এক্সটার্নাল অডিট করতে আসছেন সুশ্রুতি হাসান (সুহা)। যেহেতু উনার নাম এইরকম, উনি সুন্দর কইরা কথা বলার চেষ্টা করেন। যেমন, উনার নাম যদি হইতো প্রজ্ঞা লাবণ্য, তাইলে উনারে চুপচাপ ধরণের হইতে হইতো, যাতে একটু একটু কথা বলবেন, আর তারে ইর্ম্পটেন্ট মনে হইতে হইবো সামহাউ। উনি আমারে কইলেন, আপনি যে আমার চে বেশি বেতন পান, দ্যাট ডাজন্ট নেসেসারিলি মিন যে, আপনি আমার চে একজন বেটার মানুষ! হয়তো এইটা সত্যিই বা সত্যি বইলাই তো জানতাম; কিন্তু একটা সত্যি আর একটা সত্যি-বলা’র অ্যাক্ট – দুইটা যে ভিন্ন জিনিস সেইটা আরো স্পষ্টভাবে টের পাইতে থাকি। আমি অ্যাজ রাসেল সালেহ (রাসা), রস উৎপাদনের দিকটা নিয়া মনোযোগী হইতে থাকি।
সুহা কেন আসছেন এইখানে? উনি এমনিতে বয়সে ছোট, আমর চে। তারপরে আবার জাফরিন নাবিলা (জানা’র) ফ্রেন্ড। জানা খালি জর্জরিত হইতে চায়, নানানরকমের কষ্টে। কয়, দেখো সাহিত্য ভইরা গেছে ছোটলোকে! যাঁরা ঠিকমতো ভদ্রতা জানে না, গ্রাম্য; এক দুই পুরুষ আগে গ্রাম থিকা শহরে আসছে, তারা খালি তাদের কাহিনি বলে, কত গরিব-দুঃখী ছিলো তারা, এখন শহরে থাকে; তারপরেও চান্স পাইলে বাপ-দাদা’র গ্রামে তারা চইলা যাইবো; বাপ-দাদারা নাই যেহেতু উনাদের সম্পত্তি ত আছে, আর এই কারণেই আসলে ওইটাই ভালো! শহরে ত ওরা এখনো ফ্ল্যাট কিনতে পারে নাই বা পারবোও না রিসেন্ট ফিউচারে। আর আমরা যাঁরা গ্রামের বাড়ি বেইচা ফেলছি অনেক আগেই বা দান কইরা দিছি, লন্ডনের সাব-আর্বে একটা বাড়ি থাকলেও, ঢাকাতেই থাকি বেশিরভাগ সময়, মাঝে-মধ্যে হাঁসফাঁস লাগে বইলা গাজীপুরে একটা গ্রামের-বাড়ি বানাইছি, আমাদেরকে লাইফ-ষ্টাইল সাজেস্ট করতে থাকে, থ্রু তাঁদের গ্রাম্য বিষণ্ণতা। এখন সাহিত্যে আমাদেরকে আমাদের ট্রু সেলফকে ডিপিক্ট করা লাগবে, রি-ইনভেন্ট করা লাগবে; এইভাবে একটা ক্লাসরে ডমিনেন্ট রাখা যাবে না আর! আমরা কি মানুষ না! আমাদের জীবন নিয়া কেন আমরা সাহিত্য লিখতে পারবো না!
