নোটস: অগাস্ট, ২০২৩

অগাস্ট ০১, ২০২৩

উপমা দিয়া কথা বলার সবচে ঝামেলার জিনিস হইতেছে যে, উপমাটাই যে বস্তু বা ঘটনা না, সেইটাতে গিয়া কথাটা আটকায়া যায় বেশিরভাগ সময়; মানে, কনসার্নটা হয়া উঠে উপমা’টা ঠিকাছে কি ঠিক-নাই – অই জায়গাটা; কি কথা বলছেন, সেইটা আর থাকে না। যেমন ধরেন কইলেন, “পৃথিবী কমলালেবুর মতো”; কিন্তু পৃথিবী তো কমলালেবুর মতো না পুরাপুরি! দুইপাশ যে চেপ্টা, সেইটা তো একুরেট না! বা পৃথিবীর সারফেইস তো কমলালেবুর মতো স্মুথ না! এই-সেই… মানে, আপনি যে রাউন্ড-শেইপের একটা কিছু মিন করতে চাইতেছিলেন, সেইটা যেন এজ ইট ইজ বা হুবহু সেইটাই হওয়া লাগবে! 🙁

এইরকমের একটা রিস্ক সবসময়ই থাকে। তো, অই রিস্কটা মাথায় রাইখাই একটা কথা বলতে চাইতেছি। কথাটা জামায়াতে ইসলামি নিয়া। নয়া বাকশাল (আওমি-লিগ এবং সিপিবি-মার্কা বামদলগুলা) এবং তার পালা-কুত্তারা জামায়াতে ইসলামি-রে নিয়া কেন এতো কনসার্নড থাকে, কোনকিছু হইলেই কেন জামাত-জুজু নিয়া ঝাপায়া পড়ে? এইটারে বুঝতে পারবেন একটা উপমার ভিতর দিয়া।

হিটলার তো ইহুদিদেরকে দেখতে পারতো না, হাজার হাজার ইহুদি হত্যা করছিল; কিন্তু শুধুমাত্র ইহুদিদেরকে খুন করার লাইগা কি সে সেকেন্ড ওয়ার্ল্ড-ওয়ার বাঁধাইছিল? এইটা অবশ্যই একটা ওয়ান অফ দ্য এজেন্ডা ছিল তার, কিন্তু এর লাইগা তার ইউরোপ আক্রমণ করার দরকার ছিল না। এমনকি ইহুদিরা নির্যাতিত হইছিল বইলাই কোন বুঝদার মানুশ এখনকার ইসরাইল-রে তো সার্পোট করতে পারে না!

তো, নয়া বাকশালিরা জামায়েত ইসলামি-রে ইহুদিদের মতো ইউজ করতেছে এখনকার বাংলাদেশে। তাদের নেতা-কর্মিদেরদের খুন করছে, গুম করছে, এখনো সোশালি আউটকাস্ট করার ট্রাই কইরা যাইতেছে। নাৎসি জার্মানিতে যেইরকম কাউরে ইহুদি বইলা প্রমাণ করা গেলেই জেলে ভইরা ফেলা যাইতো, আজকে বাংলাদেশে কাউরে জামাত-শিবির নাম দিতে পারলেই জেল-হাজতে ঢুকায়া দেয়া যায়।
(এই ভিক্টিমাইজেশনের সবচে বড় দায় পিআলো এবং ডিস্টারের…) বুয়েটের আবির-কেও খুন করা হইছিল একই কায়দায়।

সেকেন্ড ঘটনা হইতেছে, জামায়াতে ইসলামি’র টুটি চাইপা ধইরা রাখছে নয়া বাকশাল; গত দুই টার্মের জাতীয় পার্টির মতো। জামাত-রে যেমনে নাচায় অমনেই নাচবে; যার ফলে জামাত-রে দিয়া “প্রধান বিরোধীদল” বানানোর পায়তারা অরা করবে। জাতীয় পার্টি, জাসদ, সিপিবি-রে দিয়া আর হবে না, উনাদের যৌবন শেষ, উনাদের খেমটা নাচ পাবলিক আর খাবে না! এই কারণে জামাত-রে মঞ্চে নিয়া আসার সব্বোর্চ ট্রাই বাকশালিরা কইরা যাবে।

থার্ড এবং ইম্পর্টেন্ট ঘটনা হইতেছে, এই অবৈধ-সরকার সবসময় দুইটা বড়ি বেচার ট্রাই করবে – একটা হইতেছে ইসলাম, আরেকটা হইতেছে নারীবাদ। মানে, এইগুলা কোন ইস্যু-না না, বরং এইগুলা ইস্যু হিসাবে অনেক একসাইটিং, এনগেইজিং এবং সবচে জরুরি ব্যাপার হইতেছে এইগুলা নিয়া আলাপ করলে জুলুমের জায়গাটা নিয়া কোন কোশ্চেন না করলেও হয়। যার ফলে, ইসলাম ভার্সেস সেকুলার এবং জামায়েতে ইসলামি সবসময় বাকশালি নিউজ-মিডিয়ার এবং সোশাল-বটদের প্রায়োরিটি লিস্টে থাকতে থাকবে।

জামাত-শিবির যদি টপিক হিসাবে সেন্টার-পয়েন্টে থাকে, তাইলে ইলেকশন ও ডেমোক্রেসির আলাপটারে একটু সাইড-লাইনে ঠেইলা দেয়াটা সহজ হয়, আলাপটারে কিছুটা হইলেও ডিবেটেবল কইরা তোলা যায় তখন। মোটাদাগে, এখনকার পলিটিকাল কনটেক্সটে জামাত-শিবির নিয়া আলাপ করার এইটাই সবচে বড় সিগনিফিকেন্স। এর বাইরে, বাদবাকি আরো অনেক আলাপ তো আছেই।

 

অগাস্ট ০২, ২০২৩

বিএনপি’র আন্দোলনের কারণে যদি এই অবৈধ আওমি-বাকশালি রিজিমের পতন হয়, অরা আসলে বাঁইচাই যাবে একভাবে। কারণ এই রিজিমের পতন যতটা না পলিটিকাল কারণে তার চাইতে ইকনোমিকাল কারণে হবে আসলে। পলিটিকাল পাওয়ারে যারাই থাকুক কোন মিরাকল না ঘটলে আগামী বছর দেশ-রে দেউলিয়া ঘোষণা করা লাগবে। যেই পরিমাণ লোন নেয়া হইছে দেশের মানুশের উপরে ভ্যাট-ট্যাক্সের বোঝা চাপাইয়াও তার কিস্তি শোধ করা পসিবল হবে না।

এখন গোয়েবলস মিডিয়ার কারণে মনে হইতে পারে যে, মানুশরে যা বুঝাবে তা-ই বুঝবে! কিন্তু ভুয়া ডেটা দিয়া তো পেট ভরবে না মানুশের। এবং মানুশ মইরা গেলে কোনদিন এর এগেনেস্টে দাঁড়াবে না – এই এজাম্পশনও কাজ করবে না; এই বয়েলিং ওয়াটার যখন আরো গরম হয়া উঠবে না চিল্লায়া কোন উপায় থাকবে না মানুশের। আর টাকা-পয়সাঅলা সরকারি-আমলা, বাকশালি-নেতারাই পলাবে সবচে আগে।

তো, বিএনপি’র আন্দোলনের কারণে পলাইতেছে বা ক্ষমতা ছাইড়া দিতেছে – এইটা আসলে তাদের জন্য শেষ সেইফ এগজিট। মানে, এখনকার কনটেক্সটে এইরকম চিন্তাটাই নরমাল অনেকটা। কিন্তু মানুশের কাছে মাফ চাওয়ার মতো কলিজা তাদের নাই। যার ফলে খুব বাজে-পরিণতিই তাদের হবে। সব জালিমের যেইরকম হয়। সেইটা যত স্যাড-ই হোক! এইটা যে তাদের লাস্ট চান্স ক্ষমতার দম্ভে এইটা তারা বুঝতে পারবে – এই চান্স খুবই কম। মানে, হইলে সেইটা আরো আগেই হইতো। যা-ই হোক…

 

অগাস্ট ০৩, ২০২৩

আগে তো খালি ভিক্ষুকরা ভিক্ষা করতো, এখন রিকশাঅলারাও নিয়মিত ভিক্ষা চায়! গতকালকে ৩টা রিকশায় উঠলাম, ভাড়া দেয়ার পরে ২জনই ‘সাহায্য’ চাইলো! মানে, কিছুদিন আগেও রিকুয়েস্ট করতো, জমা বাড়ছে, ভাড়া বাড়ায়া দেন! এখন ১০টাকা ভাড়া বাড়ানো পরেও চলতেছে না আসলে। যার ফলে, ‘সাহায্য’ চান এখন – চিকিৎসার জন্য, ধার-দেনা শোধ করার জন্য।

