নোটস: ফেব্রুয়ারি, ২০২২ [পার্ট ১]

ফেব্রুয়ারি ১, ২০২২

এইরকম একটা জিনিস দেখলাম নিউজফিডে, যেইখানে সাস্টের আন্দোলন থামানোর জন্য মু.জা.ই.’রে যেমন দায়ী করা হইতেছে, একইভাবে সুন্দরবন বাঁচাও আন্দোলন স্টপ হওয়ার জন্য আনু মুহাম্মদ’রে দায়ী করা হইতেছে। অথচ যিনি এই মুভমেন্টের একজন সেন্ট্রাল-ফিগার ছিলেন। এই কারণে অই কথাটারে মাইনা নেয়া যাইতেছে না। ট্রলের জায়গাতেও চইলা যাইতে পারে ব্যাপার’টা।

কিন্তু আমার মনে হইছে, যিনি এই কথা কইছেন, উনি তার কথা-বলার বেইজ’টা ক্লিয়ার করতে পারেন নাই। মু.জা.ই. এবং আ.মু.’র মিল যেমন আছে, অমিলও আছে।

মিল’টা হইতেছে দুইজনেই ভালো-মানুশ, সৎ, ভদ্রলোক। আবার অমিল’টা হইতেছে, মু.জা.ই. যতোটা বাকশালি, আ.মু. তা না। কিন্তু যেই মিল’টা ভিজিবল নাই এতোটা সেইটা হইতেছে – বিএনপি-বিরোধিতা।

উনারা দুইজনেই বাকশালের ব্যাপারে একই মাত্রায় ক্রিটিক্যাল না হইতে পারেন, কিন্তু বিএনপি বা খালেদা জিয়া ভালো না, এই ব্যাপারে আমার ধারণা, দুইজনেই সমান লেভেলের একমত আছেন, বা হইতে পারবেন।

উনারা দুইজনই কম-বেশি ‘হাজার বছরের বাঙালি ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির’ও সার্পোটার হওয়ার কথা।

মানে, কালচারালি একই ঘরানার লোক হওয়ার কথা, যেইটা উনাদের পলিটিক্যাল পজিশনটারে সিগনিফিকেন্টলি আলাদা করতে পারে না আসলে। বাকশাল সবসময় একটা ‘মন্দের ভালো’ ঘটনা, দুইজনের কাছে। (আ.মু.’র কাছে হয়তো কম, মু.জা.ই’র কাছে যেইটা হইতেছে ‘বিকল্প নাই!’)

উনারা দুইজনই খারাপ-বাকশালের জায়গায় ভালো-বাকশালের শাসন চান। এইটা পলিটিক্যালি বেটার না, বরং আরো বাজে একটা ঘটনাই। উনাদের নিজ নিজ ডিফরেন্সের পরেও।

 

ফেব্রুয়ারি ২, ২০২২

বাংলাদেশে যে কোন মুভমেন্টই যদি বাকশাল-বিরোধী মুভমেন্ট না হইতে পারে, সেই মুভমেন্টের দাবি কখনোই আদায় হইতে পারবে না। (ইন দ্য লং রান, সমস্যাটা খালি থাইকাই যাবে না, আরো বড় হবে।)

কিন্তু একটা মুভমেন্ট যখন অই পয়েন্ট’টাতে রিচ করে, তখনই বাম-বাকশালি মিডিয়া ও বুদ্ধিজীবী’রা মাঠে নামেন আর বলতে থাকেন, এইটারে সরকার-বিরোধী, মানে, বাকশাল-বিরোধী মুভমেন্ট বানানো যাবে না। আর খেয়াল কইরা দেখবেন, তখন শাহবাগের ডামি আন্দোলনগুলা শুরু হয়। সরকারি আন্দোলনগুলা। অইটা হইতেছে পয়েন্ট অফ ডেথ, যে কোন মুভমেন্টের।

শাহবাগের আর্ট-মারানিরা যতক্ষণ পর্যন্ত কোন অস্বস্তি ছাড়া আপনার পলিটিক্যাল পজিশনটারে নিতে পারতেছে, সন্দেহ করবেন যে, আপনার পজিশনে কোন গলদ আছে কিনা।

বাংলাদেশের যে কোন ক্রাইসিসের পিছনে ঘটনা হইতেছে, অবৈধ সরকার এবং বাকশালি শাসন। বাকশালের লক্ষ্য করোনা ঠেকানো না, অবৈধভাবে রাষ্ট্র-ক্ষমতা ধইরা রাখা। বাকশালের লক্ষ্য নিরাপদ সড়ক বানানো বা ভিসি সরানো না, যে কোন উপায়ে নিজের পাওয়ারফুল ইমেজ ও রাষ্ট্র-ক্ষমতা ধইরা রাখা। এই সিস্টেমরে বাতিল না কইরা কোনকিছু বদলাইতে পারবো না আমরা।

কিন্তু যে কোন মুভমেন্ট যখন এই আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়ের জায়গাতে যাইতে পারে, তখন বাম-বাকশালি মিডিয়া এবং বুদ্ধিজীবীরা সিনে আসেন। অনেকেই তাদের রোল’টারে বুঝতে পারতেছেন, কিন্তু আমার ধারণা, পুরাপুরি লোকেট করতে পারতেছেন না।

তো, এই জায়গাতে হইতেছে উনাদের কন্ট্রিবিউশন’টা: যে কোন ইস্যু’তে বাকশালের রোল’টারে গোপন ও ডিসকানেক্টেড কইরা রাখা; একটা আলগা সমস্যা হিসাবে দেখানো। এইটা হইতেছে বাম-বাকশালি মিডিয়া ও বুদ্ধিজীবীদের কোর কন্ট্রিবিউশনের জায়গাটা, ইন দ্য বাকশালি সিস্টেম।

এই পজিশন’টারে এই জায়গাটা থিকা দেইখেন না যে, উনারা দেখতে পান না! বরং উনারা আসলে দেখতে রাজি না। যেই জায়গা থিকা দেখলে উনাদের পলিটিক্যাল পজিশনটারে নড়চড় করতে হয়, সেই জায়গাগুলাতে নজর দিতেই উনারা রাজি না। কারণ যদি এই পজিশনটাতে না থাকেন, উনারা তো ‘বুদ্ধিজীবী’-ই থাকতে পারবেন না, এই বাকশালি রিজিমে! তো, স্যাড একটা ঘটনাই একটা, অনেক সময়।

 

