নোটস: অক্টোবর, ২০২২ [পার্ট ৩]

অক্টোবর ২১, ২০২২

– পলিটিক্স আর কালচারের কানেকশন: এ কে ফজলুল হক এবং আব্বাসউদ্দিন আহমেদ –

এইটা খুবই ভুল-কথা যে, জিন্নাহ’র কারণে বাংলাদেশের লোকজন পাকিস্তানে যোগ দিছিল; বরং এর পুরা ক্রেডিটই ছিল এ কে ফজলুল হকের। জমিদারি-প্রথা বাতিল করা হবে বইলা পাকিস্তানে গেছিল বাংলাদেশের মানুশ। আর এই দাবি এস্টাবলিশড করছিলেন এ কে ফজলুল হক। এই জায়াগাটারে দেখবেন বাংলাদেশের ইতিহাসের আলাপে তোলাই হয় না! যেন হুট কইরা, কোন একটা ভুল কইরা পাকিস্তানের লগে গেছিল বাংলাদেশের মানুশ-জন!

অথচ এইটা একটা লম্বা সময়েরই ঘটনা। ১৯৩৭-৩৮’র সময় থিকাই, মানে এ কে ফজলুল হক বাংলা-প্রদেশের (ইনক্লুডিং পশ্চিমবঙ্গ) প্রাইম-মিনিস্টার সময় থিকাই পাকিস্তানের আলাপ উঠতেছিল। ১৯৪২ সালে আবুল মনসুর আহমেদ আর বুদ্ধদেব বসু তর্ক করতেছেন পাকিস্তানে বাংলা-সাহিত্য হইতে পারবে কি পারবে না, এই-সেই। কিন্তু ঘটনা তারও আগে থিকাই আছে।

পলিটিক্স আলাদা সিঙ্গুলার কোন ঘটনা না, বরং এর লগে সবসময় কোন না কোন কালচারের একটা যোগাযোগ থাকেই। বাংলাদেশের কালচার যে কলোনিয়াল-কলকাতার কালচারের চাইতে আলাদা একটা ঘটনা, এইটা শুরু হইছিল একভাবে কাজী নজরুল ইসলাম এবং আব্বাসউদ্দিন আহমেদের ভিতর দিয়া।

আব্বাসউদ্দিন আহমেদ হইতেছেন ফার্স্ট মুসলমান, যিনি “আসল-নাম”* দিয়া গ্রামোফোন রেকর্ড বাইর করতে পারছেন। মানে, এর আগে বাংলাদেশের মুসলমানরা গান গাইতে জানতেন – তা না, মুসলমান নাম নিয়া গান গাইলে সেইটা রেকর্ড কোম্পানি মেবি বাইরই করতো না! (ইভেন, ১৯৪৬ সালে ওয়াবেদ-উল-হক “দুঃখে যাদের জীবন গড়া” নামে দুর্ভিক্ষের উপরে সিনেমা বানানোর পরে রিলিজ দিতে পারেন নাই, হিন্দু-ডিস্ট্রিবিউটররা সিনেমা ডিস্ট্রিবিউট করতে রাজি হন নাই। পরে উনার নাম লেখতে হইছিল “হিমাদ্রি চৌধুরী”।) কিন্তু আব্বাসউদ্দিনের গান হিট হওয়ার পরে যেইটা হইলো, হিন্দু-সিঙ্গার’রাও মুসলমান নাম নিয়া রেকর্ড বাইর করতে থাকলেন! মানে, ব্যাপারটা ইন্টারেস্টিং!…

আব্বাসউদ্দিনের এই রেকর্ডগুলা কিন্তু বাইর হইতেছিল ১৯৩০’র দিকে। যেইটা একটা কালচারাল বেইজ তৈরি করতেছিল, বা অই জায়গাটারে জাগায়া তুলতেছিল। অই জিনিসটারে আরো ছড়ায়া দিছিলেন এ কে ফজলুল হক। এ কে ফজলুল হক যখন গ্রামে গঞ্জে মিটিং করতে যাইতেন, তখন লগে আব্বাসউদ্দিনরে নিয়া যাইতেন। মিটিংয়ের আগে গান গাইতেন আব্বাসউদ্দিন আহমেদ। আমরা যে কলোনিয়াল-কলকাতার গোলাম না, জমিদারদের প্রজা না – এইটার একটা সুর, এইটা একটা ভাষা জাগায়া তুলছিলেন আব্বাসউদ্দিনরা। এবং এ কে ফজলুল হক রাজনীতির জায়গা থিকা অই কালচারাল বেইজটারে রিলিভেন্ট করতে পারছিলেন।

মানে, আপনি রাজনীতি’র পক্ষে গান-কবিতা-কাহিনি লেখবেন – ব্যাপারটা এইরকম না; এইরকম প্রপাগান্ডা তো হয়-ই। বলিউডে বিজেপি করতেছে না! কিন্তু এইগুলা না হয় কোন আর্ট, না কামে লাগে পলিটিক্সের, বেশিরভাগ সময় একটা স্পেইসরে অকুপাই কইরা রাখার কাজটাই করে। পলিটিক্স এবং কালচার – দুইটা আলাদা ঘটনাই, কিন্তু অনেকসময় পলিটিক্যাল-বিচার সার্টেন কালচারাল এলিমেন্টরে রিলিভেন্ট কইরা তোলে, আবার কালচারাল বেইজটা থিকাও পলিটিক্সের জায়গাগুলা তৈরি হইতে পারে।

জমিদারি-প্রথা’র এগেনেস্টে এ কে ফজলুল হকের পলিটিক্স এবং আব্বাসউদ্দিনের পুব-বাংলার গানের কালচার কাছাকাছি একটা জায়গায় ছিল, যেইটার ভিতর দিয়া বাংলাদেশ একটা আলাদা পলিটিক্যাল এবং কালচারাল আইডেন্টিটি হয়া উঠতে চাইছে। এই জায়গাটারে আরো ভালো কইরা খেয়াল করার দরকার আছে আমাদের।

বাংলাদেশ-আন্দোলনের সময়ও খান আতাউর রহমানের “নবাব সিরাজদ্দৌলা”র (১৯৬৭) “বাংলা-বিহার-উড়িষ্যা…” একটা সিগনিফিকেন্ট ঘটনা ছিল। “জীবন থেকে নেয়া” (১৯৭০) খালি পরের ঘটনাই না, বরং এর রিচ একটা মিডল-ক্লাস সোসাইটির বাইরে অইভাবে থাকারও কথা না। আবার রবীন্দ্র-সঙ্গীত গাইয়া কেউ মুভমেন্ট করে নাই। বরং মিউজিকে আবদুল লতিফ একটা ‘বাংলাদেশি’ সিগনেচার তৈরি করতেছিলেন।… বাংলাদেশ হওয়ার পরে সেইখানে ছিলেন আজম খান, আনোয়ার পারভেজ, আলাউদ্দিন আলী; সিনেমাতে আমজাদ হোসেন, সোহেল রানা’রা (মাসুদ পারভেজ) একটা কালচারাল স্পেইস তৈরি করছিলেন। মানে, এই যে জায়গাগুলা, এইগুলা মিস-রিডিংয়ের ভিতরেই আছে, রিভিলড হওয়ার অপেক্ষাতেই আছে, এখনো।…


*আসল-নাম এবং ডাক-নামের জায়গাটাও এইখানে কিছুটা খেয়াল করা দরকার আমাদের। ডাক-নাম কিন্তু দেখবেন বেশিরভাগ সময়ই রিলিজিয়ন-স্পেসিফিক না; যেমন ধরেন, স্বপন, মিলন, বিপ্লব… স্বপ্না, বর্ণা, পারুল… এইরকম ডাক-নামগুলা দেখলে আপনি মুসলমান না হিন্দু – এইটা ধরতে পারবেন না। এইটা এক ধরণের রেজিসট্যান্সের ঘটনা বইলা আমি মনে করি, ধর্মের এগেনেস্টে না, বরং জাত-পাত ও ক্লাস-স্ট্যাটাসের জায়গাটাতে। যে, একটা ডাক-নাম আমার আছে, যেইটাতে বংশ-পরিচয় ম্যাটার করে না। আবার একটা আসল-নাম থাকা হইতেছে, ক্লাস-স্ট্যাটাসের ঘটনা। গরিবের কোন আসল-নাম থাকে না! এইরকম।…

