রুনা লায়লা

রুনা লায়লা হইতেছেন ফার্স্ট সিঙ্গার, যিনি বাংলাদেশি আইডেন্টিটি’রে সামনে নিয়া আসতে পারছেন। কথাটা বাড়াবাড়ি মনে হইলেও আসলে সত্যি। দেখেন, আব্বাসউদ্দিনরে দিয়া শুরু এক রকমের বাংলাদেশি গানের; কিন্তু অইটা লোকগীতি বা ফোকলোর হিসাবেই রয়া গেছে। জসীমউদ্দিন’রাও অই টোনেই লেখছেন এবং অই ‘লোকগীতি’ আইডেন্টিটি নিয়া খুশি ছিলেন। কাজী নজরুল ইসলামও কলকাতার ‘বাঙালি মুসলমান’ একটা আইডেন্টিটি, যারে পরে বাংলাদেশের লগে নেয়া গেছে। এই দুইজন হইতে পারতেন স্ট্রং কন্টেনডার। কিন্তু বাংলাদেশ তখনো ‘বাঙালি’ আইডেন্টিটি থিকা বাইর হইতে পারে নাই।* পাকিস্তান আমলে গিয়া একটু একটু কইরা স্পষ্ট হইতে শুরু করছে, অই জায়গাটা।

তো, ইন্টারেস্টিং জিনিস হইলো, রুনা লায়লার জন্ম বাংলাদেশের সিলেটে হইলেও, উনি কিন্তু থাকছেন, বড় হইছেন, সিঙ্গার হিসাবে এস্টাবলিশ হইছেন, নাম কামাইছেন পশ্চিম পাকিস্তানে, করাচিতে। কিন্তু অইখানে ‘বাঙালি’ আইডেন্টিটি নিয়াই ছিলেন। নুরজাহান যে রুনা লায়লারে হেইট করতেন, এই আইডেন্টিটিই এর একটা বড় কারণ হওয়ার কথা। যেমন দেখবেন, বলিউডে কোন পাকিস্তানি গায়ক গিয়া সুবিধা করতে পারে নাই। এইটা রুনা লায়লাও টের না পাওয়ার কথা না। এই কারণে ১৯৭৪ সালে উনি ঢাকাতে চইলা আসছিলেন পারমানেন্টলি।

কিন্তু ঢাকার লোকজন ‘বাঙালিপণা’র জায়গা থিকা উনারে নেয় নাই। চিন্তা করতে পারেন, রেডিও’র লোকজন উনারে অডিশন দিতে কইছিল, এনলিস্টেট সিঙ্গার হওয়ার লাইগা! কিন্তু এইগুলা কইরা নিজেরাই ছোট হইছে আসলে। কারণ রুনা লায়লার ঢাকার বা বাঙালি গায়িকা হওয়ার কোন দরকার ছিল না। এর আগে থিকাই উনি ‘ইন্টারন্যাশনাল সিঙ্গার’ ছিলেন। মুম্বাইয়ে উনি গান গাইছেন, হিট ছিলেন। (খেয়াল করেন, কলকাতা না রিজিওনাল কোন স্পেইস না।) করাচি’তে উনি মশহুর ছিলেন। ঢাকায় আইসা উনার প্রমাণ করার কিছু ছিল না।
তারপরও বাংলাদেশি গানে উনার মেজর কিছু কন্ট্রিবিউশন আছে। এটলিস্ট তিনটা সিগনিফিকেন্সের কথা আমি এইখানে বলতে পারি।

ফার্স্টেই উনার “ফোক সং”য়ের** কথা আসবে। “ফোক সং” বা “লোকগীতি” বলতে যেই বিষাদ, গ্রামীন দুঃখবোধগুলারে আমরা চিনি (ইনক্লুডিং লালন-সঙ্গীত), রুনা লায়লা অই জায়গা থিকা কমপ্লিট একটা ডিপার্চার। খুবই হাসি-খুশির, ইরোটিক-ইশারাঅলা গানগুলা উনি গাইছেন। “বন্ধু তিনদিন তোর বাড়িত গেলাম…” “ইস্টিশনের রেলগাড়িটা…” “আগে জানলে তোর ভাঙ্গা নায়ে চড়তাম না…” এইগুলা তো উনার সিগনেচার সং। এই সব গানেই সেলিব্রেশনের একটা ঘটনা আছে। এই সেলিব্রেশন যে “ফোক সংগুলা”তে ছিল না – তা না, কিন্তু এই আনন্দ’টা যে আছে, সেইটা ট্রান্সফর্ম হইতে পারে নাই, রেডিও’তে, টিভি’তে, মিডলক্লাসের কালচারাল রিকগনিশনের জায়গাগুলাতে। রুনা লায়লা এই কাজটা করছেন। এই কারণে উনারে হেইটও করা হইছে আসলে। ঢাকার রবীন্দ্র-পূজারী’রা না পারছেন উনারে নিতে, না পারছেন উনারে ফালায়া দিতে। আর উনাদের নেয়া বা না-নেয়াতে কিছু যায়-আসে না আসলে। এইখানে একটা জিনিস খুব ইন্টারেস্টিং, খেয়াল করবেন, নজরুল গীতি গাইলেও রবীন্দ্র-সঙ্গীত কখনোই গান নাই রুনা লায়লা। গান গাইতে আইসা, আর্ট করতে গিয়া অই নাক-উঁচা এলিটগিরি উনারে করা লাগে নাই কখনোই। বরং উনার গায়কী’র মধ্যে যে জয়ফুলনেস, অইটা এক রকমের “রবীন্দ্র-বিরোধী” একটা ঘটনাই। Continue reading