সাহিত্য ব্যাপারটা যদি অট্টুকই হয়, তাইলে ত ঠিকই আছে। এইখানে আমি কি বলতে পারি! আমি বুঝি যে, জানা আমারে অফেন্ড করতে চায় না। শে তার নিজের একটা অবস্থান চায়, বাংলা-সাহিত্যে। কবি-গল্পকার-সমালোচক-সম্পাদকদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখে এবং বিশ্বাস করে যে, বাস্তব অভিজ্ঞতা বাইরে গিয়া কখনোই গল্প লিখা সম্ভব না। তার গল্পে বেশিরভাগ সময়ই ভিলেনের রোল’টা আমার জন্য বরাদ্দ থাকে। এমন একজন, যে সফল; ব্যবসা কইরা বহুত টাকা কামাইছে, বা বড় চাকরি কইরা অনেক টাকা বেতন পায়; কিন্তু রুচি খুব খারাপ, গল্পের একদম শেষদিকে গিয়া দরাম কইরা পাদ-দেয়ার মতো তার গ্রাম্যতা এক্সপোজড হয়া যায়! সেইটা ঠিক আছে, মানে একভাবে ত এইরকম দেখাই যায়। কিন্তু আমি তারে কখনোই বলার চেষ্টা করি নাই, এই যে দেখা, এইটাও একটা গল্প-ই আসলে।
এইসব বইলা লাভের লাভ কিছু হবে না, ডি-ক্লাস হইতে চাওয়া শেষ পর্যন্ত একটা রোমাণ্টিক ব্যাপারই, যেইটার এক্সপেরিমেন্ট হইছে আগে অনেক এবং এর ফেইলওর নিয়া গল্প লেখাও সম্ভব হইছে; বরং জানা’র সাথে থাকার কারণে কিছু রুচিবোধ যে আমি অ্যাকুয়ার করতে পারতেছি, ওইটা গায়েব হয়া যাইবো। জানা’র গল্প-লেখা তাঁর রুচিবোধেরই অংশ। গল্প-লেখা এর বাইরে আর তেমন কী! সাহিত্য একটা উইপেন, সমাজ-ব্যবস্থার, জানা’র এই সাহিত্য-ভাবনারে আমি ইনট্যাক্টই রাখতে চাই। এটলিস্ট এইভাবে যদি সম্পর্কটা আরো কিছুদিন প্রোলঙ করা যায়। কিন্তু আমার লোয়ার ক্লাস কনফিডেন্সের কারণেই মনেহয় আর সম্ভব না। আমি যে সাহিত্যিক হিসাবে সমাজে কোনকিছু অ্যাচিভ করতে পারবো, এই সম্ভাবনা একদম নাই-ই হয়া না গেলোও, নিবে আসতেছে ক্রমে। অ্যাজ ইজ্যুয়াল একজন গল্প-লেখক হিসাবেই নামোল্লোখের ভিতর থাকতে পারলেও বিরাট ব্যাপার। এইটাতে জানা’র কোন সমস্যা থাকার কথা না, অ্যাজ লং অ্যাজ শে তার গল্পে আমারে ইউজ করতে পারে, আমার মনেহয় আমাদের সম্পর্কটা থাকতে পারবে। বয়স্ক সাহিত্যকদের বলতে পারবে তরুণ গল্প-লেখকরেও আমি চিনি আর তরুণ প্রেমিকরে বলতে পারবে, নামোল্লেখ ছাড়াই, কোন মধ্যবয়সী মধ্যবিত্ত গল্প-লেখকদেরও থাকে কি কি পারভারশন। এই জর্জরিত-ভাবে বলতে পারাটা নিশ্চয় ওর অন্যান্য প্রেমগুলারে গাঢ় করতে পারে, কোন না কোনভাবে; মানে, এইটুক কন্ট্রিবিউশনের কথা ভাবতে না পারলে, আমি কি ও কেন এবং কিভাবে এই গল্প লিখতে পারতেছি!
এখনো আমার মনে ছোট্ট একটা আশা আছে যে, আমি যে জানা’রে চিনি সেইটা সুহা হয়তো জানে না। বা জানলেও সেইটা ইর্ম্পটেন্ট না তেমন একটা। সুহা’র সাথে সেশনটা অফিসিয়াল। জানা’র সাথে আন-অফিসিয়াল, আন-ফিনিশড একটা ব্যাপার। যার ফলে খুবই সেনসেটিভ এবং সেনসুয়্যাল। সুহা মনেহয় আমার কথা শুনতে পায়, যা আমি বলি নাই; কয়, ‘জানা বলছে আমারে আপনার কথা! আপনি নাকি বেশ ভীতু টাইপের একটা লোক; আমি জাস্ট সারপ্রাইজড হইছি, এইরকম পোস্টে কাজ করাটা ত ভীতু টাইপের লোকের কাজ না। আপনি নিশ্চয় আপনার আদার-সেলফ’রে রিফ্লেক্ট করেন, জানা’র সামনে। এইরকম অভিজ্ঞতা আমার আছে; আমি দেখছি, যাঁরা তাদের বস’দের সামনে যতো মিহি ও করুণ, তারাই তাদের সাব-অরডিনেটদের সামনে সবচে রাগী ও ভয়ংকর! যা-ই হোক, সেইটা ব্যাপার না; আমি আপনার সাথে ব্যক্তিগত প্রসঙ্গ নিয়া কথা বলতে ত আসি নাই।…’ আমার মনে হইলো সুহা আমার সাথে ব্যক্তিগত বিষয় নিয়াই কথা কইতে চায়। মনে মনে আমি আপনি থিকা তুমি তে চইলা যাই, সবসময়ের জন্য না, কিন্তু সাডেনলি আই ফিল এবং শেও যে, এইটা তুমি-সম্পর্কের ব্যাপার। তারপরে আমি ত বয়সে একটু বড়, সুতরাং অ্যাডভান্টেজটা কেন আমি নিবো না!
