নোটস: ডিসেম্বর, ২০২২ [পার্ট ২]

ডিসেম্বর ১৭, ২০২২

ফুটবল খেলার স্টাইল, ফরম্যাট বা স্কিল-সেটের কথা যদি ধরেন, তাইলে কিন্তু আইডিয়ালি আর্জেন্টিনার খেলা যদি কেউ পছন্দ করেন, তার কিন্তু ব্রাজিলের খেলাও ভালো-লাগার কথা, এবং ভাইস-ভার্সা। মানে, দুইটা টিমেরই ট্রাডিশন হইতেছে স্টাইলিশ ফুটবল খেলা, এমন পাস ক্রিয়েট করা যেইগুলা মোটামুটি আন-বিলিভেবল। খেলায় স্পিড যে নাই – তা না, কিন্তু অইটা মেইন স্ট্রেংথ না, বরং অনেক সময় বল নিয়া চুপচাপ দাঁড়ায়া থাকে, কয়েক সেকেন্ড, মোটামুটি সব খেলাতে। দুই দলই।

অন্য দিকে জার্মানি, ফ্রান্সের খেলার ধরণ কাছাকাছি রকমের। বুলেটের মতো ছোটে! জিতেও বেশি। যেইটারে মোটাদাগে ইউরোপিয়ান ফুটবল বলে লোকজন। যদিও স্পেনের খেলা একইরকম না। নেদারল্যান্ডসও অনেক শরীর দিয়া খেলে।

তো, আমি বলতে চাইতেছি ব্রাজিল ভার্সেস আর্জেন্টিনা – এই যে দুশমনি, এইটা খেলার জায়গার ঘটনা না এতোটা, অন্য অনেক ফ্যাক্টর বরং থাকার কথা এইখানে।

ডিসেম্বর ২০, ২০২২

বদরুউদ্দীন উমর

বদরুউদ্দীন উমর হইতেছেন, সেই সময়ের ইন্টেলেকচুয়াল যখন আইডিয়ালিস্ট হওয়া এবং সোশ্যাল লাইফে ভালো-মানুশ হয়া থাকাটারেই আমরা একটা ইন্টেলেকচুয়াল ঘটনা বইলা দেখতাম। এখন অবশ্যই সময়-সুযোগ মতো পজিশন চেইঞ্জ করতে পারা (মানে, ধান্দাবাজ হওয়া) এবং সোশ্যালি বাটপার হওয়াটা ইন্টেলেকচুয়ালিটির ঘটনা না, যদিও কম-বুদ্ধির মিডিয়া-পিপললরা এইটাই বুঝাইতে চায় আমাদেরকে। বরং আমরা আসলে বুঝতে পারি যে, আইডিয়ালিস্ট হওয়াটা ন্যারো একটা জিনিসই, এবং ভালো-মানুশ হওয়াটা হইতেছে মিনিমাম সোশ্যাল-রিকোয়ারমেন্ট, বা এর যে ন্যারেটিভ, সেইখানে কম-এফেক্টিভ হয়া থাকার একটা ঘটনাও ইনক্লুডেডে। মানে, আমি বলতে চাইতেছি, বাংলাদেশের চিন্তা-ভাবনায় বদরুদ্দীন উমরের ইন্টেলেকচুয়ালিটি একটা পাস্ট বা অতীতের ঘটনা, যেই বেইজটা এখন আর ভ্যালিড তো না-ই, বরং প্রবলেমেটিকই কিছুটা।

এমনকি আইডিওলজিক পজিশনটারে রিভিউ করতে রাজি না হয়া বদরুদ্দীন উমর কিছু হিস্ট্রিকাল-লাইও প্রডিউস করছেন। (এইরকম একটা নমুনার লিংক নিচের কমেন্টে দিতেছি।) আমার ধারণা, এইরকম আইডিওলজি-এক্সট্রিমিস্ট হওয়ার বিপদ নিয়া আমরা খুববেশি কনশাস হইতে পারি নাই এখনো। যে, উনারা তো ভালো-মানুশ! আর যিনি ভালো-মানুশ তিনি তো ভুল-কথা কইতে পারেন না! এখন একজন জানা-বোঝা লোক খারাপ-মানুশ হইবেন না – এইটা আমাদের এক্সপেক্টশন, এবং এইটা খারাপ-এক্সপেক্টশন না, কিন্তু কেউ একজন ভালো-মানুশ বইলাই ঠিক-কথা বলতেছেন – এইটা ভুল একটা প্রিমাইজ, কোন ডাউট ছাড়াই। তো, বদরুদ্দীন উমরসহ অন্য বামপন্থী-বুদ্দিজীবী’রা এই ভুল-প্রিমাইজটার উপর ভর দিয়াই চলতেছেন, যেইটা এখন আর সাসটেইন করতে পারতেছে না। (বা এখনো পারলেও, বেশিদিন আর পারবে না আসলে।)

সবচে আনফরচুনেট ঘটনা হইতেছে, উনার চিন্তার কোন ক্রিটিক তো দূরে থাক, কোন সিগনিফিকেন্সও এখন পর্যন্ত হাইলাইট করা হয় নাই। কয়েকজনরে বলতে শুনি, উনার এই এই বই ভালো! কিন্তু কেন ভালো? – এই নিয়া আলাপ দেখবেন মিসিংই না খালি, নাই-ই। মানে, বাংলাদেশে, আমাদের চিন্তা-ভাবনার দুনিয়াতে উনার চিন্তা-ভাবনার রিলিভেন্সটা আসলে কই? (আমি কোশ্চেন হিসাবেই বলতেছি। ইন ফিউচার, কোন একটা আনসার দেয়ার ট্রাই আমিও করবো মনেহয়।)

ডিসেম্বর ২৩, ২০২২

– মেট্রোরেল হয়া উঠবে বাংলাদেশের সবচে বড় ইকোনোমিক অভিশাপগুলার একটা –

মেট্রোরেলের একটা ছোট এবং মোস্টলি আন-ইম্পর্টেন্ট অংশের শুরুর দিনের প্রোগ্রামের জন্য পুলিশ যেই ৭ দফা 🙂 দিছে, এর উদ্দেশ্য আমার কাছে সিকিওরিটি বইলা মনেহয় নাই। মানে, এইটা তো আছেই। কিন্তু এই অবৈধ-সরকার এর লগে সুন্দর একটা ইমেজও চায় আসলে ‘উন্নয়ন’-এর!

আর আমাদের ইউরোপিয়ান-এসথেটিকসে কম-মানুশ মানেই তো বেশি সুন্দর! বারান্দায় কাপড় নাড়া তো ‘নিন্ম-রুচি’র ব্যাপার! মানুশ-জন হাভাতের মতো দাঁড়ায়া থাকবে কেনো!

