অন মিডিয়া-রিয়ালিটি

১.

এই নিউজ’টা খেয়াল করেন, ইন্ডিয়ার নিউজ এইটা; কিন্তু হেডলাইন দেইখা বুঝার উপায় নাই। নিউজের ভিতরে অবশ্যই বলা আছে। তার মানে, ভুল নিউজ না এইটা, খুব বেশি হইলে ট্রিকি একটা জিনিস।

(https://bit.ly/2uExldk)

তো, দুয়েক বছর আগে এইরকম কয়েকটা নিউজের কথা বলতেছিলাম, আমার নিউজফিডে অনেক শেয়ার দেখছিলাম, যে হাইকোর্ট রায় দিছে রোজার দিনে হোটেল খোলা রাখলে জেল-জরিমানা হবে, অনেকে হাউকাউ করলেন, দেখা গেল অইটা পাকিস্তানের ঘটনা; ভিতরে ছোট কইরা বলা ছিল; বা এক ম্যাজিস্ট্রেট (পজিশনের নামটাও বাংলাদেশি গর্ভমেন্টের) তার মায়েরে রেলস্টেশনে ফেলে গেছে, ইন্ডিয়ার খবর ছিল অইটা। এইরকম জিনিসগুলা আছে, চলতেছে।

এইগুলার ইমপ্লিকেশন এইরকম না যে, আমরা দেশের বাউন্ডারি ভাইঙ্গা ফেলতেছি 🙂 বা ‘ফেইক’ নিউজ কইরা হিট বাড়ানো হইতেছে, বরং ‘দেশের খবর’ আর ‘আন্তর্জাতিক’ – এই ক্যাটাগরিগুলা মিইলা-মিইশা এমন একটা খিচুরি হইতেছে যেন আমরা ইন্ডিয়া বা পাকিস্তানেরই সিটিজেন – এই ইল্যুশনটা ক্রিয়েট করতে পারতেছে। মানে, খুব ছোট কইরা হইলেও, এই জায়গাটাতে কন্ট্রিবিউট করতেছে।

mr 1

ধরেন, একসময় রাশিয়ান উপন্যাসগুলা পইড়া যেইরকম মনে হইতো আমরাও অই দেশেরই মানুশ, কমিউনিস্ট; এখন যেইরকম হলিউডের বা ইউরোপিয়ান সিনেমা দেইখা নিজেদেরকে ‘বিদেশী’ মনেহয় কিছুটা; একইরকম ক্যাটাগরির জিনিস।

আমার একটা ডিসট্যান্ট ফিলিংস এইরকম যে, এইরকম ইল্যুশনের জায়গাগুলা ধইরাই ফিউচার আইসা হাজির হয় (বা হবে) আমাদের কাছে।

 

২.

দেখেন, নিউজ’টা শুরুই হইছে একটা মিছা কথা দিয়া, যে ‘পলিটিক্যাল স্টাবিলিটি’ আছে বাংলাদেশে! খুবই বাজে কথা তো এইটা। পুরান টার্ম দিয়া এখনকার সিচুয়েশনরে ভুলভাবে এক্সপ্লেইন করতে চাওয়ার মশকরা একটা।

(https://bit.ly/3cdML9j)

বাংলাদেশ যেই পলিটিক্যাল সিচুয়েশনে আছে সেইটারে ‘স্ট্যাবিলিটি’ কয় না, একটা ভয়ের শাসন সবকিছু দখল কইরা রাখছে। যেইখানে বিজনেস করবে গর্ভমেন্ট বা গর্ভমেন্টের লগে গুড রিলেশনে আছে যারা, তারা। আর যদি ‘ডাকাতি’ করতে পারেন আপনে, লোন নিয়া বিজনেস করার কি দরকার!

mr 2

 

যারা বিজনেস করতে চান, তারা বুৃঝতে পারার কথা গর্ভমেন্টের লগে রিলেশন না থাকলে বিজনেস করা যাবে না এইখানে। আর যারা ‘গুড রিলেশনে’ আছেন তারাও টাকা এই দেশে ইনভেস্ট কইরা বিপদে পড়বেন নাকি! তো, এই প্যারাডক্স না বুঝার কিছু নাই। আমরা বুইঝা না-বুঝার দলে আছি – এইরকম না খালি, আমরা মেবি ভাবতেছি, না-বুইঝা থাকলে ‘একটু’ বেটার তো থাকা যাবে! 

 

৩.

@Messiah নামে একটা নতুন সিরিজ আইছে নেটফ্লিক্সে, দেখার লাইগা খুবই জোরাজুরি করতেছে আমারে, 🙂 মানে, নেটফ্লিক্স খুললেই চোখের সামনে ঘুরতে থাকে খালি। (আমার ধারণা, এইরকম ফাইজলামি অরা সবসময় করে, একেকজনের লগে একেকটা নিয়া।)

তো, মজার একটা জিনিস দেখলাম অই সিরিজের ইনফোতে, কইতেছে, এইটা ফিকশনাল, বেইজড অন ট্রু স্টোরি না! 😝

কি যে একটা অবস্থা, আর্ট কালচারের!

 

৪.

যে কোন এপিডেমিক বা মহামারী হইতেছে, গ্রেট বিজনেস অপারচুনেটি!

