মার্চ ০৮, ২০১৮।

এইটা নিয়া ভাবছিলাম কয়দিন আগে ছাত্রলীগের (ছাত্র শিবিরের চাইতেও বাজে একটা নাম হইতে যাইতেছে এইটা…) পোলামাইয়া’রা যখন ঢাকা ইউনির্ভাসিটি’র ভিসি’রে বাঁচাইতে গেলো। তখন মেবি একটা নিউজে আইছিলো যে, ছাত্রলীগের কেউ একজন কইতেছে, কেন তারা (চন্দ্রবিন্দু দেয়া যাইতো, দিলাম না) ‘বাম ছাত্র-সংগঠনের’ (বালের বাংলা-ভাষা) পোলাদেরকে পছন্দ করে না; কারণ, তারা মাইয়াদের সাথে মিশতে পারে, আড্ডা দিতে পারে… মানে, শোয়া বা ফ্রি-সেক্সের কথাই বলতে চাইছে আসলে। মানে, সলিড পোলা হইয়াও অরা এই বেনিফিট পায় না, কিন্তু বেইট্টা টাইপ পোলাগুলি এইটা পায় আর পাইতেই থাকে!

২.
এইটার পয়লা ‘দোষ’ আমি অস্কার ওয়াইল্ড’রে দিতে চাই। উনার একটা ডায়ালগ আছে যে, ‘যারে ভালোবাসে কেউ, সে গরিব কেমনে হয়!’ মানে, ট্যান্জিবল টাকা-পয়সা বা পাওয়ার’রে ইন-ট্যান্জিবল রিলেশনশীপের কম্পিটিটর বানায়া ফেলেন উনি, এইভাবে। অবশ্য রিলেশনও এতোটা ইন-ট্যান্জিবল না আসলে বা টাকা-পয়সা বা পাওয়ার’রে যতোটা টান্জিবল ভাবা যায়। এই ইন্টার-সেকশনটা রিভিল করার লাইগা উনারে মাফ কইরা দেয়া যায়।

কিন্তু যেইভাবে জিনিসগুলি ইন্টার-অ্যাক্ট করে একটা আরেকটার সাথে, সেই জায়গাগুলি ইন্টারেস্টিং। এক তো হইলো পাওয়ার থাকলে এইসব রিলেশন আপনে পাইতেই পারেন; দ্যান আগেরদিনের বাংলা-সিনেমার করুণ ভিলেনদের কথা ভাবেন, যাঁরা (চন্দ্রবিন্দু দিলাম ছদকা হিসাবে) নায়িকা’র শরীর পাইতে গিয়া মন যে আর পাইতে পারতেছেন না, সেইখানে গিয়া তব্দা লাইগা যাইতেন।

এই ‘পাওয়া’র জিনিসটা রিলেশনশীপের জায়গাটাতে আইসা কল্পাস করতেছে না, কিন্তু আরেকটা রুলস অফ গেইমের মধ্যে চইলা আসতে হইতেছে তারে। পাওয়ার সরাসরি অপারেট করতে পারে না আর, রিলেশনশীপে। এই না পারা’টা এক ধরণের ফেইলওর হিসাবে পারসিভ করা লাগে তখন। যার ফলে পাওয়ার এক ধরণের ‘অ্যাক্টিভ উইমেন’-এর ধারণা’রে প্রমোট করতে হেল্প করার কথা। যেইখানে পাওয়ারের নিজেরে আর সিডিউস করতে হইতেছে না, বরং এতোটাই পাওয়ারফুল হয়া উঠতে পারতেছে যে, পাওয়ার’রে সিডিউস করা লাগতেছে। কিন্তু আফসোসের জায়গাটা মেবি এইখানে যে, এনাফ ‘অ্যাক্টিভ উইমেন’ ক্রিয়েট করা যাইতেছে না যারা পাওয়ার’রে সিডিউস করতে আগায়া আসবে; দেহ দিবে কিন্তু মন দিবে না। 🙂

Continue reading

গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাকের রিয়ালিটি আর বিনয় মজুমদারের ফ্যাণ্টাসি

ইন আওয়ার সেন্স অফ রিয়ালিটি, ফ্যান্টাসি ইজ মোর রিয়েল দ্যান দ্য রিয়ালিটি।

‘কনর্ভাসেশন উইথ গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক’ (সিগ্যাল, ২০০৬) বইটার একদম শেষদিকে (পেইজ ১৭০ – ১৭৩) পারসোনাল আলাপে বিনয় মজুমদার’রে নিয়া গায়ত্রী’রে জিগাইতে পারছিলেন ইন্টারভিউয়ার। খুববেশি কথা হয় নাই। ইন্টারভিউয়ার অনেক হেসিটেট করতেছিলেন। গায়ত্রী মনে হইছে বরং বলতেই চাইতেছেন কাহিনিটা; যে, দেখেন এইখানে কোন কাহিনি নাই! বিনয় মজুমদারও কইছেন কয়েকটা ইন্টারভিউ’তে যে, এইখানে তেমন কোন কাহিনি নাই আর তারপরে হাসছেন। এই হাসিটারেই নিতে পারছি আমরা। গায়ত্রী যতোই রিয়ালিটি’টারে বলতেছেন বিনয়ের ফ্যান্টাসিটা ততই রিভিল হইতেছিলো যেন আরো।