তো, এইগুলা কিছুটা সত্যিও আসলে। এইরকম এক্সাম্পল আমি পাইছি ছোট-খাট বিজনেস যারা করতেন, তারা লস-টস দিয়া ঢাকায় চইলা আসছেন, রিকশা চালান, সিএনজি চালান। তবে মেডিকেল-রিজনটা ইন্টারেস্টিং। এখন যারা ভিক্ষা করেন, তাদের ‘সাহায্য’ চাওয়ার কারণ দুইটা – এক, কিছু খাবার কিনে দেন; আর দুই হইতেছে চিকিৎসার খরচ দেন কিছু। আগের দিনে ‘মেয়ের বিয়া’র জন্য টাকা চাইতো, কিন্তু এই কারণ শুনলে মিডল-ক্লাস লোকজন চেইতা যায়; ভিক্ষা বা সাহায্য দিতে চায় না আর। লেখাপড়ার কথা কইলেও একটু সন্দেহের চোখে দেখে। কিন্তু মেডিকেল গ্রাউন্ডটা সেইফ, আমরা সবাই কাছের কোন মানুশরে কোন না কোন অসুখে-বিসুখে মইরা যাইতে দেখছি; যার ফলে ইস্যুটার লগে কানেক্ট করতে পারি বেশি। এমনকি খাওয়া-দাওয়ার চাইতেও; কারণ যারা ভিক্ষা বা সাহায্য দিবেন তাদের কোনদিন খাওয়ার কষ্ট ফেইস করার কথা না, আর যে এইটা এক্সপেরিয়েন্স না করছে, সেইটা ফিল করতে পারবে না এতোটা। এই কারণে, খাওয়ার রিজন’টা ওয়াইডলি ইউজ হইলেও সাকসেস-রেট কমই হওয়ার কথা।

তবে সমাজে যার ফরচুনেট, যাদের কাছে টাকা-পয়সা আছে, তাদের টাকা-পয়সাতে গরিবের হক আছে। যেই কারণে, যাদের উপায় আছে তাদের অন্যদেরকে হেল্প করা উচিত। এইটা মোটামুটি সব সমাজেরই নিয়ম, এবং যেই সমাজে টাকা-পয়সা বা ক্ষমতাধর লোকজন তাদের চাইতে লোয়ার-ক্লাসের লোকজনরে বেশি হেল্প করে, কম ঘৃণার চোখে দেখে, সেইসব সমাজে সামাজিক-শান্তিও বেশি থাকার কথা। কিন্তু মিডল-ক্লাসের একচুয়াল ইনকাম তো কমতেছেই, যার ফলে ভিক্ষা বা সাহায্য করার পরিমাণও সমাজে কইমা আসতে থাকার কথা। আগে ১০ জনের কাছে ভিক্ষা চাইলে যদি ৪ জনে ভিক্ষা দিতো, এখন সেইটা ২ জনে নাইমা আসার কথা।

 

অগাস্ট ০৪, ২০২৩

‘গরিব’ মুসলমান এবং ‘লো-কাস্ট’-এর ধারণা

এইরকম একটা কথা আছে যে, এই দেশের মুসলমানরা অনেক গরিব ছিল; তাদের টাকা-পয়সা ছিল না। তো, এইটা পুরাপুরি সত্যি কথা না। এই স্টেটমেন্ট যেই জায়গা থিকা দেয়া হয় সেইখানে ধইরা নেয়া হইতেছে যে, যার কাছে টাকা-পয়সা আছে, সে হইতেছে ধনী-লোক! কিন্তু টাকা-পয়সা দিয়া কি করবেন আপনি, জমি-ই তো কিনবেন, নাকি! মানে, টাকা-পয়সা তো সবসময় ধনী হওয়ার মানদন্ড বা প্যারামিটার ছিল না।

গল্পকার শাহেদ আলী’র বাড়ি ছিল সুনামগঞ্জের হাওর এলাকায়, মধ্যনগর ইউনিয়নের স্কুলে উনি পড়তেন। উনার অটোবায়োগ্রাফিতে উনি বলতেছিলেন, (অই অঞ্চলে অই সময়ে, ১৯৩০-৪০) মুসলমানরা খালি চাষাবাস করতো, হিন্দুরা করতো বিজনেস। মুসলমানদের চাষাবাস কইরাই চলতো, তেমন কিছু কেনা লাগতো না! মানে, জমি-জিরাত থাকলেই তো হইছে! অই দিয়াই তো ভালো-ভাবে খাওয়া-পরা চলতো; যদি আপনি বিজনেস না করেন, টাকা-পয়সা দিয়া কি করবেন! কি কিনবেন তখনকার সময়ে!

মানে, আমি বলতে চাইতেছি মুসলমানদের টাকা-পয়সা ছিল না, এই প্যারামিটার দিয়া গরিব বলাটা কিছুটা অযৌক্তিক ঘটনাই! চাষবাস করার মতো জমি-জিরাত থাকাটাই মোটামুটি এখনকার সময়ের “মিডল-ক্লাস” লাইফের ঘটনা হইতে পারার কথা।

একই ভাবে, মুসলমান হওয়ার আগে এই দেশের মানুশ-জন লো-কাস্ট বা নিচু-বর্ণের হিন্দু ছিল – এইটাও শাস্ত্রের ঘটনা, প্রাকটিকাল লাইফের ঘটনা ছিল না, তখনকার সমাজে; মানে, ধরেন প্রি-মুসলিম পিরিয়ডে। কারণ তখন (বোথ বুড্ডিস্ট এবং হিন্দু পিরিয়ডে) ধর্ম ছিল রাজা-বাদশাদের ঘটনা; তাদের একটা ঐশ্বরিক, নৈতিক বা আধ্যাত্মিক লেজিটিমেসি লাগতো ক্ষমতার; যেইটা প্রোভাইড করতো হিন্দু-পুরোহিত ও বুড্ডিস্ট মঙ্ক’রা; যেই কারণে দেখবেন রাজা-বাদশাদের সার্পোট ছাড়া উনারা কখনোই টিইকা থাকতে পারেন নাই; ব্যাপারটা ভাইস-ভার্সা।

তো, হিন্দু-রাজার দেশে আপনি বুড্ডিস্ট হয়া তো থাকতে পারতেন না; একইভাবে রাজা বুড্ডিস্ট হইলে প্রজাদের প্রাইমারি ধর্মও সেইটা হওয়ার কথা, এর বাইরে ধর্ম হিসাবে ছিল স্থানীয় রিচুয়ালগুলা। মুসলিম শাসন আসার পরে বরং জায়গাগুলা ডিসপ্লেইসড হইতে শুরু করলো। রাজার ধর্মের বাইরেও প্রজাদের ধর্ম-পালনের জায়গাগুলা তৈরি হইতো শুরু করলো।

মানে, ধর্ম বিষয়ে আমার ধারণাটা এইরকম। তো, হিন্দু-ধর্মের কাস্ট-সিস্টেমে যারা পড়ে না, বাদবাকি যারা আছে বা নতুন কোন ধর্ম নিয়া থাকে, তারা সবাই-ই হইতেছে লো-কাস্ট! অ-জাত, কু-জাত! 🙂 কিন্তু অইটা যে হিন্দু শাস্ত্রের বিচার – এইটা নিয়া সজাগ হইতে পারলে নতুনভাবে জায়গাটারে দেখা পসিবল।

আমি বলতে চাইতেছি, এখনকার প্যারামিটার দিয়া যদি আগের অবস্থাগুলারে বিচার করতে থাকেন, ভুল হওয়ার কথা কিছুটা; এমনকি শাস্ত্র’রে যদি ‘শুদ্ধ’ ধইরা নেন, সেইটাও প্রবলেমেটিক এপ্রোচ হওয়ার কথা। আর ‘গরিব’ ও ‘লো-কাস্ট’ মুসলমান এই দুইটা ফ্যালাসির জাস্ট একটা উদাহারণ।

একটা একশনের পিছনে এটলিস্ট তিনটা স্টেপ আছে বা থাকে। এক হইলো – বুঝতে পারা, সেকেন্ড হইতেছে – বুঝতে পারার পরে জিনিসটারে মানতে পারা, থার্ড হইতেছে গিয়া – সেইটার বেসিসে স্ট্যান্ড নেয়া বা কাজ করা।

তো, আমরা, বাংলাদেশের মানুশ-জন এখন বুঝতে পারতেছি এই আওমি-বাকশালি শাসন কি জিনিস; কেমনে এরা দেশটারে লুইটা-পুইটা খাইছে! শাক দিয়া মাছ আর ঢাইকা রাখা যাইতেছে না। কেউ আর বলতে পারতেছেন না যে, বুঝি না!

