ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২২
নীলখেত
বাংলাবাজার না, বাংলাদেশের বইয়ের আসল জায়গা হইতেছে নীলক্ষেত। বাজারে একটা টার্মও চালু হইছে গত ৪/৫ বছর ধইরা – “নীলক্ষেত প্রিন্ট” নামে। মানে, কপিরাইট ছাড়া, শস্তায় বই ছাপানো, ফটোকপি কইরা বেচার ব্যবস্থা। পাবলিশার’রা বই না ছাপাইলে, অই বই মার্কেট-আউট হয়া যায় না এখন। নীলক্ষেতে একটা পিডিএফ দিয়া আসলেই বই এভেইলেবল হয়া যায় সারা বাংলাদেশে। জিনিসটা জাস্ট অইরকম ছড়াইতে পারে নাই।
কিন্তু ছড়াইতেছিল। দেরিতে হইলেও এই “নীলক্ষেত প্রেস”র ঘটনা’টা বইয়ের বিজনেসের একটা কোর ঘটনা হয়া উঠতে পারার পসিবিলিটর মধ্যে আছে এখনো। জাস্ট দুই-তিনটা স্টেপ দূরে, আরো কয়েকটা জিনিসরে ইন্ট্রিগ্রেট করা লাগবে।…
তো, ঢাকা শহরে আগুন-লাগা’র ঘটনারে আমার কাছে খুব স্পেসিফিক ফ্যাক্ট না থাকলে কখনোই “একসিডেন্ট” বইলা মনেহয় না। বস্তিতে আগুন (লাগে না) লাগানো হয় বস্তি খালি করার লাইগা। গেরামে, গরিবের বাড়িতে আগুন লাগানো হইতো ভিটা-মাটি দখল করার লাইগা। ফ্যাক্টরিতে আগুন লাগানো হয় কিছু ছরমিক মাইরা ইন্স্যুরেন্সের টাকা নিয়া লে-অফ ঘোষণা করার লাইগা।
আগুন যে লাগে না – তা না, কিন্তু আগুন লাগানোর ঘটনা তার চাইতে কম না।
গুলশান-১ এর ডিসিসি মার্কেটে আগুন লাগার পরে অই মার্কেট আর মেবি দাঁড়াইতে পারে নাই, কিন্তু বিদেশি প্রডাক্টগুলার বেচা কমে নাই, বরং ছড়ায়া পড়ছে আরো, ইম্পোর্টার আরো বাড়ার কথা। একইভাবে, আগুন লাগার পরে নীলক্ষেতের বইয়ের মার্কেট শেষ হয়া যাবে না, এটলিস্ট ঢাকা ভার্সিটি, বুয়েট, মেডিকেল যদ্দিন আছে।
কিন্তু যেইটা বলতেছিলাম, নীলক্ষেত-প্রিন্ট আরো কিছু চেইঞ্জের ভিতর দিয়া একটা মেইনস্ট্রিম হয়া উঠতে থাকবে মেবি। আর সেইটা খালি নীলক্ষেতে আটকায়া থাকবে না।
আগুন লাগুক, আর আগুন লাগানো হোক, নীলক্ষেতের বই পুড়ায়া শেষ করা যাবে না।
ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২২
অবিচুয়ারি: কাওসার আহমেদ চৌধুরী
এইটারে হিস্ট্রিক্যাল “কর্মফল” বললে অনেক বেশি ক্রুয়েলই হবে ঘটনা’টা, কিন্তু মনে জিনিসটা হইলো, কাওসার আহমেদ চৌধুরী’র মারা যাওয়ার খবর’টা শুইনা। (বলতেছি ঘটনা’টা, একটু পরে।)
উনারে তো আমরা চিনি পত্রিকায় রাশিফল লেখতেন বইলা। এখন, একটু পরে খেয়াল করতে পারি যে, আরে উনি সং-রাইটার, লিরিসিস্ট! অনেক সুন্দর সুন্দর গান উনি লেখছেন। যেইগুলারে সোলসের গান, লাকি আখন্দের গান, কুমার বিশ্বজিতের গান, আইয়ুব বাচ্চুর গান বইলা চিনি আমরা।
তো, উনারে যখন কেউ “রাশিফল লেখেন না আপনি!” বইলা প্রশংসা করতো বা আহ্লাদ দেখাইতো তখন উনার কি রকম লাগতো, সেইটা কিছুটা হইলেও আমি ফিল করতে পারি মনেহয়।* উনার গানগুলা যে কেউ শুনে নাই – তা না, কিন্তু খালি গান লেখলে এইরকম পপুলারিটি উনার হইতো না।
