নোটস: অগাস্ট, ২০২১ [পার্ট ২]

অগাস্ট ১২, ২০২১

খারাপ-কাজ, পাপ এবং অন্যায়

ধরেন কেউ একজন রিকশার ড্রাইভাররে, সিএনজি’র ড্রাইভাররে বা রাস্তার পাশের কোন দোকানদাররে গালি-গালাজ করলো, তার লোয়ার সোশ্যাল-ক্লাসের ফায়দা নিয়া নিজের রাগ তার উপরে ঝাড়লো। এইটা খারাপ কাজ। কিন্তু একস্ট্রিম পর্যায়ে না গেলে দুইজন মানুশের ঘটনাই। মাফ চাইলে বা সরি বললে অনেক সময় ঘটনার শেষও হয়া যায়।

আবার ধরেন, কেউ একটা ম্যারিটাল রিলেশন বা কমিটেড রিলেশনের মধ্যে থাইকা তারে না জানায়া অন্য মানুশদের সাথে সেক্সুয়াল রিলেশনে জড়াইলো এবং কন্টিনিউয়াসলি করতে থাকলো; এইটা খালি ‘খারাপ কাজ’ না, একটা ক্রাইম না হইলেও ‘পাপ’ বা ‘অনৈতিক’ ঘটনা। ইভেন, পরে জানাইলেও জিনিসটা একইরকম না। পলিগ্যামাস রিলেশনেও, আমার ধারণা, না-জানানোটা এথিক্সের বাইরের ঘটনাই, বা এইরকম আন-ইথিক্যাল কিছু জায়গা আছে নাস্তিকতাতেও, যারে ‘পাপ’ না কইলেও ‘অনৈতিক’ বলা যায়। মানে, নৈতিকতার কোডগুলা আলাদা হইতে পারে, কিন্তু নৈতিক বইলা কিছু নাই – এইটা ঠিক না। এইটা খালি ‘খারাপ কাজ’ না, কারণ এইটা দুইজন মানুশরেই ঘটনা না, এইখানে অন্য আরো মানুশ-জনও এফেক্টেড হয়। রাষ্ট্রীয় আইনে এর কোন শাস্তি না হইলেও, সমাজে মোটামুটি নিন্দার জিনিস।

কিন্তু ধরেন, সেই গোপন রিলেশনের মেজেস, অডিও, ভিডিও ফাঁস করার থ্রেট দিয়া কেউ হয়রানি করতে থাকলো, টাকা-পয়সা চাইতে থাকলো এবং নিতে থাকলো। এইটা আর ‘পাপ’ হিসাবে থাকে না তখন। এইটা হয়া উঠে ক্রাইম। কারণ, এইরকম কাজবাজ যদি বন্ধ করা না যায়, তখন অনেক মানুশই সাফার করবে। কিন্তু বাংলাদেশে যেইখানে সরকারিভাবে অর্গানাইজড ক্রাইম চলে, সেইখানে মনে হইতে পারে এইটা তো কিছুই না! একটা সমাজ, একটা রাষ্ট্র যখন অ্যাজ অ্যা হোল, ক্রিমিনালিটিরে গ্লোরিফাই করতে থাকে, ক্ষমতার একটা গর্ব হিসাবে শো করতে থাকে, তখন এইসব ছোট-খাট ক্রাইমরে জাস্টিফাইড মনে হওয়াটা নরমাল।

কিন্তু এই তিনটা জিনিসরে ব্লার কইরা ফেললে, মিশায়া ফেললে ‘বিচার’ এর জায়গাটা মুশকিল হবে। এইরকম আরো অনেক উদাহারণ অবশ্যই আছে। আমার ধারণা, যখন কেউ খারাপ-কাজগুলা করতে করতে অভ্যস্থ হয়া পড়েন, পাপের জায়গাতে পা দেয়া সহজ হয় তার জন্য; আর যখন কেউ পাপের জায়গাটাতে ডুইবা যান, ক্রাইমের সেন্সটারে গুলায়া ফেলেন, বা নিজের পজিশনরে অই পাপের জায়গা থিকা বুঝায়া ফেলতে পারেন, যার ফলে সহজ হয়, ক্রাইম করাটা।

সমাজে খারাপ-কাজ যেমন আছে, পাপের ঘটনা যেমন আছে, ক্রাইমও থাকবেই। বরং জায়গাগুলারে আমরা যতোটা স্পষ্ট এবং কনশাস করতে পারবো, তত বেটার; ব্যক্তির জায়গাটাতে।

