কবিতা: অগাস্ট, ২০২১

পুরান কবিতার মতো

লোভ লাগে,
ইচ্ছা করে পুরান কবিতার মতো
আরেকটা কবিতা লেখি;

পুরান কবিতাগুলা হাসে,
আমার গালে হাত বুলায়া দেয়,
যেন একটা মা তাঁর বাচ্চা ছেলেরে
আদর করে দিতেছে;

পুরান কবিতাগুলার কথা মনে কইরা
আমি নতুন একটা কবিতা লেখি

কেরু খাই, কবিতা লেখি

কেরু খাই, কবিতা লিখি

আর্ট-কালচার করা লোকেরা
কয়, এইসব কি!
অশ্লীল কথা-বার্তাই
আজকাল
কবিতা নাকি!

অথচ
কাওরান বাজারের লেবার’রা
বাংলা-মদের বারে
আমারে
ঠেস মাইরা কয়,
“ভাই, ভালোই তো ভাব
চুদাইলেন!”

নভেল

লেখক বলিলেন, “আমি আমার মনের মাধুরী দিয়া
চরিত্রটিকে রূপ দান করিয়াছি।”

কারেক্টার’টা কইলো, “ভাই, আমি তো একটু আমার মতোও হইতে পারতাম!”

হোয়াট ইজ অ্যা গরু?

সংজ্ঞার জামাটা পরানো হইলো গরুটারে,
কিন্তু লেজটা তার বাইর হয়া-ই থাকলো

ডেফিনেশনের এই পেরেশানি দেইখা
পরে গরুটাই কইলো, বাদ দেন!

অই জিনিস এতোটা গরু তো না!

Continue reading

কবিতা: জুলাই, ২০২১

মেটাফোর ২

ভাবতে ভাবতে একটা মানুশ গাছ হয়ে যাইতেছে,
অনেকগুলা ভাবনার পাখি বসতেছে আইসা তার ডালে

ঘটনার বৃষ্টিতে অরাও তো ভিজতেছে!

কারাগারের রোজনামচা

জেলখানাতে তো জায়গা কম,
জেলখানাগুলা বাইরে চলে আসছে,
আমাদের ঘরে ঘরে, রাস্তায়, মনের ভিতরে ঢুকে গেছে

জেলার তো খুবই দরদী, টিভিতে-পত্রিকাতে
আমাদেরকে নিয়া কান্দে, কয়
তোমাদের লাইগা আমার খারাপ লাগে তো!
তোমরা কই কই থাকো!
তোমাদের লাইগা আমরা জেলখানা প্যাকেজ নিয়া আসছি

এতো জেলখানা তো আমরা বানাইতে পারবো না,
তোমরা তোমাদের’টা বানায়া নিবা, আর
আমরা তোমাদের জেলখানাগুলা পাহারা দিবো,
যার জেলখানা যতো সুন্দর, সে তত সুনাগরিক হবা,
এওয়ার্ড-টেওয়ার্ডও দিবো…

তোমরা জেলখানা বানাও – হিস্ট্রি দিয়া, গান দিয়া,
গল্প, কাহিনি, নাটক দিয়া দেখাও
জেলখানা কতো সুন্দর!

আমাদের জেলখানাগুলা সুন্দর,
তবু ফুল ফুটে, এবং পাখি গান গায় টাইপ

আমরা যে জেলখানাতে আছি – এইটা বুঝছো,
বুঝা-ই যায় না!

দুনিয়া’টাই তো দুইদিনের জেলখানা – এইভাবে
আমরা বুঝাই আমাদেরকে, আর মন
তো পোষ-না-মানা পাখি,
থাকতে থাকতে সবকিছুই সে বুইঝা যায়,
খালি বলে, জেলখানার দেয়ালগুলা মনেহয় সইরা আসতেছে,
এরা দমবন্ধ কইরা মাইরা ফেলবে না তো একদিন?

