‘বিপ্লব করা’ কেন একটা বাজে কাজ?

বিপ্লব কেন একটা বাজে ধারণা – এইটা নিয়া দুয়েকবার বলছি মনেহয়। কিন্তু এখন, যখন আবার ‘বিপ্লব’ হবে হবে অবস্থা – তখন আরেকবার যতোটা পারা যায় ক্লিয়ার কইরা বলাটা মনেহয় দরকার।pullquote] [/pullquote]

‘বিপ্লবী করা’ বলতে ট্রাডিশন্যালি সবকিছু ‘উল্টায়া-পাল্টায়া’ দিতে চাওয়ার কথা-ই আমি বলতেছি। এইটা মেইনলি একটা ইমোশনাল ঘটনা। এখন ইমোশনাল ব্যাপার বইলা বাজে – তা না; বরং এই ইমোশনাল জিনিসটা কেমনে কাজ করে, সেইটা খেয়াল করতে চাইতেছি আমি।

দেখবেন, কোনরকমের রেইজ (rage), রিভেঞ্জ ছাড়া বিপ্লব ব্যাপারটা অলমোস্ট মেন্দা-মারা একটা ঘটনা। মানে, এই ইমোশনগুলা বাদ দিলে, ঘটনা হিসাবে বিপ্লবে কি থাকে আর, বা কট্টুকই থাকে?

তো, বিপ্লবের এই ইমোশনটা যেহেতু ট্রু, এই ইমোশন দিয়া এইটা পয়লা কি কাজ করে? অথরিটি’টারে চেইঞ্জ করে; একটা ‘খারাপ’ অথরিটির জায়গায় ‘ভালো’ অথরিটি’রে বসাইতে চায়।

এইটা ঠিক যে, কোন কিছু করার অথরিটি যদি না থাকে, যেই কাজগুলারে আপনি ঠিক মনে করেন, করবেন কেমনে! কিন্তু আমরা তো দেখছি, খালি এই অথরিটি চেইঞ্জ করাটা কোন কাজের জিনিস না। মোটামুটি যেই লাউ, সেই কদু-ই! মানে, অথরিটি চেইঞ্জ করার দরকার নাই – এইটা আমার পয়েন্ট না, বরং বলতে চাইতেছি, অথরিটি চেইঞ্জ করাটাই সমাধান না। এই ‘ভালো’ অথরিটিও একটা সময় পরে গিয়া নিজেরে আর ফেক্সিবল রাখতে পারে না। কারণ যে কোন অথরিটি’র কাজই হইতেছে, নিজেরে অথরিটি হিসাবে বাঁচায়া রাখা; অথরিটি হিসাবে পাবলিকের কাছে সারেন্ডার করা না।

আর পদ্ধতিও একটা ঘটনা, যে কেমনে আপনি অথরিটি’টারে চেইঞ্জ করতেছেন। বিপ্লব করার সময় ধইরা নেয়া হয়, ‘পাবলিক তো বুঝে না!’ যার ফলে পাবলিক কি বুঝে আর বুঝে না – তার দায়িত্ব নিয়া নিতে হয়, পাবলিকের চাইতে পাবলিকের বুঝ’টা ইম্পর্টেন্ট হয়া উঠে তখন।

বিপ্লবীদের সবসময় ‘অ-বুঝ’ বা ‘না-বুঝ’ পাবলিকের পক্ষ নিয়া লড়াই করতে হয়। মানে, পাবলিকের বুঝতে না-পারা’টা একটা অনুমান হিসাবে নেয়ার কারণে পাবলিকের কাতারে বিপ্লবী’রা আর সামিল হইতে পারেন না। পাবলিক যদি বুঝতোই, তাইলে তো বিপ্লব-ই করতো! এইভাবে পাবলিকের থিকা আলাদা-ই না খালি ‘ডিফরেন্ট’ না হইতে পারলে বরং ‘খাঁটি বিপ্লবী’ হওয়াটাই সম্ভব হইতে পারে না! মানে, আপনি বিপ্লব করতেছেন, পাবলিকের লাইগা, কিন্তু আপনি পাবলিক থিকা আলাদা – এই হইতেছে বিপ্লবের তরিকা! এইটা ‘গণ-বিরোধী’ ব্যাপার না হইলেও সাম সর্ট অফ ‘গণ-বিচ্ছিন্নতা’র ব্যাপার তো অবশ্যই, এই ‘বিপ্লব করা’টা।