আমার তো মনেহয়, পারলে অই এলাকার সব মানুশরে বাইরই কইরা দিতো অইদিন! তবে বাইর না কইরা দিলেও সরকারি-হরতাল বা কারফিউ জারি থাকবে। মানুশ মানেই তো ডিস্টার্বিং জিনিস! এই জন্যই তো ভোট দেয়ার কোন দরকার নাই! 🙂

২.
পদ্মা-সেতু ব্যাপারে যেইটা বলছিলাম, মেট্রোরেলের ব্যাপারেও আমার পজিশন একই। মেট্রোরেল করা অবশ্যই খারাপ জিনিস না, কিন্তু এইটা করা হইছে টাকা মাইরা বিদেশে পাচার করার লাইগা। এখন নাম-কা-ওয়াস্তে চালু হইতেছে। ইলেকশন আইতেছে বইলা শো করার লাইগা।

এইটা ইকোনোমিক্যালি খুবই ভয়াবহ একটা জিনিস। যারা পাটিগণিত করছেন ক্লাস নাইন-টেনে (আর প্রাকটিক্যাল কিছু অনুমান করতে পারেন), হিসাব করলে দেখতে পাইবেন ৫০ বছরেও এই মেট্রোরেলের খরচের টাকা উঠবে না। ঢাকা শহরের ট্রাফিক-জ্যাম কমার চান্সও কমই।
অন্য সব ফ্যাসিস্টদের মতো বাংলাদেশি-ফ্যাসিস্ট বাকশালেরও কয়টা সিম্বল দরকার। বড় বড় হাতি-ঘোড়া দরকার। মেট্রোরেল হইতেছে অই মরা হাতি। যেই লাশ সরাইতেও অনেক সাফার করা লাগবে বাংলাদেশের মানুশের।

৩.
আর মোস্ট ইম্পর্টেন্টলি, এইটা মানুশের কথা ভাইবা করা হয় নাই। পদ্মা-ব্রিজ নিয়া এখন কোন খবর দেখবেন নাই। অই রাস্তায় ৫-৭ সাতবার যাওয়া-আসা করছি আমি। প্রাইভেট কার আর মাইক্রোবাসই চলে। আর অল্প কিছু দামি এসি-বাস। নরমাল কোন বাস অই ব্রিজ দিয়া চালানো পসিবল না, টোলের কারণে। কোন মালের ট্রাকও যাওয়া-আসা করে না তেমন। (চোখের আন্দাজে বলতেছি, টোটাল গাড়ির ১০%-এর বেশি হবে না নরমাল নন-এসি বাস আর বেসরকারি ট্রাকের পরিমাণ।)

অনেকে হিসাব দিছিলেন, ২৫ বছরে পদ্মা-ব্রিজের লোনের টাকা শোধ হয়া যাবে। আমি বলছি, ৫০ বছরের টোলের টাকা দিয়াও এই ব্রিজের লোনের টাকা শোধ হবে না।

বিদ্যুত-খাত এবং পদ্মা-ব্রিজের পরে, মেট্রোরেল হয়া উঠবে বাংলাদেশের সবচে বড় ইকোনোমিক অভিশাপ। [আই হোপ যে, আমার কথা ভুল হোক, কিন্তু হওয়ার চান্স আসলেই কম।]

ডিসেম্বর ২৪, ২০২২

বাকশালি-মিডিয়ার এখনকার পলিটিক্যাল-নিউজের লগে এইটিইজের সময়কার রেইপের নিউজের একটা ভালো মিল আছে।

অই সময়ের সাপ্তাহিক ছায়াছন্দ, রোববার, অপরাধ জগত… এই টাইপের ম্যাগাজিনগুলা যারা দেখছেন, মনে করতে পারবেন খুবই ইরোটিক বর্ণনা থাকতো রেইপের, ভিক্টিমের অসহায় ছবি এবং ‘নারীরা কতো অসহায়’ – তার উদাহারণ। রেপিস্টের নামও অনেক সময় থাকতো না। থাকলেও দেখানো হইতো যে, দেখেন, কতো পাওয়ারফুল এরা!

তো, বিএনপি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের জামিন আবেদন মনেহয় ৪-৫ বার নামঞ্জুর হইছে, রাষ্ট্রচিন্তার প্রীতমের দাশের মনেহয় ৭ বার। কিন্তু কোন আদালত বাতিল করছে? তার নামটাও নাই! এই অবৈধ-সরকার তো ভূতে চালায় না, কিছু মেরুদন্ড-ছাড়া না বরং করাপ্টেড লোকজনই তো চালাইতেছে এইটা। অই লোকগুলার (পড়েন, রেপিস্টগুলার) নাম গোপন করা (এবং গোপন কইরা পাওয়ারফুল হিসাবে পোর্টেট করাটা) হইতেছে বাকশালি-মিডিয়ার কাজ। কোন জজ, কোন আদালত জামিন দিতেছে বা দিতেছে না, সেই নাম পাবলিকলি বলতে তো কোন নিষেধ থাকার কথা না! কিন্তু এরা বলবে না। এমনকি উনাদের পার্টির লোকজনও একইরকমের ন্যারেটিভের মধ্যে আটকায়া আছেন।

কয়দিন আগে যেই পুলিশ গুলি করতো, তারে হিরো বানায়া দেয়া হইতো, কিন্তু দেখেন যখনই নাম নেয়া শুরু হইলো, তখন কিন্তু ব্যক্তি হিসাবে তার একটা রেসপন্সিবিলিটি এইখানে যোগ হইলো। সিস্টেম খারাপ, কিন্তু সিস্টেমটা তো কোন অবজেক্টিভ জিনিস না, এই খারাপ সিস্টেমটারে যারা চালু রাখতেছে, তাদের পারসোনাল দায়টারে তো গোপন কইরা যাওয়া যায় না।

উনারা জামিন দিতেছেন না – এই কারণে যেন উনারা পাওয়ারফুল, করাপ্টেড না; এই ভিউটা সবসময়ই এড়ায়া যাওয়া হইতেছে।

(এইরকমের একটা আন-স্পোকেন ভিউও আছে যে, উনারা চাপে পইড়া, বাধ্য হয়া এই কাজ করতেছেন – এইরকমের একটা কাহিনি কয়দিন আগে বলার ট্রাই করতো বাকশালি-মিডিয়ার লোকজনও। কিন্তু এইটা যে সত্যি না সেইটা এখন আমরা আরো স্পষ্টভাবে টের পাইতেছি। গর্ভমেন্টের ভিতরের বাকশালি-দালালগুলাও এইরকম একটা ভাবে আকামগুলা কইরা যাইতেছে আসলে।)

তো, আমি বলবো, বাকশালি-ফেমিনিজমের মতন প্যার্টিয়ার্কিরে ইনভিজিবল কোন জিনিস না বানায়া, নাম নিয়া বলেন। নাম নিয়া স্পষ্ট কইরা কথা বলতে পারতে হবে আমাদেরকে, তা নাইলে কথাগুলার কোন পলিটিক্যাল ভ্যালু তৈরি হইতে পারবে না।