***

কেউ একজন মনেহয়, কয়দিন আগে কইতেছিলেন যে, ক্ষমতা ছাড়লে ৩ লাখ লোক খুন হবে! তো, এইগুলা হইতেছে, নিজের দলের লোকজনরেই ডর দেখানো! যেই জুলুম বাকশালিরা করছে, এর একটা repercussion তো হবেই। কিন্তু ৩ লাখ লোক এই জুলুম করে নাই! নাম গুনলে ৩০০-ও হবে না মনেহয়। এদের বিচার করা লাগবে।

গুম-খুন করা বাকশালিদের কাজ। এরা এইগুলা করছে, এই কারণে ডরাইতেছে যে, এদেরকে মানুশ মাইরা ফেলবে! কিন্তু যারা এইগুলা করছে, তাদের বেশিরভাগ লোকই দেশ ছাইড়া পালাবে আসলে। ১৯৯০-এর পরেও repercussion হইছিল কিছু; কয়েকজনরে মাইর-ধর করা হইছিল, দৌড়ানি দেয়া হইছিল। কারণ এরশাদের দালালরা চুরি-চামারি করছে, নয়া বাকশালের মতো মানুশ খুন করে নাই।

যারা নয়া বাকশালরে মোরাল সার্পোট দিছিলেন, উন্নয়ন-মারানিদের দলে নাম লেখাইছিলেন, আমি মনে করি, তাদের অনেকেই নিজেদের ভুল’টা ধরতে পারতেছেন এখন। এরা যেইরকম সোশ্যাল-বুলিং করছেন, পাল্টা সোশ্যাল-বুলিংই করা হইতে পারে তাদেরকে। কিন্তু লজিক্যাল সেন্সে ম্যাসিভ কোন খুন-খারাপির ঘটনা ঘটার কোন কারণ নাই।

এইগুলা বইলা বাকশালের লোকজন তাদের পক্ষে মোরাল সার্পোটই চাইতেছেন আসলে। কিন্তু ৯৯৯ তো তখনো থাকবে। একটা চোর’রে বাঁচাইতে পারলে পুলিশ, কয়েকটা ডাকাতরে বাঁচাইতে পারবে না! পারবে, আই হোপ।

আরেকটা জিনিস হইতেছে, জালিম’রা নিজেরাও খুন হইতে চায়, বিচারেরর সামনাসামনি হওয়ার চাইতে। হিটলার তো সুইসাইডই করলো, বিচারের ডরে। কারণ তাইলে হিরো হওয়ার চান্স থাকে। বরং যারা যারা জুলুমের সাথে জড়িত ছিল, তাদের বিচার করা লাগবে। যেইসব বিচারক জামিন না দিয়া সরকারি-আদেশ পালন করছেন, তাদেরও বিচারই করা লাগবে। সমাজে বিচার ফিরায়া নিয়া আসতে হবে, সবচে আগে।

অক্টোবর ২২, ২০২২

মুশকিল হইতেছে, কথা কইলে তো কইবেন, হাজী সাবে’র মুখ খারাপ! যে, সবকিছুতে খালি পলিটিক্স খুঁজে! কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ এবং সরকারি-বেসরকারি লোন নিয়া যে এতো কথা হইতেছে, একটা ফ্যাক্ট মোটামুটি সবাই ইগনোর কইরা যাইতেছেন মনেহয়, সেইটা হইতেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের রোল বা কাজের জায়গাটা।

সালেহউদ্দিন আহমেদের পরে (২০০৯ সাল থিকা) বাংলাদেশ ব্যাংকের আলাদা কোন পজিশনই ছিল না, গর্ভমেন্টের কাজ-কাম তদারকির ব্যাপারে। আতিউর রহমানের (২০০৯ – ২০১৬) সময় থিকাই এইটা ফিনান্স-মিনিস্ট্রি’র অঙ্গ-সংগঠনে পরিণত হইছে। এর পরে তো ফিনান্স-মিনিস্ট্রি’র সচিব’রাই বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনর হিসাবে এপয়েন্টেড হইতেছেন। এখন সচিব’রা বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনর হইতে পারবেন না – তা না, লোক হিসাবে উনারা খারাপ-মানুশ, তা-ও না; কিন্তু উনাদের এপয়ন্টমেন্টের পিছনে ঘটনা তো এইটাই যে, উনারা গর্ভমেন্টের ইচ্ছা অনুযায়ী কাজ করবেন। আতিউর রহমানের সময় মেবি কিছু নিজস্ব ডিসিশান থাকতে পারে, কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের তারপরের কাজ হইতেছে মোস্টলি ফিনান্স-মিনিস্ট্রি’র হুকুম তামিল করা। বাংলাদেশ ব্যাংক যে আলাদা ইন্ডিপেন্ডেড একটা ইন্সিটিটিউশন, এই জিনিস ধীরে ধীরে ধ্বংস করা হইছে। এই অবৈধ সরকারের আমলে এইটা ফিরা আসবে – এই আশা করারও কোন কারণ নাই।

মানে, বাংলাদেশ ব্যাংকরে নিজের মতো কাজ করতে দিলেই, এই সমস্যা বা সংকট হইতো না – এইটা কথা না, কিন্তু জিনিসগুলা আরো আগে রেইজ করা হইতে পারতো, কথা-বার্তা হওয়ার চান্স ছিল।

ধরেন, একজন অন্ধ লোক পাহাড়ের উপর দিয়া যাইতেছে, তার কুত্তারে নিয়া; সামনে খাদের উপর থিকা নিচে গোত্তা খায়া পড়বে সে, এখন কুত্তাটার মুখ যদি সে বন্ধ কইরা রাখে, দড়ি দিয়া শক্ত কইরা ধইরা রাখে, নড়া-চড়া করতে না দেয়, কুত্তাটা তো অন্ধ লোকটারে সিগন্যাল দিতে পারবে না যে, সে খাদ থিকা পইড়া মারা যাবে!

তো, এইটা খালি বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাপারেই সত্যি না, সবারই মুখ বন্ধ কইরা রাখা হইছে। কথা না বলার এবং ইন্ডিপেন্ডেড চিন্তা না করার যেই একটা নিয়ম তৈরি করা হইছে, এর থিকা মুক্তি পাওয়া টাফ-ই হবে আসলে, ফিউচারেও।

***

দেশের মানুশ-জন যখন নিজেদের কথা বলতে পারবে, নিজেদের আওয়াজ তুলতে পারবে, তখনই আরো স্পষ্ট হইতে থাকবে যে, বাকশালি-জুলুমের সাথে জড়িত হাতে-গোণা কয়েকজন লোক।

কিন্তু “কথা বললে বিপদ হবে” – এই ডর-দেখানোর লোক অনেক। এরা হইতেছে ক্ষমতার দালাল। বাকশাল-পরবর্তী সময়েও দেখবেন, এরাই ভোকাল! এরা ডরের চোটে চিন্তা করতে চায়-না – এইরকম না, এরা যে কোন রকমের ইন্ডিপেন্ডেড চিন্তা করতে দিতে চায় না। এরা হইতেছে ইভিল-পাওয়ার।

এই ইভিলদের থিকা আমাদেরকে সাবধান থাকতে হবে! যারা নিজেরা চিন্তা করে না, অন্যদেরকেও চিন্তা করতে দেখলে টিটকারি মারে। যারা নিজেরা কথা বলে না, অন্যরা কথা কইলেও ডর দেখায়। যারা নিজেরা নিজেদের কাজটা করে না, অন্যরা ঠিক-কাজ করতে চাইলেও ডর দেখায়া খারাপ-কাজ করাইতে বাধ্য করে।

এই লোকদেরকে ক্রিমিনাল হিসাবে আইডেন্টিফাই করতে পারবেন না আপনি। কিন্তু এই টেনডেন্সিটারে একটা বাজে-টেনডেন্সি হিসাবে মার্ক করতে পারতে হবে আমাদেরকে।

