নোটস: ফেব্রুয়ারি, ২০২২ [পার্ট ২]

ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২২

– ক্যাটাগরি হিসাবে রেসপেক্ট ও ডিস-রেসপেক্টের জায়গাটা অন্য যে কোন ক্যাটাগরি’র চাইতে ক্রুশিয়াল ঘটনা –

যে কোন রিলেশনশীপেরই বেইজ আসলে লাভ বা হেইট্রেট না। এমনকি দোস্তি বা দুশমনিও না। যারে আপনি পছন্দ করেন, তার দেখবেন একটা-দুইটা জিনিস পছন্দও হয় না তেমন। যে আপনার দোস্ত, তার লগে দুয়েক্টা জিনিস নিয়া দুশমনিও থাকে। মানে, যে কোন অপজিট ফিলিংসও থাকে লগে একটু। এইটা পার্ট অফ দ্য ডিল। প্লেজারের লগে পেইন নিতে হবে একটু, পেইনেও প্লেজার থাকে যেমন একটু। এইসব আর কি!

কিন্তু একটা কোর ক্যাটাগরি হইতেছে রেসপেক্ট আর ডিজ-রেসপেক্টের ঘটনা। যারে আপনি সম্মান করেন, তারে আপনি একই লগে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করতে পারবেন না, এই দুইটা একলগে করা’টা কঠিন। রেয়ার।

যারে আপনি ভালোবাসেন, সময় সময় তারে ঘৃণা করতে পারেন। উল্টাটাও। দোস্ত-দুশমনের ব্যাপারেও এরিয়াগুলা সবসময় ডিফাইনড না এতো। সবার লগে জাত-শত্রুতা থাকে না। কিন্তু যারে আপনি অসম্মান করেন, ‘ছোট’ মনে করেন, তারে ‘বড়’ মনে করাটা কঠিন। উল্টাটাও।
এই কারণে সমাজে যারা রেসপেক্টেড মানুশ আছেন তাদেরকে ‘ছোট’ করাটা একটা পলিটিক্যাল ঘটনা। হেইট করা বা দুশমনির বাইরে ডিস-রেসপেক্ট করাটা অনেক বেশি ইমপ্যাক্টফুল; যে কোন বিরোধিতার চাইতে।

যেমন ধরেন, খালেদা জিয়া তো ভ্রু আঁকেন, বেশি মেকাপ করেন! এইটা খারাপ ঘটনা 🙂 মানে, এটলিস্ট তারে রেসপেক্ট না করার একটা ব্যাকগ্রাউন্ড অইটা।

উল্টাটাও হয়, কাউরে রেসপেক্টের জায়গায় বসাইতে চাইলে তার খারাপ-ঘটনাগুলারে গোপন করার ঘটনা ঘটে, যেমন শেখ হাসিনা তার ছেলের বার্থডে’তে বিরিয়ানি রান্ধতেছেন বইলা ছবি শেয়ার দেয়া।…

এইগুলা খালি সোশ্যাল ও পলিটিক্যাল ঘটনা না, পারসোনাল জায়গাতেও কম-বেশি এইরকমেরই। কাউরে ডিস-রেসপেক্ট করতে পারলে হেইট করা, দুশমনি করাটা সহজ হয়।

তো, পারসোনাল জায়গাতে টেকনিক হিসাবে আমি মনে করি, যারে রেসপেক্ট করতে পারেন না, তারে এভয়েড করাটা বেটার।

তাই বইলা সবাইরে রেসপেক্ট করা-ই লাগবে বা কাউরে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা যাবে না – ব্যাপারটা এইরকম না। সময় সময় তো জরুরি, স্পেশালি যখন কোন জুলুম ঘাড়ের উপর আইসা পড়তেছে। কিন্তু এইটারে সবচে ক্রুশিয়াল ডিসিশান হিসাবে মানতে পারাটা দরকার আমাদের। আপনি কারে বা কোন জিনিসটারে রেসপেক্ট করতেছেন আর তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করতেছেন, সেই জায়গাগুলা/বাছাইগুলা আসলে একভাবে আপনারেই তৈরি করতেছে।

#########

দুয়েকদিন ধইরাই একটা ভবিষ্যদ্বাণী/প্রফেসি করার ইচ্ছা হইতেছে 🙂 সেইটা হইতেছে, “বাংলাদেশ যদি রাষ্ট্র হিসাবে ৫০ বছর টিইকা থাকে, তাইলে ইন্ডিয়া রাষ্ট্র হিসাবে ততদিন টিকবে না।”

এখন এইটা বলার আগে আর পরে তো কিছু কথা আছে। পরের কথাটা হইতেছে, রাষ্ট্র জিনিস শুরু হইছে দুইশ-তিনশ বছর আগে, এই ফর্মটা আর কতোদিন টিকবে, সেইটা একটা জিনিস। অনেক সময় তো ৫/১০ বছরের মধ্যে অনেক চেইঞ্জ হয়া যায়, অনেক সময় ৫০/১০০ বছরেও সেইটা হয় না। তো, এই ঘটনাটা এইখানে আছে। রাষ্ট্র জিনিসটা ইন ফিউচার একটা কনফেডারেশনের দিকে গেলেই হয়তো বেটার হবে, যেইখানে নানান ধরণের রিজিওনাল এসোসিয়েশন তৈরি হবে, মিনিমাম কিছু নীতি’র বেসিসে।…

তবে আগের বা এখনকার একটা কথা আছে, যেইটা খুববেশি আমরা খেয়াল করি নাই বইলাই আমার মনেহয়। ইন্ডিয়ার একটা ন্যারেটিভ আছে, বাংলাদেশরে একটা ফেইলড-স্টেইট এবং সর্ট অফ সাবমিসিভ এন্টিনিটি হিসাবে দেখানোর; যে ইন্ডিয়ার কথাতে উঠে-বসে। এইটা তো কিছুদূর পর্যন্ত সত্যি, কিন্তু যা আছে, তার চাইতে বেশিই দেখানো হয় বইলা আমার মনেহয়। বাংলাদেশের মিডিয়া এবং কন্সপিরেসি-থিওরির লোকজন এইটা করেন। এই ন্যারেটিভ দিয়া ইন্ডিয়ার স্টেইটগুলারে আসলে থ্রেটও দেয়া হয় যে, আরেকটা বাংলাদেশ হবা নাকি! মানে, ইন্ডিয়ার বাইরে গেলে তো কোন দাম থাকবে না!

কিন্তু এইটা খুব বেশি কাজ করতেছে বইলা আমার মনেহয় না। ইন্ডিয়াতে সেন্ট্রাল গর্ভমেন্টের পাওয়ার দিন দিন কমতে থাকার কথা। বিজেপির হিন্দুজমের ফেইলওরের পরে, বা এখনই উনারা নিজেদের জন্য একটা বেটার থট প্রডিউস করতে পারবে হয়তো।

এখন বাংলাদেশ সেই রোল-মডেল না, হইতে পারবে – এই আশাও কম। কিন্তু একটা রাষ্ট্র হিসাবে কন্টিনিউ করতে থাকলে ইন্ডিয়ার স্টেইটগুলারে মিনিমাম লেভেলে ইন্সপায়ার করতে পারবে হয়তো।


ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২২

– বাকশালি বুদ্ধিজীবীদের লিস্ট –

আমারে ভুল বুইঝেন না (বা একসাইটেড হইয়েন না), কোন লিস্ট আমি এইখানে রিকমেন্ড করতেছি না। আর এইগুলা কোন ভালো-জিনিসও না তেমন। এটলিস্ট ভালো-উদ্দেশ্যে জিনিসগুলা ঘটে বইলা আমরা হয় না।

