বুক রিভিউ।। সাম্রাজ্যবাদ ও জাতীয়তাবাদ।।

সত্য, সাদ্দাম হোসেন, স্রাজেরদৌলা ॥ সলিমুল্লাহ খান ॥ ফেব্রুয়ারি ২০০৭ ॥ এশীয় শিল্প ও সংস্কৃতি সভা,ঢাকা ॥ ৯৪ পৃষ্ঠা ॥ ২০০ টাকা ॥

—————————————————–

সলিমুল্লাহ খানের ‘সত্য, সাদ্দাম হোসেন, স্রাজেরদৌলা’রে বলা যায় সাম্রাজ্যবাদ নিয়া লেখা একটা বই, যেইখানে ইতিহাসের বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে তিনি সাম্রাজ্যবাদের নানাদিক নিয়া কথা বলছেন। সব মিলাইয়া ৯টা লেখা। ৭ টা মূল লেখা এবং সংযোজনে ২টি অনুবাদ – কবিতা (হ্যারল্ড পিন্টারের) এবং প্রবন্ধ (নিউ সিঙ্গারের)।

বইয়ের প্রথম লেখা ‘ইরাক, আরব জাতীয়তাবাদ ও সাদ্দাম হোসেন’ বেশ আরামের একটা লেখা। সাদ্দাম জাতীয়তাবাদী নাকি একনায়কতাবাদী এই প্রশ্ন তিনি সামনে নিয়ে আসেন আর এর পরিপ্রক্ষিতে আরব জাতীয়তাবাদের ইতিহাস ও সাম্রাজ্যবাদের চক্রান্তগুলি বর্ণনা করেন, কিন্তু সাদ্দাম নিজেরে কীভাবে এবং কখন আরব জাতীয়তাবাদের মূলধারার সাথে সংশ্লিষ্ট করেন, সেই ব্যাখ্যায় না গিয়া রায় দেন যে, “সাদ্দাম হোসেনের প্রকৃত অপরাধ তাঁহার আরব জাতীয়তাবাদ বা সাম্রাজ্যবাদবিরোধী রাজনীতি।” তার এই রায়ে আরো একটা ‘সত্য’ স্পষ্ট হয় যে, যিনি সাম্রাজ্যবাদবিরোধী, তিনি আর একনায়কতাবাদী নন।

দ্বিতীয় লেখাটাই বইটার নাম। এখানেও সাদ্দাম প্রসঙ্গ, তবে প্রেক্ষাপট তার বর্তমান বিচার। সলিমুল্লাহ খানের অভিমত, যারা সাদ্দামের সমালোচনা করেন বা বলেন যে, সাদ্দাম খারাপ লোক, তারা আসলে সাম্রাজ্যবাদকে সহনশীল করে তোলেন, মার্কিন আগ্রাসনকে খানিকটা বৈধতা দেয়ার ভিত্তি তৈরি করেন, যথা. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনৈক শিক্ষক ও নোম চমস্কি, এবং তার আংশকা তারা সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধকৌশলের কাছে পরাস্ত হইছেন। এরপরে তিনি সাম্রাজ্যবাদী রাজনীতির ইতিহাস ব্যাখ্যা করেন এবং তা করেন খুবই সুন্দরভাবে, নিশ্চিত করেন যে, “সাদ্দাম হোসেনের আসল অপরাধ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া, তার ‘অপশাসন’ নয়।” এবং দাবি করেন “সাদ্দাম হোসেন আরব জাতীয়তাবাদী, কমসে কম ইরাকি জাতীয়তায় তার পক্ষপাত থাকবেই।” অর্থাৎ, তিনি জাতীয়তাবাদী, আর এই কারণেই সাম্রাজ্যবাদের যত অপপ্রচার। এই সূত্র ধরেই সিনে হাজির হন সিরাজুদ্দৌলা। যারা সাম্রাজ্যবাদের কৌশলের ধারক বা তার কাছে পরাস্ত তারা সিরাজুদ্দৌলার চরিত্র হনন করার চেষ্টা করেছেন, যেমনটা এখন সাদ্দামের বিরুদ্ধে করছেন। সাদ্দাম এবং সিরাজ জাতীয়তাবাদী কিনা (বিশেষ করে সিরাজুদ্দৌলা) সেইটা নিয়া প্রশ্ন থাকলেও, দুজনেই হয়ে উঠেছিলেন পুঁজির বিকাশ ও চলাচলের ক্ষেত্রে একটি বাধা। অথচ এই বিষয়টাই এড়াইয়া যাওয়া হইছে, পুরা আলোচনায়। সাম্রাজ্যবাদের বিপরীতে সলিমুল্লাহ খান দাঁড়া করাইছেন জাতীয়তাবাদ’রে, ইংরেজ চরিত্র’রে সিরাজ-চরিত্রের বিপরীতে। আমার মনে হয়েছে এইখানে ‘সত্য’ উন্মোচিত হয় নাই।