২.
এখন আসেন, সমাজের জায়গাটাতে। যেইটা একটু বলতেছিলামও উপরে। একটা সমাজে এবং রাষ্ট্রে ক্রাইমগুলা যখন নরমালাইজ হইতে থাকে; ‘পাপ’ বা ‘অনৈতিক কাজ’ তখন প্রকাশ্য হইতে পারার একটা ভ্যালিডিটি পায় এবং খারাপ-কাজ করাটাই নর্মস হয়া উঠতে থাকে।
একটা উদাহারণ শেয়ার করতে পারি, কয়েকবছর আগে খেয়াল করছিলাম; ঢাকা শহরে অপরিচিত কারো সাথে একটু এগ্রেসিভ টোনে কথা-বলাটা হইতেছে নরমাল; তা নাইলে অপরপক্ষ ভাবতে পারে যে, আপনি মনেহয় কোন ফেভার চাইতেছেন বা সাবমিশন করতেছেন। লো-ভয়েস, কমপ্যাশনেট বিহেভ… এইগুলা মোটামুটি ‘ভীতিকর’ ব্যাপারই। এইরকম অভিযোগও শুনবেন, ভালো কইরা কথা বলতেছি বইলা কি দোষ করছি নাকি! মানে, এইরকমের একটা ব্যাপার খুব বেশি ভিজিবল না হইলেও একটা মেন্টাল স্ট্যাটাস হিসাবে আছে, বা থাকতে পারে।
তবে, সবচে বাজে যেই জিনিসটা হয় একটা বড় বড় ক্রাইম দিয়া ছোট ক্রাইমগুলারে জাস্টিফাই করার একটা স্পেইস তৈরি হয়। যে, রেইপেরই বিচার হয় না, উনি আসছে ম্যারিটাল রেইপ নিয়া কথা কইতে! এইরকম। 🙁

আর ‘পাপ’ বা ‘অনৈতিক’ বইলা যেই ব্যাপারগুলা, অইগুলাও চেইঞ্জ হয় তো! এমনকি অনেকসময় ভুলভাবেও আইডেন্টিফাইড হয়। স্পেশালি সমাজের মজুলম ক্লাস – গরিব এবং মেয়েদের ব্যাপারে। (মেয়েরা তো গরিব বইলাই অপ্রেসড আসলে। সমাজের কত % সম্পত্তির মালিক মেয়েরা? ৫% বেশি হওয়ার কথা না।…)

হিন্দু-সমাজে ‘অচ্ছুত’ যেইরকম, বাংলাদেশে গরিব’রা এইরকম সোশ্যালি আউটকাস্ট; দেখবেন, বাসার কাজের বুয়া এবং মালিক একই ধরণের প্লেট, কাপে খাবে না; বয়সে ছোট কেউও ইকনোমিক ক্লাসের কারণে তার চাইতে গরিব কারো সাথে খারাপ-বিহেভ করার ‘অধিকার’ রাখে। এইটা খুবই ডিপ-রুটেড একটা জিনিস। নারীদের বেলায় যেইরকম ভিজিবল যে, একটা সময় ‘নারী-শিক্ষা’ ছিল হারাম! গরিবদের জন্য হারাম না, কিন্তু কি দরকার অদের! এইরকম।

এইরকম ‘ট্রেডিশন’র জায়গা থিকা, এস্টাবলিশড ক্রাইমের জায়গা থিকা ‘পাপ’ ও ‘খারাপ কাজ’র জায়গাগুলা আইডেন্টিফাইড হয়, নরমালাইজ হয়।

আমি বলতে চাইতেছি, খারাপ-কাজ, পাপ আর অন্যায় একই জিনিস না এবং ব্যক্তির এই কাজগুলা সমাজের ভিজিবল বাস্তবতার সাথে রিলেটড ঘটনা, সবসময়।

৩.
এইটা পড়ার সময় পরীমনি’র কনটেক্সট’টারে মিলায়া ফেললে ভুল হবে। উনার সাথে যা করা হইছে, সেইটা উইথ-আউট এনি ডাউট একটা রাষ্ট্রীয় ক্রাইম। আপনি যত বড় সেলিব্রেটিই হন, যতই ‘আম্মা’ ডাকেন, এই জুলুমবাজ সরকারের ও তাদের সহযোগীদের কাছে মাথা নোয়াইয়া চলতে হবে – এইরকম ‘দৃষ্টান্ত’ তৈরি করার একটা ঘটনা। এর বাইরে অন্য কোনভাবে দেখতে চাওয়াটা হইতেছে মোস্টলি ইন্টেলেকচুয়াল বদমাইশি একটা।

