নোটস: জুলাই, ২০২২ [পার্ট ৩]

জুলাই ২২, ২০২২

পরান সিনেমাটা তো ভালো হওয়ার কথা। (আনফরচুনেটলি, না দেইখাই বলা লাগতেছে।) কিন্তু প্রেমিক মানেই যে প্যার্টিয়ার্ক্যাল একটা পজিশন – এই বেদনাটাই এই সিনেমার মেইন সেলিং পয়েন্ট হওয়ার কথা। যেহেতু কেউ কইতেছে না, এই কারণে বলা লাগলো একটু।

তো, এইটাও সমস্যা না। এই জায়গা থিকা না যে, পপুলার আর্টে পপুলার ন্যারেটিভগুলা থাকবেই, বরং “সিনেমা হবে সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার” – এইরকম সিউডো জায়গা থিকাও এইরকমের ঝামেলাগুলা হইতে পারে। কিন্তু কোন আর্টই সমাজের বাইরের ঘটনা না, কোন না কোন ইন্টেলেকচুয়াল আন্ডারস্ট্যান্ডিং’রে ক্যারি করার কথা।…

এই জায়গা থিকা যদি দেখেন, বাংলাদেশি সিনেমাতে তো এইগুলাই হয়, বা প্যাটিয়ার্ক্যাল প্রেমিক যেন “হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতি”র মতন একটা ব্যাপার! – এইটা ঠিক না আর কি!

এটলিস্ট একটা সিনেমার কথা আমি বলতে পারি, যেইখান প্রেমিক মানে স্যাক্রিফাস করার একটা পজিশন। ১৯৭৯ সালে মতিউর রহমান পানু’র “হারানো মানিক” এইরকম একটা সিনেমা, যেইখানে আলমগীর হইতেছে ববিতার প্রেমে পড়ে, কিন্তু পরে বুলবুল আহমেদের প্রতি তাঁর প্রেম দেইখা “ভাই” হয়া যায়। এবং শেষে তাদের “মিলন” ঘটায়া দেয়।

মানে, এইসব জিনিসও আছে, বাংলাদেশি সিনেমায়। অনেক বেশি না হইলেও, খেয়াল করার মতো পরিমাণেই থাকার কথা।…

***

এইরকম কিছু লোক আছেন, যারা মনে করেন, বলদ হইতে রাজি হইলেই, ‘কিছু বুঝি না আমরা’ বা ‘কিছু বলি না আমরা’ টাইপের একটা পজিশন নিতে পারলেই তাদের উপরে জুলুম একটু কম হবে। (মানে, সবকিছু আপনারে বুইঝা ফেলতে হবে না, কিন্তু বুঝতে না চাইলেই জুলুমগুলা বন্ধ হয়া যাবে না আর কি!)

জুলুম সিলেক্টিভ কোন ঘটনা না। বাজারে চাইলের দাম, পেঁয়াজের দাম, তেলের দাম যখন বাড়ে তখন সবাইরে অই বাড়তি দাম দিয়াই কিনতে হয়। লোডশেডিং যখন হয় তখন ঢাকাতে কম হয় একটু, কিন্তু সবাইরেই বিদ্যুত-খাতে লুটপাটের এই মাশুল দিতে হয় – জেনারেটরের তেল কিইনা অথবা গরমে ঘাইমা। মানে, জুলুমের প্রেশার নিতে হবে আমাদের সবাইরেই।

আমি তো জানতাম না, আমি তো বুঝি নাই – এই পজিশন নিলেই বাকশালি জুলুমের কাছ থিকা রেহাই পাইবেন না।

Continue reading

নোটস: জুলাই, ২০২২ [পার্ট ২]

জুলাই ১১, ২০২৩

– বাংলাদেশের বেস্ট “ওয়েস্টার্ন মুভি” কোনটা? –

প্লিজ, সারপ্রাইজড হইয়েন না!

