নোটস: ডিসেম্বর, ২০২১ [পার্ট ৩]

ডিসেম্বর ২১, ২০২১

ভালো-মানুশের মিথ

দুনিয়ার সব সমাজেই এই জিনিসটা আছে, কিন্তু আমাদের সমাজে এইটার একস্ট্রা আরো কিছু ভ্যালু আছে, বা বেশ স্ট্রংলি আছে বইলা ফিল করি আমি যে, ভালো-মানুশ হওয়াটা হইতেছে একটা ‘যুক্তি’ বা ‘লজিক’। এর অনেকগুলা সাইড-এফেক্টও আছে, এটলিস্ট তিনটা জিনিসের কথা মনে হইছে এখন।

এক হইতেছে, ‘ভালো-মানুশ’ (একটা স্ট্যান্ডার্ড সেন্সেই) না হয়া আপনি ‘ভালো’ কিছু করতে পারবেন না। মানে, কেউ ভালো-গান গাইতেছে, কিন্তু লোকটা তো ভালো না! তার মানে, তার গান-গাওয়া হইতেছে না আসলে।

এইটা খালি গান না, এনিথিং অ্যান্ড এভরিভ্রিং দিয়া রিপ্লেইস কইরা নিতে পারেন। এর উল্টাও হয় যে, কেউ একজন ভালো-জোকস বলতেছে, তাইলে লোকটা মনেহয় ভালোই। 🙂 একজন মানুশ ‘ভালো’ – এইটার কল্পনা ছাড়া তার কোন কাজরে ‘ভালো’ আমরা মনে করতে পারি না। মানে, কেউ ‘মানুশ হিসাবে ভালো-না’ কিন্তু ‘ভালো-কথা’ বলতেছেন বা ‘ভালো-কাজ’ করতেছেন – এই সিচুয়েশনটা আমাদের পক্ষে চিন্তা করাটা ইজি বা নরমাল কোন ঘটনা না।

আর অন্যদিক দিয়া একজন মানুশ যেহেতু মানুশ হিসাবে ভালো, উনার ভুল-কথা বা ভুল-কাজ এতোটা বাজে-জিনিস না, কারণ উনি তো ভালো-মানুশ!

এখন জিনিসগুলা যে আলাদা – এই দাবি আমার নাই। কিন্তু রিলিভেন্সগুলা স্ট্রেইট ফরোয়ার্ড না। এইভাবে মিলায়া দেখার অভ্যাসটারে আমাদের বরং খেয়াল করাটা দরকার। মোরালিটি এবং ইন্টেলেকচুয়ালিটি অপজিট কোন জিনিস না, কিন্তু কেমনে কাজ করতেছে – সেইটা নিয়া ভাবতে রাজি না-হওয়াটা জায়গাটারে একটা ‘মিথ’ বানায়া ফেলছে এখন, আমাদের সমাজে।

সেকেন্ড ঘটনা হইতেছে, যিনি অ্যাক্ট করতেছেন, তার জায়গা থিকাও এই ঘটনা’টা ঘটতেছে যে, “আমি তো সৎ আছি, আমি ভুল চিন্তা কেমনে করবো!” মানে, ভালো-মানুশ হওয়াটা একটা এডভান্স বা সুপিরিয়র ঘটনা হয়া আছে আমাদের সমাজে, যেইটা হইতেছে আরো বাজে জিনিস। মানে, আপনি ভালো-মানুশ, অন্য কারো ক্ষতি করতেছেন না, এই-সেই, এইটা তো বেসিক! এডভান্স লেভেলের কোন ঘটনা না। আর এইটা খালি সমাজে আপনার রেসপন্সিবিলিটি না, একটা পারসোনাল ঘটনাও যে, মানুশ-হওয়া মানেই হইতেছে ভালো-মানুশ হওয়া, আদারওয়াইজ অইটা তো মানুশ-হওয়া হইতে পারে না! কিন্তু ভালো-মানুশ জিনিসটা একটা সুপিরিয়র বিইং হয়া আছে, আমাদের সমাজে।
যার ফলে দেখবেন, একজন মানুশরে ভালো-না প্রমাণ করাটাই এনাফ, তার কাজ-কামের চিন্তা-ভাবনার এনকাউন্টার করা লাগে না তখন। এমনকি কোন ‘সাধারণ’ (খুবই বাজে টার্ম এইটা) মানুশ যদি ‘ভালো’ হন, তারেও দেখবেন ‘মহান’ বানানির একটা তোড়জোর শুরু হয়। মানে, ভালো-হওয়াটা যেন একসেপশনাল ঘটনা!

থার্ড জিনিসটা আরো বাজে, যখন আপনি ‘ভালো’, আপনি তো আসলে কম্পারেটিভলি ভালো; সমাজে কিছু খারাপ-মানুশ থাকা লাগে তখন। মানে, যখন অনেক অনেক খারাপ-মানুশ আছে সমাজে, তখন ভালো-হওয়াটা আরো বেশি মিনিংফুল হইতে পারে তো! আর ভালো-মানুশ যেহেতু রেয়ার (বাংলায় ব্রাহ্মণদের মতো), তারা কেন টেম্পু’তে, রিকশায় চড়বেন, উনাদের হেলিকপ্টার না থাকুক, দামি-গাড়ি তো থাকা দরকার! (অবশ্য গরিব না হইলে ভালো-মানুশ হওয়াও তো টাফ! 🙁 )

আমি বলতে চাইতেছি, এইখানে ক্রুশিয়াল একটা আলাপ আছে। ভালো-মানুশ জিনিস’টা জাস্ট ইনোসেন্ট কোন ঘটনা না, একটা ব্রাহ্মণবাদের ব্রাঞ্চ বরং অনেকটা। যেইটা সোসাইটির বেসিক একটা জিনিস হওয়ার কথা।…