আর এই বিপ্লব ‘সফলতা লাভ’ করে, একটা ভায়োলেন্সের ভিতর দিয়া। এতে কইরা যা হয়, ভায়োলেন্স’টাও আর একটা ‘পথ’ হিসাবে থাকে না, বরং একটা সময়ে ‘পথ-ই হয়া উঠে গন্তব্য’। 🙂

Continue reading

আর্কাইভ: করোনা ভাইরাস নিয়া পাবলিক পোস্ট (মার্চ ৯ – এপ্রিল ১৫, ২০২০)

মার্চ ৯

স্যানিটাইজার ইউজ করা তো ভালো, মাস্ক পরাও। এইটা কইরা করোনা ভাইরাস থিকা বাঁচা যাবে না – আমরা জানি; কিন্তু তারপরও আমরা যে সাবধান আছি, সেইটা দেখাইতে পারাটা তো জরুরি। মানে, আমি যে ‘সচেতন’ আর এইটা এফোর্ড করতে পারি – এইরকমের স্টেটম্যান্টও তো আছে! (সাবধানতা’টা থাকার পরেও।)

অনেকটা ধরেন, বামপন্থী দলগুলার, বা আর্টিস্ট-ইন্টেলেকচুয়ালদের আওয়ামী বিরোধিতার মতো; যে আমরা তো এটলিস্ট প্রতিবাদ’টা করতেছি! এফেক্টিভ হোক বা না হোক, সেক্সি তো অবশ্যই। 🙂 বরং, এই সেক্সিনেসটাই একভাবে জরুরি হয়া উঠে!

আজকে ধরেন, গর্ভমেন্ট বা এনজিওগুলা যদি রাস্তার মোড়ে মোড়ে ফ্রি স্যানিটাইজার আর মাস্ক বিলাইতে শুরু করে, ব্যাপারটা এতোটা সেক্সি থাকতে পারবে না তখন। এই ‘প্রতিবাদ’ করার ঘটনা’টাও, একইরকম। সবাই বা অনেকে যদি করতে পারে, বা করতে থাকে, তখন এতোটা ‘ক্লাস’-এর ব্যাপার হইতে পারবে না আর। মানে, সাবধান হওয়া যাবে না বা ‘প্রতিবাদ’ করা যাবে না – এইরকম না, একটা ‘ক্ল্যাসি’ বা ‘সেক্সি’ হওয়ার চাইতে ম্যাস লেভেলের ঘটনা বা এফেক্টিভ হইতে পারাটা জরুরি মনেহয়।

 

মার্চ ১৬

কি করা যাইতে পারে? ভাবলাম…

করোনা ভাইরাস নিয়া লেখালেখিগুলা পইড়া দুইটা জিনিস ক্রুশিয়াল মনে হইছে – যারা অলরেডি ইনফেক্টেড হইছেন তাদেরকে আইডেন্টিফাই করা, আর তাদেরকে আলাদা রাখতে পারা, যাতে ছড়াইতে না পারে আর।

তো, এর লাইগা কয়েকটা জিনিস করা দরকার –

১. করোনা ভাইরাসের ইনফর্মেশন জানার এবং জানানোর জন্য ১টা সরকারি হেল্প-লাইন ক্রিয়েট করা দরকার।

জেলা বা এলাকা-ভিত্তিক হেল্প-লাইনও থাকতে পারে।

২. করোনা ভাইরাস যাচাই করার যেই টেস্টিং কিট – সেইটা কোন কোন হসপিটালে আছে, জানানো দরকার।