রাশিফল তো মোর ফ্রিকোয়েন্ট, সপ্তাহ ঘুরলে চোখে পড়ে, পত্রিকা দেখলে, নিউজ পোর্টালে। গানগুলা অইরকম না, মাঝে-মধ্যে শোনা হয়। যার ফলে মেমোরি’তে এতোটা লাইভ বা তাজা থাকতে পারে না, সবসময়।
তো, এর বাইরেই “হিস্ট্রিক্যাল কর্মফল” হিসাবে মনে হইলো, বাঈজীদের কথা। উনারা তো “মনোরঞ্জন” করতেন, কিন্তু খালি নাইচা আর গান-গাইয়া পারফর্মই করতেন না, গান লেখতেন এবং সুরও করতেন। অনেকে, যাদের ইনকাম ভালো ছিল, কবি পালতেন, মানে, উনাদের দিয়া গীত লেখাইতেন। আবার অনেক পপুলার বাঈজী যদি কোন কবি’র গান গাইতেন, অই গীত “হিট” হইতে পারতো। কবি’রা যাইতেন মেবি উনাদের লেখা গান নিয়া বাঈজীদের কাছে। কিন্তু বাঈজীদের লেখা, সুর করা গানের কথা আলাদাভাবে আমরা জানি না। এমনকি যোগেন্দ্রনাথ গুপ্ত উনার “বঙ্গের মহিলা কবি” বইয়ে বিনোদিনী দাসী’র নাম রাখেন নাই, “থিয়েটার অভিনেত্রী” ছিলেন বইলা।
মানে, ফার্স্টে আপনি “মনোরঞ্জনকারী” বা এন্টারটেইনার না, যেহেতু আপনি “পপুলার”, আপনি আবার “ক্রিয়েটিভ” হন কেমনে!
কাওসার আহমেদ চৌধুরী যেহেতু এন্টারটেইনার, উনি ক্রিয়েটিভও ছিলেন, জানতে পারলে আমাদের ভালো লাগে। উনি যে সুন্দর কইরা রাশিফল লেখতে পারতেন সেইটা জাস্টিফাইড মনেহয়। (বাঈজীদের মতন বাজে ‘নিয়তি’র ঘটনা না হইলেও, এর একটা হিস্ট্রিক্যাল ছায়া মনেহয় থাকে।)
উনার রাশিফল লেখার ট্রিকস আসলে একটাই। উনি মেটাফোর ইউজ করতেন। যেইটা আর কোন রাশিফল লেখক করেন না, উনারা খুব সিরিয়াস, যেন খুব ‘সত্যি-কথা’ বলতেছেন। কাওসার আহমেদ চৌধুরী এই সত্য-মিথ্যা’রে সেন্টার কইরা তুলেন নাই।
উনারা লিরিকস মোস্টলি রোমান্টিক। সমাজ-সচেতনও মনেহয় অনেক সময়। কিন্তু একটা সময়েরই সিগনেচার, যখন বাংলাদেশি গানের একটা জায়গা তৈরি হইতেছিল। যেই গানের সময়টারে উনারা কয়েকজন মিইলা তৈরি করতেছিলেন। আনফরচুনেটলি অই আলু-থালু রোমান্টিকতার জায়গা থিকা বাংলাদেশি গান খুব একটা বাইর হইতে পারে নাই আর খুববেশি।
কাওসার আহমেদ চৌধুরীদের সময়ে যেইটা সুন্দর, সেইটা আমাদের সময়ের আইসা ক্লিশে হয়া যায় নাই, কিন্তু অইগুলা একটা সময়ের গান হিসাবেই সুন্দর। এখনকার সময়ের রিয়ালিটিতে এই আর্ট বেমানান না হইলেও এখনকার সময়ে একই ধরণের গান কেউ লেখতেছেন, সেইটা কোন নতুন ঘটনা না আর।
কিন্তু বাংলাদেশি গানে একটা গানের সময় যে তৈরি হইছিল, অইটার ওয়ান অফ দ্য কারিগর হিসাবে কাওসার আহমেদ চৌধুরী’র নাম নেয়া হবে – এই এক্সপেক্টশন আমার আছে।
আপনি না ফিরলেও, আপনার লেখা গানগুলারে অনেক মানুশ আরো অনেকদিন ডাকতে থাকবে, এগেইন অ্যান্ড এগেইন। পারসোনাল-মেমোরি’র দিন শেষ হয়া হিস্ট্রিক্যাল টাইম যখন শুরু হবে তখন রাশিফল-লেখক থাকবে না, সং-রাইটার, লিরিসিস্ট কাওসার আহমেদ চৌধুরীরেই আমরা মনে রাখবো তখন।
টিল দ্যান, গুডবাই, জ্যোতিষী আমার!
