নোটস: জানুয়ারি, ২০২৩ [পার্ট ২]

জানুয়ারি ১৭, ২০২৩

– বাংলাদেশের ভার্সিটি –

[সম্ভবত গোলাপগঞ্জে এলাকাবাসীর লগে অইখানের ভার্সিটির স্টুডেন্টদের মারামারি নিয়া কথা বলতে গিয়া জিনিসটা নিয়া কথা বলা শুরু করছিলাম। কিন্তু এইখানে ডিপ-রুটেড কিছু জিনিস আসলে আছে।]

মার্চ ২২, ২০২২
২০০১/০২ সালের দিকে যখন সিলেটে থাকতাম তখন এই জিনিসটা ফার্স্ট খেয়াল করছিলাম, যে ভারসিটির স্টুডেন্টদেরকে সিঅলটি লোকাল পাওয়ারফুল লোকজন খুব-একটা পছন্দ করেন না; মানে, হেইট করেন – এইরকম না, কিন্তু “পছন্দ” করেন না। ভারসিটির স্টুডেন্টরাও লোকাল লোকজনের লগে একটু ডিসট্যান্স রাইখাই চলতো। মানে, একসেপশন যে নাই – তা না, কিন্তু ওভারঅল এইরকম একটা সিচুয়েশন বা ধারণা ছিল। কয়দিন আগেও দেখবেন, সাস্টের ঘটনায় লোকাল লোকজন আগায়া আসে নাই, ভারসিটির স্টুডেন্টরাও ‘মুখ ফসকায়া’ তালেবান বইলা ফেলছিল অন্যদেরকে, উনাদের ফ্রিডম ক্লেইম করতে গিয়া।…

তো, এইটা খালি সিলেটের সাস্টের ঘটনাই না, ঢাকা ভারসিটির শুরু থিকাই এই ঘটনা থাকার কথা। ঢাকার নবাব বাড়ির লোকজন কাজী আবদুল ওদুদরে নাকে খত দেয়াইছিলেন বইলা শোনা যায়, ইকনোমিকসের টিচার হিসাব উনি যখন কইছিলেন, মহাজনের সুদের চাইতে ব্যাংকের ইন্টারেস্ট জায়েজ হওয়া দরকার, এইরকম একটা কথা।… জাহাঙ্গীরনগরেও মনে পড়ে যে, একটা সময় আশে-পাশের গেরামের লোকজনের লগে মারামারি হইতো। মানে, বাংলাদেশের ভারসিটিগুলা খালি “ইয়াং পিপলদের ফ্রি-স্পেইস”-ই না, এইখানে আরো কিছু ঘটনা আছে, যেইটা একটু খেয়াল করা দরকার আমাদের।

বাংলাদেশের এডুকেশন সিস্টেম, পলিটিক্স এবং সমাজের বাইরের ঘটনা না এইগুলা। এটলিস্ট তিনটা জিনিস আমি এইখানে দেখতে পাই।
এক, ভারসিটির স্টুডেন্ট এর বিপরীতে “সমাজ” বা “এলাকাবাসী” বইলা এমন একটা জিনিসরে আইডেন্টিফাই করা যেইটা হইতেছে আদতে ভিলেন! যেহেতু ফরমাল এডুকেশন, পড়াশোনা বা জ্ঞান মানেই হইতেছে ‘মর্ডানিটি’র একটা ঘটনা, সেইখানে আপনি ‘শিক্ষিত’ মানেই হইতেছে আপনি ডিফরেন্ট একটা কিছু, সমাজের অন্য মানুশের মতো না, যারা ‘জানে-না’। অই ‘না-জানা’ ‘অশিক্ষিত মানুশগুলা’ হইতেছে সমাজ! ‘শিক্ষিত’ হিসাবে আপনি অই সমাজের বাইরের ঘটনা। কলেজ, ভারসিটিগুলাতে এই ট্যাবু খুব স্ট্রংগলিই আছে না, এই ট্যাবু মেইন আইডেন্টিটির একটা পার্ট।

অথচ ঘটনা হইতেছে, এইরকম ‘অশিক্ষিত’ লোকদের নিজেদেরও তেমন কিছু করার নাই আসলে ‘সমাজ’ নিয়া, বরং উনারাই হইতেছে পাওয়ারলেস অংশটা! ‘অশিক্ষিত’ এবং ‘গরিব’ লোকজন ‘সমাজ’ এর ডিসিশান-মেকার না, বরং এগজিস্টিং পাওয়ার-স্ট্রাকচারেরই ফলোয়ার। মর্ডানিটি উনাদেরকে ‘মুক্তি’ দিবে না, বা উনাদেরকে আইডিওলজিক্যালি নিতে পারে না – এইটাও মেবি উনারা টের পাওয়ার কথা। যার ফলে, ‘শিক্ষিত’ মানুশদের লগে সমাজের ‘অশিক্ষিত’ মানুশদের কোন ডিসট্যান্স নাই – এই জিনিসটা সত্যি কথা না। কিন্তু উনারা এটলিস্ট পলিটিক্যালি একটা দল আরেকটা দলের দুশমন না।

এইখানে আসে সেকেন্ড পয়েন্ট’টা। যে, ‘শিক্ষিত লোকজন’ ‘সমাজ-ঘৃণার’ নামে গরিব ও ছোটলোকদের দিকে ঘৃণা কেন জারি রাখেন তাইলে? ধরেন, বাস-মালিকদেরকে দোষ না দিয়া কেন ছরমিকদের দোষ দেন? বা ‘গরিব’ ও ‘ছোটলোকরা’ কেন ভারসিটির স্টুডেন্টদের নিজেদের লোক মনে করে না?

ভিজিবিলিটির একটা ইস্যু তো আছেই, যে মালিকের চাইতে ম্যানেজার বেশি খারাপ। এর বাইরে, এইটা পাওয়ারের জায়গাটা মোস্টলি ইনভিজিবল এবং আন-কোশ্চেনড থাকার জায়গা আছে। ভারসিটির স্টুডেন্ট হিসাবে আপনি যদি না বলেন যে, সমাজে কেউ পাওয়ারফুল না হইলে রেইপ করতে পারে না! তাইলে তো সরাসরি পাওয়ারের লগে কনফ্লিক্টে চইলা গেলেন। কিন্তু আপনি যদি বলেন, “সমাজের অশিক্ষিত পুরুষেরা” রেইপ করে, তাইলে তো সাপও মরলো, লাঠিও ভাঙ্গলো না। পুরুষ তো আছে, প্যার্টিয়ার্কিও আছে, কিন্তু পাওয়ারও যে আছে, সেইটা না-বলাটা পলিটিক্যালি সেইফ রাখতে হেল্প করার কথা।

মানে, এইটা খুব কনশাস জায়গা থিকা ঘটতেছে – তা না, একটা সাব-কনশাস 🙂 এওয়ারনেস কাজ করার কথা। কিন্তু এতে কইরা যা হয়, পাওয়ারের জায়গাটারে এভেয়ড করার ভিতর দিয়া সমাজের একটা ইস্যু খুব কম সময়েই ভারসিটির স্টুডেন্টদের ইস্যু হয়া উঠতে পারে এখন। একইসাথে ভারসিটির স্টুডেন্টদের ইস্যুরে একটা ক্লাসের সমস্যা হিসাবেই ভাবতে পারার কথা (“সমাজ” বা “এলাকাবাসী”র না, বরং সমাজের) গরিব ও ছোটলোকদের।

এইখানে একটা ডিস-কানেকশন তৈরি হইছে। এইটা হইতেছে আমার থার্ড পয়েন্ট’টা। এইটা যেইভাবে বটবৃক্ষ হয়া উঠছে, সেইটা জাস্টিফাইড হয়া উঠছে “আমরা রাজনীতি বুঝি না” এবং “আমরা রাজনীতি করি না” বা “খারাপ লোকরাই রাজনীতি করে” – এইরকম একটা পজিশন হিসাবে, যেইটা গত ৩০/৪০ বছরের একটা ঘটনা আসলে।

২.
জানুয়ারি ১৭, ২০২৩

এইখানে পিয়াস করিম একটা ইন্টারেস্টিং কথা বলতেছিলেন। যে, ১৯৭১-এর পরে পলিটিকাল-এলিটরা কোসঠাসা হয়ে পড়ছিলেন (যারা পাকিস্তান আমলে আওমি লিগের রাজনীতির ভিতর দিয়া পাওয়ার গেইন করছিলেন, তারা), আমলা-এলিট, মিলিটারি-এলিট এবং কালচারাল-এলিটদের মোকাবেলায়। কারণ রাজনীতি কইরাও উনারা উনাদের বিজনেস বাঁচাইতে পারেন নাই, সরকারিকরণের হাত থিকা।

