নোটস: অগাস্ট, ২০২১ [পার্ট ১]

অগাস্ট ০১, ২০২১

কোন রিস্ক ছাড়া কোন সত্যি কথা বলা কোনদিনই কি সম্ভব?

এমন না যে, রিস্কি কথা-বার্তা মানেই ‘সত্যি কথা’; বরং যখন আপনি কোন না কোন সত্যি কথা বলবেন, দেখবেন সেইটা অনেকের জন্য ভালো হইলেও, এইটা কোথাও না কোথাও কারো না কারো ক্ষতি করতেছে; তখন সেইটা রিস্কি হয়া উঠে। কে যে আপনার দুশমন হয়া উঠতেছে, আপনি নিজেও জানবেন না।

সত্যের যেহেতু নিজের একটা ক্ষমতা আছে, সত্য ক্ষমতার জন্য সবসময়ই রিস্কি। অবৈধ ক্ষমতার জন্য তো আরো বেশি।

কিন্তু যখন অনেক মানুশ সত্যি কথাগুলা একসাথে বলার সাহসটা করতে পারবে, বলতে শুরু করবে, এই রিস্কটা কমতে থাকবে; আর সত্য-কথা বলার জিনিসটা একটা ‘সামাজিক অভ্যাস’ হিসাবে তৈরি হইতে পারবে। এই বলতে-পারা এবং বলতে-না-পারার স্ট্রাগলটা যে কোন সমাজে কম-বেশি সবসময়ই আছে। আর আমাদেরকেও সবসময় চেষ্টা করতে হবে, সত্য যেন সহজে অ্যাপিয়ারড হইতে, সেই সমাজ তৈরি করার জন্যে। আর যত মিনিমাম লেভেলেই হোক, সত্য বলার ভিতর দিয়াই এই কাজটা করতে হবে, আমাদেরকে।

#########

জ্ঞানের, বা আর্টের বা যে কোন ডিসিপ্লিনের চিন্তার কোন অথরিটি কি নাই? আমার কথা হইতেছে, আছে। যে কোন বিষয়েই আমার চাইতে কম-জানা লোক যেমন আছেন, বেশি-জানা লোকও আছেন। জ্ঞানের বা চিন্তার বা আর্টের ভিতরে যত ডুববেন, তত টের পাইবেন এই জিনিসগুলা।

কিন্তু মুশকিল হইলো, সেইটা সামাজিক অথরিটির জায়গাগুলার সাথে গুলায়া ফেললে টের পাওয়া যাবে না এতোটা। এই অথরিটির মধ্যে অনেক বই-পড়া লোক আছেন, ভার্সিটির টিচার আছেন (রমিলা থাপার যেমন, আর্লি এইজ ইন্ডিয়ান হিস্ট্রির একজন অথরিটি); কিন্তু কেউ বই পড়ছেন বইলাই, ভার্সিটির টিচার বইলাই অথরিটি না (টি.এস. এলিয়ট যেমন মর্ডান পোয়েট্রির একজন অথরিটি, এইরকম আরো আছেন, বা থাকার কথা)।

[যেমন হুমায়ূন আজাদের চাইতে আহমদ ছফা বাংলা-সাহিত্যের বড় অথরিটি ছিলেন (আমার ধারণা), একটা সময়। এখন এই অথরিটি ভালো না খারাপ, বা কেমনে তৈরি হয় এবং বাতিল হয়, এইগুলা পরের আলাপ আসলে।…]

এই জায়গাটা রিকগনাইজ করতে পারাটা সবসময় দরকারি। তা নাইলে আমরা নতুন চিন্তা না পাইয়া, সবসময় চিন্তার নতুন নতুন অথরিটি পাইতে থাকবো। যেইটা সবসময়ই বাজে ব্যাপার একটা।

 

অগাস্ট ০২, ২০২১

“সমাজ” আসলে ফেসবুকে থাকে না, আমরা অনেকটা কাস্টমাইজড হয়াই থাকি এইখানে; “সমাজ” মানুশের বাসার ড্রইংরুমেও থাকে না; ফ্রেন্ডসার্কেলের যেই সমাজ, সেইটাও ছোট একটা “সমাজ”-ই; সমাজ থাকে আসলে বাজারে, রাস্তা-ঘাটে, চায়ের দোকানে। এই “সত্যি কথা” আজকে আবার মনে হইলো হোটেলে (পুরি-সিংগারা-ভাতের দোকানরে ‘অশুদ্ধ’ কইরা হোটেল-ই কই আমরা, রেস্টুরেন্ট না কইলেও সবাই বুঝে এইটা) সিংগারা কিনতে গিয়া।

হোটেলের মালিক কথা বলতেছিলেন দোকানের ক্যাশে বইসা। পুলিশের একজন কনস্টেবল বইসা ছিল তার কাছের টেবিলটাতে। একজন বাবুর্চি সিংগারা ভাজতেছে। একটা বাচ্চাপোলা মেসিয়ারি* করতেছে। রেস্টুরেন্টে আরো দুইজন কাস্টমার আছেন। একজন পরোটা খাইতেছে। আর আরেকজন সিংগারা। হোটেল মালিক বলতেছিলেন, তেলের দাম ১৩০ টাকা থিকা ১৬০ টাকা হইছে, ময়দার দাম বাড়ছে ৬০ টাকা, কেমনে হোটেল চালাইবেন! এর উপরে নাই কাস্টমার, দাম বাড়াইলে তো আরো থাকবো না। বেতন বাড়ে খালি সরকারি কর্মচারীদের।… পুলিশের কনস্টেবল ইয়াং। বোবা চোখ নিয়া চুপ কইরা শুনতেছে, তার কথা। এইরকম একটা অবস্থা।

মানে, এইগুলা হোটেল মালিকের কথাই, সমাজের মানুশের কথা – এইরকম না। কিন্তু “সমাজ” জিনিসটারে বাজারের মানুশের কথাতেই পাইবেন; নিউজপেপারে, টিভি-ক্যামেরা বা এমনকি ফেসবুকেও পাইবেন না এতোটা।…

….
*বাংলা-শব্দ এইটা 🙂 মোটামুটি সব রেস্টুরেন্টেই পাইছি এই কথা, হোটেল-বয় না, মেসিয়ার। আমার বাপে যখন ১০/১২ বছর ভাতের হোটেল চালাইছেন, তখনও দেখছি-শুনছি; ‘লিখিত-বাংলায়’ অইরকম পাই নাই কখনো, এই শব্দটা।

 

অগাস্ট ০৩, ২০২১

চোর-বাটপার’রা যখন কাউরে নিয়া ‘সমালোচনা’ করা শুরু করবে তখন বুঝতে পারবেন, অই লোকটা “ঠিক” কাজ না করলেও কোন না কোন ভালো কাজ আসলে করছে। (মানে, এর একসেপশন যে নাই – তা না, কিন্তু এখনকার বাংলাদেশে, প্রাইমারি নিয়ম হিসাবে এইটা ধইরা নেয়াটা বেটার।)

বাংলাদেশের ‘সরকারি মিডিয়াগুলার’ নিউজের ব্যাপারে যেমন দুই-তিনটা অনুমান খুব সহজেই করা যায় এখন। যখন অরা কোন মানুশের “মিডিয়া-ট্রায়াল” বা “চরিত্র-হনন” যখন শুরু করবে, দেখবেন তখন ২/৩টা জায়গা থিকাই করে –

১. অই লোক আসলে ‘সরকার-বিরোধী’ কোন কাজ করছে, চুরি-ডাকাতির জায়গাতে কোন সমস্যা করতেছে; তো, তারে “ভিলেন” বা “খারাপ মানুশ” বানাইতে হবে।

২. কোনকিছু লুকাইতে হবে, স্কেপগোট বানানো দরকার কাউরে, অই লোকটা হইতেছে মোটামুটি সেইফ-টার্গেট, কিছুদিন “বিনোদন” দেয়ার ভিতর দিয়া টাইমটারে পার করার কারণে করবে।

৩. যেহেতু “মেইন নিউজ” নাই বা অইগুলা নিয়া কথা-বলা যাবে না, কিছু “ট্যাবলয়েড” আইটেমরে মেইন নিউজ বানায়া দেয়া হবে। “খুশিতে, ঠেলায়, ঘুরতে…”

