নোটস: জুন, ২০২২ [পার্ট ১]

জুন ১, ২০২২

অবিচুয়ারি: কেকে

এখনকার সময়ে কোক-স্টুডিও যেইরকম, নাইনটিজে সেইটা ছিল এমটিভি ও চ্যানেল-ভি’র হিন্দি পপ-সং। এর আগে হিন্দি পপুলার যত গান ছিল মোটামুটি সবই ছিল সিনেমার-গান। তো পপ-সং’গুলা করলো কি, গানটারে বেইজ কইরা একটা সিনেমা, মানে ভিজ্যুয়াল বানায়া প্রডিউস করতে থাকলো। আর এই ধরণের গানগুলা ম্যাসিভ হিট হইতে শুরু করলো। আমার নিজের পারসোনাল ফেভারিট আছে অনেকগুলা – লাকি আলী’র ও সানম, কে কে’র পল, জুননের সাইওনি, ওস্তাদ সুলতান খান ও চিত্রা’র পিয়া বাসন্তী, সুনীতি চৌহানের পরী… এইরকম ১৫-২০টা গানের কথা বলা যাবে, যেই গানগুলা আমাদের সময়টারে তৈরি করছিল।

মানে, আমাদের সময় খালি বিল্ডিং-রাস্তাঘাট, রাজনৈতিক ঘটনা ও অর্থনৈতিক বাস্তবতা দিয়া তৈরি হয় না, আমাদের সময়ের গল্প-কবিতা-গান বরং অনেকবেশি পার্ট অফ দ্য রিয়ালিটি এন্ড টাইম।

তো, নতুন নতুন গান ক্রিয়েট করা তো অনেক টেলেন্ট আর সময়ের ব্যাপার; লিরিকস, মিউজিক এন্ড সিঙ্গার’রে একসাথে করাও। কিন্তু পাবলিক-ডিমান্ড তো হিউজ। তখন পপ-সং’র পাশাপাশি রিমেইক, ফিউশন শুরু হইলো পুরান হিন্দি-সিনেমার গানগুলার। আর এইভাবে হিন্দি পপ-সং’র জামানারও শেষ হইলো একভাবে। মানে, এখন যে নাই – তা না, আন্ডারগ্রাউন্ড বা ইন্ডিপেন্ডেড একটা ঘরানা, ইন্ড্রাষ্ট্রি হিসাবে নাই আর।

কে কে হইতেছেন অই পপ-সং থিকা হিন্দি-সিনেমাতে “জায়গা” কইরা নিতে পারা লোক। (এইরকম আরো অনেকে আসছিলেন।) একটা এলবাম রিলিজ দিয়া মিউজিক-ক্যারিয়ার শুরু উনার, তারপরে অনেকগুলা হিট-গান “উপহার” দিছেন। উনার গলা ভালো, তার চাইতে বেশি হইতেছে উনার দরদ। এইটাই উনারে সিঙ্গার হিসাবে টিকায়া রাখছিল। মিউজিকে প্রাতিষ্ঠানিক-শিক্ষা উনার ছিল না। ফ্রেন্ড-সার্কেলে গান গাইতেন, প্রেমিকারে ইমপ্রেস করার জন্য গান গাইতে গিয়া সিঙ্গার হয়া গেছেন 🙂 [আমাদের, বেটা-মানুশদের কাহিনি কম-বেশি তো এইরকমই…]

২.
কিন্তু তখন ঢাকায়, বাংলাদেশে হিন্দি-গান শোনা ছিল আন-কালচারাড একটা ঘটনা! 🙂 আপনি রবীন্দ্র-সংগীত শুনেন না, হিন্দি পপ-গান পছন্দ করেন, আপনি তো কবি না! 😛 এইরকম।

তো, এইসব “কালচারাল-মৌলবাদী” লোকজনের কথা-বার্তারে আমরা তখনো পাত্তা দেই নাই, আপনারা এখনো দিয়েন না। এরা খালি আর্টরে ফিল করতে পারে-না না, আইডিওলজিও বুঝে না। এদের আত্মা সিলগালা কইরা দেয়া হয় নাই, চোখেও পট্টি বান্ধা।