কৃষাণ চন্দের বা মান্টো’র মেবি একটা গল্প ছিল, ট্রেন অ্যাকসিডেন্ট হইছে একটা জায়গায়, আর আশেপাশের লোকজন সব হুমড়ি খায়া পড়তেছে মালামাল লুট করার লাইগা।

তো, এইরকম হয় তো, এইটা কোন গল্প বা কাহিনি না। ধরেন, আপনি কিনলেন না, কিন্তু গর্ভমেন্টও যদি ফ্রি মাস্ক দেয়া শুরু করে, সেইগুলা কিনা লাগবে না, কোন জায়গা থিকা?

বা ধরেন, টিভি-ক্যামেরাগুলা কি খুঁইজা বেড়াইতেছে না, তন্ন-তন্ন কইরা একটা করোনা ভাইরাসের রোগী? অবশ্যই ‘সচেতন’ করার একটা অবজেক্টিভ আছে, কিন্তু টিআরপি’র লোভ কি নাই?

এইটা মেডিকেল সায়েন্স না, মেডিকেল ইন্ড্রাষ্ট্রি এখন। আর মিডিয়া, বিজনেসম্যানদেরও তো দায়িত্ব আছে কিছু, নাকি না? 🙂

সো, প্যানিকড হইয়েন না – এইটা বলাটা আসলে তেমন কিছু মিন করে না। 🙁 বরং সামহাউ, আমরা আমাদের এগজিসটেন্স নিয়া বইসা আছি, কোন না কোন প্যানিকে সাবস্ক্রাইব করার লাইগা। প্যানিকড হওয়ার মতো কিছু ঘটে নাই – এইটা আমার ক্লেইম না, বা সবাই মিইলা প্যানিকড একটা সিচুয়েশন বানাইতেছি; আমরা যে প্যানিকড হইতে চাই – এই জিনিসটাও এইখানে আছে।…

 

৫.

অফিসিয়াল জিনিস মানে-ই কি সত্যি? তা তো না। আমরা এক্সপেক্ট করি যে, এইটা সত্যি হবে; কিন্তু বেশিরভাগ সময়ই এইটা ‘অফিসিয়াল’ একটা জিনিস, সত্যি জিনিস না। দুইটা জিনিসের ভিতরে ফারাক আছে, থাকে।

গত দুয়েকদিন আগে জানুয়ারি’র ১ তারিখের বার্থডে নিয়া হাসাহাসি দেইখা এই জিনিসটা মনে হইলো, আবার। মানে, এই যে জন্মতারিখ বা বার্থডে, এইটার দরকার তো শুরু হইছে, সরকারি কাজকামে ইউজ করার লাইগা, মেট্রিক পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশনের লাইগা বা ইদানিং ভোটার আইডি করানোর লাইগা। এর আগে সোসাইটিতে ‘জন্মদিন’ থাকার দরকার কি ছিলো কোন? তো, যেই জন্মতারিখ’টা থাকলে হিসাব করতে সুবিধা হয়, মানুশ-জন সেইটাই বসাইতো। নাইনটিজে মেট্রিক পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশনের সময়ও দেখছি স্কুলের স্যার’রা বলতো, জুন বা জানুয়ারি মাসে বার্থডে লেখার লাইগা; আর দুই/চাইর বছর বয়স কমানো তো নরমাল ঘটনা ছিল। কারণ, পড়াশোনা কেনো করতেছি? সরকারি চাকরির লাইগাই তো! তো, বয়স কমায়া রাখলে সুবিধা না!

অফিসিয়াল মানে হইতেছে কোনটাতে আপনার সুবিধা বেশি। সিরাজ শিকদাররে মার্ডার করা হইছিল – এইটা তো অফিশিয়ালি বলা-ই যাবে না, তো কি বলা লাগবে তাইলে? পালাইতে গিয়া মারা গেছিল। এইরকম।

জন্ম-তারিখ বা বার্থডের এখনকার অবস্থা একইরকম না। আপনে যে আলাদা বা স্পেশাল একজন মানুষ – এইটা বুঝানোর লাইগা আলাদা একটা বার্থডে দরকার। (আমারে ভুল বুইঝেন না, আলাদা বার্থডে যে আপনার বা আমার নাই – সেইটা আমি বলতেছি না, কিন্তু বার্থডে’টা কি কাজে লাগে – সেইটা নিয়া বলতেছি।) মাঝখানে একটা ট্রাডিশন মেবি ছিল কিছুদিন ইউনির্ভাসিটি স্টুডেন্টদের ভিতর, ১৪ই ফেব্রুয়ারিতে বার্থডে ফেলার। 🙂 আর এখন যেহেতু অপারেশন কইরা বাচ্চা বাইর করা হয়, কাছাকাছি একটা সুন্দর ডেইটও তো চুজ করা যায়! যেমন, গর্ভমেন্ট চাইলে এখন আইন কইরা ১৫ ই অগাস্ট বাংলাদেশে সিজারিয়ান অপারেশন নিষিদ্ধ কইরা দিতে পারে।…

মানে, আমি বলতেছি না – বার্থডে জিনিস’টা ভুয়া; বরং বার্থডে জিনিসটা কোন না কোন কাজেই তো লাগে, শেষমেশ। আগে মেবি লাগতো অফিশিয়াল হিসাব রাখার লাইগা, এখন লাগে ইন্ডিভিজ্যুয়ালিটি ক্লেইম করার লাইগা।

তো, কোনটা কি কাজে লাগতেছে – সেইটা অনুমান কইরা ‘ট্রুথ’ জিনিসটা বেন্ড হইতে থাকে বেশিরভাগ সময়, আমাদের সোশ্যাল লাইফে।

Leave a Reply