দ্য পর্ণগ্রাফার নামে একটা সিনেমা আছে, ডকুমেন্টারি-টাইপ, ফ্রেঞ্চ-সিনেমা; খুববেশি সুবিধার কিছু না। একজন ডিরেক্টর, যিনি প্যারিসে ১৯৬৮’র স্টুডেন্ট মুভমেন্টে পার্টিসিপেট করছিলেন; মুভমেন্ট শেষ হয়া যাওয়ার পরে কি করবেন আর! যেহেতু ক্যামেরা নিয়া কিছু কাজ করতে পারেন, পয়লা রাজি না হইলেও, পরে ‘বাধ্য’ হয়া পর্ণগ্রাফি সিনেমার ডিরেকশনের কাজ শুরু করেন। মাঝখানে ছাইড়াও দেন, পরে আবার শুরু করেন, এইরকম। যদিও পর্ণ-ফিল্ম, ডিরেক্টর ছোট-খাট দুয়েকটা জিনিস ইনসার্ট করার ট্রাই করেন। যেমন, শুরুর দিকে, যেই কান্ট্রি-হাউজের বাড়ি’টাতে শ্যুটিং হবে, সেইটার ন্যাচারাল বিউটি শ্যুট করেন; তারপরে, নায়িকারে ডিরেকশন দেন সব ‘কাজ’ শেষ হয়া যাওয়ার পরে ক্যামেরাটা রোল হয়া তার চোখের উপর আইসা থামবে, শে যেন একটা ব্ল্যাংক লুক দেয় তখন, এইরকম। মানে, ফিল্মের জন্য এতোটা জরুরি কিছু তো না-ই, কিছু যায়ও আসে না, কিন্তু ডিরেক্টর এই জিনিসটা চান রাখতে। মেবি এইটা, বা এইটুকই ‘আর্ট’ উনার কাছে। বাকি সবকিছু তো আছেই।
উনি ‘আর্ট’ করতেই চান – এইরকম না, কিন্তু কিছু করতেছেন যেহেতু ‘আর্ট’ ব্যাপারটা থাকে, বা রাখতে চান আর কি, কিছুটা।
২.
আমি অনেক রাইটাররে দেখছি, যারা মইরা যাইতে রাজি আছেন, কিন্তু বাংলা-ভাষা লেখবার কলকাত্তাইয়া যেই ভঙ্গি, সেইটা কোনদিনই ছাড়তে রাজি হইতে পারেন না; এই ভাষা-ভঙ্গিটাই ‘আর্ট’, উনাদের কাছে। তো, এইরকম অনেক ‘আর্ট’ আছে দুনিয়ায়। আর এইগুলা বেশিরভাগ সময় খুবই পলিটিক্যাল একটা জিনিস।
কিছুদিন আগে তামিম ইকবাল যখন বিরাট কোহলির লগে কথা কইতেছিলেন হিন্দিতে তখন প.বঙ্গের কেউ এইরকম কমেন্ট করছিলো যে, নর্থ ইন্ডিয়ান ক্রিকেটার’রে নিয়া এতো মাতামাতি কেন! কিন্তু দেখেন, তামিম ইকবাল তো ইন্ডিয়ান কেউ না! কিন্তু যেহেতু বাংলাদেশের সিটিজেন, তারে ‘বাংলা-ভাষা’র পক্ষের লোক বইলা মনে হইতে পারে; যে, দেখো নর্থ ইন্ডিয়ানরা তো ‘বাঙালি বাবু’ বইলা হাসে, তুমি অদেরকে কেনো প্রমোট করো! এইরকম অভিমান উনারা করতেই পারেন। কিন্তু জিনিসটারে ‘অভিমান’ না বইলা ‘দাবি’র জায়গা থিকা দেখতে শুরু করলে মুশকিল; আর ব্যাপারটা ঠিক পলিটিক্যাল দাবি হিসাবেও আটকায়া থাকে না, বরং একটা ‘আর্টের দাবি’ হিসাবে পারসিভড হইতে থাকে। আর এইরকম জায়গাতেই আটকায়া থাকার কথা না, বরং আরো ছড়াইয়া আছে আসলে ব্যাপারগুলা। (জয়া আহসান’রে যেই কারণে ‘আর্ট’ মনে হইতে পারে, পূর্ণিমা’রে না; ফেরদৌস’রে নেয়া যায়, মোশারফ করিম না, শাকিব খান, অনন্ত জলিল তো ‘হাইস্যকর’ 🙂 এইরকম।) এই কারণে, প.বঙ্গের লোকজনের হিন্দি-ঘৃণা’র ব্যবসা একসময় বাংলাদেশে খুব চলতো, এখনো টুকটাক চলা’র কথা; কিন্তু প.বঙ্গের লোকজনের এখন বুঝতে পারার কথা যে, এই হিন্দি-ঘৃণা দিয়া দিয়া ‘বাংলা-ভাষা বাঁচানো’ পসিবল না কখনোই! (কারণ, উনারা পলিটিক্যালি বহুত আগেই ডেড, হিন্দির কাছে সারেন্ডার কইরা বইসা আছেন! সাউথ ইন্ডিয়ান’রা যেমন কখনোই নেয় নাই, নিবেও না; যার ফলে উনাদের এইরকমের ‘মান-অভিমান’ খেলা লাগে না।…) এই কারণে দেখবেন, উনাদের ‘বাংলা-ভাষা’ও আর হয় না। এমনকি ‘কলকাত্তাইয়া কালচার’ বাংলাদেশে যেই পরিমাণ বেচা-বিক্রি হয়, প.বঙ্গেও এই মার্কেট নাই আর এখন, ‘বাংলা’ বেচতে কয়দিন কয়দিন পরে বাংলাদেশেই আসা লাগে উনাদের, এবং কয়দিন পরে পারমানেন্টলিই হিজরত করা লাগবে আসলে এইখানে।…
মানে, ‘আর্ট’ বইলা কোন ‘দূর আকাশের তারা’ আমরা বানাইতেছি – তা না; বরং খুব কোর কিছু পলিটিক্যাল ঘটনা এইখানে খুব সাটলভাবেই কাজ করে, সবসময়। এইখানে, কবিতায় আমার ‘সুন্দর ছোটবেলা’, আমার ‘টিনএজ লাভ’ বা ‘যৌবনের’ কথা আমি কইতেছি না খালি, একটা বা কিছু প্যার্টানের ভিতর দিয়া আমি কইতেছি; পারসোনাল এক্সপেরিয়েন্সটা কখনোই ‘আর্ট’ না, যদি না এইটা কোন না কোন পলিটিক্যাল আন্ডারস্ট্যান্ডিং বা হিস্ট্রি’র লগে রিলেটেড হইতে পারে।
‘আর্ট’ জিনিসটা এইরকম কোন না কোন পলিটিক্যাল এফিলিয়েশনের জায়গা থিকাই এমার্জ করে – এইটা আমার ক্লেইম না হইলেও, কোন এফিলিয়েশনের জায়গার বাইরে গিয়া টিইকা থাকতে পারে, এইটা আমার মনেহয় না।
৩.
কিন্তু তাই বইলা জিনিসগুলা সবসময় ক্লিয়ারলি আইডেন্টিক্যাল না যে, এইটার মানে এইটা, বা অইটার মানে সেইটা; কিন্তু ‘মানে’গুলা একজিস্ট করে একেকট সময়, একেকটা ফর্মে।