একজন পুলিশ, একজন সরকারি-কর্মচারি কোন প্রেজুডিস ছাড়া নিজের কাজ-কাম ঠিকঠাত মতো করবেন – এইটা একসপেশনাল কোন ঘটনা হইতে পারে না, বরং এইটা মিনিমাম সোশ্যাল একটা রিকোয়ারমেন্ট। এই জায়গাটাতে যাইতে হবে আমাদেরকে।

এর জন্য পলিটিক্যাল একটা এনভায়রনমেন্ট দরকার আমাদের। যা একটা জেনারেশন কোনদিনই পায় নাই, দেখে নাই। এই কারণে পলিটিক্যাল মুভমেন্ট জরুরি। যাতে মিনিমাম একটা সোশ্যাল ডিগনিটি নিয়া আমরা বাঁইচা থাকতে পারি।

আমি বলতে চাইতেছি, বিএনপি’র আন্দোলনের ভিতর দিয়া এই সুযোগটা তৈরি হইছে। এতোদিন “ভয়ের” কারণে যারা কথা বলতে পারতেন না, তারা এখন কথা তো বলতে পারেন চাইলে! না-চাওয়ার অধিকারও আছে আপনার। কিন্তু “ভয়ে” কথা বলতেছি না – এই অজুহাত কিছুটা হাস্যকরই লাগার কথা এখন।

অক্টোবর ২৩, ২০২২

:: প্র – একটা “শিক্ষিত-ইগোর” ঘটনা ::

আমরা, নেটিভ বাংলা-বলা লোকজন কিন্তু “প্র” নরমালি কইতে পারি না। শেখা লাগে।

এইটা আমি ফার্স্ট এক্সপেরিয়েন্স করছিলাম, ৩-৪ বছরের ছোট এক বাচ্চার সাথে যখন আলাপ হইছিল ২০০২-২০০৩ সালে। অর নাম ছিল – “প্রকৃতি”। ওর মা-বাপ ছিল ভার্সিটি-পাশ করা। শুদ্দ, সুন্দর নাম রাখতে গিয়া এই বিপদে ফালাইছিল মেয়েটারে। ওর নাম জিগাইলে পোতিবার বিপদে পড়তো মেয়েটা, লজ্জাও পাইতো যে, ঠিকমতো কইতে পারতেছে না বইলা! খুব নিচু গলায় বলতো – পকরিতি! তখন মা-বাপ ঠিক কইরা দিতো “প্রকৃতি”! ছোট তো এখনো ঠিকমতো উচ্চারণ করতে পারে না! একটু বড় হইলে পারবে।

আমার ধারণা, এখন ঠিকমতো কইতে পারে শে। হয়তো প্রাউডও ফিল করে। ছোটবেলার কথা ভাইবা হাসে। বাংলা-ভাষা একটু কঠিন আছে তো!

কিন্তু এইটা বাংলা-ভাষা না, বরং ব্যাকরণ-লাভারদের সংস্কৃতামি, এক রকমের। এইটা মনেহয় ভাবতে পারে না পকরিতি, এবং আমরা অনেকেও পারি না।

এখন “প্র” লেখা যাবে না – এইটা আমার কথা না; কিন্তু এইটা যে একটা বাড়তি ঘটনা, একটা ইন্টারভেশন – এইটা মানতে রাজি না হওয়াটা “শিক্ষিত-ইগোর”ই ঘটনা! এইটুক টের পাওয়া যায় মনেহয়, কিছুটা।

***

ঘটনাটা একটু বাড়ায়া বলা মনে হইতে পারে, বা একটু কন্ট্রোভার্সিয়ালও লাগতে পারে, কিন্তু স্পিরিট’টা বা সিচুয়েশনটা কাছাকাছি ধরণের বইলাই আমি মনে করি।

যে, মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি মিলিটারি যখন গ্রামে-গঞ্চে হামলা চালাইতো তখন মুক্তিবাহিনির খোঁজ করতো। অথচ শুরুর দিকে মুক্তিবাহিনি তো ছিল না এতোটা। তারপরও জোয়ান লোকজন দেখলেই ধইরা নিয়া যাইতো, খুন করতো মুক্তিবাহিনি সন্দেহে। না চাইলেও বাংলাদেশের সব লোক হয়া উঠছিল মুক্তিবাহিনির লোক! মানে, এর বাইরে বাংলাদেশের মানুশের অন্য কোন পরিচয় ছিল না, পাকিস্তানি মিলিটারিদের কাছে।
তো, কয়দিন আগে একটা লোক যে পিটানি খাইয়া দৌড় দিল, কইতেছিল, ভাই, বিএনপি’র লোক নিয়া আইছে! আমি শিওর, যারা মাইর-ধর করছে, তারা বিএনপি করেন না অইভাবে, কারণ অইটা বিএনপি’র কোন জমায়েত ছিল না। কিন্তু এখন বাংলাদেশে যে কেউ বাকশালের বিরোধিতা করলেই তাদেরকে “বিএনপি” ট্যাগ লাগায়া দেয়া হবে।

কয়েকটা নিউজপেপারের মালিক, সাংবাদিকদেরকেও দেখলাম বলা হইতেছে – “বিএনপি!”

“বিএনপি” মানে হইতেছে এরা সবাই এই অবৈধ-সরকারের বিরোধী! আর যেহেতু এরা বিরোধী, এরা বিএনপি না তো, কি! মানে, দুইটা একই ঘটনা আর কি!

এই যে বাকশাল-বিরোধী মানেই বিএনপি (গণতন্ত্র মঞ্চ, বা অধিকার পরিষদ না; বরং উনারাও হইতেছে ছোট ছোট বিএনপিই আসলে), এইটা বাকশালি জুলুমেরই একটা আউটকাম। এই জুলুম ঠেকাইতে হইলে বাংলাদেশের মানুশ বিএনপি না হয়া কোন উপায় নাই!

বিএনপি করার দরকার নাই, কিন্তু অবৈধ-সরকারের বিরোধিতা করা মানেই বিএনপি করা – এই রিয়ালিটিরে এখন এড়ায়া যাওয়ার কোন উপায় আর নাই। এইটা বাংলাদেশের মানুশ যত তাড়াতাড়ি টের পাইতে পারবে, ততই বেটার।

***

যেই ডাকাতরা আগের দিন রাতে ব্যালেট বাক্স ভইরা রাইখা পরের দিন ইলেকশন করে, শুমারি কইরা ৩-৪ কোটি লোক গায়েব কইরা দেয়, তাদের বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার রিজার্ভের কথা বিশ্বাস করার আগে ১০টা জায়গা থিকা ক্রসচেক কইরা নেয়া উচিত না আমাদের?

মানে, যারা সবসময় মিছা-কথা কইতেছে, তারা ঠিক ডেটা দিতেছে – এই সন্দেহটাই তো করা দরকার সবচে আগে। আপনার-আমার চিন্তার, কথার বেইজই যদি হয় সরকারি-ডেটা, সেইখানে কোন ঠিক-চিন্তা করতে পারাটা তো মুশকিলই হওয়ার কথা।

হাজার’টা ভুল-ডেটা দেয়ার, ডেটা ম্যানিপুলেশনের নজির যেইখানে আছে, সেইখানে যে কোন এনালাইসিসের আগে ডেটা অথেনটিসি নিয়া কথা বলাটাই জরুরি একটা কাজ হওয়া দরকার।

***

– আম্মাজান [১৯৯৯]: হোয়েন অদিপাস মিটস ভিক্টোরিয়া –

সিনেমাতে মেইন ঘটনা হইতেছে, মান্না তার মা শবনম’রে রেইপড হইতে দেখে, তার এডোলেসেন্ট বয়সে; আর অই ইমেজটা সে তার মগজ থিকা সরাইতে পারে না। মেন্টালি ডিস্টার্ব থাকে। রেইপ কেইসের খবর পাইলেই রেপিস্টরে গিয়া খুন করে। এইরকম সাইকো’র কাহিনি।
এই ডরটা তার থাকে যে, তার মা তো সুইসাইড কইরা ফেলতে পারে! এই সুইসাইড করার হাত থিকা সে তার মা’রে বাঁচাইতে চায়, সারাক্ষণ মা’র সাথে লোক রাখে। খুশি রাখে। আর রেপিস্টদেরকে খুন কইরা তারে রিভেঞ্জের ফিলিংস দেয়।

