নোটস: অক্টোবর, ২০২৩

০৫.১০.২৩

এইটা খুব ভুল কথা যে, কিছু খারাপ লোকের কারণে একটা দেশ বা সমাজ ধ্বংস হয়া যায়; বরং যখন বেশিরভাগ মানুশ চুপ কইরা থাকে তখনই অই দেশ বা সমাজের মরনের শুরু হয়…

– অবিচুয়ারি: আসাদ চৌধুরী –

আমি কবিতা-লেখার আগে থিকাই কবি হিসাবে আসাদ চৌধুরী’রে চিনতাম। উনার কবিতার কারণে না ঠিক, আমাদের এলাকায় একটা প্রোগ্রামে আসছিলেন। স্কুলে পড়ি আমি তখন। অই প্রোগ্রামে এম.সি. (মাস্টার অফ সিরমনি) মানে তখনকার দিনে কইতো – ‘উপস্থাপক’, ছিলাম আমি।

তো, স্টেইজে অতিথিদের সিরিয়াস-মুখ নিয়া বইসা থাকতে হইতো তিন-চাইর ঘন্টা। (মোবাইল টিপাটিপি করারও কোন উপায় ছিল না! মানে, মোবাইল ফোন তো তখন ছিল না।) অন্য বক্তাদের কথা শুনতে হইতো, এবং তেমন কোন এক্সপ্রেশন শো করা যাইতো না। এতোক্ষণ বইসা থাকতে থাকতে উনি মেবি টায়ার্ড হয়া গেছিলেন, এই কারণে একটু পরে উইঠা, পর্দার আড়ালে গিয়া সিগ্রেট ধরাইলেন, কাধের ঝোলা-ব্যাগ থিকা পান বাইর কইরা খাইলেন। (তখনকার দিনে কবি হইতে হইলে ঝোলা-ব্যাগ রাখতে হইতো।) আমি ব্যাক-স্টেইজের চেয়ারে বইসা উনার কাজ-কাম দেখতেছিলাম।

কবি জিনিসটা কি রকম – সেইটা বুঝার ট্রাই করতেছিলাম মনেহয়। স্টেইজে ফিরার সময় যখন আমারে ক্রস করে যাইতেছিলেন, তখন সালাম দিলাম, উনি হাসলেন একটু।

উনি বক্তৃতা দেয়ার সময় খুব রসায়া রসায়া কথা বলতেছিলেন। অডিয়েন্স খুব খুশি হইছিল।

পরে খেয়াল কইরা দেখলাম মোটামুটি ৩০ বছর পরে আমার মেয়ের স্কুলেও উনি একটা প্রোগ্রামে আসছিলেন। মানে, উনি স্কুল-কলেজের নানান প্রোগ্রামে যাইতেন। টিভিতেও ‘অনুষ্ঠান’ করতেন। উনার কথার ভঙ্গি ছিল সুরেলা। টাইনা টাইনা কথা বলতেন। মনে হইতো, পুঁথি পড়তেছেন। উনার কথা শুনতে ভাল-লাগতো। ভাল্লাগতো উনার টোনের কারণেই মনেহয়।

উনার কবিতা তো পড়ছি পরে, কিন্তু কবিতার কথা তেমন মনে নাই। “তবক দেয়া পান” নাম’টাই খালি বলা হয় উনার কবিতার ব্যাপারে। (উনার পয়লা কবিতার বইয়ের নাম এইটা।) কিছু ‘ভালো কবিতা’-ও উনি লেখছেন মেবি, অই সময়ের। কিন্তু কবি-হওয়াটা যে একটা পারফরমেন্সেরও ঘটনা – এই জিনিসটারে উনি কিছুটা ফিরায়া নিয়া আসতে পারছিলেন। মানে, একটা সময়ে কবিতা তো পারফর্ম করা লাগতো, গানের মতো না হইলেও আসরে, মজমায়, আড্ডাতে পড়া লাগতো। একটা ইন্ট্রো, কিছু ঘটনা, কনটেক্সট, রিলিভেন্সসহ। আসাদ চৌধুরী অই জায়গাটাতে ইউনিক ছিলেন।

সাহিত্য-সমাজ এবং কবি-সমাজের লোক তো ছিলেনই, কিন্তু অই গ্রুপগুলা কুটনামিগুলা করার ভিতরেই নিজেদেরকে পুরাপুরি লিমিট করে নাই তখনো; বরং অইখানে পারফরমেন্সের কিছু ঘটনাও ছিল (এখনো কিছু স্পেইস তো আছেই, সবসময় থাকেই কিছু…), অইখানে আসাদ চৌধুরী আমার ধারণা অনেকেরই কিছুটা ‘ঈর্ষার পাত্র’ হইতে পারতেন, কিন্তু মেবি ‘টিটকারি’-ই পাইছিলেন। নিজের কবিতা পড়ার জন্য যারে অন্য গলা ধার করতে হয় নাই! মানে, আবৃত্তিকার খুঁজতে হয় নাই। কিন্তু কবি যদি নিজেই কবিতা পড়েন, আবৃত্তিকাররা কি করবে তাইলে! যে কবিতা পড়ে সে তো ‘আবৃত্তিকার’, কবি তো ততোটা না! এই রিস্ক বা জাজমেন্ট (মানে, টিটকারি তার পাওনা) ছিল।

তো, ‘আধুনিক বাংলা-কবিতা’ অই জায়গাটা হারায়া ফেললেও, সমাজে অই ভ্যাকুয়ামটা এখনো আছে; আমরা এক্সপেক্ট করি যে, একজন কবি সুন্দর কইরা কথা বলতে পারবেন, ভালো ফ্লার্ট করতে পারবেন, খালি কবিতাই লেখবেন না, কবিতা নিয়া কথাও বলতে পারবেন; মানে, রিডারের লগে, অডিয়েন্সের লগে বাত-চিত করবেন। আসাদ চৌধুরী এই কাজটা করতে পারতেন। যদিও স্যাডলি এক ধরণের ‘আধুনিক কবিতা’-ই উনি লেখছেন বা লেখতে চাইছেন। (‘হয় নাই’ যদিও।) “ওপারে ভালো থাকবেন”রেই উনি আপনাইছেন। যারা উনার কথা শুনছেন এবং উনার কবিতা পড়ছেন – এই জিনিসটা টের পাওয়ার কথা যে, এর মধ্যে ব্রিজিংটা উনি তেমন তৈরি করতে পারেন নাই।

কিন্তু একজন কবি কি পারছেন তার চাইতে অনেক সময় কি পারেন নাই – সেইটাও অনেক ইম্পর্টেন্ট ঘটনা হয়া উঠে। মানে, আসাদ চৌধুরী তো একটা কবি-সমাজের ঘটনাই ছিলেন। সমাজে ‘কবি’ পরিচয় নিয়া বাঁইচা ছিলেন। আজকে মারা গেলেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন!