এমনিতেও নিউজপেপার, নিউজপোর্টাল পড়া বাদ দিছি আমি কয়েক বছর আগে, ফেসবুকে কেউ লিংক শেয়ার দিলে দেখি। বাংলাদেশে যে একটা মিডিয়া-রিয়ালিটির দুনিয়া কায়েম কইরা রাখা হইছে, সেইটা থিকা দূরে থাকতে চাই আমি। ফেসবুকেও বাকশালি বট’গুলারে আনফ্রেন্ড, আনফলো কইরা রাখছি।

যার ফলে, বাকশালি বুদ্ধিজীবী কারা? এর টোটাল পিকচার’টা নাইও আমার কাছে।

কিন্তু কিছু ধারণা তো আছেই। (মানে, কিছু জিনিস তো না জানতে চাইলেও জানা হয়া যায়।) আর অইটার বেসিসে কিছু মানুশ যারা বাংলাদেশে খুব ইম্পর্টেন্ট বইলা মনে করা হয়, রেফারেন্স দেয়া হয় তাদের ব্যাপারে মিনিমাম ইন্টারেস্ট আমার নাই। ঠিক এভয়েড করা না, বরং উনাদেরকে খেয়াল করার দরকার আছে বইলা আমার মনেহয় না। এই বাছাইটা করতে পারাটা জরুরি। যে, যার যার কথা-ই মিডিয়া-দানবগুলা এবং সোশ্যালমিডিয়ার বটগুলা আমার সামনে নিয়া আসতেছে, তাদের সবাইরে নেয়া দরকার নাই আমার!

এই বাছাইগুলা আমাদের করতে পারা দরকার। টিভি-চ্যানেলগুলা যা দেখায় তারেই খালি না-দেখা, নিউজপেপার-পোর্টালগুলা যা বলতে চায় খালি তারেই না-শোনা, ফেসবুক নিউজফিডেরও ২% কন্ট্রোল করার উপায় থাকলে সেইটারে ইউজ করা। জাংক-ফুড খাওয়া বন্ধ করার মতো জাংক-থটস (মানে, প্রপাগান্ডা) এভয়েড করতে পারা দরকার। মানে, আমার চোখের সামনে কি দেখবো – এইটা আমার কন্ট্রোলে নাই, কিন্তু একটা বাছাই আমি করতে পারি। এইটা দরকারি ঘটনা।

আমি কম-বেশি এইটা করার ট্রাই করি। এইখানে ১০০% রাইট অর রং কিছু নাই। নিজের ধ্যান-ধারণার বেসিসেই এইটা করি। আমি ওকালতি করতে চাই যে, আপনারাও করেন। একটা বাকশালি বুদ্ধিজীবীদের লিস্ট বানান নিজের লাইগা, যাদেরকে পলিটিক্যালি ইভিল মনে করেন। মিডিয়া ও বটগুলা হাইলাইট করতেছে বইলাই এদেরকে ফলো করাটা দরকারি মনে না কইরাও বাঁইচা থাকতে এবং ভালো-চিন্তা করতে পারবেন আপনি।

২.
খুব লেইখা-পইড়া না হইলেও, এইরকমের একটা বাছাই আমি করি। আমার ধারণা, এখনকার সময়ে, বাংলাদেশে তিন ধরণের বাকশালি বুদ্ধিজীবী এক্টিভ আছেন –

এক. যারা সরাসরি বাকশালি, সরকারি লোক আসলে। আর এইটা নিয়া কোন লজ্জা-শরম নাই উনাদের। এরা ১০০% রটেন, এদেরকে ‘রাজাকার’ হিসাবে মার্ক করা দরকার।

দুই. ভালো-বাকশালি, পোস্ট পজিশনে নাই, কিন্তু ডাই-হার্ড ফ্যান, মাউথপিস। এদেরক থিকা ১০০ হাত দূরে থাকা দরকার।

তিন. পোগতিশীল-লিবারাল-বামটাম-(ইভেন) ইসলামিস্টও। এরা আপ-কামিং বাকশালি। বয়স ৫০ বছর পার হইলে এদের কেউ কেউ কাছা খুইলা নামবে মাঠে। এদেরকে বিশ্বাস করার আগে ১০০ বার ভাবা দরকার।

৩.
তো, আপনি-আমি এভয়েড করলেই এই প্রপাগান্ডা-মেশিনের সোলজার’রা বাতিল হয়া যাবে না। কিন্তু এটলিস্ট এরা যে আমাদের, বাংলাদেশের মানুশের লোকজনের কোশ্চেনের কোন উত্তর না, এমনকি আসল-কোশ্চেনগুলারেই দমায়া রাখতেছে, সেই জিনিসগুলা ভাববার মতো টাইম ও স্পেইস আমরা পাইতে পারবো, নতুন ক্রিয়েশনের দিকে না যাইতে পারলেও।

যেহেতু আমরা গাছ না, আমাদের সরতে পারাটা, নতুন পজিশনের পসিবিলিটির কথা ভাবতে পারাটা দরকার।

[ও, লিস্ট পাবলিশ করাটা জরুরি না। নিজের জন্য বানাইতে পারা, ফলো করা আর রেগুলার বেসিসে আপডেট করতে পারাটা দরকারি ঘটনা।]

#########

এইরকম একটা ধারণা আছে যে, কমিউনিস্টরা বা বাম-ঘরানার লোকজন আসলে এডভান্সড চিন্তা করতে পারেন বইলা সমাজের সব মানুশের লগে মিলতে পারে না। এইটারে কম-বেশি মিছা কথা বইলাই মনেহয় আমার। মানে, উনারা পারেন – এইটা না। উনারা পারেন না, কিন্তু ‘ইন্টেলেকচুয়ালি এডভান্সড’ বইলা না; বরং উনাদের চিন্তার সেন্টারে মানুশ নাই বইলা। একটা আইডিওলজি, আর্দশ বা ধারণারে মানুশের চাইতে বড়ই মনে করেন না খালি, বরং যে কোন আলাপের সেন্টার অইটা।

এখন চিন্তা হিসাবে অইটা ঠিকাছে। কিন্তু চিন্তা আর কাজ তো একই জিনিস না। পলিটিক্স হইতেছে কাজের ঘটনা। আপনি অনেক কথা-ই কইতে পারেন, আরো অনেক কিছু ভাবতে পারেন, কিন্তু আপনি যা করতেছেন, আপনার লাইফ-স্টাইলটা হইতেছে আপনার পলিটিক্সের ঘটনা।

এইটা মনে হইতেছিল, একটা লেখাতে এই জায়গাটা পড়তে গিয়া: “নারীবাদীর ভাবমূর্তি আমাদের দেশে একজন উগ্র, বহুগামি, মারমুখী, পুরুষ বিদ্বেষী, বিয়ে-পরিবার-প্রেম প্রত্যাখ্যানকারী, আমাদের দেশের সমাজ, সংস্কৃতি বিচ্ছিন্ন, পাশ্চাত্য প্রভাবাচ্ছন্ন মেয়ের চেহারা নেয়।”

মানে, এইরকম একটা ইমেজ দাঁড়া করানো হইছে বইলা দাবি করা হইতেছে। কিন্তু আপনি যদি বাংলাদেশে ফেমিনিস্ট বইলা পরিচিত (মিডল-ক্লাসের মধ্যেই) ৫/৭ জনের নাম নেন, উনাদের কাজকামে এই জিনিসগুলা কি নাই? ‘অভিযোগ’ হিসাবে ইম্পোজ করার ঘটনা, পুরাটা? তা তো না। একই ভাবে, “কমিউনিস্টরা সব নাস্তিক, আল্লাহ মানে না” – এইটা যদি স্যাম্পল বেসিসে ১০০ জন কমিউনিস্ট দাবি করা লোকজনরে নেন, কতোটা মিছা কথা আসলে?

