ইলেকশন

ইলেকশন নিয়া খুব সুন্দর একটা মেমোরি আছে আমার। সেইটা ক্লাশ সেভেনে পড়ার সময়। আমাদের ক্লাশ টিচার আছিলেন মানিক স্যার। ক্লাশে পড়ানোর সময়টাতে উনার পারফর্মেন্সের একটা ব্যাপার ছিলো, চাবায়া চাবায় অনেকটা ‘শুদ্ধ ভাষায়’ কথা কইতেন, এক রকমের রোল প্লে করতেন, যে উনি টিচার; তখন ওইটা নিয়া একটু খটকা থাকলেও এখন বুঝতে পারি যে, অইটা জরুরি একটা জিনিস ছিলো। মানে, ক্লাশে পড়ানোটা যে একটা পারফর্মেন্সের ঘটনা – এখন তো এইটা বুঝতে পারি। (এই পারফর্মেন্সের ব্যাপারে আরেকটা ঘটনা আছে, যেইটা দিয়া আমি শিওর হইছি, পরে বলতেছি।)

তখন (১৯৮০-এ) স্কুলে ক্লাস-ক্যাপ্টেন হওয়ার নিয়ম ছিলো, ফার্স্টবয় আর সেকেন্ডবয়-ই হবে (হাইস্কুলে পড়ার সময় ক্লাস সিক্স টু এইট ছেলে-মেয়েদের আলাদা সেকশন ছিলো, নাইন থিকা একসাথে)। ক্যাপ্টেনের কাজ তেমন কিছু না, ক্লাস-ব্রেকের সময় কেউ পানি খাইতে বা মুততে গেলে তার পারমিশন নিয়া যাইতে হবে; হোমওয়ার্কের খাতা কালেক্ট কইরা টিচাররে দিতে হবে, বা কোনসময় টিচার না আসলে টিচাররুমে গিয়া জানাইতে হবে; বা টিচার না থাকলে চিল্লা-পাল্লা যাতে কম হয়, এইসব মনিটর করা, এইরকম।

তো, মানিক স্যার কইলেন, এইটা হবে না। ফার্স্টবয়, সেকেন্ডবয় পড়াশোনা ভালো করতে পারে, কিন্তু ভালো লিডার হইতে পারবে – এর তো কোন গ্যারান্টি নাই। আর ছোটবেলা থিকাই ডেমোক্রেসির চর্চা করা লাগবে। ক্লাসের ছাত্ররাই তাদের ক্যাপ্টেন নির্বাচন করবে, টিচার হিসাবে উনি সেইটা করতে পারেন না, ব্যাপারটা অ-গণতান্ত্রিক। তো, ইলেকশন হবে ক্লাসে।

আমরা তো খুবই মজা পাইলাম। কিন্তু কেমনে হবে? উনি ইলেকশনের প্রসেস ব্রিফ করলেন:

১. আজকের মধ্যে ক্যান্ডিডেট ফাইনাল করা হবে। যারা ক্যান্ডিডেট হইতে চায়, স্কুল ছুটির পরে তারা দুইজন সার্পোটারসহ গিয়া স্যার’রে জানাবে। স্যার নাম লিইখা রাখবেন।

২. এক সপ্তাহ ধইরা কথা-বার্তা বলা, বির্তক করা – এইসব করা যাবে। কিন্তু ক্লাসের বাইরে কোন ‘গন-যোগাযোগ’ করা যাবে না। লজেন্স, সিঙ্গারা ইত্যাদি ঘুষ দেয়া যাবে না।

৩. এক সপ্তাহ পরে ক্লাসরুমের টেম্পরারি ব্ল্যাকবোর্ডের পিছনে একটা কাগজে ক্যান্ডিডেটদের নাম লেখা থাকবে, সবাই গিয়া টিক চিহ্ন দিবে পছন্দের ক্যান্ডিডেটের নামের পিছনে।

এইরকম একটা ঘটনা। Continue reading

“…ষড়যন্ত্র হচ্ছে: প্রধানমন্ত্রী”

http://www.bd-pratidin.com/2014/01/01/35413

[নিউজ লিংক’টা এখন আর কাজ করে না, খবরটা ছাপা হইছিল মেবি ৩/৪ জানুয়ারি, ২০১৪-তে; নোট’টা জানুয়ারি ৬, ২০১৪-তে লেখা।]

এইটা গুরুত্বপূর্ণ একটা স্টেটম্যান্ট ছিল। কিন্তু রাজনীতিতে গুরুত্ব ত খুব ফ্রিকোয়েন্টলি চেইঞ্জ হয়।

সবচে সিগনিফিকেন্ট ঘটনা হইলো ‘প্রধানমন্ত্রী’ বলাটা, শেখ হাসিনা না; একটা পজিশন, কোন ইন্ডিভিজ্যুয়াল মানুষ না। ইলেকশনে একজন মানুষের তো একটাই ভোট – এইরকম সহজ-সরল-সাধারণ ব্যাপার। ইস্যু’টা যখন শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকবেন কি থাকবেন না, তখন এইখানে এস্যুরেন্সটা দেয়া আছে যে, এইটা প্রধানমন্ত্রী’র স্টেটমেন্ট। প্রধানমন্ত্রী যখন ষড়যন্ত্রের কথা কইতেছেন তখন সেইটা রাষ্ট্র ও আইনের এগেনেস্টের কোন ব্যাপার।