নুরুল কবির কইতেছিলেন, বিএনপি একটা নেশনাল এম্বেরাসমেন্ট! তো, কথা কিছুটা সত্যি।

ফুটবলে অনেক প্লেয়ার দেখবেন ২০%-৩০% চান্সের জায়গা থিকা কিক কইরাও গোল কইরা ফেলে। লেনিন যখন রাশিয়ায় কমিউনিস্ট বিপ্লব করেন তখন মেবি ১০% চান্স ছিল সাকসেসফুল হওয়ার। জিন্নাহ যখন পাকিস্তান আদায় করেন তখনো উনার চান্স ৫০%’র মতো ছিল মেবি। এরশাদের পতনের সময়ও ৭০%’র মতো ঘটনা ছিল। এখন নয়া বাকশালের এগেনেইস্টে ফাইটে বিএনপি’র পপুলারিটি তার চাইতেও বেশি, ৮০% লোকের সার্পোট আছে এটলিস্ট। আমরা সবাই মোটামুটি জানি যে, দেশে আরেকটা দুর্ভিক্ষ উপহার না দিয়া বিদায় হবে না এইবারের বাকশালও।

কিন্তু তারপরেও বিএনপি এই অবৈধ সরকার’রে ফেলতে পারতেছে না। কেন?

অনেকে অনেক ‘যুক্তি’ দিতেছেন। যে, বিএনপি’র ইন্টেলেকচুয়াল নাই, সফট-পাওয়ার নাই, এই-সেই। কিন্তু এইগুলা আসল কারণ বইলা মনেহয় না আমার। আমি মনে করি, দেশে কোন পিপলস-এজেন্সি নাই। নুরুল কবির’রা নিজেদেরকে পিপলস-এজেন্সি দাবি করলেও উনারা অই ফোর্সটা না যার উপরে বিএনপি পলিটিকাল দল হিসাবে ভরসা করতে পারবে। (উনারাও বিএনপি’রে ভরসা করেন না।) আমলা-পুলিশ-মিডিয়া-মিলিটারি’র ফোর্সটাই থাকবে, নয়া বাকশালের পতনের পরেও। উনাদের একটা এশিওরেন্স লাগবে – সেইফ এগজিটের। আর সেইটা তারেক রহমানের কাছ থিকা আসতে হবে। কিন্তু এইটা খুবই ট্রিকি একটা জিনিস।

মানে, আওমি লিগ ১৯৯৬-এ ‘জনগণ’রে সাথে নিয়া বা আন্দোলন কইরা কেয়ারটেকার গর্ভমেন্ট আনে নাই, আনছিল সচিবালয় অচল কইরা দিয়া। কিন্তু বিএনপি যদি একই কাজ করে সেইটা হিতে বিপরীত হবে। কিন্তু এরা (নয়া বাকশালি প্যাক্ট’টা) একটা বড় ফ্যাক্ট। এদেরকে দলে টানতে হবে না, কিন্তু এক ধরণের নেগোশিয়েশনে আইসা ইন-এফেক্টিভ কইরা না তুলতে পারলে পলিটিকাল গোল এচিভ করাটা কঠিনই হবে আসলে।

তো, যেইভাবেই হোক, বিএনপি’রে গোলবারে একটা কিক নিতে হবে আসলে। ‘গণ অভ্যুত্থানের’ 😛 সময় পার হয়া যাইতেছে বইলা না (যেই কারণে নুুরুল কবির’রা অধৈর্য্য হয়া পড়তেছেন); বরং এক কিক কইরাই গোল কইরা ফেলতে হবে – এইরকমের জায়গা থিকা সরতে পারতে হবে, দুয়েকবার ফেইল করাটা যে দোষের কিছু না – এইটা ভাবতে পারতে হবে।

এর জন্য আগে পুরাপুরি কনফ্রন্ট করার জায়গাটাতে যাইতে হবে। সবকিছু গুছায়া নিয়া কিক’টা করবো ভাবলে দেখা যাবে কিক’টাই আর করা হবে না। আর স্যাডলি, হইতেছে আসলে তা-ই।

০৮.১০.২৩

কয়েক বছর আগে হবে, একটা ডকুমেন্টারি দেখতেছিলাম প্যালেস্টাইন-ইজরাইলের উপর। অইখানে দেখাইতেছিল, কেমনে প্যালেস্টাইনিদের বাসা-বাড়িতে সারা দুনিয়া থিকা ইহুদি ধইরা নিয়া আইসা ঢুকায়া দিতেছিল। মানে, ইজরাইলে থাকার জন্য এনাফ ইহুদি তো নাই। অনেক ইহুদি থাকতেও চায় না ইজরাইলে। তো, কিছু এজেন্সি আছে আম্রিকায়, ইউরোপে; অরা গরিব, বাসা-বাড়ি নাই, চাকরি-বাকরি নাই, এইরকম ইহুদিদেরকে রিক্রুট করে; কইরা থাকতে দেয়া নামে প্যালেস্টাইনিদের বাসা-বাড়ি দখল কইরা অদেরকে অইখানে পুশ-ইন করে।

তো, হামাসের এই পাল্টা-দখলের ফলে যেইটা হবে এই রিক্রুমেন্টগুলা আরো টাফ হয়া উঠবে। ইজরাইল তো মিলিটারি পাওয়ারের দিক দিয়া অনেক সুপিরিয়র; তো, অরা যদি আবারো দখল কইরা ফেলতে পারে অই এলাকাগুলা; তারপরও মানুশ-জন দিয়া ভরাট করতে পারবে না আসলে। মিলিটারি বেইজ হিসাবেই কন্টিনিউ করতে হবে।

২.
আরেকটা জিনিস হইতেছে, কয়দিন আগে চীন-তাইওয়ান ওয়ার-স্ট্রাডেজি নিয়া একটা ভিডিও দেখতেছিলাম সার্চ-পার্টি নামে একটা চ্যানেলে। অইখানে দেখাইতেছিল, বড় বড় মিলিটারি-পাওয়ারের এগেনেস্টে সেইম লেভেলের উইপেন দিয়া ফাইট না কইরা ছোট ছোট অস্ত্র নিয়া (যেমন, বিমান ধ্বংসের রকেট, মাইন…) মোকাবেলা করাটা বেটার। ইউক্রেন যেইভাবে সারভাইব কইরা যাইতেছে। তো, ওয়ার-স্ট্রাডেজির একটা ঘটনাও এইখানে দেখা যাবে।

