চাঁদের পাহাড়ঃ বাঙালি ও বাংলা-ভাষার অ্যাডভেঞ্চার

স্কুল লাইফে এই বই পড়ি নাই বা পড়লেও আসলে কিশোর থ্রিলার বা কিশোর ক্ল্যাসিকের চাইতে ‘ভালো বই’ কখনোই মনে হয় নাই। এই কারণেই হয়তো মনেও নাই। পরে ভাবলাম যে, পড়ি। এবং পড়তে গিয়া কিছু জিনিস চোখে পইড়া গেলো, যেইটা না-বলার কিছু নাই।

 

বাঙালির পেশা

অ্যাডভেঞ্চার-প্রিয় বাঙালি তরুণের সম্ভাব্য সামর্থ্যগুলা কি কি? বিভূতিবাবু বলছেন, “ফুটবলের নামকরা সেন্টার ফরওয়ার্ড, জেলার হাইজাম্প চ্যাম্পিয়ন”। আর তাঁর আশংকা হইলো “পাটের কলের বাবু” হইয়াই না জীবন পার করতে হয়।

“ফুটবলের নামকরা সেন্টার ফরওয়ার্ড, জেলার হাইজাম্প চ্যাম্পিয়ন, নামজাদা সাঁতারু শঙ্কর হবে কিনা শেষে পাটের কলের বাবু?” (পৃষ্টা ১৬)।

 

এই বাক্যরে উদাহারণ হিসাবে নিলে, পাটের কলের বাবু’রে বলা যায় বাঙালির কমন পেশাও না ঠিক, একটা অ্যাসপিরেশন – যে হায়েস্ট এই লেভেলে যাইতে পারে সে, যারে ‘বাবু’ বইলা ডাকবে কেউ; অ্যাডভেঞ্চারহীনতা’র একটা বাস্তবতা এবং সম্ভবত কোন নায়ক-চরিত্রও পাওয়া সম্ভব না কোন বাংলা গল্পে বা উপন্যাসে যে কিনা পাটের কলে চাকরি করে, অ্যাজ অ্যা ‘বাবু’। মানে, পাইলেও সে স্যাড একটা কারেক্টারই হওয়ার কথা। হইতে পারে, এইটা তখন একটা ‘ভালো’ চাকরি, পেশাগত নিরাপত্তা, নির্দিষ্ট নিয়মের এবং কমন একটা সাফল্যের জিনিস. সোসাইটিতে । এই যে নায়কের ‘আন-কমন’ হইতে চাওয়া, এইটা তারে অ্যাডভেঞ্চারের দিকে খালি টানে নাই, ‘কমন’ বা ‘অপজিট’রে একভাবে ডিফাইন করার অধিকারও দিছে।

Continue reading

কবি নজরুলের ভাষা, ক্লাস-স্ট্রাগল এবং প্রেম

কাজী নজরুল ইসলামের এইসব নিয়া ত অনেক লেখা হইছে। অনেকলেখা পড়ি নাই; তারচে বেশি আসলে পড়তে পারি নাই। কারণ আলাপের একইরকমের প্যার্টানটাতেই আটকাইয়া গেছি; যারা লিখছেন, উনারা হয়তো বলছেন নতুনকিছু, কিন্তু পুরানা-ভঙ্গির ভিতর নতুনের-আশা আমার মইরা গেছে অথবা সাহিত্য যে খালি পুরানেরই রিপিটেশন এই আইডিয়াতেই আমল আনতে পারি নাই আর!