হিন্দি-গান শুনলে আপনি ইন্ডিয়ার সার্পোটার হয়া যান না, কাওয়ালি শুনলে পাকিস্তানের। কিন্তু রবীন্দ্র-সঙ্গীত গাইয়া এদেরকে ‘বাঙালি’ হইতে হয়। এই “কুসংস্কার” থিকা অরা বাইর হইতে পারে না। কে.কে.’র মারা-যাওয়ার খবরে আপনার মন-খারাপ হইলেও আপনি বাংলাদেশের লোক হইতে পারেন, যেইরকম নুসরাত ফহেত আলী’র জন্য মহব্বত থাকলেও পারেন। এইগুলা কোন কন্ট্রাডিকশন না, বরং কনফার্মেশন যে, বাংলাদেশের আর্ট-কালচার কোন শুদ্ধ, বিচ্ছিন্ন ঘটনা না, একটা রিজিওনাল সাইনারজি (Synergy) ও ওয়ার্ল্ড হেরিটেজেরই পার্ট সবসময়।

৩.
ব্রেকিং ব্যাড সিরিজে বুড়া ওয়াল্টার ইয়াং জেসি’রে কইতেছিল, তোমার এডভানটেজ’টা কি জানো? অনেকে সারাজীবন পার কইরাও তার কি কাজ সেইটা সে জানে না, করতে পারে না, আর তুমি অল্প-বয়সেই অইটা করতে পারছো, এইটা একটা ব্লেসিং। তো, কে.কে. একজন ব্লেইসড সিঙ্গার, তার জীবনের শুরুর দিকের গানটাই ছিল তার জীবনের সেরা গান।

আরো সুন্দর সুন্দর দরদী গান উনি গাইছেন। কিন্তু আমার ধারণা, উনার জেনারেশন এবং তার পরের কয়েকটা জেনারেশন উনারে মনে রাখবে “পল” গানটার জন্যই। জীবন তো ছোট্ট, এইটুকই…
Continue reading

নোটস: মে, ২০২২ [পার্ট ৩]

মে ২১, ২০২২

তর্ক: ১০১

১. যাদের লগে মিনিমাম পারসোনাল পরিচয় নাই, তাদের লগে তর্ক করবেন না। তর্ক-করা খালি কোন ইন্টেলেকচুয়াল, আইডিওলজিক্যাল পজিশনের ঘটনা না, কম-বেশি পারসোনাল ঘটনাই।

২. চুজ ইউর দুশমন কেয়ারফুললি! রিয়েল-ফ্রেন্ডশিপ রেয়ার, কিন্তু রিয়েল-এনিমি খুঁইজা পাওয়া সৌলমেটের চাইতেও ডিফিকাল্ট। মেবি, আপনার সৌলমেইটই হইতেছে আপনার রিয়েল-এনিমি, ইন রিভার্স!

৩. তর্ক-করা সত্যি-আবিষ্কার করার কোন তরিকা না। কিন্তু সত্যি-জিনিসটারে ফিল করার জন্য কোন না কোন ইন্টার-একশনের দরকার আছে। (এম্পটি-স্পেইসে সত্যি’র কোন দরকার নাই।) তর্ক হইতেছে এর মধ্যে সবচে ওরস্ট-পসিবল অপশন।

৪. আন-নেসেসারি তর্কগুলারে এড়াইতে না পারলে রিয়েল-তর্কগুলারে আপনি কোনদিন খুঁইজাই পাইবেন না। নিটশে যেইরকম বলছেন, গ্রেট ইন্টেলকচুয়ালস আর এসকেপটিক্যাল।

৫. উপমা দিয়া কথা-বলা, রেটরিক করা, হিউমার করা সাহিত্যের অলংকার, তর্কের জায়গাতে জঞ্জাল। পাবলিক-তর্কে এইগুলা অডিয়েন্সরে প্লেজার দিবে, আপনার ভোট বাড়াবে, কিন্তু তর্কের বিষয় থিকা দূরেই নিয়া যাইতে থাকবে।

৬. নিজের সাথে সবসময় তর্ক করবেন।

৭. এইটাও ডিসাইড করবেন, কার কার সাথে, কোন কোন জিনিস নিয়া তর্ক করবেন না, বা তর্ক করা যায় না আসলে…

