলারে যখন নিউজ-মিডিয়া দিয়া “সত্যায়িত” করা হইতে থাকে, তখন লুটপাট করাটাই মেইন ইকনোমিক এক্টিভিটি হয়া উঠতে বাধ্য!
মানে, এইটা কোন সাইন্স না 🙁 একটা কমন-সেন্স হিসাবেই ভাবতে পারা, মানতে পারা এবং প্রাকটিস করতে পারাটা দরকার আমাদের।
অগাস্ট ৮, ২০২২
বাকশালিদের একটা “বড় যুক্তি” হইতেছে – “বিএনপি ক্ষমতায় আসলেও তো একই কাজ করবে!”
মানে, দেখেন, অরা কোন রাখ-ঢাক না কইরাই বলে যে, বিএনপি ছাড়া বাংলাদেশের মানুশের কাছে আর কোন ‘বিকল্প’ নাই! ভোট দেয়ার অধিকার দিলে বাংলাদেশের মানুশ বিএনপিরেই ভোট দিবে! (অন্যরা সবাই সিপিবি-জাসদের মতো প্রো-বাকশালি না, বরং প্রো-পিপল পার্টি এখনো হইতে পারে নাই।)
আর অদের ডরটাও এই জায়গাতেই। অরা বিএনপি’র হাতে ক্ষমতা ছাড়তে চায়-না না, বাকশালিরা কোন ডেমোক্রেটিক ফোর্সের কাছেই ক্ষমতা ছাড়তে রাজি নাই। তা নাইলে বিএনপি যদি দেশের মানুশের ভোটে জিতে, সেইটা মানবে না কেন! মানে, না-মানাটা কেমনে ডেমোক্রেটিক ঘটনা হইতে পারে?
বিএনপি যদি দেশের মানুশের ভোটে জিইতা আসে, তাইলে তো দেশের মানুশের ফেভারে কাজ করতে হবে, ভোটের দাম তো দিতে হবে তাদেরকে তখন! বিএনপি যে অই জায়গা ছাড়তে রাজি না, অইখানেই ঝামেলাটা। বিএনপি এগজিস্টিং চোর-বাটপারদেরকে (পুলিশ-মিলিটারি-আমলা-মিডিয়ারে) একইরকম লুটের ভাগ দিতে রাজি হবে কিনা – সন্দেহটা বরং এই জায়গায়।
মানে, “বিএনপি ক্ষমতায় আসলে একই কাজ করবে” – এইটা তো শিওর হয়া বলা যাইতেছে না! 🙂
বলা যাইতেছে না, কারণ অরা ভোটের কথা কেনো বলে! “ক্ষমতা” চাইলে আমাদের (এন্টি-পিপল, বাকশালি ফোর্সটার) লগে নেগোশিয়েট করলেই তো পারে!
বিএনপি (বা স্পেশালি খালেদা জিয়া) যে নেগোশিয়েট করতে রাজি না (ফখরুল ইসলাম আলমগীর কি একটু একটু রাজি?) এইটাই তাদেরকে “বিশ্বাস” না করতে পারার ঘটনা আসলে।
তো, কথা হইতেছে, “বিএনপি ক্ষমতায় আসলে একই কাজ করবে” – এইটা সমস্যা না, সমস্যা হইতেছে বিএনপি মানুশের ভোটে কেন ইলেক্টেড কেন হইতে চাইতেছে!