সব থানা/উপজেলা/ওয়ার্ডে অ্যাভেইলেবল করা দরকার। গর্ভমেন্ট থিকা না পাইলে কমিউনিটির লিডার’রাও এই কাজ করতে পারেন কিনা…

৫০০০/৭০০০ হইলেই কাজ চলার কথা তো মনেহয়। ডিস্ট্রিবিউশনটা জরুরি, কোথাও ফেইলা না রাইখা।

৩. যেই যেই এলাকায় রোগী পাওয়া যাইতেছে বা যাবে, সেইগুলা জানানো দরকার। চলাফেরা রেস্ট্রিক করাটা জরুরি।

প্রতিটা এলাকাতেই আলাদা কইরা একটা কোয়ারেনটাইন সেন্টার তৈরি করা যাইতে পারে। হাসপাতালের চাইতে স্কুল, কলেজ, হোস্টেল, আবাসিক হোটলগুলা বরং বেটার অপশন হইতে পারে।

৪. রোগীদেরকে আলাদা করতে পারাটা যতোটা জরুরি, তার চাইতে বেশি জরুরি তাদেরকে যারা দেখ-ভাল করবেন বা কাছাকাছি যাইবেন, তাদের প্রটেকশন।

কারা দেখ-ভাল করবেন, কিভাবে করবেন – এই জিনিসগুলারও একটা গাইড-লাইন বানায়া পাবলিক হেলথ স্পেশালিস্টরা আমাদেরকে জানাইতে পারেন।

৫. মানে, এইটা তো কোন পারসোনাল ইস্যু বা রাষ্ট্রীয় সমস্যা না খালি, একটা সোশ্যাল ক্রাইসিস; তো, সোসাইটি হিসাবে একসাথে মোকাবিলা করার কথা ভাবাটাই মনেহয় বেটার।

এখন পর্যন্ত আলাপ যা দেখছি, তা হইতেছে ব্যক্তি হিসাবে কি কি করবেন বা করবেন না; আর গর্ভমেন্ট কি করতেছেন বা করতেছেন না – এইগুলা নিয়া আলাপ হইতেছে। এইগুলা অ-দরকারি না। কিন্তু সোশ্যাল ইনিশিয়েটিভ নিতে পারাটা জরুরি।

এইরকম সোশ্যাল ইনিশিয়েটিভ নিতে পারা সহজ জিনিস না। কিন্তু যারা অ্যাক্টিভিস্ট আছেন, কাজ করার কথা ভাবেন, এই পয়েন্টগুলা হয়তো কন্সিডার করতে পারেন।

 

২.

জিনিস’টা নিয়া কথা-বলা’টা মুশকিলই একটু এখন; কারণ এখন আসলে ঠিক কথা-বলার টাইম না, বরং পারলে কিছু কাজ করার।… তারপরও যেহেতু মনে হইছে, ভাবলাম বইলা রাখি।

এই যে ভাইরাস, এইটা কিন্তু খালি চোখে দেখতে পাইতেছি না আমরা। আর যতক্ষণ না এইটা সিমটমগুলার ভিতর দিয়া হাজির হইতেছে, মানুশরে মাইরা ফেলতেছে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা বুঝতেও পারতেছি না। তো, এইটা যে প্রসেস, আমাদের ‘বোঝা-পড়া’র; সেইটারে সন্দেহ করা উচিত না কিছুটা?

যে, নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করবো না, নিজে ফিল না করলে বুঝবো না – এইরকম ‘বাস্তব-ভিত্তিক’ জিনিসগুলা তো বড়সড় রকমের অবস্টেকল। এমন না যে, এইভাবে বুঝা যাবে না; কিন্তু ‘বুঝতে পারা’ জিনিসটারে এইটুকের ভিতরে আটকায়া ফেলাটা ভুল হবে।