গায়ত্রী কইছেন যে, দেখেন, উনার সাথে আমার কখনোই তেমন কোন কথা-বার্তা হয় নাই, প্রেম হওয়া তো দূরের কথা! উনি একটাকিছু ইমাজিন কইরা নিছেন, আমার নামটা বা এগজিসটেন্সটারে কল্পনা কইরা নিছেন। এইখানে আমি তো নাই! এমনকি বিনয়ও কখনো দাবি করেন নাই যে, উনাদের প্রেম আছিলো। কইছেন, বিনয়ের হাইট আছিলো ৫ ফুট ৩ ইঞ্চি আর গায়ত্রী আছিলেন ৫ ফুট ৯ ইঞ্চি – এইটুকই। খালি একটা বইয়ের কিছু কবিতা, তারে ভাইবা লেখা, যে আসলে শে না, তাঁর একটা ভাবনা। গায়ত্রী এইভাবে দেখছেন, বলছেন। যেইটা খুবই ট্রু।

বিনয়ের দাবিও ওই দূর থিকা দেখা-ই। কিন্তু এই দেখাটারে উনি রিয়ালিটি ভাবছেন। কিছু যে ঘটছে – এই দাবি উনারও নাই। বিনয় গায়ত্রী’রে নিয়া কবিতা লিখছেন। দাবি এইটাই। এখন এই গায়ত্রী যে ইমাজিনারি কিছু কিনা সেইটা নিয়া কথা বলেন নাই খুবএকটা। বলছেন, ওই যে – উনি, উনারে নিয়া লিখছি আমি। তো, যারে নিয়া লেখছেন, শে তো জানে না কিছু।

আবার অনেক সময় এইরকম হয়, আপনি কাউরে নিয়াই লিখতেছেন। কিন্তু সেইটা আসলে আরেকজনের কপি, তারে; মানে, যারে লিখতে চাইতেছেন সে/শে আরেকজনের কথা-ই মনে করাইলো। ধরেন, আরেকটা বনলতা সেন বা কাবজাব একটাকিছুই হইলো। বা একজেক্ট যেই রিয়ালিটি সেইটা লেখা তো কখনোই পসিবল না। Continue reading

মিনিং

এই জিনিসটারেই আমি সবচে বেশি ডরাই এখন; ‘মিনিং’ তৈরির করার অথরিটি’টারে। আফ্রিদা’র মরা’র খবর যেইভাবে প্রথম আলো পত্রিকায় ছাপা হইছে; যে উত্তরা’র একটা বাসায় ভাড়া থাকা, ব্র্যাক ইউনির্ভাসিটিতে ফার্স্ট ইয়ারে পড়া একটা মেয়ে। আরো দুইটা মেয়ে’র মরা’র খবরের সাথে, একটা ইস্যু হিসাবে যে, দেখেন, শহরে মেয়েদের কি বাজে অবস্থা!

নো মোর অ্যান আর্টিস্ট! এই যে আইডেন্টিটি’টা হাজির করলো প্রথমালো, এইটা মিথ্যা না; স্ট্রিকলি সোশ্যাল একটা ‘মিনিং’। যেইটুক বলা হইলে একটা জিনিস ‘সত্যি’ হইতে পারে, তার ভিতরে ঘটনা’টারে আটকায়া ফেলা। আমিও রোড অ্যাকসিডেন্টে মরলে, ‘বেসরকারি কর্মকর্তা’ হইতে পারবো; প্রথমালো’তে না পারলেও কোন অনলাইন নিউজপোর্টালে, নিউজ ক্রাইসিসে থাকা কোন সাব-এডিটরের ঘন্টার টার্গেট ফুলফিল করার লাইগা। খুবই ‘সত্যি’ কথা হবে সেইটা। কিন্তু এইটারে ‘মিনিং’ হিসাবে পারসিভ করাটাই সমস্যা।