#########

কনটেক্সট’টা সবসময় ইম্পর্টেন্ট, মিনিং’টার জন্য।

যেমন ধরেন, অনেক জামা-কাপড়ের উপরে জ্যাকেট-টেকেট পরা, হাত-মোজা, ভারি-টুপি, এই-সেই পরা সাইবেরিয়ার কারো ছবি যদি সাহারা মরুভূমির উপরে রাখেন, দেইখাই হাসি আসবে, উইয়ার্ডও লাগবে, বিরক্তও হবেন, শালা পাগল নাকি! মরুভূমিতে এতো ভারী জামা-কাপড় পইরা কি করতেছে! একই ঘটনা ধরেন, হালকা-পাতলা শার্ট, হাফ-প্যান্ট পরা কারো ছবি সাইবেরিয়ার বরফের ব্যাকগ্রাউন্ডে রাখেন, একইরকম উইয়ার্ড লাগবে।

মানে, ছবি (বা কথা’টা) ঠিক রাখেন, খালি ব্যাকগ্রাউন্ডটারে (বা দেখার জায়গাটারে) চেইঞ্জ করেন, মিনিং খালি বদলায়া যাবে না, পুরা উল্টায়া ফেলাটাও পসিবল।

#########

কয়েকদিন আগেই আমার নিউজফিডে আসছিল পোস্ট’টাও, লাইকও দিছিলাম আমি; কিন্তু নাম’টা খেয়াল নাই উনার। উনি বলতেছিলেন, স্টুডেন্টদের ভালো’র জন্য অনেক সংগঠন অনেক দাবি-দাওয়া তোলে, কিন্তু একটা দল (ধরেন, ছাত্র অধিকার পরিষদ) কোন একটা দাবি তুললে অন্য দলগুলা (ছাত্রদল, বা বাম ছাত্র-সংগঠনগুলা) সেইটা নিয়া আর মুভমেন্ট করে না! যে যার এজেন্ডা নিয়া আগায়, কিন্তু যেহেতু অন্যদের সার্পোট পায় না, বা সবাই মিইলা কিছু করে না, এই কারণে মুভমেন্টগুলাও সাকসেসফুল হইতে পারে না।

তো, অইখানে কমেন্ট করতে গিয়া আর করা হয় নাই।

আমার মনে হইতেছিল, ব্যাপারটা এইরকম না, জিজেক যেইরকম বলছিলেন যে, যদি আপনি একসাইটিং হইতে পারেন, হ্যাপি কেন হইবেন! মানে, যদি একসেপশনাল একটা ইস্যু নিয়া কথা কইতে পারেন, নতুন একটা পারসপেক্টিভ থিকা জিনিসগুলারে দেখতে, তাইলে আর সাকসেসফুল হয়া কি করবেন! 🙂 এইরকম বললে, পুরাটা বলা হবে না আসলে।

সাকসেসফুল (বা হ্যাপি) হওয়ার চাইতে একসেপশনাল (বা একসাইটিং) হইতে পারাটা চাইতে জরুরি – এই টেনডেন্সিটা আছে, কম-বেশি; কিন্তু একসেপশনাল (একসাইটিং) হইতে পারাটাই আসলে সাকসেসফুল (হ্যাপি) হওয়ার ঘটনা। যে, আমরা মুভমেন্ট করছি! (সাকসেসফুল হইছি কি হই নাই – অইটা পরের ঘটনা, বা জরুরি না এতোটা।)

মানে, এইটাও পুরাটা না। কিন্তু এই জায়গাটা নিয়া ভাবতে পারাটা দরকার। যেইখানে কোন মঞ্জিলে পৌঁছানোর চাইতে পথ হাঁটার প্লেজারটাই মেইন, ‘আমরা বিপ্লব করতেছি’ বা ‘আমরা পেরেম করতেছি’, সেইটা ‘বিপ্লব’ বা ‘পেরেম’ করার চাইতে যে জরুরি জিনিস। বিপ্লব, পেরেম, কোন মঞ্জিল বা সাকসেসের জায়গাতে যে আমরা পৌঁছাইতে চাই না – তা না, কিন্তু অইখানে গেলে একসেপশনাল থাকতে পারবো তো আমরা? এইরকম একটা ক্রাইসিসও না-থাকার কথা না।

এই কারণে লোকজন একসাথে হন না – এই দাবি করলে বেশিই হবে। কিন্তু অই ফিলিংসের জায়গাগুলারে ইন-ট্যাক্ট রাখতে চাওয়ার একটা ঘটনাও থাকার কথা। (পলিটিক্যালি আমরা ‘একমত’ হইতে পারি না – এইরকম ফিলোসফিক্যাল ডিফরেন্সের বাইরেও।)

মানে, এইটা খালি ‘মেইন শত্রু’রে চিনতে না-পারার ঘটনা, বা ‘ডিভাইড অ্যান্ড রুল’-এর ব্রিটিশ-আমলের কন্সপিরেসির ঘটনাই না; নিজেদের প্লেজার-ডেমনদের খেয়াল না করতে পারার (টাইনি ও টাইটানিক) স্পেইসটাও না-থাকার কথা না।

 

ডিসেম্বর ২২, ২০২১

একটা জেনারেল নিয়ম হিসাবে, ক্ষমতা যত ডিস্ট্রিবিউটিভ বা ছড়ানো বা ভাগ করা জিনিস হবে, সেইটা করাপ্ট হওয়ার সম্ভাবনা তত কমবে। আর যত একটা জায়গাটাতে বা একটা পজিশনে গিয়া জমতে থাকবে বা কুক্ষিগত হবে, তত সেইটা ইভিল বা শয়তান হইতে থাকবে।

সুপ্রিম পাওয়ার বইলা কিছু থাকবে না – তা না, কিন্তু একটা পলিটিক্যাল সিস্টেমে পাওয়ার জিনিসটা যতোটা সম্ভব ছড়ানো, ইন্টিগ্রেটেড এবং sovereign হইতে পারবে, তত বেটার। বাংলাদেশের এখনকার পলিটিক্যাল সিস্টেমে এই ব্যালেন্সটা তো নাই-ই, বরং এখনো একজন ‘নায়ক’-ই খুঁজতেছি আমরা, পলিটিক্যাল সলিউশন হিসাবে। আমার কথা হইতেছে, এইরকম কোন ‘ভালো’ ‘দেশ-দরদি’ লিডার যদি আমরা পাই-ও, সিস্টেমের কারণেই পজিশনটা করাপ্ট এবং ডিক্টেটর হওয়ার পসিবিলিটির মধ্যে থাকবে সবসময়।

