হালিকের দিন। ব্রাত্য রাইসু। পুনর্মুদ্রণ যন্ত্র। ফেব্রুয়ারি ২০১২। প্রচ্ছদ ব্রাত্য রাইসু। পৃষ্টা ৯৬। দাম ৪০০ টাকা।
বই কিনার কথা
শেষ পর্যন্ত বইটা কিনতে পারছি আমি! জনান্তিকে,সাম্যদা’রে যখন দুপুরবেলার গরমের ভিতর বইসা জিগাইলাম বইটার কথা, আরো অনেক কবিতার বইয়ের পাশ থিকা বাইর করতে পারলেন উনি; কিন্তু দাম দেইখা একটু চেইতা গেলেন, ‘অর ফাইজলামি আর গেলো না! ৩/৪ ফর্মার বই হইলে প্রতি ফর্মা ২৫/৩০ টাকা রাখি আমি আর ৪ ফর্মার (একচুয়ালি ৬ ফর্মা, ৯৬ পৃষ্টা) বইয়ের দাম রাখছে ৪০০ টাকা! সুমন ভাইয়ের (সুমন রহমান) বইয়ের দাম রাখছিল প্রথমে ৫০০টাকা, যাদের কিনার ইচ্ছা ছিল, তারাও কিনতে পারতো না, এখন ২৫০ টাকা রাখাতে ভালো বিক্রি হইতেছে. . . ’
আমি বলার ট্রাই করলাম যে, আসলে খুববেশি মানুষ তো কবিতার বই কিনে না, এইজন্য হয়তো অল্প কপি বিক্রি হইলেই টাকাটা উইঠা আসবো, এইরকমের চিন্তা থাকতে পারে। কিন্তু পরে মনে হইলো, এইটাই একমাত্র ঘটনা না, কারণ এই ‘দাম বেশি রাখা’র ব্যাপারটা আরো কিছু ব্যাপার সিগনিফাই করে, বেশি দাম দিয়া কিনা জিনিসে ওই ভ্যালু’টাও তো ইম্পোজ করা থাকে যে, এইটার দাম বেশি!
এই দাম কোন না কোনভাবে বইটারে তো স্পেশাল কইরা তোলে এবং এইরকম একটা ধারণা দিতে পারে যে, বইটা খালি কাগজের দামই না, টেক্সটের যেই দাম সেইটাও অনেক। এখন এই টেক্সটের দাম বেশি কিনা – সেইটা অন্য বিবেচনা, কিন্তু এইরকম একটা ব্যাপার ইম্পোজড থাকতেছে এইখানে, ইভেন এইরকমের কোন ইনটেনশন না থাকলেও।
কবিতা দামি কোন জিনিস বইলা আমার মনেহয় না, কিন্তু কবিতার বই দামি তো হইতেই পারে। অ্যাজ অ্যা প্রডাক্ট, বা বইয়ের ব্যবসা হিসাবেও প্রফিটিবিলিটির একটা চিন্তা থাকাটা দরকার।
কবিতার সিরিয়াল নিয়া
বছর-ওয়ারী সাজানো হইছে কবিতাগুলা এবং লেখার যে টাইমলাইন সেইটাও একভাবে ঠিক রাখা হইছে, মানে পরে লেখা কবিতা পরে, আগে লেখা কবিতা আগে। এইভাবে আগে লেখা হইছে বইলা কবিতা যে আগে পড়তে হইবো, এইরকম একটা জায়গায় দাঁড়া করানো হইছে কবিতাগুলারে। এতে কইরা মনে হইতে পারে যে, ‘হালিকের দিন’ এর কাহিনি ক্রনোলজিক্যালিই আসছে বা যেইভাবেই আসছে, সেই ‘পবিত্রতা’ বা‘বিশুদ্
এইটা মনে হইতে পারে যে, ভঙ্গিমাটা’তে বেশি জোর দিতেছি আমি বা আজাইরা জিনিস নিয়া কথা বলতেছি। কিন্তু বেশিরভাগ সময় ব্যাপারগুলি এইরকমই, যে, খুব ইনসিগনিফেকন্ট জায়গাগুলিতে গিয়া রিভিলড হয়া পড়তে পারে, অনেককিছুই। সবসময় যে হয় বা হবেই – তা না। তো, এইখানে এই টাইমটারে একসেপ্ট করতে চাওয়াটারে একরকমের ‘বিশুদ্ধতা’র জায়গা থিকা রিড করতে চাইতেছি। যে কবি কবিতাগুলা লিখছিলেন, বইটা করার সময় তার সম্পত্তিতে কোন হাত দেয়া হয় নাই আর। যেন, সম্পাদনা নাই আর কোন। দিনগুলা অ্যাজ ইজ্যুয়াল, এরা নিজেরাই নিজেদেরকে সাজাইতেছিল। আমি লিখলাম মাত্র! এইটা এক রকমের কাব্যিকতা,কিন্তু কবিতা বা কবিতার বই এইরকমের প্যাসিভ কোন ঘটনা না। কিন্তু বইটার ফর্মেশনের মধ্যে এই ব্যাপারটা একভাবে ইন-বিল্ড আছে।