নারীরা “ভোগের সামগ্রী” – এইরকম একটা পজিশনরে মোকাবেলা করা হইতেছে “নারীরা মহান!” – এইরকম একটা জায়গা থিকা। দুইটারই বেইজ হইতেছে “মেইল-গেইজিং”। এই কারণে দুইটা জিনিসই ফিরা ফিরা আসছে সিনেমাতে। একবার নারী-শরীরের অপমান। তারপরে তার পিওরিফিকেশন। মান্না হইতেছে ভিক্টোরিয়ান অদিপাস যে মাদারহুড দিয়া তার মায়ের সম্মান ফিরায়া দিতে চায়।

এখন দেখেন, জামাইয়ের সম্মান, বউয়ের সম্মান, বাবার সম্মান এইগুলাও হয়, কিন্তু এইরকমের সম্মানের জায়গা তৈরি করার ভিতর দিয়া জায়গাটারে মহান-ই করা হয় না, আটকায়াও ফেলা হয়। এই সিনেমাতেও এইটাই হইছে। যিনি আম্মাজান, তিনি আর কিছু না যেন! বা যদি মায়া-মমতার বাইরে গিয়া অন্য কিছু হন, তাইলে অই পজিশনটা কিছুটা রিডিউসড হয়। আর এইটাই হইতেছে প্রবলেমের জায়গাটা।
এইটা একটা সম্মান না, যা কাইড়া নেয়া হইছে, বরং এইটা একটা ইন-জাস্টিস, যার কোন বিচার নাই।

রেপিস্টরে খুন করলে, ফাঁসি দিলেও এর কোন ফয়সালা তো হয় না! এই ট্রাপটা থিকা মান্নাও বাইর হইতে পারে না। পোয়েটিক একটা এন্ডিংয়ের ভিতর দিয়া মায়ের কোলেই তারে মরতে হয়। মানে, প্রবলেমটারে মোকাবেলা করার চাইতে একটা অসহায় এবং ভারনারেবল ভার্সনই তৈরি করা হইছে। যে, ছেলে হিসাবে কি করবে মান্না!

আর এই জিজ্ঞাসাটা কোথাও রিচ করতে পারে নাই। কারণ কাজী হায়াৎ এইটারে একটা ইন-জাস্টিস হিসাবে দেখতে পারতেছেন না। সুভাষ দত্তও “অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী”তে এই জায়গাটাতে যাইতে পারেন নাই। যেন একটা কমপেনশেটই করতেছেন, যেহেতু ঘটনাটারে আন-ডু করতে পারতেছেন না। আর সেইটা কখনোই এনাফ না। যার ফলে, ইন্টেলেকচুয়াল কোন আনসার এইখানে নাই। থাকতে হবে – সিনেমার জন্য এইটা তো জরুরি না। সিনেমার জরুরি জায়গাটা হইতেছে এর ভিজ্যুয়াল। এই ভিজ্যুয়ালের জায়গাটাই ‘পিওরেটিয়ান’ হইতে গিয়া একদিক দিয়া ‘অশ্লীলতা’রে মাস্ট কইরা তুলছে। বাংলাদেশি-সিনেমা এই ট্রাপ থিকা আমার ধারণা, এখনো বাইর হইতে পারে নাই।

সিনেমাতে শবনমের কোন নাম নাই। উনি বাদশা’র আম্মা, এই রিলেশনই হইতেছে উনার নাম। আম্মাজান। এইটা যতোটা গ্লোরিফাইড, ততটাই প্রবলেমেটিক।

কিন্তু সিনেমাতে শবনমের হাঁসফাঁস এবং মান্নার সাইকো এটিটুড’টা যে বাদ যায় নাই – সিনেমার সাকসেসের জায়গাটা আসলে অইটাই। প্রবলেমটারে ইমোশনাল কইরা তোলতে পারাটা।

অক্টোবর ২৪, ২০২২

একটা সময় মনার্কি বা রাজা-বাদশাদের শাসন যেইরকম সমাজের পারপাসটা সার্ভ করতে পারে নাই, এখনকার সময়ের রাষ্ট্র-ব্যবস্থাও অইরকমভাবে ফাংশন করতেছে না আর। এরে সংস্কার কইরা কিছু হবে না। এইটা অনেকেই আমরা টের পাইতেছি। কিন্তু মনেহয় মাইনা নিতে বা এক্সপ্লেইন করতেও ডরাইতেছি কিছুটা।

রাশিয়ায় ও চায়নার ফ্যাসিজমের এগেনেস্টে ইউরোপ এবং আম্রিকার লিবারালিজমরেও যে সার্পোট করা যায় না, এইটা আমাদের বুঝতে পারতেছি অনেকেই। ইরানেও ইসলামি-শাসনের নামে যেই অপ্রেশন চলতেছে, সেইটাতে ঈমান রাখতে হইলে, অনেক জায়গায় চোখ বন্ধ রাখতে হয়। পুরাটাই কন্সপিরেসি থিওরির ঘটনা না। মানে, দুনিয়াতে রাষ্ট্রের অর্গানাইজেশনগুলা বরং একেকটা জুলুমের টুলই হয়া উঠছে।

যেমন, পুলিশের কাজ ক্রিমিনালদের হাত থিকা অন্যদেরকে বাঁচানো না, বরং নতুন নতুন ক্রিমিনাল এক্টিভিটি ইনভেন্ট করা, কমন পিপল ও ক্রিমিনালদের মধ্যের জায়গাটারে আরো ব্লার কইরা দেয়া। হাজার হাজার লাখ লাখ পুলিশ দিয়াও আপনি রাষ্ট্রে আইন-শৃঙ্খলা এস্টাবলিশড করতে পারবেন না, বরং পুলিশের নাম্বার যত বাড়াইবেন, ক্রিমিনাল অফেন্সের সম্ভাবনা পাল্লা দিয়া বাড়তে থাকবে।

মিলিটারির নাম্বার যত বাড়াইবেন, যতই মানবিক করেন না কেন, তাদের কাজই হবে যুদ্ধের সম্ভাবনাগুলারে বাড়ায়া তোলা। এতো এতো উকিল, ডাক্তার এদের কাজ মামলার সমাধান বা রোগের কিওর করা না, বরং নতুন নতুন ফাঁক-ফোকর বাইর করা আইনের, অসুখের… ইন্ড্রাষ্ট্রির সাইজটারে বড় করা।

মানে, ইচ্ছা কইরা এইগুলা কেউ করতেছে – তা না, এই জুলুমের টুলগুলারে জালিম তো ইউজ করতেছেই, কিন্তু এই যে হাজার হাজার সরকারি-কর্মচারি এরা খালি কমপ্লেক্স কাজ-কাম ম্যানেজই করতেছে না, একটা অবস্টেকল হয়া উঠাটাই এদের কাজ আসলে। একটা ভালো-গর্ভমেন্ট (বা লিবারাল গ্রুপটা) ক্ষমতায় আসলেই ব্যাপারগুলা ঠিক হয়া যাবে না।

নতুন একটা সমাজ-ব্যবস্থার দিকেই আমাদেরকে আগাইতে হবে। যেইখানে রাষ্ট্রের অর্গনাইজেশনগুলার ক্ষমতা মিনিমাইজ করা লাগবে, মার্জিনালাইজ করতে হবে। তা নাইলে রাষ্ট্রের জুলুমের হাত থিকা সমাজের মানুশরে বাঁচানো যাবে না।

অক্টোবর ২৫, ২০২২

পদ্মা-ব্রিজ চালু হওয়ার সময় অনেকেই একসাইটেড ছিলেন, এখনো মেবি একসাইটেড আছেন অনেকে। এখন পদ্মা-ব্রিজ বানানোটা তো খারাপ কিছু না, ঘটনাটা হইতেছে যেই লুটপাট কইরা তিন গুণ খরচ দিয়া এইটা বানানো হইছে। এইটা তো আমরা এফোর্ড করতে পারতেছি না!