অগাস্ট ১৩, ২০২১

বইপড়া

মানুশ যে কতো অদ্ভুত জায়গা থিকা সান্ত্বনা পাইতে পারে। আমি কয়দিন আগে সান্ত্বনা পাইলাম, টি. এস. এলিয়টের কথা পইড়া।

এইরকম ডিলেমা তো আছে, “বই পড়া দরকার” ভার্সেস “বই পইড়া কি সব জানা যাবে নাকি!” টাইপ। তো, অই জায়গাতে এলিয়ট শেক্সপিয়রের কথা কইতেছিলেন, শেক্সপিয়র এক প্লুটার্ক পইড়া যতটা জানতে পারসিলেন, অন্য কেউ পুরা ব্রিটিশ মিউজিয়াম পইড়াও সেইটা জানতে পারতো না। মানে, এই জায়গাটাতে আমিও বিশ্বাস করি, একটা জিনিস যদি আপনি ঠিকমতো পড়তে পারেন, সেইটা থিকা যা জানতে পারবেন, অই একটা লার্নিং দিয়াই অনেককিছু এক্সপ্লোর করা যায় আসলে।

“অনেক কিছু পড়তে হবে” – এইটা জরুরি জিনিস মনেহয় না আমার কাছে, বরং যেই জিনিসই পড়া হোক, সেইটারে নিতে পারার, (মানতে পারা বা না-পারার না, বা কাজে-পরিণত-করারও না, বরং বলা যায়) একরকম transcend করার একটা ব্যাপার থাকে, একজন ক্রিয়েটিভ/ইন্টেলেকচুয়াল পারসনের জন্য, অইটা ইম্পর্টেন্ট।
Continue reading

বইয়ের ইন্ট্রো: কবিসভা

দুনিয়াতে তখনো ফেসবুক আসে নাই, কমিউনিটি-ব্লগও অইভাবে শুরু হয় নাই, ২০০৩/৪ সালের দিকের কথা। ব্রাত্য রাইসু তখন kabishabha নামে একটা ইয়াহু মেইলগ্রুপ খুইলা অইখানে দুই-তিনশ লোকের ইমেইল এড্রেস অ্যাড কইরা মেইল চালাচালি শুরু করেন, উনিই ছিলেন অই গ্রুপের মডারেটর। অইখানে সাহিত্য নিয়া অনেক তর্ক-বির্তক, কাইজ্জা-কাটি, ঝগড়া-ঝাটি হইতো। একটা টপিক নিয়া কেউ কোন ইমেইল লেখলো, তখন অন্য অনেকে এর রিপ্লাই দিলো, এইভাবে চলতে থাকতো। রোমান হরফে বাংলা এবং বাংলা হরফে বাংলায় লেখা হইতো ইমেইলগুলা। আমি অইখানে অনেক হাউকাউ করছি।

তো, এই ক্রাউডের অনেকে পরে সামহোয়ারইনব্লগে এক্টিভ হইছিলেন এবং তারওপরে ফেসবুকে। অই ক্রাউডের লগে আমি পারসোনালি যে খুব এসোসিয়েটেড ছিলাম – তা না; কিন্তু আমার পাবলিকলি কথা বলাবলির শুরু বলা যায়, কবিসভা yahoo!-ইমেইলগ্রুপে। তারও আগে ‘কবিসভা’ নামে একটা কবিতা লেখছিলাম, ১৯৯৯ সালের দিকে, যখন অই মেইল-গ্রুপ চালু হয় নাই। তখন এইসব কথা বলাবলি’রে তো এতো ইম্পর্টেন্ট বইলা ভাবতাম না, ভাবতাম যে কবিদের ইগোসিস্ট ব্যাপার-স্যাপার। অই পজিশন চেইঞ্জ হইছে আমার। চিন্তা করতে করতেই আমি বুঝতে পারছি যে চিন্তা সবসময় চেইঞ্জ হইতে পারার ঘটনাই। এখন ২০২১ সালে যেই চিন্তাগুলা আমি করতেছি, এইগুলাও আল্টিমেট কিছু না। কিন্তু চিন্তার এই ফ্লো বা ধারাটা একটা ঘটনা। অই জায়গা থিকা বইটার কথা ভাবছি আমি।