মন’রে আমি বলি, শোনো, এইগুলা তোমার প্যারানয়া,
আমাদের জেলখানা এতোটা অমানবিক না!

এই যে আমি কবিতা’টা লিখতেছি,
এইটাও কিন্তু দেখতেছে অরা, সিসি ক্যামেরা দিয়া
হাসতেছে, মনেহয় বলতেছে, বোকাচোদা…

এইরকম বোকাচোদা হয়া থাকো মন!
জেলখানার দিনগুলার ভিতর!

নিউ মুন

ফিরা আসবো,
তারপরে বলবো, হারায়া গেছিলাম!

বাসার সামনের কুত্তাটা ঘেউ ঘেউ করবে কিছুক্ষণ

Continue reading

কবিতা: জুন, ২০২১

বৃষ্টির কবিতা

বৃষ্টি তো পড়তে পড়তে শেষ,
বৃষ্টি গান গাইতে গাইতে শেষ
গাছের পাতা, রোড-ঘাট, বিল্ডিংগুলা ভিজতে ভিজতে শেষ
বৃষ্টির কবিতা – তুমি কই?
এখনো ঘুমাইতেছো?
বৃষ্টি তোমারে ঘুম পাড়ায়া দিতেছে?
একটা ঘুম-পাড়ানি গানের মতো,
বৃষ্টি তোমারে জাগায়া রাখতেছে,
একটা আবছা ড্রিমের মতো?
নাকি উইঠা পড়তে হবে, অফিস যাইতে হবে
রাস্তায় বাস নাই, সিএনজি, রিকশা নাই, আর
বৃষ্টি বাড়তেই আছে,
যেইভাবে একটা ডিপ প্রেম যাইতে থাকে একটা কঠিন হেইট্রেটের দিকে
এইরকম বৃষ্টি পড়তেছে, কিন্তু
বৃষ্টির কবিতা নাই

যারা বৃষ্টিতে ভিজে, অদের বৃষ্টির কবিতা লাগে না গো সই!

বৃষ্টি পড়তেছে, বৃষ্টি বলতেছে
একটা বৃষ্টির কবিতারে।

 

বর্ষা

একটা ফুল
একলা
ফুটে আছে

আর
ভিজতেছে
বৃষ্টির পানিতে

 

শব্দগুলা

“আহ্
যদি আমরাও
শিখতে পারতাম
চুপ কইরা থাকা!”

সব কিছু উল্টা-পাল্টা
করার পরে,
মাফ চাওয়ার মতন
শব্দগুলা বলে আমারে,
বাটপারগুলা

 

দুপুরের ঘুম

জীবন,
একটা ড্রিমের মতন
ধীরে ধীরে দূরে চলে যাইতেছে,
আমার ঘুম ভেঙ্গে যাইতেছে

একটা কুত্তা কুন্ডলী পাকায়া শুইয়া আছে রাস্তায়,
অর চোখের পাতার ভিতর নড়তেছি আমরা,
আমাদের ঘুম ভাঙতেছে না Continue reading