আমাদের পলিটিক্যাল সিস্টেমে ক্ষমতার ব্যালেন্সের জায়গাটা নাই। কিভাবে সেইটা ক্রিয়েট করা যায়, অই পসিবিলিটিগুলা নিয়া ভাবতে পারা দরকার আমাদের। (এইটা ২০/২৫ বছর বা ৪/৫টা টার্ম পরে রিভিউ কইরা মডিফাই আর আপগ্রেডও করা লাগবে।) মানে, এইখানে ‘খারাপ-মানুশ’ নাই, সিস্টেমটাই খারাপ – এইটা কোন অজুহাত না, কিছু ক্রিমিনাল-ই আছে ক্ষমতায় এবং ক্ষমতার জায়গাটারে আরো সেন্টারড করতেছে। তো, এইখানে পলিটিক্যাল কাজ’টা ক্রিমিনালদের সরায়া কিছু ভালো-মানুশকে ক্ষমতায় বসানো-ই না খালি, বরং সিস্টেমটা যতটা ক্রিমিনাল কাজ-কাম করার জন্য ফ্রেন্ডলি না হয়া উঠছে, সেইটা যেন কন্টিনিউড না হইতে পারে, অই জায়গাগুলারে তৈরি করাও।

উদাহারণ হিসাবে ধরেন, প্রাইম-মিনিস্টারের ক্ষমতারে চ্যালেঞ্জ করার কোন পজিশন নাই। তার ডিসিশানরে ভেটো দেয়া দূরে থাকুক, আপত্তি জানানোরও কোন জায়গা নাই। যার ফলে পজিশনটা ডিক্টেটর হয়া উঠতে পারছে সহজে। এখন প্রেসিডেন্ট যদি সিলেক্টেড না হয়া ইলেক্টেড একটা পজিশন হইতো কনফ্লিক্ট হয়তো বাড়তো, কিন্তু একটা চেক-পয়েন্ট পাইতে পারতাম আমরা। একটা দলের প্রেসিডেন্টের বদলে দেশের প্রেসিডেন্ট হইতো পজিশন’টা।…

অবভিয়াসলি, এইটাই সমাধান না। কিন্তু এটলিস্ট ৪/৫টা ব্যালেন্স পয়েন্ট দরকার, সুপ্রিম পয়েন্টগুলাতে, যেইগুলা একলগে টাই-আপ হওয়াটা এখন যেমন সহজ, সেইটা হইতে পারে না।

#########

৩/৪ বছর আগের কথা, জয়ের (সায়েম জয়) লগে ক্যাজুয়াল একটা আলাপ হইতেছিল। ও আমারে বলতেছিল, ভাই, সোলস, পার্থ, কুমার বিশ্বজিৎ… এদের গান কি ভালো না? আমি বুঝতে পারতেছিলাম, বাংলাদেশে যারা আর্ট-কালচার, নাটক-সিনেমা-ভিজ্যুয়াল প্রডাকশনের লগে আছেন, তাদের ক্রাইসিস’টা। যে, উনারা যতোটা ‘কলকাতা-আর্টের’* লগে মিল বা resemblance ক্রিয়েট করতে পারেন, বন্ধু-বান্ধবদের কাছ থিকা ততটাই এপ্রিয়িশিয়েশন বা হাততালি পান আসলে। (আমার কবিতাও এই ‘ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর’ 😛 লোকজন অই জায়গা থিকাই কিছুটা নিতে পারেন, বাকি’টা খুবই বাজে বা অস্বস্তিকর ঘটনা বইলা টের পাই আমি।) এর বাইরে, অন্য মিল-টিলের ঘটনাগুলা বরং ঝামেলারই ঘটনা, অইগুলা যতটা এড়ানো যায় বা বাদ দেয়া যায়, ততটা ‘ভালো-আর্ট’ হয়া উঠতে পারে (স্যাডলি)।

তো, আমি ভাবতে পারতেছিলাম যে, জয়ের কোশ্চেনটা (আসলে অস্বস্তিটা) অই জায়গাটা থিকা আসছে যে, বাংলাদেশি কোন ট্রাডিশনের লগে মিল থাকা’টা খারাপ কোন ঘটনা কিনা? অইগুলা কি আসলেই ইনফিরিয়র কোন ঘটনা? তো, এই জায়গা থিকা যদ্দূর মনে পড়ে আমি বলছিলাম যে, যে কোন আর্টিস্টরেই একটা ট্রাডিশনের ভিতর দিয়া যাইতে হয়, অইটা নিয়া ওরিড হওয়ার কিছু নাই। একজন আর্টিস্টের ইন্টারনাল স্ট্রাগল হইতেছে তার ফিলিংসটারে, আত্মাটারে সে কতদূর পর্যন্ত ওপেন-আপ করতে পারতেছে। এগজিস্টিং ফর্মগুলা এতে হেল্প করে না, বরং বেশিরভাগ সময় অবসেক্টল হিসাবেই কাজ করে, কিন্তু অইগুলারে বাদ দিয়া তো যাওয়া সম্ভব না। নতুন আর্ট পুরান আর্টের কন্টিনিউশন না। নতুন আর্ট হইতেছে পুরান আর্টগুলারে একভাবে রিভিউ করার, নতুনভাবে দেখার জায়গাগুলারেই তৈরি করে, একভাবে।

