কবিতা: এপ্রিল, ২০২০

জুতা কাহিনি

জুতাগুলা পইড়া আছে,
দরজার বাইরে, সিড়ির পাশে
জুতাগুলা আছে…

বাইরেটাও আছে, কয়েকজন মানুশ হাঁটতেছে…

বৃষ্টি আসতেছে, দৌড়াইতেছে এখন মানুশগুলা

জুতাগুলা হাসতেছে…

অদের ভিতর থিকা ভেসে আসতেছে
রাস্তার আওয়াজ, ধুলাবালির ঘ্রাণ
ফুটফেটিশের সিনড্রোম…pullquote] [/pullquote]

সকালবেলা

পাতার উপর আঁকা
ছোট্ট একটা বাতাস
এর মতন একা

দেখা যায় না তারে
পাখি ভাবে, হায়
আমি উড়তেছি
তাইলে কেমন
করে!

পাতার উপর আঁকা
একটা রইদের কণা
কাঁপতেছে
তির তির

বলতেছে,
জীবন আছে
দেখার ভিতর
একটা না-দেখা

ভাসতেছে বাতাসে
হাসতেছে রইদে

আঁকা বাঁকা
রাস্তাটার মতন
মিথ্যা সত্য
সত্য মিথ্যা

হেঁটে যাইতেছে
একা একা

অনেকগুলা চড়ুই
কিচিরমিচির
করতেছে

বলতেছে
মিথ্যা এইটা!
মিথ্যা এইটা!

বাতাসটা চুপ
রইদটা স্থির

চড়ুইগুলা
উইড়া
চলে গেলে
বুঝা যায়

সমস্ত কথাই
মিথ্যা,
সত্যের ইশারা।

Continue reading

ইংরেজি শব্দ, বাংলা ওয়ার্ড…

তখন মনেহয় ক্লাস সিক্স বা সেভেনে পড়ি, একটা গল্প বা রম্য-রচনা পইড়া পুরা বোকচোদ হয়া গেছিলাম, কারণ কিছুই বুঝতে পারতেছিলাম না; পারতেছিলাম না একটা শব্দের কারণে। লিখছিলেন মনেহয় আলী ইমাম, শাহরিয়ার কবির বা এইরকমের কেউ, যারা অই আমলে কিশোর, মানে টিনএইজদের জন্য লিখতেন। শব্দটা ছিল, ডিক্টেটর। একজন ডিক্টেটর কি করেন, কেমনে ঘুমান, কেমনে খাওয়া-দাওয়া করেন, এইসব নিয়া ফান করা। তো, ডিক্টেটর কি জিনিস সেইটাই তো জানি না আমি! আর ইংলিশে স্পেলিংটা লেখাও নাই যে ডিকশনারিতে খুঁজতে পারবো। তখন যেহেতু গোয়েন্দাদের বই পড়ি কিছু, ডিটেকটিভ শব্দটা জানি। কিন্তু ডিটেকটিভরে নিয়া এতো ফান করার কি আছে! পরে যখন জানতে পারলাম ডিক্টেটর মানে স্বৈরাচার তখন বুঝতে পারলাম যে, ও, আচ্ছা, এরশাদরে নিয়া লিখছে! তো, লেখাটা যতোটা না ফান, তার চাইতে জেলাসিই বেশি ছিল মনেহয়, এই কারণে ফানটা জমে নাই তেমন। আর আমার ধারণা, রাইটার ইচ্ছা কইরা স্বৈরাচার না লেইখা ডিক্টেটর লিখছিলেন, কারণ নিউজপেপারে সবসময় স্বৈরাচার লেখা হইতো (চিন্তা করেন, কি রকম ফ্রি একটা টাইম ছিল তখন!), শব্দটা পরিচিত ছিল, তো অইটা লিখলে সাথে সাথে কানেক্ট করা যাইতো যে, এরশাদরে নিয়া লেখছে, এই কারণে মেবি এই শব্দটা লিখছিলেন।…