কিন্তু এখনো কিছু কিছু লোক এইটারে মানতে পারতেছেন না! কিছু লোক এখনো মনে করতেছেন যে, বাটপারি বদমাইশি কইরা পা-চাইটা দিন পার করা যাবে। এই সংখ্যাটা দিন দিন কমতে থাকবে আরো, ইকনোমিক ক্রাইসিসটা যত স্পষ্ট হইতে থাকবে, না মানতে পারার কিছু আর থাকবে না তখন!

থার্ড হইতেছে, একশন নেয়ার ডিসিশানটা! এইটা এখনো ক্রুশিয়াল একটা পয়েন্ট। যে, যদি বিএনপি আসে, তাইলে কি হবে! স্পেশালি যারা চুপ থাইকা, টিটকারি কইরা, হাসাহাসির ভিতর দিয়া এই অবৈধ বাকশালি-সরকাররে লেজিটিমিসি দিতেছিলেন নানান ধরণের ‘তর্ক’ করার ভিতর দিয়া, তারা একশনের জায়গাটারে আটকাইতে চাইতেছেন এট এনি কস্ট!

মানুশ-জন বুঝতেছে, মানতে পারতেছে যে, দেশের অবস্থাটা খারাপ! কিন্তু পুরাপুরি রাস্তায় নাইমা আসাটা এখনো বাকি আছে। এই হেসিটেশনটা যত তাড়াতাড়ি দূর করা যাবে তত বেটার আসলে।

অগাস্ট ০৭, ২০২৩

অবিচুয়ারি: মোহাম্মদ রফিক

বাংলাদেশের খুব বেশি ‘বড় কবিদের’ সাথে আমার দেখা-সাক্ষাত হয় নাই; যেমন ধরেন, আল-মাহমুদ, শামসুর রাহমান… উনারা তো তখনো বাঁইচা ছিলেন যখন আমি ঢাকা শহরে আসি, থাকতে শুরু করি, কিন্তু উনাদের দেখা হওয়ার মতো জায়গাতে যাওয়া হয় নাই আমার। তো, মোহাম্মদ রফিকের সাথে আমার দেখা হইছিল। উনিও ‘বড় কবি’দের কাতারে ছিলেন একটা সময়। মানে, তখনকার সময়ে ‘বড় কবি’ একটা টার্ম হিসাবে কয়েন করা হইতো, যারা আসলে কম-বেশি একটা গ্রুপের লোকই ছিলেন। পত্রিকায় কবিতা ছাপাইলে যাদের লেখা শুরুতে থাকতো বা রাখা লাগতো, এইরকম।

তো, উনার সাথে দেখা হইছিল জাহাঙ্গীরনগর ভার্সিটিতে, উনার টিচার্স কোয়ার্টারের বাসায়। আমরা (আমিনুল বারী শুভ্র আর আমি) তখন স্কুল পাশ কইরা কলেজে উঠছি। আমি ঢাকা কলেজের সাউথ হলে থাকি। শুভ্র ঢাকায় আসার পরে আমরা সুমন ভাইয়ের (সুমন রহমান) কাছে গেলাম একদিন জাহাঙ্গীরনগরের বাসে কইরা, সালাম-বরকত হলে। তখন আমরা কবিতার দুনিয়ায় ঢুকে গেছি।

দুই-তিন দিন থাকলাম। দুপুর-বিকাল-রাতে অনেক হাঁটলাম। অনেক উইড ইনহেল করলাম। পিয়াল ভাই, রোকন ভাই, চঞ্চল ভাইয়ের গান শুনলাম। খায়ের ভাইয়ের পিঞ্চিং এনজয় করলাম। কণা-আপা’র সাথে দেখা হইলো। এইরকম ঘটনার মধ্যে দিয়া একদিন দুপুরে মোহাম্মদ রফিকের কোয়ার্টারেও গেলাম।

বিশাল গোঁফ ছিল উনার। মিটিমিটি হাসতেছিলেন আমাদেরকে দেইখা। কফিল ভাইয়ের কথা জিগাইলেন। কফিল ভাই তখন জাহাঙ্গীরনগরে ছিলেন না। সুমন ভাই’রে উনি হাসতে হাসতে বললেন, তুমি তো বাচ্চা-ছেলেদেরকে নষ্ট করে দিচ্ছো! আমরাও হাইসা দিলাম। বললাম, না, না, আমরা তো কলেজে পড়ি!

তো, মোহাম্মদ রফিক পিয়াল ভাইরে (মাহবুব পিয়াল) পছন্দ করতেন বেশি, আমরা টের পাইলাম। পরেও খেয়াল করছি পিয়াল ভাই-ই মোহাম্মদ রফিকের কবিতার জায়গাটারে এক্সপ্লোর করতে বেশি ইন্টারেস্টেড ছিলেন। সুমন ভাই উনার কবিসঙ্গ’টারেই বেশি নিছেন, কবিতার জায়গাটারে এতোটা না।

উনার বাসা থিকা বাইর হয়া আমরা শুনলাম যে, জাহাঙ্গীরনগরের সাহিত্য-সমাজে দুইটা গ্রুপ আছে; তবে সবাই মোটামুটি সেলিম-আল-দীনের গ্রুপেরই লোকজন; মোহাম্মদ রফিকের দলবল তেমন নাই, কয়েকজন পারসোনাল এডমায়ারার-ই আছেন। উনিও নিজের প্রেম-ট্রেম নিয়াই ব্যস্ত থাকেন বেশিরভাগ সময়। উনার ছেলেও তখন জাহাঙ্গীরনগরের টিচার ছিলেন।

মোহাম্মদ রফিকের কবিতা পরে পড়ছি আমি। ‘কপিলা’ নামে একটা দীর্ঘ-কবিতা ছিল উনার। উনি হিস্ট্রিরে মিথিকাল এক্সপ্লোরেশনের জায়গা হিসাবে দেখতে চাইছেন বইলা আমার মনে হইছে। কবিতা দিয়া অই জায়গাটারে কন্সট্রাক্ট করতে চাইছেন। ব্যাপারটা কিছুটা একসেপশনাল ঘটনা হইলেও কবিতার জায়গাতে একসাইটিং কোন জিনিস হইতে পারে নাই।

সেইটা যা-ই হোক, কবিতা লেইখা আর কয়জন কবি হইতে পারছে বাংলাদেশে! একটা সামাজিক সার্কেলের মেম্বার হওয়ার ভিতর দিয়া কবি হওয়ার ঘটনাটা বেশি ঘটে। অই সার্কেলে একটা সময়ে প্রমিনেন্ট ফিগার বা বড়-কবি হইলেও অনেকদিন আগেই উনি ব্লার/ঝাপসা একটা ফিগার হয়া উঠছিলেন। তার অনেকদিন পরে গতকালকে উনি মারা গেলেন।

আর কবি’র মারা যাওয়া তো তার কবিতার মারা যাওয়া না; অনেক সময় অনেক আগেই কবিতা মারা যায়, অনেক সময় তারও অনেকদিন পর; আর সবসময় বাঁইচা উঠার একটা সম্ভাবনার মধ্যে তো থাকেই।

 

অগাস্ট ১০, ২০২৩
পলিটিকাল কলাপ্সের আগেই বাংলাদেশে ইকনোমিক কলাপ্সের ঘটনাটা ঘটবে সম্ভবত।

এই নয়া বাকশালের অবৈধ-শাসন যদি শেষ হয়ও, এর ঘানি বাংলাদেশের মানুশ-জনরে আরো অনেকদিনই টানতে হবে। আর যদি এই অবৈধ শাসন কোন না কোনভাবে কন্টিনিউ হইতে থাকে, তাইলে এই ইকনোমিক কল্পাস আরো দীর্ঘমেয়াদি একটা ইকনোমিক রিয়ালিটি হিসাবে থাকতে থাকার কথা; আরো ডিপ-ই হইতে থাকবে আসলে।

এখন এইভাবে তো ভবিষ্যতদ্বাণী করা যায় না যে, এইটা এইটা হবেই; কিন্তু ঘটনাগুলা অইদিকেই আগাইতেছে যেইটারে অল্টার করাটা টাফ; এখন হাজার ট্রাই করলেও যেই ডেমেজগুলা করা হইছে সেইগুলাতে মলম লাগানো পসিবল না। দেশের ইকনোমিক অবস্থা যে খুবই খারাপ – এইটা ডেটা দিয়া বুঝা লাগে না। (এমনকি ডেটা-ফেটা তো ভুয়াই সবগুলা।) এবং এইটা খারাপ হইছে অবৈধ পলিটিকাল শাসনের কারণে। যতদিন এই অবৈধ গর্ভমেন্ট আছে, ইকনোমিক সিচুয়েশন ভালো হওয়ার কোন কারণ আসলে নাই। বরং অবস্থাটা অই জায়গাটাতেই পৌঁছাইছে যে, পলিটিকাল রিজিম চেইঞ্জ হইলেও ইকনোমিক ডিজাস্টারগুলা ইনএভিটেবল। “উন্নয়ন”-ই আসলে হয়া উঠবে নয়া বাকশালের পতনের কারণ।