***

– ফেইসবুকের ফেইক ফ্রিডম –

আমার ধারণা, ২০২৩ সালে বাংলাদেশের অনলাইন দুনিয়া আরো ন্যারো হইতে থাকবে, কন্ট্রোল আরো বাড়বে। স্পেশালি ফেইসবুকের ফেইক একটা ফ্রিডম যে আমরা ফিল করি, সেইটা আরো রেস্ট্রিক্টেড হবে।

কিছু বলদ-সেলিব্রেটি তো সবসময়ই থাকবে। কিছু এক্টিভিস্টও থাকবে, যাদের “দাঁত নাই, চোখ নাই, শিং নাই” এইরকম। এর বাইরে যাদের পারসোনাল যোগাযোগ আছে, তারাও টিইকা যাইতে পারবেন হয়তো। কিন্তু পলিটিক্যালি ভোকাল ২-৩ হাজার আইডি’রে রেস্ট্রিক্ট কইরা দিতে পারলেই মেবি চারপাশটারে সুন্দর এবং “কোন আওয়াজ কি আছে!”-টাইপের অবস্থায় নিয়া যাওয়া যাবে।

তবে এই রেস্ট্রিকশন এবং রিচের ঘটনা এতোটা অটোমেটিক না, ম্যানুয়ালিই করা হয় বইলা আমার ধারণা। ঘটনাগুলা মেবি অনেক উইয়ার্ড ভাবেই ঘটে। যেমন আমার কোন পোস্টের স্প্রেড যখন কমায়া দেয়া হবে, সেইটা টের পাই একটা নোটিফিকেশনের ভিতর দিয়া। একটা ফেইসবুক গ্রুপের এডমিন আমি, অইখানে এখন মনেহয় ৩০-৪০ হাজার মেম্বার আছে, দিনে ২০-২৫টা পোস্ট দেয় মেম্বার’রা। তো, অই গ্রুপের মডারেটর নোটিফিকেশন আসতে থাকে। মানে, ঢুইকা দেখি, অইটা তেমন কিছুই না!

তো, অইটারে একটা সিগন্যাল হিসাবেই রিড করতে পারি এখন 🙂

২.
আমি বলতে চাইতেছি, ডিজিটাল প্রেজেন্সটার কন্ট্রোল নিতে হবে না, বরং বুঝতে পারতে হবে যে, যতক্ষণ পর্যন্ত এই জায়গাটারে ম্যানিপুলেট করা যাইতেছে, ততক্ষণ পর্যন্ত এইটা এফেক্টিভ কোন টুল হইতে পারবে না।

পলিটিক্যালি এফেক্টিভ হইতে হইলে ওয়ান টু ওয়ান, ম্যান টু ম্যান কমিউনিকেশন ছাড়া বেটার কোন রাস্তা নাই। যেই কারণে পলিটিক্যাল দলের স্ট্রাকচারটাই এখনো পর্যন্ত সবচে কাজের জিনিস। ডিজিটাল প্লাটফর্মে সেইটারে ইনটেন্স কইরা তোলা যায়, কিন্তু লং-টার্মে সাসটেইন করা পসিবল না।

***

বাংলাদেশে কত পারসেন্ট মানুশ কোন না কোন পার্টির রেজিস্ট্রার্ড মেম্বার? বিএনপি, আওমি লিগ, জাতীয় পার্টি, জামাতে ইসলামি… মানে, যে কোন দলেরই হোক, টোটাল নাম্বারটা কতো? কোন ডেটা কি আছে কোথাও?

আমার একটা আন্দাজ হইতেছে, দেশের টোটাল ভোটার সংখ্যার এটলিস্ট ৫% মানুশের পলিটিক্যাল এনগেইজমেন্ট থাকলে বেটার। বাংলাদেশে ভোটার সংখ্যা ১০ কোটির বেশি, সেই হিসাবে ৫০ লাখ মেম্বার কি হবে সব পলিটিক্যাল দলগুলার?

মানে, স্বার্থের কারণেই করুক; মেম্বার, চেয়ারম্যান ইলেকশনের জন্য, ঠিকাদারি বিজনেসের জন্য যেই কারণেই করুক… বা অনেকে যে বলেন, দলের রুট লেভেলে ভোটাভুটি থাকতে হবে, অই জন্যও তো দরকার।

আমার ধারণা, ইউনিয়ন, থানা, উপজেলা, জেলা, ওয়ার্ড, নগর, সেন্ট্রাল কমিটির লোকজন, এবং লিডারদের সঙ্গ-পাঙ্গ ছাড়া নরমালি রাজনীতি করেন – এইরকম লোক রেয়ারই বাংলাদেশে। বরং সমাজে পাওয়ারফুল হয়া উঠলে, বড় বিজনেসম্যান হইলে, এলাকার কমিশনার হইতে হইলেও অনেক সময় কোন না কোন পলিটিক্যাল দলের শেল্টার নিতে হয়।

মানে, আমি বলতে চাইতেছি, বাংলাদেশে পলিটিক্স করেন – এইরকম লোকের সংখ্যা কমই, মেবি ভোটারদের ৫%-ও হবে না। এইটা কোন পজিটিভ জিনিস না আর কি! অবশ্য ঘটনা তো এইটুকই না, অন্য আরো অনেক আলাপ তো আছেই!

ডিসেম্বর ২৫, ২০২২

আমার ধারণা, আগের দিনে রাজার ধর্মই ছিল অই এলাকার মানুশের ধর্ম। নিজেদের আলাদা কোন ধর্ম বা লোকাল রিচুয়ালগুলা ছিল না – তা না, কিন্তু রাজার ধর্মও পালন করা লাগতো মেবি।

তো, আমরা এখন কম-বেশি একটা ক্রিশ্চিয়ানিটির দুনিয়াতেই আছি। যার ফলে আমাদের ধর্ম বিশ্বাস বা রিচুয়াল যা-ই থাকুক, ক্রিশ্চিনিয়াটির সেলিব্রেশন রাজার ধর্ম হিসাবে আছে। ভিজ্যুয়াল হিসাবেও স্ট্রং একটা এপিয়েরেন্স থাকার কথা আমাদের মগজে, চিন্তা-ভাবনায়! মানে, বাংলাদেশের খ্রিশ্চান সম্প্রদায়ের ‘প্রান্তিক’ কোন জিনিস না এইটা। ক্যাপিটালিস্ট গ্লোবাল কালচারের ঘটনাই।

তো, যা-ই হোক, ম্যারি ক্রিসমাস! 🙂

***

ডিসেম্বর ২৭, ২০২২

– সুগার-ড্যাডি –

যে কোন কিছুই উদাহারণ দিয়া বলতে পারলে বেটার। মানে, উদাহারণটাই ঘটনাটা না, কিন্তু উদাহারণটা যেইটা করে, কনটেক্সটটারে তৈরি করে, যার ভিতর দিয়া কথাটা স্পষ্ট হইতে পারে অনেক বেশি। অবশ্য একইসাথে উদাহারণটারে সত্যি বইলা ভাবার একটা জায়গা তৈরি হইতে থাকে, যেইটা থিকা ঘটনাটারে আলাদা করাটা কঠিনই হয় একটু, তারপরও অইটা বেটার।