তো, কাজী নজরুল ইসলাম নিয়া নতুন কইরা আলাপ করার ইচ্ছা হইলো কাজী মোতাহার হোসেনের স্মৃতিকথা  বইটা পইড়া। উনার বইটাতে নজরুল’রে নিয়া কয়েকটা লেখা আছে, ওইগুলার বেসিসেই কবি নজরুল ইসলাম’রে বোঝার একটা কোশিশ (নজরুল-এফেক্ট) করা।

কাজী মোতাহার হোসেন লিখতেছিলেন –

সে যুগে (১৯১২) চোস্ত ভাষা বলতে বঙ্কিমী ভাষাই বুঝাত;… দেখা যায় ততদিনে (১৯১৯) ভাষাটা অনেকটা রাবীন্দ্রিক হয়ে এসেছিল আর ভাবও প্রায়ই রবীন্দ্রনাথের থেকে ধার করা… একটা সময়  (১৯২৬) লক্ষ করলাম, আমার ভাষার বঙ্কিমী ও রাবীন্দ্রীক ভাব কেটে গিয়ে একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য এসে পড়েছে। দীর্ঘ সমাস, আর দুরূহ শব্দ বিদায় নিয়েছে; ভাষা হয়ে উঠেছে সহজ, প্রাঞ্জল আর বাহুল্যবর্জিত বা অনাড়ম্বর – যাতে পরিমাণ মত মূর্চ্ছনা থাকলেও গিটকারীর প্রাধান্য নেই। (কাজী মোতাহার হোসেন, আমার সাহিত্যিক জীবনের অভিজ্ঞতা, স্মৃতিকথা, প. ৭৩ – ৭৫)।

যদিও উনি ক্লেইম করছেন যে, বঙ্কিম ও রবীন্দ্রনাথের চাইতে উনার ভাষা চেইঞ্জ হয়া আসছে, ততো একটা হয় নাই আসলে; বাহুল্য, অনাড়ম্বর আর প্রাঞ্জলতা –  এইসবকিছু রয়া গেছিল বা আছে; এই যে চেইঞ্জ, এর গরিমা উনি দিছেন ওই সময়কার মুসলমান লেখকদের কনশাস এফোর্ট’রে, শিখা-গোষ্ঠীরে; হয়তো এইটা উনারে দাবি করতে হেল্প করছে, কিন্তু সাহিত্যে বুঝতে পারা এবং লিখতে পারা দুইটা আলাদা আলাদা ঘটনা; উনার ভাষা-বদল বইলা যদি কিছু ঘইটা থাকে সেইটা জায়েজ করার কথার মতো সাহিত্যিক উদাহারণ হিসাবে তার আগ পর্যন্ত কাজী নজরুল ইসলামই আছিলেন। Continue reading

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিনে বাংলা-কবিতার ঠাকুরদেরকে শুভেচ্ছা

 

মূল কবিতা

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

বলাকা: ১৪

কত লক্ষ বরষের তপস্যার ফলে
ধরণীর তলে
ফুটিয়াছে আজি এ মাধবী ।
এ আনন্দচ্ছবি
যুগে যুগে ঢাকা ছিল অলক্ষ্যের বক্ষের আঁচলে ।
সেইমতো আমার স্বপনে
কোনো দূর যুগান্তরে বসন্তকাননে
কোনো এক কোণে
একবেলাকার মুখে একটুকু হাসি
উঠিবে বিকাশি—
এই আশা গভীর গোপনে
আছে মোর মনে । Continue reading

আই ওয়ান্ট টু বি অ্যা পারফেক্ট মেশিন সামডে

আই ওয়ান্ট টু বি অ্যা পারফেক্ট মেশিন সামডে 

(ট্রিবিউট টু অ্যান্ডি ওয়ারহল। সাম বেঙ্গলি ল্যাঙ্গুয়েজ ইজ লেফট দেয়ার!)