 

অগাস্ট ১২, ২০২৩
বাংলাদেশে সাইবার এটাক বা নানান সরকারি-বেসরকারি কোম্পানির ওয়েবসাইটের ডেটা যে হ্যাক হওয়ার সম্ভাবনা নাই – তা না, বরং এই আওমি-বাকশালি গর্ভমেন্টের লোকজনই এই কাজ করাইতে পারে বইলা আমি সন্দেহ করি।

কারণ ডেটা যদি হ্যাক করা যায়, তাইলে মুইছা ফেলাও যাবে; বা অল্টার করা যাবে; এমনকি লুটপাটের দোষ হ্যাকারদের কান্ধেও চাপায়া দেয়া যাবে। পলিটিকাল ওয়ে-তে এই অবৈধ গর্ভমেন্ট ক্ষমতায় আসে নাই, আসছে কন্সপিরেসির ভিতর দিয়া, সুতরাং তারা নানান ধরণের কন্সপিরেসির-ই ট্রাই করবে। হ্যাকিং-গ্রুপদেরকে লেলায়া দেয়া, এমনকি ওয়েলকাম করাও এর একটা পার্ট হইতে পারে।

ফ্রি-ফেয়ার ইলেকশন না দিতে হইলে যে কোন একটা ন্যাশনাল এমার্জেন্সি লাগবে। আর এই সব ডেটাবেইজের সিকিউরিটি যারা মেইনটেইন করতেছেন, তাদেরই একটা ইচ্ছা থাকার কথা এইগুলা হ্যাক হয়া যাক! এখন নিজেরা তো এইটা করতে পারবেন না! যার ফলে ভাড়া করা লোক লাগবে।

এখন এইটাই তারা করতেছে – এইটা আমার কথা না, কিন্তু এইটা করার পিছনে যে পলিটিকাল মোটিভেশন আছে বা থাকতে পারে, অই জায়গাটার কথাই আমি বলতেছি। কারণ এইরকম ঘটনা ঘটলে এর থিকা সবচে বেশি বেনিফিটেড হবে আওমি-বাকশালি ডাকাত-বাহিনীই। আর মিডিয়ার কুত্তাদেরকে তারা লেলায়া দিতে পারবে, ভুয়া ইনফরমেশন ছড়ায়া দেয়ার কাজে। যেমনে বাংলাদেশের ব্যাংকে রিজার্ভের নাম্বার নিয়া ভুয়ামিগুলা করতে থাকে।

একটা জোকস আছে না এইরকম যে, এক ব্যাংক ম্যানেজার আগে থিকা জানলো যে তার ব্যাংক ডাকাতি হবে; তখন সে ডাকাতি না ঠেকায়া নিজেই টাকা-পয়সা সরায়া ফেললো! এইরকম হ্যাকার’রা কিছু না পাইলেও হ্যাকারদের নাম দিয়া আওমি-বাকশালি গং ক্ষমতা ছাড়ার আগে অনেক ইনফো সরায়া ফেলার কথা। মানে, এইরকম সন্দেহ করতে পারাটা আমাদের জন্য খুব একটা ইলজিকাল ঘটনা হবে না।

 

অগাস্ট ১৫, ২০২৩
১.
স্পিডব্রেকার
[পয়লা কথা হইতেছে কোটেশন’টা একটু সাবধানে পড়বেন! এইটা আমার কথা তো না-ই, এমনকি আমি কোনকিছু ‘প্রমাণ’ করার জন্য এই মেনশন করতেছি না। কিন্তু এই জিনিসটা তো ঘটছে, বা আছে; এই জায়গাটারেই হাইলাইট করতে চাইতেছি।]

২.
কোটেশন
“(১৯৪৯ সালের ১১ই অক্টোবর, ঢাকার আমানিটোলায়) আমি বক্তৃতা করতে উঠে যা বলার বলে জনগণকে একটা প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করলাম, “যদি কোন লোককে কেউ হত্যা করে, তার বিচার কি হবে?” জনগণ উত্তর দিল, “ফাঁসি হবে।” আমি আবার প্রশ্ন করলাম, “যারা হাজার হাজার লোকের মৃত্যুর কারণ, তাদের কি হবে?” জনগণ উত্তর দিল, “তাদেরও ফাঁসি হওয়া উচিত।” আমি বললাম, “না, তাদের গুলি করে হত্যা করা উচিত।” কথাগুলি আজও আমার পরিষ্কার মনে আছে।” (পেইজ ১৩২)
/অসমাপ্ত আত্মজীবনী, শেখ মুজিবুর রহমান

৩.
পোস্ট-স্ক্রিপ্ট
এখন দেখেন, ঘটনা এইটা না যে, শেখ মুজিবুর রহমান আগে থিকা সত্যি-কথা জানতেন, বা উনি যা বলছেন, তার একটা পার্ট তার নিজের জীবনের ব্যাপারে সত্য হয়া উঠছে – এইরকম ভবিষ্যদ্বাণীর কোন ঘটনা এইখানে নাই।
এমনকি উমবের্তো একো যেইটা কইছিলেন যে, একজন রাইটার (বা ব্যক্তিও ধরতে পারেন এইক্ষেত্রে) যা লেখেন (বা বলেন) বা লেইখা যা বুঝাইতে চান, আর শব্দগুলা যা বলে বা রিডার যা পড়ে, তার বাইরেও ভাষা এবং শব্দের একটা হিস্ট্রি আছে যেইখানে আলাদা একটা রাস্তা তৈরি হয়। মানে, ‘চেতনা’ দিয়া এখন খুব সিরিয়াস একটা কিছু তো বুঝাইতে পারবেন না আপনি, বা ‘উন্নয়ন’ শব্দটা দিয়া; সরকারি প্রোপাগান্ডার ফলে এখনকার বাংলাদেশে এইরকম আরো নানান রকম শব্দের একটা হিস্ট্রিকাল এবং কনটেক্সচুয়াল মিনিং তৈরি হয়া গেছে।… তো, এইখানে এইরকম ভাষা ও শব্দের আলাদা একটা পথ তৈরি হয় নাই, কোটেশনটাতে।
বরং এইখানে পরের সময়ের ঘটনা, আগেকার সময়ের একটা ছোট্ট, আন-ইম্পর্টেন্ট ঘটনারে নতুন একটা জায়গা থিকা দেখার/পড়ার একটা স্কোপ কইরা দিছে। এবং হিস্ট্রি’তে সবসময় এইরকমের ঘটনা ঘটতে থাকে। মানে, পরের ঘটনাগুলা আগের ঘটনাগুলারে রিলেট করতে থাকে। নতুন একজন রাইটার আইসা আগের সময়ের একজন রাইটার’রে রিলিভেন্ট কইরা তুলেন নতুনভাবে। বা, পলিটিকাল জায়গা থিকা যদি দেখেন, যদি শেখ মুজিবুর রহমানের মরণ’টা এইরকম না হইতো, এই কথার তো রিলিভেন্স-ই থাকতো না। জাস্ট একটা ভাষণ! তো, এইভাবেও দেখতে পারেন যে, ঘটনা’টা অইরকমই ছিল।
 

অগাস্ট ১৬, ২০২৩

মিলিটারি ক্যু

১৯৭৫ সালে একটা মিলিটারি ক্যু আসলে আওমি-লিগরে বাঁচায়া দিছিল, যেইভাবে বাকশাল তৈরি করার ভিতর দিয়া এই পলিটিকাল দল’টা সুইসাইড করছিল।

এই কারণে, তারা এখনো মনে করে যে, তাদের লাস্ট চান্স আসলে একটা মিলিটারি ক্যু-ই হইতে পারে; যা তাদেরকে পলিটিকালি রিভাইব করতে হেল্প করবে; আবারো বাংলাদেশের পিপলের কাছে গিয়া নাকি-কান্দা কাইন্দা মাফ চাইতে পারবে! কিন্তু এইটার কোন চান্স আমি দেখি না। যদিও অনেকে, ইনক্লুডিং ইন্ডিয়া অই জায়গাগুলারে উসকায়া দিতে চাইবে।