আমি দাবি করতেছি না যে, কমিউনিস্ট মানেই নাস্তিক, ফেমিনিস্ট মানেই পলিগ্যামাস, কিন্তু আমাদের সামনে যারা উদাহারণ হিসাবে আছেন, উনারা এই পজিশনগুলারে আপহোল্ড করছেন, করতেছেন উনাদের কাজেকামে।

যার ফলে এই ঘটনাগুলারে অই আইডিওলজিগুলার লগে মিলায়া দেখে লোকজন। এই দেখা’টা যতোটা না ঠিকঠাক-না, তার তুলনায় আইডিওলজিরে নন-পারসোনাল বইলা রায় দেয়ারও ঘটনা। যে, মানুশটাই তো আর আইডিওলজি না!

এই জায়গাটা থিকা একটা আদর্শ বা আইডিওলজিরে জীবনযাপনে ধারণ বা প্রাকটিস করার একটা রীতি-রেওয়াজ বা প্রেশার তৈরি হয়। কিন্তু অইটাও আরেকটা ঝামেলাই। কারণ অইখানেও সেন্টার’টা হইতেছে আইডিওলজিটাই, যারে আপনার জীবন দিয়া, কাজকাম দিয়া প্রমাণ করা লাগবে।

আমি বলতে চাইতেছি, একটা আইডিওলজি যেমন নন-পারসোনাল কোন ঘটনা না, একইভাবে পারসোনাল লাইফের ঘটনাও না। একটা আইডিওলজি হইতেছে চিন্তার ঘটনা, এইটারে যখন আমরা ডেইলি লাইফের প্রাকটিসের মধ্যে নিয়া আসতে যাই, তখন সেইটা ‘ধর্মের’ জায়গাটারে নিতে শুরু করে। আর এইখানেই যে কোন আইডিওলজি’র লগে রিলিজিয়নের কনফ্লিক্ট’টার শুরু, একভাবে।

মানে, সংজ্ঞা দিয়া বস্তুরে বা ধারণারে বুঝা যাবে না, সবসময় একটা অংশ বাদ থাইকাই যাবে। একটা বস্তু বা ধারণারে খেয়াল করতে হবে তার চেইঞ্জ হওয়ার, এক্টিভ থাকার বা এফেক্টিভ থাকার জায়গাগুলার ভিতর দিয়া।…

 

ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২২

এই রকমের একটা কথা আছে যে, “কৃষ্ণ করলে লীলাখেলা, আমি করলে দোষ!” বা “সব মাছেই গু খায়, দোষ খালি (নাম ভুলে গেছি) মাছের”… এইরকম।

এইগুলা খালি ডিফেন্সিভ মেকানিজম না, বরং যে কোন দোষ, বাটপারি’রে জায়েজ করতে চাওয়ার ঘটনা আসলে।

এমনিতে, ফেসবুকেও দেখবেন (আমি উদাহারণ দিয়া দেখাইছিলাম একবার) যে, একই কথা আপনি-আমি বা পাবলিক-ফিগার না কইলে ১০/২০টার বেশি লাইক পড়বে না, কিন্তু সেইম জিনিসটাই যদি একজন সেলিব্রেটি বা মোটামুটি একটা ফ্যান-বেইজ আছে এইরকম কেউ যদি কন, ১০/২০ হাজার লাইক-কমেন্ট চইলা আসবে।

মানে, কথাটা তো আছেই, কিন্তু কথার পিছনের মানুশটারে, তার লাইফের অন্য কাজকাম, কথা-বার্তারে মিলায়া আমরা তার কথাটারে পড়ি। (এই কারণে বাকশালের লোকজন যখন ডেমোক্রেসির কথা বলে, আমরা বুঝতে কি রকমের ‘ডার্ক হিউমার’ অরা করতেছে!)

তো, যেইটা কৃষ্ণ করে, সেইটা লীলাখেলা-ই, একই কাজ যখন আপনি-আমি করি সেইটা বাটপারি’র বেশি কিছু হইতে পারে না। চোখের সামনে যা ঘটতেছে, ঘটনা অইটুকই না আর কি!

#########

বিপ্লবী আর বাটপার

ধরেন, একটা দেশে ভোট আছে, খালেদা জিয়ার নামে সমালোচনা করা যাইতেছে, জিয়াউর রহমানরে গালি-গালাজ করা যায়, তখন আপনি কইলেন যে, ভোট মানে তো টাকার খেলা, গরিবের রাজনীতি নাই, তাদের কোন লিডার নাই, এই সিস্টেম কাজ করতেছে না! বা যেইখানে মিনিমাম একটা এডুকেশন সিস্টেম আছে, ক্লাস-টাস হয়, সেইখানে পড়াশোনার নামে মুখস্ত, পুরান কিছু জিনিস গিলানো হইতেছে, পরীক্ষার নামে কঠিন-প্রশ্ন কইরা প্রাইভেট পড়ানোর লাইগা, নোটবই বেচার লাইগা স্টুডেন্টদেরকে হ্যারেস করা হইতেছে, এইটা চেইঞ্জ করা দরকার!

এইগুলা বিপ্লবী-আলাপ না হইলেও, আলাপের সাবজেক্ট হিসাবে আমরা নিবো তো, এমনকি যারা এইখানে কন্ট্রিবিউট করতে চান, তাদের কথা শুনতেও চাইবো।

কিন্তু ধরেন, যেই দেশে ভোট দেয়ার মিনিমাম জায়গাটাই নাই, সেইখানে যদি আপনি বলেন, ভোটের রাজনীতি খারাপ; যেই দেশে স্কুল-কলেজ বন্ধ দুই বছর ধইরা, সেইখানে আপনি যদি বলেন, পরীক্ষা না হইলেই তো ভালো! সেইখানে আপনার চিন্তাটারে বাটপারি না ভাবতে পারাটারেই আমি একটা বড় সমস্যা হিসাবে দেখবো তো!

মানে, না-দেখতে চাওয়াটা কোন কাইন্ডনেসের ঘটনা না, বরং পলিটিক্যাল জায়গাগুলারে ‘পারসোনাল ফিলিংস’ বইলা এড়ায়া যাওয়ার জায়গাটাতে একটা ব্যারিকেড বা এটলিস্ট একটা অস্বস্তি তৈরি করার ঘটনা হিসাবেই আমি দেখবো।

এই ডিফরেন্সটা আমাদের করতে পারাটা দরকার।

 

ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২২

১৪ ই এপ্রিল, ১৯৮৩

এই জিনিসটা আছে, একটা ডেইটে অনেক ঘটনা তো ঘটে। এইটা খুব ভালোভাবে রিয়ালাইজ করছিলাম ১০ই মহরম নিয়া। তখন একটা মিলাদ পড়ানোর কথা হইতেছিল, তো, আমার মনে তো কারবালার ঘটনা’টা ছিল। আমি কইলাম, এইরকম স্যাক্রিফাইসের দিনে কোন খুশির বা সেলিব্রেশনের মিলাদ পড়ানোটা কি ঠিক হবে? তখন অন্য যারা ছিলেন, উনারা মাদরাসার হুজুরের সাথে কথা বইলা বললেন যে, না, ১০ই মহরম তো ভালো দিন! অইদিন মুসা-নবী ফেরাউনের হাত থিকা মুক্তি পাইছিলেন, ইউসুফ নবী মাছ পেট থিকা বাইর হইতে পারছিলেন, (মানে, এইরকমের) কিছু পজিটিভ ঘটনাও আছে, ইসলামের হিস্ট্রিতে। ইমিডিয়েট পাস্টই একমাত্র পাস্ট না।

তো, ১৪ই ফেব্রুয়ারি খালি ভ্যালেন্টাইন ডে না, পহেলা বসন্ত না, ১৯৮৩ সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারিও। যেইদিন ঢাকা ভার্সিটিতে স্টুডেন্টদের খুন করার ভিতর দিয়া এরশাদ তার ক্ষমতা পাকাপোক্ত করছিল। মিলিটারি ছিল এর পিছনে, আমলারাও; মিডিয়ারে শুধু দখলে নিতে পারে নাই (এখনকার নয়া বাকশালের মতো), যার ফলে ঘটনাগুলা নিউজের ভিতর দিয়া জানতে পারি আমরা এখনো। এরশাদের যেই ক্ষমতা-কাঠামো (মিলিটারি, পুলিশ, আমলা) এর লগে মিডিয়া ও সিভিল-সোসাইটি অ্যাড হইয়া এই ‘নয়া বাকশাল’ তৈরি হইছে এখন। এইটা এক্সটেন্ডেড এবং ওয়াইডার ভার্শন এরশাদের।

কিন্তু এই রিসেন্ট পাস্টের ঘটনা আমরা কেন মনে রাখি নাই? খুব জটিল কোন কারণে এইটা ঘটতেছে বইলা আমার মনেহয় না। মানে, এজিদের দলের লোকরা কেন কারবালার জন্য মাতম করতেছেন না – এই দাবি কি আপনি করতে পারেন?