ফেব্রুয়ারি ৩, ২০২২

– কালচারের লেয়ারগুলা আমাদের খেয়াল করা দরকার –

ঘটনা হইতেছে এফডিসি’র পরিচালক সমিতির মহাসচিব শাহীন সুমন (উনার কোন সিনেমার নাম কেউ মনে করতে পারবেন না, আমি মোটামুটি শিওর) হিরো আলম’রে এফডিসি থিকা বাইর কইরা দিছে, পাবলিকলি বাজে-বিহেভ করছে। এইটা নিয়া হিরো আলম ফেসবুকে পোস্ট দিছেন, যেইটার শিরোনাম হইছে “এই সুশীল সমাজের লোকরা আমারে নিবে না”, এইরকম।

এখন শাহীন সুমন কি ‘সুশীল সমাজ’, বাংলাদেশের? না। হিরো আলম আলাদা কইরা বলছেন, ফিল্মের লোকজনও আমারে নিবে না। মানে, শাহীন সুমনরা আরেকটা ক্যাটাগরি। এফডিসি হইতেছে চলচ্চিত্র, আর ধরেন নিকেতন-বনানী’র ফ্ল্যাটবাড়ির লোকজন যারা ওয়েব-সিরিজ বানায়, অরা হইতেছে ‘আর্ট-কালচার’ করা লোক, বা ‘সুশীল সমাজ’ এক রকমের; আগে যারা টিভি-নাটক বানাইতো। মানে, ক্যাটাগরি হিসাবে হিরো আলম হইতেছেন, থার্ড-ক্লাস ক্যাটাগরির। বাংলা-সিনেমার মতো সেকেন্ড-ক্লাস ক্যাটাগরিতেও উনার জায়গা নাই।
এই ডিফরেন্সের জায়গাগুলা বা লেয়ারগুলারে খেয়াল করতে পারাটা দরকারি জিনিস আসলে।

তো, হিরো আলমের অবাক হওয়ার বা মন-খারাপ করার জায়গাটা আলাদা। এই যে সেকেন্ড-ক্লাস ক্যাটাগরির ‘এফডিসির চলচ্চিত্র’র লোক, অদেরকেই তো কেউ চিনে না, ইউটিউবে বা অনলাইনের দুনিয়াতে! (অইখানে হিরো আলমের ‘সুশীল সমাজ’রেও না পুছলে চলে। সুশীল সমাজের চেত’টাও হিরো আলমের উপর, এই জায়গাতেই।) অরা কিসের বেসিসে দেমাগ দেখায়! এইটা কোন কালচারাল দেমাগ না, র পলিটিক্যাল পাওয়ার আসলে।

এইটারে হিরো আলম যে আইনিভাবে মোকাবেলা করার কথা বলতেছেন, সেইটা ‘সুশীল-কালচার’র উপর উনার ভরসা রাখা তো অবশ্যই, কিন্তু একইসাথে এইটাও কনফার্ম করে যে, র পলিটিক্যাল পাওয়ারের সমাজে এই ‘সুশীল’ জিনিসটা এগজিস্ট করে না। হাস্যকর ঘটনাই! হয়তো করুণ হাসির ঘটনা কিছুটা।

#########

বাংলাদেশের নায়ক-নায়িকাদের মধ্যে নায়ক রাজ্জাকের সাথেই আমার সামনাসামনি দেখা হইছে। ঢাকার স্কয়ার হসপিটালে, ২০০৬/৭ সালের দিকে। আমার বড় মেয়ের চোখের সমস্যার জন্য কয়েকবার যাইতে হইছিল, তখন একদিন দেখা। ডাক্তারের যেই ওয়েটিং রুমে আমরা গেছি, অইখানে একটা সোফা’তে উনি একলা বইসা আছেন। আমি দেইখা উনারে সালাম দিলাম। মেয়েরেও সালাম দিতে বললাম। তখন উনি আমার মেয়ের মাথায় হাত বুলায়া জিগাইলেন, কেমন আছো মা?… এইরকম। মেয়ে’রে (৩/৪ বছর বয়স তখন) বললাম, উনি হইতেছেন বাংলাদেশের সিনেমার নায়ক।

তো, রাজ্জাকের কথা মনে হইলো সুজাতা’র মেমোরি পইড়া। উনারা (সুজাতা, উনার হাজব্যান্ড আজিম, রাজ্জাক আর হাসমত) গেছেন মুম্বাইয়ে, স্বাধীনতার পরে (১৯৭২ সালেই হবে), একটা ফিল্মের আউটপুট বাইর করতে, কারণ মুক্তিযুদ্ধের সময় এফডিসি’র সবকিছু পুড়ায়া দিছিল পাকিস্তানি আর্মি’র লোকজন। তখন উনারা যেই হোটেলে উঠছেন, অইখানে গিয়া দেখেন, রাজেশ খান্না আর ডিম্পল কাপাডিয়ার বিয়ার অনুষ্ঠান। আজিম, সুজাতা, হাসমত তো খুবই খুশি, রুমের জানালা দিয়া হিন্দি-সিনেমার নায়ক-নায়িকাদেরকে দেখবেন, স্পেশালি দিলীপ কুমার’রে। সন্ধ্যা থিকা রুমে বইসা থাকবেন – এইরকম উনাদের প্ল্যান। রাজ্জাক কইলেন, অদেরকে কি দেখবেন, চলেন আমরা বাইরে গিয়া শহরে ঘুরি, সিনেমা দেইখা আসি! উনারা যখন রাজি হইতেছিলেন না তখন রাজ্জাক হইলেন, আমরা কি অদের চাইতে কম নাকি!