তো, সিলসিলা (১৯৮১) সিনেমার এই ঘটনাটারে দেখতে পারেন। সিনেমাতে অমিতাভ বচ্চন হইতেছেন রাইটার। উনি একটা নাটক লেখছেন, এখন নাটকটা মঞ্চে দেখাইতে চান, তখন তার এক ফ্রেন্ড বুদ্ধি দেয় যে, অই মহিলার কাছে চল, উনি যদি পছন্দ করে, তাইলেই হবে। কিন্তু উনার লগে ভালো-মতো ফ্লার্ট করা লাগবে, কচি-পোলাদেরকে উনি পছন্দ করেন 🙂 তো, বাকিটা ভিডিও-তে দেইখা নিতে পারেন।

[কপিরাইটের কারণে ভিডিও’টা দেখা যাইতেছে না। সিলসিলা সিনেমার ৩৮ – ৪৫ মিনিটের সময়কার জায়গাটা দেইখা নিতে পারেন, অনলাইনে কোন লিংক পাইলে। জিনিসটা ইন্টারেস্টিং আছে।]

মানে, যারা ইয়াং এবং প্রতিভাবান, তাদেরও তো সমাজের সিনিয়রদের এবং যার যার ফিল্ডে এস্টাবলিশড লোকজনের হেল্প লাগে, রিকগনিশন লাগে, বেশিরভাগ সময়। কিন্তু সিনেমাতে যেইরকম দেখানো হইছে, জেন্ডার-রোলটা তার উল্টাটাই হয়। মানে, সমাজের পাওয়ারফুল পজিশনে বেটা-মানুশরাই থাকেন, নরমালি।

যেমন ধরেন, আপনি একটা কবিতা বা গল্প লেখছেন, কোন পত্রিকাতে ছাপাইবেন, বাংলাদেশে কয়জন ফিমেইল-এডিটর আছেন? 🙂 বা ধরেন, সিনেমা বানাইবেন, ফাইনান্সার কয়জন পুরুষ আর কয়জন নারী? বা যে কোন প্রফেশনাল-ফিল্ডেই পাওয়ারফুল সিনিয়র’রা সবাই মোটামুটি বেটা-মানুশই। আর সোশ্যাল-সাকসেসের জন্য (খারাপ বা ভালো যেই কিসিমেরই হোক) এইসব লোকদেরকে কনভিন্স করার দরকার পড়ে।

আর আমার কথাটা এই জায়গাটাতেই।

মানে, আপনি ছেলে হন আর মেয়েই হন, আপনার চাইতে বয়সে বড় লোকজনের লগে আপনারে এক ধরণের ইন্টার-একশনে যাইতে হয়, আর জেন্ডার-রোল যদি অপজিট হয়, সেই জায়গাতে এক ধরণের সেক্সুয়াল টেনশনও থাকার কথাই। মি-টু মুভমেন্টের যেই স্পিরিট’টা, সেইটা হইতেছে সমাজে পাওয়ারফুল লোকজনের সেক্সুয়াল-ক্রাইম; আর এই পাওয়ার হিস্ট্রিক্যালি বেটা-মানুশদেরই আছে। কিন্তু এগেইন, অই ইন্টার-একশনের জায়গাটারে এড়ায়া যাওয়াটা তো মোটামুটি ইম্পসিবলই।

আমি বলতে চাইতেছি, ‘সুগার ড্যাডি’ টার্মটা অই সেক্সুয়াল টেনশনের জায়গাটারেই এক্সপোজ করে না খালি, মেয়েদেরকে পাওয়ারফুল বেটা-মানুশদের লগে এক ধরণের ইন্টার-একশনে যাইতে পারার জায়গাটারে আরো ভালনারেবল করার ব্যাপারেও কন্ট্রিবিউট করতে পারার কথা কিছুটা 🙂

***

– আবু ত্বহা মুহাম্মদ আদনান –

নিউজফিডে আবু ত্বহা মুহাম্মদ আদনানের একটা ভিডিও দেইখা উনার পেইজ সাবস্ক্রাইব করলাম। কিছুদিন আগে উনার একটা ওয়াজ মাহফিল নিয়া কিছু সমস্যা হইছিল মনেহয়। অইটা কেমনে, কি হইছিল সেইটা নিয়া বলতেছেন। তারও আগে, উনারে গুম করার একটা চেষ্টা হইছিল।
এই দুইটা ঘটনা থিকা উনার নাম শুনছি। উনি একজন সেলিব্রেটি মানুশ। একটা জিনিস খেয়াল করলেই দেখতে পাইবেন, বাংলাদেশে যারাই একটু সেলিব্রেটি হয়া উঠেন এবং নয়া-বাকশালের কাছে নাকে খত দিয়া গোলামি করেন না, তাদেরকে চান্স পাইলেই হেনস্তা করে বাকশালি-মিডিয়ার লোকজন। এইখানে ইসলাম, সেক্যুলার কোন ভেদাভেদ নাই। যে কোন পাবলিক-ফিগাররেই অরা ডরায়! দমায়া রাখতে চায়। আবু ত্বহা মুহাম্মদ আদনান মনেহয় এই ক্যাটাগিরতে পড়েন।

তো, আজকে উনার তিন-চাইরটা ক্লিপ দেখলাম। ব্রডলি তিনটা জিনিস চোখে পড়লো।

এক হইতেছে, দেখবেন উনি খুবই ‘শুদ্ধ-ভাষায়’ কথা বলেন! যেইরকম আমাদের একটা এক্সপেক্টশন আছে যে, হুজুররা তো ‘আঞ্চলিক-ভাষায়’ (বালের একটা টার্ম) কথা কইবেন! উনারা তো ‘কুসংস্কারচ্ছন্ন’ এবং ‘অশিক্ষিত’! কিন্তু উনি খালি ‘শুদ্ধ-ভাষায়’ কথাই বলেন না, মাঝে-মধ্যে ‘শিক্ষিত মধ্যবিত্তদের’ মতো ইংলিশ-ওয়ার্ডও বলেন। এমনকি উনি অনার্স-মাস্টার্সও পাস করছেন!

তো, উনার এই ভাষা-ভঙ্গিমা একটা কোর ঘটনা, উনার স্পেশাল সিগনেচার। যেইরকম দেখবেন, পিনাকি ভট্টাচার্য মোর কমিউনিকেটিভ হওয়ার লাইগা ‘আঞ্চলিক’ হইতে চান, সেইখানে আবু ত্বহা মুহাম্মদ আদনান ‘শুদ্ধ’ ‘প্রমিত’ হয়া পাওয়ারফুল হয়া উঠছেন!