…
*যখন পরিচিত কেউ আমারে কয়, “আপনার বুকোউস্কির অনুবাদ তো বাজে হইছে, লিওনার্দ কোহেনের নামের বানান তো ঠিক হয় নাই, রুমি এইগুলা লেখছে নাকি!” তখন কান-পাতাইড়া থাপড়াইতে ইচ্ছা করে 😡 ২৫-৩০ বছর ধইরা চোখের সামনে কবিতা দেইখা কোন ভালো-মন্দ আলাপ নাই, অনুবাদের ভুল ধরতে আসছে বাটপারগুলা! মানে, এইগুলা যে আমার কাজ না – তা না, কিন্তু রাশিফল-লেখক বানানোর মতো এতোটা ইনোসেন্ট ঘটনা তো না!
#########
– আইডিওলজির এনেসথেশিয়া –
ধরেন, শরীরের একটা জায়গায় এনেসথেশিয়া দেয়া আছে আপনার, অই জায়গায় কাইটা রক্ত বাইর করলেও আপনার কিন্তু কোন ফিলিংস হবে না, টেরও পাবেন না। দেখলেও কোন লাভ নাই, কারণ জায়গাটা অবশ হয়া আছে আপনার। মনে হবে ব্যথা তো হওয়ার কথা, কিন্তু হইতেছে না!
এখন এনেসথেশিয়া খারাপ-জিনিস তো না-ই, বরং দরকারি একটা ঘটনা। এইটা ছাড়া ছোট-খাট কোন মেডিকেল অপারেশন করাও ইম্পসিবল। কিন্তু বিনা কারণে এনেসথেশিয়া ইউজ করাটা তো বোকামি না, বরং বিপদের কথাও। এটলিস্ট ভালো কোন কারণে এইটা করার কথা না।
তো, আমার কথা হইতেছে, আইডিওলজিরে এই জায়গা থিকা দেখতে পারেন। মার্কসিজম, ফেমিনিজম… এইরকম জিনিসগুলারে। এইগুলা ভালো বা খারাপের চাইতে, এইগুলা হইতেছে টুল। টুল’টারে আপনি কেমনে ইউজ করতেছেন, সেইটা হইতেছে ঘটনা। ১৯৬০-এর দিকে যেমন মার্ক্সিস্ট হওয়াটা মাস্ট একটা ঘটনা ছিল, আর স্পেশালি মি-টু মুভমেন্টের পরে ফেমিনিস্ট না হইতে পারা একটা ইন্টেলেকচুয়াল ইন-এবিলিটিরই ঘটনা হওয়ার কথা।
কিন্তু খেয়াল কইরা দেখবেন, মার্ক্সিস্ট হওয়ার টাইমেও একটা আলাপ ছিল – “কে সাচ্চা কমুনিস্ট?” এইটা ঠিক করা। মানে, নানান ধরণের কমিউনিস্ট তো ছিলই – মার্কসবাদী, মস্কোপন্থী, পিকিংপন্থী, এর বাইর সিউডো-কমিউনিস্টও থাকার কথা যারা আসলে কমিউনিস্ট না, কিন্তু রাইটার হইতে হইলে, ভারসিটির টিচার হইতে গেলে এইগুলা (কমিউনিস্ট) হওয়া তো লাগতো কিছুটা। এখনো “ফেমিনিস্ট” হওয়া মানে মেয়ে হইলে একটু মাস্তানি করতে পারা 🙂 আর পোলা হইলে একটু মেয়ে-পটানি’র ইচ্ছা 🙂 যে না – তা তো না! “ফিল-গুড এক্টিভিজম”* বইলা একটা জিনিস বরং এখন অনেক বেশি রিয়ালিটির ঘটনাই। তাই বইলা পলিটিক্যাল টুল হিসাবে এই জায়গাগুলারে যে আমরা নিবো না – সেইটা তো না! ফেমিনিজম যেই জায়গাগুলারে (খালি গরিবি এবং জেন্ডার ইস্যুই না, এনভায়রনমেন্ট, আর্ট-কালচাররে…) ইনক্লুড করতে পারে কন্সিডারেশনের জায়গাতে, অন্য কোন আইডিওলজি সেইটা পারে না।…
মানে, আমি বলতে চাইতেছি, একটা আইডিওলজি কি কাজ করতেছে সমাজে, সেইটা দিয়া টের পাইতে হবে আমাদেরকে আইডিওলজি’টা কি রকম, এর ইনহেরিয়েন্ট ক্লেইমগুলাসহই। কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত আইডিওলজির এনেসথেশিয়া’র ভিতরে আমরা আছি, এইটা ঠিকঠাক মতো টের পাওয়া মুশকিলের ঘটনা। বড়জোর দেখতে পারি আমরা, কিন্তু টের পাইতে পারাটা সম্ভব না।