পরে সুজাতা আর হাসমত বাইর হইছিল রাজ্জাকের সাথে, আজিম সাহেব যান নাই। হিন্দি-সিনেমার নায়ক-নায়িকাদের দেখার জন্য হোটেল রুমে ছিলেন। তো, এইটা হইতেছে রাজ্জাক এবং আজিমের ডিফরেন্স।

মানে, জিনিসটা রাজ্জাকের দেমাগ-ই মনে হবে অনেকের কাছে। কিন্তু রাজ্জাক তো খালি রাজ্জাক না, বাংলাদেশের নায়ক তো উনি! এই আন্ডারস্ট্যান্ডিং থাকাটা দরকারি জিনিস। এইটা যে উনার ছিল, এইটা জাইনা ভাল্লাগছে আমার।

[ আরেকটা ছোট জিনিস হইতেছে, উনার নামটা। দেখেন, কোন পদবী নাই, ডাকনামের মতো। এখন তো ধরেন, ডাকনাম কেউ লেখে না। অথচ যারা আমাদের ডাকনাম জানেন বা অই নামে ডাকেন, উনারা মোটামুটি আমাদের কাছের লোক, মানে একটা ক্লোজনেস তৈরি হওয়ার ব্যাপার আছে। নায়কদের ব্যাপারে এইরকম পদবী ছাড়া নাম আগে ছিল, এখন মোটামুটি নাই। নায়িকাদের দেখবেন পদবী ছাড়া ‘ডাকনাম’ টাইপের নামটাই মেইন – কবরী, ববিতা, শাবানা, মৌসুমী, শাবনুর…। তো, এইটা এতোটা বিগ-ডিল না, কিন্তু খেয়াল করার মতো ঘটনাও হইতে পারে, অনেক সময়। ]

 

ফেব্রুয়ারি ৪, ২০২২

মেমোয়ারস বা স্মৃতিকথা ছাড়া আমাদের হিস্ট্রিক্যাল ডকুমেন্ট তো কমই অনেক। এবং অনেক সময় অই ডকুমেন্টগুলা পাবলিকলি পাওয়াও যায় না। বরং মেমোয়ারস’গুলা সাহিত্যের জিনিস বইলা এক ধরণের পাবলিক ডকুমেন্ট হিসাবে আমাদের ধারে-কাছে থাকে অনেক। কিন্তু এইগুলারে হিস্ট্রিক্যাল ডকুমেন্ট হিসাবে ট্রিট করার আগে সাবধান থাকা দরকার আমাদের।

এইগুলা থার্ড বা ফোর্থ ক্যাটাগরির জিনিস আসলে। যেইগুলা থিকা জিনিসপত্র extract বা বাইর কইরা নিতে হবে। অবশ্যই এক ধরণের হিস্ট্রোরিসিটি বা ইতিহাস-ধারণা হইতেছে সবচে জরুরি জিনিস, তারপরে ফ্যাক্ট এবং ঘটনা, এরপরে এর বিচার-বিশ্লেষণগুলা, দ্যান ব্যক্তিগত বয়ান, মেমোয়ারসগুলা। হিস্ট্রিক্যাল ডকুমেন্ট হিসাবে সাহিত্যও দরকারি, কিন্তু মুক্তার মতো জিনিস, অনেক সময় সারা সাগর সেচার পরে কিছু জিনিস পাওয়া যায়। এইরকম।

তো, এইটা মনে হইতেছিল, আবুল হাশিম সাহেবের “আমার জীবন ও বিভাগপূর্ব বাংলাদেশের রাজনীতি”র একটা জায়গা পড়তে গিয়া। বইটা ১৯৭৮ সালে ফার্স্ট ছাপা হইছিল, কিন্তু ১৯৭০ সালে উনি অন্ধ হয়া যান; এর আগে-পরেই লেখার কথা বইটা। (কোন ইনফরমেশন পাইলাম না তেমন।) আর ঘটনা হইতেছে ১৯৪০ সালের দিকের, লাহোর প্রস্তাবের সময়কার কথা। উনি উনার রিয়েল ইনটেনশনের কথা কইতেছিলেন এইভাবে:

“জিন্নাহ দ্বিজাতিতত্ত্ব প্রচার করেছিলেন এবং এ তত্ত্বকে তিনি তাঁর রাজনীতির ধুয়ো হিসাবে গ্রহণ করেছিলেন। আমি জিন্নাহর দ্বিজাতিতত্ত্বে বিশ্বাসী ছিলাম না এবং বাংলায় আমি সেটা প্রচারও করিনি। আমি প্রচার করেছিলাম বহুজাতিতত্ত্ব। আমি মনে করি ভারতবর্ষ কোনো একটি দেশ নয়। এ হলো একটি উপমহাদেশ। ভারতবর্ষ বিভিন্ন দেশ ও জাতির সমন্বয়ে গঠিত। আমার কাছে ইউরোপ বলতে যা বোঝায় ভারতবর্ষ বলতেও তাই বোঝায়। ফ্রান্সের নাগরিক যখন বলে সে একজন ফরাসি সেটাও যেমন সত্য, আবার যখন বলে সে একজন ইউরোপীয় সেটাও তেমনি সত্য। ভারতবর্ষের ক্ষেত্রেও সেই একই ব্যাপার।”
/আমার জীবন ও বিভাগপূর্ব বাংলাদেশের রাজনীতি, আবুল হাশিম (পেইজ ৩৮)

মানে, কথা হিসাবে তো খুবই সুন্দর। কিন্তু ১৯৪০ সালে যদি উনি এইরকমই ভাবতেন, এর কোন নমুনা উনার কোন কাজকাম বা লেখাপত্রে তো নাই আসলে; এমনকি এই বইয়েও। মানে, ইন্ডিয়ান সাব-কন্টিনেন্টরে যদি ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের কনটেক্সটে ভাবতেন, তাইলে তো দুইটা রাষ্ট্র না, ৫/৭টা দেশের কথাই কইতেন না, কোন জায়গায়, কোনভাবে?

এইটা ১৯৪০ সালের থট হওয়ার কথা না, ১৯৭০-৭৪ সালের দিকের একটা রিফ্লেকশন হইতে পারে বড়জোর। লজিক্যালি। তো, এই ধরণের ব্যাপারগুলারে আমার ধারণা, আমরা নজরে আনতে পারি না। আবু জাফর শামসুদ্দীনের “আত্মস্মৃতি” বইটা পড়তে গিয়াও এইরকম মনে হইছে। মানে, যদি বাংলাদেশ আলাদা রাষ্ট্র না হইতো, উনাদের চিন্তা-ভাবনা এইরকম হইতে পারতো কিনা, আমি ডাউটফুল।

এমনকি আমার কথারেও আসলে এই বাকশালি আমলের পলিটিক্যাল রিয়ালিটি থিকা আলাদা না কইরা দেখাটাই ভালো।

#########

এইরকমের একটা ‘সায়েন্টিফিক-কুসংস্কার’ মনেহয় আছে যে, সত্য বা ট্রুথ খুব অবজেক্টিভ একটা জিনিস হইতে হবে! এই কারণে ‘নিরপেক্ষ’ জিনিসগুলারে অনেক ‘ভালো’ ‘সত্য’ ব্যাপার বইলা মনে হইতে থাকে আমাদের কাছে, অনেক সময়। কিন্তু মুশকিল হইলো, এই রকমের ‘অরিজিনালিটি’ বেশিরভাগ সময়ই এক ধরণের ভান বা ভঙ্গিমার জিনিসে পরিণত হয়, ওভার দ্য পিরিয়ড অফ টাইম।

