এক টিকিটে দুই সিনেমা: সুব্রত অগাস্টিন গোমেজ এর ‘মর্নিং গ্লোরি’ নিয়া কিছু কথা

মর্নিং গ্লোরি। সুব্রত অগাস্টিন গোমেজ। ঐহিত্য। ফেব্রুয়ারি ২০১০। পৃষ্টা:৭০। মূল্য: একশত টাকা। প্রচ্ছদ: ধ্রুব এষ।[pullquote][AWD_comments width=”294″][/pullquote]

মর্নিং গ্লোরি বইটাতে দুইটা পার্ট আছে: চান্দ্রায়ণ (২৪টা কবিতা) এবং অনিকেত (২১টা কবিতা)। আসলে দুইটা পার্ট একেবারেই দুইরকম। (বাংলা-সিনেমায় ডিপজল-যুগ শুরু হওয়ার আগে) মানসী হলে দেখা এক টিকিটে দুই সিনেমা মতো: প্রথমটা যদি চাইনিজ মুভি হয় তো দ্বিতীয়টা কাটপিসে ভরা কোন ইউরোপিয়ান সিনেমা! 

প্রথমটা পইড়া খুব একটা ভালো লাগে নাই, দ্বিতীয়টা পইড়াও যে খুব ভালো লাগছে, সেইটাও না; কারণ, সুব্রত অগাস্টিন গোমেজ যে ধরণের কবিতা লিখেন বা কবিতা লিখতে গিয়া যেইসব বিষয়গুলিরে হাইলাইট করেন, সেই ব্যাপারগুলিরে কবিতার বাইরের দিক বইলা আমি মনে করি। যেইখানে তাঁর জোর আছে, সেই জায়গাগুলি খুবই পেশীবহুল মনে হয়। মানে দেখা যায়, কবিতার ভিতর নতুন নতুন শব্দ আছে, চিন্তা আছে, বাহারি ছন্দ আছে! কিন্তু কবিতা তো কিছুই দেখায় না। আমি বলতেছি না যে, আমি যেইটারে কবিতা মনে করি, সেইটাই ঠিক; কিন্তু আমি যা মনে করি, সেইটাই তো আমি বলতে পারি মাত্র! Continue reading

নোটস অন: ক্যামেরাগিরি।

 

ক্যামেরাগিরি। ফরহাদ মজহার। আগামী প্রকাশনী। ফেব্র“য়ারি ২০১০। প্রচ্ছদ: সব্যসাচী হাজরা। পৃষ্টা: ৫৪। মূল্য: ১০০ টাকা।

 

কবিতাগুলির মধ্যে ‘বাণী’ হওয়ার একটা বাসনা আছে – প্রথম কয়েকটা কবিতা পড়ার পর এই কথা মনে হইলো। যা কিছুই বলা হইতেছে, তা একটা উদ্দেশ্য থিকা বাইর হয়া আসতেছে, যার ফলে কবিতা লিখা এমন একটা অ্যাক্টিভিটি যার ভিতর দিয়া কিছু কথা বলা যাইতেছে। কবিতা অ্যাজ অ্যা ফর্ম একটা মিডিয়াম-ই, একটা ইনোভেশন না আর। মানে প্রি-ফিক্সড যে ভাবনা, তার প্রকাশ আছে। কবিতা লেখাটা, লেখকের ইনটেনশনের বাইরে আর কিছুই না, এইরকম হতাশা আসছে, মনে। মানে, কবিতা’তে কবি তো নিজের কথা কইবেনই, কিন্তু কবিতা ব্যাপারটা যদি হয়া উঠে এক রকমের ‘সমাজ-বিপ্লবের হাতিয়ার’, ‘সমাজের দর্পন’ ‘সার্টেন আর্দশের ঘটনা’ এইরকমের আজাইরা জিনিস, তাইলে তো মুশকিলই। (এইগুলি থাকতে পারবো না – তা না, এমনিতেই তো থাকে।)

এই ভাবনা পার হয়া যখন সামনের দিকে যাই; দেখি যে, দুইটা ঘটনা – তাকায়া থাকা আর দেখা। এই ডিফরেন্সটা তো স্পষ্ট-ই; মানে তাকাইয়া থাকা যেইখানে যাওয়া যাইতেছে না, ধাক্কা দিলেই হয়তো দরোজা খুলবে; আর যেইখানে দেখা, সেইখানে কোন দরোজাই নাই।

কি নাই – তা তো কইলাম, এইবার তাইলে বলি কি আছে কি আছে।

এই কবিতায় ন্যারেশন আছে। সাম্প্রতিক আছে, যেহেতু এরা (এইসব উপমা, দৃশ্যকল্প) সাময়িক, এদের অমরত্বে সওয়ার হওয়ার সম্ভাবনা নিয়া আছে। সেক্স পার হওয়ার পরের প্রেম আছে।