কিন্তু বাংলাদেশের মিলিটারি পাকিস্তানি মিলিটারি না। এই কথার মানে হইতেছে, বাংলাদেশে পাকিস্তানের মতো দীর্ঘকাল সামরিক-শাসনের ইতিহাস নাই; ইভেন বাংলাদেশ স্বাধীন হইছে সামরিক-শাসনের প্রতিবাদে, এবং ডেমোক্রেসির দাবিতে। ১৯৭১ সালে যুদ্ধের সময়েও বে-সামরিক গর্ভমেন্টের আন্ডারে মিলিটারি যুদ্ধ করছে। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্টের ক্যু’র পরে বে-সামরিক গর্ভমেন্ট ফর্ম করা হইছে, এবং অই গর্ভমেন্ট মিলিটারি’র মেজর’রা চালাইতেছিল বইলাই ৩রা নভেম্বরের পাল্টা ক্যু হইছিল, যদিও টিকতে পারে নাই; কিন্তু ৭ই নভেম্বরের সরকার অনেকদিন সাসটেইন করছিল কারণ সেইখানে পিপলের সার্পোট ছিল, “সিপাহি-জনতার অভ্যুত্থান” একটা প্রপাগান্ডা-টার্ম হিসাবে আমরা রিড করতে চাইলেও এর ভিতরে কোন ট্রুথ ছিল না – এইটা বললে সেইটা মিছা-কথাই হবে। এবং অই সময়টা থিকাই বাংলাদেশে লিবারাল-ডেমোক্রেসির শুরুটা পসিবল হইছিল। এরশাদের রিজিম কখনোই স্মুথ ছিল না, বাংলাদেশের মানুশ কখনোই তারে পুরাপুরি একসেপ্ট করে নাই, যদিও আওমি-লিগই ১৯৮৬ সালে তারে এক ধরণের বৈধতা দিছিল, কিন্তু তা-ও টিকাইতে পারে নাই। ২০০৭-এর ১/১১’র গর্ভমেন্টও টিইকা থাকতে পারে নাই। এখনো ‘সুশীল’ এবং পুরানা বাম-বিপ্লবী গং দেশে ডেমোক্রেটিক শাসনের বিপরীতে ‘বিপ্লবী-পণা’র নামে একটা মিলিটারি ক্যু’র অপশন সামনে নিয়া আসতে চাইতেছে। কারণ এইটা ছাড়া পালানোর আর কোন রাস্তা নাই। যেই মিলিটারি-আমলা-মিডিয়া’র হাত ধইরা নয়া বাকশালের শাসনের শুরু হইছিল, সেই রাস্তা দিয়াই তারা পালাইতে চাইতেছে এখন।

আমি বলতে চাইতেছি, বাংলাদেশের এখনকার পলিটিকাল কনটেক্সটে মিলিটারি ক্যু একটা অপশন না, বরং নয়া বাকশালের শেষ আশা। আরেকটা মিলিটারি-আমলা-মিডিয়া ক্যু’র কন্সপিরেসিরে সম্ভব কইরা তোলার চেষ্টার ভিতরে তাদের থাকতে থাকার কথা।

কিন্তু হিস্ট্রি সাক্ষী দেয়, বাংলাদেশের মানুশ মিলিটারি-শাসনরে কোনদিনই মাইনা নেয় নাই, এবং পলিটিকালি, ইকনোমিকালি এবং কালচারালি মিলিটারি-শাসন বাংলাদেশে অপশন হিসাবে এমার্জ করতে পারার কথা না।

পলিটিালি, রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশ কোনদিনই একটা বড়সড় মিলিটারি-পাওয়ার হওয়ার জন্য ইন্সপায়ারড ছিল না; পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধ এবং ইন্ডিয়ার আগ্রাসী বর্ডার-কিলিংয়ের পরেও, কারণ উইথ-আউট পিপলস পাওয়ার মিলিটারির পক্ষে টিইকা থাকা পসিবল না! যার ফলে পাকিস্তানে যেইরকম দেশের সব আশা একটা সিঙ্গেল ইন্সিটিটিউশন হিসাবে মিলিটারি’র উপরে হেন্ড-ওভার করা হইছে, একটা রাষ্ট্রিয় ইগো হিসাবে, সেইটা বাংলাদেশে রিভার্সই বরং অনেকটা। এমনকি ইন্ডিয়াতেও মিলিটারি যেইরকম একটা সেপারেট ফোর্স, লিবারাল ডেমোক্রেসি-তে, ‘অহিংস’ স্বাধীনতার কারণে, বাংলাদেশে এতোটা আলাদা ঘটনাও না; কিন্তু এই ইন্ট্রিগ্রেশনটা একটা বেলেন্স অফ পাওয়ারের ভিতর দিয়াই এফেক্টিভ থাকে; বরং পিপলস পাওয়ার বইলা যেই ইন্সিটিটিউশনগুলা – আমলা-পুলিশ, বিচার-বিভাগ, মিডিয়া তারা-ই মিলিটারি’রে একটা পলিটিকাল পাওয়ার হিসাবে ইনক্লুড করতে বেশি ইন্টারেস্টেড। কিন্তু তারা আসলে বাংলাদেশে সত্যিকারভাবে মিনিমাম সেন্সেও পিপলস রিপ্রেজেন্টেটিভ না।

ইকনোমিকালি, বাংলাদেশের মিলিটারি ইকনোমিকালি বরং অনেক বেশি ইউএন-বেইজড মিশনগুলার উপরে বেশি ডিপেন্ডেড। বাংলাদেশের বাজেটে ‘সামরিক-ব্যয়’ যতই বাড়তে থাকুক, ‘উন্নয়ন-প্রকল্পে’ যতই এনগেইজমেন্ট বাড়ুক, তাদেরকে আমলা-শ্রেণির দিকেই মুখ কইরা থাকতে হয়। সেইটা ইন্ডিপেন্ডেড ইন্সিটিটিউশন হিসাবে কখনোই প্রাউড ফিল করার মতো ঘটনা না। এমনকি তাদের যেই কোর জায়গা সেইখান থিকা সইরা যাওয়ারও ঘটনা। এখন মনে হইতে পারে যে, পলিটিকাল পাওয়ারের জায়গাটা দখল করলে সেইখানে ইকনোমিক জায়গাটা এনশিওরড হইতে পারে; কিন্তু এতে কইরা পলিটিকালি বরং হিতে-বিপরীত হওয়ার চান্স-ই বেশি। মানে, এখন সব দোষ যেইরকম একটা অবৈধ-সরকারের ঘাড়ে চাপায়া দেয়া যাইতেছে, তখন অইটারে ফেইস করা লাগবে, যা একটা পলিটিকাল দুশমনিরে আন-এভয়েডেবল কইরা ইকনোমিক গেইনের রাস্তাটারে আরো রিস্কি কইরা তুলবে।

কালচারালিও যদি দেখেন, বাংলাদেশের মিলিটারির ইতিহাসও ‘বঞ্চণা ও লাঞ্চণা’রই ইতিহাস; ব্রিটিশ ইন্ডিয়াতে কখনোই ‘গৌরবোজ্জ্বল’ অবস্থা ছিল না, পাকিস্তান আমলে তো আরো বাজে-অবস্থাতেই পড়তে হইছিল; এমনকি আমি মনে করি মিলিটারি-তে যেই ডিভাইডেশনটা ছিল, সেইটা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধরে আরো মাস্ট কইরা তুলছিল। মানে, বাংলাদেশে মিলিটারি’র যেই প্রাইড সেইটা বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্মের সাথে খুবই ক্লোজলি রিলিটেড। পাকিস্তানের প্রদেশ হিসাবে যেই অবস্থা ছিল না, প্রো-ইন্ডিয়ান ফোর্স হওয়ার ভিতর দিয়া অই বাজে-অবস্থাটাতেই ফিরা যাওয়া হবে আবার।

মানে, এইখানে তো যুক্তি-তথ্য দিয়া প্রমাণ করার কিছু নাই। কিন্তু আমি যেইটা বলতে চাইতেছি, একটা এন্টি-পিপল পজিশনের বাইরে গিয়া বাংলাদেশের এখনকার পলিটিকাল কনটেক্সটে কোন মিলিটারি ক্যু’র ঘটনা ঘটতে পারে না। আর যদি সেইটা ঘটেও, সেইটা ইন্সিটিটিউশন হিসাবে মিলিটারি’র জন্য বাজে ঘটনাই হবে আরেকটা।

 