আবার এইরকম অবজেক্টিভিটির বিপরীতে সাবজেক্টিভ বয়ানগুলারে অনেক বেশি সেক্সি এবং বিপ্লবী জিনিস মনে হইতে থাকে। অথচ এইখানে এক ধরণের ‘সাবজেক্টিভ অবজেক্টিভিটির’ জায়গারেই লোকেট করার ট্রাই করা দরকার, যেইটা দিয়া ট্রুথের একটা অপারেটিভ মডেল তৈরি করার কোশিশ করা যাইতে পারে…

মানে, একটা ‘অবজেক্টিভিটি’ থাকতে হবে – এইটা যে এক ধরণের সায়েন্টিফিক-কুসংস্কারের ঘটনাই অনেকসময়, এইটা খেয়াল করতে পারাটা দরকার।…

 

ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২২

ল্যাঙ্গুয়েজের ভিতরে সব জিনিস টের পাইবেন না, এমনকি অনেক সময় টোন দিয়াও না। একই ধরণের কাজ বা এক্ট যেমন, কমপ্যাশন বা মায়ার জিনিস হইতে পারে, আবার একই জিনিস তাচ্ছিল্যের বা কাউরে ছোট-করার ঘটনাও হইতে পারে।

আমার নিজের কাজ দিয়াই জিনিসটা টের পাই আমি। সুপারস্টোর বা ডিপার্টমেন্টাল স্টোরগুলাতে বাজার করার সময় কাউন্টারে বিল দেয়ার পরে যখন দেখি বাজারের ব্যাগে জিনিসগুলা ভরতে সময় নিতেছে তখন অনেক সময় মেজাজ খারাপ হয়, নিজেই ব্যাগে দিতে থাকি। আমার চেহারার দিকে তাকায়াই ছেলে-মেয়েগুলা বুঝতে পারে হয়তো, জিনিসটা পছন্দ হইতেছে না আমার। সরি-টরি বলে অরা। এইটা যে ঠিক না – সেইট্ বুঝতে পাইরা, না করার ট্রাই করি এখন। সময় আর কতট্টুকই বা লাগে! কিন্তু অনেকসময়, স্পেশালি অফ টাইমে যে বিল করে সে-ই প্যাক করে, প্যাকিং-পারসনদেরকে রেকের জিনিসপত্র গুছাইতে পাঠাইয়া দেয় হয়তো স্টোরের ম্যানেজার। আজকে এইরকমের একটা ঘটনা ঘটতেছিল। পিছনে আরেকজন কাস্টমার দাঁড়ায়া ছিল। তো, আমিও বিলিং-পারসনের লগে কয়েকটা জিনিস ব্যাগে রাখলাম। সে থ্যাংকিউ কইলো। মানে, একই কাজ আমি বিরক্ত না হয়া, হেল্প করার জন্য করতেছিলাম। দুইটার কোনটাতেই কোন কথা ছিল না, কিন্তু চেহারার এক্সপ্রেশন বা অন্য কিছু দিয়া ঠিকই কানেক্ট করা যাইতেছিল।

এইরকম একেকটা নিরবতারও মিনিং একেকটা, একটা না; এমনকি দুইটাও না। অনেকগুলাই। মানে, ভাষারও আসলে এইরকম ঘটনা, শব্দগুলাই মিনিং না, বরং স্ট্রাকচার”টাই অনেক সময় মিনিংটারে ফোর্স করে।…

#########

বাংলাদেশের কনটেক্সটে “বিদেশ থাকা” যে একটা যোগ্যতা, সেইটা ১৯৯০-এর দশকেই কম-বেশি শুরু হইছিল। এখন মিলিটারি, পুলিশ, সরকারি ও মাল্টি-ন্যাশনাল কোম্পানির চাইতে বড় না হইলেও, নানান ক্যাটাগরিতেই (শহর ও গ্রামে) ভালো-পজিশনে থাকার একটা ঘটনা।
এমনকি অপরিচিত কারো লগে আলাপে বসলেও দুই-চাইর কথার মধ্যেই শুনতে পাইবেন উনি বা উনার পরিচিত কেউ “আসছেন, নাকি যাচ্ছেন?” ধরণের আলাপ। আজকে আমার লগে এইরকম হইলো। এইগুলাতে সারপ্রাইজড হওয়ার মতো কিছু নাই আর এখন।

কিন্তু আগে একবার অবাক হইছিলাম, যখন অনলাইনে পরিচিত একজন জিগাইতেছিলেন, আপনি বাংলাদেশে থাকেন? মানে, কোন সেন্সে মনে হইছিল যে, আমি বাংলাদেশে থাকি না – এইটা ভাইবা। জিগাইতে ইচ্ছা করে নাই আর কি, ভাবতেও চাই নাই। আজকেও একজন জিগাইলেন, আমি বিদেশ থাকি কিনা? আমি আজকেও সারপ্রাইজড হইছি। তখন ভাবলাম একটু।

অনেক কারণই থাকতে পারে এইখানে। একটা কারণ মেবি আমি যে কোন আলাপে এক ধরণের রেসপেক্ট দাবি করি। যে ভাই, আমি আর আপনি, যেই পজিশনেই থাকি, আলাপের কমন গ্রাউন্ডে অবশ্যই রেসপেক্ট থাকতে হবে। মিনিমাম রেসপেক্ট রাখাটা জরুরি। কিন্তু অইটা ডিসট্যান্স হিসাবে একটা ‘বিদেশি’ ব্যাপার বইলা ভাবার একটা জায়গা থাকতে পারে।

কিন্তু এর বিপরীতে যেই জিনিসটারে ‘ক্লোজনেস’ বইলা দাবি করা হয় ‘বাঙালি-কালচারে’, সেইটা বেশিরভাগ সময়ই একটা জুলুমের তরিকা হিসাবে হাজির হয়। অবশ্যই সবসময় না। কিন্তু এখনকার ইকনোমিক্যাল ও পলিটিক্যাল কনটেক্সটে এই ক্লোজনেস সন্দেহ করার মতো একটা ঘটনাই। যেইটা বেইজ হিসাবে বাজে না অবশ্যই, কিন্তু অপারেশনের তরিকা হইতে পারে না; বরং কোন ডমিনেন্সরে মাস্ট কইরা তোলে।… এইটা সোশ্যালি বাজেও হইতেছে, বিশ্বাসের জায়গারে কঠিন কইরা তুলতেছে।…

তো, এইসব জায়গা থিকা, রেসপেক্ট দাবি করা এবং রেসপেক্ট দিতে চাওয়া ব্যাপারটারে ‘বিদেশি’ মনোভাব হিসাবে দেখার ব্যাপার থাকতে পারে। মানে, বাংলাদেশের মানুশ হিসাবে আপনার তো কোন ডিগনিটি থাকার কথা না!