১২ ই মে, ১৯৮৪ আর স্টিভ জবস: ফিউচার ইজ দ্য নিউ পাস্ট

১৯৮৪ নামে জর্জ অরওয়েলের একটা নভেল আছে; যেইখানে বলা হইছে, নতুন ধরণের সোসাইটি এমার্জ করবে; সবকিছু কন্ট্রোলড হবে, এই সেই। মানে, ১৯৮৪ একটা দাগ, নতুন রিয়ালিটির। নভেল’টা এখনো অনেক হিট।

কিন্তু ১৯৮৪ সালে আরেকটা ঘটনা ঘটছিল। স্টিভ জবস অ্যাপল কম্পিউটার লঞ্চ করছিলেন। উনি একটা টিভি অ্যাড বানাইছিলেন, যে ১৯৮৪ কেন স্পেশাল? সেইটা উনি রিভিল করার দাবি করছিলেন। 🙂 জর্জ অরওয়েল মেবি ১৯৮৪ সাল’রে জাস্ট একটা নিয়ার-ফিউচার হিসাবে দেখাইতে চাইতেছিলেন, অইরকম স্পেসিফিক কিছু হওয়ার কোন কারণ নাই। কিন্তু স্টিভ জবস এইটারে সিরিয়াসলি নিছিলেন; যে ১৯৮৪ সাল’রে যেহেতু সিগনিফিকেন্ট কিছু বলছিলেন জর্জ অরওয়েল, স্টিভ জবস তারে সিগনিফিকেন্ট কিছু বানানি’র দায়িত্ব’টা নিয়া নিলেন। বা যেইটা করলেন, নিজের কাজ’টারে অই বানানো-সিগনিফিকেন্ট’টার সাথে মিলায়া দিলেন!

যে একটা মিথ তো আছিল, ১৯৮৪ সাল নিয়া; তো, অ্যাপল হইতেছে অই মিথ’টা। মিথ’টা মিছা না, আমরা বরং বানাইতেছি মিথ’টারে। এইরকম।

তো, অঞ্জন দত্তের ১২ই মে’র মিথ’টা পুরাপুরি এইরকম না হয়তো অনেকের কাছে; কিন্তু কাছাকাছি রকমেরই। হইতে পারে তার একটা পারসোনাল কিছু, বা একটা ডেইটই। কিন্তু এই ১২ই মে’টারে যারা মনে করতে পারতেছেন, তারা এইরকমই বানাইতে চাইতেছেন মেবি, স্টিভ জবসের ১৯৮৪’রে মনে রাখার মতন একট্ জায়গা থিকাই। যে, ১২ই মে মালা যে চইলা গেছিল; এখন ১২ই মে’তে ‘ব্রেকাপ দিবস’ টাইপ বানাইলাম আমরা যেন কিছু। 🙂 তখন গান’টা যেমনই হোক, লাইনটা যা-ই হোক; আমাদের লাইফে আমরা ট্রু কইরা ফেলতে পারলাম!

[এইরকম আরো ছোট ছোট লোকাল মিথ আছে তো আমাদের লাইফে। আমরা যখন ক্লাস সিক্স-সেভেন পড়ি, রেলওয়ে স্কুলে; তখন এক প্রেমিক তার প্রেমিকার বিয়ার দিনে প্রেমিকার বাড়ি থিকা তার জামাইয়ের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তার পাশে বাড়ির দেয়ালে দেয়ালে ছোট ছোট কবিতা লিইখা রাখছিলেন আলকাতরা দিয়া; এইরকম একটা কবিতা ছিল –

