অগাস্ট ১২, ২০২১
খারাপ-কাজ, পাপ এবং অন্যায়
ধরেন কেউ একজন রিকশার ড্রাইভাররে, সিএনজি’র ড্রাইভাররে বা রাস্তার পাশের কোন দোকানদাররে গালি-গালাজ করলো, তার লোয়ার সোশ্যাল-ক্লাসের ফায়দা নিয়া নিজের রাগ তার উপরে ঝাড়লো। এইটা খারাপ কাজ। কিন্তু একস্ট্রিম পর্যায়ে না গেলে দুইজন মানুশের ঘটনাই। মাফ চাইলে বা সরি বললে অনেক সময় ঘটনার শেষও হয়া যায়।
আবার ধরেন, কেউ একটা ম্যারিটাল রিলেশন বা কমিটেড রিলেশনের মধ্যে থাইকা তারে না জানায়া অন্য মানুশদের সাথে সেক্সুয়াল রিলেশনে জড়াইলো এবং কন্টিনিউয়াসলি করতে থাকলো; এইটা খালি ‘খারাপ কাজ’ না, একটা ক্রাইম না হইলেও ‘পাপ’ বা ‘অনৈতিক’ ঘটনা। ইভেন, পরে জানাইলেও জিনিসটা একইরকম না। পলিগ্যামাস রিলেশনেও, আমার ধারণা, না-জানানোটা এথিক্সের বাইরের ঘটনাই, বা এইরকম আন-ইথিক্যাল কিছু জায়গা আছে নাস্তিকতাতেও, যারে ‘পাপ’ না কইলেও ‘অনৈতিক’ বলা যায়। মানে, নৈতিকতার কোডগুলা আলাদা হইতে পারে, কিন্তু নৈতিক বইলা কিছু নাই – এইটা ঠিক না। এইটা খালি ‘খারাপ কাজ’ না, কারণ এইটা দুইজন মানুশরেই ঘটনা না, এইখানে অন্য আরো মানুশ-জনও এফেক্টেড হয়। রাষ্ট্রীয় আইনে এর কোন শাস্তি না হইলেও, সমাজে মোটামুটি নিন্দার জিনিস।
কিন্তু ধরেন, সেই গোপন রিলেশনের মেজেস, অডিও, ভিডিও ফাঁস করার থ্রেট দিয়া কেউ হয়রানি করতে থাকলো, টাকা-পয়সা চাইতে থাকলো এবং নিতে থাকলো। এইটা আর ‘পাপ’ হিসাবে থাকে না তখন। এইটা হয়া উঠে ক্রাইম। কারণ, এইরকম কাজবাজ যদি বন্ধ করা না যায়, তখন অনেক মানুশই সাফার করবে। কিন্তু বাংলাদেশে যেইখানে সরকারিভাবে অর্গানাইজড ক্রাইম চলে, সেইখানে মনে হইতে পারে এইটা তো কিছুই না! একটা সমাজ, একটা রাষ্ট্র যখন অ্যাজ অ্যা হোল, ক্রিমিনালিটিরে গ্লোরিফাই করতে থাকে, ক্ষমতার একটা গর্ব হিসাবে শো করতে থাকে, তখন এইসব ছোট-খাট ক্রাইমরে জাস্টিফাইড মনে হওয়াটা নরমাল।
কিন্তু এই তিনটা জিনিসরে ব্লার কইরা ফেললে, মিশায়া ফেললে ‘বিচার’ এর জায়গাটা মুশকিল হবে। এইরকম আরো অনেক উদাহারণ অবশ্যই আছে। আমার ধারণা, যখন কেউ খারাপ-কাজগুলা করতে করতে অভ্যস্থ হয়া পড়েন, পাপের জায়গাতে পা দেয়া সহজ হয় তার জন্য; আর যখন কেউ পাপের জায়গাটাতে ডুইবা যান, ক্রাইমের সেন্সটারে গুলায়া ফেলেন, বা নিজের পজিশনরে অই পাপের জায়গা থিকা বুঝায়া ফেলতে পারেন, যার ফলে সহজ হয়, ক্রাইম করাটা।
সমাজে খারাপ-কাজ যেমন আছে, পাপের ঘটনা যেমন আছে, ক্রাইমও থাকবেই। বরং জায়গাগুলারে আমরা যতোটা স্পষ্ট এবং কনশাস করতে পারবো, তত বেটার; ব্যক্তির জায়গাটাতে।
২.