জানা বা বোঝার তরিকা অনেকগুলা। বরং জানা-বোঝা যে তরিকাগুলা আছে, তাদের ব্যাপারে সবসময় ক্রিটিক্যাল থাকাটা জরুরি। কোনকিছু আমরা দেখতেছি – তাই বইলা এইটা যেমন সত্যি না, কোনকিছু আমরা দেখতেছি না বইলাও সত্যিও না। মানে, সত্যি জিনিস’টা দেখা বা না-দেখার উপ্রে ডিপেন্ডেড না এতোটা।

যেইভাবে, এই দুনিয়া, আমাদের এগজিসটেন্সের কারণেই থাকতেছে না; বরং আমাদের এগজিসটেন্সটা এই দুনিয়ার ভিতরে আছে। খুব মাইনর একটা জিনিসই এইটা; কিন্তু আমাদের চিন্তা, কাজ বা বাঁইচা থাকার ভিতরে এইটা অনেকসময় আমরা মিস কইরা যাই বইলাই আমার মনেহয়।


মার্চ ১৭

ব্যাপারটা এইরকম না যে, করোনা ভাইরাস নিয়া গর্ভমেন্ট বা মেইনস্ট্রিম মিডিয়া কিছু করতে পারতেছে না; বরং কিছু করতে যে চাইতেছে না – এইটা ভয়াবহ ব্যাপার।

২.

এই ভাইরাসের মহামারী’রে বন্যা বা সাইক্লোনের মত ভাবতে পারলে হয়তো অ্যাকশন নিতে বেশি সুবিধা হইতে পারে।

সাগরে সাইক্লোন দেখা গেলে কি করি আমরা? আগে থিকা জাহাজ, নৌকারে সইরা আসতে বলা হয় পাড়ে। সাগর পাড়ের মানুশজনরে আশ্রয়কেন্দ্রে বা বাড়িতে থাকতে বলা হয়, যতক্ষণ ঝড়টা থাকে। যদি না জানানো হয়, তাইলে তো যারা সাগরে ছিল, তারা তো সাবধান হইতে পারতেন না, অনেকেই মারা যাইতেন। ঘরের বাইরের মানুশজনও। আগে অনেক মানুশ মারাও যাইতো। কিন্তু যদি জানানো যায় মানুশ’রে, তখন তারা সাবধান হইতে পারেন। মানুশও কম মরে।

তো, এই কারণে ইনফরমেশন গোপন না কইরা জানানো’টা ভালো। এই জানানোর দায়িত্ব গর্ভমেন্ট, মিডিয়া, সরকারি লোকজনদের, মেডিকেল-সায়েন্সের মানুশ-জনদের। উনারা কথা না কইলে বরং অন্যদের কথা-বলার সুযোগটা তৈরি হইতে থাকে। কোন জায়গায় কয়জন করোনা রোগী ধরা পড়ছে, জানলে মানুশ জানলে প্যানিকড হবে না, না-জানা থিকা হবে।

মানুশদেরকে বাঁচাইতে হবে না; মানুশজন যাতে নিজেদেরকে বাঁচাইতে পারে, সময় মতো অ্যাক্ট করতে পারে, সেই সুযোগটা দরকার। অফিস-আদালত যদি বন্ধই করা লাগে দুইদিন পরে না কইরা দুইদিন আগে করেন।

আগামীকালকে, সারা দেশে সব ব্যাংকগুলার সামনে সমাবেশ করার কথা। ৬০টা ব্যাংকে ৫০০০ কইরা হইলেও ৩ লাখ মানুশরে ক্লোজ প্রক্সিমিটিতে দাঁড়াইতে হবে। এদের মধ্যে কারো একজনেরও যদি করোনা ভাইরাস থাকে, এইটা কতো জনরে এফেক্ট করবে, ভাবা যায়! যেইসব এলাকায় করোনা ভাইরাসের রোগী পাওয়া গেছে, সেইসব জায়গায় তো অন্তঃত বন্ধ করতে পারেন।

ভয় না-পাওয়ার বেটাগিরি আর ভয় পাওয়ার প্যানিকের মাঝখানেও রেসপন্সিবিলিটির কিছু জায়গা আছে, সেই জায়গাগুলারে এক্সপ্লোর করতে পারাটা দরকারি।

যারা ডিসিশান নেয়ার জায়গাগুলাতে আছেন, ডিসিশান নেন, মানুশদেরকে জানান আর জানতে দেন, এটলিস্ট।

৩.

