বাংলাভাষা লেখার এখনকার যে তরিকা সেইটা মোস্টলি প্রমথ চৌধুরী’র (১৮৬৮ – ১৯৪৬) আর্গুমেন্টগুলির উপর বেইস কইরাই চলতেছে। ভাষা নিয়া চাইরটা লেখা আছে উনার- কথার কথা (১৩০৯), বঙ্গভাষা বনাম বাবু-বাংলা ওরফে সাধুভাষা (১৩১৯), সাধুভাষা বনাম চলিত ভাষা (১৩১৯) আর আমাদের ভাষাসংকট (১৩২৯)। উনার মেইন আর্গুমেন্টগুলি বেশ স্ট্রং, ওই সময়ের কথা চিন্তা করলে তো রেভিউলেশনারিই।
তখন বাংলাভাষা লেখা হইতো মোস্টলি সাধুরীতি’তে। মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালংকার’রা সংস্কৃত কলেজে যেহেতু অনুবাদ করতে করতে বাংলাভাষা বানাইছিলেন ওইটা ডিকশনারি বেইজড একটা জিনিস ছিলো। লেখার ভাষা ছিলো মুখের ভাষা থিকা ডিফরেন্ট একটা জিনিস, যত ডিফরেন্ট তত বেশি লিখিত, মানে সাহিত্য – বিচারের ধরণটা এইরকমই ছিল (এখনো আছে মনেহয় কিছুটা; দাঁত-ভাঙা কবিতা দেখা তো যায়)। প্রমথ চৌধুরীরা (লগে আরো কয়েকজন আছিলো) কইলেন এইসব বাদ দিতে হবে, মানুষ তো আগে কথা কয়, তারপরে লিখে; আর মানুষ লেখে মানুষরেই বোঝানো লাইগা, সো যেমনে মানুষ বাংলাভাষাতে কথা কয় লিখিত বাংলাভাষা সেইটার কাছাকাছি হওয়া লাগবে, ডিফরেন্স কমানো লাগবে।
তো, যখনই মুখের ভাষা’র কথা বলতেছেন তখন নরমালি প্রশ্ন আসে, কার মুখের ভাষা? কোন জায়গার মুখের ভাষা? এর উত্তরও উনি দিছেন; বলছেন, যেইখানকার উচ্চারণ স্পষ্ট, যেমন দক্ষিণবঙ্গের মানুষের উচ্চারণ, সেইটারে নিতে হবে। আর বেশ কয়েকবারই বলছেন যে, ‘কলিকাতার ভদ্রসমাজের ভাষা’রেই নিতে হবে। কারণ কলকাতা হইতেছে সেন্টার (বঙ্গভঙ্গ হয়া গেছিলো ততদিনে, কিন্তু উনি যেহেতু বঙ্গভঙ্গ মানেন নাই, ঢাকারে সেন্টার ভাবতে পারেন নাই আর); ‘বাংলাদেশের সকল প্রদেশের অসংখ্য শিক্ষিত ভদ্রলোক’রা কলকাতায় থাকেন।
আমার সমস্যাটা এই ‘ভদ্রলোক’দের নিয়াই। তার মানে এই না যে, প্রমথ চৌধুরী খালি ভদ্রলোকদের শব্দই নিতে কইছেন; উনি ‘ইতর শব্দ’ বাদে সমাজে অন্য সব ক্লাসের মধ্যে চালু থাকা শব্দও লেখায় নিতে চাইছেন। কিন্তু যখনই আপনি ‘মুখের ভাষা’ নিতেছেন একটা ডমিনেন্ট ক্লাসের ভাষারে না নিয়া আপনার উপায় নাই। না চাইলেও মনেহয় এইটা অটোমেটিক্যালি চইলা আসার কথা, কারণ অ্যাজ অ্যা ভদ্রলোক আমি চাইলে সিলঅটি ভাষা লিখতে পারবো না (লন্ডনীরা বলেন, কিন্তু লেখেন না)। ‘ভদ্রলোক’ ক্লাসটা সাম সর্ট অফ সুপিরিয়রিটি ছাড়া একজিস্ট করতে পারার কথা না। আর সেই সুপিরিয়রিটিরে সেন্টারে রাইখা যখন ভাষার মধ্যে অন্য ক্লাসের শব্দগুলিরে ইনসার্ট করতে থাকবেন দেখবেন খুবই ফানি লাগতেছে ব্যাপারটা। ‘আপনি’ না কইয়া ‘আপনে’ কইলেই এনাফ অপমান/ফান করা যাইতেছে, জাস্ট পেরিফেরির শব্দগুলা ইউজ কইরাই। (ইভেন আপনি ফান না করতে চাইলেও এরা ফানি, বেশিরভাগ সময়।)
এই কারণে প্রমথ চৌধুরী’র ‘মুখের ভাষা’ লিখিত বাংলাভাষারে সাধুভাষা থিকা যদ্দূর ফ্রিডম দিতে পারার কথা, দিছে; এখন বরং একটা অবস্টেকল হিসাবেই সামনে আসতেছে। নিজেরে ওই ‘সেন্টার’ পয়েন্টে আর আপগ্রেড করতে পারতেছে না। এই ‘মুখের ভাষা’ একদিক দিয়া প্রমিত ভাষার ভিতর দিয়া সুইসাইড করতেছে, আবার ভদ্রলোকের ভাষার ভিতর ‘ইতর শব্দ’ ঢুকাইয়া বেলুনটারে বড় করতে করতে ফাটাইয়া ফেলতেছে, এমনকি নানান ধরণের আঞ্চলিকতার পট্টি লাগাইয়াও এই ফর্মটার আর সারভাইব করতে পারার কথা না।
লেখার ভাষারে সবসময় একটা ওয়াইডার অডিয়েন্সের সীমানার মধ্যে যাইতে পারতে হবে। ম্যাক্সিমামটারে না ধইরা মিনিমামটরে ধরতে হবে। যাঁরা লিখার ভিতর দিয়া কথা বলেন না, তাঁদেরকেও (চন্দ্রবিন্দু কনশাসলিই দিছি) আপনার লেখার কাস্টমার (গ্রাহক’রে বাদ দেন) বানাইতে হইলে ‘মহিলা’ বইলা রেসপেক্ট না দিয়া, ‘নারী’ বইলা দূরের (কাব্যিক) জিনিস না বানায়া ‘মাইয়া’ লিখতে পারতে হবে। কিন্তু এই বলাটারেই ফান বা অপমান হিসাবে ট্রিট করে আমাদের এই ‘মুখের ভাষা’। আমার ধারণা, লেখক-সমাজ এই ‘মুখের ভাষা’ এখনো ছাড়তে পারতেছেন না খালি ‘ভদ্রলোক’ থাকার লোভে। বাঁইচা থাকলে মানুষের লোভ কিছু থাকেই; ইন দ্যাট কেইস, নতুন নতুন ‘লোভ’ করতে পারাটা মেবি ভালো।
এইটা ছাড়াও প্রমথ চৌধুরী’র আরোকিছু মাইনর আর্গুমেন্ট আছে বাংলাভাষার হিন্দুত্ব নিয়া, ওইগুলি এমনিতেই ভুলভাল জিনিস, ইগনোর করলাম, এইখানে।
Leave a Reply