কবিতা: নভেম্বর, ২০২১

‘আমার মায়ের সোনার নোলক’

আমি হইতেছি আমার মায়ের হারায়া যাওয়া বাছুর
সন্ধ্যা হয়া আসছে, সূর্য ডুবে গেছে
মাগরিবের আজান দিয়া দিছে
কিন্তু আমি আর ঘরে ফিরা আসতেছি না,
আমি হারায়া গেছি না-ফিরার অন্ধকারে
আমার আম্মা আমারে আর খুঁজে পাইতেছে না
আমরা দুইজন দুইটা অন্ধকারের ভিতর
আমাদেরকে খুঁজতেছি,
না-পাওয়ার।

 

লং লিভ রেভিউলেশন

আমাদের কনফ্লিক্টগুলা পুরান
কিন্তু আমাদের বাঁইচা থাকাগুলা সবসময় নতুন

শীতের বাতাসের গায়ে লাইগা থাকা বসন্তের মেমোরি’র মতন

 

মেটাফোর ১১

বাতাস
আজ

তোমার জামার
রঙের মতো

ফ্লোরাল

 

থাকো!

ভূতের মুখে
রাম নামের মতো
থাকো!

 

কপি-রাইটার

একটা গল্পের ভিতরে আমি তোমারে পাইছিলাম
একটা কবিতার ভিতরে আমি তোমারে হারায়া ফেলছিলাম

কিন্তু তুমি বললা, আমি তো রিয়ালিটি একটা!
আর একটা ফ্যান্টাসির ভিতরে গিয়া নিজেরে খুঁইজা পাইলা

বোতলের ভিতরে একটা জ্বীন তড়পাইতেছে, বলতেছে,
আমি খারাপ মানুশ! আমারে খারাপ মানুশ হিসাবে ট্রিট করেন!

কয়েকটা পিনাটের লাইগা তুমি একটা বান্দর হয়া রইলা,
ওয়েস্টবিনে, দুমড়ানো-মুচড়ানো
অ্যাড এজেন্সির বাতিল হওয়া কোন স্ক্রিপ্ট একটা

 

কথার কথা

তোমার ফেইক হাসি
তোমার অরিজিনাল কান্না
নিয়া যাইতেছে রাম সন্ন্যা

ফিরায়া দিবে না আর কোনদিন

ফিরায়া দিবে না?

 

ক্রাইসিস

সাপ’টা যখন
তার লেজটারে
খাইতে শুরু করলো,
লেজ’টা কইলো
আমিও
সাপটারে
খাইবাম তো!

খিদা না,
অন্য এক
খিদার নেশায়
অরা তড়পাইতে
থাকলো।

 

নব্বই দশকের কবি

বাংলা ভাষা
আমাদেরকে ছেড়ে চলে যাইতেছে, কিন্তু
আমাদের টাইমে আমরা অনেক বিখ্যাত ছিলাম,
অনেক কিছু করছিলাম, অনেকের পা-ধোয়া পানি খাইছিলাম
অনেক পথ হাঁটছিলাম, অনেক কমলা রঙের রইদ ছিল
আমরা হলুদ হইতে হইতে সাংবাদিক হয়া গেছিলাম
আমরা অনেক দিন বাঁইচা ছিলাম, তারপরে
আমরা মারা যাইতে শুরু করলাম

বাংলা ভাষা, আমাদের থিকা আরো দূরে চইলা যাইতে থাকলো

আমরা বাংলা ভাষায় এক সময় কবিতা লেখতাম

 

হেমন্ত ৭

অনেক দিনের পরে
অনেকদিনের সাথে বসছি
অনেকদিন আমারে বলতেছে,
আমি থাকবো না তো, আমি
চইলা যাবো

এইরকম কথা আরো অনেকেই
বলছে আমারে, আর চলে গেছে

অনেক অনেক দিনও চলে যাইতেছে
যেমন হেমন্তের দিন শেষ হইলো
আজকে, শীতের বাতাসে

 

পাঠচক্র

সন্ধ্যার পরে
চা-ছরমিক’রা
বাংলা-মদ খাইতে
চইলা যায়

পাঠচক্রে আসে না

এই কারণে
আমরা চা খাই
আর বিপ্লবের কথা
ভুলতে পারি না

 