বাংলা-ভাষায় দুই ধরণের প্রাণী আছে। 🙂

এই quarantine শব্দ দিয়া টের পাইবেন; যে এর ‘বাংলা’ কি হবে? উনারা হইতেছেন, অনুবাদ-প্রাণী; সত্য’রে ট্রুথ বানাইছেন, ধর্ম’রে রিলিজিয়ন; আর এইভাবে একটা কালচার’রে যে আরেকটা কালচারের দাস বানায়া ফেলার টেকনিকটারে ফলো করতেছেন, এই বুঝ’টা বুঝতে রাজি হইতে পারতেছেন না। ভাবতেছেন, শব্দ আবিষ্কার করতেছি তো আমরা! যেন কলম্বাস! আসলেই কলোনিয়াল কলম্বাসের নাতি-পুতি এনারা।

দুসরা হইলো, সঠিক-উচ্চারণ প্রাণী; অরিজিনালি উচ্চারণ’টা কি হবে? কোয়ারেন্টান, কোয়ারেনটাইন, করেনটাইন… এইসব হাবিজাবি। প্রাচীন নদীয়া জেলার ভাষারে উনারা ‘খাঁটি’ বা অরিজিনাল বাংলা-ভাষা মনে কইরা থাকতে পারেন। মানে, কালচার যে পাত্থর টাইপের জিনিস না, এইটা তো উনারা জানেন, কিন্তু প্রাচীন ও পপ (কোনভাবেই এখনকার বা হ্যাপেনিং জিনিস না) বইলা ভাবতে পারেন।…

আরো অনেক ভাষা-প্রাণী আছেন, থাকতে পারেন। কিন্তু এই দুই ধরণের বিপ্লবীদের আমি এড়ায়া চলতে পছন্দ করি।

আলগা থাকার ট্রাই করি।

 

মার্চ ১৮

নিজেরে বাঁচানোর পয়লা ধাপ হইতেছে, সরকারি প্রেসনোট’রে বিশ্বাস না করা।

Continue reading

‘সত্যি’ বলার অথরিটি

ছোটবেলায়, মানে এইটিইসের দিকে, এই গুজব’টা শুনছিলাম। যে, ইসরাইলি’রা কেমনে প্যালেস্টানিদেরকে তাদের বাসা-বাড়ি থিকা দেখায়া দিছিলো। তখন তো ইয়াসির আরাফাত, ইন্দিফাদা’র… ভিতর দিয়া প্যালেস্টাইনিরা একভাবে ঘুইরা দাঁড়াইতেছিল, তো, উনাদের ভার্সন অফ ট্রুথও পাওয়া যাইতো কিছু।pullquote] [/pullquote]

গুজব’টা এইরকম ছিল: কোন একদিন প্যালেস্টাইনি রেডিও থিকা ঘোষণা আসলো যে, কোন সামরিক মহড়া বা কিছু হবে, প্যালেস্টাইনিরা যাতে তাদের বাড়ি-ঘর থিকা দূরে একটা জায়গায় সইরা যায়, একদিনের জন্য; তো, এই রেডিও ঘোষণা’রে সত্যি মনে কইরা প্যালেস্টাইনিরা যখন সইরা গেছে, তখন নাকি আম্রিকান সেনাবাহিনি হুইদিদেরকে অই বাড়ি-ঘরগুলাতে ঢুকায়া দিছে। তো, মুসলমানদের লগে সবসময় চিট করা হইতেছে, ইহুদি’রাও এইরকম চিট কইরা প্যালেস্টাইনিদের জায়গা-জমি দখল করছে!