তো, সরকার কারা? 🙂 ভার্সিটি পাশ করা লোকজনেরাই তো! মেবি স্টুডেন্ট থাকা অবস্থায় উনাদের অই পাওয়ার নাই, কিন্তু পাওয়ারে তো কম-বেশি উনারাই যাবেন সরকারি চাকরির অই পোস্টগুলাতে। এই কারণে ভার্সিটি হইতেছে আসলে এক ধরণের কালচারাল অরিয়েন্টেশনের জায়গা, মিডল-ক্লাসের এলিটিজম শেখার। স্কুল-কলেজও আসলে অইটাই, যেইখানে কিছু সাবজেক্ট ও স্কিল শেখানো হয় না, বরং কালচারাল অরিয়েন্টশনটাও একটা ঘটনা। আগে যেমন মিশনারি স্কুলগুলা ভালো ছিল এখন এলিটদের ইংলিশ-মিডিয়ামের বাইরে ঢাকার কয়েকটা স্কুল-কলেজই ভালো, কারণ এইখানে এলিটদের বাচ্চাদের লগে আপনার বাচ্চা “ফ্রেন্ড” হইতে পারবে। আর এই এলিটিজম হইতেছে সমাজের ‘অশিক্ষিত’ ‘অর্ধশিক্ষিত’ মানুশদেরকে হেইট করা।

মানে, এইখানে যদি কোন “অর্ধশিক্ষিত” “অশিক্ষিত” মানুশ না থাকে, আপনি হেইট করবেন কারে? বা কার তুলনায় “শিক্ষিত” হয়া উঠবেন? সমাজের সবাই-ই যদি “শিক্ষিত” হয়, তাইলে কি “শিক্ষিত” হওয়ার কোন মানে থাকতে পারে? এই যে “শিক্ষিত” হওয়া – এইটা সবসময়ই একটা কম্পারেটিভ ঘটনা, যে অল্প-কিছু সিলেক্টিভ লোকজনই হইতে পারার কথা। এইটা এই ভার্সিটি-শিক্ষার সিস্টেমের মধ্যে ইনহেরিয়েন্ট একটা ঘটনা। যে, দে আর দা চুজেন ওয়ানস! উনারা “বেশি জানেন”।

এখন ব্যাপারটা এইরকম না যে, উনারা “জানেন না”, বরং এই জানাটা একটা ক্লাস-স্ট্যাটাসের ঘটনা। আপনি ভার্সিটিতে পড়ছেন মানেই হইতেছেন আপনি একটু আপার-ক্লাসের লোক। এই ডিফরেন্সটা একটা জ্ঞান-তাত্ত্বিক ঘটনা না, এইটা সোশাল-ডিলেমাও, যেইটা একটা কনফ্লিক্টের দিকে টার্ন করে।

(টু বি কন্টিনিউ…)

– মিনিংয়ের পরিখা –

[ Fail again. Fail better. – Samuel Beckett ]

তিনটা ঘটনার কথা বলি।

পয়লা ঘটনাটা, ২০০৩-২০০৪ সালের দিকে কথা, তখন রংপুরে থাকি। রিকশা-ভাড়া দুই টাকা, চাইর টাকা। (ইন্টারেস্টিং না?) একদিন রিকশায় উঠছি শাপলা চত্বর থিকা পৌর মার্কেট যাবো, এইরকম কিছু। রিকশাঅলারে জিগাইলাম, অই মিয়া, যাবা নাকি?

রিকশাঅলা তো রাগের চোটে তার রিকশা থিকা নাইমা আসলো, পারলে মারে আমারে, এইরকম অবস্থা! কি ঘটনা! “আমারে মিয়া ডাকলেন ক্যান! আমি কি দোষ করছি! আমি কি কোন গাইল দিছি আপনারে! আমারে কেন গাইল পাড়তেছেন!”

আমি তো মোটামুটি থ। আমি গাইল দিলাম কই! রিকশাঅলা কইলো, “তাইলে মিয়া কয়া ডাক দিলেন ক্যান!” আমি আরো তাজ্জব হইলাম। এইটা তারে কেমনে বুঝাই। আমাদের অঞ্চলে (ভৈরবে, কিশোরগঞ্জে) মিয়া তো হইতেছে কমন ডাক, এমনেই ডাকাডাকি হয় বাজারে, যে, অই মিয়া মাছের দাম কতো? এইরকম। এতে “তাচ্ছিল্য” হয়তো থাকতে পারে, কিন্তু ট্রেডিশন হিসাবে তো মাইন্ড করে না কেউ, সামাজিক নিয়মই, এক রকমের। এইটা গাইল কেমনে হয়! যা-ই হোক, আমি তারে বুঝানোর ট্রাইও করি নাই। কইলাম যে, আমি তারে গাইল দেই নাই, ডাক দিছি, সে যে মাইন্ড করবে সেইটা বুঝি নাই। কিন্তু খুবই অবাক হইছিলাম।

এক দেশের বুলি, আরেক দেশের গালি – এইরকম প্লেইন এন্ড সিম্পল ঘটনা হইলেও, ব্যাপারটা অনেকদিন মনে ছিল আমার। যে, একেক জায়গায় শব্দের মিনিং একেক রকমের। এমনকি বাক্যের মধ্যেও দেইখেন, চেইতা গেলে অনেকে বলে – “সরি! কি বললা!” তো, এই ‘সরি’ মানে ‘মাফ চাওয়া’ না, এর মিনিং হইতেছে, ‘খবরদার!’

২.
খালি একেক জায়গার না, একেক সময়ের ঘটনাও আছে। আগের বাংলা-সাহিত্যে পাইবেন “মেয়ে” বা “মহিলা” না বইলা ঘরের মেয়ে-মানুশদেরকে “মাগী” বলতেছে। আরো বেটার একটা জায়গার কোটেশন দেই, উমেবের্তো একো’র একটা লেখা থিকা:
“আজকে আপনার যারা বয়সে ইয়াং, ভাবতে পারেন যে, veline হইতেছে সুন্দরী মেয়ে যারা টেলিভশন শো’গুলাতে নাচে, আর যে casino হইতেছে একটা হাউকাউের জায়গা।

আমার জেনারেশনের যে কেউই জানে যে, ক্যাসিনো শব্দ দিয়া বুঝাইতো ‘মাগিপাড়া’ আর এর পরেই, কনোটেশন দিয়া, এইটার মানে আইসা দাঁড়াইছে ‘কেওটিক কোন জায়গা’, এখন যেহেতু এইটা তার আদি মানে হারায়া ফেলছে, আর আজকে যে কেউ, ইভেন একজ বিশপও, বিশৃঙ্খলা বুঝাইতে এইটা ইউজ করেন।

একইরকমভাবে, bordello ছিল একটা বেশ্যাপাড়া, কিন্তু আমার গ্রান্ডমা, যিনি খুবই কঠিন মোরালিটির মহিলা ছিলেন, প্রায়ই বলতেন যে, ‘একটা bordello বানাইও না’; মানে হইতেছে, বেশি হৈ চৈ করবা না’; এই শব্দটা তার অরিজিনাল মিনিং পুরাপুরি হারায়া ফেলছে।
আপনাদের মধ্যে যারা ইয়াং এইটা নাও জানতে পারেন যে, ফ্যাসিস্ট আমলে, veline ছিল হইতেছে কয়েকটা কাগজের শিট যেইটা দিয়া গর্ভমেন্টের যেই ডিপার্টমেন্ট (বলা হইতো মিনিস্ট্রি অফ পপুলার কালচার, শর্ট ফর্মে মিনিকালপপ – এইরকমের একটা রহস্যময় আওয়াজের নাম এভয়েড করার মতো হিউমার অদের ছিল না) কালচার কন্ট্রোল করতো, নিউজপেপারে পাঠাইতো। অই পাতলা কাগজের শিটগুলাতে লেখা থাকতো নিউজপেপারগুলার কোন কোন জিনিস নিয়া চুপ কইরা থাকতে হবে আর কোন কোন জিনিস অরা ছাপাইতে পারবে। এইভাবে, velina’টা, জার্নালিস্টিক জার্গনে, আসছে সেন্সরশিপ’রে সিম্বল হিসাবে দেখাইতে, কি গোপন করতে হবে, কোন ইনফরমেশন গায়েব কইরা দিতে হবে, সেইটা বুঝাইতে।”