মানে, কাউরে “খারাপ মানুশ” বানানোর মিডিয়া-ট্রায়ালের ব্যাপারটা খুব কমই মানুশ’টা ভালো নাকি খারাপ – এই প্রশ্নের সাথে রিলেটেড, বেশিরভাগ সময় এর বাইরেই কোন ঘটনাই।

#########

ঢাকা শহরে মালিবাগ-রামপুরা এলাকা যারা চিনেন, আবুল হোটেলের মোড় চিনার কথা; অই এলাকার ক্রুশিয়াল একটা জায়গা। যখন আমি চিনতাম না ঠিকঠাক মতো, তখনো লোকজনরে বলতে শুনছি, আবুল হোটেলের মোড়ের কথা; তারপরে যখন চিনছি, দেখছি যে, একদম রাস্তার উপরেই হোটেল’টা। মিস করার কোন কারণ নাই, চোখে পড়বেই। আর হোটেল’টাও অনেকদিন ধইরাই আছে।

কিন্তু হোটেল’টা যদি না থাকে, বিজনেস যদি চেইঞ্জ কইরা ফেলে, তারপরও একটা বা দুইটা জেনারেশন পর্যন্ত মোড়’টার নাম আবুল হোটেলের মোড় থাইকা যাবে আসলে। (বা দেখা যাবে, নাম হয়া গেছে বইলা, হোটেল’টা এখনো টিইকা আছে।) এইভাবে, একটা জিনিস অনেকদিন থাকতে থাকলে, “নাই” হয়া যাইতে সময় লাগে আসলে। কিন্তু নাই হয়া যায় আসলে।

যেমন ধরেন, কারো হঠাৎ কইরা মনে হইলো, এইরকম আবুল-মার্কা নাম কেনো থাকবে! 🙂 প্রেস্ট্রিজের একটা ব্যাপার আছে না! দেখা যাবে ওয়ার্ড কমিশনার একটা ভাস্কর্য বানায়া নাম দিয়া দিলো – শেখ হাসিনা মোড় (জাস্ট বললাম আর কি!)। বা নাম হয়া গেলো “গ্যাঞ্জাইম্মা মোড়”, যে কোন কিছুই; মানে, কোন নাম-ই “চিরদিন” তো থাকে না!

অনেক সময় এমনভাবে চেইঞ্জ হয় যে, আগে যে এই নাম ছিল সেইটা লোকেটই করা যায় না। যেমন, বনানী ব্রিজ বলতে এখন যেই গুলশান-বনানীর লিংক ব্রিজটারে চিনি, ২০ বছর আগে এই ব্রিজ হওয়ার আগে গুলশান ২ টু কাকলি’র মাঝখানের কালভার্ট’টা ছিল আসলে “বনানী ব্রিজ”।

তবে একটা মেজর চেইঞ্জ হয় বানানের ভিতর দিয়া; যেমন ধরেন Dhaka লেইখা সার্চ দিলে অনলাইনে যেইসব জিনিস পাইবেন, তার প্রায় সবই ১৯৮০’র পরের ঘটনা; Dacca না লেখলে মোগল-আমলের এমনকি ১৯৭১ সালের অনেক ডকুমেন্টও পাইবেন না! (আমারে একজন বলছিলেন এইটা, আর মিথ্যা কথা না এতোটা।) মানে, বানান বদলানোর ভিতর দিয়া জায়গা চেইঞ্জ হয় না, কিন্তু হিস্ট্রিক্যাল কিছু চেইঞ্জ তো আসলে হয়।

নাম দিয়াই কোন বস্তু বা জায়গারে চিনি বা চিনাইতে চাই আমরা; কিন্তু নামগুলা যে স্ট্যাটিক জিনিস না এতোটা, এইটা মনে রাখতে পারাটাও দরকার আর কি। নামগুলা যতদিন ইউজের ভিতরে থাকতেছে, ততদিন “নাম” অইগুলা। এরপরে তো আসলে মনেই থাকবে না!

#########

ব্যাপারটা এইরকম না যে, সংজ্ঞা দিয়া বস্তুরে চিনা যাবে না, কিন্তু কোন বস্তু, ধারণা বা ঘটনা সংজ্ঞার ভিতরে আটকায়া থাকার জিনিস না…

#########

 

অগাস্ট ০৪, ২০২১

ছোটবেলাতেও (মানে, ধরেন ১৯৮৫/৮৬’র দিকে) “ফ্রি চক্ষু শিবির” হইতে দেখছি, শীতকালে, বার্ষিক পরীক্ষার পরে, স্কুল বন্ধ থাকার সময়। স্কুলের মাঠে, এক সপ্তাহ ধইরা চোখের ডাক্তার’রা তাঁবু টানায়া অপারেশন করতেন গরিব-বয়স্ক মানুশদের; অনেক সময় “ফ্রি হার্ট চেক-আপ” হইতেও দেখছি। এলাকার ছাত্র-সংগঠন, সমাজ-সংগঠনগুলা এই কাজ করতো। নাইনটিইসের পরে এইরকম সংগঠনগুলা কম-বেশি ‘বিলুপ্ত’ এখন। এরপরে কিছু অষুধ কোম্পানি, টুথপেস্ট কোম্পানি ফ্রি-ডেন্টাল ক্লিনিক করতো, অইগুলা লোক-দেখানি জিনিস হইলেও, কিছু মানুশের তো উপকার হইতোই। বা ধরেন, অনেক ডাক্তার তো অনেক রোগিদের কাছ থিকা টাকা নেন না; কিন্তু একটা “সোশ্যাল অ্যাক্ট” হিসাবে এতোটা “সেক্সি” না, বা এফেক্টিভও না মনেহয়; কারণ টেস্ট এবং অষুধ বাদে খালি ডাক্তারের পরামর্শ দিয়া তো চিকিৎসা মোটামুটি অসম্ভব এখন।

মানে, কারণ তো কিছু আছেই, কিন্তু “ফ্রি চিকিৎসা” জিনিসটা সমাজে এখন আর নাই তেমন; যেইটা গত ৩০/৪০ বছর আগেও ছিল কিছুটা। চিকিৎসা-ব্যবস্থা উন্নত-ই হইতেছে না খালি, দামিও হয়া উঠতেছে দিন দিন। মেডিকেল ইন্ড্রাষ্ট্রি বা মেডিকেল বিজনেস, অস্ত্র-ব্যবসা বা টেকনোলজি-বিজনেসের চাইতে বড় না হইলেও খুব বেশি ছোট না মনেহয়; বা সিগনিফিকেন্ট একটা ঘটনা। তো, যখন এইটা বিজনেস, এরে দেখার বা বিবেচনা করার প্যারামিটারগুলাই তো অনেক বেশি আলাদা হওয়ার কথা তখন। কতো জন মানুশরে আপনি কিওর করতেছেন – সেইটা আর সাকসেসের প্যারামিটার না, বরং কতো রেভিনিউ জেনারেট করতেছেন, এইরকম। যার ফলে, গত কয়েক দশক ধইরা, একটা প্যারডাইম শিফট হইছে বইলা আমার মনেহয়, বাংলাদেশে।

ফ্রি চিকিৎসা পাওয়া ও ফ্রি চিকিৎসা দেয়া – একটা বেসিক রাইটস এবং “সোশ্যাল ওয়ার্ক” হিসাবে আর নাই। যার ফলে যারা সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা পাইতে চান, ধইরাই নেন যে, এতোটা চিকিৎসা পাইবেন না আসলে; কিছু হাসপাতাল যারা ভালো চিকিৎসা দেয় সেইখানে “লোক” না থাকলে এডমিশনও পাইবেন না আপনি। এইটা মোটামুটি জানা কথাই। আর কেউ “ফ্রি” চিকিৎসা দিতেছেন মানে উনি তো ডাক্তার-ই না কোন! ডাক্তার হইলেই ফ্রি চিকিৎসা কেমনে দেন!