মানে, যারা নয়া-বাকশালের ally বা মিত্র (মিডিয়া ও সিভিল সোসাইটি), তারা কাক হয়া কাকের (মিলিটারি, পুলিশ ও আমলাদের) মাংস কেন খাইতেছেন না – এই দাবি করাটা একই রকমের না হইলেও কাছাকাছি ঘটনা তো। অবভিয়াসলি জিনিসটা এতোটা স্ট্রেইট না, কিন্তু বেইজ হিসাবে একটা নন-ডেমোক্রেটিক শাসনরে মাইনা নিয়া আরেকটা নন-ডেমোক্রেটিক শাসনের ক্রিটিক তো করতে পারেন না আপনি। করলেও সেইখানে এইটা মিনিংফুল হইতে পারার কথা না।

আর ধরেন, ‘সাবধান’ হওয়াও তো দরকার, এতে কইরা ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী’ পক্ষগুলা শক্তিশালী হয়া উঠার চান্স আছে না! 🙂 মানে, এরশাদ যে একটা ডেমোক্রেটিক গর্ভমেন্টরে (বিএনপি সরকার’রে) সরায়া ক্ষমতা দখল করছিল – এই সত্যি কথাটারেও তো গোপন রাখতে হবে একইসাথে! এই ডিলেমা থিকা যেই হাফ-ট্রুথ বলা হয়, সেইটা যতোটা না এরশাদ-বিরোধিতা তার চাইতে নয়া-বাকশালি রিজিমে স্টেইক বাড়ানোর একটা ঘটনা হয়াই থাকেই তখন।

আমি বলতে চাইতেছি, একটা ডেইটে অনেকগুলা সিগনিফিকেন্ট ঘটনা না-থাকতে পারার জায়গা থিকা এই ‘অস্বীকারের’ ঘটনাটা ঘটে না এতোটা। এইটা থাকেই যে, যেকোন একটা ফিলিংস বা ইভেন্ট অন্য সব ইভেন্টের চাইতে বেশি ইমপ্যাক্টফুল হয়া উঠে। কিন্তু এইটা জাস্ট এইটুকই না।

এইটা আরো স্পষ্টভাবে বুঝতে পারবেন এরশাদের লগে বাকশালের আতাঁতগুলা দেখলে, একবার-দুইবার না, ১৯৮৬, ১৯৯৬, ২০০৮-সহ অনেকবারই একসাথে কাজ করছে এই দুই ‘স্বৈরাচার’। এইভাবে ছোট-স্বৈরাচার এরশাদের দল জাতীয় পার্টিরে বড়-স্বৈরাচারের খাইয়াও ফেলছে, বড়মাছ যেইভাবে ছোটমাছরে খায়।

এইটা সম্ভব হইছে, এরা ‘মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি’ বইলা না, বরং এদের নন-ডেমোক্রেটিক জায়গাগুলাতে মিলের কারণে। বামপন্থী দলগুলা বাংলাদেশে বিপ্লবের নাম নন-ডেমোক্রেটিক আইডিওলজিরই সংগঠন। যার ফলে বাকশালি হওয়াটা সহজ, বিএনপি হওয়ার চাইতে। আর এই জায়গাগুলারে ওভারলুক কইরা গেলে এরশাদ-বিরোধিতা কিছু মিন করে না আসলে।

যার ফলে, ১৯৮৩ সালের ১৪ই এপ্রিল রিলিভেন্ট হয়া উঠতে পারে না, এর কোর হিস্ট্রিক্যাল ন্যারেটিভের কারণে। মানে, এই কারণে ইন-সিগনিফিকেন্ট একটা ঘটনাই হয়া আছে। এবং মোস্ট প্রভাবলি এইরকমই হয়া থাকবে, যতক্ষণ না পর্যন্ত ডেমোক্রেসির জায়গাটারে সেন্টার কইরা ভাবতে রাজি হইতে পারতেছি আমরা।…

 

ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২২

– পিরীতি –

বাংলাদেশি সিনেমার গানে একটা কি-ওয়ার্ড বা পাওয়ার-ফুল শব্দ হইতেছে – পিরীতি।

ব্যাপারটা এইরকম না যে, পিরীতি শব্দ দিয়া অনেক পপুলার গান আছে। অনেকবার ইউজ হইছে। (অইটা তো আছেই।) বরং এই প্রেম না কইয়া পিরীতি কইলে ব্যাপারটা বাংলাদেশি সিনেমার গানের লিরিকসের লগে এসোসিয়েট করে অনেকটা। যেমন ধরেন, ‘ডিসকোর্স’ কইলে পোস্টমর্ডান চিন্তার কথা মনেহয় আপনার, ‘আধুনিক’ কইলে (কনটেম্পরারি না, বরং) ১৯৩০-৪০ সালের কলোনিয়াল-বাংলা বা কলকাতা-সাহিত্যের কথা মনেহয়, এইরকম।

খালি বুঝা যে যায় এইরকম না, বরং কোর ভোকাবুলারি’র পার্ট এইটা। (যেমন ধরেন, ‘পাওয়ার’ শব্দটারে না বুঝলে মিশেল ফুকো’র চিন্তারে আপনি ধরতে পারবেন না। ‘ডিজায়ার’ শব্দটা গিলেজ দেল্যুজের লেখাতে যেই মিনিং জাঁক লাঁকা’তে একই না)। আবার, ডিসিপ্লিনের মামলাও। আপনি নিউজ-মিডিয়া বা অ্যাডফার্মের লোক হইলে ‘স্টোরি’ (আন্দাজ কইরা বলতেছি) একটা কি-ওয়ার্ড। এইরকম ব্যাংকিং, এডুকেশন, এনজিও, সব সেক্টরেরই কিছু ভোকাবুলারি বা কি-ওয়ার্ড আছে, যেইগুলা দিয়া আপনি বুঝতে পারবেন যে, এই লোক এই সেক্টরের। বা আপনি যে অই সেক্টরের লোক সেইটার প্রমাণ দেয়ার লাইগাও এই ওয়ার্ডগুলা ইউজ করা লাগবে।

এইগুলারে কি-ওয়ার্ড (কলোনিয়াল বাংলার কিছু বলদ চাবি-শব্দও) কয়, যা সবসময় ফিক্সড না, যুগে যুগে চেইঞ্জও হয়। আর এইগুলারে ‘মূল-শব্দ’ বইলা জিনিসটারে পুরাটা বুঝানো যাবে না। এইটা অনেকটা বুঝা যাবে পাশাপাশি ডিসপ্লিনগুলার না-নেয়ার বা অন্য মিনিংয়ে নেয়ার ভিতর দিয়া।