বাংলাদেশের সো-কল্ড ফিল্ম-ক্রিটিকরা এই জনরা’টারে রিকগনাইজ করতে পারেন নাই বইলা (বা ইন ফ্যাক্ট বাংলাদেশি সিনেমা উনারা দেখেন নাই বইলা) এই ক্যাটাগরিটা এগজিস্ট করে না – এইটা সত্যি না।

অনেকগুলা “ওয়েস্টার্ন” সিনেমাই বানানো হওয়ার কথা বাংলাদেশে, স্পেশালি সোহেল রানা’র ঘোষণাও থাকার কথা, যে উনি ওয়েস্টার্ন সিনেমা বানাইতেছেন! দস্যু বনহুর (১৯৭৬) এবং আসামী হাজির (১৯৭৮) দুইটা সিনেমার কথা মনে হইলো। শুরুতে ইবনে মিজানের, পরে দেওয়ান নজরুল, অশোক ঘোষ এবং এফ.কবিরেরও [উনারা বাংলাদেশি সিনেমার ডিরেক্টর, নাম না জানলে এইটা উনাদের দোষ না, আপনার না-জানার ঘটনাই…] থাকার কথা কিছু জিনিস। এইগুলা হলিউডি ওয়েস্টার্ন, বা ইতালিয়ান-ইউরোপিয়ান স্প্যাগেটি-ওয়েস্টার্নের চাইতে ডিফরেন্ট তো অবশ্যই।…

এখন হরেদরে এই সিনেমাগুলারে “ফোক-ফ্যান্টাসি” ট্যাগ মারা হইছে। “রূপবান” “কাজল রেখা” “সাত ভাই চম্পা” যেই ক্যাটাগরির “ফোক”, দস্যু বনহুর” বা “মতিমহল” একই ঘটনা না; মানে, কোন “লোক-কাহিনি” থিকা এডাপ্ট করা হয় নাই। বরং সরাসরি হলিউডি “ওয়েস্টার্ন” সিনেমা না হইলেও ক্যাটাগরি হিসাবে কাছাকাছি জিনিসই হওয়ার কথা অনেকগুলি সিনেমা। জাস্ট এই জায়গাটারে খেয়াল করা হয় নাই।

খেয়াল না করার একটা মেজর কারণ হইতেছে ইন্ডিয়ার পশ্চিম-বাংলায় এই ধরণের জিনিস কোনদিন বানানো হয় নাই। উনাদের এক ধরণের ঘোড়া-ভীতিও থাকার কথা যে, ঘোড়া দেখলেই মনেহয় মুসলমান! 🙂 এর বিপরীতে যখন বাংলাদেশি সিনেমায় ঘোড়া যখন একটা ক্যামেরায় আসে, সেইটারে “অ-বাঙালি” বইলা বাতিল করার একটা টেনডেন্সি থাকার কথা।…

মানে, কলকাতার সিনেমায় কোন ঘোড়া পাইবেন না, ইংরেজ আমলের আগে এদের হিস্ট্রি যাইতে পারে না, কারণ কোন হিস্ট্রি নাই আসলে; মানে, হিস্ট্রি তো আছেই, হিস্ট্রিতে কলিকাতা বইলা কোন জিনিস নাই, ছিল না। এই কারণে যখন সিম্বল হিসাবে ঘোড়া আসে ফিল্মে, সেইটা প্রি-কলিকাতা একটা ঘটনা হয়া উঠে, যেইটা আসলে নন-কলিকাতা একটা জিনিস আসলে।

তো, এইরকম ‘হাজার হাজার’ ভুল-রিডিং আছে বাংলাদেশি সিনেমা নিয়া। কলিকাতার কষ্টি-পাথর দিয়া যাচাই করতে যাওয়ার কারণে। এখন আপেলের গুণাগুণ দিয়া আম’রে মাপতে গেলে তো মনেই হবে যে, আম তো এতোটা ভালো আপেল না!