মানে, আমি বলতে চাইতেছি, এইরকম সোশ্যাল-পলিটিক্যাল সিচুয়েশনটারে মাথায় রাখতে পারেন।

“ডক্টরস উইথাউট বর্ডারস”র মতন একটা এনজিও সার্ভিসও যদি করতে রাজি থাকেন বাংলাদেশের ডক্টরস এসোসিয়েশনগুলা (ইউনিয়নগুলাতে গিয়া বছরে/৬মাসে একবার চিকিৎসা দিবেন), মেডিকেল কলেজের স্টুডেন্ট’রা (বেসিক ফাস্ট-এইড শিখানোই ধরেন); আমার ধারণা পাবলিক হেলথ নিয়া কথা-বলা’টা ট্যাবু ঘটনা হয়া থাকতে পারবে না এতোটা।

 

অগাস্ট ০৫, ২০২১

এই গল্প’টা তো অনেকেই জানেন। তারপরেও আজকে সকালে মনে হইছে যেহেতু, আবার বলি।

এক গ্রামে এক চোর ছিল। খুব ভালো চোর সে ছিল না, চুরি করতে গেলেই ধরা পড়তো। তো, লোকজন তারে চোর বইলা চিনতো, গালি-গালাজ করতো। পরে তার পোলাও চোর হইলো। তখন তারে ডাবল গাইল শোনা লাগতো; যে, নিজে তো চোর, পোলাটারেও একটা চোর বানাইছে! এইটা তার খুবই খারাপ লাগতো। মরার সময় সে তার পোলারে কইলো, বাপ রে, পোলা হইয়া তুই তো আমারে শান্তি দিলি না; আমি মরার পরে এমন কাম করিস যাতে লোকজন আমারে ভালো কয়। পোলা তো বুঝতে পারলো না, কি করবো! সে যদি ভালো কাজ করে তাইলে বাপরে তো লোকজন আরো খারাপ লোক বলবো।… তো, কয়দিন পরে দেখা গেলো গ্রামের কবরস্থানে লাশের কাফন চুরি হইতেছে, লাশের হাড্ডি চুরি হইতেছে। লোকজন তো খুবই চেইতা গেলো, কি ঘটনা! কয়দিন পরে ধরা পড়লো, অই চোরের পোলা এই কাম করছে। তখন লোকজন কইলো, তর চাইতে তো তর বাপ-ই ভালো ছিল, জ্যান্ত মানুশের ঘরে চুরি করতো, মরা মানুশের লাশ তো চুরি করতো না! এইভাবে পোলা তার বাপের মর্যাদা দিল।

মানে, আমি বলতে চাইতেছি, বাকশালের শাসন তো এর চাইতে ভালো ছিল মনেহয়!

##########

– বাংলাদেশে মদ-খাওয়া* হইতেছে একটা ক্ষমতা-দেখানোর ব্যাপার –

জিনিসটা হয়তো হাস্যকর মনে হইতে পারে, কিন্তু টু সাম এক্সটেন্ড এই ধারণাটা আসলে সত্যি যে, মদ তো খাইবো টাকা-পয়সাঅলা লোকজন! এই কারণে দেখবেন, “মদ-খাওয়া” ব্যাপারটা খালি আন-ইথিক্যাল বা “ইসলাম না মানার” ব্যাপার না, বরং “আমি স্পেশাল” বা “ক্ষমতাবান”, এইরকমের একটা ব্যাপার আছে। আর যদি আপনি বাংলাদেশের সমাজে কোন না কোন ভাবে স্পেশাল, প্রিভিলেজড বা ক্ষমতাবান না হন, মদ কেন খাইবেন!

সেইম লেভেলের একটা ফ্যান্টাসি (এইটা বলাটা ভুল হবে না মনেহয়) আছে, প্রাইভেট কার নিয়া। আপনার প্রাইভেট কার আছে মানেই যেন আপনি স্পেশাল কেউ; মানে, এইভাবে দেখার একটা ব্যাপার আছে, ঢাকা শহরে, বাংলাদেশে। যেই গাড়ির দাম ধরেন ৫ লাখ টাকাও না সেই গাড়ি ১৫/২০ লাখ দিয়া ইমপোর্ট করতে হয়। সরকারি, টাকা-পয়সাঅলা এবং এলিট লোকজন “গরিব” ও “ছোটলোকদেরকে” (দুইটা কিছুটা আলাদা জিনিস; কিন্তু আসলে মিডল-ক্লাসরে) নিজেদের গাড়ি চালাইতে দিতে চায় না বইলাই দেশেও গাড়ি বানাইতে দেয় না, বিদেশ থিকা গাড়ি আনার ট্যাক্সও কমায় না। কারণ সবাই যদি নিজেদের গাড়ি চালায় নিজেদের “বড়লোক” ভাবাটা তো টাফ হয়া যাবে তখন! হোক না কমদামি গাড়ি, মিডল-ক্লাস লোকজন গাড়ি কেনো চালাবে, রাস্তায়! “জাতে” উইঠা যাবে না তখন!

মদ-খাওয়া ব্যাপারটাও এইরকম। আজকে যদি মদ-খাওয়ার পারমিট সহজ কইরা দেয়, পুলিশ না ধরে, তাইলে ‘বিরোধীদলের লোকজন’ও তো এইরকম ‘বড়লোকি’ দেখাইতে শুরু করবে! তাইলে ক্ষমতায় থাইকা আর লাভ কি হইলো! এই কারণে “মদের বোতল উদ্ধার” এর মানে হইতেছে, লোকটা/মেয়েটা মদ খায় বা খাইতে চায়, কিন্তু বিদেশি মদের বোতল বাসায় রাখার মতন ক্ষমতা তো তার আসলে নাই!

……
*মদ মানেই হইতেছে বিদেশি মদ; কেরু’রে কেরু বলাটাই নিয়ম, মদ বলা যায় না এতোটা। এর বাইরে, দেশি-মদ মানে হইতেছে মাহফুজুর রহমানরে সংগীত-শিল্পী বলার মতো ঘটনা একটা।

#########

মানুশ তো শর্করা, প্রোটিন দেইখা ক্যালরি মাইপা খাবার খায় না কখনোই; ভাত, মাছ, রুটি, সবজি, বিস্কিট, ফলমূল… – এইসব জিনিস খায়। মানে, কি জিনিস খাইতেছি, এর টেস্ট, সুবাস, রান্ধা-বান্ধা এইসবও ঘটনা। তো, এই কারণে জোর কইরা “ক্যালরি” খাওয়াতে গেলে, বা অই জায়গাতে ফোকাস দিলে সেইটা এফেক্টিভ হবে না। (অনেক ডাক্তার’রা যেমন বুঝাইতে চান রোগিদেরকে!)

এইরকম জিনিস নিয়া খেপছিলেন Stephen King, উনি যে ব্রান্ডের নাম লেখেন উনার পপুলার নভেলগুলাতে, কোম্পানি থিকা টাকা নেন কিনা – এইসব আলাপে; বলতেছিলেন, আরে ভাই, আপনি কোল্ড ড্রিংকস খান নাকি, হয় কোক খান নাইলে পেপসি! তো, কইতে কি সমস্যা!

তো, খালি কোক বা পেপসিও না, একটা সার্টেন টেস্টের লগে প্রেস্টিজরেও কনজিউম করি তো আমরা। যেমন ধরেন, ঝোলের তরকারি যে বাংলাদেশে এতোটা “প্রেস্টিজিয়াস” জিনিস না, এর কারণ তো অই ধারণা যে, অল্প তরকারি দিয়া বেশি ভাত খাইতে হবে বইলা গরিবেরা ঝোলের তরকারি খায় বেশি! মানে, এইরকম একটা ধারণা আছে, বা এর একটা কন্ট্রিবিউশন থাকার কথা যে, এইটা তো “ক্ষ্যাত” জিনিস একটা! (পান্তা-ভাতের ঘটনাটাই খেয়াল করেন, কয়েকদিন আগের।…)

এইভাবে গত ১৫/২০ বছর আগে খালি সুবিধার জন্যও না, একটা “প্রেস্টিজের” জায়গা থিকা “ফার্স্ট ফুড”, মানে বার্গার, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, চিকেন ফ্রাই বেশ ডমিনেন্টিং হয়া উঠছিলো; এখন কিন্তু অই প্রেস্টিজ’টা নাই, একটু “নিচে” নাইমা গেছে, ব্যাপারটা।

কারণ, “হেলদি ফুড” ভাইব আসছে; নানানদিক থিকা। “বেশি খাওয়া” বা “বিদেশি” জিনিস খাওয়াই যে ভালো – এই ভাইবটা নাই আর। এর চাইতেও ভালো হইতেছে, খাওয়া-খাদ্য জিনিসটা যে আলাপের বিষয় হয়া উঠতে পারতেছে। এই ভাইব’টা যদি আরো কিছুদিন কন্টিনিউ হইতে পারে, আমার ধারণা, পজিটিভ কিছু চেইঞ্জ পাইতে পারবো আমরা।

#########

 

ইউটিউবার

“ইউটিউবারদের” নিয়া এখন যেইরকমের রঙ্গ-তামাশা হয়, ১৫/২০ বছর আগে “ব্লগার” নিয়া এইরকম হইতো; যে, আরে, রাইটার নাকি, ব্লগে লেখে, ফেসবুকে লেখে!