মানে, কোশ্চেনটা এইটা না যে, বাংলাদেশের আগের সময়ের গানগুলা খারাপ বা ভালো কিনা, বরং যেই প্যারামিটার দিয়া ভালো-খারাপ মাপতেছি, সেইগুলা রিলিভেন্ট কিনা। যদি প্রাকটিকাল জায়গা থিকা বলি, বাংলাদেশের গানের বেইজ হিসাবে (মহীনের ঘোড়াগুলির জায়গায়) আজম খান’রে ভাবতে না পারার ঘটনা অনেকটা। 🙂


‘কলকাতা-আর্ট’, ঢাকা-আর্ট, ব্রিটিশ-একসেন্ট, রুশ-ন্যারেটিভ-লিটারেচার, আম্রিকান কান্ট্রিং সং… এইগুলা হইতেছে প্যাটার্ন (ভালো বা খারাপের বাইরেই)। অই প্যাটার্নগুলারে ঠিকঠাক মতো ফলো করতে পারাটাই ভালো-আর্ট না। বাংলাদেশে আরবের খেজুর চাষ করতে পারবেন না, ইউরোপিয়ান কবিতা লেখতে পারবেন না – তা না, কিন্তু প্যাটার্ন হিসাবে আরেকটা জিনিসই হবে সেইটা। কখনোই ‘অরিজিনাল’ হইতে পারবে-না না, এইটা জাস্ট পসিবল না, এবং এই দায় চাপানোটাও পলিটিক্যাল ইল-মোটিভেটেড একটা ঘটনা।

#########

এরশাদের আমলে “বাংলার দামাল ছেলেরা” ইউরোপে গিয়া ব্রাজিল, আর্জেন্টিনারে হারায়া ডানা ও গোথিয়া কাপ জিতছিল, অইটা ছিল তখন “জাতীয় গৌরবের” ঘটনা। আজকে অই ঘটনার কথা মনে হইলো আবার।

গতকালকে [ওয়ার্ল্ড-কাপ না, এশিয়ান না, সাউথ-ইস্ট এশিয়ানও না] সাফ ফুটবলে [জাতীয় পুরুষদল না, জাতীয় নারীদলও না] বাংলাদেশ অনুর্ধ্ব-১৯ নারী দল জিতার ঘটনা’টা যে বাংলাদেশের জন্য “জাতীয় গৌরবের” ঘটনা হয়া উঠছে, সেইটা কোনভাবেই বাজে জিনিস না; কিন্তু যখন এইরকম জিনিসগুলা আমাদের পয়েন্ট অফ কনসার্ন হয়া উঠে, ‘ন্যাশনাল প্রাইডের’ ঘটনা কইরা তোলা হয়, তখন বুঝতে পারা দরকার, বড় কোন মিসটেক হইতেছে এইখানে।

এইগুলা ‘গরু মাইরা জুতা দান’-এর ঘটনা না, বরং লাখ লাখ গরু জবাই হইতেছে কোথাও, জুতা তো পাইবেন না আপনি, অই ঘটনাগুলা যে ঘটতেছে, সেই আওয়াজগুলা যেন শোনা না যায়, সেইটারই ঘটনা।


ডিসেম্বর ২৪, ২০২১

একটা দেশে একসিডেন্ট হওয়াটা যখন নরমাল ঘটনা, তখন আমাদেরকে খেয়াল কইরা দেখতে হবে যে, এইগুলা আসলে একসিডেন্ট কিনা।

আগে যে, বাচ্চা হওয়ার সময় অনেক মেয়ে মারা যাইতো এবং জন্ম নেয়ার পরে পরেই অনেক বাচ্চাও হাম, ডিপথেরিয়া, ডাইরিয়া, নানান অসুখে মারা যাইতো; খারাপ তো লাগতোই লোকজনের, কিন্তু একইসাথে এক রকমের ‘নরমাল’ ব্যাপারও কি ছিল না? যতক্ষণ না পর্যন্ত বাচ্চা জন্ম-দেয়ার পদ্ধতি এবং বাচ্চাদের রোগের ব্যাপারে কিছু না করা হইলো; ভাবা হইলো যে, এইগুলা তো একসিডেন্ট না! এইগুলা সার্টেন কারণে হইতেছে এবং অনেকদূর পর্যন্ত সমাধান করা যায়।

একইরকম ভাবে, বাংলাদেশে ডেইলি যে ১৫/২০ জন মানুশ রোডে-ঘাটে মারা যায়, কয়দিন পরে পরে ফ্যাক্টরিতে, লঞ্চে, বস্তিতে, বাড়ি-ঘরে আগুন লাগে, এইগুলা মোস্টলি একসিডেন্ট না। একটা বাজে সিস্টেমের কন্সিকোয়েন্স, খুনের ঘটনা। আমাদের কিছুই-না-করা বা কিছুই-না-করতে-পারা এইসব একসিডেন্টরে ‘দুই দিনের দুক্খের’ মতন, ‘আল্লার মাল আল্লা’ নিছে টাইপের ‘নরমাল’ বানায়া রাখে।

 

ডিসেম্বর ২৬, ২০২১

এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের যত হিস্ট্রি লেখা হইছে, এবং যেইগুলারে অথেনটিক বইলা দাবি কইরা তার মোটামুটি সবগুলাই* হইতেছে ‘জাতীয়তাবাদের’ জায়গা থিকা লেখা জিনিস। মানে, জাতি হিসাবে ‘বাঙালি’ লোকজন কি কি বাল ফালাইছে – সেইগুলারে হাইলাইট করার ঘটনা। মানে, ধরেন ১০০ বছর আগে এই ঘটনা হয়তো দরকারি বা আধুনিক জিনিস ছিল, কিন্তু এখন এই জায়গাগুলারে তো বরং কোশ্চেন না কইরা আলাপ আগাইতেই পারবো না আমরা।