অগাস্ট ১৮, ২০২৩

অবৈধ সরকারের পঞ্জি-স্কিম হইতেছে এই ইউনিভার্সাল পেনশন স্কিম! কারণ লোন আর নেয়া যাইতেছে না, টাকা আর ছাপানো যাইতেছে না, গলা পর্যন্ত ভ্যাট ট্যাক্স বসায়াও সরকারি-আমলাদের বেতন ও বাকশালের লোকজনের লুটপাটের বেবস্থা করা পসিবল না। এই কারণে বে-সরকারি চাকরিজীবীদের পকেট থিকা ডাইরেক্ট টাকা নিয়া নিতে হবে।
আপনি মনে করতেছেন – এইখানে টাকা জমা না দিলেই তো হইলো! তো, এই অপশন কি আপনার আছে বইলা আপনি মনে করেন? বা থাকবে? ভোট না দিলেও যেমনে আপনার ভোট দেয়া হয়া যায়, একইরকম ভাবে আপনার টাকাও এই স্কিমে চইলা যাবে। ধরেন, বাংলাদেশ ব্যাংক’রে দিয়া একটা সার্কুলার দেয়াইলেই তো সব ব্যাংক এমপ্লয়িদের বেতন থিকা অটোমেটিকালি টাকা কাটা শুরু হয়া যাবে। তারপরে বিজিএমইএ, চেম্বার অব কমার্স, নানান ধরণের জায়গাগুলাতে নিজেদের লোক বসায়া লাভ’টা কি! অরা কি একটা “আইন” বানাইতে পারবে না নিজেদের জন্য? তা নাইলে সংসদ থিকাই আইন পাশ করানো লাগলে, সেইটাই করা হবে!
মানে, এই পঞ্জি-স্কিমের মাধ্যমে পিপলের টাকা মাইরা না খাইলে আর ইকোনমি চালানো যাবে না। এবং এইটা জোর কইরাই করানো হবে। যে কোনভাবেই হোক! আর ডিস্টারের মতন গোয়েবলসদের দিয়া সেইটারে জাস্টিফাই করানো হবে!
২.
এখন এক ধরণের ‘বুদ্দিজীবী’ বাজারে দেখা যাবে, যারা বলবে যে, সরকারি-লোকজনই তাদের পেনশনের টাকা তুলতে পারে না, বে-সরকারি লোকজন কি পারবে? 🙂
মানে, আলাপ’টারে তখন অন্য একটা গ্রাউন্ডে নিয়া যাওয়া হবে। নিউজপেপারে, টিভি’তে নিউজে নিউজে সয়লাব হয়া যাবে, কে কতো টাকা পাইছে, এই স্কিম কতো ভালো, এই সেই… (একটা বাজে-তর্ক কতো ধরণের কাজে লাগে, দেখেন!)
যে কোন জুয়ার বোর্ডেই যেইরকম হয়; শুরুতে কিছু রিটার্ন দিয়া দেয়া হবে; ধরেন, ২০ টাকা খরচ করা হবে, তারপরে ২০ হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়া যাবে!
আর এইটাতে ক্যাসিনো-সুন্দরী হিসাবে কাজ করতেছে এবং করবে ডিস্টার-মার্কা গোয়েবলসগুলি।
৩.
এইটা বেশ ইন্টারেস্টিং ঘটনাই; নয়া বাকশালের অনেক লোকই মেবি জুয়ারি। এখন কেউ পারসোনালি জুয়ারি হইলে কারো তো কোন সমস্যা নাই, নিজের টাকা নিজে উড়াইতেছে। কিন্তু যখন আপনার-আমার পকেটের টাকা নিয়া যাইতেছে, এবং দিতে বাধ্য করতেছে, সেইটা একটা বড় ধরণের ক্রাইম আসলে।

 

অগাস্ট ২১, ২০২৩

১৯৪৭ সালে যেইটা ছিল অনন্দ বজর, ১৯৭১ সালে যেইটা ছিল দৈনিক পাকিস্তান ১৯৯১ সালে যেইটা ছিল দৈনিক বাংলা, এখন ২০২৩ সালে সেইটা হইতেছে পিআলো আর ডিস্টার। মানে, এইগুলা সরকারি-পত্রিকা। এই বুঝ’টা না থাকা একটা ‘না-জানা’ ‘না-বুঝতে-পারা’ বা ‘ভুল’ না, এইটা একটা পলিটিকাল পজিশন নিতে পারার-ই ঘটনা। এরা ট্রাশ নিউজ ছাপায় না, ট্রাশ হইতেছে এদের পলিটিকাল পজিশনটা।

আর যদি টিভি-চ্যানেলগুলা কথা বলেন, অইগুলা তো পুরান আমলের গোয়েবলস; সিরিয়াস রকমের ক্রাইম করে এরা নিউজ ও প্রোগ্রামের মাধ্যমে; এবং কিছু প্রো এবং এন্টি বাকশালি-পিপলের রেফারেন্সের ভিতর দিয়াই এরা ভিজিবল থাকে। মানে, নিজে এইগুলা দেখি না অনেক বছর ধইরা – এইটা তো আছেই, আমি আমার আশে-পাশে এইরকম মানুশ খুবই দেখি যারা “টিভি দেখেন”; বরং ফেইসবুকে বা ইউটিউবে কোন ক্লিপ দেখছেন, আর এইটা দেখতেছেন কোন প্রো বা এন্ট্রি বাকশালি কারো থ্রু’তেই। পত্রিকাতে “মানবজমিন” থাকলেও টিভি-চ্যানেলে এইরকম কিছুও নাই, এমনকি থাকাটা পসিবল বইলা মনেহয় আমার কাছে। এইগুলা রেফারেন্স হিসাবে টিইকা আছে এক ধরণের “বির্তকিত” হওয়া বা “একসাইটমেন্ট” তৈরি করার ভিতর দিয়া, যেন এই মুর্হূতেই ওয়ার শুরু হয়া যাইতেছে কোথাও! কিন্তু একটুর জন্য মিস হয়া যাইতেছে আবার! মানে, এর বাইরে এদের তেমন কোন ফাংশনালিটি আর নাই।

আমি বলতে চাইতেছি, এখনকার ওয়ার্ল্ডের কনটেক্সটে এরা মারা যাইতেছে না, মিডিয়াম হিসাবে অবসুলেট হয়া উঠতেছে বা মারা যাইতেছে না (এইটা তো আছেই); এরা সুইসাইড করতেছে এদের পলিটিকাল পজিশনের ভিতর দিয়া, এদের ফাংশনালিটিরে, প্রো-পিপল পজিশন হিসাবে আর এক্টিভ না থাকতে পারার ভিতর দিয়া। এবং অডিয়েন্স হিসাবে যদি আমরা এই জিনিসগুলারে কনজিউম করতে থাকি ভুল একটা রিয়ালিটিতে গিয়াই ল্যান্ড করবো, যেইটার সাথে আমাদের আশে-পাশের ঘটনাগুলার কোন রিলিভেন্স আমরা খুঁইজা পাবো না। মানে, রিয়ালিটি ব্যাপার উইয়ার্ড এবং সুরিয়াল না, বরং রিয়ালিটি কন্সট্রাকশনের উইপেনগুলা ডিজ-ফাংশনাল হয়া গেছে আসলে, স্পেশালি বাংলাদেশে। সরকারি-মিডিয়ার রিয়ালিটি কখনোই দেশের মানুশের রিয়ালিটি হইতে পারে না, কখনো আসলে ছিলও না।

###

ইতিহাসের ভুল অথবা ড্রিম

কোন কিছুই তো হঠাৎ কইরা ঘটে না হিস্ট্রিতে; কিন্তু তাই বইলা আবার কোন লিনিয়ার লাইনও না যে, এই কারণে এইটা ঘটছে, অই কারণে অইটা ঘটছে! বরং বেশিরভাগ সময়ই জিগজ্যাগ পাজলের মতন; ঘুইরা-ফিরা আইসা অনেক পুরান একটা জিনিস নতুন কইরা আইসা রিলিভেন্ট হয়া পড়ে, আরেকটা কিছুরে জাগায়া তোলে, বা একটা ঘটনার ঘটনা হয়া উঠতে আসলে সময় লাগে, হুট কইরা এইটা ঘটে না, মোটামুটি কোন সময়েই।

এইটা মনে হইতেছিল আসলে মাওলানা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর এগেনেস্টে একটা “বিচার” তো হইছিল ১৯৯৩ সালে, জাহানার ইমামের “মুচেবা ও “ঘাদানিক” ( মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ও ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি) এর “গণ আদালাত”-এ। (ইন ফ্যাক্ট ২০১৩ সালের “শাহবাগ”-এর একটা মেজর ইন্সপারেশন তো ছিল অই ঘটনা।)