এই জিনিসটা নিয়া ১০/১১ বছর আগে দুইটা ছোট ছোট লেখা লেখছিলাম। একটা হইতেছে ব্লগার জিনিসটারে কেমনে ডিফাইন করা হইতেছে, মোস্টলি নেগেটিভই ছিল এপ্রোচ’টা। কিন্তু এখন আমার ধারণা অনেক বেশি না হইলেও কিছু চেইঞ্জ তো হইছেই। আমরা বুঝতে পারতেছি অর্গানাইজড মিডিয়া অনেকবেশি পাওয়ার-স্ট্রাকচারের পার্টনার এখন; অইখানে একটা ভার্সন আমরা পাইতে থাকবো, কিন্তু সেইটাই পুরাটা না। বরং এমন কিছু জায়গা তৈরি হইতেছে যেইটা ব্লগের (সোশ্যাল মিডিয়া আসলে – ফেসবুক, ইউটিউবও ইনক্লুডেড) ইনফরমেশন, রাইটিংস ছাড়া পাওয়া মোটামুটি অসম্ভব। এইটা মানতে শুরু করতেছি আমরা। মানে, নিউজপেপারের রাইটাররাই লেখক না, বরং উনারা একটু পুরান আমলের লেখকও। 🙂

আরেকটা জিনিস হইলো, যেইভাবে ট্যাগ লাগানো হইতেছিল যে, “ব্লগের লেখা”, অই ট্যাগটাও আর কাজ করে না এখন; আমরা বুঝতে পারতেছি, এইটা আসলে আরেকটা স্পেইসই; ভালো-পত্রিকা এবং চটকদার-পত্রিকা যেমন আছে একইরকমভাবে সিরিয়াস-ব্লগ আর পপুলার-ব্লগও আছে; এইরকম ভ্যারিয়েশনগুলা থাকবে, ধীরে ধীরে আরো স্পষ্ট হইতে পারবে।..

তো, ইউটিউবারদের নিয়া “ফান”গুলাও কাছাকাছি রকমের আসলে। এইগুলা যে সত্যি না – তা না; যে অরা ভিউ চায়, হাইপ তৈরি করতে চায়, অইরকম মাল নাই… কিন্তু এইগুলা ট্রাডিশনাল-মিডিয়ার দিক থিকা নতুন-স্পেইসগুলারে বাতিল করতে চাওয়ার একটা ইচ্ছা এবং কন্ট্রোল না করতে পারার আক্ষেপই; কোন “ইম্প্রুভমেন্ট সাজেশন” আসলে না।

স্পেইসগুলা এখনো একটা ফর্মেশনের ভিতর দিয়া যাইতেছে; আর আমার ধারণা, নানান চেইঞ্জের ভিতর দিয়া স্পেইসগুলা তৈরি হইতে থাকবে; কিন্তু পুরান কন্ট্রোল-মেকানিজমের ভিতর ফেরত যাবে না কোনভাবেই। যারা এই জায়গাগুলারে কন্ট্রোল করতে চান, উনাদেরও বুঝতে পারার কথা যে, ফান কইরা এইটা করতে পারবেন না। যার ফলে কঠিন কিছু রেগুলেশনেরই চেষ্টা করবেন হয়তো, এর পরের স্টেপে।…

 

অগাস্ট ০৬, ২০২১

– একজন পলিটিক্যাল পারসনরে ‘পারসোনালি ভালো মানুশ ছিলেন’ বইলা পোর্টেট করাটা একটা পলিটিক্যাল ঘটনা –

অ্যাজ অ্যা পারসন হিটলার কি খুব খারাপ লোক ছিলেন? দেখা যাবে, উনিও হয়তো উনার প্রেমিকার গ্লাসে কোনদিন ওয়াইন ঢাইলা দিছেন, রেস্টুরেন্টে ওয়েটার’রে হাগ করছেন, বেশি টিপস দিছেন; মানে, মানুশের মহত্ব তো এইরকম ছোট-খাট জায়গাতেই টের পাওয়া যায়, তাই না? 😛 কিন্তু এইগুলা হইতেছে ব্যক্তি-মানুশরে প্রায়োরিটি দিয়া তার পলিটিক্যাল আকাম-কুকামগুলারে হাইড করার বা আরো গ্লোরিফাই একটা তরিকার। পারসোনাল মেমোরি’রে ইতিহাস বইলা চালানোর একটা চেষ্টা।…

আমি বলতে চাইতেছি, একজন পলিটিক্যাল পারসনরে তার পাবলিক কন্ট্রবিউশনের জায়গাগুলা দিয়াই দেখতে হবে। আইনস্টাইন দুই বিয়া করছিলেন বইলা যেমন তার থিওরি বাতিল হয়া যায় নাই, (অইরকম না হইলেও) নেলসন ম্যান্ডেলা পরে চাইর বিয়া করছিলেন বইলা উনার আগের পলিটিক্যাল স্ট্রাগল ইনভ্যালিড হয়া যায় না। যিনি ছেলের জন্য বিরিয়ানি রান্ধেন, তিনি গুম-খুন করান না – এইরকম না। যিনি ফ্রেন্ডদের লগে ফাইজলামি করেন, উনি চুরি-ডাকাতি করতে পারেন না – এইরকম না। তেলে-জলে মিশাইতে চাইলেই জিনিসগুলা মিলবে না, ডিফরেন্সটা স্পষ্ট হয়া উঠবে আরো।

আমাদের এইখানে এইরকমের “আহ্-উহ্” চালু আছে যে, মানুশ হিসাবে, ফ্রেন্ড হিসাবে উনি কতো ভালো লোক ছিলেন! খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে মারা যাওয়ার পরেও এইরকম আহাজারি দেখছিলাম। বড় ভালো লোক ছিলেন! এইরকম পারসন হিসাবে ‘ভালো’ হওয়া তো অবশ্যই ভালো (তার আশেপাশের লোকজন ভালো থাকবো); কিন্তু প্রেসিডেন্টের ছেলে হইয়া, প্রাইম মিনিস্টারের পোলা হয়াও দেমাগ দেখান না – এইটা কেমন কথা! দেমাগ দেখাবে কেন!!

এইগুলা বলা যাবে না – তা না, কিন্তু এই বলাটা যে পারসোনাল ঘটনা না, বরং পলিটিক্যাল স্টেটম্যান্টও দিতে চাওয়া, এইটারে ইগনোর করা যাবে না। এইরকম ‘পারসোনালি ভালো মানুশ ছিলেন’ – ভার্সন নেয়া যাবে না।

#########

– বাংলাদেশের মিডিয়া-পিপল’রা (ইন জেনারেল), এই জুলুমের সিস্টেমের খালি সার্পোটার-ই না, এর একটা ইন্ট্রিগ্রাল পার্ট –

এইরকম একটা আলাপ দেখবেন আছে যে, বাংলাদেশে মিডিয়া-পিপল, বুদ্ধিজীবীদের তো হাত-পা বান্ধা; চাইলেও উনারা সত্যি কথা বলতে পারেন না! এইটা মিছা কথা আসলে। একটা উদাহারণ দেই, ধরেন, দেশে জামাতে ইসলাম ক্ষমতায় এখন, আপনার কি মনেহয় এই মিডিয়া, চেতনার লোকজন তখনো বলতো, “আমাদের হাত-পা বান্ধা?” “মালিকের জন্য কথা কইতে পারি না?” বিপ্লবে ঝাঁপাইয়া পইড়া শহিদ হয়া যাইতো না, কয়েকজন?

