আর্টের বিচার কেমনে করবেন?

আমাদের ‘আর্ট ধারণা’র মুশকিল’টা কই বা কোন জায়গায়? – সেইটা নিয়া আবারো বলি। আর্টের কাজ কোন ‘সমাজের চিত্র’রে ঠিকঠাক মতো তুইলা ধরা না; মানে, এইটা তো সোসাইটি’তে নাই! বা এইটা আমাদের সমাজের রিয়েল চেহারা! – এই টাইপের ক্রিটিক করা’টা। যে, সমাজের লগে ‘মিল’ থাকা লাগবো! এইটা আর্টরে বিচার করার কোন তরিকা হইতে পারে না। (আর্টের সাথে সোসাইটির বা সোসাইটির সাথে আর্টের একটা রিলেশন আছে বা থাকেই।)

বরং উল্টা ঘটনাটাই বেশি ঘটে। এক ধরণের আর্টের ধারণার ভিতর দিয়াই আমরা একটা সোসাইটি’রে বা রিয়ালিটি’রে দেখি বেশি। যার ফলে, একটা আর্ট সোসাইটিতে বা সোসাইটি’র এগজিসটিং আর্টের ধারণাটাতে কতোটা ইমপ্যাক্ট ফেলতে পারে – সেই জায়গা থিকা একটা বিচার হইতে পারে। (এইটাই যে একমাত্র ক্রাইটেরিয়া – তা না। কিন্তু সোসাইটি’র জায়গা থিকা দেখতে চাইলে এইভাবে দেখাটা এফেক্টিভ হইতে পারে।) যেমন ধরেন, শেক্সপীয়র নাটক লেখার পরে বা ভ্যান গঁগ ছবি আঁকার পরে নাটক বা ছবি-আঁকা ব্যাপারটারে একইভাবে দেখতে পারতেছি না আমরা আর। উনারা একটা ‘স্ট্যান্ডার্ড’ তৈরি করছেন – তা না; যে, এমনে এমনে লেখা লাগবো বা ছবি-আঁকা লাগবো। আর্টের ভিতর দিয়া সোসাইটিরে আমরা যেইভাবে দেখতাম বা সোসাইটি নাটক-লেখা বা ছবি-আঁকা’রে যেমনে দেখে, সেইটা আর ‘ঠিকঠাক’ থাকতে পারে নাই। আরো কাছাকাছি এক্সাম্পল দিলে, মিনিমাম অর্থেও, আজম খানের আগে-পরে বাংলাদেশের গান একই রকম থাকে নাই; এমন না যে সবাই আজম খানের মতোন গাইতে শুরু করছেন। এইরকম। ‘ট্রাডিশনাল’ গানও যে বন্ধ হয়া গেছে – তাও না। আরেকটা রকম ইমার্জ করতে পারছে, গান গাওয়ার; গ্রাম-বাংলা’র জায়গায় ‘শহর’ দেখা গেছে, বাংলাদেশে। এইরকম। Continue reading

কবিতা: মার্চ, ২০১৯

একটা পাত্থর

একটা পাত্থর সরানোর ট্রাই করতেছি অনেকক্ষণ ধইরা।
পাত্থরটা সরতেছেই না।
অনেকক্ষণ পরে বুঝলাম, পাত্থরটা আসলে নাই।
পাত্থরটা আমি বানাইছি আমার লাইগা।
পাত্থরটা এই কারণে সরতেছেই না।
আমি ভাবতেছি, এইটা তো নাই!
না-থাকা পাত্থরটারে তারপরও আমি সরাইতেই পারতেছি না।

 