তার মানে দেখেন, অ্যাক্রস দ্য টাইম, একই শব্দের মিনিংও একইরকমের থাকে না। আমার একটা ফেভারিট উদাহারণ হইতেছে, “এলিট” শব্দটা। ১৯৬০-এর দিকে “এলিট” দিয়া সম্মানিত/রেসপেক্টবল মানুশ বুঝাইতো, এখন মোটামুটি বুঝায় স্নবিশ/নাক-উঁচা লোক।
কিন্তু এইটা কাউরে বইলা দেয়া লাগে না, ডিকশনারি-মিনিং দেইখাও বুঝতে হয় না, বাক্যের মধ্যে কেমনে লেখতেছেন আপনি বা উচ্চারণ করতেছেন, সেইটা দিয়াই আন্দাজ করা যায়।

৩.
দ্যান, দেয়ার আর থার্ড কাইন্ড। মোটামুটি সবগুলা ডিসিপ্লিনেরই (মেডিকেলের, ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের, ইকনোমিকসের, এনথ্রোপলজির…) কিছু টার্ম আছে। প্রফেশনাল ও একাডেমিক ওয়ার্ডস। অইগুলা দিয়া টের পাইতে পারবেন আপনি, কে অই ডিসিপ্লিনের লোক, কে লে-ম্যান।
মানে, শব্দগুলা কমন শব্দই, কিন্তু ডিসিপ্লিনের মধ্যে মিনিং আলাদা। কিন্তু মুশকিল হইতেছে, অই টার্মগুলা জানতে পারাটাই একাডেমিক-জ্ঞানের ঘটনা হয়া দাঁড়ায়, বেশিরভাগ সময়। একটা স্টাইল বা তরিকা, যেইটা আয়ত্ত করা লাগবে! যেমন, মন্তাজ-টন্তাজ না কইলে আপনি তো সিনেমা তেমন একটা বুঝেন না মনেহয় – এইরকম একটা ঘটনা। [তো, এইগুলা নিয়া এখন ফান-টানও করতে পারি আমরা।]

এরই আরেকটা সাব-উইং হইতেছে এমনকি ম্যান টু ম্যানও এই টার্মগুলার সিগনিফিকেন্স আলাদা, উইথ-ইন দ্য ডিসিপ্লিনেও। যেমন “ডিজায়ার” শব্দটা সাইকোলজির একটা কি-ওয়ার্ড হইলেও, ফ্রয়েডে যেইরকম, লাঁকা-তে যেইরকম, দেল্যুজে একইরকম না।

৪.
ঘটনা শেষে এখন এক্সপ্লেশনে যাই একটু।

শব্দের এইরকম চেইঞ্জগুলা তো আর হঠাৎ কইরা হয় না। সবচে বেশি হয় মেবি এর প্রাকটিকাল বা পলিটিকাল ইমপ্লিকেশনের ভিতর দিয়া। যেমন, “রাজাকার”, এই শব্দটা আর কখনোই (মানে, আগামী ১০০-২০০ বছরে) তার পলিটিকাল মিনিংয়ের বাইরে গিয়া শাব্দিক-মিনিংয়ে যাইতে পারবে না। এর বিপরীতে “মুক্তিযোদ্ধা” শব্দটা দেখবেন অনেক “পবিত্র” হয়া উঠতেছে এখন।

মানে, শব্দের কোন পলিটিকাল মিনিং থাকতে পারবে না – ব্যাপারটা এইরকম না, কিন্তু যখনই একটা শব্দরে তার “একমাত্র” অর্থের ভিতরে লিমিট করা হয় বা মোরাল-ক্যাটাগরি হিসাবে ইউজ করা হয়, সেইটা রিস্কি একটা ঘটনা।

শব্দ দিয়া কোনকিছুরে তো ইন্ডিকেটই করবো আমরা, কিন্তু এর মিনিংয়ের ফেক্সিবিলিটিরে ন্যারো করতে থাকাটা মোটামুটি সবসময় পলিটিকালি প্রবলেমেটিক হয়া উঠার কথা।

এইটা একটা পয়েন্ট আমার। [এই কারণে, কোন মিনিংয়রে এড়ায়া-যাওয়া ভার্সেস নতুন-মিনিং দেয়ার ফাইট’টাই এইখানে আছে – এইটুকই না ব্যাপারটা, কিভাবে মিনিংগুলা গোত্তা খাইতেছে, তাদের কার্ভগুলাতে সইরা আসতেছে, সেইটা হইতেছে খেয়াল করার ঘটনাটা।]
সেকেন্ড পয়েন্ট হইতেছে, মিনিংয়ের চেইঞ্জটা সবসময় একটা ঘটনা দিয়া বা একবারে ঘটে না। যেমন, “জয়-বাংলা” 🙂 বা “হেইল-হিটলার”! ধীরে ধীরে, মানে ৫-৭ বছর লাগতেছে/লাগছে তো, নতুন মিনিংয়ে যাইতে।

অনেক শব্দ আবার ১০০ বছরও লাগতেছে, যেমন “আর্য” বা “আরিয়ান”। এইটা যে একটা কলোনিয়াল সুপ্রিমেসির একটা নেটিভ এলায়েন্স ক্রিয়েট করার জিনিস ছিল – সেইটা এখনো পুরাপুরি রিভিলড অবস্থায় যাইতে পারে নাই। যদিও দুব্বল হয়া আসছে এই ব্রাহ্মণ্যবাদ/আশরাফি ব্যাপারটা, কিন্তু এর পলিটিকাল এজেন্ডাগুলার পিকচার এখনো একটা জায়গাতে দেখতে পাইতেছি না আমরা।

এইটা হইতেছে, আমার সেকেন্ড পয়েন্ট’টা; যে, মিনিংয়ের টানাটানির একটা অবস্থার মধ্যেও থাকি আমরা।

আমার থার্ড বা ক্রুশিয়াল পরস্তাবটা হইতেছে, শব্দের মিনিং সবসময় তার “অরিজিনাল” মিনিং থিকা এমার্জ করে না, করে তার “অপজিট” কোন ডিরেকশন থিকা। এইটা একটা কনটেক্সটেরই ঘটনা।

যেমন, “হিন্দুজম” বলতে আমরা হিন্দু-ধর্মের ঘটনা বুঝি – এইটা ভুল-চিন্তা, আমরা বুঝি হইতেছে “ইসলাম-ঘৃণা”। একইরকমভাবে “ইসলামিস্ট” বলতে আমরা যদি ইসলামি-রেভিউলেশনের কিছু বুঝাইতে চাই, সেই পলিটিকাল জায়গাটা এগজিস্টই করবে না, জায়ানিজমের এবং ক্রিশ্চানিটির বিরোধিতার জায়গাটা ছাড়া।

এই পয়েন্টটারে আমাদেরকে আমলে নিতে হবে।

৫.
লাস্ট পয়েন্টের গোড়াটা ধইরা এখন আমার “আসল” কথায় আসি!

একটা বা কয়েকটা পলিটিকাল ইভেন্টের ভিতর দিয়া শব্দের মিনিং যেইরকম চেইঞ্জ হইতে পারে, ইন্টেলেকচুয়ালি শব্দের মিনিং একইরকমভাবে ঘটে না, অইটা আরো “ধীর”-ই না খালি একটা চিন্তার ওয়ার-ফেয়ারেরও ঘটনা।

শব্দ তার চিন্তার বেইজের লগেই বান্ধা থাকে। অই চিন্তার জায়গাটারে না সরায়া আসলে শব্দের মিনিং ইন্টেলেকচুয়ালি বদলাইতে পারে না। এমনকি চিন্তার বেইজ বদলাইলে পরে, একটা চিন্তা আরেকটা চিন্তার জায়গারে বাতিলই কইরা দেয় না খালি, পুরা একটা ভোকাবুলারিরেই ভুইলা যাওয়া হয় এবং মিনিংলেস কইরা ফেলা হয়। (মেডিকেল-সায়েন্সের জায়গা থিকা কবিরাজি’র ঘটনার কথা মনে হইলো। মোগল আমলের পরে ব্রিটিশ আমলে ফারসির জায়গায় ইংলিশ আসার পরের ঘটনাটাও।)

মানে, শব্দের ভিতর দিয়াই আমরা চিন্তা করি, কিন্তু আমাদের চিন্তার বেইজটা শব্দগুলারে মিনিং-ই দেয় না খালি, তৈরিই করে। চিন্তা ইনভিজিবল, বা ডিফাইনেবল না বইলা শব্দরেই চিন্তা হিসাবে চিনলে ভুল করবো আমরা। এইটা আমার ফার্স্ট ডিসিশান।
তো, এইখানে একটা চিন্তা আছে, চিন্তার বেইজ আছে, যার ভিতর দিয়া শব্দগুলা এপিয়ারড হয়।