কিন্তু আগে যেই ফর্মে ডিগনিটির জায়গাটা চালু ছিল সমাজে এখন যেহেতু সেইটা নাই, বা প্রাকটিস করাটা টাফ হইতেছে, অন্যভাবে জিনিসগুলারে ট্রাই করতে হবে তো আমাদেরকে!

আমি খেয়াল কইরা দেখছি, বেশিরভাগ মানুশের কাছেই আমারে ‘বিদেশি’ মনেহয় না। সাধারণ, নরমাল মানুশ-ই আমরা। জাস্ট ‘নরমাল’ আলাপগুলা আমরা বেশিরভাগ সময় করতে পারি না। যখন কেউ করে, তখন মেবি অবাক হওয়ার বা জিগানোর দরকার পড়ে, বিদেশে থাকেন নাকি আপনি? 🙂

অথচ এইরকম ডিগনিটি দিয়া বা ডিগনিটি নিয়া কথা বলার জন্য বা আলাপ করার জন্য আমাদের ‘বিদেশি’ হওয়ার বা ‘বিদেশি’ খোঁজার দরকার তো নাই!

 

ফেব্রুয়ারি ৭, ২০২২

– আর্টিস্ট আর আর্ট –

এই জিনিসটা ম্যারাডোনা মরার পরে নজরে আসছিল, অনেক ক্লিয়ারলি। যে, উনি তো ক্যামেরা’র সামনে উনার গার্লফ্রেন্ডের গায়ে হাত তুলছেন! উনারে তো গ্রেট বইলা মাইনা নিবো না আমরা, উনি যত বড় ফুটবল-প্লেয়ারই হন! একজন ফুটবলার (নারী) এই প্রটেস্ট করছিলেন, ফুটবল মাঠে একটা। মানে, একজন আর্টিস্টরে তার আর্টের লগে কতোটা যুদা বইলা ভাববো আমরা? লতা মুঙ্কেশকর মারা যাওয়ার পরেও এই আলাপ’টা একটু হইলেও আসছে।

এই কোশ্চেনটা, আমার ধারণা, দিন দিন আরো সামনে আসতেছে, আসবে।

খেলা-ধুলা, গান, সাইন্টিফিক-ফিল্ড, সব জায়গাতেই রিলিভেন্ট কোশ্চেন এইটা যে, একজন মানুশের পারসোনাল জায়গাগুলারে তার পাবলিক কাজকামের চাইতে কতোটা আলাদা ভাববো আমরা?

তো, সাহিত্যে বা লিটারেচারে জিনিসটারে আলাদা কইরা দেখাটা আরো টাফ। এইরকম জায়গাতে আমারেও পড়তে হইছে। ভি.এস. নাইপলরে আমি পড়তেই পারি নাই উনার পলিটিক্যাল পজিশনের কারণে। আবার নীরদ শ্রী চৌধুরী’রে ঠিকই পড়তে পারছি; মানে, উনার পলিটিক্যাল পজিশনরে না-নিয়া পড়তে পারছি। অনেকেই পারা’র কথা না। এইটা ঠিক ডিফরেন্ট পলিটিক্যাল পজিশনের ঘটনাই না, একটা মোরালিটিরও মামলা। আর্টের জায়গাতে এই মোরালিটির জায়গাটারে আমরা তো পজ বা স্থগিত কইরা রাখতে পারি না!

কিন্তু এইখানে আমার একটা পজিশন আছে, রাইটার বা আর্টিস্টরে আমি ঠিক দায়মুক্তি দিতে চাই না, কিন্তু মনে করি যে, এইটা খালি একজন আর্টিস্টের চয়েসের ঘটনা না, সবসময়। যে কোন একজন ইন্ডিভিজ্যুয়াল, সমাজের মানুশ হিসাবে, অই সময়ের এবং জায়গার মোরালিটির লগেই কম-বেশি এটাচড থাকেন। অইটার খুববেশি যাইতে পারার কথা না। মানে, আমি বলতেছি, একজন রাইটার বা আর্টিস্টরে একজন ‘এডভান্সড’ মানুশ হিসাবে ‘স্পিরিচুয়াল লিডার’ ভাবাটা ঠিক হবে না, পুরাপুরি। কিন্তু যে কোন সেলিব্রেটি’র কাছেই এই এক্সপেক্টশন আমরা রাখি। যে, উনি যেহেতু ভালো গান গাইতে পারেন, উনার পলিটিক্যাল আন্ডারস্ট্যান্ডিং কি একটু বেটার থাকবে না?

কিন্তু দেখেন, উল্টাটা কিন্তু ঘটে না, কেউ একজন ভালো-মানুশ বইলা কিন্তু আমরা জিগাই না, ভাই, আপনি কি কবিতা লেখেন? মানে, যেহেতু আপনি ভালো-মানুশ, আপনার তো ভালো কবিতা লেখার কথা! 🙂 এইরকম এক্সপেক্টশন আসলেই আমাদের কখনো থাকে না। কিন্তু যিনি ভালো-কবিতা লেখেন, আমরা এক্সপেক্ট করি যে, উনি মানুশ হিসাবেও বেটার হবেন, ভালো-মন্দের বুঝ অন্যদের চাইতে বেটার থাকবে উনার। (থাকেও অনেক সময়।) কারণ উনার লাইফ দিয়া আমরা উনারে চিনি না, চিনি তার কাজকাম দিয়া। উনার কাজকাম যেহেতু ভালো, উনিও মানুশ হিসাবে বেটার হওয়ার কথা। হয়ও সেইটা, একজন ভালো-রাইটার খালি অন্যরে না, নিজের ভালো-লেখালেখি দিয়া নিজেরেও একজন ভালো-মানুশ হওয়ার লাইগা ইন্সপায়ার করতে পারেন। বেইজটা হইতেছে আর্ট, আর্টিস্ট না এতোটা।…