ঘড়ি বলে টিক টিক
ভালোবাসা নয় ঠিক
ঘড়ি বলে টিক টিক
ভালোবাসি তা-ও ঠিক

তো, উনারও এইরকম কোন ডেইট ছিল যে, অক্টোবর সামথিং বিশ্ব ভালোবাসা দিবস; কিন্তু সেইটা আর হইতে পারে নাই; নদী-ভাঙনে পুরা রেলওয়ে কলোনি-ই মেঘনা নদীতে ডুইবা গেছিল; তার আগে তার দেয়ালের কবিতা, ডায়ালগও মুইছা ফেলছিল মনেহয়, বাড়ির মালিকেরা। তো, অই সময়ে যদি ১৪ই ফেব্রুয়ারি’র ট্রাডিশন থাকলে বেটার হইতো মনেহয়। মানে, বড় কোন অকেশনের লগে মিলাইতে পারলে! ]

এই যে হইতে পারে তো! আর হয় যে, এইটার সবচে বড় প্রমাণ (আর এখন পর্যন্ত একজন-ই আমার কাছে, তবে খুঁজলে আরো অনেক পাওয়া যাবে হয়তো) হইতেছেন স্টিভ জবস। Continue reading

এ. আর. রহমান ও হিন্দি গান

আল্লা রাখা (এ. আর.) রহমানের পয়লা গান শোনার পরই থিকা আমি উনার মিউজিকের মুরিদ হইছিলাম। রোজা সিনেমাতে উনার সুর করা গান শুনছিলাম পয়লা, এরপর থিকা উনার খুব কম গানই আমি মিস করছি। খারাপ ভালো বা পছন্দ অপছন্দের ব্যাপার তো আছেই, কিন্তু উনার বেশিরভাগ গানই আমি শুনছি। যে কোন গ্রেট আর্টিস্টের মত উনি ট্রাই করছেন সবগুলা জনরাতেই উনার ছাপ রাখতে।

তো, আমরা যখন উনার গান শুনতাম, নাইটিইসের দিকে, তখন হিন্দি গান শোনা একটা দেশ-বিরোধী, বাংলা কালচারের এগেনেস্টের একটা ব্যাপার আছিলো। এখনো আছে আসলে। ইন্ডিয়া-বিরোধিতা আর হিন্দি সং পছন্দ না হওয়া একই ব্যাপার হয়া আছে।* কেন এইরকম হইয়া আছে, সেইটা ভাবতে গিয়া মনে হইলো, হিন্দি গানের দুইটা জিনিস আছে, যেইটা সো-কল্ড হাজার বছরের বাঙালি ঐহিত্যের লগে কন্ট্রাডিক্টরি।

এক হইলো, ইসলাম-ফোবিয়া। হিন্দি গানে যেই পরিমাণ ইসলামিক বিষয়-আশয় আছে এবং পপুলারভাবে (মানে, মিডলক্লাস টু লোয়ারক্লাস, সবারই সাবস্ক্রাইব করার স্পেইসটা আছে, আপনারে মুসলমান বা হিন্দু হওয়াটা জরুরি না) সেইটা ইসলামি রাষ্ট্র বাংলাদেশেও নাই, এতোটা। মানে, ধর্মের জায়গা থিকা না, একটা মিউজিকের একটা জনরা হিসাবেই। বাংলাদেশ রাষ্ট্র হওয়ার পরে পাকিস্তানি হয়া যাওয়ার ডরে আমরা অইরকম করতেও ডরাই মনেহয়। কিন্তু আমার ধারণা, হিন্দিতেও যে এইসব আছে, এইটা একটা রাস্তা দেখায় বা সাহস দেয় কিছুটা, বাংলাদেশের মিউজিশিয়ানদের। তো, এই কারণে হিন্দি গানও এতোটা ভালো হইতে পারে না আর কি! Continue reading

টিয়ার্স ইন হ্যাভেন

আমার একটা মুশকিল আছে, খালি ‘কারণ’ বলতে ইচ্ছা করে। গতকালকে হাসনাত শোয়েব একটা স্ট্যাটাসে জিগাইলেন ইমাজিন নাকি টিয়ার্স ইন হ্যাভেন? ভোট না ঠিক, প্রেফারেন্সই জানতে চাইছেন হয়তো, আমি টিয়ার্স ইন হ্যাভেন লিখছি কমেন্টে, অনেকেরই কমেন্ট টিয়ার্স ইন হ্যাভেন। তখন বা তার আগেও মনে হইতেছিলো, কেন টিয়ার্স ইন হ্যাভেন।