তো, মজার জিনিস হইলো, এই ভোকাবুলারিগুলি এখন জানি আমরা। এই কারণেই, এই ন্যারেটিভগুলির ভিতরে আমরা আর আটাইতে পারি না নিজেদেরকে। কিন্তু কে কেমনে মোকাবিলা করি – সেইটাই ঘটনা হয়া উঠে। ব্যাপারটা সো-কল্ড মেইন মিডিয়া ভার্সেস সোশ্যাল মিডিয়া না। এইটা হইলো একটা ন্যারেটিভের ভিতর একটা ঘটনারে হাইড করা। এইভাবে সার্টেন ইস্যু, সার্টেন ইমেজ, সার্টেন মিনিংয়ের কাছে শব্দগুলি আর সোসাইটি বন্ধক পইড়া থাকেও না কোনদিন। বরং যারা আমরা শব্দগুলিরে, ঘটনাগুলিরে মাইরা ফেলতে চাই, ওরা-ই একদিন আমাদেরকে মাইরা ফেলতে পারে! হিস্ট্রি তো স্ট্যাটিক কোন জিনিস না। কিন্তু একটা রিডিউসড ন্যারেটিভের মতো বাজে জিনিস আর কিছু হইতে পারে না আসলে।

Continue reading

ভাষা’র জেলখানা

।। কারাগারের রোজনামচা ।। শেখ মুজিবর রহমান ।। বাংলা একাডেমি ।। মার্চ, ২০১৭ ।।

বইটা কিনার পরে পড়া হয় নাই। এরপরে কয়েক পেইজ পড়ছিলাম। পড়ার ইচ্ছা হয় নাই আর। কিন্তু কয়েকটা পেইজ পড়ার সময় কিছু জিনিস চোখে পড়ছিলো, দাগ দিয়া রাখছিলাম। তো, আরেকবার পড়া শুরু করার আগে ভাবলাম জিনিসগুলি বইলা রাখি।

—————–

“জেলখানায় পাগলা গারদ আছে তার কাছেরই সেলে তাঁকে বন্দি রাখা হয়েছিল।” (শেখ হাসিনা, পেইজ – ১৪)

পাগলদেরকে যে পছন্দ করতেন উনার বাপ সেইটা নিয়াই ভূমিকাতে বলতেছিলেন শেখ হাসিনা। কিন্তু এইটার পলিটিক্যাল জায়গাটা নিয়া কনশাস হন নাই যে, কেন তারে পাগলদের কাছের সেলে রাখা হইলো? এইটা একটা থ্রেট তো অবশ্যই। ফুকো’র কারণে সোসাইটির পাওয়ার স্ট্রাকচারের লেবেলিংয়ের মধ্যে ক্রিমিনাল আর পাগল’রা যে কাছাকাছি রকমের জিনিস – এইটা তো আমরা জানি-ই এখন। তখনো, থিওরি জানার আগেই, এইটা প্রাকটিসের ভিতর আছিলো। যে, পাগল বানায়া জেলখানায় রাইখা দিতে পারে উনারে। বা পাগলদের সাথে রাখতে রাখতে পাগল বানায়া দেয়া যাইতে পারে। এইরকম কাছাকাছি রকমের পসিবিলিটিগুলিরে পলিটিক্যালি যে ট্রাই করা হয় নাই – তা তো না! one bird flew over the cuckoo’s nest সিনেমাটা তো আছেই। মানে, ক্রিমিনালিটি আর পাগলামি – খুবই কাছাকাছি রকমের জিনিস। এইটারে পলিটক্যালি মার্ক না করলে মুশকিল।… তো, এর বাইরে জেলখানায় গিয়া পাগল হইছেন তো অনেকে। আবার অনেকে ‘পাগল’ হওয়ার কারণে জেলখানা থিকা ছাড়াও পাইছেন। লুইস আলথুসারেরই এইরকম হইছে।

“সাবজেল দুইতিন মাসের সাজাপ্রাপ্ত লোক ছাড়া রাখে না। ডিস্ট্রিক্ট জেলে পাঠিয়ে দেয়। প্রায় তিন বছরের উপর জেল হলে কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠাইয়া দেয়।” (পেইজ ২৭)

খুবই নিরীহ বাক্য। কিন্তু ‘পাঠিয়ে’ আর ‘পাঠাইয়া’ শব্দ দুইটা খেয়াল করেন, আরেকবার পইড়া। এডিটরদের ‘ভুল’ এইরকম মনেহয় না আমার। মানে, হইলে হইতেই পারে, কিন্তু যদি দুইবার ‘পাঠিয়ে’ বা দুইবারই ‘পাঠাইয়া’ হইতো তাইলে কথাটা হইতো না ওইরকম। এইরকম ‘ভুল’ যে কতো দরকারি জিনিস! এইরকম ভালো একটা ‘প্রমাণ’ পাইয়া ভাল্লাগছে অনেক। মানে, আপনি ‘পাঠিয়ে’ লিখলে সারাজীবন একই কাজ কইরা যাইতে হবে – এইটা খুবই ভুল জিনিস আসলে। Continue reading