যতক্ষণ পর্যন্ত ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদ’ নামের কলোনিয়াল ন্যাশনালিজমের আইডিওলজির এনেসথেশিয়ার ভিতরে আপনার চিন্তা অবশ হয়া আছে, আপনার দেখাদেখির সেন্টারটাতে “বাংলাদেশ”রে একটা ঘটনা হিসাবেই আপনি নিতে পারবেন না। দেখতে পাইলেও ফিল করতে পারবেন না, বুঝতে পারবেন না, কিছু “বিচ্ছিন্ন ঘটনা”-ই মনে হইতে থাকবে তখন।
এখন “বাঙালি জাতীয়তাবাদ”র এগেনেস্টে একটা “বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ” তৈরি করতে হবে – ব্যাপারটা কখনোই এইরকম না, কিন্তু আইডিওলজিক্যালি বাঙালি-জাতীয়তাবাদ যে একটা কলোনিয়াল-কলকাতার কন্সট্রাকশন – এই জায়গাটা থিকা বাইর হইতে না-চাওয়াটা পলিটিক্যালি কোন সততার ঘটনা না। এইটা এটলিস্ট আমাদের বুঝতে পারাটা দরকার।
যে কোন “চেতনা” (গুড অর ব্যাড) দিয়াই পুরাপুরি অবশ হয়া যাওয়া যাবে না বস!
আইডিওলজিগুলা হইতেছে রিয়ালিটিরে বুঝার, তৈরি করার টুল। অইটারে রিয়ালিটি বানায়া ফেললে সেইটা অবস্টেকলই হয়া উঠার কথা, একটা সময়।
#########
১৯৪৭ সালে বাংলা ভাগ করা হয় নাই, মানে, অইটা সেন্টার পয়েন্ট না, দেখার। কলকাতার জমিদারি থিকা ডিটাচড হইতে চাওয়ার একটা ঘটনা মেইন ছিল অইখানে। মানে, যেইটারে পুব-বাংলা বলা হইতো (এখনো কয় কলোনিয়াল দালালগুলা), সেইখানে “আহাজারি” কম। “দেশ-ভাগ” বইলা কোন জিনিসই পাইবেন না তেমন, মিডল-ক্লাস সাহিত্যের বাইরে। বাংলা-সাহিত্যে এইগুলা কম-বেশি কলকাতা-বাহিত রোগ। বাংলাদেশের লোকজন কলকাতার উপর দাবি ছাইড়া দিতে চায় নাই, কিন্তু কলকাতার (ইকনোমিক্যাল না খালি কালচারাল) জমিদারি মাইনা না-নিতে চাওয়ার জায়গাটা থাকার কথা অনেক বেশি।
আর এইটার পলিটিক্যাল কারিগর ছিলেন এ কে ফজলুল হক, অনেকটা। কিন্তু কলকাতা থিকা যখন সেন্টার ঢাকা হইলো, সেইটা ঢাকার নবাবদের দখলেই পড়তে নিছিল। ১৯৭১ খালি পাকিস্তানি শাসনের শেষই না, একইসাথে মুসলমানের নামে নবাবি শাসনের জায়গাটারে মাইনা না নিতে চাওয়ার ঘটনাও।
বাংলাদেশের ‘শিক্ষিত’ মিডল ক্লাসের যেই ‘মুসলমান হেইট্রেট’ এইটা কলোনিয়াল কালচারের জায়গা থিকা নবাবি কালচার’রে না নিতে চাওয়ার ঘটনা একটা। কিন্তু তাই বইলা এইটা পুরানা জমিদারি আমলে ফিরা যাইতে চাওয়ার ঘটনা না, যেই জায়গাটারে “লিগাসি” বইলা চালায়া দিতে চান অনেকে। যেইটা হয়া উঠছে এখনকার নতুন জালিমের নিশানা।
মানে, হিস্ট্রিরে আমাদেরকে সবসময় জালিমের লগে মজুলমের ফাইটের ঘটনা হিসাবে দেখতে হবে। আইডেন্টিফাই করতে পারতে হবে কোনটা জুলুমের ন্যারেটিভ, কোনটা মজলুমের। আর সবসময় জুলুমের এগেনেস্টে কথা কইতে হবে। ঘুইরা-ফিরা ঘটনা আসলে এইটুকই।
ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২২
বাঙালি জাতীয়তাবাদ গোড়া থিকাই একটা বাংলাদেশ বিরোধী ঘটনা। অইখানে মুসলমান অ্যাড কইরা আরেক দফা জুলুমের রাস্তাই ওপেন করা হইছে আরো। মানে, খালি বাঙালি হইলেই হবে না, মুসলমানও হওয়া লাগবে। এই হওয়া-হওয়ি’র কোন শেষ নাই! এইটা ভুল রাস্তা।