এইটা মনে হইতেছি রমেশ চন্দ্র মজুমদারের (আর. সি. মজুমদার কইলে চিনবেন অনেকে) হিস্ট্রি’র বই পড়তে গিয়া। ১৯৩০/৪০’র দিকে উনি যে জাতীয়তাবাদী ছিলেন, এমনকি হিন্দুজমের লোক ছিলেন সেইগুলা এখন পড়তে গিয়া ডিসকাউন্ট কইরা নেয়া যায়, কিন্তু তাই বইলা এইগুলার কন্টিনিউশনরে হিস্ট্রি বইলা দাবি করতে গেলে যেইরকম চোখ-কান বন্ধ কইরা রাখতে হয়, সেইটা তো ব্যাকডেটেড ঘটনাই। মানে, হিস্ট্রির কাজ যেইরকম কলোনিয়াল প্রাইডরে ধইরা রাখার ঘটনা না, একইভাবে জাতীয়তাবাদী আবেগরে বুস্ট-আপ করাটাও এর কাজ হইতে পারে না।

এই লাইনে হিস্ট্রির আলাপ করতে গেলে, দুই থিকা তিনটা মেজর ঝামেলা হয়; যেইটা আর. সি. মজুমদারের হিস্ট্রি-রাইটিংগুলা খেয়াল করতে গিয়া মনে হইলো। এক হইলো, ‘জাতি’র ধারণা; খুবই জোর কইরা উনি ‘বাঙালি-জাতি’ বানাইতে চাইতেছেন, যেইখানে উনি দেখতেছেন বাঙালি কখনোই একটা স্পেসিফিক জাতি ছিল না, সবসময় এটলিস্ট তিন-চাইরটা বা তার চাইতে বেশি আইডেন্টিটি এক্টিভ ছিল। এখন যেহতু ‘ইংরেজ জাতি’র বিরোধিতা করতেছি আমরা, আমাদেরকেও একটা ‘জাতি’ বানাইতে হবে তো! মানে, এই যে ‘বাঙালি-জাতি’ এইটা মোস্টলি উনিশ শতকের কলকাতা ও ঢাকা শহরের ‘শিক্ষিত’ ও ‘অভিজাত’ সমাজের আবিষ্কার, যেইটা উনারা হিস্ট্রি-বর্ণনার ভিতর দিয়া কন্সট্রাক্ট করছেন। উনাদের ঈমানী দায়িত্ব হইতেছে, ‘বাঙালি-জাতি’র লেজটা খুঁইজা বাইর করা, তারে ভিজিবল কইরা তোলা। মানে, আমারে ভুল বুইঝেন না যে, জাতি বইলা কিছু নাই! বরং ‘জাতি’ ধারণাটা নানান সময়ে নানানভাবেই কন্সট্রাক্ট হইছে এবং হইতেছে। এই কারণে এইটার বেইজ হিসাবে নিলে, ফোকাসের জায়গাটাতে রাখলে মিসলিডিং হবে আসলে হিস্ট্রির আলাপটা।

যেমন ধরেন, জাতি হিসাবে মহান দেখানোর একটা ক্রাইটেরিয়া হইতেছে, কতো বড় মিলিটারি ছিল রাজাদের, কয়টা রাজ্য দখল করছিল অই সময়ের রাজারা, এইগুলা। কিন্তু এই অঞ্চলে যেহেতু সবসময় ছোট ছোট রাজ্য ছিল, অনেক সময় ধইরা অনেক বড় মিলিটারি এফোর্ড করাই পসিবল ছিল না। মানে, এখনকার কনটেক্সটেই দেখেন, কোন দেশের বড় আর্মড ফোর্স আছে, অবভিয়াসলি বড় বড় দেশগুলার। আর কেন দরকার পড়ে এইগুলার? মানে, অন্য দেশ দখল করা কেন জরুরি? এক হইলো, এই আর্মি’রে খাওয়ানো-পরানোর লাইগাই যুদ্ধ করা দরকার, যদি নতুন দেশ দখল না করতে পারেন এই বড় আর্মি বসায়া বসায়া খাওয়াইবেন কেমনে! আর লোকজনও আর্মিতে কেন জয়েন করবে, এই গ্যারান্টির লাইগাই তো মেইনলি। এখন আপনার যদি বারোমাস খাওয়া-পরার গ্যারান্টি থাকে, চাষের জমি থাকে, আপনি আর্মি’তে কেন জয়েন করবেন? আমার অনুমান হইতেছে, এইগুলা এই অঞ্চলে এনাফ ছিল, পিপলের ঠেকা পড়ে নাই, খাওয়া-পরা’র লাইগা আর্মিতে জয়েন করার, নতুন দেশ ‘জয়’ করার। তো, এইটাই পুরাটা না, ‘শৌর্য্য-বীর্যের’ ঘটনা তো সবসময়ই ছিলো; আমি যে সেরা – এইটা তো প্রমাণ করার দরকার আছে! এই দরকার থিকা কিছু পালোয়ান-গিরি দেখাইতে হইতো, যেইটা মোস্টলি লোক-দেখানি ঘটনাই হওয়ার কথা। নেসিসিটি হিসাবে কখনোই থাকার কথা না। এই একটা অনুমান, আমার ধারণা খুব একটা এক্সপ্লোর করা হয় নাই। মানে, বাংলাদেশের বা এই অঞ্চলের মানুশের বাহাদুরি ছিল-না না, বাহাদুরি দেখানোর কোন দরকার ছিল কিনা।…

থার্ডলি, এই দেশের ধারণা থিকাই আসেন, আমরা এখন যেমন কোন ল্যান্ডের কথা ভাবতে পারি না, যেইখানে কোন দেশের অথরিটি নাই, একইরকমভাবে প্রজেক্ট করা হয় যে, এলাকাগুলা কোন না কোন রাজার আন্ডারেই ছিল। যেইটা বেইজ হিসাবে ভুলই হওয়ার কথা। বরং রাজ্য জিনিসটা আসছে কৃষি-সভ্যতার পরে। জঙ্গলে, পশু-পালনের দিনে, যাযাবর-লাইফে দেশ জিনিসটার কোন রিয়ালিটিই থাকার কথা না। এই যে গুপ্ত আমলের আগে ডেফিনিট কোন হিস্ট্রি আমরা পাই না অইভাবে, এর কারণ হইতেছে, এই ‘রাজ্য’ বা ‘দেশ’ জিনিসটা ফর্ম হইতে টাইম লাগছে, হাজার খানেক বছর আগে গিয়া মেবি পুরাপুরি একটা ফর্মেশনে আসতে পারছে। ইভেন মোগল আমলে গিয়াও নতুন নতুন টেরিটরি ‘রাজ্য’ এবং ‘দেশ’ হিসাবে ইনক্লুডেড হইতে থাকার কথা।