এই যে ষড়যন্ত্র বলা, এইটা শুধুমাত্র এই ধারণা থিকা বলা না যে, ষড়যন্ত্র হইতেছে; বরং একটা এক্সপেক্টশন আকারেও হাজির আছে যে, ষড়যন্ত্রই পসিবল এখন এবং এইটা তখনই সম্ভব যখন প্রকাশ্য ও গণতান্ত্রিক বইলা যে পদ্ধতিগুলা আছে সেইটা আর সম্ভব না।

এই পরিস্থিতিটা কেমনে সম্ভব হইতেছে, এই ষড়যন্ত্রমূলকতা, সেইটা নিয়া তারপরও কথা বলা সম্ভব। কারণ কী ষড়যন্ত্র হইতেছে, তার চাইতে ভাবা দরকার কেন ষড়যন্ত্র হইতেছে। অথবা তারও আগে এই ‘ষড়যন্ত্র-ভাবনা’টা কেমনে আসতে পারলো? যেহেতু ষড়যন্ত্র, কয়টা অনুমান ত করাই যাইতে পারে:
Continue reading

ইলেকশনের সময় বিজ্ঞাপনী প্রচার নিয়া

চিলিতে পিনোচোট রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেন ১৯৭৩ সালে। ১৯৮৮ সালে তিনি একটা গণভোটের ব্যবস্থা করেন এই বিষয়ের উপর যে,  আরো ৮ বছর ক্ষমতায় থাকতে চান। সেই গণভোটে ৫৬% ‘না’ ভোট পান তিনি এবং পরের বছর জেনারেল ইলেকশনের মাধ্যমে রাষ্ট্রক্ষমতা ক্ষমতা হারান।

এই গণভোটের জন্য ‘না’ এবং ‘হ্যাঁ’ সমর্থকরা টিভিতে  ১৫ মিনিট কইরা প্রচারণা চালানোর সুযোগ পায়, ইলেকশনের আগে। ‘না’ ভোটের পক্ষে যে নির্বাচনী বিজ্ঞাপন বানানো হইছিল,  সেইটা নিয়া একটা সিনেমা (ফিচার ফিল্ম, ডকুমেন্টারি না) বানানো হইছিল, ‘নো’ নামে, ২০১২ সালে। সিনেমাটা বেশ প্রংশসা পাইছিলো। হইতে পারে বিজ্ঞাপন জিনিসটারে যেইভাবে গ্লোরিফাই করা হইছে, সেই কারণেই।

সিনেমাটাতে দেখা যায়, মূল থিম হিসাবে হ্যাঁ পক্ষ এবং না পক্ষ দুইটা ভিন্ন ভিন্ন ফোকাস পয়েন্ট বাইছা নিছিলো। হ্যাঁ পক্ষ দেখাইলো যে,  পিনোচোটের সরকার গত ১৫ বছর কি কি উন্নয়ন করছে, জিডিপি কেমন বাড়ছে, কত ইন্ড্রাষ্টিয়ালাইজেশন হইছে, এইসব। আর এখন এই টেকসই গর্ভমেন্ট যদি না থাকে তাইলে বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে, উন্নয়ন থাইমা যাবে। মানে, কি কি হইছে এবং না-হওয়ার ভয় – এই দুইটাই ছিল তাদের বলার বিষয়।

অন্যদিকে, না পক্ষ সুন্দর এবং ড্রিমি ফিউচারের বিজ্ঞাপন বানাইলো; যে, চিলি’রে নতুন কইরা গইড়া তুলতে হইলে সবাই মিইলা কাজ করতে হবে, নতুন চিলি হবে সবার লাইগা, বাচ্চা মে’রা করবে নাচা গানা, আনন্দে – এইসব পজিটিভ জিনিসপত্র দিয়া ঠাসা।  বিরোধীদলগুলার জোট এই থিমটারে কোক-পেপসি’র বিজ্ঞাপন বইলা প্রথমে নিতে চায় নাই,  কিন্তু শেষমেশ মোটামুটি এইরকমের প্রচারণাই চালায়। অবশ্য খালি বিজ্ঞাপন না আরো অনেক কিছুই করে, ভোটারদের নাম এনলিস্টেড করা, ভোট দিতে কনভিন্স করা, ভোট দিয়াও যে চেইঞ্জ করা পসিবল, এইসব।

যেহেতু সিনেমাটা বিজ্ঞাপনটা নিয়া, সে ওই ইস্যুটারেই সেন্টার পয়েন্ট করে যে, মানুষ কি হইছে সেইটা নিয়া খুব একটা চিন্তিত না; কারণ পাবলিক জানে যে তারা জানে। এইটারে খুববেশি চেইঞ্জ করার উপায় নাই। কোন রাজনৈতিক পক্ষ যদি মনে কইরা থাকে যে, পাবলিক জানে না, তারা আসলে নিজেদের না-জানাটারেই রিফ্লেক্ট করে।