এখন ব্যাপারটা যে খালি ইংরেজি শব্দ – তা তো না, যেই জিনিসটারে বুঝাইতে চাইতেছে, সেই ব্যাপারটাই তো ‘ইংলিশ’! মানে, ডিক্টেটর বা স্বৈরাচার টার্মটা বাংলা-ভাষার হিস্ট্রিক্যাল রেফারেন্সে তো নাই, কি থাকতে পারে… জালিম?… বা অন্য আরো কিছু… কিন্তু সেইটা কোনভাবেই স্বৈরাচার না। মানে, কাছাকাছি রকমের জিনিসই, কিন্তু একই জিনিস না। ব্যাপারটা এইরকম না যে, স্বৈরাচারের ইংলিশ হইতেছে ডিক্টেটর, বরং স্বৈরাচার হইতেছে ডিক্টেটরের বাংলা। দুইটা একই ঘটনা না। তো, আমার ধারণা হাজার হাজার না হইলেও শ’য়ে শ’য়ে এইরকম ইংরেজি শব্দ থাকার কথা, বাংলা ভাষায়; যেইটার রেফারেন্স (বা সূত্র) হইতেছে ইংরেজি ভাষায়। এক সময় হয়তো ফার্সি ভাষাতে ছিল এই রেফারেন্সগুলা।

মানে, আমি যেই পয়েন্টটা মেইক করতে চাইতেছি, সেইটা হইতেছে, যে কোন শব্দই একটা কালচারাল রেফারেন্সের ঘটনা। উইথইন দ্য কালচারও। যেমন ধরেন, খোয়াব কইলে দাদি-নানীদের কথা মনে হইতে পারে, বা ‘গ্রাম-বাংলা’র কথা 🙂 (যদিও গান আছে, “আমি স্বপ্ন দেখি, মধুমালার মুখ রে…”), স্বপ্ন রিলেটিভলি ‘আধুনিক বাংলা’, ‘বাংলা মিডিয়াম’-ও কিছুটা; এর পাশাপাশি ড্রিমও কিন্তু বাংলায় এখন অনেকটা, কারণ আমরা যারা ‘শিক্ষিত’ তারা সবাই ড্রিম বুঝি তো! কিন্তু তাই বইলা ইংরেজি ভাষায় ড্রিম যেইরকম অ্যাসপায়ার, উইশ, হোপ নানান রকমের আছে, বাংলার ড্রিম অইরকম জায়গাতে খুব কমই যাইতে পারে মনেহয়।

মানে, কথাটা খালি এইটা না যে, ইংরেজি শব্দগুলাও বাংলা-ই অনেক সময় – এইটা তো আছেই (বা বাংলা অনেক শব্দও ইংলিশে বাংলাতেই কইতে হবে আসলে, যেমন ধরেন, খিচুরিরে মাসালা রাইস কইলে খিচুরি বুঝানো যাবে না আসলে, বা ম্যাশ পটেটো দিয়া আলু-ভর্তা… মানে, একই জিনিস হবে না); বরং শব্দ জিনিসটারে ইংরেজি, ফার্সি, পর্তুগিজ, সংস্কৃত, হিন্দি, উর্দু… এইভাবে দেখার যে তরিকা সেইটাই ঝামেলার জিনিস মনেহয়। এমন না যে, এইভাবে আইডেন্টিফাই করা যায় না, কিন্তু এইরকম দাগানোটা বরং স্বৈরাচার ও ডিক্টেটর টাইপের ঝামেলা তৈরি করে, যেইরকম করে লেবার ও শ্রমিক; মানে, লেবার তো আসলে ‘বেশি বাংলা’; যেইরকম ‘সাইডে, সাইডে…’ বেশি বাংলা ‘সরে যান’ থিকা। তো, এইরকম ইংরেজি শব্দগুলা ‘বাংলা’ বইলা ‘ডিক্টেটর’ বাংলা না, বা এর এগেনেস্টে ‘স্বৈরাচার’-ও। এখন তাই বইলা ইংরেজি শব্দের বাংলা কি করা যাবে না? এইখানে আমার কথা হইতেছে, কি বাংলা বানাইতেছেন, সেইটা খেয়াল করাটা দরকার। এইখানে ডিক্টেটরের বাংলা স্বৈরাচারই করতেছেন না খালি, জালিম’রেও যে রিপ্লেইস করতেছেন, এই বুঝ থাকাটা দরকার মনেহয়।… Continue reading

ভাই রে, আর্ট কই থাকে?