আমি বলতে চাইতেছি, হিস্ট্রিরে ‘জাতি-পরিচয়’ আবিষ্কারের টুল বানায়া ফেললে, হাঁটার আগেই তার ঠ্যাং ভাইঙ্গা দেয়া ঘটনার মতো একটা ব্যাপার হবে। সেকেন্ড হইতেছে, প্যারামিটার বা রেফারেন্সগুলারে স্ট্যাটিক কইরা ফেললে, ভ্যারিয়েবল হিসাবে না ভাবতে পারলে ভুল-ভাল ডিসিশান নিতে থাকবো আমরা। [যেইটা ধরেন, বঙ্কিম করছিলেন, ব্রিটিশ-বয়ানগুলা যেহেতু খুবই বাজে জিনিস ছিল, এর এগেনেস্টে হিন্দু পুরাণগুলারে উনি অথেনটিক ধইরা নিছেন, উনার সময়ে সেইটা হইতে পারে; কিন্তু আর.সি. মজুমদার যে সেইটা কন্টিনিউ করছেন, সেইটা উনার উদ্দেশ্য-কেন্দ্রিকতার জায়গা থিকা বাইর না হইতে পারার ঘটনা আসলে।] থার্ড হইতেছে, ঘটনাগুলারে বর্তমান অবস্থার জায়গা থিকা না দেইখা, মানে প্রেজেন্ট অবস্থার ছায়া পাস্টের উপ্রে না ফেইলা, পাস্টরে একটা কন্টিনিউড প্রসেসের পার্ট হিসাবে দেখতে পারাটা বেটার।…

[ইচ্ছা আছে, ২০২২ সালে এইসব অনুমান নিয়া কথা-বার্তা বলতে থাকবো আমি। বাংলাদেশে হিস্ট্রি নিয়া যেইসব আলাপ আছে, সেইগুলার বেইজ যে কতোটা আন-আপডেটেড অবস্থায় আছে, সেইটা না পইড়া তো নতুন আলাপে যাওয়া যাবে না। দেখা যাক, আল্লা ভরসা!]

… … …
*সবগুলা তো আমি পড়ি নাই, যেইগুলার কথা বলে লোকজন, সেইগুলার কয়েকটা খেয়াল কইরাই এই কথা বলতেছি।

#########

বাংলাদেশের পলিটিক্যাল হিস্ট্রিতে দুইটা ভয়াবহ রাত হইতেছে – মার্চ ২৫, ১৯৭১ আর ডিসেম্বর ২৯, ২০১৮।

২৬ শে মার্চের সকালে আমরা বুঝতে পারছিলাম, বাংলাদেশের মানুশের সামনে যুদ্ধ করা ছাড়া আর কোন রাস্তা খোলা নাই। বাংলাদেশের মানুশ যুদ্ধ করে আলাদা দেশ বানাইছিল, কারণ ১৯৭০’র ইলেকশনের রায় মানা হয় নাই, পিপলের ভোটের মর্যাদা দেয়া হয় নাই।

আর ২০১৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের রাতে, তাহাজ্জুদের নামাজের আগেই ডেমোক্রেসিরে খুন করা হইছিল। মানুশরে ভোট দিতেই দেয়া হয় নাই। ডিসেম্বর ৩০, ২০১৮ সালের সকালে ইলেকশনের নামে একটা নাটক বানায়া দেখাইছিল BAL, মিলিটারি, পুলিশ, সরকারি চাকরিজীবী আর মিডিয়ার কিছু পাপেট।

(এখনো ক্রুশিয়াল মোমেন্টে ‘দেশের মানুশ’ হিসাবে কিছু পাপেট ভাড়া কইরা শাহবাগে টিভি-ক্যামেরার সামনে দাঁড়া করায়া নাটক করানো হয়।)

২০১৮ সালের ২৯ শে ডিসেম্বরের রাতের ঘটনা পঁচিশে মার্চের মতোই প্রি-প্ল্যানড একটা জিনিস, যেইখানে ডেমোক্রেটিক লিগাসিরে খুন কইরা কবর দেয়া হইছিল।

এই কথা সোজা-বাংলায় বলতে পারতে হবে আমাদেরকে। তা নাইলে ডেমোক্রেসির পথে হাঁটা’টাই শুরু করতে পারবো না আমরা।

যারা ইনায়া-বিনায়া এই কথা বলতে রাজি না, এড়ায়া যাইতে চান, তারা বাকশালি শাসনেরই লোক। এই ব্যাপারে কোন সন্দেহ রাইখেন না।

 

ডিসেম্বর ২৭, ২০২১

গতকালকে নেটফ্লিক্স ওপেন কইরা এই জিনিসটা মনে হইলো। বাংলাদেশের টপ টেন তো দেখা যায়। তো অইখানে সেক্স-এডুকেশন টাইপের সিরিজ বা কে-ড্রামা চইলা আসলে কিছু আর্ট-মারানি পিপল-হেটার্স’রা হাসাহাসি করতো (এখনো তো করে আসলে, পাবলিকলি কইতে ডরাইলেও স্মার্টনেস দেখানোর লাইগা ক্লোজ-সার্কেলে এইরকমের বলদামি করে) যে, পাবলিকের চয়েস দেখেন!

এই পিপল-হেটার্সরাই যখন “ডোন্ট লুক আপ” এক নাম্বারে আছে দেখবে, সেইটা নিয়া কথা কইবো না, ঢোক গিইলা ফেলবো। কারণ তাইলে পিপল’স চয়েসরে তো ভালো বলা লাগবে!