৩.
এমনিতে দুনিয়ার কোর পলিটিকাল ইস্যুগুলার একটা তো হইতেছে জেরুজালেম। এই লড়াই একদিনের না। এই যুদ্ধ কোনদিনই প্যালেস্টাইন-ইসরাইলের না, বরং আম্রিকান ওয়ার্ল্ড অর্ডারের; যেইটা শুরু হইছিল সেকেন্ড ওয়ার্ল্ড ওয়ারের পরে। এই যুদ্ধ এখনো চলতেছে। দুনিয়াতে ন্যায়-অন্যায়ের যুদ্ধ আসলে কখনোই থাইমা নাই।

গতবারের, মানে ১৯৭৪ সালে, বাকশালি লুটপাটের ফলে যেই দুর্ভিক্ষ হইছিল, তার দোষ দেয়া হইছিল ‘মার্কিন সাহায্যের খাদ্যশস্য’ সময় মতো আসে নাই বইলা। মানে, এইরকম আলাপ পাইবেন খুঁজলে যে, ‘মার্কিন ষড়যন্ত্র’র কারণে বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষ হইছিল, বাকশালি লুটতরাজ যেন কোন ঘটনা না!

এইবারও আইএফএফ’র লোন না পাওয়ার পসিবিলিটিই বেশি! কারণ বাংলাদেশ ব্যাংক ক্যান্সারের রোগিরে প্যারাসিটামল দিয়া বাঁচায়া রাখার চেষ্টা করতেছে। মানে, এই রোগি, বাংলাদেশের ইকনোমি মোটামুটি ডেড, রিভাইবালের তেমন কোন চান্স নাই, যদি না পলিটিকাল লুটতরাজ না থামানো যায়।

গতবারের (১৯৭৪) বাকশালি লুটতরাজ যেইরকম দুর্ভিক্ষ তৈরি করছিল, এইবারের নয়া বাকশালের লুটতরাজের কারণে আরেকটা দুর্ভিক্ষের সামনে আইসা হাজির হইছি আমরা। এখন এই দোষ এর ওর ঘাড়ে দেয়ার চেষ্টা করা হবে। কিন্তু উদোর পিন্ডি বুধোর কান্ধে দিয়া তো কোন লাভ নাই আসলে। পলিটিকাল বাটপারি, বদমাইশিই বাংলাদেশের দুর্ভিক্ষের, ইকোনমিকাল কল্পাসের মেইন কারণ। এই সত্যি মানতে আমরা যত দেরি করবো, বিপদ তত বড় হইতে থাকতে তখন।

০৯.১০.২৩

কালচারাল পাওয়ার খুব সাটল ভাবে কাজ করে। মানে, এইটা পলিটিকাল পাওয়ারের মতো এতোটা ভিজিবল না। এবং সাহিত্য বা লিটারেচার (গল্প, কবিতা, গান…) এর একটা স্ট্রং আউটলেট।

নিউজ-মিডিয়া দখল কইরা এবং সোশাল-মিডিয়া ইঞ্জিনিয়ারিং কইরাও লং রানে কোন ইমপ্যাক্ট ফেলা পসিবল না, কালচারাল পাওয়ারের জায়গাটাতে। আমরা বিশ্বাস করি যে, কোন গল্প-কবিতা-গান প্রপাগান্ডার জায়গা থিকা তৈরি হইতে পারে না যতক্ষণ না পর্যন্ত একজন আর্টিস্ট সেইটা ট্রুলি নিজে ফিল না করতেছেন।

যেমন ধরেন, ইসরাইলের পক্ষে তেমন গল্প-কবিতা-গান পাইবেন না; মানে আর্ট হয়া উঠছে – এইরকম ম্যাটেরিয়াল কমই থাকার কথা। কারণ এইটা আসলে জোর কইরা হয় না।

এতো রিচ একটা ট্রাডিশন থাকার পরেও রাশিয়ায় কমিউনিস্ট-আমলে তেমন কোন লিটারেচার আমরা পাই নাই। মানে, যা পাইছি সেইটা অই শাসনের প্রতি ক্রিটিকালই ছিল এক রকমের।

বাংলাদেশেও দেখবেন অনেকে হা-হুতাশ করেন, অইরকম সাহিত্য হইতেছে না! তো, অইটা ঠিক হওয়া বা না-হওয়ার ঘটনা না আর কি এতোটা, যে সাহিত্যিকরা পারতেছেন না! বরং কালচারাল হিস্ট্রি পলিটিকাল হিস্ট্রির লগে খুবই এসোসিয়েটেড ঘটনা। এবং ভাইস-ভার্সা।

যার ফলে, অনেক সময় একটা দেশ, জাতি বা ভাষারে কবি’রা বাঁচায়া রাখেন। আবার অনেক সময় একজন কবি তার ভাষারে খুঁইজা পাইতে পারেন না। একজন কবি বা রাইটারের পলিটিকাল পজিশন এই কারণে তার লেখালেখির চাইতে খুব দূরের কোন ঘটনা না।

১০.১০.২৩

– রাগের কথা –

নিজের পারসোনাল এক্সপেরিয়েন্স থিকা দেখছি (সবসময় না, কিন্তু) বেশিরভাগ সময় কেউ যখন নিজের মতো কইরা একটা জিনিস চায়, আর সেইটা না পাইয়া রাইগা যায়, তখন ঠিক খালি উল্টা-পাল্টা কথা বলে না, বরং ঘটনাটারে তার পারসপেক্টিভ থিকা আরেকটু ঘুরায়া-প্যাঁচায়া বলে।

‘আঙুরফল টক’-ও না ঠিক ব্যাপারটা।

যেমন ধরেন, কয়দিন আগে যে কথা উঠলো, চেইতা গিয়া “সবকিছু বন্ধ কইরা দিমু”! ব্যাপারটা আসলে নিজে বন্ধ কইরা দেয়া না, বরং সবকিছু আপনা-আপনি বন্ধ হয়া যাইতেছে বা কল্পাস করতেছে। যখন বন্ধ হয়া যাইতেছে তখন বলা যে, আরে, আমি-ই তো চেইতা গিয়া বন্ধ করে দিছি!