একটা উদাহারণের কথা বলি, “সমাধি” নামে (১৯৭৬) একটা সিনেমা আছে। [নামে তো চিনবেন না সিনেমাটা, সিনেমার গান দিয়া চিনবেন, “বন্ধু তোর বরাত নিয়া আমি যাবো” গানটা অনেকের শোনার কথা, মনে থাকার কথা, সুবীর নন্দী আর খুরশিদ আলমের।] অইখানে অলিভিয়ার ড্রেস-আপ “ওয়েস্টার্ন”, ঘোড়ায় চড়ে। রাজ্জাক আর ববিতা হইতেছে গ্রামের মানুশ। অলিভিয়া, উজ্জ্বল জমিদার/রাজা [দুইটা কিন্তু কাছাকাছি ক্যাটাগরিই। আগের দিনের রাজা ধরেন, এখনকার পৌরসভার চেয়ারম্যান বা এমপি’র মতোই অনেকটা… ] । তো, রাজ্জাক এক সময় আউট-ল হয়া উঠে। ববিতারে যেহেতু চাবুক দিয়া মারে অলিভিয়া, রাজ্জাক আর অলিভিয়ার কাইজ্জা লাগে।…

মানে, এইটা পুরাপুরি ওয়েস্টার্ন সিনেমা না। কিন্তু এইটার কিছু সিগনেচার আছে, ওয়েস্টার্নের। এমনকি কোন ওয়েস্টার্ন সিনেমা বেইজ কইরাও সিনেমা বানানো হয়া থাকতে পারে, বাংলাদেশে। যারা অনেক বেশি বাংলাদেশি সিনেমা দেখছেন ১৯৭৬ – ১৯৮৯ সময়টাতে, আমার ধারণা, উনারা আরো কনফিডেন্টলি বলতে পারবেন। আমি পসিবিলিটির কথা কইলেও, মোটামুটি শিওর যে, বাংলাদেশে ওয়েস্টার্ন সিনেমা এটলিস্ট ৫-৭টা হইলেও বানানোর চেষ্টা হইছে। নামগুলা জাস্ট খুঁইজা বাইর করতে হবে আর কি!

Continue reading

নোটস: জুলাই, ২০২২ [পার্ট ১]

জুলাই ২, ২০২২

(কিশোরগঞ্জ জেলার) মিঠামইন-ইটনা-অষ্টগ্রামে ৯০০ কোটি টাকা খরচ কইরা যেই ৩০ কিলোমিটার রাস্তা বানানো হইছে ২০১৬-২০২০ সালে, অইটার অনেক প্রশংসা কিছুদিন আগ পর্যন্তও চালু ছিল। অনেক ছবি-টবিও দেখছি আমরা। কিন্তু একটা ইন্টারেস্টিং জিনিস হইতেছে এই রাস্তায় কোনদিন কোন বাস, ট্রাক, প্রাইভেট কারের ছবি দেখি নাই। কয়েকটা সিএনজি বা মোটর সাইকেলের ছবিই দেখছি।

মানে, রাস্তা আছে, কিন্তু রাস্তায় কোন গাড়ি নাই… তো, ঘটনা’টা কি?

ঘটনা হইতেছে, এই রোডের লগে দুনিয়ার কোন রোডের কোন কানেক্টিভিটি নাই। এবং এই খবরটা বাকশালি-মিডিয়ার ১০০টা পত্রিকা ও টিভি-চ্যানেলে এখন পর্যন্ত একবারও বলা হয় নাই। যে, এমন একটা রাস্তা বানানো হইছে যেইটার লগে বাংলাদেশের কোন রাস্তার কানেকশন নাই। বাস-ট্রাক-প্রাইভেট কার কিছুই চলে না এই রাস্তায়।

