পারসন অফ দ্য ইয়ার ২০২১

গত বছর থিকা এইটা শুরু করছি আমি। ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে “পারসন অফ দ্য ইয়ার ২০২০” ডিক্লেয়ার করছিলাম। আমার মতে, ডা. জাহাঙ্গীর কবির ছিলেন বাংলাদেশের “পারসন অফ দ্য ইয়ার ২০২০”। বাংলাদেশে সবাই (মানে, মিডল-ক্লাসই আর কি) মোটামুটি উনার নাম জানে, আর উনার কথা-বার্তা, কাজকামের একটা পজিটিভ ইমপ্যাক্ট সমাজে আছে। মোটা দাগে, এইরকম একটা জায়গা থিকা ভাবছিলাম।

এইবার, ২০২১ সালের বাংলাদেশের “পারসন অফ দ্য ইয়ার” হিসাবে মনে হইছে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী’র নাম। উনার ডাক্তারি বা মেডিকেল-এক্টিভিজমের কারণে না, বরং উনার পলিটিক্যাল পজিশনের কারণে। ডা. জাহাঙ্গীর কবিরের মতো উনি কোন দিশা দেখাইতে পারেন নাই, কিন্তু যেইখানেই একটু আগুন আছে, সেইখানে উনি বাতাস দিয়া জ্বালানোর ট্রাই করছেন, করতেছেন। একটা দালাল-বাটপার গোষ্ঠীর লোকজন ছাড়া আজকে বাংলাদেশের সব মানুশের দশা উনার মতোই, মর মর অবস্থা, হুইলচেয়ার বইসা চলা-ফেরা করতে হয়; কিন্তু আশা মরে নাই! উনার জেনারেশনের আর কেউ [মানে, কোন পাবলিক ফিগার] উনার মতো কইরা বাংলাদেশের অবস্থাটারে আমলে নিতে, কথা বলতে রাজি নাই।

এইরকম ট্রাই করতে থাকার, দাঁড়ায়া-থাকাটার একটা দাম আছে। যেইদিন আমরা একজন মানুশের সৎ-সাহসের, সত্যি-কথা বলার, ভালো-কাজ করার তাগিদ’টারে ভালো-গুণ হিসাবে কদর করতে পারবো, তখন আমাদের নিজেদের মধ্যেও এর কণা দেখতে পাইলে তারে একটা ইমপ্যাক্টফুল জায়গাতে নিয়া যাইতে পারবো। এই জায়গা থিকা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী’রে বাংলাদেশের জন্য ইম্পর্টেন্ট লোক হিসাবে ভাবতে চাই আমি। Continue reading

অবিচুয়ারি: জয়নাল হাজারী

পলিটিক্স করা মানেই যে হইতেছে মাস্তানি করতে পারা – বাংলাদেশে এই ট্রাডিশন যারা তৈরি করছিলেন, জয়নাল হাজারী অইসব সেলিব্রেটিদের একজন।

১৯৭১ সালের পরে বাংলাদেশে এই জিনিস এস্টাবিশড হইছে যে, এলাকার যে যত বড় মাস্তান, যত বড় টেররিস্ট, সে হইতেছে তত বড় পলিটিশিয়ান। [এইটা কম-বেশি সবসময়ই ছিল, কিন্তু ‘পলিটিক্স’ হিসাবে আইডেন্টিফাইড হওয়ার ব্যাপারে রাখ-ঢাক থাকার কথা কিছুটা।] বাকশাল আমলে, রাষ্ট্রীয় মদদে এই জিনিস এস্টাবলিশড হইছিল। এই পলিটিক্যাল কালচার থিকা আমরা বাইর হইতে পারি নাই আর। বিএনপিও ‘পলিটিক্সে’ ততটাই পাওয়ারফুল ছিল যতদিন এলাকায় এলাকায় মাস্তানি করতে পারতো। [অন্য অনেককিছুর বাইরে, বামদলগুলার মাস্তান ছিল না বইলাই ‘পলিটিক্স’ হয় নাই, বা এখনো হয় না 🙂 ]