দ্য পর্ণগ্রাফার নামে একটা সিনেমা আছে, ডকুমেন্টারি-টাইপ, ফ্রেঞ্চ-সিনেমা; খুববেশি সুবিধার কিছু না। একজন ডিরেক্টর, যিনি প্যারিসে ১৯৬৮’র স্টুডেন্ট মুভমেন্টে পার্টিসিপেট করছিলেন; মুভমেন্ট শেষ হয়া যাওয়ার পরে কি করবেন আর! যেহেতু ক্যামেরা নিয়া কিছু কাজ করতে পারেন, পয়লা রাজি না হইলেও, পরে ‘বাধ্য’ হয়া পর্ণগ্রাফি সিনেমার ডিরেকশনের কাজ শুরু করেন। মাঝখানে ছাইড়াও দেন, পরে আবার শুরু করেন, এইরকম। যদিও পর্ণ-ফিল্ম, ডিরেক্টর ছোট-খাট দুয়েকটা জিনিস ইনসার্ট করার ট্রাই করেন। যেমন, শুরুর দিকে, যেই কান্ট্রি-হাউজের বাড়ি’টাতে শ্যুটিং হবে, সেইটার ন্যাচারাল বিউটি শ্যুট করেন; তারপরে, নায়িকারে ডিরেকশন দেন সব ‘কাজ’ শেষ হয়া যাওয়ার পরে ক্যামেরাটা রোল হয়া তার চোখের উপর আইসা থামবে, শে যেন একটা ব্ল্যাংক লুক দেয় তখন, এইরকম। মানে, ফিল্মের জন্য এতোটা জরুরি কিছু তো না-ই, কিছু যায়ও আসে না, কিন্তু ডিরেক্টর এই জিনিসটা চান রাখতে। মেবি এইটা, বা এইটুকই ‘আর্ট’ উনার কাছে। বাকি সবকিছু তো আছেই।

উনি ‘আর্ট’ করতেই চান – এইরকম না, কিন্তু কিছু করতেছেন যেহেতু ‘আর্ট’ ব্যাপারটা থাকে, বা রাখতে চান আর কি, কিছুটা।

২.
আমি অনেক রাইটাররে দেখছি, যারা মইরা যাইতে রাজি আছেন, কিন্তু বাংলা-ভাষা লেখবার কলকাত্তাইয়া যেই ভঙ্গি, সেইটা কোনদিনই ছাড়তে রাজি হইতে পারেন না; এই ভাষা-ভঙ্গিটাই ‘আর্ট’, উনাদের কাছে। তো, এইরকম অনেক ‘আর্ট’ আছে দুনিয়ায়। আর এইগুলা বেশিরভাগ সময় খুবই পলিটিক্যাল একটা জিনিস।