এইখানে, ক্লিয়ারলি একটা সার্পোট কাজ করে; খালি প্রতিষ্ঠানের জায়গা থিকা না, বরং পারসোনাল জায়গা থিকা যে, এই গর্ভমেন্ট না থাকলে তো দেশটা পাকিস্তান হয়া যাবে, ইসলামিস্টদের দখলে চইলা যাবে! সিপিবি আর বাম-বদমাইশগুলা এই ডরের জায়গাটারে চালু রাখে সবসময়। (এরা হইতেছে চেতনার র ্যাব আর ডিবি-পুলিশ।) আর এরাই হইতেছে বাংলাদেশের মিডিয়া এবং বুদ্ধিজীবীদের দল। এরা এই বিনা-ভোটের কালচারের ভিক্টিম তো না-ই, সার্পোটারও না খালি, বরং বেশিরভাগ সময় এর প্রটেক্টর।

যখন ইলেকশনে পাবলিক ভোট দিতে পারে নাই, তখন এরাই বলছে, ভোট দিয়া কি হবে! এইগুলা বিপ্লবের এনার্কি না, এইগুলা হইতেছে স্নবিশ মকারি। কিন্তু যখনই কোশ্চেন করবেন, বিপদে পড়বে, তখন নিজেদের হাত-পা বাইন্ধা ফেলবে! আমি একলা কি করবো! যেন আপনারে বিপ্লব কইরা ফেলতে হবে!

কেউ কাউরে বিপ্লব করার জন্য বলতেছে না। নিজেদেরকে পিপলস-এজেন্সি দাবি কইরা পিপলের এগেনেস্টে কথা বলা বন্ধ করলেই হবে।
জালিমরে সার্পোট কইরেন না, জুলুমরে সার্পোট কইরেন না। একটা অন্যায়রে নৈতিকভাবে সার্পোট করা বন্ধ করেন। যখন করবেন, এইটা খালি আপনার প্রফেশনাল কাজকাম, পারসোনাল কথা-বার্তা, কাজকামেই না, আপানর নিরবতার ভিতরেও এইটা রিফ্লেক্ট হবে।

কিন্তু এইরকম মিনিমাম কোন রেজিসটেন্সের সাইনই মিডিয়াতে, মিডিয়া-পিপলদের মধ্যে, ইন জেনারেল, পাইবেন না। থাকার কথাও না। কারণ, উনারাই বাকশাল! আর এইটা উনাদের পলিটিক্যাল চয়েস।

#########

– দেশের গান –

বাংলাদেশে না হইলেও হাজার খানেক দেশের গান থাকার কথা। প্রেমের গান আর বাউল গানের পরে এই ‘দেশের গান’-ই জনরা হিসাবে বা সাবজেক্ট হিসাবে সবচে রিচ হওয়ার কথা। এইটার শুরু তো অবশ্যই ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় থিকা। এর পরে জিয়ার আমল পর্যন্ত এই ‘দেশের গান’র রেওয়াজ ছিল। এরশাদের সময় থিকা পাবলিকের কাছে দেশের গান জিনিস’টা ভুয়া হইতে শুরু করে অনেকটা; মানে, “আবেদন” কইমা যায়। 🙂

তো, একটা জনরা চালু হইলে যা হয়, দেখা যায়, আরে, আগেও তো দেশের গান ছিল অনেক! এইভাবে পুরান কিছু গানও ইনক্লুড হইতে থাকে। যার ফলে ১৯৫২’র ভাষা-আন্দোলনের কিছু গানও দেশের গানে নেয়া গেছে। কিন্তু মুশকিল হইছে যখন ১৯০৫’র ‘বঙ্গভঙ্গ’ বাতিল করার সময় যখন কলকাতার বাবুদের গানরেও ‘দেশের গানে’ ইনক্লুড করা হইছে। জনরা ভারী হইছে; কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের, বাংলাদেশের স্পিরিটটা অইখানে পুরাপুরি মিসিং, মিসলিডও করা হইছে। এই ‘বাঙালিপণা’ ইন্সফ্লুয়েন্সও করছে জনরা’টারে, যে ন্যাচারাল বিউটি ছাড়া কি দেশের গান হয় কিনা! কিন্তু বাংলাদেশের দেশের গান এইটুকের মধ্যে আটাকায়া থাকে নাই।…

আবার মুক্তিযুদ্ধের পরে, দেশের গান ব্যপারটা খালি ‘দেশপ্রেম’ হয়া থাকে নাই; ‘সমাজ-বাস্তবতার’ দিকেও টার্ন করতে পারছে; কম হইলেও কিছু নজির আছে। অবভিয়াসলি, সবচে ইউনিক উদাহারণ হইতেছে আজম খানের “হায় আমার বাংলাদেশ”! স্বাধীনতার পরে এই গান গাওয়া হইলেও ‘৯০-এ এবং এখনো এইটা হইতেছে আইকনিক সবচে একটা গান!…

মানে, টাইমলাইন অনুযায়ী যদি দেখেন ৩টা টাইমজোনে ভাগ কইরা দেখা যাইতে পারে –

১. ১৯৭১ টু ১৯৮১: এইরকম দিন-ক্ষণ মাইনা তো লোকেট করা যাবে না অইভাবে; যারা মিউজিক ইন্ড্রাষ্ট্রির লোক উনারা হয়তো কিছু সিগনিফিকেন্ট ঘটনা মার্ক করতে পারবেন, কেমনে জিনিসটা অফ হয়া গেছিল।

২. ১৯৭১’র আগের গান – অনেক পরিচিত গানই ১৯৭১’র আগের, এমনকি বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত-ই ‘বঙ্গভঙ্গের’ সময়ের গান। অইখানে ব্রিটিশ-বিরোধী ব্যাপারগুলার বাইরে ন্যাচারাল বিউটি হইতেছে প্রমিনেন্ট।

৩. ১৯৮০’র দশক এবং এর পরের – খুব বেশি সিগনিফিকেন্ট গান আমার পাই নাই এইরকম। ১৯৯০-এ এরশাদ ফল করার পরে ‘দেশপ্রেমের’ একটা ছোটখাট ঢেউ উঠছিল মনেহয়। জেমস, আইয়ুব বাচ্চু’রা গাইছিলেন কিছু গান। কিন্তু নতুন কোন টেস্টের জন্ম দিতে পারেন নাই আসলে।

মানে, ‘দেশের গান’ আসলে নির্দিষ্ট সময়ের ঘটনাই ছিল। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরের ১০/১২ বছর। এর আগেও ছিল, এখনো গাওয়া হইতেছে, কিন্তু অইটা ছিল গোল্ডেন পিরিওড। গানগুলার মধ্যে টেনডেন্সির দিক দিয়াও কয়েকটা ইমোশনরে হাইলাইট করার ব্যাপার আছে –

১. যুদ্ধের গান, ইন্সপারেশনাল, দেশের জন্য আমরা জীবন দিয়া দিবো। “একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে মোরা যুদ্ধ করি…” “তীর হারা অই ঢেউ সাগর পাড়ি দিবো রে…”

২. যুদ্ধের পরের গান, শোকের, কষ্ট ও বেদনার। “সব ক’টা জানালা খুলে দাও না…” “আমায় গেঁথে দাও না মাগো…” “রেললাইনের ধারে, মেঠোপথটার পাড়ে দাঁড়িয়ে…”

৩. “বাংলাদেশ” ধারণার গান; “চাষাদের, মজুরের, মুটেদের…” “প্রথম বাংলাদেশ আমার, শেষ বাংলাদেশ…”

৪. প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের গান; “একতারা তুই দেশের কথা বলরে এবার বল…” “ধন ধান্যে পুষ্পে ভরা…” “আমার সোনার বাংলা…”

৫. ট্রিবিউট সং; “সালাম সালাম হাজার সালাম…” “শোনো একটি মুজিবুরের কন্ঠ থেকে…”

৬. সমাজ-বাস্তবতার গান; “হায় আমার বাংলাদেশ…” (আজম খান) “আমার সোনার বাংলা…” (জেমস) “আমার বাংলাদেশ…” (আইয়ুর বাচ্চু)
এইরকম আরো ৫/৭টা ক্যাটাগরি আইডেন্টিফাই করা যাবে। ও, আওয়ামী লীগ-বিএনপি’র গানও কিন্তু আছে। যেমন, “প্রথম বাংলাদেশ আমার, শেষ বাংলাদেশ…” হইতেছে বিএনপির গান; টিভিতে এই গানটা এখন এক রকমের ‘নিষিদ্ধ’।

কিন্তু এইখানেও তিনটা ক্যাটাগরি প্রমিনেন্ট বইলা আমি মনে করি – মুক্তিযুদ্ধ, দেশের সৌন্দর্য্য আর সমাজ-বাস্তবতা।