অফিসিয়াল কাজটা শেষ হইলে আমরা কফি খাইতে যাবো নে। বলা যায় না, জানাও ওইখানে চইলা আসতে পারে। এইরকম আমি ভাবি নাই; কিন্তু ভাবলাম যে ভাবা যাইতে পারে। আবার বেশি ভাবতেও চাই না, কারণ হোয়াট গৌজ অ্যারাউন্ড, কামস অ্যারাউন্ড। ভাবলেই চইলা আসবে জানা। আসলে নিজেরে এতো ইর্ম্পটেন্ট ভাবারও কিছু নাই। কিন্তু ব্যাপারটা এইরকম না ত যে, সুহা আর জানা, ওরা নিজেদেরকে এতোটাই জানে যে, জানার ভিতর দিয়া একটা জায়গাতে ওরা চইলা আসতে পারে বা থাকে এক জায়গাতেই, মাঝে-মধ্যে। যে কোনভাবেই হোক, সুহা’র সাথে থাকা মানেই জানা’র সাথে থাকা। জানা মনেহয় জানে এইটা। সুহাও। তাই না! নলেজ ব্যাপারটা ত ইউনিভার্সাল। একইভাবে আমাদের অস্তিত্বও, একইসাথে, একই স্পেসে, একত্রে বইসা কফি খাইতে থাকে।
রিয়ালিটি আমাদের আর বেশিক্ষণ ভালোলাগে না। রিয়ালিটিতে বেশিক্ষণ থাকলে র্যাব চইলা আসতে পারে। এমনিতেও আমরা ত একটা স্বপ্ন থিকা আসছি। বাস্তবে ত নাই। থাকতেও চাই না আমরা। আমরা এমনি এসে ভেসে যাই! ‘কই যাওয়া যায়, বলেন তো?’ সুহা জিজ্ঞাসা করে। জিজ্ঞাসার ভিতর কোন জর্জরতা নাই, শ্রুতিমধুরতা খালি! ‘আমরা দূর জঙ্গলে যেতে চাই!’ জানা তার ইমোশন বাইর কইরা ফেলে। আমি আর কি কই; যেহেতু নিজেই গল্প-লেখক, চরিত্রের ওপর আমার ইচ্ছা ত আর চাপাইতে পারি না। বলতে পারি না যে, এইটা ভালো! এইখানে আমরা বইসা গল্প করি। যেন, কোনদিন কোনকিছুই ঘটে নাই! গাজায় যুদ্ধ নাই। পদ্মায় লঞ্চ ডুবে নাই। বেতন না পাইয়া সাংবাদিক মরে নাই। চাকরি চইলা-যাওয়ার ভয়ে কারো মাইল্ড স্ট্রোক হয় নাই। অগাস্ট মাস নাই। সেপ্টেম্বরও নাই সেহেতু। বর্ষায়, বিলের পানিতে, কুসাই নৌকা নিয়া ঘুরতেছি আমরাই! কফি খাওয়ার মতোই ঘটনাটা।
জঙ্গলে নারী-ভাব জাইগা ওঠে আসলে। ছোট খালের পাশে। পা ডুবাইয়া বসছি আমরা। পাশে কটেজ আমাদের। আমি থাকি না। সুহা আর জানা থাকে। ওদের নিজেদের থাকতেই ভালো লাগে। আমি আসলে আর রিকোয়ার্ড না। যেহেতু আসতে চাই নাই। ওরা আমারে বর্ষার বিলে ফালাইয়া আসছে। কুসাইটা ছোট্ট যেহেতু, আমার ভার নিতে পারে না। খালি পানি ওঠে। আমি একটু পরে পরে মরচা-পড়া, সাইডে নীলফুল আঁকা অ্যালুমিনিয়ামের বাসনটা দিয়া খালি পানি সেচতে থাকি। ভাবি, সুহাও কি গল্প লিখে নাকি? নাকি, কবিতা-আবৃত্তি পর্যন্তই, হয়তো টিভিতে খবর পড়বো একসময় বা নিজের বাচ্চা-কাচ্চারে শিখাইবো যে, দেখো, এইটা হইলো শুদ্ধ উচ্চারণ, কথা এমনেই কইতে হয়! শি ওয়াণ্টজ টু বি অ্যা পারফেক্ট মাদার সামডে। এবং একইসাথে শে হেইট করে; মানে পারেই না ভাবতে যে, কিভাবে একটা মানুষ ভাবে যে, শে হইবো পারফেক্ট হাউজওয়াইজ অ্যান্ড মাদার! কোন মাদারচোদের কি ড্রিম আছে পারফেক্ট হাউজহ্যাজব্যান্ড অ্যান্ড ফাদার হওয়ার! যখন এইম ইন লাইফ পড়ি, ক্লাস সিক্সে তখন এনিওয়ান কি লিখে বা ভাবে যে, শে কবি হইবো এবং সেইটা লিখে! মুনির চৌধুরী হয়তো ভাবতে পারছিলো, কারণ সাহিত্য একটা সামাজিক-বিজ্ঞান উনার কাছেও।