এখন এই চিন্তা দুইটা ওয়েতেই কাজ করে। চিন্তার লগে এবং এক্টের লগেও মিল-মিশ খায়। ইন্টেলেকচুয়াল আইডিয়া এবং পলিটিকাল ইভেন্ট দুইটার ভিতর দিয়াই নড়চড় হইতে থাকে। অতীত-চিন্তার ইতিহাস এবং এক্সটারনাল-ইভেন্ট তারে স্থির কোন মিনিং থাকতে দিতে থাকার কথা না। কিন্তু এই নড়চড়ের ঘটনা খুবই কমপ্লেক্স এবং উইয়ার্ড-ওয়েতেই ঘটে বইলা আমার ধারণা। এর ট্রেজেক্টরি আমাদের জানা নাই। কিন্তু এইটা যেমন “অরিজিনাল” বা “স্থির” জায়গা থিকা ঘটে না, একইভাবে “অপজিট” কোন ডিরেকশন থিকাও এমার্জ করে না। ইন্টার-একশনের ঘটনাগুলার ভিতর দিয়া তৈরি হইতে থাকে।

এইটা আমার সেকেন্ড ডিসিশান; যে, শব্দের ট্রেজেক্টরি আছে। কক্ষপথে ঘুরতেছে। নানান টানের ভিতর দিয়া। কোন ব্ল্যাকহোলে হারায়া যাওয়ার আগে, তার ভিতর দিয়া রিফর্ম হওয়ার আগে।

তবে এই ট্রেজেক্টরিটা আন-নোন – এইটা আমি মনে করি না। বরং যেইভাবে আমরা দেখতে চাই বা দেখি, সেইটা কোনভাবেই এর ধার-কাছ দিয়া যায় না। আরো রিলিভেন্ট টুল আবিষ্কার করা দরকার আমাদের। একটা উদাহারণ দিয়া বলার ট্রাই করি।

রাশিয়ার কমিউনিজমের যেই ঘটনাটা। এইটারে একটা ইকনোমিক-ঘটনা হিসাবে পোর্টেট করা হইছে অনেকদিন ধইরা যে, সেন্ট্রালাইজড ইকনোমিক সিস্টেম, এই-সেই। কিন্তু এইটা বরং খুব টাইনি একটা ঘটনাই মনে হইছে আমার কাছে। মানে, অবশ্যই এর হিউজ ইমপ্যাক্ট ছিল মানুশের লাইফে, কিন্ত এইটা ইকনোমি-সিস্টেমের ভিতর দিয়া সারভাইব করে নাই, বরং অইটা নিয়াই বিপদে পড়ছে বেশি। রাশিয়ার অর্থডক্স ক্রিশ্চান সোসাইটিতে কমিউনিজম বরং ফ্রি-সেক্সের সোসাইটি তৈরি করতে হেল্প করতে পারছিল, স্টেট-স্পনসরড সেক্সুয়াল-ফ্রিডম ক্রিয়েট করতে পারছিল, যেইটা দিয়া কয়েকটা জেনারেশন সারভাইব কইরা গেছে। মানে, এইখানে কোন সোশাল-চেইঞ্জের ঘটনা থাকার কথা, যেইটা মেবি এনকোয়ারি করা হয় নাই। মানে, কমিউনিজম বলতে যে, “নাস্তিকতা” এবং “ফ্রি-সেক্স” – এইটা খালি “পশ্চিমা অপপ্রচার” এইরকম “পবিত্রতার” জায়গা থিকা দেখাটাও ঝামেলার তো!

এখন যদি আপনি এই ধরণের এনকোয়ারি’র দিকে যান, কমিউনিজম ব্যাপারটা আর ইকনোমিক-সিস্টেম হিসাবেই থাকার কথা না। আরো অনেক কাহিনি এইখানে অ্যাড হইতে থাকে। ক্লাস-স্ট্রাগলটা থাকে-না না, এর অনেক লেয়ার ক্রিয়েট হইতে থাকে।

এলিস মুনরো বা মার্গারেট এটউড (কোন রাইটারই হবেন) বলতেছিলেন যে, এস্কিমোদের ভাষায়, বরফের ৫০টা নাম আছে। বাংলাদেশেও দেখবেন, ভাতের/চালের অনেক নাম – সিদ্ধ, আতপ, পাইজাম, মিনিকেট, নাজিরশাইল… মানে, অইগুলা ভাত/চাল, কিন্তু লেয়ারটা আরো ডিটেইল।

এই ডিটেইলগুলা তখন অন্য ডিটেইলগুলার লগে মিলতে থাকে। নিজের “অরিজিনাল” জায়গা থিকাও সরতে থাকতে থাকে। গ্লোবাল কোন মিনিং নাই না, বরং সবসময়ই লোকাল-মিনিংয়ের লগে মিলতে থাকে।

লজিকালি খুব উইয়ার্ডভাবেই, কমিউনিজমের ক্লাস এবং হিন্দুজমের জাতের একটা কানেকশনও তৈরি হইতে পারে। কমিউনিজমে ক্লাস যেমন উতরাইতে হবে, হিন্দুজমে হইতেছে শার্প একটা ক্লাস-ডিফরেন্স থাকতে হবে। দুইটা অপজিট ঘটনাই। কিন্তু দুইটারই বেইজ হইতেছে – ক্লাস। একটাতে ইকনোমিক-ক্লাস, আরেকটাতে সোশাল-ক্লাস। [যদিও স্ট্যাটিক ঘটনা না এখন।] কিন্তু ক্লাস-সিস্টেম এগজিস্ট করে। [ক্রিশ্চিনিটি বা ইসলামে ক্লাস নাই না, এইটা সেন্ট্রাল ঘটনা না।]

যার ফলে এইখানে লজিকাল শিফটিংটা সহজ না, বরং একই বেইজ থিকা সিমিলার কিছু এক্সপেরিয়েন্সের ধার-কাছ দিয়া যাওয়ার ঘটনাগুলা ঘটতে পারে। এবং সেইটা খুব আন-নোয়িংলিই (মানে, অটোমেটিকালি বা স্বতঃস্ফূর্তভাবে) ঘটতে থাকে বেশিরভাগ সময়। ডিফরেন্সগুলা ব্লার হয়া যায় না, কিন্তু ফ্রিকোয়েন্টলি ওভার-ল্যাপ করাটা সহজ হইতে পারে।

এইটা আমরা টের পাইতে পারবো যদি আমাদের জানা-বোঝারে এতোটা লজিকাল ঘটনা না ভাইবা, বরং অনেক বেশি মিথিকাল ঘটনা বইলা ভাবতে রাজি হইতে পারি আমরা। [ইসলামি-সমাজতন্ত্রেও পুঁজি হইতেছে শয়তান! নবীরা হইতেছে বিপ্লবী, এইরকম।] যার ফলে, ক্লাস-সিস্টেমের জায়গা থিকা আপনি কমিউনিস্ট-থট হিন্দুজমের ফের্মওয়ার্কের কাছাকাছি ঘটনা হইতে পারে। অন্য কোন ধর্ম বা চিন্তার ব্যাপারে এইটা ঘটে না – তা না, আমাদের সব চিন্তাই ছোট পেরিফিরির ঘটনাই কম-বেশি, কিন্তু এইগুলা প্রাকটিসের ভিতর দিয়া ওভার-ল্যাপড হইতে হইতেই কাছাকাছি হইতে থাকে।

তারপরও মিথটাই মিনিং না। মিথ হইতেছে অল্টারনেটিভগুলা, সারাউন্ডিংসটা। আলো-বাতাস-পানি। যেইখানে শব্দের, মিনিংয়ের গাছগুলা জন্মায়।

কোন ফ্রেমওয়ার্কটা কেমনে কার লগে এলাইনড হইতেছে – অইটা আমরা জানি, এইটা আমার কাছে মনেহয় না। কিছু আন্দাজের ভিতর দিয়াই আমরা চলি। মিনিং আমরা জানি, কিন্তু কোন ওয়েতে মিনিংটা এপিয়ারড হইতেছে – সেইটা জানি, এইটা আমার কাছে ট্রু মনেহয় না।
এইটা আমার লাস্ট পয়েন্ট আসলে। যে, আমরা জানি না। কিন্তু আমরা আমাদের মিনিংয়ের পরিখার ভিতরে নিজেদের চিন্তারে লুকায়া রাখতে পারি না। আমাদেরকে অবশ্যই জানতে হবে যে, আমরা জানি না।

ব্যাকরণবিদদের আরো ভালো বলতে পারার কথা যে, অভ্র’র টাইপিং ফরম্যাটটাও কিন্তু (আ-কার, ই-কার…) আমাদের কথা-বলার/উচ্চারণের সাথে অনেকবেশি এলাইনড।