কিছুদিন আগে তামিম ইকবাল যখন বিরাট কোহলির লগে কথা কইতেছিলেন হিন্দিতে তখন প.বঙ্গের কেউ এইরকম কমেন্ট করছিলো যে, নর্থ ইন্ডিয়ান ক্রিকেটার’রে নিয়া এতো মাতামাতি কেন! কিন্তু দেখেন, তামিম ইকবাল তো ইন্ডিয়ান কেউ না! কিন্তু যেহেতু বাংলাদেশের সিটিজেন, তারে ‘বাংলা-ভাষা’র পক্ষের লোক বইলা মনে হইতে পারে; যে, দেখো নর্থ ইন্ডিয়ানরা তো ‘বাঙালি বাবু’ বইলা হাসে, তুমি অদেরকে কেনো প্রমোট করো! এইরকম অভিমান উনারা করতেই পারেন। কিন্তু জিনিসটারে ‘অভিমান’ না বইলা ‘দাবি’র জায়গা থিকা দেখতে শুরু করলে মুশকিল; আর ব্যাপারটা ঠিক পলিটিক্যাল দাবি হিসাবেও আটকায়া থাকে না, বরং একটা ‘আর্টের দাবি’ হিসাবে পারসিভড হইতে থাকে। আর এইরকম জায়গাতেই আটকায়া থাকার কথা না, বরং আরো ছড়াইয়া আছে আসলে ব্যাপারগুলা। (জয়া আহসান’রে যেই কারণে ‘আর্ট’ মনে হইতে পারে, পূর্ণিমা’রে না; ফেরদৌস’রে নেয়া যায়, মোশারফ করিম না, শাকিব খান, অনন্ত জলিল তো ‘হাইস্যকর’ 🙂 এইরকম।) এই কারণে, প.বঙ্গের লোকজনের হিন্দি-ঘৃণা’র ব্যবসা একসময় বাংলাদেশে খুব চলতো, এখনো টুকটাক চলা’র কথা; কিন্তু প.বঙ্গের লোকজনের এখন বুঝতে পারার কথা যে, এই হিন্দি-ঘৃণা দিয়া দিয়া ‘বাংলা-ভাষা বাঁচানো’ পসিবল না কখনোই! (কারণ, উনারা পলিটিক্যালি বহুত আগেই ডেড, হিন্দির কাছে সারেন্ডার কইরা বইসা আছেন! সাউথ ইন্ডিয়ান’রা যেমন কখনোই নেয় নাই, নিবেও না; যার ফলে উনাদের এইরকমের ‘মান-অভিমান’ খেলা লাগে না।…) এই কারণে দেখবেন, উনাদের ‘বাংলা-ভাষা’ও আর হয় না। এমনকি ‘কলকাত্তাইয়া কালচার’ বাংলাদেশে যেই পরিমাণ বেচা-বিক্রি হয়, প.বঙ্গেও এই মার্কেট নাই আর এখন, ‘বাংলা’ বেচতে কয়দিন কয়দিন পরে বাংলাদেশেই আসা লাগে উনাদের, এবং কয়দিন পরে পারমানেন্টলিই হিজরত করা লাগবে আসলে এইখানে।…

মানে, ‘আর্ট’ বইলা কোন ‘দূর আকাশের তারা’ আমরা বানাইতেছি – তা না; বরং খুব কোর কিছু পলিটিক্যাল ঘটনা এইখানে খুব সাটলভাবেই কাজ করে, সবসময়। এইখানে, কবিতায় আমার ‘সুন্দর ছোটবেলা’, আমার ‘টিনএজ লাভ’ বা ‘যৌবনের’ কথা আমি কইতেছি না খালি, একটা বা কিছু প্যার্টানের ভিতর দিয়া আমি কইতেছি; পারসোনাল এক্সপেরিয়েন্সটা কখনোই ‘আর্ট’ না, যদি না এইটা কোন না কোন পলিটিক্যাল আন্ডারস্ট্যান্ডিং বা হিস্ট্রি’র লগে রিলেটেড হইতে পারে।

‘আর্ট’ জিনিসটা এইরকম কোন না কোন পলিটিক্যাল এফিলিয়েশনের জায়গা থিকাই এমার্জ করে – এইটা আমার ক্লেইম না হইলেও, কোন এফিলিয়েশনের জায়গার বাইরে গিয়া টিইকা থাকতে পারে, এইটা আমার মনেহয় না।

৩.
কিন্তু তাই বইলা জিনিসগুলা সবসময় ক্লিয়ারলি আইডেন্টিক্যাল না যে, এইটার মানে এইটা, বা অইটার মানে সেইটা; কিন্তু ‘মানে’গুলা একজিস্ট করে একেকট সময়, একেকটা ফর্মে।

