মন্টু আর আব্বাস দুই বইন। মন্টু কবিতা লেখে আর আব্বাস ফিকশন। কিন্তু দুইজনই শাহজাদী নামে এক বেটার পেরমে পড়লো। শাহজাদী আসছে আরব দেশের ১০০১টা কাহিনি থিকা। মন্টু আর আব্বাস হইতেছে ইউরোপিয়ান। যার ফলে অরা মিলতে পারলো না। কিন্তু দুইজনেই ‘শাহজাদীর পেরেম’ নামে কবিতা ও ফিকশন লেখলো। লেইখা বুঝলো যে কাজটা ঠিক হয় নাই। কারণ শাহজাদী তো একটা ফিকশনাল ও ফ্যান্টাসি কারেক্টার। রক্ত-মাংসের মানুশ তো না!
শাহজাদী তখন এই বেদনা থিকা রিয়েল হয়া উঠতে শুরু করলো। মন্টু ও আব্বাসের ইমাজিনেশন হয়া অনেকগুলা বেটা-মানুশের মনে অনেকগুলা বেটা-মানুশ হয়া সে ছড়ায়া পড়তে লাগলো। এইরকম একজন ছিল মেহজাবিন। মেহজাবিনের ছিল সিক্স-প্যাক। চওড়া কাঁধ। অনেক সেক্স-আপিল। কিন্তু মন ছিল ছোট। এক মনে একজনের বেশি কাউরে একলগে সে জায়গা দিতে পারতো না। মন্টু থাইকা গেলো মেহজাবিনের লগে। আব্বাসের লাইগাও তার খারাপ লাগলো একটু। এখনো শে তাঁর শাহজাদীরে খুঁইজা পাইলো না!
কিন্তু আব্বাস কইলো, দেখো, ফিকশনের ভিতরে কিন্তু অনেক ফ্রিডম। কবিতা একই ফ্যান্টাসির ঘটনা সবসময়, খুব বেশি হইলে দুই-চাইরটা ভ্যারিয়েশন; তো, আমার লাইগা তুমি চিন্তা কইরো না অইরকম। ভাবো, আমি একটা পাখির পালক, বাতাসে উড়তেছি যেন…
তো, বাতাসে উড়তে উড়তে একটা আমগাছের ডালে আটকাইলো শে। আমগাছরে জিগাইলো শে, ও আমগাছ, তোমার জাম নাই ক্যান! আমগাছ কথা কইতে শিখে নাই তখন। আব্বাস কইলো ঠিকাছে, তোমার তো এখনো মুকুল আছে, এই মুকুলগুলারে জাম হইতে আমি শিখাইবাম!
কিন্তু হায়! আমগাছে তো আম-ই হয়! আর আমগুলাও বড় হইতে থাকে দিন। ইয়া বিশাল বিশাল। আম যতো বড় হয় আব্বাসের মন তত খারাপ হয়। বাতাস আইসা তারে দোলায়। শে কয়, দূর! আমগাছে জাম হয় নাকি কোনদিন! বইলা শে তালগাছের কাছে যায়। বেলগাছের কাছে যায়। নিমগাছের কাছে যায়। দেখে যে, গাছগুলা তো বোরিং! কবিদের মতন।
মন্টু দেখে, আরে, এইটা তো আরাম! আর শরীরের ভালো-লাগা, ভালোবাসা কয়দিন থাকে আর! মেহজাবিন’রে শে কয়, যাও! এইবার তুমি তোমার নিজের দেশে যাও! মেহজাবিন যে কিনা, একটা টিভি-নাটকের মুখোশ ধার কইরা চলতেছিল এতোদিন, একটা ফুলদানির মতন ভাইঙ্গা পড়ে তখন। মন্টুরও খারাপ লাগে, আমার ফুলগুলা আমি কুতায় রাখবো এখন! বইলা একটু ফান আর হিউমার করে। কিন্তু তার ক্রুয়েলিটি শে লুকাইতে পারে না।
কিন্তু জীবনে তো বাঁইচা থাকতে হয় আমাদেরকে। আর জীবনের আছে অনেকগুলা জীবন।
পাখির পালক থাকতে থাকতে আর ভালো লাগে না আব্বাসের। কয়, আমি ইঞ্জিনিয়ার হবো! অনেক সুন্দর সুন্দর বিল্ডিং বানাবো আমি! আব্বাসের তখন আলিয়ার লগে পরিচয় হয়। আলিয়া ছোটখাট, কিন্তু কিউট। আলিয়ার লগে থাকতে থাকতে আব্বাসের পেটারসন সিনেমার কথা মনেহয়, জীবন এইরকম ডেইলি-লাইফের মতন! কোজি, সাংসারিক।
এগেইন, জীবনের তো অনেকগুলা মিনিং।
ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে তো এডভেঞ্চার কম। আব্বাস হয়া উঠে ওয়ার-জার্নালিস্ট, পিস-এক্টিভিস্ট। আলিয়ার কান্দা তারে থামাইতে পারে না, কয়, “পৃথিবী আমারে চায়, রেখো না বেঁধে আমায়…” আলিয়া তারপরেও কান্দে। পুওর বেটা-মানুশ!