যেমন, “লেখা”-তে – “ে” আগে বসে, কিন্তু উচ্চারণ করি কিন্তু “ল”-র পরে। এইটা অভ্র-তে আছে। বলতে বলতে টাইপ করা যায়।
বিজয়ে টাইপ করতে গেলে উচ্চারণ করতে পারবেন না, বলা এবং লেখা আলাদা দুইটা ঘটনা হয়া থাকে। বোবা হয়া থাকতে হয়। বাকশালের লগে মিল আছে আর কি! 🙂

জানুয়ারি ১৯, ২০২৩

বাংলাদেশে খালি বাকশালেরই “বিকল্প নাই” না, বরং লিনিয়ার-ন্যারেটিভের এই জুলুমে কিছু মনোপলি এবং অলিগোপলির ভিতর দিয়া “বিকল্পগুলা” নাই কইরা দেয়ার একটা এনভায়রমেন্টই তৈরি হইতেছে। যেমন, টেলিকমে গ্রামীনফোন, রবির কোন “বিকল্প নাই”! যেই সার্ভিসই দিক, যেই দামই নিক, সেইটা নিতে হবে। এই কারণে আপনার কোন কমপ্লেইনেরও কোন দাম নাই। এই জিনিসটা আজকে আবার মনে হইলো ফুডপান্ডার একটা এক্সপেরিয়েন্স থিকা।

এর আগেও এইরকমের ঘটনা ঘটছে। ফুড ডেলিভারিতে তো ঝামেলা হয়, হইতেই পারে। কিন্তু কোন কমপ্লেইন করার জায়গা নাই! মানে, এমনভাবে সিস্টেমটা করা হইছে যে, ছাইড়া দে মা কাইন্দা বাঁচি অবস্থা হয়। (এই কারণে পাঠাওয়ে ফুড অর্ডার করতাম। কিন্তু ফুডপান্ডার ধারে-কাছে তো তাদের রিচ নাই।) অনেক কমপ্লেইনের পরে সিস্টেম এখন একটু চেইঞ্জ করছে।

কিন্তু সবচে জঘন্য জিনিস যেইটা, সেইটা হইতেছে ভাউচার ধরায়া দেয়। আর কাস্টমার সার্ভিসের লোকগুলারে এইটা বুঝানোই যায় না, ভাউচার ভিক্ষা চাইতেছে কে! আমার একটা প্রবলেম হইছে, সেইটার সলিউশন না কইরা কইতে থাকে, যান ৫০ টাকা দিলাম! ১০০ টাকা দিলাম! মানে, এইটা যে ডিস-রেসপেক্টফুল একটা জিনিস – এই আন্দাজটাই এদের নাই!

আমার ধারণা, এইটা এই চিন্তা থিকা আসে যে, পাবলিকরে টাকা দিলেই তো খুশি! এখন খুশি কি খুশি-না – এইটা পয়েন্ট না, ঘটনাটা হইতেছে এইটা দিয়া যে একাউন্টিবিলিটি না থাকাটারে এড়ানো হয়, জাস্টিফাই করা হয়, এইটারে বাদ দেয়া হয়। এমনকি একটা “পারসোনাল সমস্যা” হিসাবে আইডেন্টিফাই করা হয়! যে, খালি আপনার একলারই সমস্যা হইতেছে, আর কারো তো হইতেছে না! হইলে, বলতো না!
মানে, বেশিরভাগ মানুশরে এই জিনিসটা বুঝাইতেই পারবেন না যে, এইটা খালি টাকা-পয়সার মামলা না! বরং এইখানে একটা কমিটমেন্ট ব্রিচ করা হইছে, সার্ভিস না দেয়াটার কোন সুরাহা করা হয় নাই। এমনকি সমস্যাটারে সমস্যা বইলা স্বীকার করতেই রাজি হইতেছে না!

“টাকা দিয়া মিটমাট কইরা ফেলছি তো! কমপ্লেইন তো নাই আর! সলভড!” বা টাকা দেয়ার পরেও ক্যা ক্যা করতেছে কেন লোকটা! এইরকম একটা অবস্থা! ভালো না লাগলে অর্ডার কইরেন না!

কিন্তু কই যাইবেন! গ্রামীন ফোন বা রবির সিম ছাড়া অন্য কোনটা ইউজ করবেন! ফুড অর্ডার করতে চাইলে ফুডপান্ডা আর পাঠাও-ফুড ছাড়া আর কি অপশন! মানে, নিজেরে ছোট একটা পোকা, একটা মথ, একটা নাথিং ফিল করতে আপনি বাদ্দ হইবেন, এইরকম আরবান লাইফে! ইন এভ্রি স্টেপ!

জানুয়ারি ২২, ২০২৩

স্টিফেন কিং বলতেছিলেন এই কথা (মানে, আরো অনেকেই বইলা থাকতে পারেন, উনার বলাটা আমার মনে আছে আর কি) যে, কোল্ড ড্রিংকস আবার কি কথা! বোতলের গায়ে একটা লেবেল তো আছে, অইটা কইতে কি দোষ! আমি কোক খাইতেছি নাইলে পেপসি খাইতেছি, যেইটা খাইতেছি, সেইটা কইলে বিজ্ঞাপণ হয়া যাবে কেন!

জীবনানন্দ দাশের কবিতায় গোল্ডফ্লেক সিগারেটের কথা আছে। এমনকি একেক সময় এইরকম জেনেরিক (সিগারেট খাইতেছে) না বইলা স্পেসিফিক (গোল্ডফ্লেক খাইতেছে) কইলে আরো স্পষ্ট হইতে পারে বলাটা, ইমেজটা। এইটা তো হেল্প করেই।

অনেক সময় তো ব্যান্ডগুলাই ক্যাটাগরি হয়া উঠে। যেমন, হোন্ডা (মোটর সাইকেল), মবিল (ইঞ্জিন অয়েল)। স্পেসিফিক জিনিসটাই তখন জেনিরিক টার্ম। এইগুলা এমনে এমনে ঘটে না আর কি! যখন অই স্পেসিফিক জিনিসটার বাইরে অই ক্যাটাগরির অন্য কোন জিনিস/ব্রান্ড এভেইলেবল নাই, তখন অইটাই ক্যাটাগরি। ক্যাটাগরি’র কথা কইলে বরং অপরিচিত লাগার কথা, ডিসট্যান্ট ফিল করার কথা।

জানুয়ারি ২৩, ২০২৩

আমাদের কাছে কোশ্চেন কখনোই এইটা না যে, আমরা শয়তানের, ইভিলের, অন্যায় ও জুলুমের এগেনেস্টে থাকবো কি থাকবো না। মানে, যাদের কাছে এইটা একটা কোশ্চেন, তাদের লগে কথা কওয়ার কোন স্পেইস আসলে নাই। অই ভাওতাবাজির পার্ট আমরা হইতে পারি না।

তাই বইলা এড়ায়া যাওয়া ও গা-বাঁচায়া চলাটা এবং পারসোনাল-স্যানিটি রক্ষা করাটা কোন ওয়ে হইতে পারে না। আমাদের কাছে কোশ্চেন সবসময় এইটাই যে, আমরা কেমনে এর মোকাবেলা করবো? যদি আমরা এর মোকাবেলা না করি, একদিন এই জুলুমের-শাসন নিজে নিজেই শেষ হয়া যাবে না, বরং আরো ভয়াবহ-ই হয়া উঠতে থাকবে। নতুন নতুন এরিয়াতে ছড়ায়া পড়বে। আরো সাটল-ভাবে ‘নরমাল’ হয়া উঠবে।

যার ফলে, কেমনে ‘রি-এক্ট’ করবো – এইটা ডিসাইড করার ঘটনা না, বরং কেমনে আমরা এক্ট-করাটা কন্টিনিউ করবো – সেইটা হইতেছে কাজ করার জায়গাটা।

জানুয়ারি ২৫, ২০২৩

– হিন্দুজম: কালচারাল ও পলিটিকাল –

বাংলাদেশে যে কোন প্রফেশন বা পেশা হইতেছে “জাত”-এর একটা ঘটনা। মানে, ব্যাপারটা খালি প্রফেশনাল এলায়েন্স বা যোগাযোগের মধ্যেই আটকায়া থাকে না। (যেই জিনিসটা ইউরোপিয়ান-আম্রিকান সোসাইটিতে “জাত”-এর জায়গাতে নাই, যার ফলে সোশ্যাল হিউমিলিয়েশনের ঘটনা কম।) আপনি ডাক্তার, তার মানে খালি ডাক্তার না, একটা “উঁচু জাত”-এ বিলং করেন। এইরকম ইঞ্জিনিয়ার, সরকারি-আমলা, মিলিটারি, পুলিশ, ব্যাংকার, সাংবাদিক সব প্রফেশনেরই একটা “জাত” আছে। ইভেন, সিএনজি-ড্রাইভার, গার্মেন্টস-ওয়ার্কার, রিকশাওলা, বাসার কাজের লোক – উনারাও একটা “জাত”-এর লোকই। “নিচু জাত”। যেই কারণে, একদম বাদ্দ না হইলে কেউ “নিচু জাতের” পেশায় আসতে চান না।