এইটা মেবি তখনকার কন্সপিরেসি থিওরি’রই একটা ভার্সন। কিন্তু আমি পরে কয়েকবার গুগুল-টুগলে সার্চ দিয়া দেখছি, ‘ফ্যাক্ট চেকিং’ 🙂 এর মতন, এইটা সত্যি না মিথ্যা – এইরকম কোন আলাপও দুনিয়ার কোথাও নাই। এমনকি ইহুদি বসতি কেমনে শুরু হইলো ইসরাইলে এই নিয়া এনথ্রোপলিজিক্যাল কোন আলাপও পাই নাই। (কারো কোন রেফারেন্স জানা থাকলে দিয়েন প্লিজ। একটু দেখার ইচ্ছা হইতেছে।)

তো, সমস্যা’টা এইটা না যে, মিথ্যাগুলা, ভুলগুলা নাই হয়া যাইতেছে; বরং সত্যি জিনিসটা যেইভাবে অ্যাপিয়ারড হইতেছে, সত্যের যেই অথরিটি তৈরি হইতেছে, সেইটারে আমি ভয় পাইতেছি। গুগুলে তো এই নিয়া কিছু নাই – ও, তাইলে তো এইটা সত্যি না! বা উইকিপিডিয়া তো কিছু বলে নাই এইটা নিয়া – তাইলে তো এইটা মনেহয় সত্যি না! এইরকম সাবট্রাকশনগুলারে ডরাইতেছি আমি।

Continue reading

গরিব কি জিনিস?

মানে, গরিব বইলা একটা জিনিস তো আছে দুনিয়াতে, যারা দিনে একবারও খাইতে পায় না, বা যাদের দিনে ১০০ টাকাও (বা এইরকমের একটা নাম্বার) ইনকাম নাই, তাদেরকে গরিব বলাটা জায়েজ আছে দুনিয়াতে।

এই সংজ্ঞাটা মোটামুটি ফিক্সড, কিন্তু লোকজন তো আর সংজ্ঞার ভিতরে থাকে না। কেউ আগে থিকা গরিব আছে, কেউ নতুন কইরা গরিব হয়, আবার কেউ মাঝে মধ্যে গরিব থাকে। যার ফলে, গরিব ঠিকঠাক মতো আইডেন্টিফাই করাটা একটু মুশকিলই হওয়ার কথা, আমাদের এই দুনিয়ায়।

ধরেন, এমনিতেই আমাদের ধারণাতে তো আছে, রিকশা চালায় – মানে, গরিব; অফিসে চাকরি করে – (পিয়ন, মেসেঞ্জার, যা-ই হোক) – গরিব না।* মানে, প্রফেশনের একটা কন্ট্রিবিউশন আছে, গরিবের পারসেপশনে; পুরাটাই ইকোনমিক্যাল ঘটনা না।…

এই ‘গরিব অর্থনীতি’ তো দিনে দিনে আরো ক্রুশিয়াল সাবজেক্ট হয়া উঠতেছে অ্যাকাডেমিক স্টাডিজে। তো, সেইখানে বলার মতো তিনটা কথা মনে হইলো। (আর্গুমেন্টের জায়গাটা একই।)

একটা হইলো, কারা গরিব? – এই প্রশ্নের চাইতে কারা কেমনে ‘গরিব’ হওয়ার লাইনে আছেন, সেইটা ধরতে পারা’টা জরুরি। এইখানে ‘অ্যাকশন’টা শুরুই হইতেছে ‘গরিব’ হওয়ার পরে; যে, গরিব’রে আপনে কেমনে হেল্প করবেন, গরিবি থিকা কেমনে বাঁচাইবেন, এই সেই।… কিন্তু ‘গরিব’ হওয়া কিন্তু কমানো যাইতেছে না!