সিরাজুদ্দৌলার পতন সর্ম্পকে তিনি বলেন যে “বাংলাদেশের পুঁজিপতি সমাজ ও আমলাতন্ত্র তাঁর বিরুদ্ধে বিপ্লব করতে একত্র হয়েছে। সেইখানে তাঁর হার।” কেন তারা সিরাজের বিরুদ্ধে গেলো? কেন একসাথে হইলো, ইংরেজের সাথে? এই ঐক্যের মূলে যে, পুঁজির মুক্তি, তার বাঁধভাঙ্গা জোয়ার, সেখানে তিনি যান নাই। আর নিশ্চিতভাবেই পলাশীর পুরা ঘটনাটার ভিতর জাতীয়তাবাদের কোন উপাদানের আছিল বইলা আমার মনে হয় না। [এইটা রিসেন্ট ইনোভেশন, জাতীয়তাবাদ আবিষ্কার করাটা; মানে, যেইটা পাস্ট, সেইটা প্রেজেন্ট-ধারণারই একটা রিফ্লেকশন। যেমন, আগের দিনের সুরিয়ালিজমও দেখতে পাই এখন আমরা।] সেইখানে দেশীয় পুঁজিপতিরাও জিতছেন সিরাজের বিপক্ষে, কিন্তু সেই বিজয়ের/বিপ্লবের ফসল কেন তারা নিজেদের হাতে রাখার চেষ্টা না করে ইংরেজদের হাতে তুইলা দিলেন? তারা মানুষ হিসাবে ‘খারাপ’ ছিলেন এবং ‘দেশপ্রেমিক’ ছিলেন না বইলা? নাকি বিদেশী পুঁজির বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর মতো কোন প্রস্তুতিই তাদের ছিল না? সলিমুল্লাহ খান এইসব কিছু অস্বীকার করেন না। আবার বলেনও না। তার বলা এবং না-বলায় এই ভুল হইতে পারে যে, সাম্রাজ্যবাদ কোনো ব্যক্তি চরিত্রের ফাঁক গলে ঢুকে পড়ছিলো এই বাংলায়।

সলিমুল্লাহ খান এই ব্যক্তিচরিত্রকে বিবেচনা করেন ইতিহাসের ধারাবাহিকতায়, যেখানে সাম্রাজ্যবাদ তাদের বিচ্ছিন্ন করে দানব হিসাবে দেখাতে চায়। কিন্তু সিরাজ বা সাদ্দাম, ভালো বা খারাপ হলেই বাঙালি জাতীয়তাবাদ বা আরব জাতীয়তাবাদ ভালো বা খারাপ হয়ে যায় না। আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়া সাহেবের নবাবসিরাজ-উদ-দৌলা বইয়ের আলোচনাতেই সলিমুল্লাহ খান স্পষ্টভাবে নির্দিষ্ট করেন যে, ‘বিষয় সিরাজ-চরিত্র নয়, বিষয় বাংলার ইতিহাস,’ তবে ইতিহাসটা বিচ্ছিন্নভাবে বাংলার নয়, বরং পুঁজির বিকাশের ইতিহাস, যা শুধুমাত্র জাতীয়তাবাদ রুখে দাঁড়াইতে পারে না। এইটা ইনসাফিশিয়েন্ট একটা টুল, ব্যাখ্যা করার।