যাত্রাবাড়ি ফ্লাইওভার থিকা শিবচড় বা ভাঙ্গা যাইতে আসলেই ১ঘন্টার বেশি সময় লাগে না। [ মুশকিল হইলো যাত্রাবাড়ি থিকা মতিঝিল যাইতে পিক-টাইমে আপনার ২ ঘন্টা লাগবে আর কি! 🙁 তারপরও] আপনার অফিস-বিজনেস’কাজ যদি পুরান ঢাকার দিকে হয়, অইসব এলাকা থিকা আসা-যাওয়া করা এতো কঠিন কিছু না। কিন্তু ঘটনা হইতেছে, টোলের টাকার জন্যই আপনি পারবেন না। প্রাইভেট কার নিয়া যাইতে-আসতে দুই হাজার টাকা লাগবে। মাসে খরচ হবে ৪০-৫০ হাজার টাকা! মানে, লাভটা কি হইলো, তাইলে!

আমি বলতে চাইতেছি, প্যাসেঞ্জার হিসাবে এইটা এফোরডেবল না। আর এইটা হয় নাই লুটপাটের কারণে। ৩০ হাজার কোটির জায়গায় ১০ হাজার কোটি টাকায় বানানো গেলে, টোল যদি হাফ হইতো তাইলে এইটা এফোরডেবল হইতে পারতো আসলে। কিন্তু এই হিসাব করা হয় নাই, যে মানুশ-জনের যাওয়া-আসার যেই আরাম, সুবিধা সেইটার জন্য যেই টাকা দিতে হবে, সেইটা জাস্টিফাইড হয় কিনা।

তো, এইটা খালি পদ্মা-সেতুর বেলাতেই হইছে – তা না, আমার ধারণা, মেট্রো-রেলের ব্যাপারেও এইরকম হবে। ঢাকা শহরের মিডল-ক্লাস পিপল যাওয়া-আসা করতে পারবে না – তা না, পাঠাও-উবারের মোটর সাইকেলের ভাড়ার লগে কম্পিটিটিভই হবে হয়তো (তারপরও স্ট্রাগলই করার কথা), কিন্তু যেইটা করবে রাস্তা-ঘাট ভাইঙ্গা রাখবে, ট্রাফিক পুলিশ দিয়া মামলা দিবে, ভ্যাট-ট্যাক্স বসাবে, অকটেন-ডিজেলের দাম বাড়াবে… মানে, ওভারঅল চলা-ফেরার জায়গাটারে আরো কঠিন এবং ভারনারেবল কইরা তুলবে। মেট্রোরেল’রে সাকসেসফুল বানানোর জন্য! 🙂

মানে, লুটপাট কইরা যে “উন্নয়ন” করা হইছে, করা হইতেছে, এইগুলা আরেক দফা প্রবলেমের জিনিসই হয়া উঠার কথা। কোন কাজের হয়া উঠতে পারবে না এতোটা। এই কারণে না যে, এই জিনিসগুলা খারাপ, বরং যেইভাবে ৩-৪ গুণ খরচ বাড়ায়া এইগুলা করা হইছে, এই খরচের লোড পিপলের পক্ষে নেয়া পসিবল হবে না। কম-বেশি আরেকটা বোঝা-ই হয়া উঠতে থাকবে এইগুলা।

অক্টোবর ২৬, ২০২২

– “যৌথ প্রযোজনা”র ছবি –

বাংলাদেশের “যৌথ প্রযোজনা”র সিনেমা মানে হইতেছে ইন্ডিয়ান-বাংলার নায়ক-নায়িকা নিয়া বানানো সিনেমা। মানে, ব্যাপারটা আসলে এইরকমেরই প্লেইন অ্যান্ড সিম্পল ঘটনা। এর বাইরে যা আছে, সেইগুলা ইগনোর করার মতো, একসেপশনাল ঘটনাই। যেমন, এহতেশাম উনার “দূরদেশ” (১৯৮৩) সিনেমাতে বলিউডের স্টারদের লগে বাংলাদেশ পাকিস্তানের আর্টিস্টদেরকে কাস্ট করছিলেন। তখন ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম বানানোর একটা জায়গা তৈরি হইতেছিল। সার্ক (SAARC)-ও নতুন নতুন শুরু হইছে। যার ফলে পাকিস্তানি সিনেমা-ইন্ড্রাষ্ট্রির লগে পুরান কানেকশনও কিছুটা ঝালাই করা হইছিল। নেপাল-শ্রীলংকার লগেও কয়েকটা সিনেমা বানানো হইছিল। কিন্তু এইটা একটা ট্রেন্ড হিসাবে এস্টাবলিশড হইতে পারে নাই। ১৯৯৪-৯৫’র পরে এই ঘটনাগুলা আর খুব একটা ঘটে নাই।

“যৌথ প্রযোজনা” শুরু হইছিল ইন্ডিয়ান-বাংলার আর্টিস্টদেরকে বাংলাদেশে এন্ট্রি দেয়ার ভিতর দিয়াই, যেইটা শুরু করছিলেন আলমগীর কবির উনার “সূর্যকন্যা” (১৯৭৬) সিনেমায়। “ধীরে বহে মেঘনা”তেও (১৯৭৩) ইন্ডিয়ান বাংলার আর্টিস্টরা ছিলেন, কিন্তু ফান্ডিংয়ের কোন লিগাল ওয়ে তখনো ছিল না বইলা মেবি “যৌথ প্রযোজনা” হিসাবে ডিক্লেয়ার করা যায় নাই।

দেশের বাইরের পুঁজি এইখানে ইনভেস্ট হবে – কাগজে-কলমে এইটা মেইন উদ্দেশ্য হইলেও ঘটনাটা এইরকম না আসলে। মানে, বাংলাদেশি সিনেমায় বিদেশের প্রডিউসার ইনভেস্ট কেন করবেন? সিনেমাটা তো তার দেশেও দেখানো লাগবে! বা টাকাটা তো তোলা লাগবে! এখন ইন্ডিয়ান-বাংলা ছাড়া অন্য কোন জায়গায় বাংলাদেশি সিনেমা অডিয়েন্স তো থাকার কথা না তেমন। আর তারপরেও ব্যাপারটা উল্টাই বরং। বাংলাদেশি নায়ক-নায়িকাদের ইন্ডিয়ান-বাংলায় একটা মার্কেট এক্সপ্লোর করা চাইতে ইন্ডিয়ান-বাংলার যেহেতু একটা মার্কেট ছিল বাংলাদেশে, তাদেরকে কাস্ট করলে “খাঁটি বাঙালি” কালচার নিয়া আসার কাজটা হয় তখন। অইটা একটা অনুমান হিসাবে কাজ করে।

আমি বলতে চাইতেছি, “যৌথ প্রযোজনায়” পুঁজিটা বড় ঘটনা ছিল না, ছিল হইতেছে বিদেশি, বা টু বি স্পেসিফিক ইন্ডিয়ান-বাংলার আর্টিস্টদেরকে কাস্ট করা। যেমন ধরেন, এখনকার অনেক “পুরষ্কার পাওয়ার জন্য বানানো সিনেমা”তে বিদেশি ইনভেস্টমেন্ট হইতেছে তো এখন, অইগুলারে কিন্তু “যৌথ প্রযোজনার” সিনেমা বলা হয় না, বা এই ক্যাটাগরিতে হাইলাইট করার ঘটনাটা ঘটে না।

কয়েকটা যৌথ-প্রযোজনার সিনেমার নাম বলি, তাইলে আমার ক্লেইমের জায়গাটা আরো স্পষ্টভাবে খেয়াল করা যাবে বইলা মনে করি – সূর্যকন্যা (১৯৭৬), পালঙ্ক (১৯৭৬), দূরদেশ (১৯৮৩), শক্তি (১৯৮৪), অবিচার (১৯৮৫), মিস লংকা (১৯৮৫), হিমালয়ের বুকে (১৯৮৬), আপোষ (১৯৮৬), ব্যবধান (১৯৮৭), বিরোধ (১৯৮৮), গুনাহ (১৯৮৯), লেডি স্মাগলার (১৯৯০) লেডি কমান্ডো (১৯৯১), পদ্মা নদীর মাঝি (১৯৯৩), রঙিন প্রাণ-সজনী (১৯৯৫), স্বামী কেন আসামী (১৯৯৭), আমি সেই মেয়ে (১৯৯৮), পরদেশি বাবু (১৯৯৯), হঠাৎ বৃষ্টি (১৯৯৯), শেষ বংশধর (২০০২), মনের মাঝে তুমি (২০০৩), মনের মানুষ (২০১০), দ্য স্পিড (২০১২), শঙ্খচিল (২০১৬), বস টু (২০১৭), নবাব (২০১৭)।