 

আনবিলিভেবল

দেখবো দেখবো কইরা দেখা হইতেছিল না; পরে দেইখাই ফেললাম, আনবিলিভেবল নামের এই মিনি সিরিজ’টা। 🙂

রেইপ নিয়া এই আর্টিকেল’টা লেখার জন্য পুলিৎজার প্রাইজ পাইছিলেন রাইটার’রা, ২০১৬ সালে। আম্রিকাতে রেইপের ইনভেস্টিগেশনে অনেক চেইঞ্জও নাকি আসছে, এই আর্টিকেল’টা ছাপা হওয়ার পরে। এই পুরা ব্যাপারটা নিয়া একটা বইও ছাপা হইছে, ২০১৮ সালে। তো, অই আর্টকেল’টা নিয়া বানানো হইছে এই মিনি সিরিজ’টা, ২০১৯ সালে। ১টা সিজন, ৮টা এপিসোড।

দেখতে গেলে যা হয়, অনেক জায়গাতে তো চোখ আটকায়া যায়। এইরকম কয়েকটা জিনিস’টা নিয়া বলি।

একটা হইতেছে, রিপিটেশন। মারিয়া’রে বারবার তার রেইপের কথা বলা লাগে; আর বলা মানে তো খালি বলা না, তারে মনে করাও লাগে; আর যখন মনে করি আমরা বা দেখি, তখন ঘটনা তো বারবার ঘটতে থাকে আসলে! (টিভি অ্যাডগুলা দেখবেন, এই চালাকি’টা করে। এখন নিউজগুলাও করে। অন্য অনেক কিছুই।…) এইরকম একটা বাজে ঘটনা, বারবার বলতে বাধ্য করাটা তো আরেকটা ক্রাইম! আর কোনরকম কমপ্যাশন বা এনগেইজমেন্ট ছাড়া শোনা’টাও খুবই ক্রুয়েল একটা জিনিস। আর এইসবের ভিতর দিয়া একজন রেইপের ভিক্টিমরে সোসাইটি বা তার চারপাশ না, বরং সিস্টেমটাই ভিক্টিম কইরা তোলে।

আর ইল্যুশন’টা কেমনে তৈরি হয় দেখেন, কনটেক্সট’টা দিয়া। যে, মারিয়া’র মধ্যে তো এক ধরণের বেয়াদবি আছে; শে অ্যাটেনশন চায়, এই কারণে শে বানায়া থাকতে পারে, রেইপের ঘটনা’টা – এইরকম অনুমান করাটা পসিবল হয়। মানে, কো-রিলেশন তো আছে ঘটনাগুলার বা আমাদের অ্যাটিটুডগুলার। যেমন, যে রেপিস্ট, দেখা যায় তার ডমিস্টিক ভায়োলেন্সেরও হিস্ট্রি থাকতে পারে – এইটা মিছা কথা না; কিন্তু যেই লোক ডমিস্টিক ভায়োলেন্স করে, সে-ই রেপিস্ট – এইরকম না। মানে, কেউ ড্রাগস করে বইলা ছিনতাইকারী না; কিন্তু অনেকে ড্রাগসের টাকা যোগাড় করার লাইগা ছিনতাই করে তো, এইরকম। মানে, যেই কো-রিলেশনগুলারে আমরা মিলাইতেছি, তার ভিতর দিয়া একটা ইল্যুশন বা রিয়ালিটি’রে তৈরি করতেছি! প্রসেস’টা তো একই! আমাদের কনশাসনেসের জায়গাটাতে আলাদা না করতে পারলে মুশকিলই।