সেকেন্ড ঘটনা হইতেছে, উনার ৭-৮ জনের একটা টিম আছে, যারা উনার বয়ানের, মাহফিলের ভিডিও করে এবং ইউটিউব পেইজ ম্যানেজ করে। এইটা উনারে একটা বড় মাইলেজ দিছে বইলাও প্রচার করা হয়। তো, ঘটনা এইটা না খালি, বরং তার চাইতে আরো বড় একটা পারসপেক্টিভ থিকা দেখার লাইগা আমি বলবো।

ঢাকার পটুয়াটুলিতে যে ক্যাসেটের একটা বিশাল বাজার তৈরি হইছিল, ১৯৮০’র দশকে। লাখ লাখ ক্যাসেট যে বেচা হইতো, কি জিনিস বেচা হইতো? কারা কিনতো? বা তারও আগে যান, কলকাতার গ্রামোফোন কোম্পানির বেস্ট সেলিং আইটেমগুলা কি ছিল? ‘আধুনিক গান’ না আব্বাসউদ্দিনের গান। পটুয়াটুলিতেও ‘ব্যান্ডের ক্যাসেট’ বেচা হইতো না, বেচা হইতো মাইজভান্ডারি গান, ওয়াজ, পালাগান, এইগুলাই। (মাওলানা সাঈদী ছিলেন তখনকার লোক। মমতাজ, মুজিব পরদেশী, আরো অনেকে্) যারা কিনতো, তাদেরকে ‘কনজ্যুমার’ বইলা ভাবতে মিডল-ক্লাস রাজি ছিল না, এখনো নাই।

যার ফলে, ইউটিউবে দেখার মতো কি আছে আসলে, বাংলাদেশি কনটেন্ট? যেইটা দেশের ‘অশিক্ষিত’ ‘মুর্খ’ (এইগুলা মিক্লা টার্মই) মানুশ-জন দেখবে? খুব বেশি কিছু নাই। আমাদের মিডল-ক্লাস ডমিনেন্ট কালচারাল-ইন্ড্রাস্ট্রিতে এইরকম কোন প্রডাক্ট-ই তো নাই! কেউ এইরকমের চিন্তা-ভাবনা করতে পারেন বইলাও মনেহয় না আমার। তো, যারা ইউটিউব দেখেন, উনারা আবু ত্বহা মুহাম্মদ আদনানের ভিডিওরে নিজেদের কাছের জিনিস বইলা পাইতে পারার কথা। যে, অডিয়েন্স হিসাবে, কনজ্যুমার হিসাবে তাদের লগে কথা কইতে চায়।

এইখানে আসে থার্ড পয়েন্টটা। উনি ‘নারী অধিকার’ বিরোধী কথা বলেন বইলা পপুলার – এইটা খুব বেশি লজিক্যাল কারণ বইলা মনেহয় না আমার কাছে। কারণ খালি ওয়াজ মাহফিলেই না, কর্পোরেট মিটিংগুলাতেও দেখবেন, ওপেনলি একটু জেন্ডার-সেন্সেটিভ জোকস না করতে পারলে ঠিক ‘স্মার্ট’ হওয়া যায় না; মানে, এইটা অন্য মামলা। বরং উনি যেই ‘রূপক’ ‘উপমা’ ‘টোন’ ইউজ করেন, সেইটা অডিয়েন্সের লগে মিলে, একই টিউনে থাকে; “মাথার উপর দিয়া যায় না” 🙂

যেমন ধরেন, উনি একটা ভিডিওতে বলতেছিলেন, “আমার দুইজন পরিবার”; এর মানে হইতেছে, উনি দুইটা বিয়া করছেন। অথচ মিডল-ক্লাস সমাজে কিন্তু “পরিবার”-এর এই মিনিং আর নাই, এমনকি কনফিউশনও হইতে পারে, বাপ-মা’র একটা পরিবার আর বউ-বাচ্চা’র আরেকটা পরিবার না তো!

মানে, আমার অবজারভেশন হইতেছে, আবু ত্বহা মুহাম্মদ আদনান ‘শুদ্ধ’ ‘প্রমিত’ ভাষার সুপিরিয়টিরে ডিস্টার্ব না কইরা অইটারে বরং উনার উইপেন বানায় নিছেন। মিডল-ক্লাসের মতো ‘প্রমিত’ ভার্সেস ‘অপ্রমিত’র চক্করে তারে পড়তে হয় নাই, যার ফলে জোর কইরা ‘ডি-ক্লাসড’ হওয়ার কোন প্যারাও তারে নিতে হয় নাই। ভাষা উনার অবেস্টকল হয় নাই, বরং উল্টা নতুন ধরণের ফিউশনের ঘটনা ঘটছে। যেই বাজারে (ইউটিউবে) মানুশ আছে, সেইখানে উনি গেছেন। তাদের টোন ও টিউনের লগে মিলছেন।

তো, উনার ইম্পর্টেন্স এইটুকই না, কিন্তু উনার এই ফিচারটা খেয়াল করার মতো একটা ঘটনা বইলা মনে হইছে।
[ও, উইকিপিডিয়াতে কিন্তু উনার নামে কোন এন্ট্রি নাই। ‘ইসলামিস্ট’ হওয়ার খেসারত-ই মনেহয় 🙂 ]

***

আমার ফ্ল্যাশি আইডেন্টিটি

কে কে জানি আমারে চিনে, কেমনে কেমনে জানি চিনে!

ব্যাপারটা কখনোই এইরকম না যে, আমার একটা সত্যি-পরিচয় আছে, সেইটা কেউ জানে না! 😛 মানে, এইরকম সত্য-মিথ্যা পরিচয়ের কোন আইডেন্টিটি ক্রাইসিসের ব্যাপার না। কিন্তু আমারে চিনে, আর কেমনে যে চিনে, সেইটা আমি ঠাহর করতে পারি না।

কয়দিন আগে আমার বড় মেয়ে কইলো, তাঁর ভার্সিটির টিচার আমারে চিনে। উনি রাইটার, আমারে চিনতেই পারেন, কিন্তু জীবনে কোনদিন উনার লগে আমার দেখা হয় নাই, কথাও হয় নাই! উনি যে আমারে চিনেন, সেইটা জাইনা আমার মেয়ে তো অবাক-ই, আমিও অবাক হইছি। কেমনে কি!