তো, আগের আলাপ’টাতে ফিরা আসি। যে কোন আর্টিস্ট আসলে সোশ্যাল একটা আইডেন্টিটি এবং সমাজের ভালো-মন্দের যেই স্পিরিচুয়াল, মোরাল এবং পলিটিক্যাল পজিশন, তার ভিতরেই অপারেট করেন। অনেক সময় হয়তো তার বাইরে যাইতে পারেন, সেইটা অবশ্যই উনার গ্রেটনেসের জায়গা। কিন্তু নতুন মোরালিটি এচিভ করা আর্টের লগে (ইন অ্যা ওয়ে কানেক্টেড তো অবশ্যই, কিন্ত) ডাইরেক্টলি রিলেটেড কোন ঘটনা না। (একটু ‘রহস্য’ কইরা কইতে গেলে, আর্টে ভুল করতে পারাটা খুবই জরুরি একটা জিনিস। সত্যিকারের ভুল খুব রেয়ার ঘটনা।…) যার ফলে, বেশিরভাগ আর্টিস্ট আসলে এই জায়গাতে কন্ট্রিবিউট করতেই রাজি না, যারা করেন, উনারাও ভুল-ভাল কাজকাম করেন।
মানে, আমি বলবো, একজন আর্টিস্টরে আপনারা সোসাইটির মোরাল-কম্পাস বানাইয়েন না। এইটা তার কাজও না। বরং সমাজের যেই এগজিসটিং মোরালিটি সেইটার অনেক ট্রু রিফ্লেকশন হইতেছে, একজন আর্টিস্টের লাইফ।

একইসাথে এই এক্সপেক্টশন বাদ দেয়ার কথা আমি বলতেছি না, একজন আর্টিস্টের কাছে হায়ার মোরাল গ্রাউন্ড দাবি করাটা। কিন্তু এই দাবি আসলে আমাদের সমাজের কাছে, ভায়া আর্টিস্ট। আমি এইভাবে দেখতে চাই। মানে, ধরেন, ব্যাপারটা একটু অল্টার করা এইভাবে যে, মাসুদ বলতেছে, “তুমি কি ভালো হবা না, ওবায়দুল কাদের?” 🙂

 

ফেব্রুয়ারি ৯, ২০২২

একবার একটা খোঁজ-খবর নিয়া দেখছিলাম, ইন্ডিয়ার ২৮টা স্টেইট ও ৮টা ইউনিয়ন-টেরিটোরি’র মধ্যে,
১১ টাতে আছে বিজেপির সরকার (৩১%)
৩ টাতে আছে কংগ্রেসের সরকার (৮%)
মানে, ৩৯% অঞ্চলের ক্ষমতায় আছে ন্যাশনাল-লেভেলের দলগুলা। বিজেপিই আসলে একমাত্র ন্যাশনাল লেভেলের পলিটিক্যাল দল ইন্ডিয়াতে, আগে যেইটা ছিল কংগ্রেস। কিন্তু স্টেইট লেভেল উনারা ৫০% কন্ট্রোলেও নাই।
৭ টাতে আছে রিজওনাল দলগুলার লগে বিজেপি কোয়ালিশন (১৯%)
৩ টাতে আছে রিজওনাল দলগুলার লগে কংগ্রেসের কোয়ালিশন (৮%)
৬ টাতে আছে রিজওনাল দলগুলার* গর্ভমেন্ট (১৭%)
মানে, ৪৪% অঞ্চলে রিজওনাল দলগুলারই ক্ষমতা। বাদবাকি, জম্মু-কাশ্মীরে তো রাষ্ট্রপতির শাসন আর ৫টা ছোট ছোট জায়গাতে সরকার নাই কোন।

এখন এইরকম স্ট্যাটিসটিক দিয়া সরাসরি কোন ডিসিশান টানা যাবে না অবশ্যই, সব স্টেইটের সমান পাওয়ার না, জিওগ্রাফিক্যাল ও ইকনোমিক্যাল অবস্থাও একইরকম না। কিন্তু একটা জিনিস মেবি খেয়াল করা যাইতে পারে যে, এইখানে হিন্দু-ভারত ভার্সেস সেক্যুলার-ইন্ডিয়ার লড়াই যতোটা না রিলিভেন্ট তার চাইতে জরুরি লড়াই হইতেছে সেন্টার ভার্সেস রিজওনাল।

বিজেপি যেই হিন্দু-ভারতের কথা কয় সেইখানে দক্ষিণের ব্রাহ্মণদের তুলনায় বাংলার হিন্দুদের জাত-পাত নিচা-ই হওয়ার কথা, একই না; যেই কারণে বাঙালি হিন্দুরা চাইলেও হিন্দু-ভারতের পার্ট হইতে পারে না, তৃণমূল বেটার অপশন, সবসময়। মানে, আমি বলতে চাইতেছি, বিজেপি একটা হিন্দুত্ব দিয়া আসলে সেন্ট্রাল-ইন্ডিয়ার ধারণাটারে ধইরা রাখতে চাইতেছে, যেইটা কংগ্রেস সেক্যুলারিজম দিয়া ধইরা রাখতে পারতেছিল না।
ইন্ডিয়ার পলিটিক্যাল ক্রাইসিস এই কারণে ঠিক মুসলমান-হিন্দুর ক্রাইসিস না (মানে, এইটা তো আছেই), বরং সেন্ট্রাল ভার্সেস রিজিওনাল স্ট্রাকচারের। মানে, এই জায়গাটা থিকা ইস্যুগুলারে খেয়াল করা দরকার।


ওড়িশা, কেরালার কমুনিস্ট পার্টি আসলে আলাদা রিজওনাল দলই।

 

ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২২

এইরকমের একটা ধারণা বা বুঝ আছে যে, কোনকিছুর বিরোধিতা করতে হইলে তার ঘৃণা করতে পারতে হবে বা চেত দেখাইতে হবে। যার হেইট্রেট বা ঘৃণা যত বেশি, যার চেত (রাগ) যত বেশি উনিই হইতেছেন সবচে বড় সমালোচক! যেই কারণে গালি-গালাজ করা, ‘হিউমার করা’, ডিসরেসপেক্ট করা, মকারি করা – এইগুলার নাম হইতেছে আমাদের দেশে ‘সমালোচনা করা’! 🙂 কিন্তু এইগুলা হইতেছে আসলে জম্বি হয়া উঠা, একটা মব-জাস্টিসের পালে বাতাস দেয়া।…