ব্যাপারটা খালি ইনকামের লগে রিলেটেড না। যেমন, সিএনজি-ড্রাইভারের ইনকাম একজন এভারেজ প্রাইভেট অফিসের এন্ট্রি-লেভেল অফিসারের চাইতে কম হওয়ার কথা না, কিন্তু সামাজিক বা প্রফেশনাল “জাত” হিসাবে অনেক “নিচু”। ইভেন, বিজনেস করা লোকজনের “জাত”-ও চাকরি করা লোকজনের চাইতে “নিচু”। এখন এন্টেপ্রেনার হইয়া বা স্টার্ট-আপ কইরা কিছু কনফিউশন তৈরি করা যাইতেছে কিছুটা, কিন্তু ওভারঅল অবস্থাটা এইরকমই যে, “ভার্সিটি পাশ কইরা বিজনেস কেন করতেছে! ক্যারিয়ার হয় নাই মনেহয়!” তো, সত্যি বা মিথ্যার বাইরে এইটা একটা ঘটনা।

২.
এইখানে খালি এইরকম প্রফেশনাল-ক্লাসই না, বরং আরো অনেক “সামাজিক জাত” এক্টিভ আছে, যা খালি পলিটিকালি এবং ইকনোমিকালি না, কালচারালি ফাংশন করে। এবং এই “জাত” মার্কসের ইকনোমিক “ক্লাসের” চাইতে আলাদা। (এর লগে মিল তো আছেই।) এমনকি গ্রামশির সুপার-স্ট্রাকচারের লগে পুরাপুরি মিলানো যাবে না।

এইটা একটা কোর কালচারাল ফেনোমেনা, আমাদের সমাজে। এইভাবে দেখা ও চিন্তা করার ব্যাপারটা। অনেকটা বাই-ডিফল্ট, অটোমেটিক এবং “স্বতঃস্ফূর্ত”!অথচ এইরকম জায়গাগুলাতেই আমাদের নজর দেয়া দরকার।

মানে, আমি বলতে চাইতেছি, এইটা একটা পলিটিকাল এজেন্ডা না, যেইটা বিজেপি কয়েন করছে গত ৩০-৪০ বছরে। বরং এইটা একটা কালচারাল চিন্তার প্রাকটিস যেইটা গত ৩-৪ হাজার বছর ধইরা চালু আছে না, ৩-৪শ বছর ধইরা, মেইনলি কলোনিয়াল পিরিয়ডে শুরু হইছে। এই কালচারাল চিন্তাটার পলিটিকাল আউটকাম হইতেছে বিজেপি’র হিন্দুইজম।

আমি এইটাও বলতে চাইতেছি, যেকোন পলিটিকাল ন্যারেটিভ একটা কালচারাল প্রাকটিসের লগে কানেক্টেড একটা ঘটনা, ঠিকভাবেই হোক, বা বেঠিকভাবে। যদি একটা কালচারাল জাত-প্রথা (ক্লাস-সিস্টেম না) না থাকে, পলিটিকাল হিন্দুজমও এগজিস্ট করতে পারার কথা না।

হিন্দুজম ফাংশনই করে জাত-প্রথার ভিতর দিয়া। যেমন, হিন্দুজমের ভোকাবুলারিতে মুসলমানও কিন্তু একটা “জাত”, “নিচু জাত”; এমনকি নতুন কোন গোষ্ঠী বা দল, যারা এতোদিন ইনক্লুডেড ছিল না বা নাই, তারাও “হিন্দু”, “নিচু জাতের হিন্দু” হিসাবে ইনক্লুডেড। এইটা “ধর্ম”-এর ঘটনা হিসাবে রি-ব্রান্ডিং হইছে কলোনিয়াল আমলে, এখন বিজেপি’র পলিটিকাল প্রজেক্ট হিসাবেই চালু আছে। যেইটা “অখন্ড ভারত” “অরিজিনাল ইন্ডিয়া” নানানরকমের ফেনোমেনা হিসাবেও চালু আছে।

৩.
তো, এখন আসি আমার থার্ড পয়েন্টটাতে। আপনি পলিটিকালি লিবারাল, এমনকি এনার্কিস্ট ও মোস্ট সার্টেনলি “বামপন্থী” হয়াও কালচারাল হিন্দুজমের সাবস্ক্রাইবার হইতে পারেন। ঘটনা এইটা না যে, আপনি জাত-প্রথারে সার্পোট করেন! বরং এর বিলোপ-ই চান, পলিটিকালি, ক্লাস-লেস সোসাইটির ড্রিম থিকা; কিন্তু আপনি বিলিভ করেন “অখন্ড ভারত”-এ, “কালচারাল সুপ্রিমেসি”-তে এবং এমন একটা ওয়ার্ল্ড-ভিউতে যেইটা লিনিয়ার বা মাল্টিপল না, বরং খুবই “কম্পার্টমেন্টাল”।

তো, এইগুলা দুয়েক্টা সিমটম, যেইখানে কালচারাল-হিন্দুজম পলিটিকাল-হিন্দুজমের চাইতে কিছুটা জুদা, এবং মোর ডিপ একটা ঘটনা। আর আমি যা বলতে চাইতেছি, সেইটা জাস্ট টিপ অফ দ্য আইসবার্গ, যার ভিতরের লেয়ারগুলা এখনো ভিজিবল করতে পারি নাই আমরা।

জানুয়ারি ২৬, ২০২৩

নয়া বাকশালের ইন্টেলেকচুয়াল বেইজটা ধরা খাইছে। চেতনা আর বেচাবিক্রি হয় না তেমন। (মানুশ-জন বরং মুখ-টিইপা হাসেই। মিম-টিম বানায়।) বাঙালি-জাতীয়তাবাদের নামে কিছু বাকশালি ন্যারেটিভ ধুঁকে ধুঁকে টিইকা আছে, আর থাকার মধ্যে আছে গিমিকবাজি। অইটাই এখন লাস্ট ভরসা। অইটা সারভাইব করবে না। দুইটা কথা কইতে গেলেই অই গিমিকবাজির মেকাপ খইসা পড়ে, ড্রাকুলার দাঁত বাইর হয়া আসে। মানে, ইন্টেলেকচুয়ালি নয়া বাকশালের প্রজেক্ট খালি সাফারই করতেছে না, একটা ডেড-এন্ডে পৌঁছায়া গেছে আসলে।

কিন্তু খালি ইন্টেলেকচুয়াল থট দিয়া পলিটিকাল মোকাবেলা করতে পারবেন না আপনি। বরং ইন্টেলেকচুয়াল প্রজেক্টগুলা ফেইল মারার কারণে যারা কথা কইতে যাবে, তাদের দিকে আরো “কঠোর”-ই হয়া উঠতে থাকবে এই রিজিম, বাড়তেই থাকবে জুলুমের মাত্রা।

ইকনোমিকালিও বেহাল দশা-ই দেশের। কিন্তু যেহেতু ইনফরমেশনগুলা পাবলিকলি এভেইলেবল না, ব্যাপারগুলা আন্দাজই করতে হয়, টেরই পাওয়া যায়, জোর দিয়া ফ্যাক্টস-ফিগার নিয়া কথা-বলা যায়-না না, কিন্তু যতদিন না পর্যন্ত ক্রাইসিসটা শুরু হইতেছে, চোখের সামনে দেখা যাইতেছে, ততদিন পর্যন্ত সন্দেহ করার স্কোপটা থাকে মানুশের।

কিন্তু ইকনোমিক ক্রাইসিসের কারণে পলিটিকাল রিজিম চেইঞ্জ হবে – এইটাও সম্ভাবনা হিসাবে কমজোরিই, বরং জরুরি অবস্থা ঘোষণা কইরা ক্ষমতার জায়গাটাতে আরো বেশি কন্ট্রোল-ফ্রিক হওয়ার চান্সই বেশি।…

মানে, আমি বলতে চাইতেছি, ইন্টেলেকচুয়াল কথা-বলা এবং ইকনোমিক-এনালাইসিসগুলা অবশ্যই দরকারি জিনিস, কিন্তু কোনভাবেই পলিটিকালি এক্ট করার বিকল্প না। এই আন্দাজটা থাকলে তখন এইগুলারে গ্লোরিফাই করার প্রাকটিসটাও মেবি কম কম করতে পারবো আমরা।