কেইকের কাহিনি

আই অ্যাম নট ইউর পিস অফ কেইক

কেইক’টা কইলো আমারে
শোনো, আমি রাতের বেলার অন্ধকারে
ইন্দুরের দাঁতের জন্য ওয়েট করতেছি
গোপনে, মনে মনে

 

দ্য রোজ

একটা গোলাপ-ফুল
হইতেছে
একটা গোলাপ-ফুল

 

একটা মশারি

একটা মশারি
মশার কামড় থিকা
আমাদেরকে বাঁচায় না খালি

‘মশা কামড়াইতে পারে’
– এই ধারণার হাত থিকাও
বাঁচায়া রাখে

আর এইটাই হইতেছে
সবচে জরুরি কাজ
একটা মশারি’র

 

মাপামাপি

টনের বাটখারাটা কইলো সোনার টুকরাটারে,
এইটা তো এতোটাই ছোট যে কোন হিসাবেই পড়ে না!

ছটাকের বাটখারাটা কইলো বালুর বস্তাটারে,
কি বিশাল কবিতা এইটা, বাপ রে!

 

সওয়াল-জবাব (বুক অফ থটস)

একটা সওয়ালের সঠিক জবাব দেয়ার লাইগা যতোটা ওয়াইজ হওয়ার দরকার, একটা অ-দরকারি বা ভুল সওয়ালের জবাবে নিরব থাকতে পারার জন্য তার চাইতে বেশি ওয়াইজ হওয়ার দরকার পড়ে, সবসময়।

একইভাবে, একটা ঠিক সওয়ালের ভুল জবাব একটা নিরবতার চাইতে অনেক বেশি দরকারি জিনিস, অনেক সময়।

দুনিয়াতে সারাক্ষণই সওয়াল-জবাব চলতেছে। সব মানুশের মনে। আমরা যার জবাব দেয়ার ট্রাই করি সে-ই আমাদেরকে বাইন্ধা ফেলে নিয়তিতে তার। তখন কি প্রশ্ন, আর কি উত্তর, ম্যাটার করে না এতো। এই কারণে জবাবের আগে নিজের সওয়াল কোনটা, বা কোন সওয়ালের ভিতরে আপনি নিজেরে ডুইবা যাইতে দিবেন, সেইটারে মার্ক করতে পারাটা বেশি জরুরি।

 

মেটাফোর ১৩

আকাশ
আজ

তোমার ঠোঁটের
লিপস্টিকের মতো

ব্রাইট

 

হাউল

অনেক কান্দার পরে শে কইলো,
এখন আমার কান্দা শেষ হইছে

আকাশে তারা উঠলো, চান্দের দিকে তাকায়া
রাস্তার কুত্তাগুলা চিল্লাইতে করতে শুরু করলো

 

ট্রিকল-ডাউন এফেক্ট

একটা সিএনজি’রে চাপ দেয়ার ডর দেখাইলো একটা বাস,
সিএনজি’টা সইরা গিয়া মোটর সাইকেলটারে দিলো গাইল,
কি রে বেটা, সরছ না ক্যান?
মোটর সাইকেল’টা সরতে সরতে বাইসাইকেলটারে দিলো থ্রেট
“এইটা কি রাস্তায় চালানোর জিনিস নাকি, বাল!”

 

স্বপ্নের গরুগুলা

গাছের
ডালে ডালে
গরুগুলা
ঝুলতেছে

অদের ঠ্যাংগুলা
গাছের লগে
বান্ধা বইলা
অরা ওড়তে
পারতেছে না।

 

শীতের দিনের দুপুরের রইদের মতো

একটা সুন্দর বই পড়লেই
মন ভালো হয়া যায়।

এইরকম একটা সুন্দর
হেঁটে যাইতেছিল পাশ দিয়া,
আমার মন-ভালো দেইখা কইলো,
আমি তো সুন্দর, কি আর করবা!
তোমার তো তাকায়া থাকতে হবে
আমার দিকেই, কেবলা কইরা…

এই কথা শুইনা আমরা দুইজনেই হাসি
শীতের দিনের দুপুরের রইদের মতো
গাছগুলা যেমন ভাবতেছে স্বপ্নে, বসন্তে
গা-ঝাড়া দিয়া জাইগা উঠার কথা

 

কবিতা-ভীতি

সূত্র’টারে ছাড়তে না পাইরা
সূত্রটার দিকে তাকায়া থাকতে থাকতে
অংক’টা বলতেছিল, দেইখো, এইটা নিয়াও
আরেকটা কবিতা লেইখা ফেইলো না, আবার!