যেমন ধরেন, কলোনিয়াল-বাংলা কবিতার ১০০ পেরমের কবিতা যদি স্যাম্পল হিসাবে নেন, অইখানে ‘পিরিত’ শব্দটা পাওয়ার কথা না। মানে, দুই-চাইরবার পাইতে পারেন যেইখানে ‘আঞ্চলিক’ 🙂 হওয়ার দরকার পড়তেছে। আরেকটা হইতেছে, মিনিং’টা একইরকম থাকে না। ‘পিরীতি’ দিয়া ঠিক পেরেম, ভালোবাসা বা মহব্বত বুঝানো হয় না, একটা ডিজায়ারও এমবেডেড থাকতে হয়। মানে, ফিজিক্যাল কানেকশনের ডিজায়ার’টা আছে, যেইটা র.ঠা.-প্রেমের জায়গাতে খুবই ‘ন্যাস্টি’ ব্যাপার।

এখন এই ‘পিরীতি’র (যেইটা হইতেছে প্রেম-ভালোবাসার ‘ছোটলোকি’ 🙂 ভার্সন, এর) দুই ধরণের মোকাবেলা হয়। একটা হইতেছে ঋতুপর্ন ঘোষ ভার্সন, আরেকটা হইতেছে আল মাহমুদ ভার্সন। মানে, (আরো ভার্সন তো আছে বা থাকতে পারে, কিন্তু) উনাদের ম্যানিফেস্টশনটা চোখে পড়ে। ঋতুপর্নের চোখের বালি দেখলে টের পাইবেন যে উনার ক্লেইমটা হইতেছে, র.ঠা. তো আসলে ঠারে ঠারে বুঝাইছেন! রঠা’র ন্যারেটিভটারে উনি ফিজিক্যাল মিনিংয়ে ট্রান্সফার করছেন, কিন্তু এর একস্ট্রিম ফরম্যাট হইতেছে, সেক্স তো এক ধরণের এক্সারসাইজ! আর আল মাহমুদের ক্লেইমটা হইতেছে, আমরা তো বানজারান (মানে, ফিজিক্যাল)! একটু ‘গ্রাম্য’ এবং ‘লোকাল’। ‘শিক্ষিত’র এগেনেস্টে মাথা-ছোট, শরীর-বড় গোঁয়ার কিসিমের (শিল্পী সুলতানের) লোক। এবং বাঘ! 🙁 [ফিমেইল হইতে হইলে হওয়া লাগবে বাঘিনী (এগ্রেসিভ) – এইরকম]…

মানে, মনে হইতেই পারে, আমি বাড়ায়া বলতেছি, কিন্তু এই ডিফরেন্স এবং মিনিং – এইগুলা আছে, এমনকি এর চাইতে আরো ডিপ এক্সটেন্ড পর্যন্তই এফেক্টিভ থাকতেছে আসলে।

 

ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২২

অবিচুয়ারি: বাপ্পি লাহিড়ী

বাপ্পি লাহিড়ী হইতেছেন আর.ডি. বর্মণের পরে একমাত্র মিউজিশিয়ান পশ্চিম-বাংলা প্রদেশের, যিনি হিন্দি-সিনেমার গান বানায়া সাকসেসফুল হইছেন ইন্ডিয়ায়। উনার বাংলা-গান যে ভালো না – তা তো না, কিন্তু বাপ্পী লাহিড়ী যে বাপ্পি লাহিড়ী হইতে পারছেন, এইটার মেইন ক্রেডিট হইতেছে হিন্দি ফিল্ম ইন্ড্রাষ্ট্রিতে উনার সাকসেসফুল হইতে পারার ঘটনাটা।

কিশোর কুমারের ভাইগ্না হিসাবে মুম্বাইয়ের হিন্দি-ফিল্ম ইন্ড্রাষ্ট্রিতেই উনার মিউজিক ক্যারিয়ারের শুরু। সিঙ্গারের চাইতে মিউজিশিয়ান হিসাবেই পপুলার হইছেন বেশি। মেলোডিয়াস সং উনি বানাইলেও হিন্দি-সিনেমাতে ‘ডিস্কো’-ঢং নিয়া আসার ক্রেডিট হইতেছে উনার। উনার বাংলা-গানে এই জিনিস নাই। মেলোডি সং-ই বানাইছেন। অইগুলাই পপুলার।

ট্রেন্ড হিসাবে দেখেন, উনার পরে যেইসব পশ্চিম-বাংলার ফেমাস সিঙ্গার’রা আছেন: অলকা ইয়াগনিক, শ্রেয়া ঘোষাল, শান, আরজিৎ সিং, মোনালি ঠাকুর’রা, উনারা তো বাংলা-গান গানই নাই তেমন। মানে, অইগুলা উনাদের হিট-গান বা শিল্পী হওয়ার ঘটনা না তেমন। কুমার শানু, বাবুল সুপ্রিয়’রা হিন্দি-সিনেমার ক্যারিয়ার শুরু করার আগে ও পরে, বা এর পাশাপাশি বাংলা-গান গাইছেন। এইটা যে করা যায়, এর শুরু’টাও মেবি একভাবে করছিলেন বাপ্পি লাহিড়ী।

কিশোর কুমারের অইটা দরকার ছিল না আসলে। এস.ডি.বর্মন, আর.ডি.বর্মন, গীতা দত্ত’রা তো ছিলেন হিন্দি-সিনেমার মিউজিকের পিলার। কিশোর কুমার অই লিগাসির লোক। মিউজিকের লিগাসিতে আমার ধারণা, বাপ্পি লাহিড়ী হইতেছেন, আর.ডি. বর্মণের একটা কন্টিনিউশন। যেইখানে এ.আর.রহমান হইতেছেন নতুন একটা ঘটনা।…

তো, যেইটা বলতেছিলাম, হেমন্ত ও মান্না দে কিন্তু ‘বাঙালি গায়ক’ হিসাবে হিন্দি-সিনেমায় গান গাইছেন। ভালো বেঙ্গলি-সিংগার হিসাবে হিন্দি-সিনেমায় গান গাইছেন। যেইটা বাপ্পি লাহিড়ী’তে আইসা রিভার্স হইছে। মানে, হিন্দি-গানে যেহেতু উনি সাকসেসফুল হইছেন, বাংলা-গানেও ভালো করতে পারবেন তো একই জিনিস দিয়া। কিন্তু খালি বাংলা-গান গাইয়া বা খালি পশ্চিম-বাংলায় হিট হয়া ইন্ডিয়ান-শিল্পী হওয়া টাফ। এমনকি বাংলাদেশের মানুশের কাছেও ‘ওপার-বাংলার’ গায়ক হওয়াটা কঠিন। কালচারাল রিকগনিশনের এই জায়গাটা আমাদের খেয়াল করাটা দরকার।

এমনিতে, বাপ্পি লাহিড়ী’র ঝলমল করা ঝংকার-বিটস তো একটা সময়ের সিগনেচার, আমাদের মেমোরিতে। যদিও ‘চলতে চলতে’ বা ‘থোড়া রেশম লাগতা হে’ বা ‘অমর সঙ্গী’ উনার মোস্ট-সেলিব্রেটেড সং কিন্তু একটু মাজা-ব্যথার কথা মনে হইলেও ‘আই অ্যাম অ্যা ডিস্কো ড্যান্সার’ বইলা নাইচা উঠতে চাওয়ার কথা, আমাদের এইটিইসের টিনএইজ মন! 🙂 (অবশ্য কিশোর, কিশোরী বলা হইতো তখন)

#########

বাংলাদেশের রাজনীতিতে এইরকমের একটা ন্যারেটিভ এখনো চালু যে, বিএনপি আর এরশাদ তো একই দল! (বাম-বাটপারদের ন্যারেটিভ বলি আমি এইটারে।) যে, দুইটাই মিলিটারি’র দল, ক্যান্টনমেন্ট থিকা আসছে, ‘বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের’ দল, এই সেই…। কিন্তু পলিটিক্সরে কথা দিয়া না, কাজ দিয়া বিচার করবেন।

