অবিচ্ছিন্নতার দিকে

ফ্রিদা: ট্রটস্কির কাহিনি

ফ্রিদা সিনেমার একটা জায়গায় দেখা যায়, ট্রটস্কি স্ট্যালিন আর হিটলার’রে নিয়া বলতেছেন যে, দুইটাই দানব, কিন্তু হিটলার এর এটলিস্ট মানুষজনরে প্রভাবিত করার ক্ষমতা আছে, আর স্ট্যালিন এর ত এইটাও নাই। এই সংলাপ শোনার পর প্রথমেই মনে হইতেছিল, রাইটার ২০০২ সালে এইটা লিখছেন বইলাই হয়তো এত স্পষ্টভাবে ট্রটস্কির মুখে এই ডায়ালগ দিতে পারছেন। ১৯৭০/৮০তে, সোভিয়েত ইউনিয়ন পতনের আগে এইটা করা কতোটা সম্ভব হইতো? মানে, ট্রটস্কির স্ট্যালিন-বিরোধিতাটা ত আছেই, কিন্তু স্ট্যালিনের পারসেপশনটা সোভিয়েত ইউনিয়ন নাই হওয়ার আগে ত ক্লিয়ার ছিলো না এতো।  দুইটা পারসেপশনই ছিল – দানবের এবং মহানায়কের; কিন্তু ১৯৯০ এর আগে এবং পরে ব্যাপারটা একইরকম না, সময়ের চিন্তা বলে ত একটা বিষয় আছেই।

দ্বিতীয়ত, মনে হইতেছিল ট্রটস্কি যদি সত্যি সত্যিই এই চিন্তাটা কইরা থাকেন, তাইলে সময়ে কেন সেইটা রিকগনাইজ হইলো না? রাজনৈতিক ক্ষমতার কারণে স্ট্যালিন টিকে গেছেন, কিন্তু ট্রটস্কির স্ট্যালিন সর্ম্পকে চিন্তার জায়গাটা কেন ইগনোরড হইলো? রাজনৈতিক ক্ষমতা অর্জন ছাড়া তত্ত্ব-চিন্তার টিকে থাকার কি কোন সামর্থ্য নাই? নাকি ওই সময়টাই তৈরী ছিল না, এই ধরণের চিন্তারে স্পেস দেয়ার লাইগা?  Continue reading

লেখকের পেশা, জীবন-যাপন, ভণ্ডামি…

একজন কবি’র পেশা আসলে কী হওয়া উচিত, বাংলাদেশে, এই টাইমে? মানে, ভ্যাগাবন্ড বা বিপ্লবী হওয়া ছাড়া উনারে যদি কোন সামাজিক পেশায় কাজ করা লাগে কামাই করার লাইগা? স্টুডেন্ট লাইফেই এই প্রশ্নটা নিয়া একটা সময় আমি খুব টেনশনে থাকতাম। পরে চাকরি করতে গিয়া তো আরো বিপদে পড়ছিলাম, কোন প্রাইভেট কোম্পানিতে সেলস-এ চাকরি কইরা কবিতা-লেখা কেমনে সম্ভব? আপনার লাইফ-স্টাইল, সোশ্যাল অ্যাপিয়েরেন্স, কাজকাম যেইটা কিনা পুঁজি’র গোলামিতে নিয়োজিত, সেইরকম একটা সামাজিক পজিশনে থাইকা, আপনি কি কবিতা লেখার সাহস করতে পারেন? বা করাটা কি উচিত? বিশেষ কইরা, যখন এক ধরনের আবশ্যিক শর্ত সোসাইটিতে এগজিস্ট করতেছে যে, কবিতা মানেই এক ধরনের প্রতিবাদ- বিদ্যমান ক্ষমতা-কাঠামো’র, খুব স্থুল বা সূক্ষ্ম, যে কোন অর্থেই; সেইটা খালি কবিতা লিইখা করলেই হবে না, লাইফ-স্টাইল দিয়া প্রমাণও করা লাগবে! এইসব জিনিস তো ফেইস করা লাগছে আসলে পারসোনাল লাইফে, একটা টাইমে, বেশ সিরিয়াসলি।[pullquote][AWD_comments width=”294″][/pullquote]