তো, গরিব কেমনে গরিব হইতেছে – সেই জায়গাটাতে নজর দেয়াটা বেশি দরকারি। মানে, গরিব’রে তো গরিবি থিকা ‘মুক্তি’ দিয়া কনজিউমার বানাইতেছেই এঞ্জিও’রা, কিন্তু ‘নতুন গরিব’ হওয়া কি কোনভাবে ঠেকানো যাইতেছে কিনা – সেইটার কথা ভাবাটা দরকারি জিনিস একটা। মানে, গরিব’রা তো মরতেছেই 🙂 যদি ‘নতুন গরিব’ আর না বানাইতে পারেন, ৫০ বছরে এমনিতেই ‘গরিব’ নাই হয়া যাওয়ার কথা দুনিয়ায়। (এতো সহজ হয়তো না, কিন্তু একটা বড় কন্ট্রিবিউশন থাকার কথা।)

আর, যারা অলরেডি গরিব, তাদের কি হবে? আমার ধারণা, যেইভাবে গরিব’রে একটা মোবাইল ফোনের মতো ভাবা হয়, যে যারে চালু রাখতে হইলে বা বাঁচায়া রাখতে হইলে চার্জ দেয়ার মতো কইরা একবেলা খাবারের ব্যবস্থা করা দরকার – এইটা যে সাফিশিয়েন্ট না, এইটাও তো আমরা জানি; কিন্তু এর বাইরে তেমন কিছু ভাবতে পারি বইলাও মনেহয় না।

Continue reading

হোয়াই ইন্টেলেকচুয়ালস ফেইল?

ইন্টেলেকচুয়ালরা কেন ধরা খায় না, বরং কেন উনারা খুব বেশি ইমপ্যাক্ট তৈরি করতে পারেন না আর, সোসাইটিতে? (মানে, কেন? – প্রশ্নটা এইটা না আর, বরং কোথায় ফেইল মারেন…)

এইটা নিয়া বছর তিনেক আগে একবার কথা হইতেছিল @A-Al Mamun’র সাথে, ২০১৭ সালের ঘটনা হবে। আমি একটা কাজে রাজশাহী গেছি। সন্ধ্যার পরে উনার সাথে রাজশাহী ইউনিভার্সিটিতে দেখা হইছিল। পরে রাতে উনি আমারে হোটেলে পৌঁছায়া দেয়ার সময়, উনার গাড়িতে কইরা একটা বাঁধের উপর ঘুরতে নিয়া গেছিলেন। আমরা গাড়িতে যাইতে যাইতে আর এইদিক সেইদিক ঘুরতে ঘুরতে দুই তিনঘন্টা কথা বলছিলাম।

আমি বলতেছিলাম, আমার যেই ইন্টেলেকচুয়াল অ্যাক্টিভিটি সেইটা আসলে আমার কবিতা লেখারই একটা এক্সটেনশন। কারণ, এই মিডল ক্লাস ক্রিয়েটিভ সাহিত্যরেই যদি আমরা আর্ট কালচার মনে করতে থাকি, তাই্লে আমার কবিতা এইখানে কোন মিনিং তৈরি করতে পারবে না। কবিতা লেখার বাইরেও কবিতা কোন কনটেক্সট থিকা পড়া হইতেছে বা পড়া যাইতে পারে, এইটা নিয়াও কাজ করতে গিয়া আমি ইন্টেলেকচুয়ালিটির জায়গাটারে এক্সপ্লোর করতে চাই।

তখন উনি বলতেছিলেন, ইন্টেলেকচুয়াল কাজকামের ইমপ্যাক্ট কেন কইমা আসতেছে দিন দিন? বা এইরকমের কিছু। উনিও হয়তো কিছু ধারণার কথা বলতেছিলেন। আমি যেইটা বলছিলাম, সেইটারে আরেকটু ইলাবরেট করি এখন।