কবিতা: মে, ২০২১

মে দিবসের গান

একটা প্রলেতারিয়েতদের বিপ্লব হওয়ার কথা ছিল,
সেইটা যে হইতেছে না – লেবার’রা এইটা জানে না,
এখন রেভিউলেশন হয়তো হইতে পারে, কিন্তু এর
লাইগা অদেরকে শ্রমিক হইতে হবে, রেভিউলেশন
করার চাইতে তো অইটা আরেক প্যারা, শরমিক
হওয়ার পরে নিজেদেরকে লেবার বইলা অপমান
করা যাবে না, মানুশ হইতে গেলে আবার ষ লেখা
লাগবে, শ দিয়া হবে না; তাইলে ইদের আগে বেতন
কি দিবে অরা? না, বোনাস-ই দিবে, বেতন বাকি
থাকবে মনেহয়, অইটা ব্যাকারণ-সম্মত হবে কিনা
পে-রোলের বাংলা কি হবে? এইসব ডিসিশান নিতে
টাইম লাগবে তো আরো… ততদিনে কুরবানি চইলা
আসবে, বিপ্লব দীর্ঘজীবী হইতে হইতে গলার জোর
কইমা আসবে, চামড়া ঝুইলা আসবে, কাশি কাশি
লাগবে, কিন্তু আমাদের জিদ কমবে না, আমরা তো
একটা কিছু করতে চাইছিলাম, জীবন-যৌবন দিয়া
এনজয় করছিলাম বিপ্লব-বিপ্লব খেলা আর ভালোও
বেসেছিলাম, এ-কার দিবো নাকি আ-কার ঠিক কর
তে পারতেছিলাম না বইলা দেরি হইতেছিল, বলতে
ছিলাম, একটা প্রলেতারিয়েত বিপ্লব হওয়ার কথা ছি
ল, লাইনে জায়গা নিতেছিল না, আর চুতমারানিরা
বুঝছো, নিজের ভালোটাও তো বুঝে না, বুঝাইতে
বুঝাইতে আমাদের জীবন-যৌবন, বুঝছো, যাইতেই
থাকলো, গান গাইয়া, কবিতা লেইখা, প্রথা-বিরোধী
হয়া, তারপরও আমাদেরই থাকতে হইলো, দুয়েক্টা
প্রাইজ-টাইজ ছিল না, কিন্তু অনেক মদ ছিল, ছিল
না আসলে, আমরা ভাবতামও না, কি কি আমাদের
ছিল, যা ছিল না, তা নিয়া চিল করতাম খুব, বিপ্লব
জিনিসটাই খালি হইতে হইতে হইলো না, কিন্তু হবে
বুঝছো, আমরা ট্রেনিং নিতেছি, তোমাদেরও বুঝায়া
শিক্ষিত কইরা ফেলবো, তখন তোমরা বিপ্লবের মুড়ি
খাবা, আর আমরা, বটগাছের তলায় বাঁশি বাজাবো
পোঁ পোঁ পোঁ, পোঁ পোঁ পোঁ, পোঁ পোঁ পোঁ, পটাস…


ঝড়

একটা গাছের ছায়া, গাছ’টারে বলতেছে,
“হেই, তুমি এতো তাউরাইতেছো কেন?
আমার ডিস্টার্ব হইতেছে তো!”

 

আমি বইলা যা যা কিছু আছে, থাকতে চাইতেছে…

আমি হইতেছি ব্রিজ
আমি হইতেছি ব্রিজের নিচের ট্রাবল ওয়াটার,
আমি ব্রিজের নিচে স্রোতের পানিতে ডুইবা যাওয়া স্মৃতির অন্ধকার

আমারে দেখে চাঁদ, একটা টর্চের আলোর মতো
আমারে শোনে রাতের ট্রেন, তার ঝিক ঝিক ঝিক আওয়াজের মতো
আমারে আদর করে দেয় ঝড়ের শেষের একটা শান্ত বাতাস; বলে, ঘুমাও তো!

আমি অন্য কোন পথ, যেই পথ তুমি হাঁটো নাই
আমি অন্য কোন আত্মা, যার বাঁইচা থাকাটারে তুমি ভয় পাও
আমি যে কোন একটা সময়, ধীরে ধীরে নাই হয়া যাওয়া, একটা ঘটনা

 

জুতা কাহিনি

ইগো’র জুতাগুলা
পায়ে পড়ার পরে
তুমি খুলতে ভুলে গেছো

এইটা আমাদের ঘর
তোমার জুতাগুলা
খুইলা আসো

বসো,
কথা বলি, জুতাগুলা
খুইলা রাখার পরে, আমরা

Continue reading

কবিতা: এপ্রিল, ২০২১

একটা পাথর

একটা পাথর
নিজের না-বলাগুলারে
এতোটা জোরে নিজের ভিতরে
চাইপা ধরলো যে,
তার ভিতর থিকা ফোয়ারা’র পানি
বাইর হইতে থাকলো, নদী হয়া উঠলো
যাইতে যাইতে গিয়া মিশলো না-বলা কথার দরিয়ায়