বাংলাদেশের সোশিও কালচারাল কনটেক্সটে কবি হইতে পারেন আসলে – কলেজ বা ইউনির্ভাসিটির টিচার (প্রাইমারি বা হাইস্কুল হইলে হবে না; তবে পিএইচডি স্টুডেন্ট হইলে আরো বেশি হওয়া যাবে…), সাংবাদিক (এই এরিয়াটা এখন ব্যাপক, বলা ভালো, মিডিয়া-কর্মী), এনজিও-কর্মী বা রিসার্চার, কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হইলেও চলে বা অ্যাডফার্মের কপি রাইটার থিকা শুরু কইরা ক্রিয়েটিভ ডাইরেক্টর’রেও মেবি মাইনা নেয়া যায়। এইরকম কিছু সিলেক্টিভ লিস্ট আছে, যারা কম-বেশি এলাউড। পাবলিকরে কনভিন্স করা যাইতে পারে ‘কবি’ হিসাবে । সরকারি-আমলারাও আছেন হয়তো, কিছু ডাক্তার বা কর্পোরেটের বড় অফিসার। কিন্তু এই সেকেন্ড ক্যাটাগরিটার হিসাব আবার ভিন্ন; কবি/লেখক হিসাবে পরিচিত হওয়া এবং কবিতা লেখা। প্রকৃত লেখক/কবি বইলা যে সামাজিক-চরিত্র, উনি সবসময় টিচার, জার্নালিস্ট, এনজিও-কর্মী… এই ক্যাটাগরিটা। উনারা ডেডিকেটেড লেখক/কবি; বাকিরা পাওয়ার প্রাকটিসের জায়গা থিকাই লিখেন [টাকা-পয়সা বেশি হইলে যেইরকম মসজিদ-মাদ্রাসা বানায়, দান-খয়রাত করে এইরকম…], ব্যাপারটা মিথ্যা না, কিন্তু আমার কনসার্নটা এইরকম লিনিয়ার ট্রুথের জায়গাটা নিয়া। Continue reading

“বোকা বোর্হেস”: বাংলা-ভাষায় তাঁর রাজনৈতিক ইন্টারপ্রিটেশন বিষয়ে

রাজু আলাউদ্দিন বেশ অ্যাপ্রিসিয়েটবল একটা কাজ করছেন, বোর্হেস নিয়া। তাঁর অনেকগুলি বাংলা অনুবাদ একসাথে কইরা ছাপাইয়া দিছেন।  যদিও বইয়ে বলা আছে, সম্পাদনা; এইটা নিয়া কিছুটা বলছিলাম ফেসবুকের একটা নোটে। (http://www.facebook.com/note.php?note_id=430592530751)

কিন্তু যেই জিনিসটা হাস্যকর, সেইটা হইতাছে যে, উনি বোর্হেসরে প্রায় দেবতার পর্যায়ে নিয়া যাওয়ার একটা কোশিশ অনবরত কইরা যাইতেছেন।  এইটা প্রথম চোখে পড়ে, বোর্হেসের বিষয়ে অন্যান্য লেখকদের লেখার যে একটা সংকলন করছেন, সেইটার ভূমিকাটা পড়তে গিয়া। তারপর এইবার কালের কণ্ঠের ঈদসংখ্যাতে বড় (!) লেখকদের ঝগড়া-বিবাদ (?) নিয়া কিছু ঘটনার বয়ান করছেন; সেইটা করতে গিয়াও তিনি বোর্হেস সর্ম্পকে তাঁর অন্ধভক্তিরে চাপা দিতে পারেন নাই।

কোন একটা বিষয়ে জানা-শোনা লোকজন যখন ভুল ধারণা দিতে শুরু করেন, সেইটার একটা প্রতিবাদ থাকা দরকার। সেই জায়গা থিকাই এই নিয়া লিখতে বসছি। সৌভাগ্য কিংবা দুর্ভাগ্যক্রমে, সেই বইটা এখন হাতের কাছে নাই। স্মরণশক্তির উপর ভরসা রাইখাই বলতেছি। ওই বইটাতে যদি কোন পাঠযোগ্য লেখা থাইকা থাকে, সেইটা কার্লোস ফুয়েন্তেস এর। কিভাবে যে উনি বললেন, আমার মুগ্ধতা এখনো কাটে নাই (যদিও প্রায় মাস ২/৩ আগে পড়ছি)।  এইটা ছাড়াও অক্টাভিও পাজ যতোটা সম্ভব বলার চেষ্টা করছেন।  আর বোর্হেসের যে বন্ধু, যিনি ইংরেজী অনুবাদে সাহায্য করছেন; তিনি বন্ধুত্বের একটা অনেস্ট অপিনিয়ন রাখছেন। কইছেন যে, তাঁর বন্ধু পলিটিক্যালি রাইট ডিসিশন খুব কমই নিতে পারছেন; এক স্বৈরশাসকের সাথে ডিনার করতে যাওয়ার কারণে যে, তাঁর নোবেল ছুইটা যাইতে পারে; সেইটার ধারণাটা সম্ভবত উনার ছিলো না।

একজন লেখকের পক্ষে পলিটিক্যালি কারেক্ট থাকাটা সবসময় সম্ভব না; সবাই তো আর নেরুদা না!
Continue reading

ইমেজ-ই কবিতা!