তো, ব্যাপারটা এইরকম না। বন্ধ কইরা দিমু না, আপসে আপ বন্ধ হয়া যাইতেছে আসলে অনেককিছু। বরং আর লুকায়া রাখা যাইতেছে না।

এইটারই মেনিফেস্টশন, বা ফ্রাস্ট্রেশনটারে চেতের বা রাগের ঘটনা হিসাবে দেখাইতে চাওয়ার একটা চেষ্টা।

১৩.১০.২৩

ডিশ-কানেকশন সার্ভিস ‘আকাশ’র সাবস্ক্রিপশন বন্ধ কইরা দিছি গতমাসে। বাসা থিকাই বলতেছিল, খামাখা টিভি তো দেখা হয় না, মাসে মাসে ৪০০ টাকা দেয়ার কি দরকার! তো, অইটা বন্ধ কইরা মাসে ৩৫০ টাকা দিয়া ইউটিউব প্রিমিয়ারের সার্ভিস কিনছি। আজকে ‘আকাশ-কোম্পানি’ থিকা কল দিছে, কি সমস্যা – জানতে চায়, কইলাম টিভি-চ্যানেল তো দেখি না; কিন্তু কল সেন্টারের ট্রেইনড এমপ্লয়িটা সমস্যাটা ধরতেই পারলো না, ২০০ টাকা কম দিয়া ৩ মাসের সাবস্ক্রিপশন কিনতে কইলো; মানে, ধইরা নিলো এইটা টাকার সমস্যা! মানে, হইতেই পারে; কিন্তু টাকার কারণে তো আমি বাদ দেই নাই, বরং যেই জিনিসের আমার দরকার নাই, সেই জিনিস মাগনা দিলেও আমি নিবো কেন!

গত ৮-১০ বছর ধইরা ডেইলি নিউজপেপার পড়ার দরকার পড়ে না আর; মোটামুটি কাছাকাছি সময় ধইরা টিভি-চ্যানেলও দেখা হয় না। কারণ এরা যা পাবলিশ করে, যা দেখায় সেইগুলা তো মোটামুটি ইউটিউব, ফেইসবুকেই পাওয়া যাইতো। এই বছরের মে মাসের পর থিকা ফেইসবুক ইউজ করাও কমাইছি। কারণ ‘কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ডের’ নামে বাংলাদেশে ফেইসবুক-এক্টিভিটিরও এক ধরণের বাকশালি-করণ হইছে। ফেইসবুক ‘গুজব ছড়ানো বন্ধ করতে’ সফল হয় নাই, বরং অ্যাজ আ প্লাটফর্ম সিকিওরড হওয়ার নামে ওপেনসনেস কমাইছে। কোন জিনিসই যখন একতরফা হয়া উঠে, তখন সেইটা মারা যাইতে শুরু করে। বাংলাদেশে ৪০-৪৫টা টিভি-চ্যানেলর সবগুলা মালিক আওমি-বাকশালি লোকজন, নিউজপেপারের সবগুলাও (অই দুই-একটা নিশ বা ছোটখাট ঘটনাই আসলে, ইন্ড্রাষ্ট্রির পারসপেক্টিভে) একই ঘটনা; মানে, সব একতরফা জিনিসই; পত্রিকা না পড়লে, টিভি-চ্যানেল না দেখলে তেমন কিছু মিস করবেন না আপনি। আমি তো বলতে চাই যে, এখন ফেইসবুকের ম্যাড়ম্যাড়া নিউজফিডেও তেমন কিছু পাইবেন না। (ইন্সটাগ্রাম তো মোটামুটি ডেডই মনেহয় এখন।) পাইবেন টেলিগ্রাম চ্যানেলে, ইউটিউবের পডকাস্টে, টিকটকের ভাইরাল ভাইবগুলাতে।

যে কোন জিনিসই মারা যায় খুব নিরবে। কাস্টমার’রা বা ইউজার’রা খুব হাউকাউ কইরা বলে না যে, আমরা আর এইটা ইউজ করবো না, আমরা আর এই বাজারে আসবো না! একদিন বা কয়েকদিন পরে দেখা যায় নতুন বাজার গজাইছে, সবাই অইখানে বেচা-কেনা করতেছে। যে কোন মিডিয়াম বা প্লাটফর্মের কাজ মানুশরে বেচা-কেনা করতে দেয়া, এক্সপ্রেস করার স্পেইসগুলা দেয়া; মানুশরে ‘সঠিক পথে’ পরিচালনা করা না; কারণ এইটা তখনই একটা মাতব্বরির জায়গা হয়া উঠে; যেইটা সবসময় স্পেইসটারে ন্যারো কইরা তোলে, প্লাটফর্ম হিসাবে এর প্রমিজটারে আন্ডারমাইন করতে থাকে; যেইটা একটা সময়ে কল্পাস করারই কথা।

১৫.১০.২৩

আজকেই বলতেছিলাম একটা আলাপে, দেখেন, মানুশের মোরালিটি নৈতিকতা-বোধের উপরে আমার ভরসা আছে। মানুশরে দুই-একবার হয়তো বেক্কল বানানো যায়, কিন্তু শেষমেশ মানুশ বুঝতে পারে টের পায় – কোনটা ভালো আর কোনটা খারাপ। আমাদের খালি জ্ঞান-বিজ্ঞানের অগ্রগতি হইছে বা হইতেছে না, মোরালিও মানুশের সেন্স আগাইতেছে তো! মানুশের কালেক্টিভ কনশাসনেসের উপরে আমি ভরসা রাখতে চাই।

আজকে ফিলিস্তিনে যেই অন্যায়’টা হইতেছে মুসলমান হিসাবে আমাদের হয়তো বেশি খারাপ লাগতেছে, কিন্তু ওয়েস্টার্ন-মিডিয়া যতই মেনিপুলেট করার ট্রাই করুক, বুঝানোর ট্রাই করুক, দুনিয়ার মানুশ কি বুঝতেছে না যে, কত বড় অন্যায় হইতেছে গাযায়।

আজকে বাকশালি-মিডিয়ায় যতই হম্বি-তম্বি করুক আওমি-লিগের লোকজনের লগে পারসোনালি আলাপ কইরা দেখেন, তারাও স্বীকার যাবে যে, অনেক বেশি বাড়াবাড়ি হইতেছে, দেশটারে দুর্ভিক্ষের কাছাকাছি নিয়া গেছে। বাজারে কোনকিছুতে হাত দেয়ার উপায় নাই। দেশটারে একটা নাটক-সিনেমা বানায়া রাখছে। এই অন্যায়-অবিচার কি তারাও ফিল করে না!

মানুশের এই যে কমন-কনশাসনেস এইটা ভুল করতে করতে হইলেও ধীরে ধীরে হইলেও তৈরি হইতে থাকে, আগাইতে থাকে, একটা পজিটিভ দিকে। এই কালেক্টিভ-কনশাসনেসের জায়গাটাতে, মানুশের ভালো-মন্দের বিচারের জায়গাটাতে আমাদেরকে বিশ্বাস রাখতে হবে, এইটা না থাকলে সমাজ এতোদিন টিইকা থাকতে পারতো না আমাদের।

এই বইলা আমি চুপ গেলাম। তো, বিবেক ও আবেগ দিয়াই মনেহয় কথাগুলা বলতেছিলাম। যার ফলে বুঝি নাই যে, ড্রাইভারও শুনতেছিলেন আমাদের আলাপ, কথাগুলি। উনি নিরবতা ভাইঙ্গা খুবই দরাজ গলায় বললেন, আলহামদুলিল্লাহ!