বইয়ের লেখাগুলা কবিসভা আমলের লেখা না, বরং সবচে আগের লেখাটা ২০০৮ সালের আর সবচে পরের ২০২১ সালের, এই ১৪ বছরে লেখা কিছু জিনিস এইখানে রাখা হইতেছে। সাবজেক্ট হিসাবে যেইখানে বাংলা-ভাষা ও সাহিত্যের আলাপ কম-বেশি আছে। (সব লেখা এইখানে মেবি নাইও।) লেখাগুলা আলগা জিনিস; মানে, একটা বইয়ের কথা মাথায় রাইখা বা একটা সেন্ট্রাল ধারণারে মনে রাইখা লেখা হয় নাই, বরং এই সাবজেক্টে যা কিছু লেখা হইছে, সেইগুলা কমপাইল করা হইতেছে। যার ফলে বইটা পড়তে গিয়া ইনকমপ্লিটনেসের একটা ফিলিংস হইতে পারে, কিন্তু একইসাথে একটা কমপ্লিট লিটারারি ক্যাননের দিশা পাওয়া না গেলেও একটা স্কেচ মেবি ভিজিবল হইতে পারে। মানে, এইরকমের একটা আশা আছে বইলাই বইটা ছাপানোর কথা ভাবা গেছে। যে, নানান সময়ে বিচ্ছিন্নভাবে এমন কিছু জায়গারে হয়তো হাইলাইট করা গেছে যেইগুলা খেয়াল করাটা দরকারি ব্যাপার হইতে পারে।…

মানে, নিজের বই নিয়া একজন রাইটার যতো কম কথা বলেন, ততোই তো বেটার 🙂

ই. হা.
অক্টোবর, ২০২১

ছোট ছোট পাথর (আবদুল মান্নান সৈয়দের বাসায়)

এই ঘটনার কথা বলাটা ঠিক হবে কিনা… এইজন্য কোনদিনই ঠিক বলা হয় নাই। কিন্তু মনে যেহেতু আছে, বইলা রাখা যাইতে পারে। এই ঘটনারে কোন খারাপ-ভালোর জায়গা থিকা না দেখাটাই মনেহয় ভালো। আমার যেইভাবে মনে আছে, সেইভাবেই আমি বলতেছি।

১৯৯৮/৯৯ সালের কথা। ঢাকা ভার্সিটিতে পড়ি। বঙ্গবন্ধু হলে থাকি। ময়লা শার্ট-প্যান্ট, স্যান্ডেল পিন্দা ঢাকা শহরের রাস্তায় রাস্তায় হাঁটি। নতুন কবিতার বই ছাপানোর পরে রিফাত চৌধুরী’রে দেয়ার সাথে সাথে একটা কবিতা পইড়াই উনি ঘোষণা দিয়া দিলেন, ইমরুল তো কবি! উনার লগে আড্ডা দেয়ার ফুল একসেস দিয়া দিলেন। অইদিনই শাহবাগ থিকা নীলক্ষেতের বাবুপুড়া বস্তির ঘরটাতে নিয়া গেলেন উনার। কয়েকদিন যাওয়া-আসার পরেই আকরাম খানের (কবি, ফিল্ম-ডিরেক্টর) লগে পরিচয় করায়া দিলেন। বললেন, আপনারা নতুন কবি’রা আসছেন, “ছাঁট কাগজের মলাট”টা তো নতুন কইরা করা দরকার! আমরা একসাথে ২/৩টা সংখ্যা ছাপাইছিলাম। শশী হক ছিলেন। টাকা-পয়সার জোগাড় মনেহয় আকরামই করছিলেন অনেকটা। লেখাপত্র রিফাত ভাই-ই নিছিলেন রাইটারদের কাছ থিকা। মুস্তফা আনোয়ার তো আড্ডাতেই আসতেন। কাজল শাহনেওয়াজও মাঝে-মধ্যে আসছেন। উনাদের লেখা এইভাবে পাওয়া গেছিল। আবিদ আজাদের পুরান লেখা ছাপাবো আমরা। কিন্তু মান্নান ভাইয়ের (আবদুল মান্নান সৈয়দের) তো বাসায় যাইতে হবে। উনার বাসা গ্রীণরোডে। একদিন বিকালে রিফাত ভাই বললেন, চলেন যাই! Continue reading