এই জায়গাটারে খেয়াল না করলে বাকশালিদের (এন্টি-পিপল, এন্টি-ডেমোক্রেটিকদের) “বড় যুক্তি”টারে ঠিক মতো আমরা বুঝতে পারবো না আসলে।
***
গতকালকে মনে হইতেছিল এই জিনিস’টা, ভবিষ্যতদ্বাণী নিয়া যে আলাপ-সালাপগুলা আছে, সেইটা নিয়া, যে ফিউচার তো খুব স্ট্রেইঞ্জ ওয়েতে আমাদের সামনে এপিয়ারড হয়।
Vikings সিরিজে এই জিনিসটা বেশ কয়েকবারই আসছে। রেগনারের ভাইয়ের খুব বাজে অবস্থা যায় একটা সময়, তখন অন্ধ জোতিষ তারে কয় যে, সে প্যারিসের রাজকন্যারে বিয়া করবে, বিশাল এলাকার রাজা হবে। তো, পরে এইগুলা হয়ও; কিন্তু যেইরকম সাকসেসের ঘটনা মনেহয় অইগুলা – তা না, বরং আরো বেশি মিজারেবল।
বা লাগার্তারে বলা হয় যে, রেগনারের কোন পোলাই তারে খুন করবে, কিন্তু অইটা রিভেঞ্জের ঘটনা না আসলে, অনেকটা একসিডেন্টের ঘটনাই।…
মানে, হারা-জিতা, সাকসেস-ফেইলওর এইসব মিনিং বা স্ট্যান্ডার্ড দিয়া ঘটনারে আলাদা কইরা বোঝা যাবে না আসলে। ইমাম হোসেন হাইরা-যাওয়ার পরে, মারা-যাওয়ার পরেও রেসপেক্টেড একজন মানুশ। এর জন্য উনারে খলিফা হওয়া লাগে নাই, অনেক পাওয়ারফুল বা ক্ষমতাধর লোকও হইতে হয় নাই।…
আজকে এমন ক্ষমতাধর লোকেরা আছেন বাংলাদেশে, যারা মারা-যাওয়ার পরে “ইন্নালিল্লাহ” বলার পাশাপাশি “শোকর আলহামদুলিল্লাহ” বলার জন্য অপেক্ষা কইরা আছে, দেশের মানুশেরা।
অগাস্ট ৯, ২০২২
– ফ্যাসিজমের বাংলাদেশি ভার্সন “নয়া বাকশাল” টার্মটা নিয়া –
এইরকম একটা ডাউট অনেকের মনেই আছে, দুয়েকজন আমারে জিগাইছেনও যে, পত্রিকায়-টিভিতে কেউ তো বাকশাল কয় না! এইটা আপনি কই পাইলেন?
তো, এইটা হইতেছে সেই এক্সপেক্টশন যে, শয়তান তার নিজের মুখে বলবে, আমি শয়তান! 🙂 মানে, বাকশালি-মিডিয়ার লোকজন কেমনে নিজেদেরকে বাকশাল বলবো! অরাই তো শয়তানের মুখ’টা, মাউথ-পিসটা!
ধরেন, বিটিভি সরকার-বিরোধী নিউজ-ভিউজ বলা শুরু করলো! এইটা যেইরকম অসম্ভব, বাকশালি নিউজ-মিডিয়াগুলার পক্ষে নিজেদেরকে বাকশাল বলাটা একইরকমের ইম্পসিবল।
আগেরবারের বাকশালের চাইতে নয়া বাকশালের ডিফরেন্সও এইটাই। আগের বাকশালে কোন বিরোধীদল ছিল না, নয়া বাকশালে “গৃহপালিত” বিরোধী-দল রাখতে হয়। আগের বাকশালে সরকারি পত্রিকার বাইরে কোন পত্রিকা ছিল না, এখন সব পত্রিকা-টিভিই সরকারি!…
সেকেন্ড হইতেছে, অন্য কোন ইন্টেলকচুয়ালরাও তো বলে না? (বলে না, এইটা ঠিক না, কয়েকজন বুঝতে পারেন, এবং বলতেও রাজি আছেন।)
বাকশালি-মিডিয়াতে যাদের চেহারা দেখেন, নাম শুনেন উনারা কেউ বলেন না। কারণ উনারা যদি ফ্যাসিস্ট না বইলা বাকশাল বলেন, তখন নিজেদেরকে যে এর রিলিভেন্ট জায়গাগুলা থিকা ডিটাচড করতে হয়, সেই জায়গাটারে উনারা মার্ক করতে পারেন না, করতে রাজি না। আর এইভাবে বাকশালের সহযোগী একটা ফোর্স হিসাবেই এক্টিভ থাকেন।
আর ঘটনা হইতেছে, একটা টার্ম তো শুরুতে একজন বা কয়েকজনই বলবেন, সেই টুলটা দিয়া যদি অন্যরাও জিনিসগুলারে বেটার লোকেট করতে পারেন, তাইলে বলবেনও। কিন্তু বাংলাদেশে, যেইখানে আইডিয়া বা চিন্তা শুরু করা না, বরং একটা টার্ম কয়েনড করতে পারাটা ইন্টেলেকচুয়ালিটির ঘটনা, সেইখানে ইগোস্টিক কিছু ব্যাপার থাকতে পারাও অসম্ভব না আর কি!