১৬.১০.২৩

পাবলিশার’স নোট: “মুসলমানী বাঙালা কি?” – আবদুল করিম

আবদুল করিম মেইনলি ছিলেন একজন এডিটর। উনি অনেক লেখা খুঁইজা বাইর করছেন, সেইগুলার ইন্ট্রো লেখছেন, এবং নানান পত্রিকায় ছাপাইছেন। এই কাজটা উনি করছেন একটা স্পেসিফিক উদ্দেশ্য নিয়া। উনি দেখাইতে চাইছেন যে, বাংলা-সাহিত্যের একটা সময়ের (১২শতক – ১৭ শতক) ঘটনাগুলা যা আমরা জানি না, তা হইতেছে আসলে সংরক্ষণ না করা। এবং আমরা যদি একটু খোঁজ করি তাইলে অনেক কিছুই খুঁইজা পাইতে পারি।

আর এইটা করতে গিয়া বাংলা-ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ে কিছু জিনিস উনি আবিষ্কার করতে পারছিলেন, যেইটা উনার ভাষা নিয়া লেখা ও বক্তৃতার মধ্যে পাওয়া যায়। বাংলা-ভাষা ও সাহিত্য নিয়া উনার এইরকম কয়েকটা লেখা এই বইয়ে রাখা হইতেছে।

২.
আবদুল করিমের এই টেক্সটগুলার আরেকটা সিগনিফিকেন্ট ঘটনা হইতেছে, এইগুলা উনি বলছেন এবং লিখছেন পুব-বাংলার অডিয়েন্সের জন্য, মুসলমান রিডারদের কথা ভাইবা। মীর মশাররফ হোসেনের ‘বিষাদ-সিন্ধু’তেও দেখবেন এই জিনিস অনেকটা মিসিং; যেন মুসলমানদের কাহিনি, গ্রাম-বাংলার কাহিনি উনি হিন্দু-রিডারদেরকে, শিক্ষিত লোকজনরে জানাইতেছেন। আবদুল করিমের ঘটনা এইটা না; উনি মুসলমান-পাঠকদেরকে উদ্দেশ্য কইরা কথাগুলা বলতেছেন।

৩.
মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্‌’র লগেও যদি উনার ইন্টেলেকচুয়াল জার্নিটা কম্পেয়ার করেন তাইলে দেখতে পাইবেন, মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্‌’র কন্ট্রিবিউশন ছিল রেফারেন্সগুলারে ক্রিটিকালি এগজামিন করার জায়গাটাতে; হিস্ট্রিকালি যেই রেফারেন্সগুলা আছে, সেইগুলারে উনি খুব বেশি কোশ্চেন করেন নাই। এই জায়গাটাতে আবদুল করিম এগজিসটিং রেফারেন্সগুলারে মান্য বা অমান্য করেন নাই, বরং নতুন রেফারেন্সের খোঁজ করছেন, এবং দেখাইছেন যে, যেই জায়গাগুলাতে আমাদের খোঁজ-খবর করা দরকার সেই জায়গাগুলারে আমরা এভয়েড করেই যাইতেছি।

আনফরচুনেটলি, আজকে একশ বছর পরেও এই জায়গাগুলা খুব একটা চেইঞ্জ হয় নাই। যার ফলে আবদুল করিমের কথাগুলা আরেকবার খেয়াল করা দরকার আমাদের।

সেপ্টেম্বর, ২০২৩
ঢাকা

১৮.১০.২৩

অনেকে যে আমার কাছে সাজেশন চাইতেছেন ব্যাপারটা এইরকম না, কিন্তু যেহেতু ২৪-২৫ বছর ধইরা বাংলা-ভাষায় আমি লেখালেখি করি, কিছু টেকনিক এমনিতে চোখে পড়ে। তো, সেই জায়গা থিকা বলতেছি।

১. যেই শব্দ আপনে মুখে বলেন না, সেই শব্দ কম লেখার ট্রাই করবেন। কঠিন-শব্দ, অপরিচিত-শব্দ, ডিকশনারি-ওয়ার্ড মানে ভালো-বাংলা না। বরং বেশিরভাগ কেইসেই এইগুলা হইতেছে মরা-শব্দ।

২. একইভাবে যেই শব্দ আপনি বলতে পারেন, সেইটা আপনে লেখতেও পারেন। আগে কেউ লেখে নাই বইলা লেখা যাবে না – এইরকম দ্বিধা-দন্ধে ভুইগেন না।

৩. বাংলার মাস্টারদেরকে ডরাইয়েন না, আপনার ভাষার জমিদারি দিয়া রাইখেন না।

৪. সবচে জরুরি হইতেছে, শিক্ষিত-মিডল ক্লাসের জন্য লেইখেন না, তাইলেই একভাবে ভালো-বাংলা লেখতে পারার দিকে যাইতে পারার কথা।

৫. ঠিক-বানান, ভুল-বানান বইলা কিছু নাই-না, বানানগুলা বলার বা উচ্চারণের চাইতে খুব বেশি দূরের জিনিস না হইলেই হইছে। ন,ণ; শ ষ স; জ য – এইগুলাতে যত না ভুল তার চাইতে প্রেজুডিস/কুসংস্কারই বেশি।

৬. তবে হরফেরও একটা হিস্ট্রি আছে, ভিসিবিলিটি আছে; কোন চেইঞ্জ করা যাবে না ভার্সেস সবকিছু চেইঞ্জ কইরা ফেলতে হবে – এর মাঝামাঝি রাস্তাগুলাই মেবি বেটার।

৭. ভাষা স্থির না, বরং সবসময় তৈরি হওয়ার ভিতরেই আছে, ফ্লো’টাই এইখানে মেইন ঘটনা।

২০.১০.২৩

ফেইসবুক কেন হেইট-স্পিচ কারখানা?