ধারণা হিসাবে বাংলা “এক” হইতে চায়, এক বানায়া ফেলতে চায়, এইটা জুলুমের তরিকা। জোর কইরা এক বানায়া ফেলতে চাওয়া। অন্য দিকে, ধারণা হিসাবে বাংলাদেশি অনেক বেশি ইনক্লুসিভ। চাকমা হয়া, গারো হয়া, সাঁওতাল হয়া, মনিপুরি হয়া, বিদেশে থাইকাও বাংলাদেশি হইতে পারবেন।
খালি বাংলা না, উর্দু, হিন্দি, ইংলিশ, সিঅলটি, চাঁটগাঁইয়া, নোয়াখাইল্লা, বরিশাইল্লা বুলি বইলাও বাংলাদেশি হইতে পারবেন। কিন্তু বাঙালি ধারণার মধ্যে এইসব মাল্টিপল আইডেন্টিটির কোন জায়গা নাই।
বাঙালি-জাতীয়তাবাদ হইতেছে জুলুমের হাতিয়ার, বাকশালের। “খাঁটি বাঙালি” একটা কলোনিয়াল লিগাসির ঘটনা। “বাংলাদেশি” হইতেছে এই “কূপমন্ডুকতা” থিকা স্বাধীন হওয়ার, মুক্তির, আজাদির ও ফ্রিডমের ঘটনা।
বাঙালি-পণা ছাড়েন, বাংলা নামের রিজিডিটিতে আটকায়া থাইকা বাংলাদেশ ধারণারে ঘৃণা করা বাদ দেন!
#########
২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২২। ইউরোপের মানুশদের জন্য খুবই বাজে একটা দিন। হাউএভার রাশিয়ার এইটাই ফার্স্ট মিলিটারি এটাক না ইউক্রেনে, কয়েক বছর আগেও একটা ডামি-গর্ভমেন্টরে সেইভ করতে মিলিটারি ট্রুপ পাঠাইছিল। এর উপরে একটা ডকুমেন্টারি আছে। গত বছর মার্চ মাসে লেখছিলাম ইউক্রেনের পিপলদের নিজেদের ডেমোক্রেসি ধইরা রাখা কঠিন হবে।
ইউক্রেনের উপর রাশিয়ার এই মিলিটারি এটাক নিয়া আমার ইন-টেইক ৩টা:
১. পুরান কথাই এইটা যে, দুনিয়ার কোথাও যদি অন্যায় হয় তাইলে সেইটা দুনিয়ার যে কোন জায়গায় জাস্টিসের উপর একটা আঘাত। তো, রাশিয়ার এই অটোক্রেসির বোঝা রাশিয়ান পিপল-ই না, তাদের নেইবার কান্ট্রিগুলারও নেয়া লাগবে এখন, ইউরোপ’রেও এই অন্যায়ের দায়ভার নিতে হবে। চীনের সার্পোট না থাকলে পুতিন এইটা করতে পারতো না। এশিয়ার জন্যও এইটা বাজে সিগনাল। ভালো-জালিম বইলা কিছু নাই। যেই শাসনে পিপলের পার্টিসিপেশন নাই, সেইটা সবসময়ই বাজে শাসন। আর এই জুলুমের শাসনের টাইম যত লম্বা হবে, এইটার বাউন্ডারি আরো বাড়তে থাকবে, যতক্ষণ না এর শেষ হয়। এইটা মোটামুটি ইউনিভার্সাল নিয়ম।
২. লিবারাল হিউম্যানিজমের ফর্মে না হইলেও পিপলস পাওয়ারই আমাদের শেষ ভরসা। রাশিয়ার মানুশদের, ইউরোপের মানুশদের, দুনিয়ার মানুশদেরকে ইউক্রেনের মানুশদের পাশে দাঁড়াইতে হবে। যত শক্তভাবে, যত কাছাকাছি আমরা দাঁড়াইতে পারবো, পুতিনের পতন তত তাড়াতাড়ি হবে।
৩. বাংলাদেশ এই ইমপ্যাক্টের বাইরে না। এর কারণে এবং এর দোহাই দিয়া নানান ঘটনাই ঘটতে থাকার কথা এখন।
ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২২
কবি-পরিচয়
না মরা পর্যন্ত কেউ আসলে পুরাপুরি ভালো-কবি হইতে পারে না। কারণ কোন সমস্যা না থাকলে তো আর কেউ কবি হইতে পারে না! যতদিন বাঁইচা থাকে কোন না কোন ঝামেলা তার থাকেই। এখন মরলেই অই সমস্যাগুলা শেষ হয়া যায় না, মাফ কইরা দেয়া যায় আর কি… মনে হইতে পারে, না, এখন ভালো-কবি বলি! মরার পরে তো আর কোন ঝামেলা করতে পারবে না!