নিউমার্কেটের পিছনের রাস্তাটা

রিকশা কইরা আসছি আমরা নিউমার্কেটের পিছনে। পোস্ট অফিস পার হয়া। বিজয় ৭১ হলের সামনে। দুপুরবেলা। চায়ের দোকানগুলি জমে নাই। বিকালের ভীড়ের লাইগা ঝিমাইতেছে প্লাস্টিকের চেয়ারগুলা। আমি ফুটপাতের একটা চায়ের দোকানের টুলে বসলাম। সিগ্রেট’টা ধরাইলাম। রইদ আইসা বসলো আমার লগে। তুমি তো আসতেই পারো। আমি ওয়েট করতেছি। আসলে আমি বইসা আছি একটা পারপাস নিয়া যে, আমি ওয়েট করতেছি। মানে, এমন যদি হইতো আমি একলা একলা চইলা গেছি নিউমার্কেটের পিছনে, দুপুরবেলা বইসা চা খাইতেছি, কোন কারণ ছাড়া। খুবই উইয়ার্ড মনে হইতে পারতো তো! এইজন্য আমি ওয়েট করতেছি। আমি আসছি তোমার সাথে। তুমি তো আসছো তোমার কাজে। একলাও আসতে পারতা। বা কোন ফ্রেন্ড নিয়া। তারপর ধরো, বইসা একসাথে চা খাইলা। বললা, কাজটা তো হইলো না! আরেকদিন আসা লাগবে! আমি ভাববো, এই যে কাজ বলা গেলো, কাম বললে তো সেক্সের কথাই ভাবা লাগতো একটু; একটু হাসি এড়ানো লাগতো। রইদ’টা তখন আমার এই কুটনামি দেইখা মুচকি হাসতে হাসতে সইরা যাইতেছিলো একটু একটু কইরা। আমি দেখলাম, তুমি আসতেছো। কাজটা শেষ হইছে তোমার। আর আসা লাগবে না। আইসা বললা। নিউমার্কেটের পিছনের রাস্তাটারে আমি দেখলাম আবার। রিকশা কইরা ফিরা যাইতেছি আমরা। রাস্তাটা অই জায়গাতেই পইড়া থাকলো। আমার লগে, আমাদের লগে আর তো আইলো না!

 

থাকো!

এইটুক জোর তো করা-ই যায়, আমি ভাবতেছিলাম।
এইটুক জবরদস্তি, থাকতেই পারে মেবি, কনফিউশনের জায়গাটাতে, একরকম।
যেমন শীতশেষের ঠান্ডা বাতাস যাইতে যাইতেই দুইটা দিন থাকতে চাইলো আরো;

তুমি বললা, অসহ্য!

Continue reading

আমারে প্রশ্ন করেন!

ফেসবুকে Profoundly নামে একটা অ্যাপে প্রশ্ন করার লাইগা জিগাইছিলাম। অনেকে যা জিগাইছেন,  তার বেশিরভাগই লেখালেখি নিয়া। তো, ভাবলাম, একসাথে কইরা রাখা যাইতে পারে। সবাই যে প্রশ্ন করছেন, তা না, কয়েকজন কমেন্টও করছেন, সেইগুলিও রাখছি। কিন্তু যারা স্ট্যাটাসে বা কমেন্টে রিঅ্যাকশন রাখছিলেন, সেইটা আর এই ফরম্যাটে ধইরা রাখা গেলো না আর কি!

……………………………………………………….

আদিত্য রহমান  আপনার ‘বসন্ত…’ বইটার দাম এতো বেশি কেনো, কিনতে না পারার মতো?

Imrul Hassan খরচ বেশি হইছিলো আসলে ছাপাইতে আর ছাপাইছিলামও কম, ৩০০ কপি মনেহয়, সেই হিসাবে পার কপির দাম ঠিক করছিলাম ২৫০ টাকা। তবে বেশিরভাগ কপি তো বন্ধু বান্ধবদেরকে পড়ার লাইগাই দিছি। বেচা কমই হইছে। এখন আরো ৩০ কপির মতো আছে আমার কাছে, আপনি পড়তে চাইলে বইলেন, নিজ খরচে নিতে পারলে, আমি দিতে রাজি আছি। ধরেন, আপনার এই প্রশ্নের বিনিময়েই। 🙂

এমনিতে কোন বইয়ের দাম আমার কাছে কখনোই খুববেশি লাগে নাই, মানে টাকার লাইগা কিনতে পারি নাই এইরকম তো হইছেই, কিন্তু আমার মনে হইছে, লেখক রয়ালিটির জায়গাটা সবসময়ই মিসিং থাকতেছে আমাদের পাবলিকেশনে বা বইয়ের দামের কথা যখন ভাবতেছি। ওভারঅল গরিবি একটা ব্যাপার আছে, নানান ভাবেই। এইটা ঠিক না আর কি!

আদিত্য রহমান বাতিঘরে দাম দেখছি চারশো বা সাড়ে। সেজন্যই এই প্রশ্ন করছি। ২৫০ হইলে করতাম না উন্নত পেইজের দিকে তাকায়া। আপনার দিতে চাওয়াতে বিব্রত আসলে। জবাব দিবার ভরসা দিছেন বলে প্রশ্নটা করে ফেলছি আরকি। অনেকগুলাই পড়া বাতিঘরে, গিয়াই পইড়া ফেলবো আরগুলা।

Imrul Hassan ও, হ্যাঁ, চারশো টাকা-ই মনেহয়। আর আপনার বিব্রত হওয়ার ব্যাপারটা বুঝতে পারছি। ব্যাপার না!

