উচ্চ-প্রযুক্তির সমাজগুলিতে একজন ইন্টেলেকচুয়ালের কোনো দরকার নাই – ভি.এস.নাইপল

নাইপল এর কথা বলা

নাইপলের এই কথা-বার্তা অন্য কোন একটা জিনিস খুঁজতে গিয়া পাইছিলাম, তেহেলকা ওয়েব-এ।  কপি কইরা রাইখা দিছিলাম, পড়লাম কিছুদিন আগে। নোবেল পাওয়ার পর তার কিছু কথা এবং তার সম্পর্কে নানাজনের মন্তব্য দেখছিলাম, যেইটা পইড়া উনারে নিয়া আগ্রহ হয় নাই খুববেশি। কিন্তু এই ইন্টারভিউটা ইন্টারেস্টিং। তার ভাষা, এতোটাই সহজ যে,  এর অনুবাদ বাহুল্য মনে হয়। আর. কে. নারায়ন-এর ইংরেজীর মতোন। এইরকম ইন্ডিয়ান ইংরেজীর বাংলা করার তেমন দরকার আসলে নাই। তারপরও মনেহয় যেই লেখার উপর বেইজ কইরা আমি  বলতে চাইতেছি সেইটারে বাংলায় আইনা না কইলে একটা ফাঁক থাকে। আমি আলোচনা করতেছি বাংলাতে আর বাংলাতেই সেই লেখাটা নাই; থাকতেই হবে এইরকম কোন শর্ত নাই, কিন্তু থাকলে মনেহয় ভালোই।

সাক্ষাতকার যিনি নিছেন, ফারুক ধন্দী, একজন ইন্ডিয়ান রাইটার, ট্রান্সলেটর। নাইপল নিয়া বেশ উৎসাহী। নাইপলরে নিয়া উনার এক বিশাল লেখা আছে। তেহেলকাতেই ছাপা হইছে সেটা, বেশ কয়েকটা পর্বে।

নাইপল এর কথা বলায় শেষ দিকে আসছে, বাংলাদেশ প্রসঙ্গ। একটা জাতির ক্ষেত্রে বা জনগোষ্ঠীর ক্ষেত্রে ‘সুখ’ হিসাবে যে জিনিসটারে উনি প্রাধান্য দিছেন, সেইটা মনে হইছে,  ইকোনমিক ডেভলাপমেন্টের একটা ব্যাপার। যেইখানে মোকাবিলার কিছু আছে, সেইটা ইন্টায়ারলি ইকোনমিক একটা ঘটনা। উদাহারণ হিসাবে, তিনি আঠারো শতকের ইউরোপের কথা বলছেন, যখন তারা গরিব আছিল আর তারা (ইউরোপিয়ানরা) এখন সুখী কারণ তারা এখন আর গরিব নাই। একইভাবে তিনি বাংলাদেশের প্রসঙ্গ আনছেন। কিন্তু এক ধরণের শ্লেষ আসলে এইটা, প্রান্তিকতার প্রতি উনার এই লোভ। মোকাবিলা করার মতো কিছুই যে আর উনি খুঁইজা পাইতেছেন না, এইটা পুরান শত্রুতার প্রতি উনার ভালোবাসাই। উনি এমন একটা জায়গা জায়গা থিকা ইস্যুগুলিরে ডিল করতেছেন, যেইটা আর এগজিস্ট করে না। তো, এইটা যে নাই তা না; বরং যা আছে, তারে নতুনভাবে লোকট করার একটা আর্জও হইতে পারে এইটা। যদিও সেই পসিবিলিটি বেশ কমই, উনার টেক্সটে।

এই কারণে নাইপলের কমেন্টগুলিরে ফাঁপা বুলি বইলাই মনে হইছে। কোনকিছু চিন্তা না করতে চাওয়ার একটা প্রবণতারে উনি হাইলাইট করছেন। উনার চিন্তার ভিত্তিটা পশ্চিমা ধরণের লিনিয়ার একটা রুচিবোধ। যেইটা সবসময়ই একটা ভ্যালু তৈরি করতে আগ্রহী। কিন্তু যেই জিনিসটা ইন্টারেস্টিং,  চিন্তার জায়গা থিকা নাইপলকে বাতিল কইরা দেয়া যায় এবং তাঁর সমালোচনাও করা যায়; কিন্তু যেভাবে উনি কথা বলেন, সেইটাতে চিন্তার চাইতেও তাঁর যে ভঙ্গিমা, ভাষা ও ভাবনা, তার একটা ব্যাপার থাইকা যায়।

এইখানে দ্বন্দ্বটা আসে – চিন্তার  আর বোধ বা ভাষার। কেউ একজন চিন্তাবিদ হইতে পারেন, এই অর্থে যে তিনি নতুন ভাবনাগুলিরে এক্সপ্লোর করতেছেন, কিন্তু তাঁর বলবার বিষয়টা সবসময়ই ‘সাহিত্য’ হয়া উঠতে পারে না। আবার বিপরীতভাবে, সব সাহিত্যকর্মই চিন্তার জায়গাটারে এক্সপ্লোর করতে পারে না বা এইটার কি কোন দরকার আছে কিনা? রণজিৎ দাশ একবার খুব চেইতা গিয়াই কইতেছিলেন, একমাত্র উৎকর্ষতা ছাড়া কবিতার আর অন্য কোন বিচার হইতে পারে না। [‘উৎকর্ষতা’ 🙂 ] অথচ ‘সাহিত্য’ সবসময় রাজনীতি, দর্শন আর সামাজিকতার সাথে রিলিটেড একটা ব্যাপার। হয়তো একজনের রাজনীতি’রে আপনি সার্পোট করতে পারতেছেন না, তাই বইলা ‘সাহিত্য’রেও কি ঠেলা দিয়া সরাইয়া দেয়া যায় কিনা?

নাইপল এর কথাগুলি গুরুত্বপূর্ণ মনে হয় নাই আমার কাছে, কিন্তু যেভাবে একটা অভিজ্ঞতার জায়গা তিনি বলেন তা খুবই আর্কষণীয় একটা ব্যাপার। তবে এইভাবে ফর্মের যে এক্সপ্লোরেশন, সেইটা নতুন চিন্তারেও জায়গা দিতে পারে – এইটারেও বাদ দিতে চাইলাম না।

২৪.০৩.২০০৮

——————————————

Continue reading