এখন যা কিছুর এগেনেস্টে আপনি ফাইট করেন, যার মোকাবেলা আপনি করতে চান তারে খুব মোহাব্বত নিয়া ডিল করতে হবে – ব্যাপারটা এইরকম না। এইরকম সিউডো-সুফি চিন্তাও আছে। কিন্তু এইগুলা হইতেছে মোস্টলি ফিলিংসের ঘটনা। যখন আপনি আর চিন্তা করতে রাজি না! (বা চিন্তা-ভাবনা শেষ করে ফেলছেন একভাবে। এইটা রেয়ারই একরকম।…)

তো, ফিলিংস দিয়া বিরোধিতা করা যাবে-না – তা না, কিন্তু এইগুলা হইতেছে এটাচমেন্টের ঘটনা। এর এগেনেস্টে চিন্তা-করা মানে ‘অবজেক্টিভ হওয়া’ না, বরং ফিলিংসের জায়গাটারে কোর বা মূল-ঘটনা না কইরা তোলা।

[ আমার পারসোনাল অবজারভেশন এইটা, ভুলও হইতে পারে, আমি দেখছি যে, যারা হেইট্রেটের জালে আটকা-পড়া পোকা তাদেরকে কন্টিনিউয়াসলি ঘৃণা কইরাই যাইতে হয়, তার চারপাশ’রে, মা-বাপ-ভাই-বইন’রে, কলিগ-ফ্রেন্ড-এডমায়ারদের, সবশেষে দেশের সরকার এবং গ্লোবাল কপিটালিজমরে 🙂 তা নাইলে কোনকিছুরে ‘ভালোবাসা’ শুরু করা লাগে – রাস্তার ধারের ছোট ফুল, ‘রিকশঅলারাও মানুশ!’, ড্যামেইজড-পিপলরাও ভালোবাসতে পারে, এই সেই… মানে, একটা ফিলিংসের দুনিয়াতে ট্রাপড হয়া থাকা। এখন, এইরকম ফিলিংগুলা আছে, থাকবেই; এইগুলারে চিন্তার জায়গাতে আলাদা করতে না পারলে সেইটা ভুল-ধারণাগুলারেই তৈরি করতে থাকে, বেশিরভাগ সময়। মানে, চিন্তা-করা জিনিসটা আপনার ফিলিংস থিকা এস্কেইপ করা না, কিন্তু একটা জিনিসরে ঠিকঠাক মতো দেখতে হইলে একটা ডিসট্যান্স জরুরি, অইটারে অবজেক্টিভিটি’তে রিডিউস করলেও ঝামেলাই হবে একটা।..]

#########

– বাংলাদেশি সিনেমার গান নিয়া লেখা / বই –

বাংলাদেশে সিনেমা নিয়া যত বই আছে, ছাপানো হইছে এর অর্ধেকের বেশি বই হইতেছে কলোনিয়াল-বাংলা (মানে, কলকাতার) সিনেমা নিয়া লেখা – সতজিৎ রায়, ঋতিক ঘটক, মৃণাল সেন, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, উত্তম-সুচিত্রা, এইরকম। বাকি অর্ধেকের অর্ধেক হইতেছে, আর্ট-ফিল্ম নিয়া লেখা বই, অইখানে জহির রায়হান আর আলমগীর কবির, এর বাইরে আর কোন সিনেমা নাই, বাংলাদেশে! বাংলাদেশি সিনেমা নিয়া লেখছেন এক অনুপম হায়াৎ। জাকির হোসেন রাজু, ফাহমিদুল হক’রা মোস্টলি আর্ট-ফিল্মের বরাত দিয়া কিছু একাডেমিক জার্গনই তৈরি করছেন। উনারা ‘বাংলাদেশি সিনেমা’ নিয়াও লেখছেন, এখনো বলাবলি করেন, জাত-ব্রাহ্মণরা যেইরকম নমশুদ্র এবং মুসলমানদের নিয়া কথা বলে, অইরকম একটা ঢং’য়ে।

কিন্তু সবগুলা বইয়ে একটা জিনিস কমন। সিনেমার গান নিয়া কোন আলাপ নাই! 🙂

২০২০-২০২১ সালে সিনেমার বইটা লেখতে গিয়া যখন একটা চ্যাপ্টার লেখতেছিলাম তখন বলছিলাম যে, গান জিনিসটারে মনে করা হয়, সিনেমার বাইরের জিনিস। যেহেতু ইউরোপ-আম্রিকার সিনেমাতে গান নাই, ‘ভালো-সিনেমা’তে কেন গান থাকবে! সিনেমাতে বেশি গান থাকা মানে হইতেছে এইটা একটা ‘যাত্রা-সিনেমা’! মানে, সিনেমা না আসলে এতোটা!

মোস্টলি দেখাদেখির নজর এইটাই। যার ফলে বাংলাদেশের সিনেমা নিয়া লেখা বইয়ে সিনেমার গানের কোন আলাপ পাইবেন না। ‘দশর্কদের মনোরঞ্জনের জন্য’ সিনেমাতে রাখা হয়। ইভেন, সিনেমার গানের লগে যারা রিলেটেড, উনারাও এইভাবেই দেখেন জিনিসটারে যে, এইটা হইতেছে ‘আধুনিক গান’। মানে, সিনেমার গানরে আলাদা একটা জনরা হিসাবে দেখতে রাজি নাই, যারা গান লেখছেন এবং এইগুলা আলাপ-টালাপ করছেন উনারাও। আর এই কারণেই বাংলাদেশি সিনেমার আলাপে সিনেমার গান নিয়া কোন কথা-বার্তা নাই, অইটা বাইরের জিনিস।
অথচ সিনেমাতে গান জিনিসটা এইরকম না। গান হইতেছে ডায়ালগের, ইমোশনের একস্ট্রিম অবস্থা। যখন নরমালি কথা কইয়া আপনি বুঝাইতে পারতেছেন না তখন গান আসতেছে কাহিনিতে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকও পার্ট অফ দ্য ভিজ্যুয়াল। আলাদা কোন ঘটনা তো না! রূপবানে, বেদের মেয়ে জোসনা’তে এইরকম সিন পাইবেন। কথা কইতে কইতে গান গাইয়া উঠতেছে নায়ক-নায়িকারা। মানে, গান তো আছে আমাদের কাহিনিতে, লাইফে; বাইরের জিনিস তো না। কিন্তু এই আন্ডারস্ট্যান্ডিং আমরা এপ্লাই করতে পারি নাই এখনো, বাংলাদেশের সিনেমার গানগুলারে দেখার সময়।