মেহেরাব ইফতি আপনি কবে দাড়ি রাখবেন? নাতি নাতনি হইলে?

Imrul Hassan বয়স না আসলে, সিচুয়েশনের উপ্রে ডিপেন্ডেড। চাকরি ছাইড়া বিজনেস শুরু করতে পারলেই ট্রাই করবো চুল দাড়ি বড় রাখার। 🙂

Sheikh Saddam Hossain রবার্ট ফ্রস্ট কইলেন, আই ক্যান সাম আপ মাই হোল লাইফ ইন্টু থ্রি ওয়ার্ডস ‘লাইফ গোজ অন’। আপনি লাইফরে সাম আপ করলে তা কেমন হবে? আর আত্মহত্যা করতে চাইছেন কখনো? করতে চাইলে ক্রাইসিসটা কী বা কীরকম ছিল?

Imrul Hassan লাইফ’রে সাম-আপ করতে গেলে এখন ভুল-ই হওয়ার কথা, আরো দুই-চাইর বছর পরে কিছুটা ট্রাই করলে বেটার হইতে পারে; তবে এখন টেম্পোরারি বেসিসে বলা যাইতে পারে, লাইফ (যেইটা আমরা ভাবি সেইটা মোস্টলি) আর্টের ইমিটেশন।

সুইসাইডাল টেন্সডেন্সি ছিলো দুইটা টাইমে, ঠিক সুইসাইড করতে যাই নাই কখনো। একটা ওয়েভ ছিলো পনের-ষোল বছর বয়সে, আরেকটা তেইশ-চব্বিশ বছর বয়সে; থার্ড ওয়েভ এখনো নানানভাবে ঠেকায়া রাখতে পারতেছি। 🙂

ক্রাইসিস’টা খুব ডেফিনিট কিছু বইলা মনে হয় না, লাইফের মিনিংলেসনেস বা লাইফ’রে কোন না কোনভাবে আর্টিকুলেট না করতে পারা’র একটা জায়গা থিকাই মেবি ছড়াইতে শুরু করে।… Continue reading

#কবিতা #প্রেম #মিডিয়াম #ফেসবুক #হেইট্রেট #বুলিং #হাট #খেলা #ক্রুয়েলিটি #হাততালি

আমারে কয়েকজনই জিগাইছেন, নানান টাইমে, প্রেম নিয়া কেনো এতো কবিতা লেখা হয়! দুনিয়াতে কি আর কোন কিছু নাই, কবিতা লেখার মতোন!

আমিও খেয়াল করছি, মোস্টলি দুই-তিনটা সাবজেক্ট নিয়াই কবিতা লেখা হয় – প্রেম, পলিটিকস, মরা’র চিন্তা… এই কয়টা জিনিসই, ঘুইরা-ফিরা। অন্য জিনিস নিয়া যে কবিতা লেখা যায় না বা হয় না – তা না; কিন্তু কবিতা বলতেই প্রেমের একটা ঘটনা আছে, বা প্রেমে না পড়লে মানুষ কবিতা কেমনে লেখে – এইরকম!

তো, এই প্রশ্নের তেমন কোন উত্তর আমি করতে যাই নাই। (উত্তর যে নাই – তা না, নানান সময়ে নানান উত্তর তো দেয়া-ই যায়।) কিন্তু একটা জিনিস গত কয়েকদিন ধইরা মনে হইতেছিলো, এক একটা মিডিয়াম এক একটা ফিলিংস’রেই উসকায়া দেয়। যেমন, ফেসবুক – মিডিয়াম হিসাবে এক রকমের হেইট্রেট বা বুলিং’রে প্রমোট করে।