এ-কার আর আ-কার

ছোট একটা টেকনিকের জিনিস এইটা, অনেকেই খেয়াল করার কথা, কিন্তু খোলাখুলিভাবে খুব কম কথা-ই হইছে মনেহয়, এই এ-কার আর আ-কার নিয়া।

বাংলায় কাজ-কাম বুঝাইতে যেই ওয়ার্ডগুলা আছে, সেইগুলা খেয়াল করলে দেখবেন এ-কার দিয়া লেখলে একরকম লাগে, আর আ-কার দিয়া লেখলে পুরা অন্যরকম লাগে; মনে হবে যেন আরেকটা দুনিয়াই ক্রিয়েট কইরা ফেলছেন! যেমন, বললে/বললা, দেখলে/দেখলা, বলবে/বলবা, শেখালে/শিখাইলা… এইরকম শ’য়ে শ’য়ে পাইবেন। লেখার টোন’টাই পুরা চেইঞ্জ হয়া যায়।

তো, ব্যাপার’টা মোর বাংলা হয়া উঠবো – তা না, কিন্তু আমরা বাংলাদেশে বলার সময় তো আ-কার’টাই বেশি ইউজ করি। কিন্তু বাংলা লেখা ব্যাপারটা যেহেতু কলকাতা-সেন্ট্রিক ছিল, এই কারণে অইখানের ডায়ালেক্টে যেহেতু ‘এ-কার’ এর চল’টা বেশি, অইটারে বেশি ‘কারেক্ট’ মনে করার মতো একটা ভুল ধারণা এখনো আছে। ভাষা থিকা ডায়ালেক্টগুলারে মুইছা ফেলতে হবে বা ‘আঞ্চলিক ভাষা’ হিসাবে বাঁচায়া রাখতে হবে – এইটা খুবই ভুল একটা প্রিমাইজ, আলাপ করার। মানে, ‘বললে’ লিখলেই জিনিসটা ‘শুদ্ধ’ – তা না, কিন্তু ‘বললা’ ইউজ করলে দেখবেন বাংলাদেশের অডিয়েন্সরে বেশি কানেক্ট করতে পারার কথা। Continue reading

ইংরেজি শব্দ, বাংলা ওয়ার্ড…

তখন মনেহয় ক্লাস সিক্স বা সেভেনে পড়ি, একটা গল্প বা রম্য-রচনা পইড়া পুরা বোকচোদ হয়া গেছিলাম, কারণ কিছুই বুঝতে পারতেছিলাম না; পারতেছিলাম না একটা শব্দের কারণে। লিখছিলেন মনেহয় আলী ইমাম, শাহরিয়ার কবির বা এইরকমের কেউ, যারা অই আমলে কিশোর, মানে টিনএইজদের জন্য লিখতেন। শব্দটা ছিল, ডিক্টেটর। একজন ডিক্টেটর কি করেন, কেমনে ঘুমান, কেমনে খাওয়া-দাওয়া করেন, এইসব নিয়া ফান করা। তো, ডিক্টেটর কি জিনিস সেইটাই তো জানি না আমি! আর ইংলিশে স্পেলিংটা লেখাও নাই যে ডিকশনারিতে খুঁজতে পারবো। তখন যেহেতু গোয়েন্দাদের বই পড়ি কিছু, ডিটেকটিভ শব্দটা জানি। কিন্তু ডিটেকটিভরে নিয়া এতো ফান করার কি আছে! পরে যখন জানতে পারলাম ডিক্টেটর মানে স্বৈরাচার তখন বুঝতে পারলাম যে, ও, আচ্ছা, এরশাদরে নিয়া লিখছে! তো, লেখাটা যতোটা না ফান, তার চাইতে জেলাসিই বেশি ছিল মনেহয়, এই কারণে ফানটা জমে নাই তেমন। আর আমার ধারণা, রাইটার ইচ্ছা কইরা স্বৈরাচার না লেইখা ডিক্টেটর লিখছিলেন, কারণ নিউজপেপারে সবসময় স্বৈরাচার লেখা হইতো (চিন্তা করেন, কি রকম ফ্রি একটা টাইম ছিল তখন!), শব্দটা পরিচিত ছিল, তো অইটা লিখলে সাথে সাথে কানেক্ট করা যাইতো যে, এরশাদরে নিয়া লেখছে, এই কারণে মেবি এই শব্দটা লিখছিলেন।…