জানুয়ারি ২৮, ২০২৩

বিজি-থাকা এবং আইলসামি-করা

একজনের পোস্ট দেখতেছিলাম, বিজি-থাকা যে খারাপ জিনিস, অই কথা বলতেছিলেন। তো, আমি লাইক প্রায় দিয়া-ই দিছিলাম! মনে মনে এগ্রিও করছিলাম যে, বিজি-থাকা আসলেই খারাপ-জিনিস। আপনারে যদি একটা কাজের পরে আরেকটা কাজের মধ্যে থাকতে হয়, তাইলে তো চিন্তা-ভাবনা করার ফুসরতই পাওয়া যায় না। এইটা খুবই ট্রু। বাঁইচা থাকতে হইলে তো স্পেইস দরকার টাইমের।

পরে নিজের এক্সপেরিয়েন্সের কথা মনে হইলো। খেয়াল কইরা দেখলাম, যেই সময়টাতে আমি কাজে-কামে বিজি ছিলাম (বা থাকি), যেই সময়টাতে দরকারে-অদরকারে সোশাল এক্টিভিটির লগে কানেক্টেড থাকা লাগছে (বা লাগে), অই সময়গুলাতে ক্রিয়েটিভ কাজ-কামেও এক্টিভ থাকছি (বা থাকি)।

মানে, রুটিন কইরা কাজ করতে হইলে, বিজি থাকতে হইলে একটা প্রেশার তো পড়েই। কিন্তু সেইটা ম্যানেজ করতে পারলে খুববেশি মুশকিলের ঘটনা না। মুশকিল হইতেছে, খুব বেশি এনগেইজ হয়া পড়লে, চাপ’টা নিয়া নিলে।

এর এগেনেস্টে আইলসামি-করা আবার খারাপ কিছু না। বা প্রফেলিক কোন জিনিস না, একটা জেনারেল সেন্সে। জাস্ট আইলসামি করা-ই। সারাজীবন আইলসামি কইরা পার কইরা দেয়াটাও টাফ টাস্ক। কিছু কাজ-কাম করতেছি বা করবো – এইরকম একটা সিচুয়েশনে থাকা লাগে এটলিস্ট।

মানে, আইলসামি-করা যেইরকম একটা ওয়ে অফ লাইফ, আমি খুব বিজি আছি বা থাকতেছি – এইটাও একটা প্যাটার্নই শেষমেশ। ভালো যেমন না, তেমন খুববেশি বাজে কোন ঘটনাও না। এইরকম ভাবলাম আর কি আমি।

জানুয়ারি ২৯, ২০২৩

– “আদর্শ বিপ্লবী” –

গতকালকে রকমারি-তে কিছু বই অর্ডার করতে গিয়া ভাবলাম, দেখি তো “আদর্শ” কি বই ছাপায়? এর আগে রওশন আরা মুক্তা যখন অইখানে এডিটর হিসাবে কাজ করতেন তখন একবার কথা হইছিল উনার সাথে, কয়টা বই ছাপাইছেন উনারা, কি কি ধরণের বই ছাপান, এইসব নিয়া। তো দেখলাম, মেইনলি “পপুলার বই” ছাপান উনারা।

মানে, যারা ফেইসবুক-সেলিব্রেটি, করপোরেট-বস, ইউটিউব-গুরু আছে, (বাংলাদেশে খুববেশি নাই, তারপরও ক্যাটাগরি করলে) অইরকম রাইটারের বই-ই বেশি। এর বাইরে ঢাকার সাহিত্য-সিন্ডিকেটের বইও ছাপান কিছু। মানে, বাচ্চাদের বই, বিজনেস-বুক এইসব বই ছাপান না – তা না, বরং ক্যাটাগরি হিসাবে “পপুলার বই”র পাবলিশার হিসাবেই আইডেন্টিফাই করা যায় উনাদেরকে।

তো, এইরকম পপুলার-বইয়ের পাবলিশার হঠাৎ কইরা “বিপ্লবী” হয়া উঠলেন কেন? (হইতে পারবেন না, তা না। কারণটা বুঝতে চাওয়া আর কি।) মানে, যে কোন ঘটনারে শুধুমাত্র ইকনোমিক পারসপেক্টিভে লিমিট কইরা ফেলাটা যেইরকম মুশকিলের, একইভাবে ইকনোমিক পারসপেক্টিভটারে বাদ দিয়া দেখাটাও ঝামেলার। পুরা ঘটনাটাতে এই ইকনোমিক আলাপটা মিসিং বইলাই আমার মনে হইছে।

ঢাকার বাজারে, “পপুলার বই” ছাপাইতেছেন এইরকম পাবলিশার তো আরো কিছু আছেন। এইখানে এখনো একটা প্যাক্ট তৈরি হইতে পারে নাই (বা বাকশালি-এজেন্ট নিয়োগ দেয়া হয় নাই)। এই জায়গাটাতে এখনো একটা কম্পিটিশন আছে। মাওলা, আগামী – এইরকম পাবলিশাররা তো পুরান হইছেন একটু। “ইয়াং পাবলিশার”র কোটা খালি আছে একটু। এই নিয়া কিছুদিন “মারামারি” হয়া একটা ফয়সালা হবে বইলা আমার আশা আছে।

তো, ঘটনাটা এইখানে “আদর্শ” নিয়া না এতোটা, এইটা অবশ্যই ফেইসটা। তবে বাংলাদেশে যে কোন সমালোচনা/ক্রিটিক/আলোচনা অই পর্যন্তই “বিপ্লবী” যতক্ষণ পর্যন্ত এইটা আল্টিমেট পলিটিকাল জুলুমরে কোশ্চেনের বাইরে রাখতে পারে। বাংলা-একাডেমি খারাপ, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় খারাপ, এই সেই। এরপরে ফুলস্টপ দেয়া লাগবে।

কিন্তু এইখানে ঘটনাটা “সরকার-বিরোধী” বই ছাপানো নিয়াই। অইগুলা যে কোন অজুহাতে যে কোন জায়গাতেই ছাপাইতে দেয়া এবং বেচতে দেয়া হবে না। এইটা বাংলা-একাডেমির বইমেলার ঘটনাই না খালি, বইয়ের মার্কেটের বাকশালি-করণের ঘটনা।

তাই বইলা কেউ এইগুলা করবে না – তা-ও না, আপনি ততদিন পর্যন্তই করতে পারবেন, যতদিন পর্যন্ত আপনি “হিট” না হয়া যাইতেছেন! (মানে, আমার কোন ‘ইনোসেন্ট’ পোস্টের লাইক ১০০ ক্রস করলেও ডরে ডরে থাকি আমি।)

মানে, আমি বলতে চাইতেছি না, যারা “আদর্শ-বিপ্লবী”, তারা খারাপ-মানুশ; খারাপ হইলে বড়জোর কিছু “মোল (mole)”, আর ভালো হইলেও এই অবৈধ-শাসনরে, জুলুমরে আরেকটু “মানবিক” হিসাবে দেখতে চান! এইরকম।

তবে মোটামুটি শিওর থাকতে পারেন, আমরা যারা এইসব কথা বলি, আমরা তো খারাপ-ই! 🥱 (বা সবকিছু একটু বেশি বেশি বুঝি! এমনকি আপনাদের মিডিয়া-রিয়ালিটির এন্টেনাতে আমরা তো আসলে এগজিস্টই করি না!)