মানে, আমি বলতে চাইতেছি, ফ্যাসিস্ট বা ফ্যাসিজম বইলা যেইরকম একটা ধোঁয়াশা তৈরি করা যায়, তার বাইরে গিয়া নয়া বাকশাল বলাটা অনেক বেশি স্পষ্ট এবং ডাইরেক্ট ঘটনা।
এখন এই জায়গাটাতে যাইতে সবাই রাজি হবেন – এই এক্সপেক্টশন আমার নাই। কিন্তু অই তো, তাই বইলা সবাই বলতেছে না বইলা আমার বলাটা ভুল না আর কি!
অগাস্ট ১৫, ২০২২
– সালমান রুশদিরে এটাকের ঘটনাটারে রাইটারের-ফ্রিডম ভার্সেস সমাজের-সেন্সিবিলিটির আলাপে রিডিউস করার জায়গাটা নিয়া –
সালমান রুশদিরে যে এটাক করা হইলো, খুন করার ট্রাই করা হইলো গত কয়দিন আগে, অগাস্টের ১২ তারিখে, নিউইয়র্কের একটা প্রোগ্রামে; অই ঘটনার রেসপন্সে অনেকেই উনার ‘স্যাটেনিক ভার্সেস’ বইটার ব্যাপারে কথা বলতেছেন যে, উনার সাহিত্য একটা রিলিজিয়াস সাবজেক্টরে কেমনে ডিল করছে, বা একজন আর্টিস্ট কতটুক করতে পারে আসলে, এর কোন সীমানা আছে কিনা – এইটা নিয়াও কথা হইতেছে। দরকারি আলাপ এইগুলা।
কিন্তু আমি মনে করি, এইটারে সেন্টার পয়েন্ট কইরা তুলতে গিয়া আরো কিছু জিনিসরে একটু এড়াইয়া যাওয়া হইতেছে, বা আন্ডারমাইনই করা হইতেছে। এইরকম একটা জায়গা হইতেছে – সাহিত্য না, বরং সাহিত্যের শো-অফের জায়গাটা। মানে, ফিকশন-রাইটার হওয়াটা তো একটা সেনসেশনাল ব্যাপার হইতে পারে, আর এইটা হইতে চাওয়াটা কোনভাবেই ক্রাইম না। কিন্তু হওয়াটা মুশকিলের। হিট-হওয়া আর সেনসেশনাল লিটারারি-পিস প্রডিউস করতে পারাটা একই ঘটনা না।
বাংলাদেশের সাহিত্যের কনটেক্সটে এইটা টের পাওয়াটা একটু মুশকিলই। কারণ এইখানে ব্যাপারটা পুরাপুরি আলাদা, ‘পপুলার’ হইতে পারাটা লেস-সাহিত্যিক বা অ-সাহিত্যিক একটা ঘটনা। একইসাথে আটিস্টিক ব্রিলিয়ান্স থাকা এবং সেনসেশনাল লিটারারি-পিস প্রডিউস করতে পারার ঘটনা খুব একটা নাই।…
তো, এইটা হইতেছে, রাইটারের দিক থিকা ঘটনা। যে, আমি যেহেতু পারতেছি, কেন আমি অই টেরিটোরি-তে যাইতে পারবো না! তো, এর যে একটা সোশ্যাল-কস্ট আছে, সেইটা সালমান রুশদি’র অ-জানা ছিল – এইটা আমার মনেহয় না। কিন্তু এই ধরণের রিস্ক তো রাইটারদের নিতে হয়। আর যদি সে লিটারেচারের জায়গা থিকা কিছু জিনিস ইনভেন্ট করতে পারে, মানে, ‘সফল’ হইতে পারে তখন আরো বিপদজনক হয়া উঠার কথা।
এইটা বিপদজনক অই জায়গা থিকা না যে, রাইটার একটা পয়েন্ট মেইক করতে পারতেছেন, বরং একটা পলিটিক্যাল এজেন্ডার ভিতরে তারে যে একোমোডেড করা যাইতেছে, তার সাহিত্যের যেই ইউলিটি তৈরি হইতেছে, সেইটা তো আর তার কন্ট্রোলের ভিতরে থাকে না। এইটা হইতেছে সেকেন্ড ঘটনাটা। উপন্যাস হিসাবে ভালো কি খারাপ – এইটা কোশ্চেন না, এইটা সাহিত্য-ম্যাটেরিয়াল হিসাবে পলিটিক্যালি ইউজেবল কিনা – সেইটা হইতেছে ঘটনা। এর লগে সাহিত্যের কোন যোগাযোগ নাই – তা না, কিন্তু কমই আসলে। মানে, পলিটিক্যালি ইউজেবল বইলা কোন লিটারারি-পিস টিইকা থাকে না বা বাতিল হয়া যায় না, এর বাইরেও (বা বাইরেই) সাহিত্যের একটা বিচার আছে, বা থাকে সবসময়।