রিলিভেন্ট কনটেন্ট তৈরি করা, যেইটা আমি জনি হ্যারিসের ইনিশিয়েটিভটাতে দেখতে পাই।
মানে, ফেইসবুক বা ইউটিউবরে যে আমরা নিউজ-সোর্স হিসাবে নিতেছি – এইটা কোন ভুল না, ট্রাডিশনাল-মিডিয়ার ফেইলওর; এবং এইটা এতোটা অথেনটিসি-ডিপেন্ডেড ঘটনা না, বরং রিলিভেন্সের ইস্যু। এইটা হইতেছে আমার সেকেন্ড পয়েন্টটা।
থার্ড এবং এর আউটকাম হিসাবে যেই সোশাল জেনেসাইডের জায়গাগুলা তৈরি হইতেছে সেইটা খালি ফেইসবুকের এলগারিদমের দোষ না, একটা পুঁজিবাদী গ্রিডিনেসই না, বরং এর ইনহেরিয়েট ফিলসফির লগে এসোসিয়েটেট একটা ঘটনা। মানে, এইটারে ফাইন টিউন কইরা, সোশাল-নর্মস তৈরি কইরা, আপডেট কইরা সেইটারে ওভারকাম করাটা কোন সলিউশন হইতে পারে বইলা আমি মনে করি না।
জনি হারিসও যেইটা ইন্ডিকেট করতে চাইছেন যে, ফেইসবুক জানতো কিন্তু তারপরও কোন একশন নেয় নাই – এর সাথে আমার কোন দ্বিমত নাই, কিন্তু আমি এইটাও মনে করি যে, এইটা ফেইসবুকের ইন-এবিলিটি না আসলে এতোটা, বরং এর ইন-বিল্ড একটা ফিচার। আর দেশে দেশে অবৈধ-শাসনগুলা এর বেনিফিট নিতে থাকবে। সেইটা ফেইসবুকের ‘ভুল’ এর কারণে হোক, এর ‘অজান্তে’ হোক বা এর কোলাবরেশনের ভিতর দিয়াই হোক।
আর বাংলাদেশে কোলাবরেশনের চান্সটাই বেশি দেখি আমি।

জনি হ্যারিসের ভিডিও’র লিংক:




২০০৭ সালের একটা লেকচারে এডওয়ার্ড সাঈদ বলতেছিলেন, ইজরাইলের যে এই অন্যায়-অবিচার-অত্যাচার এই নিয়া কোন ইজরাইলি আর্টিস্ট-ইন্টেলেকচুয়ালরে এর প্রতিবাদ করতে দেখেন নাই, মানে, অইরকম কোন ঘটনা রেয়ার। এমনকি রিসেন্ট পাস্টের আগে মিডিয়া ও মেমোরি’তে ফিলিস্তিনি পিপলদের নেরেটিভটারে দমায়া রাখা হইতেছিল। (এখনো আল-জাজিরা বাদে তেমন কোন ভোকাল নাই।)

তো, এই জায়গা থিকা মনে হইতেছিল, ইজরাইল যে রাষ্ট্র হিসাবে কতোটা ভঙ্গুর! মানে, ইজরাইলি রাষ্ট্রের ভিতরে থাইকা এর অন্যায়-অবিচার-অত্যাচারের কোন প্রতিবাদ আপনি করতে পারবেন না! আর এইটা কোন রাষ্ট্রের স্ট্রেংথের ঘটনা না, বরং ভারনারিবিলিটির একটা প্রমাণ।

মিলিটারি পাওয়ার বা ইকনোমিকাল পাওয়ার দিয়া আসলে একটা রাষ্ট্র টিইকা থাকতে পারে না, বরং একটা দেশের কালচারাল ডাইবারসিটি খুবই ইম্পর্টেন্ট ঘটনা। রিয়ালিটি হিসাবে তো আছেই, তার বাইরেও রাষ্ট্র ও সমাজ যে ধারণার ঘটনা সেইটা তৈরি হয় তার কালচারাল নেরেটিভগুলার ভিতর দিয়া; আর সেইখানে এককভাবে একটা জিনিস যত এস্টাবলিশ করা হইতে থাকে, সেইটা সমাজ বা রাষ্ট্রের শক্তিশালী হওয়ার নমুনা না, বরং একটা সময়ে যেইরকম জেনারেলাইজ করতে পারাটারে আমরা ভাবতে পারতাম ‘জ্ঞান’ বা ‘বিজ্ঞান’, কিন্তু এখন বুঝতে পারি যে এইটা মোটামুটি পলিটিকাল কন্ট্রোলের টুল; একইরকমভাবে কালচারালি মোর এলাইনড হয়া থাকাটা বেশিরভাগ সময় একটা ভারনারাবিলিটিরই সাইন। আর ইজরাইলের ব্যাপারে এইটা বেশ বাজেভাবেই ভিজিবল।

২১.১০.২৩

ফেইসবুক অডিয়েন্স

ফেইসবুক আসলে নাইটিইজের কিডদের একটা কবরখানা। অন্য জেনারেশনের লোকজন যে নাই – তা না, কিন্তু তার বাইরের লোকজন মাইনরিটিই হওয়ার কথা; শিওর না আমি, জেনারেশন অনুযায়ী ফেইসবুক ইউজারের ডেটা পাইলে সেইটা কনফার্ম হয়া বলা যাইতো।

(বাংলাদেশে একটা বড় অংশ ফেইসবুকে একাউন্ট খুলছে মেবি ২০০৬/০৭ টু ২০১২/১৩। এই কারণেও ফেইসবুকে ‘শাহবাগ’ পসিবল হইতে পারছে। আরবান মুভমেন্টগুলার লগে সোশাল-মিডিয়ার কানেকশনগুলা এখনো এগজামিন করার অনেক কিছু বাকি আছে আসলে।)

তবে আমার এইজ-গ্রুপের (৪৫ – ৫৪) লোকজনের লগে আমার উঠা-বসা, যোগাযোগ আসলে কমই। ইমিডিয়েট পরের গ্রুপের চাইতে তার পরের জেনারেশনের লগেই আমি মেবি কানেক্ট করতে পারি বেটার। ২৫-৩৪, মানে যারা স্টুডেন্টও না এখন, এবং প্রফেশনাল লাইফ দিয়া পুরাপুরি কনজিউমড হয়া যান নাই এখনো। আর উনারাই মেবি বড় অডিয়েন্স গ্রুপ ফেইসবুকের।

মানে, ইয়াং লোকজনের লগে আমার খাতির বেশি – ব্যাপারটা পুরাপুরি এইরকম না মেবি, বরং ঘটনা হইতেছে ফেইসবুকের ক্রাউডে বুড়া (৪৫+), মিডল-এইজড (৩৫ – ৪৪) বা টিন-এইজার (১৮-২৪) লোকজনের চাইতে ইয়াং লোকজনই (২৫-৩৪) বেশি।

২২.১০.২৩

ফ্যাক্ট আর পারসপেক্টিভ – দুইটা খুবই আলাদা আলাদা জিনিস। যেমন ধরেন, আমি বাঁইচা আছি নাকি মারা গেছি – এইটা হইতেছে ফ্যাক্ট; এখন কেমনে বাঁইচা আছি, কিভাবে বাঁইচা আছি – এইগুলা নানান পারসপেক্টিভের ঘটনা হইতে পারে। মানে, পারসপেক্টিভ দিয়া ফ্যাক্টরে তো আমরা বাতিল কইরা দিতে পারি না!