তো, এই ট্রেন্ডটা মোটামুটি অ-দরকারি হয়া পড়ছে সাফটা চুক্তির পরে কলকাতার সিনেমা সরাসরি আমদানি করার ঘটনা শুরু হওয়ার পরে। ২০০৪ সালে চুক্তি সাইন হইলেও ২০০৬ সাল থিকা আমদানি শুরু হয়। সার্ক দেশ থিকা সিনেমা আমদানি হওয়ার কথা থাকলেও এই চুক্তির আন্ডারে ইন্ডিয়ান-বাংলা সিনেমা ছাড়া আর কোন সিনেমা আমদানি করা হয় নাই। তো, অই সিনেমাগুলা বাংলাদেশের সিনেমাহলে চালানো বহুত চেষ্টা করা হইছে, কিন্তু অইটা সাকসেসফুল হইতে পারে নাই।

যার ফলে বাংলাদেশের এবং ইন্ডিয়ান-বাংলার নায়ক-নায়িকাদের নিয়া নতুনভাবে “যৌথ প্রযোজনার” সিনেমা শুরু হইছে, গত কয়েক বছরে। যেইটার কোন বিজনেস সাকসেস তো না-ই, তেমন কোন কালচারাল ইমপ্যাক্টও নাই। (ইন্ডিয়ান-বাংলার টিভি-চ্যানেলগুলা বরং এর চাইতে বেশি পাওয়ারফুল। কালচারালি সেইটারই একটা সাব-সেট এই সিনেমাগুলা।) এর বাইরে, এই ঘটনাটা মানি-লন্ডারিং বা টাকা-পাচারের কোন উইংগস কিনা, অই সন্দেহটা কেউ যাচাই কইরা দেখছেন বইলা মনেহয় না।

রিসেন্ট টাইমে অনন্ত জলিলও কয়েকটা “যৌথ প্রযোজনার” সিনেমা বানাইছেন মালয়েশিয়া, ইরানের লগে; সেইটা একটা “ইন্টারন্যাশনাল” ফিল দেয়ার ঘটনাই, যেইটা এখন পর্যন্ত কোন রিমার্কেবল ঘটনা হয়া উঠতে পারে নাই। বরং বিদেশি ডিস্ট্রিবিউটদের মাধ্যমে ইউরোপ-আম্রিকা-কানাডা-অস্ট্রেলিয়া, এমনকি মিডল-ইস্টের সিনেমাহলে বাংলাদেশি সিনেমা দেখানোর ব্যবস্থা করা গেলে সেইটা প্রফিটেবল ঘটনা হইতে পারার কথা।

***

এইরকম একটা অবস্থা ডিপিক্ট করার চেষ্টা করতেছে বাকশালের লোকজন যে, বড় একটা ইকনোমিক ক্রাইসিসে পড়তে যাইতেছি আমরা এবং যেই গর্ভমেন্টই আসুক, এইটা থিকা বাঁচার কোন উপায় নাই!

মানে, এর চে ভালো অবৈধ বাকশালি-সরকারই ক্ষমতায় থাকুক! নতুন সরকার আসলে তো তারা বিপদে পড়বে! সুতরাং তারা আর কিছুদিন পরে ক্ষমতায় আসুক! 🙂 বা, অবৈধ বাকশালি-সরকার ছাড়া আমাদেরকে এই ক্রাইসিসের হাত থিকা কেউ বাঁচাইতে পারবে না! তো, এইগুলা সেই বিকল্প-মারানিদেরই আলাপ!

ঘটনা বরং পুরা অপজিট! যতদিন এই অবৈধ বাকশালি-সরকার ক্ষমতায় আছে ইকনোমিক ক্রাইসিসগুলা আরো বড়-ই হইতে থাকবে। এর থিকা বাঁচতে হইলে অবৈধ বাকশালি-সরকার’রে ক্ষমতা থিকা না নামানোর কোন বিকল্প নাই!

এই অবৈধ সরকার হইতেছে চোর-ডাকাত-বাটপারদের সরকার! পিপলের ফর-এ একটা ডিসিশানও এরা নিবে না, নিতে পারবে না। ক্ষমতায় থাকার জন্যই ডাকাতদেরকে আরো লুটপাটের এন্তেজাম কইরা দেয়া লাগবে! এই কারণে এই অবৈধ বাকশালি-সরকাররে ক্ষমতা থিকা না সরানোর কোন বিকল্প নাই!

যারা বলেন, ইকনোমিক্যালি করার কিছু নাই, তারা সত্যি কথা বলেন না! বরং যেইসব একশন নেয়া দরকার ডাকাতি বন্ধ করার জন্য, লুটপাট থামানোর জন্য, বাজারে জিনিসপত্রের দাম কমানোর জন্য তার কোনকিছু করার ইচ্ছা এই অবৈধ সরকারের নাই। কারণ তাইলে ডাকাতদের খুশি কইরা ক্ষমতায় টিইকা থাকতে পারবে না।

কিন্তু উল্টা এমনভাবে সিচুয়েশনটারে ব্যাখ্যা করতেছে যেন করার কিছু নাই! এতোদিনের উন্নয়ন-মারানিরা এখন এখন চুপ! লুটপাটের নামে উন্নয়নের মেকাপ যখন খইসা পড়তেছে, দেশের সবকিছু বেইচা টাকা-পাচার করা যখন শেষ, তখন বলতেছে, কি করবো আমরা!
সবকিছুর আগে আমাদেরকে বুঝতে পারতে হবে যে, এই অবৈধ বাকশালি-সরকার ক্ষমতায় থাকার জন্য, লুটপাট করার জন্য সবকিছুই করবে! কিন্তু দেশের মানুশের জন্য এরা কিছুই করে নাই, এরা কিছুই করতেছে না, এবং কিছুই করবে না!

এই ইকনোমিক ক্রাইসিস আগা-গোড়া পুরাটাই একটা পলিটিক্যাল সমস্যা। যতদিন এই জায়গাটারে আমরা মানতে না পারবো, এই অবৈধ বাকশালি-সরকারের হাত থিকা আমরা নিজেদেরকে মুক্তি না দিতে পারবো, ততদিন পর্যন্ত সাফাংরিসের কোন শেষ হবে না।

একদল ডাকাত আসছে আপনার ঘরে লুটপাট করতে, লুটপাট শেষ কইরা এখন ঘরের ইট-পাথরও খুইলা নিয়া যাইতেছে, আর আপনি আশা করতেছেন, তাকায়া আছেন, কেন তারা রিপেয়ারিংয়ের কাজ শুরু করতেছে না! বাংলাদেশের পলিটিক্যাল অবস্থা হুবহু এইরকম না হইলেও, এর চাইতে খুব বেশি ডিফরেন্ট কিছু না।

অক্টোবর ২৮, ২০২২

আপনি যদি চিটাগাং নিয়া লেখা বই পড়েন, তাইলে কি সিলেটের ইতিহাস ঠিকঠাক মতো জানতে পারবেন? বা ধরেন, পাঞ্জাব নিয়া অনেক বই যদি আপনি পড়তে থাকেন, সেইখানে তালিমনাড়ু বা কেরালারে তখন ছোট জিনিস মনে হবে না!

বাংলাদেশ নিয়া ঘটনাটা একইরকমের না হইলেও কাছাকাছি রকমের জিনিসই হইছে, এবং হইতেছে। কবির সুমন, অঞ্জন দত্ত, নচিকেতা বা হেমন্ত, মান্না দে’র জীবন-কাহিনি যদি পড়েন অইখানে বাংলাদেশ তো মাইনর ঘটনাই হয়া থাকবে! কিছু টাচই পাইবেন, বড়জোর। মানে, বাংলাদেশের আর্ট-কালচার, গানের ব্যাকগ্রাউন্ড জানা যদি আমার উদ্দেশ্য হয় তাইলে তো আব্বাসউদ্দীন, আবদুল লতিফ, আবদুল আলীমদের কথাই শোনা লাগবে। (নামগুলা শুনলে একটু হাসি আসে না! 🙂 কি রকমের অ-সাহিত্যিক নাম!)