আই ক্যান্ট স্ট্যান্ড দ্যাট থট! জানা ভাবে; সুহাও। ভাবনার এক্সপ্রেশন যদি হয় কথা-ই, তাইলে ব্যার্গম্যানের পারসোনা’র ব্যাপারটা মনে হইতে পারে। যেহেতু ইন্ডিয়ায় এবং বাংলাদেশে রেইপের ঘটনা বাইড়া গেছে; একটা বিশাল ষন্ডামার্কা লোক আসে পিছন থিকা। সুলতানের চিত্রকর্মের পুরুষের মতো। কিন্তু জানা ত নিতান্তই বার্বি একটা। শে কিছুই করতে পারে না। সুলতানের পুরুষ দুই আঙুলে তুইলা ফেলে তারে। পাশের জঙ্গলে নিয়া যায়। সুহা মাথা নিচু কইরা হাঁটুতে মুখ গুঁইজা বইসা থাকে। দুইহাতে মাথা চাইপা ধইরা রাখে। জানা যদি কোন আওয়াজ করে, তাইলে তার যাতে শুনতে নাহয়। জানা’র কোন আওয়াজ শে শুনতে পায় না। আবার ভাবে, কেন শে শুনতে পায় না! সুলতানের পুরুষ, ধরা যাক তার নাম, টাইগার; টাইগার কি তারে ডাকবে না! নাকি শে নিজে নিজেই হাঁইটা চইলা যাবে টাইগারের কাছে; বাঘ কি তারে ভালোবাসবে না!
টাইগারের নুনুটা বেশ ছোট। কারণ তারে বড় দেখাইতে গিয়া হাত-পা এতো বড় করতে হইছে যে নুনুটা ছোট হয়া গেছে। কারণ যে পুরুষ, তারে ত কৃষিকাজ করতে হয়। সেইটা যা-ই হোক। রেইপ ত রেইপই! তোমার যে শরীর সেইটা আর শরীর নাই, খালি একটা ডিজায়ার এলিমেন্ট। শরীর’রে শরীর ভাবার বাস্তবতায় ফিরা যাওয়া আর ত সম্ভব হইবো না এখন! এই ঘটনার সদমা আবিষ্কার করতে সুহা কি আগে আত্মহত্যা করবো না, জানা’র আগে? কারণ শে নিজেরে মাফ করতে পারবো না যে শি কুড হ্যাভ এভেয়ডেড ইট! আর শে যে পারে নাই, এইটার জন্য তার চাইতে বড় দায়ী আর কে! মানে, রেইপের পরে মাইয়াদের তো আত্মহত্যা করার নিয়ম।
গল্প-লেখক হিসাবে এতক্ষণ আমি যেহেতু লুকাইয়া ছিলাম, আমি বুঝতে পারি যে সমস্যাটা আমারই। ওরা আমারে গল্প থিকা বাইর কইরা দিছিলো বইলা আমি সুলতানের পুরুষরে নিয়া আসছি। আমি নিজে আসলে ত ভিলেন হয়া যাবো। অন্য ভয়ও ছিল, টারানটিনোর মতো বাটপারের ত অভাব নাই দুনিয়ায়, দেখা গেলো সুলতানের পুরুষ আসলে গে; আমি আসছি উদ্ধার করতে, আর শালা আমারে ধইরা বসছে! জানা হাসতে হাসতে কইবো, ওলে আমার বীলপুলুষ লে! তুমি শি’রে নিয়া কবিতাই লেখো! কেন আসছিলা গল্প লিখতে!
এইটাও ব্যাপার না আসলে, আমি ফিল করি, উনারা উনাদের ক্লাশের ভিতর এতোটাই এমবেডেড যে, উনাদের জঙ্গলের স্বপ্ন থিকা বাইর কইরা উনাদেরকে কখনোই জঙ্গলে নিয়া যাওয়া যাইবো না আর। এই কারণে প্রতিশোধ নিতেছি আমি, ক্লাশ-প্রপাগান্ডা করতে গিয়া আমার মেইল ইগো’রেও স্যাটিসফাই করতে পারতেছি। আর যদি না পরি, তখন এই যে বাস্তবতাবিরচিত স্বপ্নমূলক গল্পগুলি, সেইগুলা আমরা আর কই পাবো!
অগাস্ট, ২০১৪
Leave a Reply