৮. অনেকগুলা পারসপেক্টিভ আছে বইলাই কোন একটা পারসপেক্টিভ সত্যি না – এইটা ঠিক না। এই কথা মনে রাখবেন।

৯. তর্কে জিততে পারা’র চাইতে হারতে পারলেই বরং কিছু শিখতে পারবেন। কিন্তু হারতে-পারা কঠিন। যারা পারেন, তাদেরই তর্কে ইনভলব হওয়া দরকার।

[অনেক দিন তর্ক করছি আমি, পরিচিত-অপরিচিত অনেকের সাথেই, জরুরি-আজাইরা অনেক জিনিস নিয়াই। এখন রিটায়ার করছি। উপদেশ লিখতেছি। ২০১৯ সালে কয়েকটা পয়েন্ট লেখছিলাম। অইগুলারে এখন বাতিল ঘোষণা করতেছি। মানে, কম-বেশি কিছু মিল আছে, অইগুলার লগে…]

Continue reading

নোটস: মে, ২০২২ [পার্ট ২]

মে ১১, ২০২২

– পাতি-বাকশালি থিকা সাবধান –

অ-কবিতা না, বরং এভারেজ-কবিতা হইতেছে যেইরকম কবিতার আসল দুশমন, এইরকম খালি ডিক্লেয়ারড-বাকশালিরা না*, বরং পাতি-বাকশালিগুলা হইতেছে বড় ক্রিমিনাল।

(*অরা তো আছেই, কিন্তু যখন এই রিজিম ফল করবে তখন এরা ভং ধরবে, বলবে ‘বাধ্য হয়া’ করছিলাম, পিপলের পায়ে ধইরা মাফও চাইবো দেখবেন…)

পাতি-বাকশালিগুলা “‘বাকশাল’ কেন বলেন?” – বইলা পাতলা-অভিমানও করে দেখবেন। বাকশাল’রে বাকশাল কইতে শরমায় না, নিজেদের মুখোশ খইসা পড়বে বইলা ডরায়।

এরা সারাক্ষণ মিছা-কথাগুলা কইতে থাকে আর অদের মিডিয়া-রিয়ালিটিতে সাবস্ক্রাইব না করলে আপনারে আউট-কাস্ট বা এক-ঘইরা কইরা দিবে। যেন অদের গ্রাউন্ডে গিয়া আপনারে ‘তর্ক’ করা লাগবে!

এদের রিয়ালিটির জম্বি-কনজ্যুমারদের, কুমিরের বাচ্চার মতন মিডিয়াতে শো করতে থাকে, যেন এরাই ‘জনগণ’!

বাকশালি-ন্যারেটিভের দালাল মিডিয়া, সারাক্ষণ ‘হিউমার’ ‘তর্ক’ ও ‘ফ্যাক্ট-বিজনেসের’ নামে কাভার-আপ করতে থাকা এইসব সো-কল্ড বুদ্ধিজীবীগুলা হইতেছে শয়তান।

এরাও ভোল পাল্টায়া ফেলবে, বিপদে পড়লে। কিন্তু এদেরকে বিলিভ করা যাবে না কোন সময়েই।…

Continue reading

নোটস: মে, ২০২২ [পার্ট ১]

মে ১, ২০২২

আমি মেবি দুনিয়াতে অইসব ফরচুনেট মানুশদের একজন, যারে জীবনে খুবএকটা বাজার করতে হয় নাই। এখনো করা লাগে না। কিন্তু অনলাইনে তো অনেক দোকান হইছে এখন, এইজন্য শখ কইরা মাঝে-মধ্যে সবজি-মাছ-মাংস কিনি, এবং নো-ডাউট ধরাও খাই। 🙂
তো, একটা ওয়েবসাইট আছে “সদাই” নামে, অদের একটা ফিচার দেইখা ইন্টারেস্টিং মনে হইছিল। অরা এইটার নাম দিছে “সোশ্যাল”, বাংলায় যেইটারে আমরা “ভাগা” বা “শেয়ার” বলি; যে, কয়েকজনে মিইলা কিনা; কেউ এক-ভাগা নিলো, কেউ দুই-ভাগা নিলো, এইভাবে ধরেন গরু জবাই হইতো। ধরেন, একটা গরু’র বিশ-ভাগা করা হইলো, ১০/১৫/২০ জনের কাছে বিশ-ভাগা বেচা হইলে গরুটা জবাই করা হবে। এইরকম।