কবিতার ঘটনা
কবিতাগুলা দুইভাবে পড়ছি আমি। এক. কবি’র আগের কবিতার বইয়ের কথা মনে রাইখা, দুই. আমার নিজে যেইটারে কবিতা বইলা মনে করি, সেইটার ভিতর দিয়া। অবশ্য ‘এক’ এর ভিতরই ‘দুই’ আছে। যখন উনার প্রথম কবিতার বই (আকাশে কালিদাসের লগে মেগ দেখতেছি) পড়ছিলাম তখন ফার্স্টে ‘গ’ শব্দের যে লোকাল হওয়ার যে সিগনিফিকেন্স সেইটার দিকেই চোখ পড়ছিলো। কিন্তু ভাষা তো এইরকম লোকাল বা অপ্রিমত না, একটা প্রমিতের (শহরের, সেন্ট্রাল) এগেনেস্টে। ভাষারে এই জায়গা থিকা লোকেট করাটা ভাষারে এইরকম বাইনারির বাউন্ডারিতেই রাইখা দেয়ার কথা। তো, পারসপেক্টিভ হিসাবে পয়লা ক্যাটাগরিটারেই চুজ করা হইছে বইলা মনে হইছে, যার ফলে স্কুইজড হইছে কবিতার জায়গাটা, ভাষার দিক থিকা; আর যখন আটকাইছে তখন ফানি হয়া উঠতে পারতেছে আরো বেশি কইরা। এইভাবে বাইর হওয়ার একটা চেষ্টার ভিতরেও থাকতে চাইছে।
এই লোকাল এফেক্টের কারণে মনে হইতে পারে, কবিতা ঠিক ‘কাব্যিকতা’ যারে বলে মাইনষে, তারে ইগনোর করার এক ধরণের ভঙ্গিমা তৈরি হইছে কবিতাগুলিতে। একসেপশনাল, লাউড হইতে পারতেছে কবিতাগুলা। কিন্তু সেইটা অই ‘কবিতা’ ধারণার উপ্রেই বেইজ কইরাই ঘটতেছে। মানে ‘ভঙ্গিমা’ই একটা রিভিলড হইতেছে আর সেইটা রিকোয়ার্ডও। কিন্তু যেই জায়গাটা থিকা হইতেছে, সেইটার কথা বলতে চাইতেছি। অনেকেই আছেন, যারা কবিতা বলতে টেকনিকটারেই বোঝেন; শব্দ, ছন্দ আর এর বিভিন্ন পদ্ধতিগুলা; এইগুলি তো আছেই, কিন্তু ঠিক এই এই জিনিসগুলিই কবিতা না; যেইটা অনেকেই জানেন, যে, কুফরি-কালামের মতোন কোন ঘটনা না। আমার সন্দেহ, এইরকম একটা ডুয়াল আইডেন্টিটির জায়গা থিকা কবিতাগুলি ডিল করতেছে নিজেরে। নিজেরাই ট্রাপড হইতেছে। ট্রাপগুলি তো থাকেই, নানানরকমের, কিন্তু এই জায়গাগুলি একভাবে দেখা যাইতেছে আর কি।
এই বইয়ে পুরান সেই ‘কাব্যিকতা’রেই (যার এগেনেস্টে মনে হইতেছিলো আগের বইটা ছিলো) যেন জড়ায়া ধরতে চাইতেছে ; ফুলে, গোলাপে, পাখিতে, স্বপ্নে. . . এইটা একটা ঘটনা, মোটাদাগে। একটা সার্কেল ফুলফিল হইতেছে, বিরোধিতার ভিতর দিয়া তার গ্রাউন্ডটারে এক্সটেন্ড করার আর সার্পোট করার।
মানে, এইটা আগের কবিতাগুলির ভিতরে ছিলোই – ‘কাব্যিকতা’টা, কিন্তু ভঙ্গিমাটা এতোটাই স্ট্রং যে, অইটাতেই আটকাইয়া থাকা যাইতেছিলো (বা যাইতেছে এখনো)।
অন্যভাবে দেখতে গেলে কবিতার সুরটারে লোকেট করা যাইতে পারে একটা কাহিনির বেসিসে; যেইখানে একজন ইন্ডিভিজ্যুয়াল তার সামাজিকতার ‘বোধ’টারে রিপিটেটলি কোশ্চেন করতেছেন, হোয়াই? এক রকমের সামাজিকতার মিররিংই ঘটতেছে, মকারি দিয়া ইনভবলভড হইতেছে। এইভাবে এক রকমের এক্সপ্লোরেশন হইতেছে এগজিসটিং রিয়ালিটির, কিন্তু কবিতার নতুন কোন রিয়ালিটি বা স্পেইস ক্রিয়েট হইতে পারতেছে কিনা, ডাউটফুল আমি।
জুন ৯, ২০১২
রিরাইট ফেব্রুয়ারি, ২০১৯
Leave a Reply