তো, এই যে কোন কারণ ছাড়া “উন্নয়ন” – এইটা তো বাকশালের সিগনেচার ঘটনা [কারণ মেইন উদ্দেশ্য হইতেছে, টাকা মাইরা খাওয়া, যেইটা ‘উন্নয়ন’ ছাড়া পসিবল না], শুরু থিকাই; কিন্তু এর লগে, বাকশালি-মিডিয়ার যেই বয়ান, “উন্নয়ন-প্রচার” যে খুবই ইন্ট্রিগ্রেটেড একটা ঘটনা – এইটা খেয়াল করাটা দরকার।

কোন কানেক্টিভিটি ছাড়া, গাড়ি-বাস-ট্রাক চলবে না, এইরকম একটা রোড যে বানানো হইছে – এইটা কইলে কেউ পত্রিকা-অফিস বা টিভি-চ্যানেল তো বন্ধ কইরা দিবে না! বরং এই কথাগুলা না-বলাটা, “উন্নয়ন-সহযোগী” হওয়াটা হইতেছে, বাকশালি-মিডিয়ার নিজেদেরই ডিসিশান। এইটা কোন সেলফ-সেন্সরশীপও না ইভেন, এইগুলা হইতেছে গোলামির নিশান।

Continue reading

নোটস: জুন, ২০২২ [পার্ট ৩]

জুন ২১, ২০২২

রাতের বেলা, যেই ভাতের হোটেলে খাইতে বসছি, সেইটার ক্যাশে বসা দোকান-মালিক তার ফ্রেন্ডরে মোবাইলের স্ক্রিন দেইখা জোরে জোরে পইড়া শুনাইতেছে, কি কি খোলা থাকবে আর কি কি বন্ধ থাকবে, রাত ৮টার পরে। পড়তে পড়তেই চেইতা যাইতেছে সে। ফ্রেন্ড কইতেছে, তোর দোকান তো খোলাই থাকবো, দোকান তো বন্ধ করা লাগবো আমার। ভাতের হোটেলের মালিক তা-ও চেইতা গেলো, বন্ধ করা লাগবো ক্যান! পুলিশরে ৫০০ টাকা দিয়া, সামনে দুইটা সিগারেটের প্যাকেট থুইয়া দোকান খোলা রাখা লাগবো তখন! বেচাকেনা শুরুই হয় রাতের ৮টার পরে। সব দোকান বন্ধ থাকলে, হোটেলের লাইগা মানুশ আসবো নাকি! সরকারি অফিসের এসি বন্ধ করে না ক্যান শুয়োরের বাচ্চাগুলি! সব কিছু খালি আমাদের উপ্রে! ভ্যাট-ট্যাক্স কি এই কারণে দেই নাকি!

ফ্রেন্ড তো ডরায়া গেলো তার গলার টোন শুইনা, কয়, এতো জোরে কথা কইস না! পরে নিয়া জেলে ঢুকাইবো। কিন্তু ভাতের হোটেলের মালিক চেতছে সিরিযাসলি, কয়, তুই কথা কইস না, আমিও কবো না, তাইলে বাল করবো’টা কি! দেশটারে একটা গোরস্তান বানায়া রাখছে!
ফ্রেন্ড দেখলো, অবস্থা খুবই খারাপ। এইখানে দাঁড়ায়া থাকলে পুলিশে ধইরা নিয়া যাওয়ার পসিবিলিটি আছে 🙂 কোন কথা না কইয়াই সে চইলা গেলো। দোকান-মালিকও ফোঁস ফোঁস করতে করতে চুপ মাইরা গেলো।