উনারা সাইটে দেখাইতেছে এইভাবে যে, আপনি চাইলে একলা গলদা-চিংড়ি কিনতে পারবেন, কেজি পড়বে ধরেন ৭৫০টাকা, কিন্তু যদি “সোশ্যাল”-এ কিনেন, মানে, ২০ কেজি অর্ডার হইলে পরে খুলনা থিকা আনা হবে, তাইলে ২০ কেজি অর্ডার হওয়া পর্যন্ত আপনারে অর্ডার করা লাগবে, হয়তো ৫-৭ দিন লাগবে, কিন্তু ৬৫০ টাকা দিলেই হবে! একসাথে অনেকে/কয়েকজনে কিনলে দামে কম পাইবেন।

দুয়েকজন নেইবার, বা অফিস-কলিগদের মধ্যেও মাঝে-মধ্যে এই প্রাকটিস দেখছিলাম যে, ২/৩ জন গাড়ি নিয়া কাওরানবাজার চইলা গেলেন ভোরবেলায়, বা যাত্রাবাড়ির পাইকারি মাছের বাজারে, ৫ কেজি কইরা তরকারি, মাছ কিইনা নিলেন! দামে কম পড়লো। আরো ইনিশিয়েটিভের কথা শুনছি, পরিচিত কারো খামারে একলগে কুরবানির গরু কিইনা রাখলেন, সবজি-চাষ করাইলেন কাউরে দিয়া, নিজেরাই কিনলেন! দামে কম তো পড়েই, ফ্রেশটাও খাইলেন! এইরকম। [ ট্রান্সপোর্টেশনের ব্যাপারটা একটু ম্যানেজ করা লাগে। কারো না কারো প্রাইভেট কারে আনা লাগে…]

কিন্তু জিনিসগুলা সোশ্যাল-বিজনেস হয়া উঠতে পারতেছে না এখনো। কোন অরগানাইজড এপ্রোচও তৈরি হয় নাই। একটু শরমও কাজ করে মনেহয়।… কিন্তু ব্যাপারটা ওয়ার্কেবল আসলে। কিছু র্স্টাট-আপ কোম্পানি মনেহয় কাজও করতেছে। তবে ব্যাপারটা ঠিক ‘মিডল-ম্যান’রে কাট-অফ করার প্রজেক্ট হইলে ফেইল-ই মারার কথা, কারণ ব্যাপারটা লং-টার্মে ‘কম-দামে’ কিনার ঘটনা হইতে পারবে না এতোটা, ইকোনমি অফ স্কেইলের কারণে। কিন্তু এইরকম ছোট ছোট গ্রুপ বাজারের উপরে প্রেশার-গ্রুপ হিসাবে কাজ করতে পারবে তখন।

তার চাইতে বড় কথা, এক ধরণের ‘সোশ্যাল’ বা ‘সামাজিক’ অবস্থা তৈরি হওয়ার একটা স্পেইস জেনারেশনের দিকে যাইতে পারবে হয়তো। মানে, ব্যাপারটা খালি ইকনোমিক প্রজেক্টই না, সোশ্যাল এবং কালচারাল ঘটনাও হইতে পারে।… হবেই, এইটা তো ডেফিনেটলি বলা যায় না। কিন্তু এই ধরণের জিনিস নানান দিক দিয়া শুরু হওয়াটা ভালো-জিনিস মনেহয় আর কি…

***

– বাকশাল (আওয়ামী-সিপিবি, বাঙালি-জাতীয়তাবাদ) সবসময়ই বাংলাদেশ-বিরোধী একটা ঘটনা –

কেউ আওয়ামীলীগের পক্ষে কথা কইলে, শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষ নিলে তারে আওয়ামী লীগ হওয়া লাগে না সিপিবি, বাসদ, এমনকি গণসংহতি কইরাও পক্ষ নেয়া যায় তো! কিন্তু আপনি বিএনপি’র পক্ষে কথা কইলে, জিয়াউর রহমানের নাম মুখে নিলেই কেন বিএনপি হওয়া লাগে?