আজ পর্যন্ত কোনদিন বিএনপি’রে জাতীয় পার্টি’র লগে এলায়েন্স তৈরি করতে দেখছেন? ইভেন ২০০১ সালের ইলেকশনেও জাতীয়পার্টি-মঞ্জু’র লগে এলায়েন্স হইছিল, এরশাদের লগে হয় নাই।

কারণ আইডিওলজিক্যালি বিএনপি আর জাতীয় পার্টি’র ডিফরেন্স হইতেছে, ডেমোক্রেসির জায়গাতে। দুইটা দলের কনটেক্সট পুরা আলাদা। বাকশাল এবং অনেকগুলা মিলিটারি ক্যু’র পরে বাংলাদেশে যখন পলিটিক্স নাই হয়া গেছিল, তখন জিয়াউর রহমান বিএনপি নামের দল বানায়া, আওয়ামী লীগসহ অন্য দলগুলারে নিয়া রাজনীতি শুরু করছিলেন, ইলেকশন দিয়া (১৯৭৯ সালে) রাষ্ট্র-ক্ষমতায় আসাটারে নিয়ম বানাইছিলেন।

জিয়াউর রহমানের এসাসিনেশনের পরে এরশাদ যে ক্ষমতায় আসছিলেন, সেইটা ছিল অই ডেমোক্রেটিক প্রসেসটারে আবার বাকশাল, ব্যারাক এবং কন্সপিরেসির রাজনীতিতে ফিরায়া নিয়া যাওয়ার একটা ঘটনা। একটা ডামি-ইলেকশন দিয়া ব্যাপারটারে ফরমালাইজ করতে চাইছিল, যেইটাতে ১৯৮৬ সালে আওয়ামী লীগ কন্ট্রিবিউট করছিল (সিপিবিও ছিল লগে)।

বিএনপি মিলিটারি’র দল না, যেইটা বিএনপি’র অনেক ‘চিন্তাবিদরা’ ভাবতে এবং হাইলাইট করতে ভালোবাসেন; বরং বিএনপি হইতেছে বাংলাদেশে ডেমোক্রেটিক প্রসেস চালু করার একটা দল। খালি মুসলিম লীগ, জামাতে ইসলামি না, আওয়ামী লীগ এবং শেখ হাসিনার রাজনীতির শুরুও বিএনপি আমলেই।

জাতীয় পার্টি হইতেছে বাংলাদেশে রাজনীতি-করার বন্ধ করার সেকেন্ড শুরুয়াত, আফটার বাকশাল। যার ফলে, আওয়ামী লীগ (পড়েন, বাকশাল) এবং জাতীয় পার্টি সবসময়ই পলিটিক্যাল এলায়েন্স ছিল: ১৯৮৬, ১৯৯৬, ২০০৭, ২০১৩-এ (গৃহপালিত বিরোধীদল হিসাবে)। ইভেন জাসদ এবং তথাকথিত বামদলগুলার লগে আওয়ামী লীগের এলায়েন্সেও অনেকে অবাক হন। কিন্তু এরা (জাসদ ও বামদলগুলা) কখনোই ইলেকশনের রাজনীতি’তে বিশ্বাস করে নাই, ডেমোক্রেসির চাইতে এই দলগুলার ভিতরে কন্সপিরেসিই মেইন পিলার, অপারেট করার। বিপ্লবের নামে এরা বাকশালেরই ফটোকপি আসলে।…

এখন, ফ্যাক্ট হিসাবে এইগুলা যে আমাদের চোখের সামনে নাই বা আমরা জানি না – তা তো না! কিন্তু আমরা ‘দেখতে পাই না’ 🙂 মানে, এইভাবে দেখতে আমরা রাজি না আসলে। কারণ এই জায়গা থিকা দেখতে গেলে ফার্স্টেই নিজেদের এলিটপণা / ব্রাহ্মণ্যবাদ / আশরাফি এবং বেটাগিরির জায়গা থিকা সরতে রাজি হইতে হয়। যেইটা আমরা বাদ দিতে তো চাই-ই না, বরং কোন না কোনভাবে এচিভ করতে চাই।
আর এইটা হইতেছে সবচে স্যাড জিনিস।

তো, স্যাড হওয়ার চাইতে (বা হওয়ার পরে) নিজের চিন্তা-ভাবনারে রিভিউ করতে রাজি হওয়াটা সবসময় দরকারি একটা জিনিস।

#########

বাম-বাটপারদের কালচারাল বেইজ থিকা বাইর না হইয়া বাকশালি রিজিমের পলিটিক্যাল বিরোধিতা আপনি করতে পারবেন না, বাংলাদেশে।

এমন না যে, এরা রোমান্টিক-কাপল, দুজনে-দুজনার ❤️ বরং তার চাইতে বেশি! এরা ইন-সেপারেবল, আলাদাভাবে টিইকাই থাকতে পারবে না।

আপনি বাকশালি পলিটিক্যাল বেইজ থিকা ‘হাজার বছরের বাংলা-সংস্কৃতি’ নামের বাটপারিগুলা বাদ দেন (যেইটা আসলে বাম-ঘরানার ন্যারেটিভ), দেখবেন খুবই শ্যালো (ফাঁপা) জিনিস এইটা। এর বাইরে কোন কালচারাল ক্লেইম এই রাজনীতির নাই।

একইভাবে বামদের কালচারাল স্পেইসটা থিকা বাকশালি পলিটিক্যাল পাওয়ারটারে বাদ দেন, আলাদা কোন রাজনীতি আছে? মানে, এমন কোন মেজর পলিটিক্যাল ইভেন্টের কথা কি বলতে পারবেন বাকশাল ও বামদের মুখামুখি বা বিরোধী কোন পজিশনে ছিল? ছোটখাট ‘মনোমানিল্য’ তো থাকতেই পারে…

মানে, আমি বলতে চাইতেছি, বামরা আর বাকশালিরা আলাদা তো নাই-ই, বরং বাম-বাকশালি নামের একটাই ঘটনা। একটা কালচারাল বদমাইশির, আরেকটা পলিটিক্যাল গুন্ডামির জিনিস। মোটাদাগে, ডিফরেন্স এইটুকুই।…

 

ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২২

বিচার-চাওয়া আর রিভেঞ্জ বা প্রতিশোধ-নেয়া ঘটনা একই না। বিচার-চাওয়া মানে একটা থার্ড-পার্টি বা সিস্টেমের উপ্রে আপনি ভরসা রাখতেছেন। আর রিভেঞ্জ হইতেছে অই ট্রাস্ট’টা আপনার নাই কারো উপ্রে, আপনি নিজে সেইটা করবেন বা আপনি পাওয়ারফুল লোক হইলে আপনার দলের লোকজন দিয়া এই কাজ করবেন, নিজের হাত নোংরা করবেন না। এইরকম।

কিন্তু বাংলাদেশে ঘটনা’টা এইরকম না। বিচার চাওয়া, মানে, থানায় কেইস করা বা আদালতে মামলা করার মানেই হইতেছে এক ধরণের রিভেঞ্জ নেয়া। সমাজে ‘খারাপ-লোক’ হিসাবে পরিচয় করায়া দেয়া যে, এর নামে তো মামলা হইছিল বা পুলিশ ধইরা নিয়া গেছিল! মুখে চুনকালি মাখায়া দেয়া! সেকেন্ড হইতেছে, পুলিশ দিয়া পিটানি তো গেলো! বা জেলের ভাত খাওয়াইছি-টাইপের রিভেঞ্জ নেয়া। হাজিরা দিতে দিতে জান পেরেশান হয়া যাওয়ার কথা। মানে, রায় কি হইতেছে, সেইটা ঘটনা না, কখনোই! হেনস্তা করাটাই হইছে রিভেঞ্জ।