আই ওয়ান্ট টু বি অ্যা পারফেক্ট মেশিন সামডে।

যেহেতু আমি র ক্যাপিটালিজমের ইকনমিতে আছি, প্রতিদিন মিনিমাম ১২ ঘণ্টা ম্যাটেরিয়াল রিপ্রডাকশনে ইনভলব্ড থাকতে চাই। ৮ ঘণ্টা ঘুমাইতে চাই। ২ ঘণ্টা বউ-বাচ্চাদের সাথে সময় কাটানোর পরে ২ ঘণ্টা আমি লিখতে চাই প্রতিদিন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে আমি কাঁচা-বাজার, সুপারমার্কেট ও শপিংমলে যাইতে চাই। সিনেমা দেখতে এবং বই পড়তে চাই একটানা। সরকারি ছুটির দিনে আমি ঘুরতে যাইতে চাই। আই ওয়ান্ট টু বি অ্যা পারফেক্ট ইমপ্লয়ি, পারফেক্ট হাজব্যান্ড (ওয়াইফ), পারফেক্ট ফাদার (মাদার) অ্যান্ড অ্যা রাইটার হু ক্যান বি রিকগনাইজড অ্যাজ অ্যা মেশিন।

সবকিছুর পরে, রেদার দ্যান টু বি ইন এনি ব্রাকেট অর এনি জেন্ডার বায়াসড স্পেসিস, সাম ডে আই ওয়ান্ট টু বি অ্যা ট্রু মেশিন। Continue reading

পূর্ববঙ্গের ভাষা, শনিবারের চিঠি এবং শ্রীনীরদচন্দ্র চৌধুরী

শনিবারের চিঠি নিয়া শ্রীনীরদচন্দ্র চৌধুরী কিছু কথা বলছেন উনার বই ‘আমার দেবোত্তর সম্পত্তি’তে। চ্যাপ্টারটার নাম “শনিবারের চিঠি’: অভিযান ও পরাজয়”। ১৯২৭ সন থিকা সম্ভবত ১৯৩২ সন পর্যন্ত উনি ‘শনিবারের চিঠি’র সাথে সম্পৃত্ত আছিলেন। সম্ভবত, কারণ শনিবারের চিঠি’তে ‘যোগ’ দেওয়ার সময়টার কথা উনি বলছেন ১৯২৭; কিন্তু আবার বলছেন যে, ১৯২২ সনের জুন মাসে উনি শনিবারের চিঠি ছাইড়া দেন; এইখানে ১৯২২ সম্ভবত প্রিণ্টিং মিসটেক, কারণ ১৯২২ সালে শনিবারের চিঠি’র প্রকাশ শুরু হয় নাই, এইটা ১৯৩২ হওয়ার কথা। [ref] শনিবারের চিঠি’র কিছু সংখ্যা পাওয়া যায় পশ্চিমবাংলার পাবলিক লাইব্রেরীর একটা ওয়েবসাইটে (http://dspace.wbpublibnet.gov.in)। সেইখানে রাখা সংখ্যাগুলার হিসাব মতে, শনিবারের চিঠি’র প্রকাশ শুরু হয় ১৯২৭ সালেই (বাংলা ১৩৩৫ সন) এবং বর্ষ ২২ পর্যন্ত সংখ্যা আছে। পত্রিকার সংখ্যাগুলাতে সম্পাদকের নাম উল্লেখ নাই। [/ref]

উনার বলার জায়গাটা বেশ ছোট, কিন্তু বাংলাসাহিত্যে ভাষা ব্যবহারের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ একটা স্টেটমেন্ট এইখানে আছে। উনি বলছেন যে, শনিবারের চিঠিতে উনি যোগ দিছিলেন একটা আদর্শ থিকা, খামকা ‘সাহিত্যিক দলাদলি’র রেজাল্ট ছিল না এই পত্রিকা। [ref]“আমরা যে একটা সাহিত্যিক অভিযান শুরু করিয়াছিলাম তাহা সাহিত্যিক দলাদলি হইতে নয়।” [/ref] মানে, সাহিত্যে যে দলাদলি হয় এর একটা স্বীকার আছে, উনার কথায়। আর সাহিত্যিক দলাদলি এবং এসথেটিক্যাল কোলাবোরেশ যে দুই ব্যাপার এইটাও আছে। প্রায় সব সাহিত্যিকদের কথা-বার্তাতেই এইটা নিয়া কথা থাকে না, মানে শ্রীনীরদচন্দ্র চৌধুরীরে ‘সাহিত্যিক’ মর্যাদা দিতে আমার কোন সমস্যা নাই! Continue reading