[আবুল মনসুর আহমেদের লেখাপত্র পড়লেও দেখবেন, উনি আর কাজী নজরুল ইসলাম যে একই পত্রিকা অফিসে চাকরি করতেন, সেই খবর পাইবেন না। এইরকম ‘সাহিত্যিক-জেলাসি’র ঘটনা না মেবি এইগুলা।]

তারপরে, আমার অফিস কলিগ, যার সাথে আমার নতুন পরিচয়, অফিস ফ্লোর চেইঞ্জ হওয়ার কারণে, ফার্স্ট হ্যান্ডশেইক কইরা উনি মিটিমিটি হাইসা বলতেছেন, আমি তো আপনারে চিনি, ফেসবুকে দেখি। আমি শরমই পাইলাম, কি কি জানি দেখেন উনি! 🙁

একবার একজন (বাকশালি-ফেমিনিস্টই মনেহয় বলা যায় উনারে) আমার একটা লেখা শেয়ার দিলেন, অইখানে দেখি এক পোলা কমেন্ট দিছে, এই লোকরে চিনোস তুই, ইনবক্সে আয়, বলতেছি! মানে, অই লোক আমারে চিনেন, পরিচয় করায়া দিবেন আমারে, অন্য কারো কাছে! অথচ অই আইডিরে তো চিনিই না, তার লগে কোন মিচুয়াল ফ্রেন্ডও নাই আমার! কিন্তু উনি আমারে চিনেন! উইয়ার্ড না ব্যাপারটা!

একবার হুশ-আপ খুললাম, অইখানে একজন মেসেজ পাঠাইছেন যে, আমার লেখা পড়েন দুই বছর ধইরা কিন্তু কোন লাইক-কমেন্ট করেন না, নয়া বাকশালের অবৈধ-শাসন শেষ হইলে দেখা করবেন! এইরকম কেয়ারিংয়ের ব্যাপারও আছে।

মানে, আমিও তো অনেকরে চিনি, যারা আমারে চিনেন না। কিন্তু কারো না কারো সোর্সে চিনি, পরিচিত মানুশের পরিচিত-জন হিসাবে চিনি। পাবলিক-ফিগার হিসাবেও অনেকরে চিনি। কিন্তু কেউ আমারে চিনে, ব্যাপারটা আন-ইউজ্যুয়ালই লাগে আমার কাছে। ফিশি-ফিশি না, ফ্ল্যাশি-ফ্ল্যাশি-ই লাগে।

এইসব কথা মনে হইলো, বিদেশ থিকা এক ফ্রেন্ড আইছে, আমার লগে দেখা হইছে। অয় ছবি আপলোড করার পরে একজন দেখি কমেন্ট করছে – ডিবির খাতায় নাম লেখাইলি! হোয়াট দ্য ফাক! আমারে বলছে নাকি! আমার অবস্থা কি এইরকম নাকি!

***

মির্জা গালিব

মির্জা গালিব কিন্তু কিছুদিন ফার্সিতেও লেখছিলেন। কারণ ফার্সি তখন উর্দু’র চাইতে সুপিরিয়র ল্যাঙ্গুয়েজ ছিল। পরে অইরকম কদর না পাইয়া উর্দুতে ফিরা আসছিলেন। টি. এস. এলিয়টও ফরাসি ভাষায় কবিতা লেখছিলেন কিছুদিন। ইংলিশের তো অই মান-মর্যাদা ছিল না আসলে।

মানে, আমি বলতে চাইতেছি না যে, উনারা ভুল করছিলেন! বরং বলতে চাইতেছি যে, সেকেন্ড-ক্লাস সিটিজেন হইতে নিজেদেরকে রাজি করাইতে পারেন নাই উনারা। কোন গ্রেট রাইটারই এইটা পারবেন না আসলে।

আপনারা যারা কলোনিয়াল-বাংলার খাদেম আছেন, উনাদেরকেই বলতেছি আর কি! 🙂

ডিসেম্বর ২৯, ২০২২

– অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং পলিটিকাল ফ্রিডম –

এইটা নিয়া খুব গ্রস লেভেলে কিছু মিস-আন্ডারস্ট্যান্ডিং আছে। মেইনলি ইকোনোমিস্টদের দিক থিকাই, কিন্তু একইসাথে পলিটিকাল বাজে-উদ্দেশ্যও জড়িত আছে এইখানে। মানে, কোন দেশে বা সমাজে পলিটিক্যাল ফ্রিডম না-থাকলে বা থাকলেই অর্থনৈতিক উন্নয়ন হবে – এইটা জরুরি কোন শর্ত না। বিষয় দুইটা মিচুয়ালি এক্সক্লুসিভ না। একটা থাকলে আরেকটা থাকবে না, বা একটা থাকলে আরেকটা অটোমেটিকালি ফলো করবে। এই ইল্যুশন থিকা বাইর হইতে পারাটা দরকারি, সবচে আগে।

সেকেন্ড ঘটনা হইতেছে, তবে এর যে কোন ইমপ্যাক্ট নাই – তা না, কখনোই। আপনি ‘ইকোনোমিক ডেভোলাপমেন্টের’ জায়গাগুলারে কেমনে ডিফাইন করতেছেন, সেইটা অই পলিটিকাল ফ্রিডমের জায়গাটার লগে অনেক বেশি রিলেটেড। আমার ধারণা, যখন পলিটিকাল ফ্রিডম থাকে না, তখন গ্রস-লেভেলের পারামিটারগুলারে (জিডিপি, পার কেপিটা ইনকাম, মেগা প্রজেক্ট) হাইলাইট করা হইতে থাকে। কিন্তু যদি পলিটিকাল ফ্রিডম থাকে তাইলে বরং সোশাল-ওয়েলফেয়ারের পারামিটারগুলা (ইনকাম ইন-ইকোয়ালিটি, এডুকেশন, মেডিকেল-সার্ভিস) প্রায়োরিটি পাইতে থাকে। এখন একটা লেনদেন আছে বইলাই একটা থাকলে আরেকটা থাকে না, বা ভাইস-ভার্সা না।

এইখানে আসে থার্ড ঘটনা’টা। যেইটার কথা আসলে বলতে চাইতেছি। বাংলাদেশে অনেকেই ভাবতেছেন যে, বাকশালের লুটপাটের কারণে দেশের ইকোনোমকি অবস্থা যত খারাপ হইতে থাকবে, বাকশালি-শাসন তখন আপনা-আপনি কল্পাস করবে। কিন্তু আমি দেখি যে, এইটা হওয়ার কোন কারণ নাই, হিস্ট্রিকাল কোন উদাহারণও আমাদের সামনে নাই। ১৯৭৪ সালে দুর্ভিক্ষের কারণে বাকশালের পতন হয় নাই। ১৯৪৩-এর দুর্ভিক্ষের কারণেও ব্রিটিশ-শাসন শেষ হয় নাই।

মানে, ইকোনোমিক উন্নয়নের দোহাই দিয়া পলিটিকাল ফ্রিডম কমানো হয় সবসময়, কিন্তু ইকোনোমিক ফেইলওরের কারণে (বা ইভেন সাকসেসের কারণেও) কোন পলিটিকাল জুলুম শেষ হওয়ার কথা না। একটা পলিটিকাল কনশাসনেসের ভিতর দিয়াই সেইটা হইতে পারার কথা।
আমি দেখি যে, এখনকার ইকোনোমিক দুর্দশারে বরং পলিটিকালিই ইউজ করা হবে, ফ্রিডমের স্পেইসটারে আরো কমানো হবে। শেষমেশ দুর্ভিক্ষের নাম দিয়া ২০২৩ সালের ইলেকশনও বাতিল করা হইতে পারে, অই পসিবিলিটি এখনো আছে। মানে, ইকনোমিক ঘটনাগুলা পলিটিকাল কনশাসনেসের জায়গাটাতে কন্ট্রিবিউট করে অবশ্যই, কিন্তু পলিটিকাল ফ্রিডমের লড়াইটা কম-বেশি আরেকটা স্ট্রিম অফ কনশাসনেসের একটা ঘটনাই।

