বাকেরগঞ্জে সকাল
পূজামন্ডপের লাইটে
জ্বলজ্বল করতেছে পাশের মসজিদটাও
একজন বুড়া-মানুশ তার নাতিরে নিয়া খেলতেছে,
উনারা কি মুসলমান নাকি হিন্দু? – বুঝা যাইতেছে না,
হাসি, আলো, বাতাস, শান্ত আর নরোম…
রাস্তার মাঝখানে দুইটা বাচ্চা-ছাগল
সামনের দুই ঠ্যাং তুইলা শিং-য়ের লড়াই লড়তেছে
যদিও তাদের শিং পুরাপুরি গজায় নাই এখনো
ক্যাথলিক চার্চের গার্লস হোস্টেল থিকা গল্প করতে করতে বাইর হইতেছে দুইজন নান
বৃষ্টির পরে সকাল
রাস্তার দুই পাশে সবুজ অনেক জীবনানন্দ,
কিছু কিছু কামিনী রায়ও আছে হয়তো
যেহেতু বরিশাল, যেহেতু বাকেরগঞ্জ
আঁকা বাঁকা পথ
কালিগঞ্জ থিকা যাইতেছে সুবিদখালি বাজারে
ধীরে, কোন নতুন গান জাইগা উঠার মতো, ধীরে
রইদ উঠতেছে
ভোরের বিস্টির পরে
তিনটা শালিখ পাখি টিনের চালের উপরে
মেগ’রে বলতেছে, তুমি কি তাইলে হিন্দু-বাড়ির মেয়ের মতো
পূজার দিনে, দুইদিনের নাইওর আইছো?
আশ্বিনের শাদা বাতাসে হেমন্তের দুক্খগুলা জমতেছে
ব্যাটারি-রিকশাগুলা বিজি, খেয়ালই করতেছে না,
বলতেছে, “সাইডে, সাইডে…”
কলাগাছগুলা বেকুব হয়া ভাবতেছে, ওকে, ঠিকাছে
এ-ও এক বাংলা-ভাষা তবু পৃথিবীর বুকে ভাসিতেছে
ধানসিঁড়ি নদীটির তীরে…
সমারূঢ় ৩
যেহেতু আমি তোমারে নিয়া ফান-ই করতে পারি,
তোমারে আমি আর ফলো করবো কেমনে!
দুইটা চাঁদ
“এই বক্রতা কঠিন”
বলতেছিল বাঁকা চাঁদ,
বাঁকা গাঙের পানি
বাঁকা চোখ,
বাঁকা দুই নয়ন
বাঁকা হাসি
বাঁকা কথাগুলা
বাঁকা মিনিংয়ে বলতেছিল,
“এই বক্রতা আলো আর ছায়া
কড়ই গাছের ডালের, সন্ধ্যাবেলা…”
একটা চাঁদ
ঘুরে বেড়াইতেছিল
মেঘে মেঘে
একটা চাঁদ
হাঁটতেছিল একলা
গলিতে গলিতে
দুইটা চাঁদ আকাশে
একটা দেখা যায়
আরেকটা দেখা যায় না
সক্রেটিসের মোরগ
আমরা বাঁইচা থাকি কিছুদিন
তারপরে মারা যাই
তার আগে হঠাৎ একটা মুর্গার ডাক শুনি:
কুক্কুরুক্কু কুক্কুরুক্কু কুক্কুরুক্কু…
তোমার চেহারা
এক ঝটকায় হঠাৎ
তোমার চেহারা
মনে আসলো
যেইরকম শুশুক
লাফ দিয়া উঠে হঠাৎ
মেঘনা নদীতে
দুপুরবেলায়
রইদে ঝলমল করে
তারপরে হারায়া যায়,
পানিতেই আবার…
রিয়ালিটি-চেক
বাস্তবের আপেল,
তুমি আরেকটা কল্পনার ভিতরেই লুকাইতেছো কেন!
মনের আয়না
এত ময়লা জইমা থাকে মনে!
তারে মুছতে থাকি, মুছতে থাকি
মনের আয়নাটাই ভাইঙ্গা যায় একটা সময়
বাঁইচা থাকার মানে
আমি মরি আমার জ্বালায়
দুনিয়ার নানাবিধ যন্ত্রণাগুলা আইসা বলে,
“আমারেও ভুলে যেও না!”
গ্রামের কবিতা
গ্রাম থাকে ইমো’তে
কুপি’র মতো মোবাইলগুলা জ্বলতে থাকে
আন্ধার ঘরে
ঘরে আমার কারেন্ট নাই রে!