যেইখানে সব কথা আইসা মিশে,
সব কথা তাদের মিনিং হারায়া ফেলে,
ডুইবা যায়, আবার…

আমাদের সব দুঃখগুলা, না-বলতে পারার ভাষাগুলা
এইভাবে একদিন কথার নদী হয়া উঠে, আর
গাছ-গাছালি, পশু-পাখি, মাটি আর মানুশ
হায় হায় কইরা উঠে, সেই নদীর পাশে গিয়া বসে, কয়
“আমারে তো তুমি বলতে পারতা! আমারে তো তুমি বলতে পারতা!”

দুঃখগুলা এইভাবে একটা সময় পরে হয়া উঠে অন্যকিছু…
আমাদের দুঃখগুলা এইরকম একটা পাথর
চুপচাপ বইসা থাকে আমাদের নিরবতার ভিতর

 

ঘোড়ার ডিম

(মিডিয়া-রিয়ালিটি ১)

টিভি’তে, একটা ঘোড়া
টগবগ টগবগ কইরা দৌড়াইতেছে

আমরা দেখতে দেখতে ভাবতেছি,
ঘোড়া’টা যদি না থামে, ডিম’টা কি
পাড়তে পারবো আমরা?

 
আরেকটা ডরের ভয়ে

আরেকটা ডরের ভয়ে
এই ডর’টারে আমরা ভালোবাইসা ফেলবো
বলবো, “আরে, আমরা ডরাই নাকি!
আমরা ন্যায় ও প্রগতির পক্ষে কথা বলতেছি তো!”

তারপরে ডর’টার ভিতরে
গুটিশুটি হয়া শুইয়া থাকবো
নিজেদেরকে বলবো, কথাদেরও কান আছে, বুঝছো!

আমরা ডরাই না, কিন্তু আরেকটা ডরের ভয়ে
সবসময় আমরা থাকবো চুপ হয়া থাকবো!

 

সকাল

সুন্দর একটা সকাল, শেষ বসন্তের।
রাস্তায় কুত্তাগুলা ঝিমাইতে ঝিমাইতে ঘুমায়া পড়তেছে,
কবরস্থানের গাছগুলাতে বইসা পাখিগুলা কথা বলতেছে,
বাচ্চাগুলা খেলতে খেলতে ঘর থিকা বাইর হয়া আসতেছে,
সামনের একটা প্লটে, কন্সট্রাকশনের কাঠ ও লোহা পিটাইতেছে লেবার’রা,
রইদ আইসা দাঁড়াইতেছে বারান্দার টবের কাছে,
বাতাস বলতেছে, হেই সকাল হইছে!

আমাদের রাতের ঘুম কাটতেছে না,
আমাদের সকাল কোনদিনও হবে – আমরা ভাবতে পারতেছি না

সারাক্ষণ তাহাজ্জুদের নামাজের সময়ের অন্ধকারের
একটা ডরের ভিতর আমরা থাকি,
আমাদের সকাল হয় না, আমরা সকাল দেখতে পারি না

সকাল’টা তখন কুত্তাদের ঘুমের ভিতর,
চুপ-হয়া আসা পাখিদের কথা’র ভিতর
ঘরে ফিরা যাওয়া বাচ্চাদের নিরবতার ভিতর
কন্সট্রাকশনের উন্নয়নের আওয়াজের ভিতর
হারায়া যায়; আর আমরা বলি, আমাদের কোনদিনও সকাল হবে না…

 
জহির রায়হান

“সামনের ফালগুনে আমরা কিন্তু আরেকটু কম ভয় পাবো…”

Continue reading