পুরুষের নারীবেশ শুইনা মনে হইলো, বেশিরভাগ নারীই আসলে সোশ্যাল (বা বলা ভালো মিডিয়া) ন্যারেশনের দিক দিয়া ইনফিরিয়র’র পুরুষের রূপ; যেমন ধরেন, নারী মোহাম্মদ আলী, নারী বেকহ্যাম, নারী সার্ত্র, এইরকম। পুরুষের নারীভাব যে একেবারেই দুর্লভ সেইদূর পর্যন্ত আভাস আছে, অথবা আমি ভুলভাবে সেই কণা দেখতে চাইছি। দারুণ বর্ষাকাল আছে তার আন্তর্জাতিকতাসহ, ‘কাব্য’ আছে আবেগ আর কাঁপা কাঁপা অনুভূতিসহ; শহর আর তার অদূরে দূরবর্তী গ্রাম আছে।

খুব বাজেভাবে বলতে গেলে, আল মাহমুদ কলকাতার যেই ‘গ্রাম-ভাবনা’রে একরকমের ভিজিবল করছেন বাংলা-কবিতাতে, তার কিছু এক্সটেনশনই আছে। এইটুক বইলা থাইমা গেলে আসলে একটু ভুল-ই বলা হবে। ভাষার জায়গাটাতে কাজী নজরুল ইসলাম যেইরকম আরবী-ফার্সী শব্দ ইউজ করার সাহস’টা দিছেন, কিন্তু ‘আধুনিক’ হইতে গিয়া হইতে পারেন নাই; ফররুখ আহমদ যেইরকম ইসলামের ‘আধুনিক’ জায়গাটারে সাবস্ক্রাইব করতে গিয়া এলিটিজমরে হাতছাড়া করতে রাজি হইতে পারেন নাই; আল মাহমুদ যেইরকম ‘গ্রাম-বাংলা’রে পোট্রেট করতে গিয়া কলকাতা বা কলোনির হ্যাং-ওভার’রে ছাড়াইতে পারেন নাই; ফরহাদ মজহারও ‘মুসলমান’ আইডেন্টিটিরে আপহোল্ড করতে গিয়া ‘বাঙালি’ আইডেন্টিটি’রে ইগনোর করতে চান নাই; কিন্তু আইডেন্টিটির পলিটিক্সটারে এই গ্রাউন্ড থিকা দেখতে যাওয়াটাই তো চিন্তার আসল ট্রাপ’টা। ফরহাদ মজহার উনার কবিতায় এই কাজ-ই করছেন – এইটা আমার ক্লেইম না। কিন্তু এই জিনিসগুলি এমবেডেড আছে উনার কবিতায়। Continue reading

গুরুর চরণ

গুরুমুখী বিদ্যা, গোঁয়ার্তুমি সকল
এলো নম্র পায়ে
কী করে তারে চিহ্নিত করি
বলি, এই যে অনুরণন, তা সঙ্গ-আশ্রিত
প্রতিক্রিয়া বিন্যাস
ছল চাতুরী
কাঁপা কাঁপা অভিজ্ঞান

তোমারো প্রাণেরো ধারা
আসলে তা পারিপার্শ্বিকতা
ঝুল ধরে বসে থাকা
প্রাচীন বটের Continue reading

গ্রাম ও শহরের গল্প

ঘিঞ্জি বস্তির শহরগুলি, আমি ভালোবাসি

 

যেইখানে শহর এর ভিতর আটকায়া আছে গ্রাম, আমি ভাবি

গ্রাম নিয়া চিন্তা আমার ভর করে ওই বস্তির ভিতর, যা আমি দেখি না

অ্যাজিউম করি যে, ওইটাই একটা প্রটোটাইপ, শহরের সৌন্দর্য্য নষ্ট করে

নিজেদেরকে গইড়া তোলার ট্রাই করে; ওইটা একটা অহেতুক রিয়ালিটি

যত দ্রুত পারি, আমি তাদেরকে শহরের অর্ন্তভুক্ত কইরা দিতে চাই

আর তারাও খুব দ্রুতই গ্রাম্যতা নিয়া আসে শহরের ভিতর [pullquote][AWD_comments width=”294″][/pullquote]

 

আইল্যান্ড ধইরা এমন বেখেয়ালে হাঁটে যেন ক্ষেতের আইল

ময়লা পানির খাল পার হয় ডিঙি নৌকায়, যেন বর্ষার নতুন পানি

আর বৃষ্টিতে পানি জমলে কি যে খুশি, বড় বড় রাস্তাগুলি তো এক একটা নদী!

 

বস্তির মানুষজন এই শহরটারেই নানান ফন্দি-ফিকিরে একটা গ্রাম বানায়া ফেলে

ছুটির দিনে ওরা ঢুইকা পড়ে সুপার শপ আর শপিং মলে

এইটা-ওইটা দেখার ভান করে দেখে শহরের মানুষগুলি, ফলো করে যে

হাফপ্যান্ট পইরাই শহরের মানুষগুলি এখন বাইরে চইলা আসছে

ওদের আর ঘর-বাহির নাই, রাস্তা-বাড়ি নাই, নারী-পুরুষ নাই, স্ট্রেট-গে নাই … Continue reading

অন্ধকার

অন্ধকারের মুখের দিকে তাকিয়ে আছি

অন্ধকারের দিকে তাকায়ে থেকে মনে হচ্ছে এর আরো কোন শেষ নাই

অন্তহীন সময়ের ভিতর এই লোডশেডিং…

 

আমি তাকিয়ে আছি অন্ধকারের দিকে
অন্ধ চোখ নিয়ে, অন্ধকার হয়ে …