অবভিয়াসলি দেখবেন মুক্তিযুদ্ধের গানগুলাই হইতেছে দেশের গান; কারণ এইখানে পাবলিক মেমোরি জড়িত, যারা শুনছেন, নিজেদের লাইফের ইমোশনের লগে রিলেট করতে পারছেন; আর যারা লেখছেন, সুর দিছেন, গাইছেন, উনাদের আর্টিস্টিক ব্রিলিয়ান্স বা পলিটিক্যাল আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়ের বাইরে ইমোশনাল সততার জায়গাটা একটা কি-রোল প্লে করতে পারছে। এই ক্যাটাগরির কিছু গান, অলরেডি দুই-তিনটা জেনারেশন সারভাইব কইরা টিইকা আছে। আমার ধারণা, আরো অনেকদিন এই ক্যাটাগরির গানগুলা অই ইমোশনটারে ট্রান্সমিট করতে পারবে, বাংলাদেশের মানুশের মনে।

সবচে ভারনারেবল লাগে আসলে দেশের সৌন্দর্য্য বিষয়ের গানগুলা। এখনই ফেইক-ফেইক লাগে। বুঝা যায়, আলগা-পিরিতের গান অইগুলা। মোস্টলি একটা সময়ের ফ্যাশন, যখন “দেশপ্রেমিক” হওয়াটা একটা “ভালো মানুশ” হওয়ার রিকোয়ারমেন্ট ছিল। এর মধ্যে যে “ভালো” গান নাই – তা না; কিন্তু আমরা তো বুঝতে পারি এখন, ‘দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য’ দেখার লাইগা ‘দেশপ্রেমিক’ হওয়ার দরকার নাই এতোটা।
আর সমাজ-বাস্তবতার জায়গাটাতে বরং আমার আক্ষেপ আছে। খুব বেশি গান পাই নাই আমরা এইখানে। কারণ এই জায়গাটারে নতুন একটা ট্রাডিশন হিসাবে আসলে তৈরি করা লাগবে, যেইটা এক ধরণের পলিটিক্যাল আন্ডারস্ট্যান্ডিং এবং শিল্পী-প্রতিভার ঘটনা। তবে আমার মনেহয়, জাতীয়তাবাদী জায়গা থিকা না, বরং সোশ্যাল-পারসপেক্টিভ থিকা এই জায়গাটা আরো এক্সপ্লোরড হবে, বা হইতে পারবে।

২.
ছোটখাট একটা লিস্টং করতে পারলে ভালো হইতো। করবো হয়তো। ঠিক অমরত্বের দিক থিকা না, ভ্যারিয়েশন, রিলিভেন্স বা পারসোনাল চয়েসের দিক থিকা মেবি।

৩.
আর যে কোন জনরা-ই স্ট্যাটিক কোন ঘটনা না; কোর কিছু জিনিস নিয়া কন্সটেন্টলি চেইঞ্জ হইতে পারলেই বরং জনরা’টা টিইকা থাকে। দুনিয়াতে দেশ না থাকলেও গ্রেটার সেন্সে ‘দেশের গান’ ব্যাপারটা টিইকা থাকার একটা সম্ভাবনার মধ্যে আছে বইলা আমার মনেহয়। মানে, দেশ মানে একটা জিওগ্রাফিক্যাল বাউন্ডারিই না; একটা ইউনিটির সেন্স, কমিউনিটি ফিলিংস, একটা স্থানের মায়াও, যেইটা মানুশের মন থিকা কমপ্লিটলি হারায়া ফেলাটা মুশকিল হবে মনেহয়।

#########

– আর্টিস্টিক প্রতিবাদ নিয়া –

ব্যাপারটা এইরকম না যে, আর্ট কইরা প্রতিবাদ করা যাবে না, কিন্তু প্রতিবাদ ব্যাপারটা তো হইতেছে ‘র’ (raw) একটা জিনিস; একটা অন্যায়, অবিচার, জুলুমের জায়গাটাতে ইন্সট্যান্ট একটা ফিলিংস হয়, কোন কথা ছাড়াই আমরা বুঝতে পারি, এইটা অন্যায়, ক্ষমতার বাহাদুরি! এই কারণে দেখবেন সত্যিকারের রেজিসট্যান্সের ঘটনাগুলা আর্টিস্টিক হইতে পারে না এতোটা; এর ভাইবটাই অগোছালো, অন্যরকম; ভদ্র, ‘পরিশীলিত’ এবং নৈতিক ও আইনি দিক দিয়াও ‘ঠিকঠাক’ হইতে পারে না তেমন।…

তবে সিস্টেমেটিক মুভমেন্টও হয়, অনেকদিন ধইরা চলতে থাকলে, একটা লং ইনিশিয়েটিভ হইলে। আর্ট-কালচারেও রেজিসট্যান্সের ঘটনাগুলা, প্রতিবাদগুলা অদরকারি না হয়তো, কিন্তু একটা ডকুমেন্টশনই আসলে। কবি অডেন তো কইছেন, কবিতা লেইখা প্রতিবাদ হয় না কোনদিন।… তো, নুর হোসেনের মরার চাইতে নুর হোসেনের কবিতা নিয়া মাতামাতি বেশি হইলে সন্দেহ করতে হবে, কোন একটা ঝামেলা আছে এইখানে।…

এখন তো এইরকম একটা নিয়ম হয়া দাঁড়াইতেছে যে, প্রতিবাদ আর্টিস্টিক হইতে হবে! আর্টিস্টিক প্রতিবাদ করা যাবে না – ব্যাপারটা এইরকম না, কিন্তু প্রতিবাদ করতে গেলেই আর্ট করা লাগবে, এইরকম একটা বেরিয়ার তৈরি হইতে থাকার কথা, আমাদের সাইকোলজিতে। যেইটা একটা সমস্যা হিসাবে হাজির হইতে পারে আমাদের সামনে, ফিউচারে।

মানে, এই আর্টিস্টিক প্রতিবাদগুলা খারাপ বা অদরকারি – এইটাও আমার পয়েন্ট না; বরং এইখানে প্রতিবাদের চাইতে আর্টের জায়গাটা নিয়াই আমার অস্বস্তি। সরোয়ার্দিতে গাছ-কাটার সময়ে নাটক করা নিয়াও বলছিলাম এইটা। আর্ট করা যাবে না – তা না, কিন্তু প্রতিবাদ করতে গেলে আর্ট করা লাগবে, এইটারে নেসেসারি বানায়া ফেললে বাজে হবে, ব্যাপারটা।

 

অগাস্ট ০৮, ২০২১

বাস্তবতা বা রিয়ালিটি হইতেছে ফ্যান্টাসির একটা সাব-সেট।

মানে, উল্টাটা না; যে, আমরা যেই বাস্তবতাতে থাকি, সেইখানে থিকাই আমাদের ফ্যান্টাসিগুলারে বানাই; অইটা আছে, কিন্তু ফ্যান্টাসিগুলা ইটসেলফ আমাদের বাস্তবতাগুলারে তৈরি করতে থাকে।

খুব উইয়ার্ড একটা ঘটনার কথা মনেহয় আমার; টিনএইজ বয়সের (তখন “কৈশোর” বলা লাগতো) কথা; আমরা কয়েকজন ফ্রেন্ড (সবাই পোলা) রাতের বেলা কোথাও বইসা আড্ডা দিতেছিলাম, তখন কথা হইতেছিল, যদি আমাদের কাছে দুনিয়ার সব ক্ষমতা থাকতো তাইলে কি করতাম আমরা? – এই টপিকে। তখন একজন বলতেছিল, সে ক্লাসের অই মেয়েটারে (যে তার চাইতে ইন্টেলিজেন্ট, পরীক্ষায় বেশি মার্কস পায়, এইরকম একজনের নাম বলতেছিল, যারে) নিয়া আসতো আর (অই সময়ের কোন হিট সিনেমার নায়কের মতো) বলতো, নাচো সুন্দরী! আর একলা একলা বইসা বইসা সে দেখতো। এইরকম। তো, আমি তো পুরাই ওয়াও! কস কি মমিন! তোর কাছে দুনিয়ার সব ক্ষমতা আছে, আর তুই কিনা এই কাজ করতি! আরেকজন ফ্রেন্ড কইলো, বেটা তুই বিশ্বসুন্দরীর কথা না ভাইবা অর কথা ক্যান ভাবলি! (এইটা কন্সিডার করতে রাজি মনে হইলে সে। কিন্তু) এইরকম কথা-বার্তাতে খেইপা গেছিল, তুই কি করতি তাইলে! আমি কি বলছিলাম মনে নাই এখন। মানে, অর মতো একসাইটিং কিছু ছিল না, ডেফিনেটলি।

কিন্তু ফ্যান্টাসি নিয়া আমি চিন্তিত হয়া পড়ছিলাম। ব্যাপারগুলা এইরকম তাইলে? পাওয়ারফুল হইলে লোকে এইসবই করে, বা করা লাগবে? মানে, ভয়াবহ জিনিস তো; সিনেমা দেইখা, বই পইড়া যা কিছু ইমাজিন করতেছি আমরা, এর বাইরে আসলেই করার কিছু নাই?