২.
দই খাইতে এক দোকানে ঢুকলাম, আমরা পাঁচ-ছয়জন। রাত দশটা-সাড়ে দশটা বাজে। রাস্তা ক্রস কইরা দোকানে ঢুকানোর সময় একটা পুলিশ ভ্যান গেলো। দোকানে ঢুইকা নানান কথার ফাঁকে একজন কইলো, বাজারে গমের রেইট ৪০ টাকা কেজি, আর সরকারি গুদামে গম কেনার ঘোষণা দিছে ২৮ টাকায়। এই দামে কে বেচবে? তখন আরেকজন কইলো, সরকারি-লোকজনই আড়তদারদের-মজুতদারদের সুবিধা দেয়ার লাইগা এইগুলা করে।… আমি কইলাম, এইখানে একটা চক্র আছে, সরকারি-ইন্সপেকশন যারা করবে, যারা মজুত করবে আর পলিটিক্যাল দলের লোকজনের। এখন পর্যন্ত কোথাও আলাপ নাই, সরকারি গুদামে কতো চাইল আছে, পাইপলাইনে কি আছে! এইগুলা না-জানায়া বরং মজুত-করারে উৎসাহ দেয়া হইতেছে। দোকানের বেচা-বিক্রি তো কমে যাইতেছে, কম বেইচাই আগের লাভ করার লাইগাও দাম বাড়তেছে! কোন মজুতদারিই সরকারি মদদ ছাড়া ঘটতে পারে না আসলে।…

দুইজন লোক বইসা ছিলেন পাশের টেবিলে। উনারা পুরাটা ঘুইরা আমাদের দিকে হা কইরা তাকায়া রইলেন! বলার পরে খেয়াল করলাম। উনারা মাইর-টাইর দেন কিনা – এই ভয় পাইতেছিলাম। তখনই সিভিল-ড্রেসে দুইটা ইয়াং পুলিশ ঢুকলো দোকানে। ওয়াকি-টকি’টা জোরে রাখলো টেবিলের উপরে।… আমরা বুঝলাম, আর কথা বাড়ানো যাবে না। উইঠা পড়লাম।

উঠতে উঠতে শুনি, কিউট রকম চেহারার ইয়াং পুলিশটা দোকানদাররে বলতেছে, সবচে দামি দুইটা মিষ্টি দেন!

Continue reading

নোটস: জুন, ২০২২ [পার্ট ২]

জুন ১১, ২০২২

বাংলা-কবিতার এন্থোলজি

বাংলা-কবিতার এন্থোলজি তো কমই। ১০-১২টার বেশি নাম শোনা যায় না। দশক-টশক ধরলেও ২৫-৩০টার বেশি হওয়ার কথা না। বলবার মতো ফার্স্ট এন্থোলজি ছাপাইছিলেন বুদ্ধদেব বসু ১৯৫৪ সালে “আধুনিক বাংলা কবিতা” নামে, পরে ১৯৬৩ সালে আপডেট করছিলেন শেষমেশ। ৫৭ জন কবি’র মধ্যে ফিমেইল কবি ছিলেন একজন – বাণী রায়, মুসলমান কবি ছিলেন তিনজন – নজরুল ইসলাম (কাজী লেখা হয় নাই, মানে, কবি’র নামই চেইঞ্জ কইরা দিছে) জসীম উদ্দীন (জন্মের জায়গায় লেখা হইছে “তারিখ জানাননি” 🙂 মানে, কবি’র দোষ এইটা) আর হুমায়ূন কবির। মানে, এইটা ছিল বেটা-মানুশ এবং হিন্দু-কবিদের কবিতার একটা এন্থোলজি আসলে।

সেকেন্ড যেই এন্থোলজির কথা শুনবেন সেইটা হইতেছে হুমায়ূন আজাদের “আধুনিক বাঙলা কবিতা” নামে, ১৯৯৩ সালে ছাপা হইছিল সেইটা। এইখানেও ৪৪ জন কবি’র মধ্যে ফিমেইল-পোয়েট আছেন একজন – সাধনা মুখোপাধ্যায়। আর ৪৪ জনের মধ্যে বাংলাদেশের কবি আছেন ১৫ জন। কাজী নজরুল ইসলাম, জসীম উদ্দিন তো বাদ গেছেনই ফররুখ আহমদ, আল মাহমুদও ইনক্লুড হইতে পারেন নাই। মানে, কারা কারা বাদ পড়ছেন, সেইটাই ছিল এই এন্থোলজির মেইন সিগনিফিকেন্স।