আব্বাসউদ্দীন হইতেছেন পয়লা আর্টিস্ট, যিনি নিজের মুসলমান নামে গানের রেকর্ড বাইর করতে পারছিলেন, কলকাতায়। গণ-মানুশের গায়ক হইতে চাইছিলেন। উনার আগের কে. মল্লিক, যেইটা করার সাহস করতে পারেন নাই। ভাটিয়ালি এবং ভাওয়াইয়া গানের রেকর্ড বাইর কইরা কলকাতার গ্রামোফোন রেকর্ড কোম্পানি’র এতো প্রফিট করাইছিলেন যে, পরে উনারা “আধুনিক গান” এফোর্ড করতে পারছিলেন।

উনার জন্ম কোচবিহারে, আর কোচবিহার কিন্তু নীলফামারি, দিনাজপুর, রংপুর, রাজশাহীর কাছাকাছি জায়গাই। (ম্যাপ দেইখেন।) এইসব এলাকার অনেক মুসলমান ফ্যামিলি দেখবেন কোচবিহার থিকা মাইগ্রেট কইরা আসছেন। ভাওয়াইয়া এই অঞ্চলেরই ঘটনা। একটা জায়গায় উনি বলতেছিলেন, কোচবিহারের স্কুলে উনাদের সময়ে সেকেন্ড ল্যাঙ্গুয়েজ হিসাবে মুসলমান স্টুডেন্টরা সংস্কৃত নিত, আর হিন্দু স্টুডেন্টরা নিতো ফার্সি – ইন্টারেস্টিং না জিনিসটা! মানে, ইভেন ব্রিটিশ-পিরিয়ডেও ফার্সি-জানা মুন্সি ও মৌলভীরা হইতেছে হিন্দুু-ধর্মের লোকজন।

গিরিশ চন্দ্র সেনের উপাধি ছিল ‘মৌলভী’। আমার ধারণা, গিরিশচন্দ্র সেন যে কোরান অনুবাদ করছিলেন সেইটা ব্রাহ্ম-ধর্মের চাইতেও আরবি-ফার্সি সাহিত্যের ঘটনা ছিল অনেক বেশি। মানে, জিনিসগুলারে রিভিউ করার এবং এনকোয়ারি করার দরকার আছে আমাদের।

আর এইটা করতে গেলে, রেফারেন্সের জায়গাগুলারে খেয়াল করা লাগবে সবচে আগে। আব্বাসউদ্দীনের অটোবায়োগ্রাফিটা ‘সাহিত্যিক-ঘটনার’ বাইরেও আমাদের এইরকমের একটা রেফারেন্স টুল আসলে।

***

– হিস্ট্রি’র ‘নিরপেক্ষ’ রিডিং নিয়া –

১৯৪২ সালে বুদ্ধদেব বসু একটা আর্টিকেল লেখছিলেন – “সাহিত্যে পাকিস্তান অসম্ভব”। লেখার লগে হেডলাইনের মিল কম-ই। উনার আগুমের্ন্ট ছিল যে, নারী-সাহিত্যিকদের মতো অবহেলিত মুসলমান-সাহিত্যিকদেরকে ‘পাকিস্তান’ আন্দোলন থিকা সইরা আসা উচিত। বাংলা-সাহিত্য করতে হইলে মুসলমান হওয়া যাবে-না না, পাকিস্তান-আন্দোলন কইরা সেইটা হবে না। কারণ বাংলা-সাহিত্যের ট্রেডিশনের লগে এইটা মিলে না। তো, আবুল মনসুর আহমদ এর একটা পলিটিক্যাল ও সাহিত্যিক জবাব দিছিলেন, অই বছরই। কিন্তু ঘটনা ঘটাইছিলেন পরে ফররুখ আহমদ। উনি ১৯৪৬ সালে একটা কবিতার বই-ই ছাপাইছিলেন – “আজাদ করো পাকিস্তান” নামে। (উইকিপিডিয়াতে দেখবেন এর কোন এন্ট্রি নাই! এইটা ভুল না কোন। হিস্ট্রি থিকা ডিলিট কইরা দেয়ার চেষ্টাই।) সাহিত্যে পাকিস্তান সম্ভব না খালি, কবিতার বইও ছাপানো পসিবল।

কিন্তু এরপরে যেইটা হইছিল ফররুখ আহমদ কলকাতাতে আর “কবি” হইতে পারেন নাই। বাংলা-সাহিত্যে পাকিস্তান লেখার কারণে উনার “কবি-পরিচয়” এখনো কিছুটা অস্বস্তির ঘটনা হয়া আছে। এইটা যতোটা না ট্রেডিশনের ঘটনা, তার চাইতে অনেক বেশি সাহিত্যিক-রাজনীতিরই ঘটনা। কারণ পাকিস্তান যদি বাংলা-সাহিত্যের ঘটনা হয়া উঠতে থাকে তাইলে বুদ্ধদেব বসুদের সাহিত্য বাতিল হয়া যাবে না, বরং অইগুলা যে একটা কলোনিয়াল কালচারেরই ঘটনা, অইটা ক্লিয়ার হইতে থাকবে। আই হোপ, এখন কিছুটা হইলেও দেখাদেখি শুরু করতে পারতেছি আমরা।
তো, বুদ্ধদেব বসু’র অই লেখা উনি আর পরে কোথাও ছাপান নাই। পাদ দিয়া যেমন কেউ বলেন না, আমি পাদ দিছিলাম, অইরকমেরই একটা ঘটনা সেইটা। অইটা নিয়া মাতামাতি করাও ঠিক না। কিন্তু উনার সাহিত্য-ধারণার জায়গা থিকা এইটা পলিটিক্যালি খুব বেশি দূরের ঘটনা যে না – এইটা কবুল করা বা মাইনা নেয়াটা দরকার আমাদের। তাইলে কলোনিয়াল-কলকাতা’র “নিরপেক্ষ” সাহিত্য-ইতিহাসরে আরেকটু ক্রিটিক্যালি দেখতে রাজি হইতে পারবো আমরা।

২.
সেকেন্ড জিনিস হইতেছে, পারসোনাল জায়গাগুলাও এইখানে রিলিভেন্ট, হিস্ট্রি’র আলাপে। যেমন, ফররুখ আহমদ’রে কখনো বুদ্ধদেব বসুদের গ্যাং-এ পাইবেন না। কলকাতা-বেইজড বাংলা-কবিতার এন্থোলজিতে কাজী নজরুল ইসলাম এবং জসীমউদ্দীনের জায়গা হইলেও ফররুখ আহমদের রিকগনিশন খুব রিসেন্ট ঘটনাই হওয়ার কথা। (ফররুখ আহমদের এক রকমের “পুনরাবিষ্কার” করছেন মেবি আবদুল মান্নান সৈয়দ।…)

এইখানে আরেকটা ঘটনার কথা বলা যাইতে পারে। বাংলাদেশি-সিনেমা যারা দেখছেন, তারা রাণী সরকার’রে চিনতে পারার কথা। তো, এই রাণী সরকার ছিলেন সুমিতা দেবী’র ফ্রেন্ড। জহির রায়হান যখন কবীর’র লগে প্রেম-ট্রেম করতেন তখন রাণী সরকার আইসা সুমিতা দেবীরে বইলা দিতেন। (সুমিতা দেবী হইতেছে জহির রায়হানের ফার্স্ট ওয়াইফ এবং উনাদের কখনো ডির্ভোস হয় নাই।) তো, পরে কবরী’র হাজবেন্ড জহির রায়হানের নামে মামলা করলে (বা মামলা করার হুমকি দিলে), উনার এই ‘এফেয়ার’ খুব বেশি দূর আর আগাইতে পারে নাই। পরে তো সুচন্দারেই বিয়া করেন উনি, সুমিতা দেবী’রে না জানায়াই। [এইসব কারণে জহির রায়হান অবশ্যই খারাপ ডিরেক্টর হয়া যান নাই। বরং একজন ভালো ফিল্ম-ডিরেক্টর হিসাবে উনি যে কোন বাজে-কাজ করতে পারেন না, এই চিন্তাটা থিকাই আমাদের দূরে থাকাটা দরকার।]