কিন্তু যারা ভালো-কবি, তারা মরা’র পরেও ভালো ঝামেলা করতে পারার কথা 🙂 মানে, ঝামেলা পাকানোটাই কবি’র কাজ না, কিন্তু কোন না কোনভাবে এইটা আসলে পার্ট অফ দ্য বিজনেস…
কবি মানেই একটা ফাকড-আপ ঘটনা। কমিক অ্যান্ড স্যাড। একইসাথে, দুইটাই।
#########
বিডিআর বিদ্রোহ’র সময় মেইন ক্লেইম কি ছিল বিডিআর জওয়ানদের? যতদূর মনে পড়ে ৩টা – “ন্যায্যমূল্যের দোকান” বসায়া বিজনেস কইরা যেই লাভ হইছে, সেইটার ভাগ জওয়ানদেরকে দেয়া হয় নাই। মিলিটারির লোকজন বিডিআর’রে সেকেন্ড-ক্লাস সিটিজেন বানায়া রাখছে, প্রমোশন দেয় না (এইরকম কিছু?)। থার্ড হইতেছে, ২০০৮ সালের ইলেকশনে মিলিটারি “ষড়যন্ত্র” করছিল, বিডিআর এর লোকজনরে ইউজ করছে (কিন্তু কোন সুবিধা দেয় নাই?)।
এখন, এইগুলা তো সামনের কথা। পিছনে কি ঘটছে বা আসলে কি হইছে, সেইটা তো আমরা জানি না। এইগুলা নিয়া কথা বলাও বিপদ। কোন ফ্যাক্ট তো নাই-ই, কথা-বলাটাও ট্যাবু একটা জিনিস। কোনদিন হয়তো আমরা খোলাখুলি কথা বলতে পারবো এই ঘটনা নিয়া।
বিডিআর জওয়ানদের এই অভিযোগগুলা সত্যি কিনা – এইটা নিয়া কোন আলাপ হইছে বইলা মনেহয় না। এই অভিযোগরে ইস্যু বানায়া অন্য কোন ফোর্স মিলিটারি অফিসারদেরকে খুন করছে কিনা – অইগুলা নিয়া কথা-বলা তো আরো রিস্কি অনুমানের জায়গা!…
কিন্তু যেইটা হইছে, ৭৪ জন মানুশ খুন হইছে, যার মধ্যে ৫৬/৫৭ জন মিলিটারি অফিসার। এইরকম কথা আছে যে, মুক্তিযুদ্ধের সময়ও এতো মিলিটারি অফিসার মারা যান নাই। আরো মুশকিল হইতেছে, এই ঘটনার পরে কিছু বিডিআর জওয়ান জেল-হাজতে “হার্ট অ্যাটাক” কইরা মারা গেছেন মনেহয়, অইটার তেমন কোন খবর আমরা জানি না। বিচারে “দোষী” লোকজন কি কথা বলছেন, অইগুলাও জানার কোন উপায় নাই।…
বিডিআর বিদ্রোহ বাংলাদেশে অবিচারের বড় একটা ঘটনা – এইভাবে এটলিস্ট ঘটনাটারে আমাদের মনে রাখাটা দরকার।
#########
নেটফ্লিক্সের ব্যাপারে বলছিলাম এইটা, যে উনাদের সবচে ইম্পর্টেন্ট ঘটনা হইতেছে, সাব-টাইটেল থাকা। সাব-টাইটেল ছাড়া কোন ভিজ্যুয়াল পাইবেন না নেটফ্লিক্সে। এইটা কোক-স্টুডিও’র ব্যাপারেও খাটে, উর্দু-হিন্দি আরো কাছের জিনিস হয়া উঠে আমাদের কাছে ইংলিশ ট্রান্সলেশনের ভিতর দিয়া কথাগুলারে ভালোভাবে আন্দাজ করা যায় বইলা।