আর থার্ড ঘটনাটা হইতেছে, এই সাহিত্যিক শো-অফের জায়গাটা যেইভাবে রিভার্স হয়া উঠে; একটা রেসপন্সরে মাস্ট কইরা তোলে না, বরং আরেকটা বা অনেকগুলা “বিখ্যাত” হওয়ার ইচ্ছারে জাগায়া তোলে। মানে, একটা লেখা যদি “বাজে” হয়, তাইলে “কিছু হয় নাই” বইলাই তো বাতিল কইরা দেয়া যায়। বা এর কিছু ফ্যান-ফলোয়ার তৈরি হইলে হাসি-ঠাট্টা করা লাগে, বা কোন ইন্টেলেকচুয়াল বেইজ থিকা সার্পোট থাকলে তারে ক্রিটিক করার জায়গা থিকা বাতিল করা লাগে। কিন্তু যদি পলিটক্যাল টুল হিসাবে, সোশ্যাল এজেন্ডা হিসাবে পাওয়ার গেইন করতে থাকে, তখন তারে জোর কইরা মিউট কইরা দেয়ার ঘটনা তো থাকেই, অর্গানাইজেশন লেভেলে; একইসাথে এইটা ইন্ডিভিজ্যুয়ালর হিরোজমের জায়গাটারেও প্রভোক করতে থাকার কথা।
আমার কথা হইতেছে, এই জায়গাটা মোটামুটি ওভারলুক করা হইছে, যে কয়টা আলাপ আমি দেখছি, সেই জায়গাগুলাতে। মানে, এইটা খালি রাইটারের-ফ্রিডম ভার্সেস সমাজের-সেন্সিবিলিটির আলাপ না, বরং এই জিনিসগুলা তো সবসময় আছেই, কিভাবে জায়গাগুলা ওভারল্যাপ করতেছে, সেইটা যে খেয়াল করা যায় না – তা তো না। এইটা কেমনে ফাংশন করতেছে, সেই জায়গাটারে খোলাসা করা গেলে, সাহিত্য ও সমাজের রিলেশনের জায়গাটারে বাতিল না কইরা বরং ইন্টার-একশন করার প্রসেসটাতে নজর দিতে পারলে, ঘটনাগুলারে আরেকটু ক্লিয়ারলি দেখতে পাবো বইলাই আমার ধারণা।
***
উত্তরার একসিডেন্টের ৫-৬ ঘন্টা তো পার হইছে, কোন নিউজে কি বিআরটি (আগে ভুলে মেট্রোরেল লেখা হইছিল, এখন এডিট করা হইছে) প্রজেক্ট ডিরেক্টরের নাম পাইছেন, প্রজেক্ট কমিটিতে কারা কারা আছেন, কোন কন্ট্রাক্টর কাজ করতেছিল, সেই কোম্পানির নাম-ঠিকানা? 🙂
(আমি দেখি নাই। কিন্তু) ভিক্টিমের সব ডিটেইলস পাইবেন। করুণ কাহিনিও লেখা হয়া যাবে সকাল নাগাদ। কিন্তু খুনিদের নাম কোথাও পাইবেন না!
এইটার জন্য খুনিরা সাংবাদিকদেরকে টাকা-পয়সা দিছে – ব্যাপারটা এইরকম না হওয়ার পসিবিলিটিই বেশি। বরং খুনিদেরকে নাম যে বলা যাবে না – এইটা ওভারঅল একটা নরমাল প্রাকটিসেরই ঘটনা।
আগের দিনে যেইরকম রেইপ-ভিক্টিমের ছবিসহ ডিটেইলস জানানো হইতো, অইরকম যারা ভিক্টিম তাদের ইন্টারভিউ নিয়া ট্রমাটাইজ কইরা দেয়া হবে আরো। যারা সিস্টেমেটিক খুনগুলা ইনিশিয়েট করতেছে – তাদের নাম-নিশানাও গায়েব কইরা দেয়া হবে।
মানে, এই প্রাকটিস মোটামুটি সব ঘটনাইতেই কম-বেশি পাইবেন, আমাদের নিউজ-মিডিয়াতে…
Leave a Reply