এর একটা কারণ মেবি এইরকম যে, ধরেন, একটা হাটে বা ক্রাউডেড প্লেইসে আমরা যে যার কথা কইতেছি বা খেলা দেখাইতেছি, এখন যে যতো ক্রুয়েল গেইম’টা দেখাইতে পারবো, লোকজন তো সেইখানেই আসবো বেশি। হাটে বা পাবলিক গেদারিংয়ে সবাই তো খেলা দেখাইতে আসেন না, দেখতেই আসেন; চোখের সামনে যা পড়ে, দেখি তো আমরা; আর যা কিছু একসাইটিং – তা-ই তো চোখে পড়ে বেশি। এইরকম। তাই বইলা ফেসবুক একটা হেইট্রেট বা বুলিং করার মিডিয়াম – এইটা আমার ক্লেইম না; কিন্তু মিনিমাম লেভেলে এক রকমের ‘হাততালি’ দেয়ার ব্যাপার’রে এনকারেজ করেই।
Continue reading

ইলেকশন

ইলেকশন নিয়া খুব সুন্দর একটা মেমোরি আছে আমার। সেইটা ক্লাশ সেভেনে পড়ার সময়। আমাদের ক্লাশ টিচার আছিলেন মানিক স্যার। ক্লাশে পড়ানোর সময়টাতে উনার পারফর্মেন্সের একটা ব্যাপার ছিলো, চাবায়া চাবায় অনেকটা ‘শুদ্ধ ভাষায়’ কথা কইতেন, এক রকমের রোল প্লে করতেন, যে উনি টিচার; তখন ওইটা নিয়া একটু খটকা থাকলেও এখন বুঝতে পারি যে, অইটা জরুরি একটা জিনিস ছিলো। মানে, ক্লাশে পড়ানোটা যে একটা পারফর্মেন্সের ঘটনা – এখন তো এইটা বুঝতে পারি। (এই পারফর্মেন্সের ব্যাপারে আরেকটা ঘটনা আছে, যেইটা দিয়া আমি শিওর হইছি, পরে বলতেছি।)

তখন (১৯৮০-এ) স্কুলে ক্লাস-ক্যাপ্টেন হওয়ার নিয়ম ছিলো, ফার্স্টবয় আর সেকেন্ডবয়-ই হবে (হাইস্কুলে পড়ার সময় ক্লাস সিক্স টু এইট ছেলে-মেয়েদের আলাদা সেকশন ছিলো, নাইন থিকা একসাথে)। ক্যাপ্টেনের কাজ তেমন কিছু না, ক্লাস-ব্রেকের সময় কেউ পানি খাইতে বা মুততে গেলে তার পারমিশন নিয়া যাইতে হবে; হোমওয়ার্কের খাতা কালেক্ট কইরা টিচাররে দিতে হবে, বা কোনসময় টিচার না আসলে টিচাররুমে গিয়া জানাইতে হবে; বা টিচার না থাকলে চিল্লা-পাল্লা যাতে কম হয়, এইসব মনিটর করা, এইরকম।

তো, মানিক স্যার কইলেন, এইটা হবে না। ফার্স্টবয়, সেকেন্ডবয় পড়াশোনা ভালো করতে পারে, কিন্তু ভালো লিডার হইতে পারবে – এর তো কোন গ্যারান্টি নাই। আর ছোটবেলা থিকাই ডেমোক্রেসির চর্চা করা লাগবে। ক্লাসের ছাত্ররাই তাদের ক্যাপ্টেন নির্বাচন করবে, টিচার হিসাবে উনি সেইটা করতে পারেন না, ব্যাপারটা অ-গণতান্ত্রিক। তো, ইলেকশন হবে ক্লাসে।

আমরা তো খুবই মজা পাইলাম। কিন্তু কেমনে হবে? উনি ইলেকশনের প্রসেস ব্রিফ করলেন:

১. আজকের মধ্যে ক্যান্ডিডেট ফাইনাল করা হবে। যারা ক্যান্ডিডেট হইতে চায়, স্কুল ছুটির পরে তারা দুইজন সার্পোটারসহ গিয়া স্যার’রে জানাবে। স্যার নাম লিইখা রাখবেন।

২. এক সপ্তাহ ধইরা কথা-বার্তা বলা, বির্তক করা – এইসব করা যাবে। কিন্তু ক্লাসের বাইরে কোন ‘গন-যোগাযোগ’ করা যাবে না। লজেন্স, সিঙ্গারা ইত্যাদি ঘুষ দেয়া যাবে না।

৩. এক সপ্তাহ পরে ক্লাসরুমের টেম্পরারি ব্ল্যাকবোর্ডের পিছনে একটা কাগজে ক্যান্ডিডেটদের নাম লেখা থাকবে, সবাই গিয়া টিক চিহ্ন দিবে পছন্দের ক্যান্ডিডেটের নামের পিছনে।

এইরকম একটা ঘটনা। Continue reading