মানে, এইটা অবশ্যই বিএনপি’র দোষ না।

এর বেইজ হইতেছে ভুল পলিটিক্যাল ন্যারেটিভে, যেই জায়গাটা থিকা দেখার অভ্যাস করানো হইছে আমাদেরকে, ১৯৭১ সালের পরেই।

আওয়ামী লীগ, সিপিবি, জাসদ, বাসদ, গণসংহতি যারাই আছে, সবাই ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদের’ লোক, কলোনিয়াল কলকাতার পলিটিক্যাল ও কালচারাল গোলাম। এই গোলামি উনাদের কোর।

বিএনপি হইতেছে এর বাইরের ঘটনা। আপনি যদি পলিটিক্যালি, কালচারালি বাংলাদেশরে সেন্টার করেন, তাইলে আপনি খালি অই ন্যারেটিভের বাইরেই চইলা আসেন না, মাঝখানে পূর্ব-পাকিস্তান বইলা যেই হিস্ট্রিক্যাল রিয়ালিটি’টা ছিল, সেইটারেও মাইনা নেয়া লাগে।

আওয়ামী-সিপিবি, মানে বাকশালি ন্যারেটিভে ‘পাকিস্তান পিরিয়ড’ বইলা কিছু নাই, অইটা যেন ঘটে নাই! বাংলাদেশের মানুশ যেন তখন পাকিস্তানের লগে যোগ দেয় নাই, ‘মুসলিম’ আইডেন্টিটিরে আপহোল্ড করে নাই! এই হিস্ট্রিক্যাল ট্রুথরে উনারা ‘অ্যাজ ইফ ঘটে নাই’ – এইভাবে বর্ণনা করেন সবসময়।

তো, এইটুক হইলেও কোন সমস্যা ছিল না। উনারা উল্টা ফাঁপড় নেন! যেহেতু আপনি ‘কলকাতার কলোনিয়াল জোয়াল’ কান্ধে নিতে রাজি না, আপনি যেন ‘পাকিস্তানের ফাঁদে’ পা দিতেছেন! মানে, ‘বাংলাদেশি’ আইডেন্টিটি বইলা তো কিছু নাই! 🙂 হয় আপনি ‘কলকাতার বাঙালি’ নাইলে ‘পাকিস্তানের মুসলমান’!

‘বাংলাদেশি’ – এই জায়গাটারে সবসময় গুলায়া ফেলা হয় না, খুব কনশাসলি নেগেটিভলি প্রজেক্ট করা হয়। যে কোন কিছুতেই – মিউজিক বলেন [কোক স্টুডিও ঘটনাটাই দেখেন, বাংলাদেশি কইতে পারে না], লিটারেচারে বলেন [বাংলাদেশি বাংলা হইতেছে ‘অশুদ্দ’ ‘অপ্রমিত’], মোটামুটি সব জায়গাতেই। ‘বাংলাদেশি’ হইতেছে যেন ‘অরিজিনাল-বাংলা’ থিকা একটা বিচ্যুতি!

এই জায়গা থিকা বিএনপি’র পক্ষে কথা বলা মানে হইতেছে ‘বাঙালি-সংস্কৃতি বিরোধী’ 🙂 একটা ঘটনা।

তো, আমাদেরকে আসলে সত্যিকার অর্থে ‘বাঙালি-সংস্কৃতি বিরোধী’ হওয়া লাগবে না, যেইটা আরেকটা ট্রাপ, বরং অই ভুল জায়গা থিকা সরতে পারলেই হবে। এর জন্য বিএনপিও হওয়া লাগবে না, বাকশালি ন্যারেটিভের বাইরে, কলোনিয়াল ‘বাঙালি’ আইডেন্টিটির বাইরে যাইতে হবে। (এইটা ন্যাশনালিস্ট হওয়ার কোন ঘটনা না।) তবে ফরচুনেটলি অর আনফরচুনেটলি বিএনপি ছাড়া আর কোন পলিটিক্যাল দল এই জায়গাটারে অউন করে না। যার ফলে ‘বাঙালি-সংস্কৃতি’র নামে কলোনিয়াল কলকাতার আইডেন্টিটির লোক না হইলে ‘বিএনপি করে’ বইলা ট্যাগ লাগানোটা ইজি হয়।