– ফার্স্ট লাইন –

রিলকে-ই মনেহয় এইরকম সাজেশন দিছিলেন যে, কবিতার ফার্স্ট লাইনটা কাইটা দিবেন! মানে, পয়লা যেইটা মনে হবে সেইটারে নেয়াটা ঠিক হবে না, মিসলিডিং হয়, কবিতার জার্নিটা শুরু হয় সেকেন্ড লাইন থিকা। কারণ অইখান থিকা কবি’র চিন্তাটা শুরু হয়। তো, এইটা একটা টেকনিকাল সাজেশনই। কোন “অবশ্যই পালন করতে হবে”-টাইপের ঘটনা না।

এইরকম ফেসবুক বা অনলাইন স্পেইসে ইন্সটেন্ট রেসপন্স করার একটা ব্যাপার আছে। যে, দুইদিনের আগের ইস্যু নিয়া কথা কইলে তো হবে না! মানে, ব্যাপারটা জরুরি আর না তখন। কিন্তু আমরা যারা ফেসবুকে কম-বেশি এক্টিভ আছি, পাবলিক ইস্যু নিয়া কথা কইতে চাই, তাদের এই ট্রাপে না পড়াটা বেটার, অনেকসময়। কোন ঘটনাতে ইন্সটেন্ট রেসপন্স দিতে হবে – এইটা জরুরি না। (অনেক সময় তো সময়ও থাকে না।) বা সবসময় নতুন একটা পারসপেক্টিভ হাজির করতে হবে – এই জায়গাটারেও এভয়েড করতে পারলে ভালো।

কথা বলতে পারলে তো অবশ্যই ভালো। অই চিন্তা, সময় ও এটাচমেন্ট থাকলে সেইটা করাটাও দরকার। ইন্সটেন্ট কিছু করা যাবে না – তাও না, কিন্তু একবার একটা পজিশন নিয়া ফেললে, পাবলিক ঘটনা বইলাই সেইখান থিকা সইরা আসাটা নিজের জন্য টাফ হয়। ভুল-কথা বলা যাবে-না না, ভুল-কথা বলার পরে ভুল-বলছিলাম – এইটা নিজেরে বলাইতে রাজি করানোটা কঠিন একটা কাজ। আমি বলতে চাইতেছি, ফার্স্ট লাইনটা ভুল মনে হইলে, কাইটা দিতে পারাটা বেটার।

বই ছাপানোর পরে তো সেইটা পাবলিশারেরই সম্পত্তি আসলে। রাইটার একটা রয়ালিটি পান খালি। (যদিও বাংলাদেশে ঘটনা’টা এইরকমের না, পুরাপুরি।) কনটেন্টের মালিক তো অবশ্যই রাইটার, কিন্তু প্রডাক্ট হিসাবে এর ওনারশিপ পাবলিশারেরই হওয়ার কথা।

সেলফ-পাবলিকেশন হইলে তো ঘটনা আলাদাই। তো, আমার নিজের বেশিরভাগ বই আমি নিজেই ছাপাইছি। এর বাইরে তিনজন পাবলিশার আমার বই ছাপাইছেন। এর মধ্যে দুইজন পাবলিশারের লগে তেমন যোগাযোগ নাই। একজন পাবলিশার আমার ছাপানো বইরে অনেক প্রমোট করছেন, মাঝে-মধ্যে রিকোয়েস্টও করেন ছাপানো বইয়ের কথা বলতে। নিজের বইয়ের কথা বলতে তো সমস্যা নাই, কম-বেশি বলিও আমি।
কিন্তু এইবারের বাংলা-একাডেমির বইমেলাতে কোন স্টলে আমার কোন বই বেচা হইতেছে – এইরকম মিনিমাম ইনফো ফেসবুকে শেয়ার কইরা প্রমোট করার ব্যাপারেও নিজের মন থিকাই একটা নারাজি ফিল করতেছি। আমার পজিশন কখনোই এইটা ছিল না যে, বইমেলা করা যাবে না! বরং আমার পজিশন এইটাই যে, বাংলাদেশের বুক-পাবলিকেশন্সের ব্যাপারে বইমেলা নেগেটিভ একটা ইভেন্ট, মূল সমস্যাগুলারে লুকায়া রাখার একটা ঘটনা।

কিন্তু এইবারের বইমেলা তার চাইতে বেশি। সরাসরি বাকশালি একটা ইভেন্ট। (ঢাকা লিটফেস্টও তা-ই ছিল। যদিও ধরণ আলাদা।) বই-ছাপানোর জায়গাগুলারে কন্ট্রোল করার একটা এজেন্ডা নিয়া হাজির হইছে। তো, আমি আগে যেমন খুব বেশি ইন্টারেস্টেড ছিলাম না, এখন সেইটারে প্রমোট করা একজন রাইটার হিসাবে আরো পসিবল না।

ভাবলাম, জিনিসটা পাবলিকলি বইলা রাখাটা বেটার। এইটুকই।

জানুয়ারি ৩০, ২০২৩

অনুমান করা তো ঠিক না, এটলিস্ট হিস্ট্রির জায়গাগুলাতে, কারণ সেইটা বেশিরভাগ সময়ই মিসলিডিং হয়া উঠে। অনুমান আর অনুমান থাকে না, বরং একটা স্টেটমেন্ট হয়া উঠে, যেইটারে সত্যি বইলা প্রমাণ করারও একটা চাপ তৈরি হয়। কিন্তু আবার কিছু অনুমান না কইরা আগানোটাও মুশকিল, বা অনেক অনুমানের কথাও মনেহয়, আর একইসাথে ব্যাপারগুলারে অনুমান হিসাবে ধইরা রাখতে পারাটা আসলে দরকারি জিনিস, টাফ হইলেও।

তারপরও এইরকম কিছু হিস্ট্রিকাল অনুমানের কথা মনেহয়, মাঝে-মধ্যে। এর মধ্যে একটা হইতেছে, বাংলাদেশে যেই কোন জানা-বোঝা, জ্ঞান বা এলেম যে সাধারণ মানুশের জানা-বোঝার চাইতে আলাদা এবং সুপিরিয়র একটা ঘটনা (এখন সেইটা ভার্সিটির টিচার-ই হোক বা ইসলামি স্কলার) – সেইটা মেবি একটা বুড্ডিস্ট ট্রাডিশনের ঘটনা।

বৌদ্ধ মঙ্ক/ভিক্ষুরাই ছিলেন জ্ঞানী, উনারা সাধারণের চাইতে আলাদা হয়া জ্ঞান-চর্চা করতেন, অশোকের পর থিকা উনারা রাজ্য-পরিচালনাতেও ইম্পর্টেন্ট রোলে ছিলেন/থাকতেন। তারপরও মন্দিরের পুরোহিতদের উনারাই চ্যালেঞ্জ করছিলেন। হিন্দু-পুরোহিত হইতে হইলে ব্রাহ্মণ হইতে হইতো, কিন্তু বুড্ডিস্ট ভিক্ষু তো যে কেউ হইতে পারেন, পড়াশোনার ভিতর দিয়া।

কিন্তু পড়াশোনা ভিতর দিয়া উনারা তো “সামথিং ডিফরেন্টই” হইছিলেন মনেহয়। মানে, আমি বলতে চাইতেছি, “সাধারণ”র লগে একটা ডিটাচমেন্ট তৈরি করার বা তৈরি হওয়ার একটা ব্যাপারও ছিল মেবি। যার ফলে, খালি রাজা-বাদশারা উনাদেরকে এই কারণে পছন্দ করতেন না যে, বৌদ্ধ হইলে নিজেদেরকে ক্ষত্রিয় প্রমাণ করাটা মাস্ট হয়া উঠে না, বরং বৌদ্ধরাও সারভাইব করছিলেন এবং ফ্লারিস করছিলেন রাজা-বাদশাদের পেট্রোনাইজেশনের ভিতর দিয়াই। রাজাদের লেজিটিমিসি দিতো ব্রাহ্মণরা শাস্ত্রের বেসিসে; সেইখানে বৌদ্ধরা শাস্ত্রের জায়গাটাতে ইন্টারভেইন করছিলেন। উনারা ব্রাহ্মণ না হইলেও হয়া উঠছিলেন তাদের কম্পিটিটর।

এরপরে ৮শ-৯শ সালের দিকে ভক্তিবাদ একরকম অই মন্দির-মঠের এগেনেস্টে গিয়াই শুরু হইছিল। (যেইটারে বৌদ্ধ-ডমিনেন্স কমতে থাকার একটা কারণ বইলা আমি অনুমান করি।) যার সাথে কালচারালি পারস্যের সুফিজমের একটা দেখা-সাক্ষাত হইতে থাকার কথা, যেইটা মন্দির-মঠের জায়গাতে মসজিদরে সেন্টার কইরা তোলে না।

মানে, আমি বলতে চাইতেছি, জ্ঞান-চর্চা বা একাডেমিয়ার জায়গাটা হিস্ট্রিকালি একটা আপার-ক্লাসের ঘটনা না, বরং একটা সোশাল এক্টিভিটি হিসাবে কমন-পিপলের বাইরে গিয়া পারসিভড হইতে পারার ঘটনা, পলিটিকাল এফিলিয়েশনের জায়গা থিকাও একটা অথরিটি হিসাবে কাজ করার কথা, এবং অই রোলটা ফর্ম হিসাবে একটু এইদিক-সেইদিক হইলেও একটা লেভেলে কম-বেশি এফেক্টিভই থাকার কথা।

আবারো বলি, হিস্ট্রিকাল ঘটনা হিসাবে এইটা ঘটছে – এই দাবি করার জন্য এনাফ ইনফরমেশন আমার কাছে নাই, কিন্তু একটা হাইপোথিসিস হিসাবে ধইরা নিয়া কোন সময় হয়তো যাচাই করার কথা ভাবা যায়।

Leave a Reply