১৯৯১ সালের শেষের দিকে গোলাম আযম-কে জামাতে ইসলামী’র আমীর ঘোষণা করার পরে ১৯৯২’র জানুয়ারিতে এই কমিটি তৈরি করা হয়; যারা ১৯৯২ সালের ২৬শে মার্চ গোলাম আযমের ফাঁসির রায় দেয়, এবং ১৯৯৩ সালে আরো কয়েকজনের এগেনেস্টে “প্রতিবেদন” দেয়, যেইখানে দেলোয়ার হোসেন সাঈদী’র নামও ছিল। ১৯৯৪ সালে জাহানারা ইমাম ক্যান্সারে মারা গেল, এবং তার চাইতে জরুরি হইতেছে ১৯৯৬ সালের ইলেকশনে জামায়েতে ইসলামী আওমি-লিগের লগে পলিটিকাল এলায়েন্স তৈরি করলে, অই জিনিস আর পলিটিকালি এফেক্টিভ থাকতে পারে না, কারণ অই মুভমেন্ট যতটা না ‘প্রো-মুক্তিযুদ্ধ’র ঘটনা ছিল তার চাইতে বেশি ছিল ‘প্রো-আওমিলিগ’ এবং ‘এন্টি-জামাত’ একটা ঘটনা। [কারণ, উনারা ‘মুচেবা ও ঘাদানিক’ মুক্তিযুদ্ধের নতুন কোন নেরেটিভ-ই তৈরি করতে পারেন নাই, এমনকি কোন চেষ্টাও সেইখানে ছিল না।…] এখন জামাত আর আওমি-লিগ যখন মিইলা যাইতেছে, তখন অইটারে ইস্যু বানানোর তো কোন দরকার নাই!

এইভাবে “মুচেবা ও ঘাদানিক” মারা গেছিল।

২.
তো, ২০১৩-তে কেন আবার জাইগা উঠলো? এর একটা বড় কারণ অবশ্যই তখন জামাতে ইসলামি আওমি-লিগের পলিটিকাল এলাই ছিল না। চাইলেও এইটা পসিবল ছিল না। জামায়েতে ইসলামি জন্য বিএনপি ছাড়া তেমন কোন অপশন আসলে নাই; ১৯৯৬-তে আওমি-লিগ লগে আইসা উনারা ‘সেইফ’ একটা পজিশনে আসলেও পলিটিকালি ইলেকশনের রাজনীতিতে আসলে ‘নাই’ হয়া গেছিলেন! ১৯৯১ > ১৯৯৬ > ২০০১ এর ইলেকশনে উনাদের সংসদে সিট ছিল এইরকম: ১৮ > ৩ > ১৭.

এরপরে ২০০৮-এ যে কি হইছে – এইটা তো এখনো আমরা ফ্যাক্ট হিসাবে জানি না। তো, অবভিয়াসলি ২০১৪-তে জামায়েতে ইসলামীর কোন কারণই নাই আওমি-লিগের ‘সখী’ হয়া ‘আউট অফ ফোকাস’ হয়া যাওয়ার! এইখানেই ‘মুচেবা ও ঘাদানিক’ তখন জাইগা উঠতে পারে আবার, ‘প্রো-আওমিলিগ’ এবং ‘এন্টি-জামায়াতে ইসলামি’ রিলিভেন্ট হয়া উঠতে পারে যখন। মানে, ‘এন্টি-জামায়াতে ইসলামি’ নেসেসারিলি একটা ‘প্রো-আওমিলিগ’ পজিশন হইতে পারে আবার, এবং ভাইস ভার্সা।

আর ‘মুক্তিযুদ্ধ’ মানেই তো হইতেছে আওমি-লিগের বাপ-দাদার ‘সম্পত্তি’! এখন আরো অই এক্সটেন্ড পর্যন্ত স্প্রেড করে যে, মুক্তিযুদ্ধ ‘এন্টি-ইসলামি’ একটা ঘটনাও! মানে, আরো একস্ট্রিম এবং ‘মৌলবাদী’ 🙂 হয়া ফিরা আসে, আরো গ্রেটার স্কেলে অপারেট করতে থাকে। হিস্ট্রি রিপিটস ‘ফার্স্ট এজ অ্যা ট্রাজেডি এন্ড দ্যান এজ অ্যা কমেডি’ না খালি ‘ফার্স্ট এজ অ্যা ড্রিমি-ইমাজিনেশন এন্ড দ্যান এজ অ্যা ডিজাস্টারাস-রিয়ালিটি’ও!

৩.
এখন ব্যাপারটা এইরকম না যে, “মুচেবা ও ঘাদানিক”-ই “শাহবাগ” ঘটাইছে, বরং যখন “শাহবাগ” তৈরি করার দরকার পড়ছে তখন রেফারেন্স হিসাবে উনাদেরকে খুঁইজা পাওয়া গেছে। অই ইমোশনটারে ট্রিগার করা হইছে। হিস্ট্রিতে ঘটনাগুলা অতীতের উপরে বেইজ কইরা খালি ঘটে না, অনেক সময় একটা ঘটনা ঘটানোর জন্য অতীতগুলারে (হ্যাঁ, প্লুরাল) রি-ইনভেন্ট করা হইতে থাকে। [স্টিভ জবস অ্যাপলের লঞ্চিং ভিডিও বানাইছিলেন জর্জ অরওয়েলের ১৯৮৪’র থিম দিয়া ১৯৮৪ সালে…]

আমি বলতে চাইতেছি, এইখানে ঘটনা খালি ‘মুচেবা ও ঘাদানিক’ টু শাহবাগ না, বরং ‘শাহবাগ’ টু ‘মুচেবা ও ঘাদানিক’-ও; কারণ ১৯৯১-৯২ সালের আবেগ যদি ট্রু হয়া থাকে তাইলে ২০১৩ সালে আইসা তো সেইটা মিথ্যা হয়া যাইতে পারে না! কিন্তু এইটাই আসলে ইতিহাসের ভুল অথবা ড্রিম! যেই ড্রিম থিকা আমাদের জাইগা উঠা’টা দরকার। কারণ হিস্ট্রির বেইজ যতটা না কোন বর্তমান বা কোন অতীত, তার চাইতে অনেক বেশি হইতেছে ধারণা বা ধারণার ফ্লো’টা, যারে সবসময়ই আমাদেরকে খেয়াল করতে পারতে হবে।

 

অগাস্ট ২৬, ২০২৩

আওমি-লিগরে সার্পোট না করাটা ‘শিক্ষিত’ মিডল-ক্লাসের জন্য এতোটা কঠিন কিছু না; মানে একটু চেষ্টা করলেই পুরান বয়ফ্রেন্ড/গার্লফ্রেন্ডের মতো ভুইলা থাকতে পারবে। মাঝে-মধ্যে ইমোশন চাগা দিয়া উঠলেও সামলায়া নিতে পারবে।

কিন্তু এখনো দ্বিধা-দ্বন্ধে আছে যে, বিএনপি’রে তারা “সঠিক রাস্তায়” ফিরায়া নিয়া আসতে পারবে কিনা, “বিপ্লব” করাইতে পারবে কিনা, “বাঙালি সংস্কৃতিপণা”র নামে কলোনিয়াল-কলকাতা’র কালচারে প্রণাম দেয়াইতে পারবে কিনা। মানে, এইটা তো একটু টাফ হবে আসলে। যদিও বিএনপি’র আলাদা কোন কালচারাল পজিশন নাই, বা সেইটা রবীন্দ্র-ভক্তি’র বাইরের কোন ঘটনা না; তারপরও ‘বাংলাদেশি’ কালচারের জায়গাগুলারে তো তারা স্পেইস দিবে! ‘শিক্ষিত’ বাংলা-মিডিয়ামের কালচারাল মাতব্বরি তখনো থাকবে, কিন্তু ‘একক আধিপত্যের’ জায়গাটা যে কিছুটা হইলেও রিস্কে পইড়া যাবে, দোনোমনা’টা হইতেছে আসলে এই জায়গাটায়।

মানে, আওমি-লিগরে ছাড়া যায়, পিআলো ডিস্টার’রে কেমনে ছাড়বো! ডিলেমাটা অনেক বেশি এই জায়গাটায়। পলিটিকাল চেইঞ্জের চাইতে কালচারাল চেইঞ্জ অনেক বেশি কঠিন, অনেক সময় মনেহয় ইম্পসিবল, দুই-একটা জেনারেশন আসলে লাগে। আমার ধারণা, আওমি-বাকশালিদের পলিটিকাল পরাজয় হইলেও কালচারালি কলোনিয়াল-গোলামির জায়গাটার খুববেশি চেইঞ্জ হবে না। কিন্তু এই ধারণাটা মেবি কিছুটা হইলেও স্পষ্ট হইতে পারবে যে, কালচারাল-গোলামি থিকা বাইর না হইতে পারলে পলিটিকাল-গোলামি আবারো ফিরা আসার সুযোগ থাইকা যাবে। আর এইটা যত বেশি মানুশ বুঝতে পারবে, মানতে পারবে এবং অই অনুযায়ী এক্ট করতে পারবে, সেই সম্ভাবনা থিকা আমরা তত দূরে সইরা আসতে পারবো আসলে।