কিন্তু নয়া বাকশালের আমলে এই পুরান মাস্তানদের দরকার নাই তেমন। পুলিশ, রেব, সরকারি চাকরিজীবীদের দিয়াই এই টেরর তৈরির কাজগুলা করা যায়, লোকজনরে ডরের ভিতরে রাখা যায়। একটা রিজার্ভ ফোর্স হিসাবে থাকতে থাকতে উনারা, পুরান-দিনের মাস্তানরা বাতিল হয়া গেছেন একভাবে। ডিসি, এসপি, ওসিদের সাগরেদ হিসাবে টিইকা আছেন। ওস্তাদ হিসাবে বা ড্রাইভিং সিটে আর নাই উনারা এখন।
তো, এই জায়গা থিকা জয়নাল হাজারির জন্য আহাজারি করতেই পারেন অনেকে। মনে হইতে পারে যেন, নায়কের মৃত্যু!
জুলুম করতে পারা যেইখানে পলিটিক্স করতে পারার ঘটনা, সেইখানে জালিমরে হিরো মনে করতে পারাটা তো কোন ইল্যুশন মনে হইতে পারবে না! বরং কেমনে জাস্টিফাই করা যায় চিন্তাটারে, সেই রাস্তাগুলাই সার্চ করা হবে তখন। জয়নাল হাজারীর লাইফ থিকা টেররিস্ট ইভেন্টগুলারে বাদ দেন, দেখবেন উনার ‘পলিটিক্স’ বইলা কিছু নাই আর। Continue reading

কবিতা: অগাস্ট, ২০২১

পুরান কবিতার মতো

লোভ লাগে,
ইচ্ছা করে পুরান কবিতার মতো
আরেকটা কবিতা লেখি;

পুরান কবিতাগুলা হাসে,
আমার গালে হাত বুলায়া দেয়,
যেন একটা মা তাঁর বাচ্চা ছেলেরে
আদর করে দিতেছে;

পুরান কবিতাগুলার কথা মনে কইরা
আমি নতুন একটা কবিতা লেখি

কেরু খাই, কবিতা লেখি

কেরু খাই, কবিতা লিখি

আর্ট-কালচার করা লোকেরা
কয়, এইসব কি!
অশ্লীল কথা-বার্তাই
আজকাল
কবিতা নাকি!

অথচ
কাওরান বাজারের লেবার’রা
বাংলা-মদের বারে
আমারে
ঠেস মাইরা কয়,
“ভাই, ভালোই তো ভাব
চুদাইলেন!”

নভেল

লেখক বলিলেন, “আমি আমার মনের মাধুরী দিয়া
চরিত্রটিকে রূপ দান করিয়াছি।”

কারেক্টার’টা কইলো, “ভাই, আমি তো একটু আমার মতোও হইতে পারতাম!”

হোয়াট ইজ অ্যা গরু?

সংজ্ঞার জামাটা পরানো হইলো গরুটারে,
কিন্তু লেজটা তার বাইর হয়া-ই থাকলো

ডেফিনেশনের এই পেরেশানি দেইখা
পরে গরুটাই কইলো, বাদ দেন!

অই জিনিস এতোটা গরু তো না!

Continue reading

কবিতা: জুলাই, ২০২১

মেটাফোর ২

ভাবতে ভাবতে একটা মানুশ গাছ হয়ে যাইতেছে,
অনেকগুলা ভাবনার পাখি বসতেছে আইসা তার ডালে

ঘটনার বৃষ্টিতে অরাও তো ভিজতেছে!

কারাগারের রোজনামচা

জেলখানাতে তো জায়গা কম,
জেলখানাগুলা বাইরে চলে আসছে,
আমাদের ঘরে ঘরে, রাস্তায়, মনের ভিতরে ঢুকে গেছে

জেলার তো খুবই দরদী, টিভিতে-পত্রিকাতে
আমাদেরকে নিয়া কান্দে, কয়
তোমাদের লাইগা আমার খারাপ লাগে তো!
তোমরা কই কই থাকো!
তোমাদের লাইগা আমরা জেলখানা প্যাকেজ নিয়া আসছি

এতো জেলখানা তো আমরা বানাইতে পারবো না,
তোমরা তোমাদের’টা বানায়া নিবা, আর
আমরা তোমাদের জেলখানাগুলা পাহারা দিবো,
যার জেলখানা যতো সুন্দর, সে তত সুনাগরিক হবা,
এওয়ার্ড-টেওয়ার্ডও দিবো…

তোমরা জেলখানা বানাও – হিস্ট্রি দিয়া, গান দিয়া,
গল্প, কাহিনি, নাটক দিয়া দেখাও
জেলখানা কতো সুন্দর!