কিন্তু খেয়াল কইরা দেখবেন, ফ্যাক্টগুলারে অদল-বদল না কইরা, কোন প্রপাগান্ডা পলিটিক্স সারভাইব করতে পারে না। মানে, এইগুলা নতুন কোন পারসপেক্টিভের জায়গা থিকা ঘটে না, বরং কোন না কোন ফ্যাক্টরে টেম্পার কইরা, গোপন কইরা এই প্রপাগান্ডা পলিটিক্সের জায়গাগুলা হাউকাউ করতে থাকে।

এখন সেইটা ইজরাইলের ঘটনাই হোক, বিজেপি’র বা নয়া বাকশালের। ফ্যাক্টগুলারে কোন না কোনভাবে টেম্পার না কইরা এরা এদের নেরেটিভটারে ধইরা রাখতে পারবে না। এবং এদের মিডিয়া-হাউকাউয়ের মেইন উদ্দেশ্যই হইতেছে ফ্যাক্ট ও পারসপেক্টিভের জায়গাগুলারে ব্লার কইরা তোলা, অস্পষ্ট করতে থাকা…

[এই জিনিসটা মনে হইলো Eric Hobsbawm’র এই লাইনটা পড়তে গিয়া – “without the distinction between what is and what is not so, there can be no history… How we assemble and interpret any chosen sample of verifiable data… is another matter.”

২২.১০.২৩

ও.কা.’র একটা কথা দেখতেছিলাম যে, উনি মুখ ফসকায়া সত্যি কথা বলে ফেলছেন এইরকম – এক্সপ্রেস-ওয়ে’তে উঠলে মনেহয় কোন ধনীদেশে আছি, নামলে মনেহয় কোন গরিব দেশে চলে আসছি।

তো, এইটা আসলে সত্যি-কথাই। নিজের এক্সপেরিয়েন্স থিকাই বলতেছি। আমার নিয়মিতই উঠা লাগে, কারণ বসুন্ধরা আবাসিক থিকা ধানমন্ডি-লালমাটিয়া যাইতে ভালো কাজে দেয়। আগে মিনিমাম এক-দেড় ঘন্টা লাগতো, এখন ৩০ মিনিটেই যাওয়া যায়। আর যেহেতু গাড়ি-টাড়ি একদমই নাই, রাস্তাটারে আরো বিদেশ-বিদেশ মনেহয়।

আমি নরমালি শুক্রবার বিকাল-সন্ধ্যার দিকে যাওয়া-আসা করি। গাড়ি-টাড়ি এতো কম থাকে যে, ডর-ই লাগে মোটামুটি। তো আজকেই শুনলাম অফিসে, এক্সপ্রেস-ওয়েতে নাকি ডাকাতি হইছে, রেবের ড্রেস পইরা এক গাড়ি থামায় ৪০ লাখ টাকা নিয়া গেছে!

পদ্মা-ব্রিজ নিয়া কইতেছিলাম ৭-৮ মাস আগে, গাড়ি-টাড়ি এতো কম পার হয়; সেইম কেইস এক্সপ্রেস ওয়ে নিয়াও। মানে, যেইটুক রাস্তা চালু হইছে, সেইটা তেমন কোন কাজে আসলে লাগে না; বরং এইটারে বেইজ কইরা নিচের রাস্তার অবস্থা আরো বাজে হইতেছে।

ঢাকা শহরে যারা বিদেশ-বিদেশ ফিলিংস নিতে চান, উনারা তো বিদেশেই যাইতে পারেন, এক্সপ্রেস-ওয়ে বানায়া এই ফিলিংস নেয়ার জন্য এইটার তেমন কোন দরকার ছিল না আর কি! ঢাকার ৯৫% মানুশের আসলে এইটার তেমন কোন দরকার নাই।

২৫.১০.২৩

গুজব ছড়ানো ছাড়া, ডর দেখানো ছাড়া এবং যে কোন উপায়ে একটা ‘জরুরি অবস্থা’ জারি করার পায়তারা করা ছাড়া BAL’র আর কিছু করার নাই। দুনিয়ার সব জালিমই দিশেহারা হয়া উঠে যখন তার ক্ষমতা চইলা যাওয়ার সময় হয়; আরো ফেরোশাস হয়া ডর দেখাইতে চায়, আর এইভাবে নিজের বিপদ আরো নিজে ডাইকা নিয়া আসে। এই বিপদ খালি তার নিজের বিপদ না, দেশ ও দশের বিপদ। মরার আগে একটা দানব যেইরকম একলা মরে না, আশে-পাশে যারে পায় তারেই মারে, এইরকম এই আওমি-লিগ, এই নয়া বাকশাল একলা মরবে না, লগে আরো কিছু জিনিস নিয়া মরবে; এবং সবচে বাজে জিনিস হইতেছে মরার আগে আরো কিছু মানুশ মারবে। এরা মনে করে, কিছু মানুশ মাইরা ফেলতে পারলেই নিজেদের ক্ষমতা ধইরা রাখতে পারবে! এই কারণে এদের খুনি-স্বভাব বাইর হয়া আসতে থাকবে আরো, সামনের দিনগুলাতে…

২৬.১০.২৩

রাইটার এজ আন এডিটর

ব্যাপারটা এইরকম না যে, স্বভাব-কবি বইলা কিছু হয় না, বা নেচারাল বা “স্বতঃস্ফূর্ত” হইতে পারে না; কিন্তু এই ধরণের চিন্তাটা ভুল না হইলেও ঠিক পুরা জিনিসটারে ধরতে পারে বইলা মনেহয় না। মানে, এর এগেনেস্টে ঘটনাটা এইরকম না যে, অনেক খাটা-খাটনি কইরা কোন ক্রিয়েটিভ বা ইন্টেলেকচুয়াল কাজ করলে সেইটা অনেক ভালো কিছু। অইটাও একটা ট্রাশ হইতে পারে, যেইরকম “স্বতঃস্ফূর্ত”-টাইপ লেখাগুলাও হয়। বরং এইখানে বড় স্পেইস আছে এডিটিংয়ের বা রিভিউয়ের।

আমি তো মনে করি, আজকের দিনে একজন গ্রেট রাইটার মানে একজন ভালো এডিটর, যিনি জানেন যে একটা লেখার বা কবিতার কোন কোন জায়গা বাদ দিতে হবে, কোন কোন জায়গা এলাবরেট করা লাগবে, কোন কোন জায়গা মিনিমাইজ কইরা দিতে হবে। মানে, একটা গ্রেট রাইটিংসের সাথে সবসময় একটা এডিটিং প্রসেস জড়িত আছে।