 

শীতের সন্ধ্যা

সন্ধ্যার আকাশ
অন্ধকারটারে
রোল করে নিতেছে

এমনভাবে যেন
একটা গ্রে-পেপার
রেপিং করতেছে
কিছু উইড

তারপরে
ধোঁয়ার মতন
তারাদের
ছেড়ে দিতেছে

আর তারা
থেকে যাইতেছে

অনেকক্ষণ

অ নে ক ক্ষ ণ
ধরে কথা
বলতেছে

একই কথা
একই কথা

তাহার সাথে, তাহাদেরই সাথে
একা এ কা

সা রা রা ত ধইরা

 

নাম

গ্লাসে রাখা পানি আর জল
কাঁপতেছিল, ভোরবেলার ভূমিকম্পে

অরা কি জানে, অদের যে দুইটা নাম?

 

কবিতা-লেখা

(আমি শুধু তাঁর গান গাইলাম,
সে আমার গান গাইলো না
/আবদুল করিম)

আমি কবিতাটা লেখলাম
সে কইলো, তোমার কবিতাটা তো হইলো না!

 

জীবনানন্দ দাশ

যারা ফিরা যাবার, তারা হেমন্তের মাঠে
ধান কাটা হওয়ার পরে
ইন্দুরের মতো ঘুরা-ফিরা করে
ফিরা যাবে, যে যার গর্তের ভিতরে

চাঁদ উঠলে পরে, কুয়াশার হিম নিয়া গায়ে
তখনো জাইগা থাকবে কিছু শেয়াল, গোরস্তানে
হাড়ের লোভে, অদের চোখের মায়ায়
আমারেই তুমি কি খুঁজে পাইবা আবার,
ইহাদেরই ভীড়ে?

 

ক্রীতদাসের হাসি

আমরা এই কারণে হাসি না যে,
আমাদের হাসতে হবে, বরং
হাসতে গেলে তো আমাদের বুক ব্যথা করে,
হাসির সাথে হাসি-না’র মিল কেউ
বাইর কইরা ফেলে যদি!

ডর-ও করে, ডিজিটাল অ্যাক্টের, কিন্তু
আমাদের তো হাসা লাগবে,
না হাসতে-পাইরা মানুশ কেমনে
বাঁইচা থাকতে পারে!

হাসি-না’র দেশে আমরা হাসি অনেক
মিম বানাই, নতুন নতুন জোকস আবিষ্কার করি
আমরা হাসি না, মন থিকা হাসি আসে না, কিন্তু ভাবি
আমাদের তো হাসা দরকার, মাঝে-মধ্যে…

 

দুই পয়সার কবিতা

ভালোবাসার কোন দাম নাই।
আমরা খামাখাই পস্তাই।

ভাবি, কিছু পিরিতের কবিতা লেখা দরকার
তাইলে যেন অনেক প্রেম হইলো আমাদের,
বইয়ের পাতায় পাতায় থাকা হইলো,
এইরকম ফানি ও আজাইরা কিছু জিনিস…

শীতের রাতে, একটা পেঁচা, অন্ধকারে
দেখি তাকায়া আছে আমার দিকে,
কয়, তুমি কি আমারে নিয়া তামাশা করলা?

আমি কই, কুয়াশার হিম নিয়া শরীরে তোমার
তুমি কি এই সত্যি বিচার করতে আসলা?
ঘুম নাই তোমার?

ভালোবাসার কোন দাম নাই।
বিরহের দামও দুই পয়সাই।

 

রোলিং স্টোন

আর মনেহয়
ম নে হ য়
আমরা হইলাম
একটা না-শোনা গান
ভেসে বেড়াইতেছি
ম হা শূ ণ্যে
একটা পাথরের মতন

Leave a Reply