তো, মাঝখান থিকা যেইটা হইলো, রাণী সরকারের উপর জহির রায়হান খেইপা গেলেন। এবং রাণী সরকারের ক্যারিয়ার মোটামুটি শেষ হয়া যায়, এর পরে। (সুমিতা দেবী এইরকমই বলছেন। আরো এনকোয়ারি তো করা যাইতেই পারে।) কবরী যেহেতু একটা স্ট্রং পজিশনে ছিলেন তখন, সুচন্দা-ববিতা নায়িকা হয়া উঠলেও কবরী’রে সইরা পড়তে হয় নাই।

আমি যেইটা বলতে চাইতেছি, ইন্টেলেকচুয়াল ডিফরেন্সেসের ঘটনাই না; পারসোনাল, ইমোশনাল ঘটনাগুলাও এইখানে ইনক্লুডেড, হিস্ট্রিতে। (যেইটা কন্সপিরেসি থিওরির ঘটনা না।)

***

১৯৭১ সালের পরে বাংলাদেশ যে একটা দেশ হিসাবে অনেক কিছু গুছায়া উঠতে পারে নাই, এর একটা বড় কারণ তো ছিল যে, ইন্টেলেকচুয়ালি বাংলাদেশ-ধারণাটা তখনো তৈরি হইতে পারে নাই। ১৯৭০ সালে যারা প্রাদেশিক নির্বাচনে জিতছিলেন, উনারা তো দেশ-চালানোর জন্য এমপি হন নাই, স্থানীয়-সরকার পর্যায়ের নেতাই ছিলেন। তো, বাংলাদেশ যখন স্বাধীন হইছে, তারপরে কি ধরণের সরকার হবে, কি নিয়ম-নীতি হবে – এইগুলা নিয়াই কনফিউশন তৈরি হইছে। এমনকি বাকশালের মতো একটা সমাজতান্ত্রিক-ফ্যাসিবাদ তৈরি করা হইছিল।

১৯৯১ সালেও যেইটা হইছে, প্রেসিডেন্টের শাসন থিকা সইরা প্রধানমন্ত্রীর শাসন বানানো হইছে। আর ইলেকশনের সময়ে একটা কেয়ার-টেকার গর্ভমেন্টের সিস্টেম করা হইছিল। ডেমোক্রিস না বরং বুরোক্রেসির রোলটারেই আরো স্ট্রং কইরা তোলা হইছিল। আর যাতে কোন স্বৈরাচারের জন্ম না হইতে পারে, সেইটার কথা ভাবা হয় নাই। তারপরও দেখেন, এই অবৈধ নয়া বাকশালের শাসন আমরা পাইছি অই কেয়ার-টেকার গর্ভমেন্টের সিস্টেম বাতিল করার ভিতর দিয়াই। যেইটার এগেনেস্টে স্ট্রং ইন্টেলেকচুয়াল আর্গুমেন্টের বেইজ আমরা তৈরি করতে পারি নাই।

আমি বলতে চাইতেছি, পলিটিক্যাল মুভমেন্টের পাশাপাশি ইন্টেলেকচুয়াল জায়গাগুলারেও তৈরি করার, ভাবতে পারার দরকার আছে। তা নাইলে পলিটিক্যাল মুভমেন্টের বেনিফিটগুলাতে আমরা রিয়ালাইজ করতে পারবো না আসলে। আমাদের আলাপের ফোকাসগুলা অইসব জায়গাতেও স্প্রেড করতে পারাটা দরকার।…

অক্টোবর ২৯, ২০২২

যে কোন জিনিসের সাপ্লাই বাইড়া গেলে যে সেই জিনিসের প্রডাকশন কমানো লাগে – এইটা জানার জন্য তো ইকোনোমিকস পড়ার দরকার পড়ে না! একটা মুদি দোকান চালাইলেও আপনি বুঝতে পারবেন।

তো, ইনফ্লেশন বাড়া মানে হইতেছে ইকোনোমি’তে টাকার সাপ্লাই বাইড়া গেছে, অইটার প্রডাকশন কমাইতে হবে। আর টাকার প্রডাকশন হয় হইতেছে ব্যাংকের লোনের ভিতর দিয়া। আপনি যদি ব্যাংক থিকা ১০০ টাকা লোন দেন ৯% ইন্টারেস্ট রেইট হইলে ইকোনোমিতে ৯ টাকা বাইড়া গেল বা সাপ্লাই দেয়া হইলো। ইন্টারেস্ট যত কমাবেন, লোন নেয়া তত বাড়বে। একইভাবে ডিপোজিটের ইন্টারেস্ট রেইটও যত কমাইবেন টাকা মানুশ না জমায়া নানান ইকনোমিক এক্টিভিটিতে লাগানোর চেষ্টা করবে, সাপ্লাই বাইড়া যাবে।

এই কারণে যখনই ইনফ্লেশন বাড়ে ইকোনোমিতে, ব্যাংকের ইন্টারেস্ট রেইটও বাড়ায়া দেয়াটা নিয়ম, যাতে সাপ্লাই কমে। কিন্তু বাংলাদেশে এই কাজ করা হয় নাই, উল্টা ইন্টারেস্ট রেইট জোর কইরা কমানো হইছিল। ইনফ্লেশন আরো বাড়ছে। আগে ২০-২২ হাজার টাকা ইনকাম দিয়া যারা মাসের খরচ চালাইতে পারছিল, ৪০-৪৫ হাজার টাকা দিয়াও সেইটা পারা যায় না এখন।

তো, বাংলাদেশের ইকোনমি যারা চালান, উনারা কি এই সহজ নিয়মটা জানতেন না? 🙂 জানেন তো অবশ্যই, কিন্তু উনাদের উদ্দেশ্য তো হইতেছে একটা গ্রুপ অফ পিপলরে লুটপাটের সুযোগ কইরা দেয়া। ইকোনোমি নদর্মায় যাক, মানুশ সাফার করুক, কিছু তো যায় আসে না! (মানুশ তো আর ভোট দিয়া ক্ষমতা থিকা নামাইতে পারবে না, বরং প্রেশার-গ্রুপগুলারে লুটপাটের সুযোগ কইরা দিলে অরা ক্ষমতায় থাকতে দিবে।)

কিন্তু এখন আইএমএফ’র কথায় এই ইন্টারেস্ট রেইট ফিক্সডের বার তুইলা দিতেছে মনেহয়। মানে, গর্ভমেন্ট চাইলেও ইকোনোমিকসের সহজ নিয়মটা মানতে পারে নাই, পারবেও না। কারণ এই অবৈধ সরকারের মেইন পারপাসই হইতেছে কিছু মানুশরে লুটপাটের সুযোগ কইরা দেয়া এবং সেই জিনিসগুলারে গোপন করা।

মানে, আমি বলতে চাইতেছি, এইগুলা ইকনোমিকস বুঝা বা না-বুঝার ঘটনা না, সার্টেন পলিটিক্যাল উদ্দেশ্য নিয়া, জাইনা-শুইনাই কাজগুলা করা হইতেছে। আর সেইটারই আউটকাম হইতেছে এইরকমের ‘ভুল’ কাজ-কারবারগুলা।

যার ফলে, কোন পলিসিই এই অবৈধ সরকারের আমলে কাজ করবে-না না, বরং লুটপাটের সাথে ‘সামঞ্জস্যপূর্ণ’ (এইরকম বাংলা-শব্দ ইউজ না করলেও মুশকিল 😛 ) না – এইরকম কোন পলিসিই নেয়া হবে না; বা নিলেও এফেক্টিভলি ইমপ্লিমেন্ট করা হবে না। এই জায়গাটারে খেয়াল না করলে পুরা কাহিনিটাই মিস কইরা যাবো আমরা।

***

Leave a Reply