তবে ব্যাপারটা এইরকম না যে, একজন রাইটার কনশাসলি জানেন যে, কোনটা ভালো বা উনার ডিফাইনড কোন সাহিত্য-ভিউ আছে: বরং একটা সেন্স সবসময় তার থাকে, যেইটারে আল্টিমেট ধইরা নিয়া উনি এডিটিংয়ের কাজটা করেন না, অই জায়গাগুলারে রিভিউ করতে থাকেন।

মানে, সাহিত্য অবশ্যই কোন ওহী না, বড়জোর একটা কালেক্টিভ কালচারাল কনশাসনেসের সিলসিলা যেইটা একজন গ্রেট রাইটার ফিল করতে পারেন। অই ফিলিংসটার উপরে তার ভরসা রাখতে হয়, কিন্তু একইভাবে সেইটারে কন্সট্রাক্টও করা লাগে তারে; বা উনি করতে পারেন সেইটা। ব্যাপারটা এইরকমও না যে, সবকিছুই ব্যাখ্যা কইরা ফেলা পসিবল! বরং একজন রাইটারের ঐশ্বরিক-ক্ষমতা এবং মানবিক-পরিশ্রমের মাঝখানে নিজের লেখারে এডিট করার, রিভিউ করার বা তৈরি করার একটা ঘটনা থাকে, যেই জায়গাটারে মেবি আমরা অইভাবে খেয়াল করি না।

কারণ একটা সময় পরে এইটারে রাইটার’রাও মনেহয অনেকটা নেচারাল প্রতিভা বা নিজেদের টেকনিকের অংশ হিসাবে ধইরা নেন। কিন্তু একটু খেয়াল করলে এই জায়গাটারে আলাদা একটা ঘটনা হিসাবেও মার্ক করা পসিবল।

এখন অবশ্যই একেকজন রাইটার একেকভাবে জিনিসটারে প্রসেস করেন। কিন্তু একজন ‘স্বভাব-কবি’ যখন জিনিসটারে আমলে নিতে রাজি হন না, তখন তার ক্রিয়েটিভিটির জায়গাটা ফেইড হইতে থাকে, ধীরে ধীরে; তার কানেকশনের জায়গাটা যত-ই শার্প হোক।

আমি বলতে চাইতেছি, এই এডিট করা বা করতে পারার ঘটনাটারে একটা টেকনিকাল টুল হিসাবে আইডেন্টিফাই করতে চাইলে ভুলই হবে কিছুটা; এইটা একটা ক্রিয়েটিভিরই ঘটনা। অনেকসময় ইন-বিল্ড থাকে, অনেক সময় আবিষ্কার কইরা নিতে হয়। কিন্তু একজন রাইটারের একটা এডিটিং সেন্স আসলে মোটামুটি মাস্ট একটা ঘটনাই।

২৭.১০.২৩

BAL আর BNP একই না; যেইরকম জালিম আর মজলুম একই না। বাকশালি-মিডিয়া জানপ্রাণ দিয়া এই মিছা-কথাটাই বারবার বলতেছে। অরা জালিমেরই পালা কুত্তা।

এই নেরেটিভটা হইতেছে বাম-বাটপারদের নেরেটিভ। পিআলো, ডিস্টারদের নেরেটিই। যে, আওমিলিগ-বিএনপি একই জিনিস! এইভাবে যারা ‘নিরপেক্ষতা’র ভান ধরে, তারা আসলে জালিমের পক্ষের লোক।

দুই-তিনবছর আগেও যখন এই কথাগুলা আমরা বলছি তখনো অনেকে সন্দেহ করছেন। কিন্তু এখন আমরা বুঝতে পারি যে, এইগুলা উনাদের সন্দেহ ছিল না, না-বুঝতে পারা ছিল না, এইগুলা ছিল উনাদের না-বুঝতে-চাওয়া। উনারা জালিমের শাসনই চান।

২৮.১০.২৩

বাংলাদেশে আওমিলিগের রাজনীতি হইতেছে ষড়যন্ত্র, লুটপাট আর সরকারি-ক্ষমতারে দলীয়-ক্ষমতা হিসাবে ব্যবহারের রাজনীতি।

জনগণের রায় নিয়া না, বরং জনগণের কোন মতামত না নিয়াই বাকশাল তৈরি করা হইছিল ১৯৭৫ সালে, কোন কনসেন্ট নেয়া হয় নাই তখন। সিপিবি-ন্যাপের লোকজনও এই ষড়যন্ত্রে শামিল ছিল, যারা এখনো আওমিলগের বি-টিমই হয়া আছে। ১৯৮৬ সালে এরশাদের সাথে আঁতাত করছিল। পরে এরশাদরে পলিটিকাল জোকারে পরিণত করছিল। জামাতের লগে মিলছিল, পরে এই দলরে ধ্বংস করছে। ষড়যন্ত্র করতে পারাটারেই আওমিলিগ বাংলাদেশে রাজনীতি করা হিসাবে এস্টাবলিশ করছে।

১৯৭৩-এ নাম কা ওয়াস্তে ইলেকশনে আসার পরে এমনই লুটপাট করছিল যে দেশে দুর্ভিক্ষ শুরু হইছিল। ১৯৯৬-এ লুটপাট কইরা কুলাইতে পারে নাই, যেইটা ১/১১’র গর্ভমেন্টের সাথে আঁতাত কইরা ক্ষমতায় আসার পরে পোষায়া দিতেছে। বাংলাদেশের মানুশ আরেকটা দুর্ভিক্ষের সামনে দাঁড়ায়া আছে। আওমি লুটপাটের রেজাল্ট আজকের এই অর্থনৈতিক দুরাবস্থা।

আর যতবারই ক্ষমতায় আসছে আওমিলিগ, গর্ভমেন্ট অর্গানাইজেশন আর পলিটিকাল দলের মধ্যে কোন ডিফরেন্স রাখে নাই! সরকারি-কর্মচারীদেরকে বাকশালে জয়েন করতে বাধ্য করছিল, ১৯৯৬-এ ক্ষমতায় আসছিল সচিবালয়ের লোকজনের ‘জনতার মঞ্চ’র ভিতর দিয়া; আর এখন প্রো আওমিলিগের লোক না হইলে সরকারি-চাকরি পাওয়া টাফ ঘটনা।

আরো আরো উদাহারণের কথা পসিবল, আওমিলিগের ষড়যন্ত্র, লুটপাট এবং গর্ভমেন্ট অর্গাইনাইজেশনগুলারে ধ্বংস করার ঘটনার। কিন্তু এই ঘটনাগুলারে যদি আমরা খেয়াল করতে, মাইনা নিতে রাজি না থাকি, তাইলে এই ভয়াবহ পলিটিকাল অবস্থা থিকা আমরা বাইর হইতে পারবো না।

Leave a Reply