কিন্তু ঘটনা হইতেছে, এই যে টপ টেন, পাবলিক চয়েস, এইগুলা খুব কম সময়ই ভালো-খারাপ দিয়া হয়, বরং হয় ট্রেন্ড দিয়া, প্রপাগান্ডা দিয়া, চারপাশের লোকজনের আলাপ-টালাপ দিয়া। যখন দশ জন মানুশ বলতেছে, আরে, এইটা ভালো আছে, তখন অন্যরাও ট্রাই করে। তখন জিনিসটা ‘আলাপের জিনিস’ হয়া উঠে।

মানে, ‘ভালো-জিনিস’ যেমন পপুলার হইতে পারে, ‘বাজে-জিনিস’ও হইতে পারে। এইটা হইতেছে “কি নিয়া মানুশ কথা কইতেছে” – সেইটার ঘটনা। আমার আশে-পাশের দশ জন মানুশ যখন একটা জিনিস নিয়া কথা কইতে থাকবে, সেইটা ইন্টারেস্ট না থাকলেও ‘জানা’ হয়া যাবে আমার।

আমি বলতে চাইতেছি, মানুশ যা নিয়া কথা বলতেছে, সেইটা ‘ভালো-জিনিস’ হইতে হবে – এইটা কখনোই জরুরি না, বরং এইটা একটা মোরাল বা এসথেটিক্যাল সুপিরিয়রিটির দাবি, যে দেখেন, পাবলিকের অবস্থা! আর আমরা, আর্ট-মারানিরা, পাবলিক তো না, ইন্ডিভিজ্যুয়াল ঘটনা। 🙂

#########

বাংলাদেশের পোগতিশীল, লিবারাল-সমাজে যে তালেবান-ঘৃণা চালু আছে, সেইটার কারণ যে পলিটিক্যাল ইসলাম না – তা না; কিন্তু তার চাইতে বড় কারণ হইতেছে আম্রিকার ডামি-সরকারের পোতি ভালোবাসা। অই সদমা মাইনা না নিতে পারার ঘটনাও এইখানে আছে, বা থাকার কথা। যে, অই গর্ভমেন্ট পিপলের ম্যান্ডেট না নিয়া থাকুক, ডেমোক্রেটিক না হোক, এটলিস্ট ‘আধুনিক’ ও ‘লিবারাল’ তো ছিল!

মানে, পিপল পার্টিসিপেশন তো এতোটা জরুরি জিনিস না! 🙂 এইটারে আফগানিস্তানে ‘নরমাল’ বানায়া ফেলা হইছে। এখন তালেবানের শাসনেও এইটার দরকার পড়বে না।

বাংলাদেশেও সেইম ঘটনা ঘটতেছে, একটু রিভার্স। এইখানে পলিটিক্যাল ইসলাম’রে যেহেতু ঠেকায়া রাখছে, এই কারণে নন-ইলেক্টেড, বাকশালি সরকার বেটার। তো, এইটা আসলে যতোটা না ভালো বা খারাপ, তার চাইতে বেশি হইতেছে পিপল পার্টিসিপেশনরে বাতিল করার, নন-ডেমোক্রেটিক লিগাসিরে নরমাল করার, জায়েজ করার একটা ঘটনা।

যার ফলে এইখানে ইন্ডিয়া না হোক, চায়না না হোক, আম্রিকান ব্যাক-আপ তো দরকার!

মানে, বটম লাইন হইতেছে, ডেমোক্রেসি তো হবে একটা আই-ওয়াশ! ডেমোক্রেসি কি বাংলাদেশের মতো ‘অশিক্ষিত’ ‘গ্রাম্য’ ‘গরিব’ দেশের জন্য নাকি! 😎

 

ডিসেম্বর ২৮, ২০২১

পলিটিক্স করা মানেই যে হইতেছে মাস্তানি করতে পারা – বাংলাদেশে এই ট্রাডিশন যারা তৈরি করছিলেন, জয়নাল হাজারী অইসব সেলিব্রেটিদের একজন।

১৯৭১ সালের পরে বাংলাদেশে এই জিনিস এস্টাবিশড হইছে যে, এলাকার যে যত বড় মাস্তান, যত বড় টেররিস্ট, সে হইতেছে তত বড় পলিটিশিয়ান। [এইটা কম-বেশি সবসময়ই ছিল, কিন্তু ‘পলিটিক্স’ হিসাবে আইডেন্টিফাইড হওয়ার ব্যাপারে রাখ-ঢাক থাকার কথা কিছুটা।] বাকশাল আমলে, রাষ্ট্রীয় মদদে এই জিনিস এস্টাবলিশড হইছিল। এই পলিটিক্যাল কালচার থিকা আমরা বাইর হইতে পারি নাই আর। বিএনপিও ‘পলিটিক্সে’ ততটাই পাওয়ারফুল ছিল যতদিন এলাকায় এলাকায় মাস্তানি করতে পারতো। [অন্য অনেককিছুর বাইরে, বামদলগুলার মাস্তান ছিল না বইলাই ‘পলিটিক্স’ হয় নাই, বা এখনো হয় না 🙂 ]

কিন্তু নয়া বাকশালের আমলে এই পুরান মাস্তানদের দরকার নাই তেমন। পুলিশ, রেব, সরকারি চাকরিজীবীদের দিয়াই এই টেরর তৈরির কাজগুলা করা যায়, লোকজনরে ডরের ভিতরে রাখা যায়। একটা রিজার্ভ ফোর্স হিসাবে থাকতে থাকতে উনারা, পুরান-দিনের মাস্তানরা বাতিল হয়া গেছেন একভাবে। ডিসি, এসপি, ওসিদের সাগরেদ হিসাবে টিইকা আছেন। ওস্তাদ হিসাবে বা ড্রাইভিং সিটে আর নাই উনারা এখন।
তো, এই জায়গা থিকা জয়নাল হাজারির জন্য আহাজারি করতেই পারেন অনেকে। মনে হইতে পারে যেন, নায়কের মৃত্যু!