***

পোস্ট-ট্রুথ

সত্য বা ট্রুথের দুইটা লেয়ার আছে আসলে, একটা হইতেছে পরম সত্য বা এবসুলেট ট্রুথ, আর আরেকটা হইতেছে এপিয়েরেন্সস অফ ট্রুথ।
তো, এবসুলেট ট্রুথ অবশ্যই একটা, এর নড়চড় হয় না (হইলে সেইটা আর এবসুলেট ট্রুথ হওয়ার কথা না)। কিন্তু সত্যের যে এপিয়েরেন্সস সেইটা সবসময়ই মাল্টিপল। এর এক-রূপ নাই। থাকাটা পসিবল না।

আমার ধারণা, গত শতকের নিউ ফ্রেঞ্চ ফিলোসফার’রা ট্রুথ বলতে সত্যের এপিয়েরেন্সগুলা নিয়াই কনসার্নড হইছেন, কথা বলছেন, সত্যের ডিফরেন্ট পারসপেক্টিভের জায়গাগুলাতে। এবসুলেট ট্রুথের জায়গাটা নিয়া না।

(যদিও এই নিয়া উনাদের কারো এক্সপ্লিসিট কোন ঘোষণা আছে বইলা মনেহয় না। কিন্তু এইভাবে রিড করতে পারলে ভালো।)

তবে এই দুইটা জায়গারে গুলায়া ফেলতে পারলে সুবিধা আছে। সত্যের খেলাগুলারে তখন জাস্টিফাই করার স্কোপ তৈরি হয়। পোস্ট-ট্রুথ বইলা যেই টার্ম, অইটা এইরকম একটা জিনিস বইলাই মনে হয় আমার কাছে।

ডিসেম্বর ৩০, ২০২২

১৭৫৭ সালের ২৩ শে জুন মীরজাফর এবং তার সৈন্যরা কি জানতেন কতো বড় পাপ উনারা করতেছেন? মেবি উনারা এইরকমও ভাইবা থাকতে পারেন যে, সিরাজদ্দৌলা তো ভালো না! বাঈজী বিয়া করছে! দেমাগ দেখায় বেশি! এই-সেই… মানে “নবাব সিরাজদ্দৌলা” (১৯৬৭) সিনেমার শেষ দিকে এইরকমের সিন আছে ফাঁসি হওয়ার আগে, “উপস্থিত জনতা” তারে নিয়া ঠাট্টা-মশকরা করতেছে!

২০১৮ সালের ৩০ শে ডিসেম্বর যে বাংলাদেশে এটলিস্ট ভোটের একটা ডেমোক্রেসি ছিল, সেইটারে কবর দেয়া হইছে। দেশের সাথে, দেশের মানুশের সাথে যারা বেঈমানি করছে, তাদের গলা এখনো উঁচা, নানান ধরণের উন্নয়নের নাটক-সিনেমার কথা বলে।

এমনকি ‘যুক্তি’ দেয়, এর আগে কি ভোট চুরি হয় নাই? অনেকে ২০১৩ বা ২০০৮-এর কথাও টাইনা আনেন। কিন্তু ২০১৮-এর ভোট-ডাকাতি সিগনিফিকেন্টলি আলাদা। বিশ্বাসঘাতকতা কি আগে পরে কখনো হয় নাই? কিন্তু দেশ বেইচা দেয়ার ঘটনা ঘটে নাই। এখন আমরা যখন ২০০-২৫০ বছর পিছনে তাকাই, দেখতে পারি পশালীর যুদ্ধ খালি বিশ্বাসঘাতকতার ঘটনা ছিল না, ছিল দেশ বেইচা দেয়ার ঘটনা।

২০১৮ সালের ইলেকশনে আরেক মীরজাফর গদি দখল করার জন্য দেশরে বেইচা দিছে। একলা বেচে নাই। পুলিশ, মিলিটারি, মিডিয়া ও চেলা-চামুন্ডাদের নিয়াই এই কাজ করছে। এর সিগনিফিকেন্স টের পাইতে আমাদের ২০০-২৫০ বছর লাগবে না, ২০-২৫ বছরও লাগবে না। যদি এখনো আমরা টের পাইয়া না থাকি, এইটা নিয়া ভাবতে ও বলতে “ডরাই” (মানে, এইরকম ভান করি), সেইটার সিগনিফিকেন্স বাতিল হয়া যাবে না, মুইছা যাবে না।

বাংলাদেশের হিস্ট্রিতে বাংলাদেশের মানুশের জন্য একটা গভীর দুঃখের দিন হইতেছে ২০১৮ সালের ৩০ শে ডিসেম্বর। এই ঘটনারে ‘অব্যক্ত’ রাইখা বাংলাদেশের হিস্ট্রি কোনদিনই লেখা যাবে না।

/২০১৮ সালের ৩০ শে ডিসেম্বর

***

জাস্ট একটা জরিপ করার কথা মনে হইতেছিল যে, পেলের ফুটবল খেলা কয়জন দেখছেন? 🙂 বা পেলে যে গ্রেট ফুটবলার সেইটা কোন সোর্স থিকা, কেমনে ফার্স্ট জানছেন, টের পাইছেন?

কিন্তু প্রশ্নগুলা সহজ, আর উত্তরও তো জানা-ই! (মানে, কম-বেশি তো আমরা জানিই।)

এখন কাউরে চোখে না দেইখা কি তার ভক্ত হওয়া যাবে না? তলস্তয়, বোর্হেসরেও তো আমি দেখি নাই, কিন্তু উনাদের লেখা তো আমি পড়ছি, পইড়া ভালো-লাগছে, ভক্ত হইছি। কিন্তু পেলের ব্যাপারে ঘটনাটা এইকরকমের না, বরং কিছুটা উল্টাই।

ফুটবল খেলা তো ওয়ার্ল্ড-ওয়াইড একটা ফেনোমেনা হইতে শুরু করছে গত ১০০ বছরে, এমনকি টেলিভিশন আবিষ্কার হওয়ার পরে সেইটা ছড়াইতে পারছে। এখন তো মানুশ-জন সারা বছর লিগের খেলাও দেখে। (যে যত দূরের জিনিসের খোঁজ-খবর রাখে, সে যেন বেশি জানে – এইরকম একটা জায়গা থিকাই আসলে মোস্টলি।)