সোসাইটির ফর্মেশন আর ইন্টেলেকচুয়ালের রোল যে চেইঞ্জ হইছে, এইটা তো আছেই। মানে, ইন্টেলেকচুয়ালের কাজ আসলে পাবলিকরে জানানো বা ইনফর্ম করা না, পাবলিক নানানভাবেই ইনফর্মড। অ্যানালাইসিসও করতে পারেন। মিলাইতে পারার বা বুঝতে পারার কিছু জায়গা হয়তো আছে, কিন্তু স্টিমুলেশনের জায়গাগুলা এতোটাই স্ট্রং যে, আলাদা করতে পারাটা মুশকিলেরই হয়। মানে, সোসাইটিতে ইন্টেলেকচুয়ালিটির যে নিড, সেইটা একভাবে কমছে। যার ফলে, ইন্টেলেকচুয়ালিটি সমাজের তেমন কোন কাজে আসে না, বরং অরেন্টামেন্টাল একটা জিনিস, এই জায়গাতে রিডিউসড হইতে পারছে। (প্রফেশনাল ইন্টেলেকচুয়ালিটির বাইরে।)

এর বাইরে, ইন্টেলেকচুয়ালের দিক থিকা আমার কাছে মেইন ক্রাইসিস মনেহয়, পাবলিক ও পারসোনাল লাইফের ডিলেমাটা। ইন্টেলেকচুয়ালিটি তো একটা পাবলিক অ্যাক্টিভিটি, কিন্তু যিনি করতেছেন তিনি নিজে তো একজন ব্যক্তি মানুশ। এখন হয় কি, একজন ব্যক্তি মানুশের কথারেও তো তার পারসোনালিটির বাইরে গিয়া ভাবা যায় না। কি বলতেছেন, এইটা দেখার আগে, বা সাথে সাথেই আমরা দেখি বা দেখতে চাই যে, কে বলতেছেন? মানে, কথা কি বলতেছেন, এইটা তো আছেই, কে বলতেছেন, এইটাও সমান বা তার চাইতে বেশি ইর্ম্পটেন্ট।* একটা কথার যেমন আপনি সোশ্যাল কনটেক্সটের বাইরে গিয়া কোন মিনিং বাইর করতে পারেন না, ব্যক্তিরও তো সোসাইটির বাইরে কোন পজিশন নাই। তো, ইন্টেলেকচুয়ালের একটা পজিশন আমরা এক্সপেক্ট করি না খালি, কোন একটা পজিশন ছাড়া ইন্টেলেকচুয়াল হিসাবে পারসিভড হওয়াটাও মুশকিলের।

একটা তো হইলো, প্রফেশন. আপনি ইউনিভার্সিটি টিচার, রিসার্চার, সাংবাদিক, বা আপনি যেই ফিল্ডে কাজকাম করেন, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, পাবলিক সার্ভিস – সেইখানে উপ্রের পজিশনের কেউ হইলে ইন্টেলেকচুয়াল হইতে পারবেন আপনি। একজন মানুশ, যিনি রিকশা চালান, সব্জি বেচেন বা ছোটখাট কোন ব্যবসা করেন, তারে কি ইন্টেলেকচুয়াল বইলা মানতে পারবো আমরা? পারবো না যে, তা না, একটু কঠিন হবে। (একাডেমিক কিছু ব্যাপার স্যাপারও তো আছে!)… মানে, ইন্টেলেকচুয়াল একটা সোশ্যাল পজিশনের ঘটনা। এখন ইন্টেলেকচুয়ালের পজিশন যদি সোশ্যাল মিনিংয়ের ভিতরে আটাকায়াই থাকে, তার কথা সোশ্যাল মিনিংগুলার বাইরে যাইতে পারার সম্ভাবনাও তো কমে, কিছুটা হইলেও। মানে, ইন্টেলেকচুয়ালের কথা তার সোশ্যাল পজিশন বা অ্যাক্টের বাইরে গিয়া পারসিভ করার জায়গাটা তো নাই! যেমন, উনি বড় চাকরি করেন, উনি তো এইরকম কথা কইবেনই, এইরকম সুডো লিবারাল গ্রাউন্ডে গিয়া বাতিল কইরা দেয়া যায়, বা উনি তো নিজেই কিছু করতে পারেন নাই, আবার কথা কইতে আইছেন! এইরকম।

Continue reading