কিন্তু বিএনপি এই জায়গাটারে পলিটিক্যালি ক্যাপিটালাইজ করতে পারে নাই। এইটা যতোটা না কালচারাল বোঝা-পড়া না থাকা তার চাইতে দল হিসাবে (১৯৯১-এর পরে) আরেকটা আওয়ামী লীগ হইতে পারার ‘লোভ’ থিকা সরতে না পারাটাই মেবি মেইন ঘটনা।…

মানে, উনাদের পলিটিক্যাল ন্যারেটিভ’টারে পলিটিক্যাল এক্টিভিটির চাইতে কম গুরুত্বই দিছেন। উনারা খুব স্ট্রেইট ফরোয়ার্ড বলতে পারতেছেন না যে, দেখেন, বাকশাল (আওয়ামী-সিপিবি, বাঙালি-জাতীয়তাবাদ) সবসময়ই বাংলাদেশ-বিরোধী একটা ঘটনা! [খালেদা জিয়ার একটা কথা ছিল যে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গেলে ইন্ডিয়ার কাছে দেশ বেইচা দিবে, যেইটারে একটা মেটাফরিক্যাল-ট্রুথ হিসাবে আমরা নিছি, আইডিওলজিক্যাল-ট্রুথ হিসাবে কন্সিডার করা হয় নাই…]

তো, এখনকার বাংলাদেশে বিএনপি কইরা বা না কইরাও এই কথা আমাদেরকে বলতে পারতে হবে! এই জায়গাটা বুঝতে, এবং বলতে আমরা যত দেরি করবো, বাংলাদেশের পলিটিক্যাল অবস্থা তত বাজে হইতে থাকবে।

আর সবচে বড় কথা হইতেছে, নিজেদের সেলফ-রেসপেক্টের জায়গাটা আমরা খুঁইজা পাবো না, আর পাইতেছিও না আসলে…
Continue reading

নোটস: এপ্রিল, ২০২২ [পার্ট ৩]

এপ্রিল ২১, ২০২২

– আফটার চসেস্কু –

কয়দিন ধইরা নিকোলাই চসেস্কু’র কথা মনে হইতেছে। ১৯৮৯-এ রোমানিয়ার এই কমিউনিস্ট-রাজার বিরুদ্ধে খেইপা গিয়া তারে ক্ষমতা থিকা নামাইছিল পিপল। কোন বিরোধী-দল নাই, কোন আইডিওলজি, কোন ধর্ম নাই, পিপল জাস্ট খেপা ছিল, তার বাড়াবাড়ি রকমের ক্ষমতার বাহাদুরি নিয়া। একটা জনসভায় সে লেকচার দিতেছিল, ন্যাশনাল টেলিভিশনে লাইভ দেখাইতেছিল, হঠাৎ কইরা পিপল তার এগেনেস্টে আওয়াজ তুলতে শুরু করলো। লাইভ টেলিকাস্ট বন্ধ হয়া গেলো। (রেভিউলেশন উইল নট বি টেলিভিশনাইজড।) পিপল তার রাজপ্রাসাদে হামলা চালাইলো। সে আর তার বউ হেলিকপ্টার নিয়া পালাইলো। পরে পিপলের হাতে ধরা খাইলো।

এই দিকে ক্ষমতায় কে বসবো, দেশের হালত কি হইবো, এইগুলা যেহেতু ঠিক নাই, পরে লাগলো এক বেড়াছেড়া, কিছুদিন মারামারি হইলো, ইলেকশন হইলো, এক্স-কমিউনিস্টরাই দেশ চালাইলো কিছুদিন, এই-সেই।

মানে, আমি বলতে চাইতেছি, আফটার-এফেক্ট’টা ইম্পর্টেন্ট। বাংলাদেশের সবকিছুই (রাজনীতি, অর্থনীতি, আর্ট-কালচার) বাকশালের দখলে। আমাদের মনে হইতে পারে, এই শাসন ‘হাজার বছর’ ধইরা চলবে। কিন্তু অই তো চসেস্কু’র মতন টোকা দিলেও ভাইঙ্গা পড়তে পারে আসলে। তখন কি করবো আমরা? অই প্রিপারেশন আমাদের নাই। মানে, ভিজিবল না এখনো।
Continue reading