‘উন্নয়ন’ করাটা ভোটে জিতার জন্য মুখ্য বিষয় না। পিনোচোট অর্থনৈতিকভাবে খুব কম কিছু করেন নাই। অথবা এরশাদের কথাই ধরেন না, ‘উন্নয়ন’ যদি মুখ্য ব্যাপার হইতো, তাইলে সেই সময়ে বাংলাদেশের ইকোনমিক ইন্ডিকেটরগুলা পজিটিভের দিকেই ছিলো এর আগের সরকারের তুলনায়। (যদিও এই ইন্ডিকেটরগুলি খুবই ইনসাফিশিয়েন্ট কিছু জিনিস, এইটা এতোদিনে আমরা জানি।)  আওয়ামী লীগ যদি দেখে যে, মানুষ-জন জানে না  উনারা কি কি ভালো কাজ করছেন, তার মানে এই না যে, পাবলিক খালি জানে না; তার মানে এইটাও যে জনগণ এইসব কিছু জানাটারে পলিটিক্যালি খুববেশি ইর্ম্পটেন্ট মনে করে না।

এই অর্থনৈতিক উন্নয়নের কনফিডেন্স আসলে একটা রাজনৈতিক ইল্যুশন। পাবলিকের কনজামশন পাওয়ার যত বাড়তে থাকে, তাদের নিজেদের ততটাই কনফিডেন্ট হয়া উঠার কথা; নিজেদের ক্ষমতারে আরো বেশি কইরা বুঝে উঠতে পারার কথা। সরকার যদি মনে করে যে,  এই ‘উন্নয়ন’ তার কারণেই সম্ভব হইছে, জনগণের কোন কন্ট্রিবিউশন নাই, তাইলে ত আরো বিপদ!

তার মানে এই না যে, আওয়ামী লীগ এইসব পয়েন্ট হাইলাইট করবো না; কিন্তু ভোটে জিতার লাইগা যদি এইটারেই মূল এজেন্ডা হিসাবে হাজির করে তাইলে তাদের ক্যাম্পেইন দুর্বল হওয়ার কথা। ভয়-ভীতি দেখানোর প্ল্যান’টা আরো ব্যাক-ফায়ারই করবে। কিন্তু ক্ষমতা এমন একটা জিনিস, যেইটা অপারেটই করে একটা ফিয়ার ফ্যাক্টর’রে তাজা রাখার ভিতর দিয়া। ১৯৯৬ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জিতার মূল কারণ তাদের আন্দোলন সংগ্রাম না, বরং কাইন্দা দেয়ার ভিতর দিয়া শেখ হাসিনার ডেডিকেশনরে স্পষ্ট করাটা। গত ইলেকশনেও উনারা উনাদের এজেন্ডাগুলারে অনেকবেশি বিশ্বাসযোগ্য কইরা তুলতে পারছিলেন বিএনপি’র তুলনায়, অ্যার্পাট ফ্রম অল আদার পলিটিক্যাল কন্সপারেসিস।

একইভাবে, বিএনপি যদি ক্যাম্পেইনের ফোকাস রাখে শুধুমাত্র আওয়ামী লীগ সরকারের ব্যর্থতা,  দে আর শিওর টু ফল ইন টু দ্য ট্রাপ। আওয়ামী লীগের বাজে কাজগুলা মানুষ ভালোই জানে, কিন্তু বিএনপি’র বিজ্ঞাপনী প্রচারটা থাকা দরকার যে, কোন কোন জায়গায় এবং কিভাবে তারা আওয়ামী লীগের চাইতে বেটার হইতে পারে, সেই জায়গাগুলারে বিশ্বাসযোগ্য কইরা তোলা।

উনারা যখন উনাদের দলের বিজ্ঞাপন বানাইবেন বা প্রচারণা চালাইবেন তখন কি কি উন্নয়ন করছেন তার চাইতে কি কি উন্নয়ন করবেন, সেইটারে বিশ্বাসযোগ্য কইরা তোলাটা ভোটে জেতার জন্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়া উঠবো, পাবলিক’রে ইনফ্লুয়েন্স করার লাইগা – এইটাই ‘নো’ সিনেমার ভিতর দিয়া অ্যাড ইন্ড্রাষ্টির প্রপোজাল পলিটিকসের কাছে। পজিটিভিটি শুধুমাত্র এই কারণেই দরকার না যে, এইটা রাজনৈতিক দল সম্পর্কে জনগণরে একটা আরাম দিবে; বরং আমি ‘ভালো’ কাজ করতে চাই – এইটা বিশ্বাসযোগ্য কইরা তোলাটাই রাজনৈতিক প্রচারণার জন্য ক্রুশিয়াল হওয়ার কথা। আর বিজ্ঞাপনের কাজ তো এইটাই, ঘটনা যেইটাই হোক তারে মোর বিলিভেবল এবং ডিজায়ারাবল করতে পারাটা।