মে ১, ২০২২
আমি মেবি দুনিয়াতে অইসব ফরচুনেট মানুশদের একজন, যারে জীবনে খুবএকটা বাজার করতে হয় নাই। এখনো করা লাগে না। কিন্তু অনলাইনে তো অনেক দোকান হইছে এখন, এইজন্য শখ কইরা মাঝে-মধ্যে সবজি-মাছ-মাংস কিনি, এবং নো-ডাউট ধরাও খাই। 🙂
তো, একটা ওয়েবসাইট আছে “সদাই” নামে, অদের একটা ফিচার দেইখা ইন্টারেস্টিং মনে হইছিল। অরা এইটার নাম দিছে “সোশ্যাল”, বাংলায় যেইটারে আমরা “ভাগা” বা “শেয়ার” বলি; যে, কয়েকজনে মিইলা কিনা; কেউ এক-ভাগা নিলো, কেউ দুই-ভাগা নিলো, এইভাবে ধরেন গরু জবাই হইতো। ধরেন, একটা গরু’র বিশ-ভাগা করা হইলো, ১০/১৫/২০ জনের কাছে বিশ-ভাগা বেচা হইলে গরুটা জবাই করা হবে। এইরকম।
উনারা সাইটে দেখাইতেছে এইভাবে যে, আপনি চাইলে একলা গলদা-চিংড়ি কিনতে পারবেন, কেজি পড়বে ধরেন ৭৫০টাকা, কিন্তু যদি “সোশ্যাল”-এ কিনেন, মানে, ২০ কেজি অর্ডার হইলে পরে খুলনা থিকা আনা হবে, তাইলে ২০ কেজি অর্ডার হওয়া পর্যন্ত আপনারে অর্ডার করা লাগবে, হয়তো ৫-৭ দিন লাগবে, কিন্তু ৬৫০ টাকা দিলেই হবে! একসাথে অনেকে/কয়েকজনে কিনলে দামে কম পাইবেন।
দুয়েকজন নেইবার, বা অফিস-কলিগদের মধ্যেও মাঝে-মধ্যে এই প্রাকটিস দেখছিলাম যে, ২/৩ জন গাড়ি নিয়া কাওরানবাজার চইলা গেলেন ভোরবেলায়, বা যাত্রাবাড়ির পাইকারি মাছের বাজারে, ৫ কেজি কইরা তরকারি, মাছ কিইনা নিলেন! দামে কম পড়লো। আরো ইনিশিয়েটিভের কথা শুনছি, পরিচিত কারো খামারে একলগে কুরবানির গরু কিইনা রাখলেন, সবজি-চাষ করাইলেন কাউরে দিয়া, নিজেরাই কিনলেন! দামে কম তো পড়েই, ফ্রেশটাও খাইলেন! এইরকম। [ ট্রান্সপোর্টেশনের ব্যাপারটা একটু ম্যানেজ করা লাগে। কারো না কারো প্রাইভেট কারে আনা লাগে…]
কিন্তু জিনিসগুলা সোশ্যাল-বিজনেস হয়া উঠতে পারতেছে না এখনো। কোন অরগানাইজড এপ্রোচও তৈরি হয় নাই। একটু শরমও কাজ করে মনেহয়।… কিন্তু ব্যাপারটা ওয়ার্কেবল আসলে। কিছু র্স্টাট-আপ কোম্পানি মনেহয় কাজও করতেছে। তবে ব্যাপারটা ঠিক ‘মিডল-ম্যান’রে কাট-অফ করার প্রজেক্ট হইলে ফেইল-ই মারার কথা, কারণ ব্যাপারটা লং-টার্মে ‘কম-দামে’ কিনার ঘটনা হইতে পারবে না এতোটা, ইকোনমি অফ স্কেইলের কারণে। কিন্তু এইরকম ছোট ছোট গ্রুপ বাজারের উপরে প্রেশার-গ্রুপ হিসাবে কাজ করতে পারবে তখন।
তার চাইতে বড় কথা, এক ধরণের ‘সোশ্যাল’ বা ‘সামাজিক’ অবস্থা তৈরি হওয়ার একটা স্পেইস জেনারেশনের দিকে যাইতে পারবে হয়তো। মানে, ব্যাপারটা খালি ইকনোমিক প্রজেক্টই না, সোশ্যাল এবং কালচারাল ঘটনাও হইতে পারে।… হবেই, এইটা তো ডেফিনেটলি বলা যায় না। কিন্তু এই ধরণের জিনিস নানান দিক দিয়া শুরু হওয়াটা ভালো-জিনিস মনেহয় আর কি…
***
– বাকশাল (আওয়ামী-সিপিবি, বাঙালি-জাতীয়তাবাদ) সবসময়ই বাংলাদেশ-বিরোধী একটা ঘটনা –
কেউ আওয়ামীলীগের পক্ষে কথা কইলে, শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষ নিলে তারে আওয়ামী লীগ হওয়া লাগে না সিপিবি, বাসদ, এমনকি গণসংহতি কইরাও পক্ষ নেয়া যায় তো! কিন্তু আপনি বিএনপি’র পক্ষে কথা কইলে, জিয়াউর রহমানের নাম মুখে নিলেই কেন বিএনপি হওয়া লাগে?