 

ইমেজ-ই কবিতা! একটা ভালো কবিতা শেষ পর্যন্ত সেইটাই যা একটা ভালো ইমেজ বা দৃশ্যকল্প তৈরি করতে পারে। এই পর্যন্ত পৃথিবীতে যত ভালো কবিতা আমরা পাইছি, কবিতাগুলি পড়তে বা শুনতে ভালো লাগে এই কারণে না যে, এইগুলির মধ্যে এক ধরণের শ্রুতিমধুরতা বা ধ্বনির তন্মময়তা আছে; বরং এইগুলি অনেক গভীর ইমেজের জন্ম দেয়। Continue reading

নরকের জল্লাদ

রামপুরা রোডে জ্যাম লাগে, রাত দশটার দিকে। মেজাজ তখন খিঁচড়া যায়। উল্টা-পাল্টা রিকশা চলে। বাসগুলা দাঁড়ায় রাস্তার মাঝখানে। আর সবচে’ দুর্বিনীত যার চলাফেরা, তিনি ‘বন্ধু পরিবহন’; বাংলাভাষার পত্রিকাগুলাতে এর নাম দেয়া হইছে, হিউম্যান হলার। এইটা একবার বামদিকে যায়, তো আরেকবার ডানদিকে। যে কোন জায়গাতেই থেমে যাওয়ার সম্ভাবনা সে রাখে। আমি এইটার গতিপথ বুঝতেই পারি না। রিকশাতে বইসা ধন্ধে পইড়া যাই। যে কোন সময়ই সে যে কোন রিকশাকে চাপা দিতে পারে অথবা নিজেও গোত্তা খাইয়া পড়তে পারে। ধুম কইরা স্টার্ট নিয়া একেবেঁকে চলে সে। আবার থামেও ধুম কইরা। মাঝে মাঝে মনে হয়, এইগুলার ড্রাইভাররে ধইরা পাছায় বাড়ি লাগাই পুলিশের মতোন।

যদিও এর ভিতরে বসে থাকা মানুষগুলার জন্য খারাপ লাগে, কারণ এত চিপাচিপি কইরা বসে যে, দমবন্ধ হইয়া যাওয়ার অবস্থা। আমি পারতপক্ষে এতে উঠি না। উঠতেও ঝামেলা, নামতেও ঝামেলা। তার দুর্দান্ত গতির ভিতর বসে আমার হয়তো মইরা যাইতে ইচ্ছা করবে! গতির এতো ভ্যারিয়েশন, শরীর আমার মানবে তো, এই সন্দেহও হয়!!

যা-ই হোক, এতদিন, যন্ত্র হিসাবে ভীতিপ্রদ মনে হইলেও, ড্রাইভারের উপর আমার রাগ অব্যাহত ছিল। রিকশা কইরা ফিরতেছিলাম। রামপুরা বাজারের একটু আগে। ধুম কইরা একটা বন্ধু পরিবহন ডানপাশ দিয়া আইসা বামে ব্রেক কষলো। মেজাজ পুরা বিলা হয়া গেলো। রিকশাওলা ভালো মানুষ। স্পিড কমাইয়া তারে বামদিকে রাইখা পাশ দিয়া যাইতেছিলো। তখন বন্ধু পরিবহন এর ড্রাইভাররে দেখলাম। ১৪-১৫ বছর বয়স। ঘামে পুরা মুখ ভিজা। হাঁপাইতেছে, মনে হইলো। ভিতরে লোকজনের চেঁচামেচি। মানুষ নামতেছে, উঠতেছে, চেচাঁইতাছে হেল্পার। ড্রাইভারের এইসবকিছুতেই কোন খেয়াল নাই। হাসফাঁস করতেছে আর সামনের দিকে তাকাইয়া আছে। মনে হইলো, সে যেন নরকের জল্লাদ। একবার বামে তাকানোর চেষ্টা করলো, হেল্পার এর আওয়াজ শোনার জন্য। তারপর সমানের দিকে তাকাইলো। তার চোখ দেইখা মনে হইলো, স্টার্ট দিবার পর সামনে যে রিকশাটা পাইবো ওইটার পাছা বরাবর ঢুকাইয়া দিবো, গাড়িটা।

 

মার্চ ১৩, ২০০৮