 

অগাস্ট ২৯, ২০২৩

পাওয়ার: কালচারাল, পলিটিকাল ও ইকনোমিকাল

পাওয়ারের মধ্যে সবচে সাটল-ভাবে কাজ করে হইতেছে কালচারাল পাওয়ার। পলিটিকাল পাওয়ারও কাজ করে অনেকটা গোপনে, ক্যামেরার পিছনে; আর সবচে ভিজিবল হইতেছে ইকনোমিক পাওয়ার বা এক্সপ্লয়টেশন, মোটামুটি খালি চোখেই দেখা যায়।

কালচারাল পাওয়ার এমনভাবে কাজ করে যে, টের-ই পাইবেন না, মনে হবে এইটা যেন নাই! যেমন, পারসোনাল একটা ঘটনা হিসাবে আমি জানি যে, বাংলাদেশের একটা পাবলিক ভার্সিটির ভিসি যখন ছিলেন জামাত-পন্থী একজন, তখন কবি আল মাহমুদের রিকমেন্ডেশনের কারণে একজন সেইখানে টিচার হইতে পারছিলেন। এইরকম জিনিসগুলা দেখবেন এনেকডটস বা কাহিনি হিসাবে খুব একটা বলাবলির ভিতরে নাই। এই না-থাকার কারণ হইতেছে তেমন কোন ‘তথ্য-প্রমাণ’ তো নাই! মানে, অনেক কিছু আন্দাজ কইরা মিলায়া নিতে পারবেন, কিন্তু কালচারাল পাওয়ার কেমনে কাজ করে – এই নিয়া বিশাল একটা আলাপ-ই আমাদের করার বাকি রয়া গেছে আসলে।

পলিটিকাল পাওয়ার যে ইকনোমিক পাওয়ারের চাইতেও আলাদা একটা ঘটনা, সেইটা ভালো-ভাবে টের পাওয়া গেছিল “হাউজ অফ কার্ডস” নামের সিরিজটা’তে। মানে, জিনিসটা আমরা টের পাই এমনিতেও; যে পলিটিকাল ও ইকনোমিক পাওয়ার খুবই ক্লোজলি রিলিটেড। কিন্তু কালচারাল পাওয়ারও যে এখন আর কোন ‘পালা-কুত্তা’ না, বরং এরই খুব ইন্ট্রিগ্রাল পার্ট, সেই সুতাগুলা খেয়াল করাটা নেসেসারি হয়া উঠছে এখন।…

 

অগাস্ট ৩১, ২০২৩

যতদিন পর্যন্ত জেনারালাইজ করতে পারাটারে আমরা ‘বিজ্ঞান’ বইলা ভাবতে থাকবো, যতদিন পর্যন্ত বে-হিসাবি প্রফিট বা সিন্ডিকেট কইরা বাজারে ডাকাতি করাটারে আমরা ‘বিজনেস’ বইলা ভাবতে থাকবো, যতদিন পর্যন্ত ষড়যন্ত্র করাটারে পলিটিক্স বইলা ভাবতে থাকবো ততদিন পর্যন্ত আওমি-লিগরে অনেক ‘বড় দল’ বইলা মনে করার মতো আরো অনেক কারণ আমরা খুঁইজা পাবো।

মানে, আওমি-লিগ বা বাম-বাকশালিদের পলিটিকাল ও ইকনোমিক গ্লোরিফিকেশনটা আসলে দাঁড়ায়া আছে এক ধরণের কালচারাল ভেলিডেশনের উপরে। যেইটা খালি ম্যাসকুলিন না, খালি পাওয়ারের বিকার-ই না, বরং একটা এসোসিয়েটেড কালচারাল ব্যাকগ্রাউন্ডও এইখানে আছে, যেইটা সৌললি এন্টি-পিপল একটা স্নবারি’র ঘটনা।

আমি বলবো, ‘আওমি লিগ বড় দল’ – এইটারে পিপলের সার্পোটের বেসিসে দেখার এখন আর কোন রাস্তা নাই; গত ১৫ বছর ধইরা আওমি-লিগ পিপলের সার্পোট বা ভোটের তোয়াক্কা না কইরাই ক্ষমতা ধইরা রাখছে; এবং ঘটনা খালি এইটুকই না, পিপলের সার্পোট বা ভোটের যে কোন দরকার নাই – এই জায়গাটারেও ‘প্রমাণ’ কইরা দিছে। যার ফলে, যারা বলেন বা মনে করতে চান যে, আওমি-লিগের একটা ধরণের পিপল-সার্পোট আছে, উনারা প্রপাগান্ডাই চালাইতেছেন। আওমি-লিগ খালি ইকনোমিকাল একটা দুর্নীতিগ্রস্ত, করাপ্ট লোকজনের দল না, পলিটিকালিও যে বাটপারদের দল – এইটা বাংলাদেশের মানুশ-জনের কাছে ১৯৭৫-এও একবার স্পষ্ট হইছিল, এখন আরেকবার স্পষ্টভাবে খেয়াল করা যাইতেছে।

আওমি-লিগ যে কোন মূল্যে ক্ষমতায় থাকতে চায়; এবং যখন ক্ষমতায় থাকে তখন দেশের মানুশরে তাদের জমিদারির প্রজা বানায়া ছাড়ে; আর যখন ক্ষমতায় থাকে না তখন তাদের গুন্ডা-বাহিনিরে ‘জনগণ’ সাজায়া তান্ডব চালায়।

আমি বলতে চাইতেছি, আপনি যদি আওমি-লিগ ও বাম-বাকশালিদের কালচারাল বেইজটা থিকা বাইর না হইতে পারেন, তাইলে তাদের পলিটিকাল এম্পটিনেসটারে খেয়াল করতে পারবেন না ঠিকমতো।

২.
এখন ধরেন, ছাত্রলিগ যে পাবলিক ভার্সিটিতে এখনো অপারেট করতে পারতেছে, টিইকা থাকতে পারতেছে, এর একটা বড় কারণ হইতেছে – সরকারি-চাকরির লোভ। ‘ভালো-ছাত্ররা’ পড়াশোনা নিয়া ব্যস্ত, বিসিএস’র প্রিপারেশন নিয়া বিজি, ‘আই হেইট পলিটিক্স’ – এইরকমের বয়ানগুলা পুরাপুরি সত্যি না; বরং এক ধরণের স্ট্রং ‘সরকারি গুজব’ ছড়ায়া দেয়া হইছে মার্কেটে যে, ‘ছাত্রলিগ করলে’ সরকারি চাকরি পাইতে সুবিধা হয়! এবং আপনার চৌদ্দ-গুষ্টির মধ্যে যদি কেউ বিএনপি করে তাইলে কোনদিন সরকারি চাকরি পাইবেন না, মিলিটারি-তে ঢুকতে পারবেন না, এই-সেই।

মানে, বাংলাদেশে ‘ক্যারিয়ার’ করতে হইলে আপনারে ছাত্রলিগ করতে হবে! এই মন-মানসিকতাটারে, ডর’টারে খুব শক্ত ভাবে ‘ভালো-স্টুডেন্টদের’ মনের ভিতরে ঢুকায়া দেয়া হইছে। আর এইটা কম-বেশি সত্যি কথাও তো!

৩.
তো, এই ডর থিকা বা থ্রেট থিকা স্টুডেন্টদেরকে ঠিক উদ্ধার করতে হবে না, কিন্তু জায়গাটারে তো এটলিস্ট নোটিশ করা লাগবে আসলে!

এমন না যে, ফিউচারে ছাত্রলিগ করলে কোন সরকারি-চাকরি’তে নেয়া যাবে না! বরং এই জিনিসটারে হাইলাইট করাটা দরকার যে, আওমি-লিগ সারাজীবন ক্ষমতায় থাকবে না, কিন্তু যেই গোলামির অভ্যাস ‘ভালো-ছাত্ররা’ আজকে করতেছেন, সেইটা সারাজীবনই তাদেরকে কন্টিনিউ করতে হবে। গোলামি থিকা বাইর না হইতে পারলে লাইফে যত কিছুই আপনি এচিভ করেন, সেইটা কোন এচিভমেন্টই না আসলে। আমাদেরকে আওমি-বামদের কালচারের গোড়াতে যেই ডর-ভয়ের, আনুগত্যের, সাবমিশনের পজিশন আছে, অই জায়গাটা থিকা বাইর হইতে পারতে হবে।

Leave a Reply