মানে, এইটা অবশ্যই বিএনপি’র দোষ না।
এর বেইজ হইতেছে ভুল পলিটিক্যাল ন্যারেটিভে, যেই জায়গাটা থিকা দেখার অভ্যাস করানো হইছে আমাদেরকে, ১৯৭১ সালের পরেই।
আওয়ামী লীগ, সিপিবি, জাসদ, বাসদ, গণসংহতি যারাই আছে, সবাই ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদের’ লোক, কলোনিয়াল কলকাতার পলিটিক্যাল ও কালচারাল গোলাম। এই গোলামি উনাদের কোর।
বিএনপি হইতেছে এর বাইরের ঘটনা। আপনি যদি পলিটিক্যালি, কালচারালি বাংলাদেশরে সেন্টার করেন, তাইলে আপনি খালি অই ন্যারেটিভের বাইরেই চইলা আসেন না, মাঝখানে পূর্ব-পাকিস্তান বইলা যেই হিস্ট্রিক্যাল রিয়ালিটি’টা ছিল, সেইটারেও মাইনা নেয়া লাগে।
আওয়ামী-সিপিবি, মানে বাকশালি ন্যারেটিভে ‘পাকিস্তান পিরিয়ড’ বইলা কিছু নাই, অইটা যেন ঘটে নাই! বাংলাদেশের মানুশ যেন তখন পাকিস্তানের লগে যোগ দেয় নাই, ‘মুসলিম’ আইডেন্টিটিরে আপহোল্ড করে নাই! এই হিস্ট্রিক্যাল ট্রুথরে উনারা ‘অ্যাজ ইফ ঘটে নাই’ – এইভাবে বর্ণনা করেন সবসময়।
তো, এইটুক হইলেও কোন সমস্যা ছিল না। উনারা উল্টা ফাঁপড় নেন! যেহেতু আপনি ‘কলকাতার কলোনিয়াল জোয়াল’ কান্ধে নিতে রাজি না, আপনি যেন ‘পাকিস্তানের ফাঁদে’ পা দিতেছেন! মানে, ‘বাংলাদেশি’ আইডেন্টিটি বইলা তো কিছু নাই! 🙂 হয় আপনি ‘কলকাতার বাঙালি’ নাইলে ‘পাকিস্তানের মুসলমান’!
‘বাংলাদেশি’ – এই জায়গাটারে সবসময় গুলায়া ফেলা হয় না, খুব কনশাসলি নেগেটিভলি প্রজেক্ট করা হয়। যে কোন কিছুতেই – মিউজিক বলেন [কোক স্টুডিও ঘটনাটাই দেখেন, বাংলাদেশি কইতে পারে না], লিটারেচারে বলেন [বাংলাদেশি বাংলা হইতেছে ‘অশুদ্দ’ ‘অপ্রমিত’], মোটামুটি সব জায়গাতেই। ‘বাংলাদেশি’ হইতেছে যেন ‘অরিজিনাল-বাংলা’ থিকা একটা বিচ্যুতি!
এই জায়গা থিকা বিএনপি’র পক্ষে কথা বলা মানে হইতেছে ‘বাঙালি-সংস্কৃতি বিরোধী’ 🙂 একটা ঘটনা।
তো, আমাদেরকে আসলে সত্যিকার অর্থে ‘বাঙালি-সংস্কৃতি বিরোধী’ হওয়া লাগবে না, যেইটা আরেকটা ট্রাপ, বরং অই ভুল জায়গা থিকা সরতে পারলেই হবে। এর জন্য বিএনপিও হওয়া লাগবে না, বাকশালি ন্যারেটিভের বাইরে, কলোনিয়াল ‘বাঙালি’ আইডেন্টিটির বাইরে যাইতে হবে। (এইটা ন্যাশনালিস্ট হওয়ার কোন ঘটনা না।) তবে ফরচুনেটলি অর আনফরচুনেটলি বিএনপি ছাড়া আর কোন পলিটিক্যাল দল এই জায়গাটারে অউন করে না। যার ফলে ‘বাঙালি-সংস্কৃতি’র নামে কলোনিয়াল কলকাতার আইডেন্টিটির লোক না হইলে ‘বিএনপি করে’ বইলা ট্যাগ লাগানোটা ইজি হয়।
কিন্তু বিএনপি এই জায়গাটারে পলিটিক্যালি ক্যাপিটালাইজ করতে পারে নাই। এইটা যতোটা না কালচারাল বোঝা-পড়া না থাকা তার চাইতে দল হিসাবে (১৯৯১-এর পরে) আরেকটা আওয়ামী লীগ হইতে পারার ‘লোভ’ থিকা সরতে না পারাটাই মেবি মেইন ঘটনা।…
মানে, উনাদের পলিটিক্যাল ন্যারেটিভ’টারে পলিটিক্যাল এক্টিভিটির চাইতে কম গুরুত্বই দিছেন। উনারা খুব স্ট্রেইট ফরোয়ার্ড বলতে পারতেছেন না যে, দেখেন, বাকশাল (আওয়ামী-সিপিবি, বাঙালি-জাতীয়তাবাদ) সবসময়ই বাংলাদেশ-বিরোধী একটা ঘটনা! [খালেদা জিয়ার একটা কথা ছিল যে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গেলে ইন্ডিয়ার কাছে দেশ বেইচা দিবে, যেইটারে একটা মেটাফরিক্যাল-ট্রুথ হিসাবে আমরা নিছি, আইডিওলজিক্যাল-ট্রুথ হিসাবে কন্সিডার করা হয় নাই…]
তো, এখনকার বাংলাদেশে বিএনপি কইরা বা না কইরাও এই কথা আমাদেরকে বলতে পারতে হবে! এই জায়গাটা বুঝতে, এবং বলতে আমরা যত দেরি করবো, বাংলাদেশের পলিটিক্যাল অবস্থা তত বাজে হইতে থাকবে।
আর সবচে বড় কথা হইতেছে, নিজেদের সেলফ-রেসপেক্টের জায়গাটা আমরা খুঁইজা পাবো না, আর পাইতেছিও না আসলে…
Continue reading →