২.
তো, বাইরের জিনিস হিসাবে ৫/৬টা বই ছাপা হইছে। মেইনলি দুইটা বই আছে আসলাম আহসানের। একটা বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভের ফেলোশিপ নিয়া কাজটা করছিলেন (২০১৬)। আর সেকেন্ড’টা (২০১৭), অইটারই এক্সটেশন, ৫০০’শ বেশি গানের লিরিকস দিয়া। দুইটা বইয়ের ইন্ট্রো মোটামুটি একই। অল্প একটু অদল-বদল আছে। ২০১৬ সালেরটাতে উনি গীতিকার, সুরকার এবং গায়ক-গায়িকাদের ছোট কইরা কিছু পরিচিতি দিছেন। আর ২০১৭ সালেরটাতে গানের লিরিকস দিছেন। যেই জায়গা থিকা দেখছেন, সেইটার তেমন কোন চেইঞ্জ নাই।
তো, কোন জায়গা থিকা উনি এই সিলেকশনগুলা করছেন? “জনপ্রিয় গানের পাশাপাশি কাব্যধর্মী, শিল্পোত্তীর্ণ ও কালোত্তীর্ণ” (পেইজ ১৫, ২০১৭) এবং “রুচিশীল গানের প্রতিনিধিত্ব করে” (পেইজ ১৯, ২০১৭) এইরকম গানগুলারে উনি নিছেন। এখন এই রুচিশীলতার কোন ব্যাখ্যা নাই, মনে হইতে পারে ‘পারসোনাল চয়েস’; কিন্তু আসলে তো তা না; এইগুলা হইতেছে কলোনিয়াল-বাংলার রুচির বাছাই। যা কিছু ‘বাংলাদেশি’ ঢংয়ের গান, অইগুলাই অ-রুচিকর এবং বাতিল।

এইটা খালি আসলাম আহসানের দেখার নজর হইলে কথা বলার কোন দরকার ছিল না। এইটা হইতেছে কমন পারসপেক্টিভ বাংলাদেশি সিনেমা, বাংলাদেশি কালচারের জায়গাগুলারে দেখার। বাংলাদেশের সিনেমা যে হয় না, এইটা যেন সিনেমারই সমস্যা, সোশিও-পলিটিক্যাল, ইন্টেলেকচুয়াল আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়ের বাইরের ঘটনা! একটা ডিসকানেক্টেড ইস্যু হিসাবে দেখা হয় এবং যেই জায়গাগুলা মিলে না, অইগুলা যেন ঘটেই নাই – এইভাবে বলা হয়। উইকিপিডিয়া’তে দেখবেন “অশ্লীল সিনেমা”গুলার কোন এন্ট্রি নাই। এইটা ইতিহাস-বিকৃতি বা গোপন করার ঘটনা না, একটা ক্রাইমের ঘটনা আসলে; পছন্দ হয় নাই বইলা ইনফরমেশনগুলারেই বাদ দিয়া দেয়াটা।

আসলাম আহসানের কাজগুলা বাংলাদেশি সিনেমারে দেখার যেই নজর সেইটারই একটা কন্টিনিউশন। অল্প কিছু ইনফরমেশন পাইবেন, অথেনটিক ডেটার চেষ্টাও আছে উনার, কিন্তু ন্যারেটিভটা একই।

৩.
বাকি যেই লেখা এবং বইগুলা আছে সেইখানে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু ইনফরমেশনই পাইবেন। এনলাইসিস হিসাবে, সরকারি টাকা খাওয়াটারে জায়েজ জন্য কিছু একাডেমিক ল্যাদা ছাড়া আর তেমন কিছুই নাই।

“চলচ্চিত্র সংগীত পরিচালকগণ” নামে একটা লেখায় ১০৫ জন সুরকারের মধ্যে ৯৮ জনের একটা লিস্ট আছে ফিল্ম আর্কাইভের। এইরকমের লিস্টগুলা বেটার। ফিল্ম আর্কাইভরে একটা কাজের কথাও বলতে পারি আমি, আপনারা একটা ইয়ার-বুক বানাইতে পারেন, সিনেমার: সব ইনফরমেশনগুলা (এনালাইসিস না) থাকলো জাস্ট, সিনেমার, বছর অনুযায়ী। এটলিস্ট যারা কাজ করতে চাইবেন, তাদের জন্য দরকারি জিনিস হবে সেইটা।


(১৯৮৪) নির্বাচিত গান – মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান
(২০১০) চলচ্চিত্রের গানে ডক্টর মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান – তপন বাগচী
(২০১৩) সোনালি যুগের সিনেমার স্মরণীয় গান – অনুপম হায়াৎ
(জুন, ২০১৬) বাংলাদেশের সিনেমার স্মৃতি জাগানিয়া গান – আসলাম আহসান
(জুন, ২০১৭) বিবর্তনের ধারায় বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের গান: ১৯৫৬ – ২০১৫ – রুখসানা করিম (কানন)
(ডিসেম্বর, ২০১৭) বাংলাদেশের সিনেমার স্মরণীয় গান ১৯৫৬ – ২০১৬ – আসলাম আহসান
(ফেব্রুয়ারি, ২০২১) অল্প কথার গল্প গান – গাজী মাজহারুল আনোয়ার
(জুন, ২০২১) বাংলাদেশের সিনেমার ইতিহাস সংকলন (প্রথম খন্ড):
প্রসঙ্গ: চলচ্চিত্রে আবহ সংগীত – সৈয়দ সাবাব আলী আরজু
বাংলাদেশের চলচ্চিত্র-সংগীত – শৈবাল চৌধুরী
(জুন, ২০২১) বাংলাদেশের সিনেমার ইতিহাস সংকলন (দ্বিতীয় খন্ড):
চলচ্চিত্রে সংগীত ভাবনা – শ্যামল দত্ত
বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে লোকসংগীত – তিলোত্তমা সেন
বাংলা গানের বিকাশ ও জনপ্রিয়তায় চলচ্চিত্রে অবদান (১৯৫৬ – ১৯৭০) – স্মরণ প্রত্যয়
বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে গান – শাহাদাৎ রুমন
চলচ্চিত্র সংগীত পরিচালকগণ (১৯৫৬ – ২০১৯)

 

Leave a Reply