সব কান্দাই একটা সময়ে গিয়া থাইমা যায়। আরেকটা কান্দার ভিতরে গিয়া লুকায়া পড়ে। হারায়া যায়। থাকে না আর। আলিয়া মেন্টালি স্ট্রং-পুুরুষ। সে তার জীবনের আরেকটা মিনিংয়ের ভিতরে ডুইবা যায়। কয়, সবাই তো ফ্যান্টাসি-কারেক্টার শাহজাদী নয়!
মন্টু ফিকশন লেখে। আর লেখতেই থাকে। অনেকগুলা কাঁটা থাকে সেইখানে। দেইখা অনেক বন্ধু-বন্ধু গোলাপ-ফুল আসে। অনেকগুলা টব। অনেকগুলা গাছ। ফুল আর ফল। ফুলবাগানের মালি হয়া আসে জয়তুন। জয়তুন সুন্দর। কি কিউট চুল! কি সুন্দর গোঁফ। দাড়ি। দেখলেই খায়া ফেলতে ইচ্ছা করে। জয়তুন গান গায়। মন্টু ফিকশন লেখে। জীবন এইরকম সুন্দর! সুন্দর হইতে থাকে।
তারপরে একটা লিটারেচার ফেস্টিভ্যালে মন্টু আর আব্বাসের দেখা হয়। আব্বাস গেছে কাশ্মীরের ঘটনা কাভার করতে। আর মন্টু একটা লিটারেচার এওয়ার্ড নিতে লখনৌ’তে। দুইজনেই ইন্ডিয়ায়। তখন অরা মিট করে দিল্লীতে। কয়, গাঙে গাঙে দেখা হয়, বইনে বইনে দেখা হয় না রে বইন! কিন্তু এই কথা তো মাইনা নিবো না আমরা, আমরা অনেক স্ট্রাগল করছি, এখন মিথের কাছে সারেন্ডার করা কি ঠিক হবে আমাদের!
যেইরকম অরা শাহজাদীর প্রেমে পড়ছিল, অইরকম অরা ইউনাইটেড স্টেটস অফ এমেরিকা হয়া উঠে। নানান ছল-চাতুরি করতে থাকে, আর কয়, এমেরিকা কি আসলে পারবে রাশিয়ার লগে, তোমার কি মনেহয়? তারপরে, হাসে। কারণ অরা জানে, এইগুলা মিথ, কোশ্চেন না তো কোন! অথচ মানুশ-জন এইগুলারে কোশ্চেন ভাবে, উত্তর দিতে থাকে।
আব্বাস তাঁর ওয়ার-স্টোরিজের কথা কয়। মন্টু জিগায়, কবিতা কি আর লেখো না তুমি এখন? আব্বাস চুপ কইরা থাকে, বুঝে, শে লেখে, মরার পরে এইগুলা মন্টুরেই ছাপাইতে হবে। আব্বাস যে খালি ভালো-ইঞ্জিনিয়ার আর হিরো-জার্নালিস্ট না, ভিতরে ভিতরে একজন বড়-কবি, এইটা তারেই প্রমাণ করা লাগবে, আব্বাসের মরার পরে। কিন্তু মন্টু যদি আগে মারা যায়? আব্বাসের অন্য কোন অপশন তো নিশ্চয় আছেই… ও তো কাঁচা প্লেয়ার না অইরকম…
মন্টুরে আব্বাস কয়, এইসব ছোটখাট এওয়ার্ড দিয়া কি হবে? তুমি আরেকটু সাহসী হও! পারসোনাল লাইফে যেই সাহস তোমার আছে, সেইটা রাইটিংসে কই! মন্টুও চুপ কইরা থাকে। উপন্যাসটা তো শে লেখবে একদিন। জীবনে অই একটা উপন্যাসই শে লেখবে। লোকজন তখন মেরিলিন মনরো’র নামের লগে গুলায়া ফেলবে। গুগুল করলে সার্চে এম লেখলে মেরিলিন মনরো’র আগেই তাঁর নাম আসবে। শে জানে!