বই শুরু’র আগে… [রুমি’র কাহিনি]

চিটাগাং গেছিলাম ঘুরতে, ফয়েস লেকের রিসোর্টে থাকছিলাম দুইদিন। সেকেন্ড দিনে জিইসি মোড়ে আইসা ব্যাংকের পুরান অ্যাকাউন্ট ক্লোজ কইরা জামালখানে বইয়ের দোকানে গিয়া বই কিনছিলাম কয়েকটা। রুমির কবিতা এর মধ্যে একটা। ‘RUMI Selected Poems’, Coleman Banks এর অনুবাদ করা [লগে John Moyne, A.J.Arberry আর Reynold Nicholson আছিলেন]। পেঙ্গুইন বুকস বইটা ছাপাইছিলো ১৯৯৯-এ, এর আগে হার্পার কলিন্স ছাপাইছিলো ১৯৯৫-এ। আমি পাইছি ২০০৪ এর রিপ্রিণ্ট ভার্সনটা।  কক্সবাজার যাওয়ার পথে পড়লাম, ঢাকায় ফিরার পথে আর ঢাকায় ফিরার পরে। পড়তে পড়তে মনে হইলো, কাহিনিগুলি বাংলায় লিখি। 

ইংলিশ অনুবাদে কাহিনিগুলি কবিতার ফরম্যাটে লেখা। কবিতা বলতে যেইরকম একটা অস্পষ্টতারে মিন করে সেই প্রি-অ্যাজিউমড ব্যাপারটারে মনেহয় এভয়েড করতে চাইছি আমি এইখানে। অনেকগুলি লিখলাম। অনেকগুলি পরে লিখবো বইলা দাগাইয়া রাইখা দিলাম। এইরকম করতে করতে মার্চ থিকা নভেম্বর, ২০১৬’র মধ্যে তেতাল্লিশ’টা কাহিনি বাংলায় লিখলাম। আরো কাহিনি আছে উনার লেখায়, কবিতায়।

এই কাহিনিগুলি খুব নতুন কিছু না। অন্য কোথাও হয়তো শুনছি বা পড়ছি। তবে কাহিনির ফ্যাক্টগুলি উইকিপিডিয়ার মতো অথেনটিক না। নিজের মতো কইরাই বলছেন। একটাকিছু বলতে চাইছেন উনি কাহিনি দিয়া, ঠিক এখনকার চালু ‘যুক্তি’ দিয়া না। যে, দেখেন এইরকম কিন্তু ঘটে আর এইটার মানে কিন্তু এইটা। আমাদের এখনকার সিচুয়েশনটারে যখন যুক্তি দিয়া ব্যাখ্যা করতে পারতেছি না আমরা তখন এইভাবে কেউ যখন একটা কাহিনি দিয়া ডিফাইনড কইরা দিতেছেন, সেইটা তো ভালো লাগে। মনেহয় দুনিয়াটা খালি ইউরোপিয়ান এনলাইটমেন্টের কলোনি না, আরো আরো টেরিটরি আছে। যারা যারা এইরকম ভাবেন না উনারাও এইরকম কেউ কেউ ভাবে বইলা আনন্দ পান মে বি।

‘অন্ধকারের হাতি’ নামে একটা কাহিনি লিখছেন রুমি (মানে, কাহিনিটা আরো অন্যান্য সোর্স থিকাও আমরা জানি), এইরকম: কয়েকজন হিন্দু লোক একটা হাতি দেখানোর লাইগা নিয়া আসলো একটা জায়গায় যেইখানে কেউ কোনদিন হাতি দেখে নাই। অন্ধকার একটা ঘরে যখন হাতিটারে দেখতে গেলো এক একজন, শুঁড় ধইরা কয়, এইটা তো পানির পাইপের মতোন; ঠ্যাং ধইরা কয়, এইটা তো মন্দিরের থামের মতোন, দাঁত ধইরা কয়, এইটা তো পোরসালিন দিয়া বানানো তলোয়ার (সে আবার খুশি হয়, এইরকম সুন্দর কথা কইতে পাইরা)… মানে, আমরা যট্টুক দেখি সেইটা দিয়াই পুরাটারে বুঝার কোশিশ করতেছি। কিন্তু যদি সবার হাতে একটা কইরা মোমবাতি থাকতো, যদি সবাই একসাথে অন্ধকার ঘরটাতে ঢুকতো, তাইলে আসল হাতিটারে দেখতে পাইতো।

তো, রুমি হইতেছেন একটা মোমবাতি। আশা করি উনার হাতিটারে দেখতে পারবো আমরা আবার, একদিন। Continue reading