মারিয়া ফোর্সড হয় একটা রিয়ালিটি’রে ইল্যুশন বলতে; একইভাবে অনেক ‘ইল্যুশন’ আছে, যেইটারে ‘রিয়ালিটি’ বলতে পারতেছেন না আপনি। এই জিনিস’টা ট্রমাটিক তো; মেবি পাগলামি’রও শুরু।… এই যে রিয়ালিটি বা ইল্যুশন, এর মাঝখানে দাঁড়ায়া থাকতেছে খালি একটা প্রমাণের সুতা। যে, প্রমাণ তো নাই! বা এতো দূরের জিনিস যে, প্রমাণগুলারে একসাথে করা যাইতেছে না, ভিজিবল করা যাইতেছে না!…

এইখানে দেখবেন, ‘সুফীজম’ বা ‘বুড্ডিজম’ বা ‘মিস্টক’ ব্যাপারগুলা চইলা আসে (অনেক সময় সাত্বনা হিসাবে, রিলিফের টুল হিসাবে বা অজুহাত হিসাবেও…), মানে যেইগুলা রেশনালিটি’র বাইরে, সেই স্পেইসগুলা রিলিভেন্ট হয়া উঠতে চাইতেছে। মানে, এইটা খালি রিয়ালিটি আর ইল্যুশন না, রেশনালিটি আর ইরেশনালিটি’র মাঝখানের স্পেইসটাও, যেইটা চাপা পইড়া থাকতেছে ‘প্রমাণের’ নিয়মগুলার ভিতর।

আমরা বুঝতে পারতেছি, এই নিয়মগুলা এনাফ না, কিন্তু তাই বইলা ঘটনাগুলা যে ঘটে না – তা তো না! যেইভাবে ঘটনাগুলা ঘটতেছে আমাদের দেখার জায়গাটা সেইগুলারে বাদ দিয়া যাইতেছে সবসময়, বা ধোঁকা দিতে পারতেছে; কিন্তু সেইটা তো মানতে পারা’র মতন কোন জিনিস না।

আর এই কারণে, চেইতা যাইতে পারা’টা দরকারি একটা ঘটনা। গ্রেস (পুলিশের ডিটেক্টিভ) টেগার্ট’রে ( সিবিআই’র অফিসার’রে) বিশ্বাস করতে পারে না এই কারণেই যে, কই, অর ভিতরে তো চেত’টা নাই! সে তো ফিল-ই করে না! সে হেল্প করবে কেমনে! মানে দেখেন, ইন্টেলেক্ট কোনভাবেই ইমোশনলেস ঘটনা না, বরং ইমোশনটারে কেমনে ফিল করবেন, ডিল করবেন, সেইটার ঘটনা।

এই রেইজ’টা বা চেইতা যাওয়া’টা আসতেছে অই জায়গাটা থিকা যে, যেইটা ‘সত্যি’ সেইটারে তো আমরা বলতে পারতেছি না! উল্টা এইটারে ‘সত্যি’ বইলা ভাবি বইলা ঝামেলায় পড়তে হইতেছে আমাদের!… এর স্ট্রেস’টা নিতে হইতেছে সবসময়ই আমাদেরকে। এক সময় একটা কালেক্টিভ ট্রেস, বা সোশ্যাল ট্রমা’র জায়গাও তৈরি হওয়ার কথা। Continue reading

১২ ই মে, ১৯৮৪ আর স্টিভ জবস: ফিউচার ইজ দ্য নিউ পাস্ট

১৯৮৪ নামে জর্জ অরওয়েলের একটা নভেল আছে; যেইখানে বলা হইছে, নতুন ধরণের সোসাইটি এমার্জ করবে; সবকিছু কন্ট্রোলড হবে, এই সেই। মানে, ১৯৮৪ একটা দাগ, নতুন রিয়ালিটির। নভেল’টা এখনো অনেক হিট।