চার্জ নাই রে মোবাইলে!
দুবাই থিকা বন্ধু আমার কল দিবে যে ইমো’তে!
চান্দে যেমন আলো নাই, এমবি নাই মোবাইলে
আন্ধার ঘরে আমি কান্দি, আর কান্দে বন্ধু আমার
দূরে দুবাই শহরে
সক্রেটিস ২
মরার আগে আমি জানতে পারবো না আমি কে।
আর মরার পরে আমি-ই তো থাকবো না!
‘আমি জানি’ – তোমারে কোনোদিনও পাবো না আমি।
দীপাবলি
[“অসতো মা সৎ গময়।
তমসো মা জ্যোতির্গময়।
মৃত্যোর্মা অমৃতং গময়।
ওঁ শান্তিঃ ওঁ শান্তিঃ ওঁ শান্তিঃ”]
মা কালী
কাইতান হয়া আসছো তুমি
অসুরের গলায় পাড়া দেও
জান বাইর কর জালিমের
তোমার ঝড়ে মা গো
মাইরো না আমাদেরে
জালিমের কইলজা ধইরা টান দেও
উপড়ায়া ফেলো তারে
মা কালী
কাইতানের ঝড়ের পরে
আমাদেরে দিও
নতুন জীবন
আমরা মা, তোমার আশায় আছি
ওয়েদার রিপোর্ট
সকাল শান্ত। গুড়ি গুড়ি বিস্টির পরে এখন রইদ উঠতেছে। মানুশ-জন কম। অনেকগুলা গাছ অনেকগুলা তার পেঁচায়া শুইয়া আছে রাস্তায়। দেখলে বুঝা যায় শিকড় ছাড়ানোর মাটি পায় নাই অরা। আগে থিকাই ছিল হাফ-ডেড। মানুশের ভয় এখনো কাটে নাই। একটু একটু কাটতেছে। মানুশ-জন কথা বলতেছে, গতকালকে রাতের। কি যে বাতাস ছিল!
বাতাস শান্ত এখন। আকাশে মেগ। আবারো একটু বিস্টি হবে।
প্রেম শেষ হয়া যাওয়ার পরে যেমন প্রেমের গল্প লেখা হয়, যুদ্ধ শেষ হয়া যাওয়ার পরে যেমন যুদ্ধের কাহিনি, তেমনই তুফান শেষ হয়া যাওয়ার পরে আমরা কথা বলতে পারি এখন তুফানের। কি ভয় যে আমি পাইছিলাম, বুঝছো…
ফুলের গান
পাহাড়ের উপরে
বড় বড় পাথরের চিপায়
একটা ছোট ফু্ল, দুলতেছে বাতাসে
সুন্দর
কিন্তু কেউ তারে দেখতেছে না বইলা
সুন্দর কইতেছে না বইলা
যেন সে সুন্দর হইতে পারতেছে না
মন-মরা একটা বাতাসে
দুলতেছে সুন্দর ফুল একটা, একলা…
রামপ্রসাদী মন
মনে মনে কথা বলতেছি আমি,
মনরে জিগাইতেছি,
“মন, তুমি কৃষিকাজ জানো না?”
সন্ধ্যা হইতেছে
সন্ধ্যা হইতেছে,
কাকগুলা ফিরে যাইতেছে ঘরে
অরা আর কবিতা লেখবে না,
(বা মাঝে-মধ্যে তো লেখা যাইতেই পারে)
এখন একটু বুদ্ধিজীবী হওয়া লাগবে আগে!
চান্দের গান
(I see the moon
and the moon sees me)
চাঁনটা দেখতেছে আমারে অবাক হয়া,
“হেই, হেই, তুমি এখনো বাঁইচা আছো!
এখনো এলাইভ!”
অনেক বছরের পুরাতন চাঁন
কার্তিকের কুয়াশায় জেগে উঠতেছে
আর দেখতেছে আমারে
নিজে নিজেই গান গাইতেছে শে
আমার ঘরে আসিয়াছে সোনার কালা চাঁন রে,
আমার কালা চাঁন
শীত আসে, আমাদের বসন্ত-মনে
শীত আসে, আমাদের বসন্ত-মনে।
শহরতলির রাস্তায় নিজেদেরকে জমাইতে জমাইতে
কুয়াশাগুলা বলে সন্ধ্যাবেলায়,
এই ইল্যুশনের ভিতরে আসো, আর হারায়া যাইতে থাকো!
শীতে আমাদের আত্মা জইমা আসে,
আবার নতুন কোন স্বপ্নের ভিতরে জাইগা উঠবে বলে।
Leave a Reply