তো, রিয়ালিটি কেমনে প্রেজেন্ট করা হইতেছে আমাদের সামনে, এইটা তো আছেই; ফ্যান্টাসি জিনিসটা কেমনে তৈরি করা হইতেছে, সেইটা তার চাইতেও গ্রেটার মনেহয়।…

#########

এইরকম একটা ব্যাপার দেখবেন আছে, যে, ভাই, আর কতো! এক ইস্যু নিয়া এতো কেন প্যাঁচাইতেছেন! আর কোন কাজ নাই আপনার লাইফে! নতুন এবং একসাইটিং কিছু কন! আবার, এট দ্য সেইম টাইম, এই ইস্যু তো দুইদিন পরেই থাকবে না! পাবলিক তো দুইদিন পরেই ভুইলা যাইবো! পাবলিকের মেমোরি জেলিফিশের মতো। এই-সেই…

এরা আসলে একই লোক, বেশিরভাগ সময়। এরা খারাপ লোক না। এরা চায় সবাই সুখে-শান্তিতে বসবাস করুক। এরা হইতেছে “এইখানে পলিটিক্যাল আলাপ নিষেধ” এর নিউ ভার্সন। কুল অ্যান্ড কিউট। পাবলিক এতো কথা বলবে কেন! পাবলিক হইতেছে কথা শুনবে। পাবলিকের কথা বলারে এরা ডরায়।

#########

 

অগাস্ট ০৯, ২০২১

মানুশের রেজিসট্যান্স খুব উইয়ার্ড ওয়ে’তে কাজ করে। এবং আমার ধারণা, জুলুম যতো তার মাত্রা ছাড়াইতে থাকে, রেজিট্যান্সের ধরণও তত অপরিচিত হইতে থাকে। অনেক সময় আমরা রিকগনাইজই করতে পারবো না যে, এইটা ছিল একটা প্রতিবাদ বা রেজিসট্যান্সের ঘটনা।

একটা উদাহারণ দেই; ধরেন, একজন কাজের মহিলা কাজ করে আপনার বাসায়, তার ছোট বাচ্চাও লগে নিয়া আসে। ছোট বাচ্চা’টা একটাকিছু ধরলো বা ভাইঙ্গা ফেললো বাসার। তখন বাসার মালিক কিছু বলার আগেই কাজের মহিলাটা বাচ্চাটারে বকা দেয়া শুরু করবে, মাইর-ধরও করতে থাকবে, ওয়েট করবে যাতে বাসার মালিক যাতে বলে, “থাক! ছোট বাচ্চা; মাইরো না অরে!” অথবা এটলিস্ট বাচ্চাটারে যাতে বকা-ঝকা না করে। এমনকি মালিকের কাছে মাফও চাইবে যে, মাফ কইরা দেন; আবার গিয়া পিটাবে বাচ্চাটারে, এইরকম।… এর মানে এইটা না যে, মালিকের অথরিটি সে মাইনা নিতেছে বা নিতেছে না; শে চায়, তাঁর বাচ্চাটারে অন্য কেউ যাতে বকা না দেয়, না মারে। এইখানে কাজের মহিলার মেজাজ যে খারাপ হয় না, বা সিরিয়াসলি যে বাচ্চাটারে পিটায় না – এইরকম না, কিন্তু এইটা হাউএভার, একটা রেজিট্যান্সেরও ঘটনা যে, আমার বাচ্চারে তো আপনি বকা দিতে পারেন না! (নিজের বাসায় গিয়া হয়তো আদর কইরা দিবে, বুঝায়া বলবে।)

আমি এই এক্সটেন্ড পর্যন্ত ভাবতে চাই যে, যিনি এই কাজ করতেছেন উনি নিজেও কনশাস না যে, এইটা তাঁর রেজিসট্যান্সের ঘটনা। উনি যে উনার বাচ্চাটারে হিউমিলিয়েশন থিকা বাঁচাইতে চাইতেছেন – এইটাও হয়তো ভাবেন না; ভাবেন যে, অন্যায় তো করছে, সো, আমার বাচ্চারে আমারই তো আগে ‘শাসন’ করতে হবে। এইরকম প্যাঁচ-গোচের ব্যাপার থাকে।

২.
এখন কনটেক্সটের কথাটা বলি। 🙂

সরকার’রে এবং ক্ষমতাবানদের দোষ দেয়ার আগে পাবলিক যে পরীমণিরে “খারাপ মেয়ে” বইলা গাইল দিয়া নিতেছে; এইটা অবশ্যই গাইল দেয়ার ঘটনা, কিন্তু একইসাথে একটা রেজিসট্যান্স হিসাবেও দেখা যাইতে পারে কিনা এই প্রশ্নটা রাখতে চাই আমি; এইরকম দেখছি অনেকে বলতেছেন, পাবলিকের কাছে যে হেল্প চায়, পাবলিকের কি করার আছে! পাবলিকের অবস্থা তো এর চাইতে বাজে! 🙁 এই কারণে পরীমণির দোষ দিয়া পাবলিক নিজেরেও বাঁচাইতে চাইতেছে আসলে। যে, “ভালো মেয়ে” হইলে না এর পক্ষে কথা বলতাম! বা এ তো ক্ষমতাবানদের লগের লোকই! দুইদিন পরে এরা মিইলা-ঝুইলা যাবে, মাঝখান দিয়া আমরা কথা বইলা বিপদে পড়বো! বা, দুই কুত্তার কামড়াকামড়ি এইগুলা, আমাদের কি করার আছে!… এইগুলা যে সত্যি না – তা তো না; কিন্তু এরপরেও এইটা যে করা যায় না, এইটা বাজে কাজ করতেছে দেশের গর্ভমেন্ট, পুলিশ, র‌্যাব – এইটা তো অস্বীকার করার উপায় নাই! যার ফলে, পরীমণিরেও এর দোষ দিতে পারাটা নিজেদের গিল্টি-ফিলিংস থিকা, নিজেদের কিছু-না-করতে-পারার একটা ওয়ে-আউটও একটা।

মানে, আমি বলতেছি না, এইটা একটা পিওর রেজিসট্যান্স; কিন্তু এর এলিমেন্টগুলা আছে এই “ভিক্টিম-ব্লেইমিং”-এ। যদি আজকে সমাজে আইনের শাসন থাকতো, পিপলের ভোটে ইলেক্টেড একটা গর্ভমেন্ট থাকতো; মানুশ নিজেদেরকে এতোটা ভারনারেবল মনে করতে পারতো না হয়তো। বরং জিনিসটা এইরকম ভয়াবহ একটা জায়গাতে গিয়া পৌঁছাইছে যে, এই গর্ভমেন্টরে সার্পোট না করলে, এর পক্ষে কথা না কইলে, যদি আমারে সন্দেহ করে! যদি আমারে বিপদে ফেইলা দেয়! কোন রাজনৈতিক ঝামেলাও না, কোন জায়গা-জমি হয়তো আছে আপনার, এলাকার কোন শত্রু আপনারে “বিএনপি-জামাত” বানায়া অই জমির দখল নিয়া নিবে! আপনার ব্যবসা বন্ধ কইরা দিবে। চাকরিতে কান-পড়া দিবে, এইরকমের একস্ট্রিম একটা অবস্থা আসলে।