এই জানাজানি নিয়া মন্টু আর আব্বাস চুপ কইরা বইসা থাকে। নিরবতা যেই কথা কইতে পারে শব্দগুলা, কথাগুলা সেইগুলা বলতে পারে না তো সবসময়।
তারপরে অরা মেহজাবিনের কথা কয়, আমগাছরে নিয়া হাসে, আলিয়ার লাইগা একটু মন-খারাপ করে, জয়তুনের কিউটনেস নিয়া ওরিড হয়। মন্টু সিলভিয়া’র লগে আব্বাসরে পরিচয় করায়া দেয়। একটু বুড়া আছে সিলভিয়া, কিন্তু বুড়াগুলাই তো কিউট আসলে! দুইজনে হাসে। সিলভিয়া টের পায়, সে হইতেছে এখন শাহজাদী। এই মোমেন্টে। একটা ফ্যান্টাসি, ফিকশন এবং রিয়ালিটি। সিলভিয়া প্রফেশনাল জিগলো, এইরকম মোমেন্টগুলা সে ভালো ক্যাচ করতে পারে। কিন্তু এখন একটু টায়ার্ডই লাগে।
আর কেউ তো সারাজীবন শাহজাদী হয়া থাকতে পারে না। ১০০১’টা ফিকশনের ভিতরে ১০০১’টা শাহজাদী আছে। হায়! তাদের সবার লগে তো দেখা হবে না আমাদের!
অনেকগুলা শাহজাদীর মতন, অনেকগুলা মন্টু আর আব্বাসও আছে দুনিয়ায়। অনেকগুলা মেহজাবিন, অনেক অনেক আমগাছ, তালগাছ, বেলগাছ, অনেকগুলা আলিয়া, অনেকগুলা জয়তুন, অনেকগুলা সিলভিয়া। এরা সবাই-ই কি জেন্ডার-বায়াসড? সবাই কি ‘খাঁচার ভিতর অচিন পাখি’? খালি আসে আর যায়, খালি যায় আর আসে, আসে আর যায়। আর মাঝে-মধ্যে পাকা পেঁপেও কি খায়? আমরা জানি না। আর এই না-জানায় কতো যে আরাম। শরীর ভাসতে থাকে, মন নাই হয়া যায়।
জয়তুন বইসা বইসা ভাবে, তোমার কি মন নাই কুসুম, খালি শরীরই একটা, তা-ও মানিক বন্দোপাধ্যায়েরই?
জয়তুনের মনে পড়ে রূপা’র কথা। রূপা কইছিল, আমি তো বাই-সেক্সুয়াল, আসলে সে বেটা হইতে ডরাইতো, নাম বদলায়া রাসেল-ও হইতে চাইছিল। সবাই হাসি-ঠাট্টা করতো অরে নিয়া – ‘ড়াষেল ভাই’! রূপা পরে আফ্রিকায় চইলা গেলো। এই বাংলাদেশে আর থাকার উপায় নাই! এইরকম জাজমেন্টাল সবাই!…
আলিয়া একটা বটগাছ পালে এখন। কয়, মানুশের চে গাছ-ই বেটার। “কূল নাই দরিয়ার পাড়ে বৃক্ষ একটি মনোহর…”। গরমের দিনে দুপুরবেলায় বটগাছটার নিচে শুইয়া থাকে। বাতাস আসে। বাতাস কতকিছুই যে উড়ায়া নিয়া আসে। উড়ায়া নিয়া যাইতে থাকে। শুধু জেন্ডার-বায়াসডনেসই পইড়া থাকে, আমাদের মনে… একটা পাত্থর, যা থিকা পানি বাইর হবে কিনা আমরা জানি না, আরো ১০০১টা কাহিনির পরে।
মে ২, ২০২১
Leave a Reply