আবার অন্যদিকে এই জাতীয়তাবাদের আবিস্কারের প্রয়োজনেই সিরাজুদ্দৌলার ফিরা আসা। ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় সিরাজুদ্দৌলা ঠিক তখনই আবিষ্কৃত হন, যখন বাঙালি জাতীয়তাবাদের একজন আইকনের দরকার পড়ে কিংবা সাদ্দাম ও সিরাজ জাতীয়তাবাদ’রে তখনই আশ্রয় করার চেষ্টা করেন যখন তারা পরাজয়ের মুখোমুখি উপনীত হন, আশা করেন যে জনগণ তাদের পাশে আইসা দাঁড়াবে। কিন্তু ইতিহাসের ঘটনাগুলিতে সম্ভবত দেশের আমজনতা ফিউডাল সমাজপতিদের সাথে আর্ন্তজাতিক পুঁজির বিরোধে কাউরেই সার্পোট দেয় নাই।

‘স্বাধীনতা অর্থ দাসত্ব’ লেখায় তিনি বর্ণনা করেন ফরাসীদের মিসর দখলের প্রেক্ষাপট; কী কইরা সাম্রাজ্যবাদ নন-ইস্যুকে ইস্যু বানানোর চেষ্টা করে। তারা কারণ হিসাবে যে বিষয়গুলিরে তুইলা ধরেন, তা একই, ইরাক প্রসঙ্গেও। বলা ভালো, এইটা এখানে যেমন বোঝা যাইতেছে, মিসরও বুঝছিল, ইরাকও বোঝে। তাইলে দখলের জন্য না খালি, সাম্রাজ্যবাদের নিজেদের অবস্থানের পক্ষে নৈতিক ভিত্তি আবিষ্কার করাটা নিজেদের জন্যই জরুরী না?

সাম্রাজ্যবাদের নৈতিক ভিত্তিটা কী – এই জায়গায় আসেন দেরিদা; পশ্চিমা চিন্তার মূলে কুঠারাঘাতকারী, কিন্তু তার প্রাণভোমরা এনলাইটমেন্টেরই সন্তান বলে প্রমাণিত। দেরিদা প্রসঙ্গে সলিমুল্লাহ খানের যে আবিস্কার, তার যিনি সমালোচক তারেও তার মতামতের বিক্ষিপ্ত এবং সম্পূরক কপি বলে স্মরণ করেছেন তিনি। ‘সত্য’ আলাদা কোনো ব্যাপার না, আমি এইটাই বুঝেছি বাদিয়ুর প্রসঙ্গে আমার সামান্য জ্ঞানে।

সাম্রাজ্যবাদ যে বুদ্ধিবৃত্তিক ভিত্তির উপর দাঁড়ানো, তারে প্রশ্ন করাটা জরুরি। সেই চেষ্টা ৭ নম্বর লেখাতেও জারি রাখতে চাইছেন সলিমুল্লাহ খান। আর আমি চেষ্টা করছি তার সাথে দ্বিমত হওয়ার জায়গাগুলিকে স্পষ্ট করার। কেননা সাম্রজ্যবাদের খেলা অনেক দূর পর্যন্ত ছড়ানো, আর তার বিপরীতে ‘সত্য’ মানে অসম্পূর্ণতা, ক্রমশঃ হইয়া উঠার একটি বিষয়, একটা বিকামিং। সেইখানে মূল বিষয় জাতীয়তাবাদের ইতিহাস না, বরং বিষয় পুঁজির বিকাশের ইতিহাস। সলিমুল্লাহ খানের অনুবাদগুলিও সাম্রাজ্যবাদ নিয়া, ডিফরেন্ট টাইপের টেক্সট এবং পুরানা-দিনের বাংলা বইলা পড়ার আরাম পাওয়া যায়।

আসলে একটা প্রস্তাব আছিল বইটাকে পরিচয় করাইয়া দেয়ার, কিন্তু আমি এই প্রসঙ্গে কয়েকটা তর্কের কথা-ই কইলাম। আশা করি পাঠক পড়ে দেখবেন বইটা কেননা আমার ধারণা, চিন্তার জন্য এই আলাপগুলি খুবই জরুরী, আর এর জন্যে একটা ভালো উছিলা ক্ষুদ্রকায় এবং দামি (আর্থিক এবং বুদ্ধিবৃত্তিক উভয় দিক থেকেই) এই গ্রন্থখানি ।

————————–

ফেসবুক নোটের লিংক: http://bit.ly/2g9g82U

 