বাংলাদেশের গানের, ভিজ্যুয়ালের মোটামুটি কোন বাংলা সাব-টাইটেল পাইবেন না। মানে, একদম যে নাই – তা তো না, রেয়ার। ইউটিউবের বাংলা কনটেন্টগুলার ১০% ভিডিও’তেও বাংলা সাব-টাইটেল নাই।
ভালো বা কমপ্লিট ভিউয়ার এক্সপেরিয়েন্স জন্য দরকারের বাইরেও, এই জিনিসটারে আমি ক্রুশিয়াল মনে করি অন্য আরেকটা জায়গা থিকা। আমাদের মুখের কথাগুলা, হরফের ইমেজে বা রিডিং ম্যাটেরিয়ালগুলাতে নাই বা খুবই কম। কিন্তু যখন মুখের কথাগুলারে লেখতে শুরু করবো আমরা, আমার ধারণা, সেইটা লেখার বা দেখার অভ্যাসের মধ্যেও আসতে শুরু করতে পারবে অনেকটা।
শুরুতে তো কিছুটা গাঁইয়া বা গেরাইম্মা লাগতেই পারে, কিন্তু খেয়ালও করতে পারার কথা, লেখার কারণে বলার জায়গাগুলারেও বদলায়া ফেলতে পারবো না আমরা! যেই বাংলায় আমরা কথা কই, আর যেই বাংলায় আমরা লেখি, দুইটার মধ্যে ডিফরেন্স খালি “ক্রিয়াপদের” না। 🙂
এই কারণে যারা গান, নাটক, সিনেমা নিয়া কাজ করেন, আমি রিকোয়েস্ট করবো, ভিডিও’তে বাংলা (এবং পারলে ইংলিশ) সাবটাইটেল রাইখেন আপনারা। মানে, এইটারে পার্ট অফ দ্য জব কইরা তুলতে পারলে ভালো হবে ঘটনা’টা। অবভিয়াসলি, এইটা দিয়া বাংলা-ভাষায় “বিপ্লব” হয়া যাবে না, কিন্তু পজিটিভ একটা ঘটনা হওয়ার কথা।
ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২২
কলোনিয়াল আমলে কলকাতার হিন্দু কলেজের “ইয়াং বেঙ্গল”র কথা মনে থাকার কথা হয়তো এখনো, কারো কারো। উনাদের ফিলোসফি খারাপ ছিল কি ভালো ছিল, তার চাইতে বড় জিনিস হইতেছে, উনাদের কাজকামের মেইন শত্রু আসলে ছিল “সমাজ”!
এখনকার ভারসিটিগুলারও এই দেমাগ আছে, “সমাজ মানেই খারাপ!” “অশিক্ষায়” “কুশিক্ষায়” ভরা। মানে, এই দেমাগ না থাকলে আপনি ভারসিটির স্টুডেন্টের নামে কলঙ্ক হইবেন একটা।
তো, আগে এইটা ছিল “সমাজ প্রগতির” নামে এলিটপণা দেখানোর ঘটনা। বাংলাদেশে এখন এই “প্রগতিবাদিতা” হইছে বাকশালের আকাম-কুকাম গোপন করার তরিকা।
ছাত্রলীগের সেঞ্চুরি মানিক’রা রেইপ করলে কইতে হয়, সমাজের বেটামানুশদের সমস্যা! (না যে তা তো না, কিন্তু বাকশালি ফ্রেন্ডদেরকে তো দরকার আমাদের, স্পেসিফিক হইলে তো বিপদ।) বাকশালি লোকজন হামলা করলে কইতে হয়, “এলাকাবাসীর” দোষ! সব দোষ সমাজের “অশিক্ষিত” মানুশদের!