আমাদের জেলখানাগুলা সুন্দর,
তবু ফুল ফুটে, এবং পাখি গান গায় টাইপ

আমরা যে জেলখানাতে আছি – এইটা বুঝছো,
বুঝা-ই যায় না!

দুনিয়া’টাই তো দুইদিনের জেলখানা – এইভাবে
আমরা বুঝাই আমাদেরকে, আর মন
তো পোষ-না-মানা পাখি,
থাকতে থাকতে সবকিছুই সে বুইঝা যায়,
খালি বলে, জেলখানার দেয়ালগুলা মনেহয় সইরা আসতেছে,
এরা দমবন্ধ কইরা মাইরা ফেলবে না তো একদিন?

মন’রে আমি বলি, শোনো, এইগুলা তোমার প্যারানয়া,
আমাদের জেলখানা এতোটা অমানবিক না!

এই যে আমি কবিতা’টা লিখতেছি,
এইটাও কিন্তু দেখতেছে অরা, সিসি ক্যামেরা দিয়া
হাসতেছে, মনেহয় বলতেছে, বোকাচোদা…

এইরকম বোকাচোদা হয়া থাকো মন!
জেলখানার দিনগুলার ভিতর!

নিউ মুন

ফিরা আসবো,
তারপরে বলবো, হারায়া গেছিলাম!

বাসার সামনের কুত্তাটা ঘেউ ঘেউ করবে কিছুক্ষণ

Continue reading

কবিতা: জুন, ২০২১

বৃষ্টির কবিতা

বৃষ্টি তো পড়তে পড়তে শেষ,
বৃষ্টি গান গাইতে গাইতে শেষ
গাছের পাতা, রোড-ঘাট, বিল্ডিংগুলা ভিজতে ভিজতে শেষ
বৃষ্টির কবিতা – তুমি কই?
এখনো ঘুমাইতেছো?
বৃষ্টি তোমারে ঘুম পাড়ায়া দিতেছে?
একটা ঘুম-পাড়ানি গানের মতো,
বৃষ্টি তোমারে জাগায়া রাখতেছে,
একটা আবছা ড্রিমের মতো?
নাকি উইঠা পড়তে হবে, অফিস যাইতে হবে
রাস্তায় বাস নাই, সিএনজি, রিকশা নাই, আর
বৃষ্টি বাড়তেই আছে,
যেইভাবে একটা ডিপ প্রেম যাইতে থাকে একটা কঠিন হেইট্রেটের দিকে
এইরকম বৃষ্টি পড়তেছে, কিন্তু
বৃষ্টির কবিতা নাই

যারা বৃষ্টিতে ভিজে, অদের বৃষ্টির কবিতা লাগে না গো সই!

বৃষ্টি পড়তেছে, বৃষ্টি বলতেছে
একটা বৃষ্টির কবিতারে।

 

বর্ষা

একটা ফুল
একলা
ফুটে আছে

আর
ভিজতেছে
বৃষ্টির পানিতে

 

শব্দগুলা

“আহ্
যদি আমরাও
শিখতে পারতাম
চুপ কইরা থাকা!”

সব কিছু উল্টা-পাল্টা
করার পরে,
মাফ চাওয়ার মতন
শব্দগুলা বলে আমারে,
বাটপারগুলা

 

দুপুরের ঘুম

জীবন,
একটা ড্রিমের মতন
ধীরে ধীরে দূরে চলে যাইতেছে,
আমার ঘুম ভেঙ্গে যাইতেছে

একটা কুত্তা কুন্ডলী পাকায়া শুইয়া আছে রাস্তায়,
অর চোখের পাতার ভিতর নড়তেছি আমরা,
আমাদের ঘুম ভাঙতেছে না Continue reading