গৌতম ভদ্রের আইকন: আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ

মুনশী আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ ও আত্মসত্তার রাজনীতি।। গৌতম ভদ্র।। প্রচ্ছদ: অমল আকাশ।। সংহতি।। সেপ্টেম্বর, ২০০৭।। পৃষ্টা: ৮৮।। দাম: একশত টাকা।।

 

“জাতি বলুন আর সমাজই বলুন, তাহাকে জাতীয় ভাষার সাহিত্য হইতে জীবনীশক্তি ও উহার আদর্শ খুঁজিয়া লইতে হইবে, জাতীয় ভাষার সাহিত্য হইতে রসাকর্ষণ করিতে হইবে, নচেৎ তাহার উন্নতি অসম্ভব। কেবল দুই-চারি জন শিক্ষিত ব্যক্তি লইয়া কিছু জাতি বা সমাজ হয় না, আপামর সাধারণ, শিক্ষিত, অশিক্ষিত সকলকে লইয়াই জাতি বা সমাজ গঠিত হয়। জাতীয় বা সমাজ দেহের অণুতে পরমাণুতে পর্য্যন্ত প্রবাহ সৃষ্টি করিবার একমাত্র উপায় মাতৃভাষা।”

“দেশপ্রচলিত আপামরসাধারণের বোধ্য ও নিত্য-ব্যবহৃত জীবন্ত ভাষাই সকল জাতির জাতীয় ভাষা হওয়া উচিত। তাহা হইলেই সেই জাতি সেই ভাষার সাহায্যে উন্নতির দিকে অগ্রসর হইতে পারে।”

“একমাত্র জাতীয় সাহিত্যের অভাবেই বঙ্গীয় মুসলমান-সমাজ আজও ‘যে তিমিরে সে তিমিরে’ রহিয়া গিয়াছে, এবং আরও বহুদিন এভাবে থাকিবে, তাহাতে আর সন্দেহ হইতে পারে না।”

 –  মুনশী আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ, বাংলার মুসলমানগণের মাতৃভাষা।

 

১. বইয়ের কথা

মুনশী আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ নিয়া আলাপ করছেন গৌতম ভদ্র। কি এর কারণ? এই প্রশ্ন নিয়াই দেখলাম, বইটা আসলে গৌতম ভদ্রের একটা লেকচার, কিছু এডিট কইরা  ছাপাইছেন। লেকচারটা উনি দিছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ-অধ্যয়ন কেন্দ্রের একটা প্রোগ্রামে ২৯শে সেপ্টেম্বর, ২০০৩ সালে। এরপরে আরো দুই-একটা জায়গায় উনি এইটা পড়ছেন আর ছাপাও হইছে কয়েকটা পত্রিকায়। বইটাতে উনার  লেখাটার পরে আবদুল করিমের একটা লেখাও রাখা হইছে ।

Continue reading

রঙিন চশমা

প্রথম প্রস্থ: গ্রন্থ-আলোচনা

আসলে একটা প্রকল্প হাতে নিছি। বইমেলায় যে বইগুলি কিনছি, তা পড়ে শেষ করবো আর সেইগুলি নিয়ে লিখবো ‘পাঠকের প্রতিক্রিয়া’; যেহেতু পাঠক, তুমিই গুরু। শেষ নিষ্ঠা, লেখকের! [pullquote][AWD_comments width=”294″][/pullquote]

খুব আগ্রহ নিয়াই কিনছি, মুহম্মদ জাফর ইকবালের ‘রঙিন চশমা’;  কারণ স্মৃতিকথা আমার প্রিয়। প্রিয় আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ। অবসর সময়ের রিডিং। সাবজেক্ট নিজে তার সর্ম্পকে বলছে! কী রকম একটা গূঢ় অভিব্যক্তি। মানুষ কখন বলে এইসব কথা, কেন মনে করে যে বলাটা জরুরি? এই জীবন-যাপন, কোনকিছু স্বীকার হঠকারিতা? আমি অনুভব করতে চাই সেইটা। সবগুলি একইরকম হয় না। অনেকগুলি ফাঁকি থাকে। অনেক বিস্মরণ থাকে, ইচ্ছাকৃত, অনিচ্ছাকৃত; থাকে বাছাই করা, অগূঢ় সেইসব জিনিস; একটু খেয়াল করলেই বুঝা যায়। তারপরও আমার আগ্রহ কমে না। মানুষ আসলে কী স্বীকার করতে চায়? কোন কথাটা সে বলতে চায়, নিজের সর্ম্পকে? কোন কোন ঘটনা? কোন কোন সত্যিগুলি, সে মনে করে যে তার নিজস্ব? যা-ই হোক, তা মানুষের বিবেচনা, যিনি লেখেন, লেখক, তার। আমি পাঠক, উছিলামত্র। সেইটা পড়তে বসি।