জুলুম করতে পারা যেইখানে পলিটিক্স করতে পারার ঘটনা, সেইখানে জালিমরে হিরো মনে করতে পারাটা তো কোন ইল্যুশন মনে হইতে পারবে না! বরং কেমনে জাস্টিফাই করা যায় চিন্তাটারে, সেই রাস্তাগুলাই সার্চ করা হবে তখন। জয়নাল হাজারীর লাইফ থিকা টেররিস্ট ইভেন্টগুলারে বাদ দেন, দেখবেন উনার ‘পলিটিক্স’ বইলা কিছু নাই আর।

কারণ, অন্য যে কোন জালিমের মতোই বাকশালি পলিটিক্স অইটাই – টেরর তৈরি করা, পিপলরে একটা ডরের মধ্যে রাখা।

বাকশালি পলিটিক্সের মাস্তান জয়নাল হাজারী’র মরার সময়ে এই জিনিসটা আবারো ফিল করতে পারা দরকার আমাদের। তাইলে নতুন পলিটিক্স কি হইতে পারে – সেইটা নিয়া একটু হইলেও নিজেদেরকে রাজি করাইতে পারবো আমরা।

 

ডিসেম্বর ২৯, ২০২১

দুনিয়াতে দুই ধরণের কবি-ই আছেন। [ মানে, আরো অনেক ক্যাটাগরি তো আছে, বা থাকতেই পারে। ]

যারা কবি, কবি হয়া-ই থাকেন, ‘কবি-জীবন যাপন’ করেন, আর মাঝে-মধ্যে কবিতা লেখেন। সেকেন্ড হইতেছে, যারা কবিতা লেখেন, আর কবিতা লেখতে লেখতে কবি হয়া উঠেন। দুইটা ঘটনাই ঘটে আসলে।

যেমন ধরেন, পাবলো নেরুদা – মেইনলি কবি-মানুশ, তবে কবিতাও লেখছেন; তাই বইলা টিএস এলিয়ট কবি-না – তা না, বরং বলা যায় কবিতা লেখার ভিতর দিয়া উনি কবি হয়া উঠছেন। এইরকম আরো অনেক উদাহারণ আসলে আছে। [মিক্স আর ম্যাচও হয়।]

অ্যান্ড দেয়ার ইজ অলওয়েজ অ্যা থার্ড কাইন্ড 🙂 যারা কবি-হওয়া বা কবিতা-লেখার ভিতর দিয়া বা এর বাইরেও মেইনলি ‘কবি হইতে চান!’ তো, এইটা সবসময়ই একটা স্যাড পজিশন। 🙁

এখন এইগুলা কোন নিয়ম-কানুন বা প্যাটার্ন দিয়া ধইরা ফেলতে পারবেন – এইরকম কিছু নাই। কবি ও কবিতার হিস্ট্রির দিকে তাকাইলে এইরকম কিছু স্কেচ দেখতে পাওয়া যায় আর কি!

 

ডিসেম্বর ৩০, ২০২১

এই ভুলগুলা (সি-বিচে ‘সংরক্ষিত এলাকা’* বানানোটা) কেন হয়? – এইটা কোন জটিল আবিষ্কারের ঘটনা না আসলে। বরং যেই কাজ করার কথা, যেই একশন নেয়ার কথা, সেইটা করতে পারে না বইলা এইসব শো-অফ মার্কা কাজকাম করা লাগে।

তো, কোন কাজ করার কথা? ফার্স্টেই তো পাওয়ারের জায়গাটারে কোশ্চেন করার কথা। যারা রেইপ করছে তাদের পাওয়ার’টা কোন জায়গায়? পাওয়ারটা হইতেছে অরা ছাত্রলীগ করে, সরকারি দলের লোকজন বইলা করতে পারে সেইটা। এখন পুলিশ, মিডিয়া, প্রশাসনের মেইন কাজই হইতেছে বাকশালের ইমেজ রক্ষা করা। এইখানে কিছু করার কথাই তো অরা ভাবতে পারে না। কারণ অরাও ছাত্রলীগ, বা ছাত্রলীগ তো অরাই। কাক তো কাকের মাংস খাবে না!

এই কারণে শো-অফগুলা করা লাগে। কোন মুর্খতা বা না-বোঝার জায়গা থিকা না, বরং যা-করতে-পারা দরকার, সেইটা করতে উনারা রাজি না বইলাই এইরকমের ডার্ক হিউমারের ঘটনাগুলা ঘটে। আর বারবার ঘটতেই থাকার কথা।


*নিউজে দেখলাম, বাদ দিছে গতকালকে রাতের বেলায়।

##########

বাংলাদেশের ইয়াং (মানে, ৩০/৩২ বছরের) লোকজনের মনে যে একটা কন্সটেন্ট ডিনায়ালের টেনডেন্সি [এইটা ভালো না, অইটা ভালো না, এইটা ঠিক না, অইটা ঠিক না… ] দেখা যায়, সেইটা সবসময় ক্রিটিক্যাল আন্ডারস্ট্যান্ডিং বা ইন্টেলেকচুয়াল সন্দেহের ঘটনা মনেহয় না, বরং উনাদের লাইফে ভোট দিয়া বা আন্দোলন কইরা কোন গর্ভমেন্ট বদলানোর প্রাকটিক্যাল এক্সপেরিয়েন্সটা যে নাই, সেইটাও ক্রুশিয়াল একটা ঘটনা হইতে পারে।

মানে, পিপলস পাওয়ার বইলা যেই জিনিস, সেইটা তো উনারা কখনো এক্সপেরিয়েন্সই করেন নাই! যার ফলে খালি ইমাজিন কইরা জিনিসটারে ফিল করতে পারার কথা না।

যেই পাখি কোনদিন ওড়ে নাই, সে তো ভাববেই যে ডানা দুইটা আছে হইতেছে নিজেরে বাতাস করার জন্য, এর বাইরে কিছু না! 🙂 মানে, হইতে পারে তো! জাস্ট মনে হইলো, ব্যাপারটা।

 

Leave a Reply