ইমাজিন আমার পছন্দ না, এর সেকুল্যার, এনলাইটমেন্টের ড্রিমের কারণে, এইটা নিয়া লিখছিও আমি। কিন্তু টিয়ার্স ইন হ্যাভেনের সাথে যদি কম্পেয়ার করেন, একটা হইতেছে, পলিটিক্যাল আর আরেকটা পারসোনাল ফিলিংসের ঘটনা (গ্রসলিই বলতেছি)। তার মানে এইটা না যে, পারসোনাল জিনিসগুলি বেটার আর্ট হইতে পারে বা এইরকমকিছু; বরং এই যে পারসোনাল – এইটা অনেকবেশি ইন্ডিভিজ্যুয়াল, পিপল যেইটারে কানেক্ট করতে পারে; ইমাজিনে যেইরকম কমন একটা জায়গা, যেইখানে ইন্ডিভিজ্যুয়াল’রে কানেক্ট করতে কয়। একটা পেইন অলরেডি আছে, আর একটা ড্রিম সাবস্ক্রাইব করতে বলে। একটা ‘অন্যায়’ ইমিডিয়েটলি ফিল করা যায়, যেইখানে ‘ন্যায়’ জিনিসটা চেইঞ্জ হইতে পারে। এইরকম।

দুইটাই ফিউচার নিয়া বলা, কিন্তু ইমাজিন’টা উইথইন টাইম, আর টিয়ার্স’টা হইতেছে টাইমের পরে গিয়া বলা। Continue reading

#রিয়ালিটি #গান #আগে_যদি_জানতাম #লাকি_আখন্দ #শম্পা_রেজা #গাব্রিয়েল_সুমন #এলিটিজম #ফোক #স্নবারি #ঘটনা #ফিলিংস #ল্যাঙ্গুয়েজ #জানা #অ_জানা #ইন্টেলেকচুয়াল #ওয়াজ #হানিফ_সংকেত #ভঙ্গিমা

যেইভাবে আমরা রিয়ালিটি’টারে দেখি সেইটা খুবই ভচকাইন্না একটা ব্যাপার। এইটা অনেকবারই মনে হইছে। ব্যাপারটা আবার ট্রিগার করছে কিছুদিন আগে যখন শুনছি শম্পা রেজা’রে নিয়া লাখী আখন্দ ‘আগে যদি জানতাম…’ গানটা লিখছিলেন বা সুর করছিলেন। গাব্রিয়েল সুমন জানাইছিলেন এই ইনফরমেশন, ফেসবুকের একটা স্ট্যাটাসে। মানে, এই জাইনা যাওয়াটা, গানটারে তো একরকমের রিয়ালিটির ভিতরেই রিডিউসই করে; যে, ‘ও আচ্ছা, এইটা লাকি আখন্দ আর শম্পা রেজার কাহিনি!’

হোয়ার অ্যাজ গানটা তো আর ওইটুকই না। শম্পা রেজা’র তো নাক উঁচা, উনার এই এলিটিসজমরে সুন্দর মনে হইতো; এখনো অনেককিছুই সুন্দর হয়া আছে, থাকতে পারে, পারতেছে। কিন্তু একটা এলিটিজম যে এমবেডেড হয়া আছে শম্পা রেজা’র ইমেজের সাথে (আমার কাছে) সেইখানে এই গানটারে এটাচ করাটা মুশকিলেরই; নট দ্যাট যে, গানটার মধ্যে ফোক টোনের স্নবারি’টা নাই (ফোকলোর – এই ব্যাপারটাই তো স্নবিশ, আইডিয়ার দিক থিকা) বা ঘটনাটা এইরকমই, এর বাইরে কিছু নাই; কিন্তু লাকি’র তো মনে রাখার কথা কিছু একটা; লিখতে গেলে ‘রিয়েল’ (যেইটা ইল্যুশনারি একইসাথে) একটা কিছু লাগে। লাকি’রে জিগাইলেও উনি কইবেন যে, এইটা মিছা কথা না, শম্পারেই ভাবছিলেন উনি। ওইটা নিয়াই মুশকিলটা।

কোন একটা রিয়ালিটিরে বা ঘটনারে বা ফিলিংসরে আমরা ল্যাঙ্গুয়েজে ট্রান্সফার করতেছি – ব্যাপারটা এইরকম না। এইরকম ‘ইচ্ছা’ তো থাকতেই পারে (সবসময় যে থাকতেই হবে, এইটা নেসেসারি না); কিন্তু থ্রু দ্য প্রসেস যেইটা ক্রিয়েট হইতেছে সেইটা রিয়ালিটি বা ঘটনা বা ফিলিংসটা না। বরং উল্টাটা, এইরকম একটা ‘ইচ্ছা’ বা ‘ফিলিংস’ আছে… আমরা কানেক্টেট হইতে চাইতেছি। আমরা যে জানি, আমরা জানি না – এইটা তো জানি-ই। সেই জানাটার কাছে যাইতে চাইতেছি অ-জানার ভিতর দিয়া। এইরকম একটা ঘটনা হইতে পারে মনেহয়।
Continue reading