এই কারণে দেখবেন, আদালতের রায় খুববেশি ম্যাটার করে না। বা যার নামে হামলা-মামলা হইলো, সে-ই হইতেছে ক্রিমিনাল! এইটা খালি রেইপ-কেইসের ব্যাপারেই ঘটে না, যে কোন কেইসেই এইটা একটা কমন ঘটনা। মানে, আমি বলতে চাইতেছি, বিচার-চাওয়া এবং বিচার-করা জিনিসটারে যখন রিভেঞ্জের বিপরীতে একটা জাস্টিস বা ন্যায়বিচারের জায়গাতে নিয়া যাওয়া যাইতেছে না, তখন খুব স্পষ্টভাবেই আমাদের বুঝতে পারবে হবে যে, বড় কোন ঝামেলা হইছে এইখানে। এই জায়গাগুলা জাস্ট একটা রিভেঞ্জের টুল হয়া উঠছে, ক্ষমতাবান লোকজনের; মানুশ-জনরে শায়েস্তা করার বা বিপদে ফেলার একটা উপায়, বেশিরভাগ সময়।

এই জায়গাটারে ইগনোর কইরা বিচারের আলাপটা করলে, সেইটার দিশা ঠিক হবে না।

২.
তো, এইটা কেন হয় বা হইতেছে? পলিটিক্যালি ইউজ করার প্রাকটিসটাই মেইন ঘটনা। ইভেন এরশাদের সময়ে থানা-পুলিশ-আদালত এতোটা ভায়োলেন্ট বা ভারনারেবল ছিল না। এইটা হইতেছে, যখন এই জায়গাগুলারে আপনি পলিটিক্যাল উদ্দেশ্যে ইউজ করতেছেন, জায়গাগুলা আরো বেশি করাপ্ট হইতেছে। আর হইতে হইতে এখন পলিটিক্যালি ইউজ হইতে পারাটাই এর মেইন ফাংশনালিটি হয়া উঠতেছে।

মানে, পুলিশের কাজ পাবলিকের জান-মাল রক্ষা করা না (অইটা সেকেন্ডারি টাস্ক), সরকারি-বিরোধী ষড়যন্ত্র খুঁইজা বাইর করা হইতেছে মেইন কাজ। আদালতের কাজও কনফ্লিক্টের সুরাহা করা না (মাঝে-মধ্যে তো করবেই কিছু), বরং পাওয়ার-স্ট্রাকচারটারে সার্ভ করতে পারাটাই হইতেছে মেইন এর ফাংশনালিটি।

এখন আমরা এক রকমের মাইনা নিছি যে, ঘটনাগুলা এইরকমই! এইরকমই তো হবে! “কোন বিকল্প তো নাই!” এইটা মাইনা নেয়া না, এইটা হইতেছে, জুলুমটারে ‘নরমালাইজ’ করার একটা তরিকা। পাবলিক-ইন্সটিটিউশন এবং সরকারি-সংগঠন যে দুইটা জিনিস, সেইটারে রিকগনাইজ করতে রাজি না হওয়া। আর এইগুলা ‘ভুল’ না বা জাস্ট আরেকটা পারসপেক্টিভ না। এইগুলা হইতেছে জুলুমের সহযোগী বা আইডিওলজিক্যাল বেইজ হিসাবে নিজেরে/নিজের চিন্তারে রিলিভেন্ট রাখতে চাওয়ার ঘটনা।

৩.
তো, কি করতে হবে তাইলে? এই জায়গাগুলার ফাংশনালিটি কেমনে চেইঞ্জ হইছে ওভার দ্য পিরিয়ড অফ টাইম, সেইটা বলতে পারতে হবে। এইগুলারে জুলুমের হাতিয়ার থিকা, সরকারি-সংগঠন থিকা কেমনে পাবলিক ইন্সিটিটিউশন হিসাবে কনভার্ট করা যায়, কোনভাবে সারভাইব করতে পারে – সেইটা নিয়া ভাবতে হবে। আর এইটা আলাদা কইরা হবে না, টোটাল পলিটিক্যাল প্রসেসেরই একটা পার্ট হওয়ার কথা সেইটা।…

 

ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২২

পুরান হিস্ট্রির বইগুলা পড়তে গিয়া মন-খারাপই হইতেছিল। কারণ উনারা যেমনে দেখতেছেন ঘটনাগুলারে, যে আর্য কে অনার্য, কোন রাজা কি করছেন, এই অঞ্চলের লোকজন কতো ভালো, কতো উদার – এইগুলা, এইভাবে দেখাটা তো স্যাড ঘটনাই আসলে। এই জন্য ভাবলাম যে, নতুন লেখা কিছু বই পড়ি।

হিস্ট্রি নিয়া আমার ইন্টারেস্ট ১৭৫৭ বা ১৮৫৭ পর্যন্ত, মানে বিফোর কলোনিয়াল আমল। আমার ধারণা, এর পরের ন্যারেটিভ এবং ফ্যাক্টগুলা কম-বেশি এখনো এভেইলেবল। এর আগের জিনিসগুলা যেমন আলাপে নাই, ন্যারেটিভ’টাও ঝামেলার। এই কারণে শেষ থিকা শুরুর মতো, বিশ্বেন্দু নন্দ’র লেখা “পলাশীর পূর্বের বাংলার ৫০ বছর” বইটা পড়তে নিছিলাম। মন-খারাপের জায়গায় মেজাজ-খারাপই হইতেছে এখন। মানে, এখনো জাতীয়তাবাদী বা ন্যাশনালিস্ট জায়গা থিকা হিস্ট্রি কেমনে লেখা সম্ভব!

এইটা খুব ভুল-কথা যে একটা বই নিয়া কথা কইতে গেলে, পুরা বই পড়া লাগবে আপনার। স্পেশালি নন-ফিকশনের ব্যাপারে তো ট্রু না-ই, বেশিরভাগ সময়। বইয়ের ইন্ট্রো’তে বা মেথডের জায়গাটাতেই টের পাইবেন আপনি কোন জায়গাটা থিকা কথা বলা হইতেছে বা কি ডিসিশানগুলা আসতেছে। অইটাতে কনভিন্সড হইলে বা ইন্টারেস্টেড হইলে প্রসেসের জায়গাটা দেখতে চাইবেন আপনি। একজন মানুশরে লগে যেইরকম ৩মাস-৬ মাস চললেই আপনি টের পাইতে পারবেন কিছু জিনিস*, একটা বইয়ের ঘটনাও এইরকম, কিছুদূর যাওয়ার পরেই কিছু ধারণা আপনি করতে পারবেন।

তো, বিশ্বেন্দু নন্দ’র বইটা হইতেছে, ন্যাশনালিস্টিক-হিস্ট্রি ঘরানার একটা বই। যেইখানে মেইন আর্গুমেন্ট হইতেছে, বাংলার [পলিটিক্স’টা আসলে এই আইডেন্টিটির জায়গাটারে হাইলাইট করা, যেইটা নিয়া এই বইয়ে উনি কখনোই ক্রিটিক্যাল না বইলা আমার ধারণা, মানে এইটা তো একটা এবসুলেট ট্রুথ বা ‘শাশ্বত সত্য’ 🙂 ] কারিগরি ব্যবস্থা খুবই উন্নতমানের ছিল, ব্রিটিশ আইসা এইটারে ধ্বংস করছে। ব্রিটিশরা কলোনি বানানোর ভিতর দিয়া আমাদের টেকনোলজিক্যাল উন্নতি করে নাই, বরং দেশীয় শিল্পগুলারে ধ্বংস করছে। এইটা নিয়া কোন সমস্যা নাই।
কিন্তু কেন করছে? ব্রিটিশরা খারাপ বইলা? 🙂 ব্রিটিশ জাতটাই তো খ্রাপ! আর বাংলাদেশের লোকজন বেকুব বইলা, অসহায় বইলা এই ট্রাপে পাড়া দিছে? মানে, এইটা নিয়া কোন আলাপ আছে বইলা মনেহয় না আমার। [পুরা বইটা দেখবো আসলে এইটা দেখার লাইগাই, কোন আলাপ কিনা… কিন্তু ইন্ট্রো পইড়াই বুঝা যাইতেছে, নাই আসলে বা থাকার কথা না।] কারণ বইটার উদ্দেশ্যই হইতেছে দেখানো যে, দেখেন, আমরা মহান! বা ভালো এবং বেটার!