কিন্তু ১৯৮৪ সালে আরেকটা ঘটনা ঘটছিল। স্টিভ জবস অ্যাপল কম্পিউটার লঞ্চ করছিলেন। উনি একটা টিভি অ্যাড বানাইছিলেন, যে ১৯৮৪ কেন স্পেশাল? সেইটা উনি রিভিল করার দাবি করছিলেন। 🙂 জর্জ অরওয়েল মেবি ১৯৮৪ সাল’রে জাস্ট একটা নিয়ার-ফিউচার হিসাবে দেখাইতে চাইতেছিলেন, অইরকম স্পেসিফিক কিছু হওয়ার কোন কারণ নাই। কিন্তু স্টিভ জবস এইটারে সিরিয়াসলি নিছিলেন; যে ১৯৮৪ সাল’রে যেহেতু সিগনিফিকেন্ট কিছু বলছিলেন জর্জ অরওয়েল, স্টিভ জবস তারে সিগনিফিকেন্ট কিছু বানানি’র দায়িত্ব’টা নিয়া নিলেন। বা যেইটা করলেন, নিজের কাজ’টারে অই বানানো-সিগনিফিকেন্ট’টার সাথে মিলায়া দিলেন!

যে একটা মিথ তো আছিল, ১৯৮৪ সাল নিয়া; তো, অ্যাপল হইতেছে অই মিথ’টা। মিথ’টা মিছা না, আমরা বরং বানাইতেছি মিথ’টারে। এইরকম।

তো, অঞ্জন দত্তের ১২ই মে’র মিথ’টা পুরাপুরি এইরকম না হয়তো অনেকের কাছে; কিন্তু কাছাকাছি রকমেরই। হইতে পারে তার একটা পারসোনাল কিছু, বা একটা ডেইটই। কিন্তু এই ১২ই মে’টারে যারা মনে করতে পারতেছেন, তারা এইরকমই বানাইতে চাইতেছেন মেবি, স্টিভ জবসের ১৯৮৪’রে মনে রাখার মতন একট্ জায়গা থিকাই। যে, ১২ই মে মালা যে চইলা গেছিল; এখন ১২ই মে’তে ‘ব্রেকাপ দিবস’ টাইপ বানাইলাম আমরা যেন কিছু। 🙂 তখন গান’টা যেমনই হোক, লাইনটা যা-ই হোক; আমাদের লাইফে আমরা ট্রু কইরা ফেলতে পারলাম!

[এইরকম আরো ছোট ছোট লোকাল মিথ আছে তো আমাদের লাইফে। আমরা যখন ক্লাস সিক্স-সেভেন পড়ি, রেলওয়ে স্কুলে; তখন এক প্রেমিক তার প্রেমিকার বিয়ার দিনে প্রেমিকার বাড়ি থিকা তার জামাইয়ের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তার পাশে বাড়ির দেয়ালে দেয়ালে ছোট ছোট কবিতা লিইখা রাখছিলেন আলকাতরা দিয়া; এইরকম একটা কবিতা ছিল –

ঘড়ি বলে টিক টিক
ভালোবাসা নয় ঠিক
ঘড়ি বলে টিক টিক
ভালোবাসি তা-ও ঠিক

তো, উনারও এইরকম কোন ডেইট ছিল যে, অক্টোবর সামথিং বিশ্ব ভালোবাসা দিবস; কিন্তু সেইটা আর হইতে পারে নাই; নদী-ভাঙনে পুরা রেলওয়ে কলোনি-ই মেঘনা নদীতে ডুইবা গেছিল; তার আগে তার দেয়ালের কবিতা, ডায়ালগও মুইছা ফেলছিল মনেহয়, বাড়ির মালিকেরা। তো, অই সময়ে যদি ১৪ই ফেব্রুয়ারি’র ট্রাডিশন থাকলে বেটার হইতো মনেহয়। মানে, বড় কোন অকেশনের লগে মিলাইতে পারলে! ]

এই যে হইতে পারে তো! আর হয় যে, এইটার সবচে বড় প্রমাণ (আর এখন পর্যন্ত একজন-ই আমার কাছে, তবে খুঁজলে আরো অনেক পাওয়া যাবে হয়তো) হইতেছেন স্টিভ জবস। Continue reading