তো, যে কোন জিনিসেরই একজন ব্র্যান্ড-এম্বেসেডর দরকার পড়ে, একটা হিউম্যান ফিগার, ইমেজ লাগে। ফুটবল যখন একটা ওযার্ল্ড-ফেনোমেনা হয়া উঠতেছিল, তখন পেলেরে এর হিউম্যান ফিগার হিসাবে নেয়া হইছে। মনে আছে, ১৯৮০’র পরে বাংলাদেশের স্কুলের বইয়ে “কালো মানিক পেলে” নামে একটা লেখা পড়া লাগতো আমাদেরকে (কোন বিদেশি ফিচারের ‘ভাব-অবলম্বনে’ 😛 লেখা ছিল কি অইটা?), উনার বিশাল একটা নাম ছিল, সেইটাও মুখস্ত করা লাগতো। এখনো যারা পেলে-লাভার তারাও এইরকম কোন না কোন ইমোশনাল আর্টিকেল পইড়াই উনার কথা জানার কথা।

মানে, পেলের খেলা দেখেন নাই বইলা, বা উনার ব্যাপারে তেমন কিছু জানেন না বইলা কারো পেলে-প্রেম সত্যি না – ব্যাপারটা এইরকম না। প্রেম মানে একটু লোক-দেখানি ঘটনাই আসলে কিছুটা 😃

তো, ট্রেন্ডের নদীতে আমিও সাঁতার কাঁটলাম আর কি, খানিকটা…

[ও, আজকের দিনের আরেকটা সিগনিফিকেন্স আছে অবশ্য, ২০১৮ সালের ৩০ শে ডিসেম্বর নিয়া কথা কইতে তো আমরা ডরাই 😁 কিন্তু যেহেতু বাঁইচা আছি, কোন কিছু নিয়া কথা তো বলা লাগবে আমাদেরকে, পেলেরে নিয়া দুঃখ-দুর্দশা করা তো বেটার অপশন…]

/বাংলাদেশে পেলে-প্রেমের ঘটনা

ডিসেম্বর ৩১, ২০২২

বছর শেষের দিকে আসলে গত কয়েক বছর ধইরা এই জোকসটার কথা মনে হইতেছে।

জোকসটা হইতেছে, একদল রিসার্চার গেছে সীমান্ত মাপার লাইগা রাশিয়া আর পোল্যান্ডের বর্ডারে। তো, গেরামের লোকজন খুবই চিন্তিত, জিগাইতেছে, ভাই, আমাদের গ্রামটা রাশিয়ার মধ্যে পড়ছি নাকি পোলান্ডের মধ্যে? সারাদিন শেষে মাপামাপি কইরা ঠিক হইলো যে, গ্রামটা পোলান্ডের মধ্যে পড়ছে। তো, এইটা শুইনা গেরামের লোকজন সব নাচানাচি শুরু কইরা দিলো। কি ঘটনা? অরা কইলো, রাশিয়াতে যেই শীত পড়ে! আমরা তো পোলান্ডের মধ্যে পড়ছি, এইখানে তো এখন আর রাশিয়ার বিখ্যাত শীতটা পড়বো না!

মানে, ২০২২ সালে যা যা কিছু ঘটছিল, তা যেন ২০২৩ সালে আর কন্টিনিউ হইবো না! 🙂

***

বাংলাদেশের রাজনীতির অআকখ

বাকশাল কি?

বাকশাল হইতেছে বাংলাদেশি ফ্যাসিজম। (জার্মানির নাজি পার্টির মতো।)

১৯৭৫ সালের ২৫ শে জানুয়ারি ন্যাশনাল পার্লামেন্টে ১৫ মিনিটের আলোচনার পরে ৪ নাম্বার সংশোধনীর মাধ্যমে সব পলিটিকাল পার্টির রাজনীতি নিষিদ্ধ করার ভিতর দিয়া একদলীয় বাকশালি শাসন কায়েম করা হয় বাংলাদেশে। ১৯৭৫ সালের ২৪ শে ফেব্রুয়ারি ফরমালি বাকশাল (বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওমি লিগ) ডিক্লেয়ার করা হয়। আওমি লিগ ছাড়াও সিপিবি (বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি), ন্যাপ (বাংলাদেশে ন্যাশনালিস্ট পার্টি) এবং জাতীয় লীগের লোকজন এইখানে যোগ দেয়। সরকারি কর্মচারিরাও এই দলের মেম্বার/সদস্য হইতে পারতেন। এইভাবে সরকারের দলীয়করণ করা হইছিল। এই দলের চেয়ারম্যান ছিলেন শেখ মুজিবর রহমান।

১৯৭৮ সালে জিয়াউর রহমানের শাসনামলে বহুদলীয় রাজনীতির শুরু হইলে বাকশালের লোকজন নিজ নিজ পার্টিতে ফিরা গিয়া রাজনীতি শুরু করেন।

নয়া বাকশাল কি?

নয়া বাকশাল হইতেছে বাংলাদেশি ফ্যাসিজম বাকশালের নতুন চেহারা। নিউ ফ্যাসিস্ট রাজনীতির বাংলাদেশি এডিশন।

এইটাও এক দলীয় শাসন, কিন্তু এর পলিটিকাল এক্সটেনশন আরো ব্যাপক এবং আরো বেশি ক্রুয়েল। এইখানে নামমাত্র বিরোধীদল (যেমন, জাতীয় পার্টি) রাখা হয় এবং পুরান পলিটিকাল এলাইদেরকে (সিপিবি, ন্যাপ) নিয়া একটা ডামি-রাজনীতির সার্কেল তৈরি কইরা অন্য দলের লোকজনরে মিডিয়াতে “আদার” বানায়া, গুম-খুন-মামলা দিয়া জুলুম করা হয়। সরকারি লোকজন, পুলিশ ও মিলিটারি-ই না, বরং মিডিয়া, আদালত, ভার্সিটি ও সব স্বায়ত্ত-শাসিত ইন্সিটিটিউশনেও নিজেদের লোক বসায়া যে কোন বিরোধী-মতরে দমন-ই করা হয় না, ইন-ভিজিবল কইরা রাখা হয়।

২০১৩ সালের ৫ই ফেব্রুয়ারি “শাহবাগ আন্দোলন” মাধ্যমে এই নয়া বাকশালের ফ্যাসিজমের শুরু। যেইটা ২০১৩ সালের পার্লামেন্ট ইলেকশনের ভিতর দিয়া স্থায়ী হয় এবং ২০১৮ সালের রাতের ভোটের পর থিকা তার ফুল পটেনশিয়ালে চলতেছে।

এইটা আর রাজনৈতিকভাবেই অপারেট করে না, বরং ইকোনোমিকালি এবং সোশ্যালিও একটা ডেঞ্জারাস পজিশন। এর অপারেটিং পলিসি এবং এলায়েন্সগুলা নিয়া বিচ্ছিন্নভাবে কিছু কথা-বার্তা থাকলেও, এই ব্যাপারে ইন্টেলেকচুয়াল কনশাসনেসের এখনো ঘাটতি আছে।

Leave a Reply