এখন এই আলাপ যে করা যাবে না – তা তো না, কিন্তু হিস্ট্রির আলাপ হিসাবে তো পাতলা-আলাপই এইগুলা। হিস্ট্রির কাজ তো খালি কাহিনি-বর্ণনা না, কাউরে গ্লোরিফাই করা যেমন না ফ্যাক্টগুলারে হাজির করাও না, বরং ফ্যাক্টগুলা, ঘটনাগুলা কেমনে ইন্টার-রিলেটেড সেই জায়গাগুলারে খুঁইজা বাইর করতে চাওয়ার একটা ঘটনা হওয়ার কথা।

ব্রিটিশরা এই অঞ্চলের (তখনো বাংলা ব্যাপারটা ইউনাইটেড কোন ফ্যাক্ট হয়া উঠতে পারার কথা না) কারিগরি ব্যবস্থা ধ্বংস কইরা দিতে পারছিল থ্রু ট্রেড বা বিজনেসের ভিতর দিয়া। এখন গুগুল, অ্যামজনের দুনিয়াতে খুব স্পষ্টভাবেই দেখতে পাই আমরা যে, প্রডাকশন এবং ডিস্ট্রিবিউশন খুবই ইন্ট্রিগ্রেটেড ঘটনাই না, বরং ডিস্ট্রিবিউশনের ক্ষমতা যার হাতে, প্রডাকশনটারে সে-ই কন্ট্রোল করে। কলোনিয়াল আমল হইতেছে এই ডিস্ট্রিবিউশন কন্ট্রোলের শুরুর ঘটনা।

এর আগ পর্যন্ত প্রডাকশনটাই ছিল ইস্যু। যে, সবাই সব জিনিস বানাইতে পারে না। এখনো কম-বেশি অনেকে অনেক কিছু পারে না, কিন্তু সেইটা যতোটা না স্কিল-সেটের জিনিস, তার চাইতে ইকনোমি অফ স্কিলের জিনিস। ঢাকা শহরে প্রাণ-কোম্পানি যখন বেকারি আইটেম বানাইতে শুরু করছে, লোকাল অনেক বেকারি’র বিজনেস বন্ধ হয়া গেছে। কারণ প্রাণ-কোম্পানির ইকনোমি অফ স্কেল বড়, ডিস্ট্রিবিউশন রিচ অনেক বেশি। কম দামে বেচতে পারে, আপনার সামনে সবসময় থাকতে পারে। মুদির দোকানের মতো বইয়ের দোকানেও যেই সব আপনার চোখের সামনে থাকবে, অইগুলার মধ্যে থিকা একটাই তো কিনবেন আপনি।…

আরবদের ট্রেড আর ইউরোপিয়ানদের ট্রেড একই জিনিস না। ইউরোপিয়ানরা এই জায়গা থিকাই অপারেট করছে যে, পলিটিক্যাল ক্ষমতা দখল না কইরা বিজনেস বাড়ানো যাবে না। আরব’রা যখন এই অঞ্চলে বাণিজ্য করছে, সেইটা পলিটিক্যাল ক্ষমতা দখলের ঘটনা ছিল না; আবার যখন রাজ্য দখল করছে, সেইটা বাণিজ্য করার জন্য করে নাই। এইখানে সিগনিফিকেন্ট একটা ডিফরেন্স আছে।
আর এই অঞ্চলে সওদাগরি কখনোই ভালো জিনিস ছিল না। চাঁদ সওদাগর পাওয়ারফুল ছিলেন, কিন্তু ছিলেন ভিলেন।… উনারা ছিলেন

(আমার ধারণা) বৌদ্ধ-ধর্মের লোক। নানান দেশে গেছেন, নানান মানুশের লগে মিশছেন, ধর্মের (তখনকার দিনে আসলে জাত-পাতের ঘটনা, এখনকার মতো রিলিজিয়ন ছিল না…) ব্যাপারে ফ্লেক্সিবল থাকছেন। এই কারণে জাত-পাতের জায়গা থিকা সবসময় ডিসকারেজ করা হইছে। মাঝখানের ছোট্ট একটা সময় ছাড়া হিস্ট্রিক্যালি সওদাগরি, বাণিজ্য বা ট্রেডিং ‘ভালো জিনিস’ ছিল না। হয়তো দরকারও ছিল না এতোটা ইকনোমিক কারণে। তিন মাস জমি চাষ করলেই তো বাকি নয়মাস বইসা খাওয়া যায়। কারিগরিও এই জায়গা থিকা শুরু হওয়ার করার কথা। যার ফলে, এই অঞ্চলে যে কোন কিছুতেই ক্রাফটস জিনিসটা সময় নিয়া করার একটা ঘটনা।…

এই কারিগর-সমাজ নিজেরাই আরেকটা ‘জাত’ হয়া উঠতেছিল মেবি। আবার দরিয়াতে অন্যদের দুশমনিতেও টিইকা থাকতে পারার কথা না। দরিয়া ছিল ইউরোপিয়ানদের দখলে। ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম’টা ছিল অদের কব্জায়। যেইখান থিকা কলোনিয়ালিজমের শুরু আসলে।

তো, এই অঞ্চলে কারিগরি স্কিলগুলা টিইকা না-থাকার কারণ হইতেছে, ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেমের উপর মিনিমাম কোন কন্ট্রোল না-থাকা, সওদাগরি বন্ধ হয়া যাওয়া এবং জাত-পাত বড় হয়া উঠা। [অবভিয়াসলি, এইগুলা আমার লজিক্যাল অনুমান, ফ্যাক্ট দিয়া প্রমাণ করা লাগবে। নতুন কোন ফ্যাক্ট পাইলে আবার রিভিউ করা লাগবে, এইরকম।]

কিন্তু এই জায়গাগুলারে কন্সিডার না কইরা যদি “ব্রিটিশদের বদমাইশি” বইলা রায় দেয়া হয়, সেইটা একটা “জাতীয়তাবাদী” ঘটনাই, কোন হিস্ট্রিক্যাল আবিষ্কারের ঘটনা তো এইখানে নাই! বরং একটা ‘বাংলা’রে কন্সট্রাক্ট করার ঘটনা হইতেছে মেইন। যেইটারে আমাদের সন্দেহ করতে পারাটা দরকার।

হিস্ট্রির দিকে তাকানো মানে পুরানো বেইজগুলা / তর্কগুলাতে ফিরা যাওয়ার ঘটনা না। বর্তমানরে দেখার নতুন জায়গাগুলা তৈরি করার ঘটনা আসলে। আর পুরান প্রশ্নগুলারে নতুন কইরা উত্তর করার ভিতর দিয়া এইটা করা সম্ভব না। বরং নতুন কোশ্চেনগুলারে সামনে আনার ভিতর দিয়া সেইটা করতে হবে। [আর এইটা আমার পারসোনাল মন-খারাপ বা মেজাজ-খারাপের ঘটনা না আর কি পুরাটা…]


*হাউএভার, আপনার ধারণা’টাই অই মানুশ’টার ট্রু-সেলফ না। শিক্ষিত-বলদদের এই প্রবলেম আছে, মানুশ নিয়া এবং বই নিয়াও।

 

Leave a Reply