রেইপের পরেও ভিক্টিমের বাপ-মাও অনেক সময় মেয়ের দোষ ধরতে চায়; সেইটা ভিক্টিম-ব্লেইমিংয়ের ঘটনা না সবসময়; এইটা কোনকিছু করতে-না-পারার ভারনারিবিলিটও; কিন্তু ‘সমাজের মানুশ-জন’ যখন এই ন্যারেটিভটাতে (যে, মেয়েটারই দোষ) জোর দিতে থাকে – এইটা অবশ্যই ‘ভিক্টিম-ব্লেইমিং’; আমাদের সমাজে খুব স্ট্রংলিই আছে এইটা, উইথ-আউট অ্যানি ডাউট; কিন্তু একটা কালেক্টিভ ভারনারাবিলিটিও হইতে পারে অনেক সময়। মেবি। মানে, এই জায়গাতে থিকা মাফ কইরা দেয়ার বা ইগনোর করার কোন স্কোপ অবশ্যই নাই। এইটা ভিক্টিম-ব্লেইমিং-ই, যেইটা অবিচার ও অত্যাচারের জায়গাটারে আরো স্ট্রং কইরা তোলে। কিন্তু সমাজে যদি রেইপের বিচার থাকতো, এই ভিক্টিম-ব্লেইমিংও এতোটা বাতাস মনেহয় পাইতো না।

যেই দেশে অন্যায়ের বিচার আছে, সেই দেশে অন্যায় করার আগে মানুশ ডরায়। যেই দেশে অন্যায়ের বিচার নাই, সেই দেশে মানুশ ভিক্টিমরেই গাইল্লায়। কারণ পাবলিক হিসাবে সে জানে, অন্যায়কারী পাওয়ারফুল, তার ‘বিচার’ মাইনা বাঁইচা থাকতে হবে তার। এইটা খারাপ তো অবশ্যই, স্যাডও মনেহয়।

৩.
তাইলে এইসব ভিক্টিম-ব্লেইমিং’রে একটা ফর্ম অফ রেজিসট্যান্স হিসাবে দেখা লাগবে আমাদের? 🙂

অবশ্যই না। আমি মনে করি, আমাদের দেখা লাগবে, কি পরিমাণ ডরের ভিতরে আমরা আছি যে, নিজের কাছেও স্বীকার করতে চাইতেছি না যে, এইখানে একটা অন্যায় হইছে! জুলুম কতোটা মাত্রা ছাড়াইছে যে, জালিমের পা-চাটার পরেও ডরাইতেছি আমরা, লাত্থি মারবে না তো আবার! এই কারণে যে ভিক্টিম তারে গিয়া দুইটা লাত্থি মারতে হইতেছে আমাদের! আর এইটা রেজিসট্যান্স না। রেজিসটেন্স না দেখাইতে পারার একটা ওয়ে-আউটও হইতে পারে হয়তো অনেক সময়।

আর এইটা এই সময়ে এতোটা লোকেট করতে পারবো না আমরা। যদি এই জুলুম জারি থাকে তাইলে একটা সার্টেন টাইম পরে গিয়া হয়তো এই ভিক্টিম-ব্লেইমিংরেই হয়তো আমরা নাম দিয়া দিবো – “ঐতিহ্য!”


অগাস্ট ১০, ২০২১

যে কোন কিছু নিয়া আলাপে, এইরকমের একটা এটিটুড বেশিরভাগ সময়ই থাকে যে, আপনার খারাপ লাগতে পারে, কিন্তু আমার কাছে জিনিসটা ভাল্লাগছে; বা এর উল্টাটা। অ্যাফ ইফ, ভালো-খারাপ খুব পারসোনাল চয়েসের ব্যাপার। স্পেশালি সিনেমা, গান, কবিতা… এইরকম ক্রিয়েটিভ আর্টের জায়গাগুলাতে এইটা মোটামুটি “মহামারী” আকারে আছে।

কিন্তু ঘটনা’টা কোনভাবেই পারসোনাল চয়েসের ব্যাপার না। একটা স্পেসিফিক টাইমে আর্টের সার্টের প্যারামিটার আমরা ফলো করি; আমাদের পারসোনাল ভালো-খারাপ লাগার রুচি তৈরি হয়, বদলায়; আর এইগুলা খুব স্পন্টিনিউয়াস বা স্বতঃস্ফূর্ত কোন জিনিস না। ফ্যাশন, মার্কেট ডিমান্ড, প্রপাগান্ডার বাইরেও এসথেটিক্যাল কিছু জিনিস সবসময় থাকে। আর এই এসথেটিক্যাল প্রেফারেন্সগুলা খালি ক্রিটিক্যাল আলাপের ঘটনা না, পাবলিক সাইকি’তেও এইগুলা কাজ করে।

কেমনে কাজ করে? – এইটা বেশ ঝামেলার আলাপই; দুয়েকটা উদাহারণ দিয়া মেবি পুরাপুরি ক্লিয়ার করা যাবে না। তারপরও ট্রাই করি, যেমন ধরেন, শামসুর রাহমানদের সময় “স্বাধীনতা তুমি… স্বাধীনতা তুমি… স্বাধীনতা তুমি…” এইরকম উপমা দিয়া বলাটা তো একটা সময় “ভালো কবিতা” ছিল; পড়তেও ভাল্লাগতো আমাদের। এখন জিনিসটা অনেক ফানি-ই আসলে কবিতার ফর্ম হিসাবে। বা ধরেন, গুরু-গম্ভীর প্রকৃতির বর্ণনা একটা সময় “ভালো সাহিত্য” ছিল, এখন অনেক সময় “ফেনানো”-ই মনেহয়। একটা সময় বাংলা-ভাষায় “মুসলমানি শব্দ” লেখা ছিল “অপসংস্কৃতি”; এখন দুয়েকটা “ইসলামি বুলি” না লেখা মানে হইতেছে “কালচারালি ডাইভারসিফাইড না”; মানে, একটা এসথেটিক্যাল clash এইখানে আছে। এইরকম, একেকটা টাইমে একটা রকমের এসথেটিক্যাল প্যাটার্নই থাকে – এইরকম না; কিন্তু দুয়েকটা প্যাটার্নই ডমিনেট করে। (আর অবশ্যই চেইঞ্জও হইতে থাকে। অই ডিটেইল আলাপে যাইতে চাইতেছি না।… )

মানে, আমি এইটা খেয়াল করার জন্য বলতেছি যে, যে কোন জিনিসের ভাল্লাগার/খারাপ-লাগার সংজ্ঞা এবং বোধগুলা আছে; আমাদের ভাল্লাগা/খারাপ-লাগা এইসব ধারণার উপ্রেই অনেকবেশি ডিপেন্ডড। এই জায়গাগুলা খুব গোপনে বা আবছাভাবে কাজ করে বইলা, এইগুলা নাই – এইটা ভাবা’টা ঠিক হবে না আর কি। বরং অই জায়গাগুলার সাথে রিলেট করতে পারলে নিজেদের এসথেটিক্যাল পজিশন নিয়া আরেকটু ক্রিটিক্যাল হইতে পারবো আমরা।

এইটা জরুরি না যে, ক্রিটিক্যাল হইতেই হবে; কিন্তু ক্রিটিক্যাল হইতে পারাটা আমাদেরকে বেটার চয়েসের দিকে নিয়া যাইতে পারে। (আই গেইস সো…)

#########

(বউ) বললো যে, এইটা মারফতি গান, এইটা তুমি গাইবা এবং রেকর্ড করার চেষ্টা করবা।” – আবদুল আলীম (১৯৭০/৭২?)
……

অনেকে আমারে দোষ দেন বা এই ক্রেডিট দিতে চান যে, “করবা, খাইবা, বলবা…” এইগুলা আমরা জোর কইরা ঢুকাইতে চাইতেছি বাংলা-ভাষায়; কিন্তু দেখেন, এইটা “আঞ্চলিক ভাষা” না; এইটা বাংলাদেশের ভাষা হিসাবে মানুশের কথার ভিতরে বহুদিন থিকাই চালু আছে। অনেকে লেখতে শরম পান। নিজের বুলি নিয়া আমার লজ্জা-শরম নাই। ডিফরেন্স এইটুকই।

#########

ট্রুথ কোন প্যারাডক্সিক্যাল জিনিস না; কিন্তু ট্রুথরে প্যারাডক্স বা মিস্টিক বানায়া রাখাটা যেই প্লেজারটা দেয়; সেই ট্রাপ থিকা বাইর হওয়াটা বেশিরভাগ সময়ই টাফ হওয়ার কথা…

Leave a Reply