এখন ব্যাপারটা যে খালি ইংরেজি শব্দ – তা তো না, যেই জিনিসটারে বুঝাইতে চাইতেছে, সেই ব্যাপারটাই তো ‘ইংলিশ’! মানে, ডিক্টেটর বা স্বৈরাচার টার্মটা বাংলা-ভাষার হিস্ট্রিক্যাল রেফারেন্সে তো নাই, কি থাকতে পারে… জালিম?… বা অন্য আরো কিছু… কিন্তু সেইটা কোনভাবেই স্বৈরাচার না। মানে, কাছাকাছি রকমের জিনিসই, কিন্তু একই জিনিস না। ব্যাপারটা এইরকম না যে, স্বৈরাচারের ইংলিশ হইতেছে ডিক্টেটর, বরং স্বৈরাচার হইতেছে ডিক্টেটরের বাংলা। দুইটা একই ঘটনা না। তো, আমার ধারণা হাজার হাজার না হইলেও শ’য়ে শ’য়ে এইরকম ইংরেজি শব্দ থাকার কথা, বাংলা ভাষায়; যেইটার রেফারেন্স (বা সূত্র) হইতেছে ইংরেজি ভাষায়। এক সময় হয়তো ফার্সি ভাষাতে ছিল এই রেফারেন্সগুলা।

মানে, আমি যেই পয়েন্টটা মেইক করতে চাইতেছি, সেইটা হইতেছে, যে কোন শব্দই একটা কালচারাল রেফারেন্সের ঘটনা। উইথইন দ্য কালচারও। যেমন ধরেন, খোয়াব কইলে দাদি-নানীদের কথা মনে হইতে পারে, বা ‘গ্রাম-বাংলা’র কথা 🙂 (যদিও গান আছে, “আমি স্বপ্ন দেখি, মধুমালার মুখ রে…”), স্বপ্ন রিলেটিভলি ‘আধুনিক বাংলা’, ‘বাংলা মিডিয়াম’-ও কিছুটা; এর পাশাপাশি ড্রিমও কিন্তু বাংলায় এখন অনেকটা, কারণ আমরা যারা ‘শিক্ষিত’ তারা সবাই ড্রিম বুঝি তো! কিন্তু তাই বইলা ইংরেজি ভাষায় ড্রিম যেইরকম অ্যাসপায়ার, উইশ, হোপ নানান রকমের আছে, বাংলার ড্রিম অইরকম জায়গাতে খুব কমই যাইতে পারে মনেহয়।

মানে, কথাটা খালি এইটা না যে, ইংরেজি শব্দগুলাও বাংলা-ই অনেক সময় – এইটা তো আছেই (বা বাংলা অনেক শব্দও ইংলিশে বাংলাতেই কইতে হবে আসলে, যেমন ধরেন, খিচুরিরে মাসালা রাইস কইলে খিচুরি বুঝানো যাবে না আসলে, বা ম্যাশ পটেটো দিয়া আলু-ভর্তা… মানে, একই জিনিস হবে না); বরং শব্দ জিনিসটারে ইংরেজি, ফার্সি, পর্তুগিজ, সংস্কৃত, হিন্দি, উর্দু… এইভাবে দেখার যে তরিকা সেইটাই ঝামেলার জিনিস মনেহয়। এমন না যে, এইভাবে আইডেন্টিফাই করা যায় না, কিন্তু এইরকম দাগানোটা বরং স্বৈরাচার ও ডিক্টেটর টাইপের ঝামেলা তৈরি করে, যেইরকম করে লেবার ও শ্রমিক; মানে, লেবার তো আসলে ‘বেশি বাংলা’; যেইরকম ‘সাইডে, সাইডে…’ বেশি বাংলা ‘সরে যান’ থিকা। তো, এইরকম ইংরেজি শব্দগুলা ‘বাংলা’ বইলা ‘ডিক্টেটর’ বাংলা না, বা এর এগেনেস্টে ‘স্বৈরাচার’-ও। এখন তাই বইলা ইংরেজি শব্দের বাংলা কি করা যাবে না? এইখানে আমার কথা হইতেছে, কি বাংলা বানাইতেছেন, সেইটা খেয়াল করাটা দরকার। এইখানে ডিক্টেটরের বাংলা স্বৈরাচারই করতেছেন না খালি, জালিম’রেও যে রিপ্লেইস করতেছেন, এই বুঝ থাকাটা দরকার মনেহয়।… Continue reading