এখন আসেন, সমাজের জায়গাটাতে। যেইটা একটু বলতেছিলামও উপরে। একটা সমাজে এবং রাষ্ট্রে ক্রাইমগুলা যখন নরমালাইজ হইতে থাকে; ‘পাপ’ বা ‘অনৈতিক কাজ’ তখন প্রকাশ্য হইতে পারার একটা ভ্যালিডিটি পায় এবং খারাপ-কাজ করাটাই নর্মস হয়া উঠতে থাকে।
একটা উদাহারণ শেয়ার করতে পারি, কয়েকবছর আগে খেয়াল করছিলাম; ঢাকা শহরে অপরিচিত কারো সাথে একটু এগ্রেসিভ টোনে কথা-বলাটা হইতেছে নরমাল; তা নাইলে অপরপক্ষ ভাবতে পারে যে, আপনি মনেহয় কোন ফেভার চাইতেছেন বা সাবমিশন করতেছেন। লো-ভয়েস, কমপ্যাশনেট বিহেভ… এইগুলা মোটামুটি ‘ভীতিকর’ ব্যাপারই। এইরকম অভিযোগও শুনবেন, ভালো কইরা কথা বলতেছি বইলা কি দোষ করছি নাকি! মানে, এইরকমের একটা ব্যাপার খুব বেশি ভিজিবল না হইলেও একটা মেন্টাল স্ট্যাটাস হিসাবে আছে, বা থাকতে পারে।
তবে, সবচে বাজে যেই জিনিসটা হয় একটা বড় বড় ক্রাইম দিয়া ছোট ক্রাইমগুলারে জাস্টিফাই করার একটা স্পেইস তৈরি হয়। যে, রেইপেরই বিচার হয় না, উনি আসছে ম্যারিটাল রেইপ নিয়া কথা কইতে! এইরকম। 🙁
আর ‘পাপ’ বা ‘অনৈতিক’ বইলা যেই ব্যাপারগুলা, অইগুলাও চেইঞ্জ হয় তো! এমনকি অনেকসময় ভুলভাবেও আইডেন্টিফাইড হয়। স্পেশালি সমাজের মজুলম ক্লাস – গরিব এবং মেয়েদের ব্যাপারে। (মেয়েরা তো গরিব বইলাই অপ্রেসড আসলে। সমাজের কত % সম্পত্তির মালিক মেয়েরা? ৫% বেশি হওয়ার কথা না।…)
হিন্দু-সমাজে ‘অচ্ছুত’ যেইরকম, বাংলাদেশে গরিব’রা এইরকম সোশ্যালি আউটকাস্ট; দেখবেন, বাসার কাজের বুয়া এবং মালিক একই ধরণের প্লেট, কাপে খাবে না; বয়সে ছোট কেউও ইকনোমিক ক্লাসের কারণে তার চাইতে গরিব কারো সাথে খারাপ-বিহেভ করার ‘অধিকার’ রাখে। এইটা খুবই ডিপ-রুটেড একটা জিনিস। নারীদের বেলায় যেইরকম ভিজিবল যে, একটা সময় ‘নারী-শিক্ষা’ ছিল হারাম! গরিবদের জন্য হারাম না, কিন্তু কি দরকার অদের! এইরকম।
এইরকম ‘ট্রেডিশন’র জায়গা থিকা, এস্টাবলিশড ক্রাইমের জায়গা থিকা ‘পাপ’ ও ‘খারাপ কাজ’র জায়গাগুলা আইডেন্টিফাইড হয়, নরমালাইজ হয়।
আমি বলতে চাইতেছি, খারাপ-কাজ, পাপ আর অন্যায় একই জিনিস না এবং ব্যক্তির এই কাজগুলা সমাজের ভিজিবল বাস্তবতার সাথে রিলেটড ঘটনা, সবসময়।
৩.
এইটা পড়ার সময় পরীমনি’র কনটেক্সট’টারে মিলায়া ফেললে ভুল হবে। উনার সাথে যা করা হইছে, সেইটা উইথ-আউট এনি ডাউট একটা রাষ্ট্রীয় ক্রাইম। আপনি যত বড় সেলিব্রেটিই হন, যতই ‘আম্মা’ ডাকেন, এই জুলুমবাজ সরকারের ও তাদের সহযোগীদের কাছে মাথা নোয়াইয়া চলতে হবে – এইরকম ‘দৃষ্টান্ত’ তৈরি করার একটা ঘটনা। এর বাইরে অন্য কোনভাবে দেখতে চাওয়াটা হইতেছে মোস্টলি ইন্টেলেকচুয়াল বদমাইশি একটা।
অগাস্ট ১৩, ২০২১
বইপড়া
মানুশ যে কতো অদ্ভুত জায়গা থিকা সান্ত্বনা পাইতে পারে। আমি কয়দিন আগে সান্ত্বনা পাইলাম, টি. এস. এলিয়টের কথা পইড়া।
এইরকম ডিলেমা তো আছে, “বই পড়া দরকার” ভার্সেস “বই পইড়া কি সব জানা যাবে নাকি!” টাইপ। তো, অই জায়গাতে এলিয়ট শেক্সপিয়রের কথা কইতেছিলেন, শেক্সপিয়র এক প্লুটার্ক পইড়া যতটা জানতে পারসিলেন, অন্য কেউ পুরা ব্রিটিশ মিউজিয়াম পইড়াও সেইটা জানতে পারতো না। মানে, এই জায়গাটাতে আমিও বিশ্বাস করি, একটা জিনিস যদি আপনি ঠিকমতো পড়তে পারেন, সেইটা থিকা যা জানতে পারবেন, অই একটা লার্নিং দিয়াই অনেককিছু এক্সপ্লোর করা যায় আসলে।
“অনেক কিছু পড়তে হবে” – এইটা জরুরি জিনিস মনেহয় না আমার কাছে, বরং যেই জিনিসই পড়া হোক, সেইটারে নিতে পারার, (মানতে পারা বা না-পারার না, বা কাজে-পরিণত-করারও না, বরং বলা যায়) একরকম transcend করার একটা ব্যাপার থাকে, একজন ক্রিয়েটিভ/ইন্টেলেকচুয়াল পারসনের জন্য, অইটা ইম্পর্টেন্ট।
Continue reading