থার্ড যেই এন্থোলজি’টা, অইটা পুরাটাই বাংলাদেশের কবিদের 🙂 [কিন্তু ব্রিটিশ-পিরিয়ডের বা তার আগের কবি’রা সব ইন্ডিয়ার হয়া গেছেন, বাংলাদেশের থাকতে পারেন নাই]। এই এন্থোলজি’টা কাগজে-কলমে বানাইছেন ইন্ডিয়ান-বাংলার কবি রণজিৎ দাশ, ছাপাও হইছে ইন্ডিয়া থিকা, কিন্তু রণজিৎ দাশ বলছেন যে, উনারে “গাইড” করছেন বাংলাদেশের কবি সাজ্জাদ শরিফ। নাম হইতেছে “বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ কবিতা”। ২০১০ সালে এইটার সেকেন্ড এডিশনে ৮৫ জন কবি’র কবিতা রাখা হইছিল। ফার্স্ট এডিশনে ৬০জন কবি’র কবিতা ছিল, পরে ২৫ জনের কবিতা অ্যাড করা হইছিল। এইখানে জেন্ডার হিসাবে ফিমেইল আছেন ৬ জন – সুরাইয়া খানম, রুবী রহমান, নাসিমা সুলতানা, তসলিমা নাসরিন, রোকসানা আফরীন ও শাহনাজ মুন্নী। এই এন্থোলজিও শিক্ষিত-মধ্যবিত্ত-পুরুষ কবিদেরই একটা কম্পাইলেশন, যার মেইন পারপাস হইতেছে কলোনিয়াল-কলকাতার কবিতা-ধারণাটারে “বাংলাদেশের কবিতা” বইলা এস্টাবলিশ করতে চাওয়া।

এর বাইরে, আরেকটা ট্রেন্ড আছে দশক-অনুযায়ী এন্থোলজি ছাপানোর – আশির দশকে শুরু হইলেও নব্বই থিকা এই বাটপারিটা বেশ অর্গানাইজডভাবে শুরু হইছে। কবিতার সাথে এই এন্থোলজিগুলার লেন-দেন কমই, মেইন ঘটনা হইতেছে ১০০-২০০ কবি’র কবিতা ছাপায়া তাদের কাছে বইগুলা বেচা। (৫০% দামে বেচলেও লস নাই তেমন।) মানে, যাদের কবিতা ছাপা হইছে উনারা তো কিনবেনই, যদি ৫-৭জন ফ্রেন্ডদেরকেও কিনাইতে পারেন, ৪০০-৫০০ কপি বেচা হবে। এইরকম বিজনেস-প্রজেক্ট একটা।

এমনিতে যে কোন এন্থোলজি’তে অনেক এভারেজ কবিদের কবিতাই পাইবেন। দুই-একজন গ্রেট-কবিদের কবিতা যে থাকে না – তা না, কিন্তু বেশিরভাগ সময়েই, কবিতার এন্থোলজি মানে হইতেছে একটা সময়ের এভারেজ কবিদের এসোসিয়েশনের একটা দলিল।

তাই বইলা কবিতার কোন এন্থোলজি করা যাবে না – এইটা আমার পজিশন না, বরং বলতে চাইতেছি সবগুলা এন্থোলজিরই একটা উদ্দেশ্য থাকে, এবং সেইটা বেশিরভাগ সময়েই কবিতার বাইরেই ঘটনাই হয়া উঠে।

বাংলা-কবিতার ব্যাপারে ঘটনাগুলা আরো বাজে আর কি! মানে, রিকমেন্ড করার মতো কোন এন্থোলজি আমি পাই নাই।

Continue reading