সমাজ যে কতো কাজে লাগে আমাদের…
ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২২
১৯৯০ সালে ফার্স্ট গালফ ওয়ারের সময় এই বিপদে পড়ছিলাম আমি। বুশ যখন ইরাকে মিলিটারি পাঠাইলো, যুদ্ধ শুরু করলো। সবাই সাদ্দামরে হিরো বানাইতে লাগলো। আমি কইলাম, দেখেন, বুশ এবং আম্রিকা শয়তান, কিন্তু সাদ্দামরে ফেরেশতা বানানোটা ঝামেলার। সবার তো তখন ইমোশনের চোটে কাঁপাকাপি অবস্থা! ক্লাস টেনের স্টুডেন্ট আমি। অনার্সে-পড়া আমার কোচিংয়ের স্যার, যারে আমি পছন্দ করতাম, উনিও আমারে পলিটিক্যালি ম্যাচিউর মনে করতেন, খুবই মন খারাপ করলেন। কোচিংয়ের অন্য ক্লাসে গিয়া বলতে লাগলেন, রাসেল তো সাদ্দামরে সার্পোট করে না, ও তো আম্রিকার পক্ষে! আমার মোটামুটি “জাতীয় শত্রু” হওয়ার মতো অবস্থা। একে তো কমিউনিস্ট, আবার আম্রিকারে সার্পোট করে! সবাই চোখ বড় বড় কইরা আমার দিকে তাকায় দেখি। ভয়েই ছিলাম কয়দিন, বুশ’রে না পাইয়া আমারেই মারে কিনা!
মানে, আমি বুঝাইতে পারি নাই ঠিকমতো যে, সাদ্দামরে সার্পোট না কইরাও আম্রিকার এগেনেস্টে থাকা যায়। সাদ্দাম নিজের দেশের হাজার হাজার মানুশরে খুন করছে, আম্রিকারে খারাপ বলার লাইগা যদি তারে হিরো বানাইতে হয় তাইলে এইখানে বড়সড় কোন ঝামেলা আছে।
অনেক বছর পরে আজকে কাছাকাছি একটা অবস্থা হইলো।
কয়েকজন আইসা আমারে বুঝাইতে লাগলেন আম্রিকা কয়টা যুদ্ধ করছে, এখনো কি কি আকাম-কুকাম করতেছে, সারা দুনিয়ায়।… মানে, আপনি পুতিনরে সার্পোট করতেছেন না মানে হইতেছে আম্রিকারে সার্পোট করতেছেন তাইলে! (আনু মুহাম্মদের একটা কার্টুন শেয়ার-করা দেখছি এই নিয়া। উনারে ফাইনালি আন-ফলো করতে পারছি তারপরে।)
একই সাথে, পুতিনের এবং আম্রিকার এগেনেস্টে তো আপনি থাকতে পারেন না! অ্যাজ ইফ, ইউক্রেনের পিপল বইলা কোন পলিটিক্যাল জায়গা নাই, ইরাকের পিপলের পক্ষে থাকার কোন জায়গা যেমন ছিল না! ইউক্রেনের পিপলরে সার্পোট করেন বইলা যেন প্যালেস্টাইনের পক্ষে আপনি আর নাই!
কিন্তু দুইটাই কেন পসিবল না! পুতিন একটা জালিম – এইটা কইলে আম্রিকার শয়তানিরে সার্পোট কেন করা-ই লাগবে আমার! ঘটনাগুলা তো বাইনারি না, বরং এর বাইরে মোরাল এবং পলিটিক্যাল পজিশনগুলারে আমরা তৈরি করতে পারতেছি না। ঘটনা’টা এই জায়গাটাতেই বরং।
এইরকম দুয়েক্টা কথা বলার পরে লোকজন দেখি চোখ বড় বড় কইরা তাকাইতেছে আমার দিকে। তবে এইবারও লাক ভালো, মাইর-টাইর খাই নাই কোন।
#########
মেরাজ
মেরাজের পরে ইন্টারেস্টিং একটা ঘটনা ঘটছিল। কোন এক সীরাতের বইয়ে পড়ছিলাম মনেহয়।
নবী মুহাম্মদ (স.) যখন মেরাজের ঘটনার কথা কইলেন তখন মক্কার লোকজন তো মওকা পাইয়া গেলো যে, কি সব আজব কথা! কয়েকজন গিয়া আবু বকর (রা.)’রে ধরলো, যে, এখন তো বিশ্বাস করবেন, এইগুলা সব আজাইরা কথা, এইরকম আজগুবি জিনিস কি কখনো সম্ভব! এইসব শুইনাও আপনি মুহাম্মদের কথা বিশ্বাস করবেন, তারে নবী হিসাবে মানবেন! আবু বকর তখন কইলেন, শোন, যেই আল্লাহ’রে আমি কোনদিন দেখি নাই, দেখবোও না, উনার কথাতে তারেই আমি মানছি, বিশ্বাস করছি; মেরাজের কথা কেনো বিশ্বাস করবো না!
তো, এই ঘটনার কথা শুইনা আমার অন্য একটা জিনিস মনে হইছিল। যে, যিনি জানা-বোঝা লোক, উনি জানেন কোনটা বিচার করতে হবে, আর কোনটা উনার বিচারের বাইরের জিনিস।
Leave a Reply