 

মুহাম্মদ জাফর ইকবাল

মুহাম্মদ জাফর ইকবাল

 

প্রচ্ছদ: রঙিন চশমা

প্রচ্ছদ: রঙিন চশমা

 

কিন্তু আমার আগ্রহ থেমে আসে, মাঝ পথে গিয়া। আমি ক্লান্ত হয়া পড়ি একসময়। মনে হয় আগেও হয়তো পড়েছিলাম, হয়তো কোথাও ছাপা হয়েছিল কয়েকটা, মানে বেশিরভাগই। কিন্তু একটানে পড়া হয়ে যায়। একটা আবেগী হিন্দি ছবি দেখার মতো এই বই পড়া, একটাই অনুভূতি খালি মনে লেগে থাকে। একটা শ্লেষ, অনেকটা আক্ষেপের মতো একটা কথা যে, তিনি যদি সত্যিকারের সাহিত্যিক হতেন তাহলে তিনি তার বাবাকে নিয়ে একটা বই লিখতেন, তিনি সাহিত্যিক না বলেই বানিয়ে বানিয়ে মহাজাগতিক আগন্তুকের গল্প লিখেন। এইরকম একটা স্বীকারোক্তি। কথাটা সত্য বা মিথ্যা এইরকম না, কিন্তু কথাটার ভিতর কেমন একটা প্রাণের অস্তিত্ব টের পাই। মনে আছে, মার্ক শাগালের আত্মজীবনীর ভিতর একটা জায়গায়; সে বলতেছিলো যে, এর পরের লেখাগুলি আমার নিজের জন্যে লেখা; তারপর, মা’র কথা বলে কাঁদতেছিলো, লোকটা। আমার মনে হয়েছিল যে, ওই কথাগুলা বই থেকে বের হয়ে পাঠকের পাশে বসে আছে। কান্নার শব্দগুলি শোনা যাচ্ছিলো, তখন। এই এত দূরে বসেও। এইরকম মোহময়তা!

Continue reading

আমাদের রাশোমন গল্প

 

রাশোমন’ গল্পের একটাই বিষয় আছে, তা হচ্ছে সংশয়ের তীর, যা সবাইকে বিদ্ধ করেছে – কাহিনীকার, চরিত্র ও পাঠককে। ঘটনার ঘটার সময় আমরা কেউই ছিলাম না, তাই আমরা সবাই আবিষ্কার করতে চাইছি একটা কারণ আর এই ‘কারণ’ নির্মাণ লাভ করছে আমাদের পারস্পরিক সর্ম্পকের লুকানো গহ্বরগুলি পূরণের উদ্দেশ্যে, যদিও আমরা নিজেদের পরিখা খনন করে চলেছি, পরোক্ষে। যেহেতু ছিল না, যেহেতু নাই, অথচ নিশ্চিতভাবেই জানি, আমরা তৈরী হয়ে গেছি; পরস্পরের সান্নিধ্যেই উপলদ্ধি ঘটছে এর, তাই ধরে নিচ্ছি এইখানে জড়িত আমরাই। অব্যর্থ নিয়তি এই মানব ভাবনার। এইখানে মুক্তি প্রত্যাশী যে কেউই নিরবতার গলিতে হাতড়ে মরে, অবশেষে সুদূর কোন আলোকবিন্দুকে পরিত্রাণের মহিমা বলে ভাবার আগেই চেতনা ফিরে পাবে; প্রলাপে মগ্ন হয়ে দেখবে পরস্পরের মরীচিকা।

যে কোন পথে, যে কোন দিকেই, উত্তর খুঁজে পাওয়া যাবে না আর। Continue reading